
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। ১৮ মিনিটের কালজয়ী এ ভাষণের শেষ কটি শব্দমালা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক ভাষণের আটটি শব্দের শেষ দুটি লাইন হয়ে গেল সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা। হয়ে গেল মুক্তিকামী বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র।
দিনটি ছিল রবিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপেক্ষায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। তিনি আসলেন মহাসমুদ্রে আর শুরু হলো গগণবিদারী স্লোগান, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ এই সেøাগানগুলো জনতার কাছ থেকে আসল। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, তার আগেই মুক্তিপাগল কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা এ স্লোগান তুলে ধরল।
২টা ৪৫ মিনিটে ডায়াসে এসে দাঁড়ালেন ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুহূর্তেই মহাসমুদ্রের গর্জন থেমে পিনপতন নীরবতা। মাইকে বজ্রকণ্ঠে রাজনীতির কবি যখন সম্বোধন করলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’, আবার রেসকোর্সের মহাসমুদ্র সেস্লোগানে স্লোগানে গর্জন তুলল, মহানায়ক বজ্রকণ্ঠে শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা যেমন দিলেন, দিয়ে গেলেন নির্দেশনাও।
বক্তব্যের শেষে তিনি বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’, কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেল তার বজ্রকণ্ঠের ধ্বনি; কিন্তু মহাসমুদ্রে উপস্থিত কৃষক, শ্রমিক ছাত্র জনতা থামল না; তাদের গগনবিদারী গর্জন আরও বেড়ে গেল। মুক্তিকামী বাঙালি জানান দিল বজ্রকণ্ঠে আরও কিছু শুনতে চায় তারা। অতৃপ্ত বাঙালির আকাক্সক্ষা বুঝেই থেমে যাওয়া বজ্রকণ্ঠ বেজে উঠল আবার। বঙ্গবন্ধু শোনালেন পরের লাইন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে কয়েকটি শব্দমালায় গাঁথা দুটি লাইন অপ্রতিরোধ্য দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
এ ভাষণের ব্যাখ্যায় প্রবীণ রাজনীতিকরা দাবি করেন, মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘোষণা বঙ্গবন্ধু মূলত পরোক্ষভাবে দেন। কীভাবে জয়ী হতে হবে সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতিকরা বলেন, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকা অথচ লিখেছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ৫ মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার ও ৬ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়ে প্রতিবেদন ছাপে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় দেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিকের সঙ্গে। একজন হলেন তৎকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফের) অন্যতম সদস্য সিরাজুল আলম খান ও তৎকালীন বাম রাজনৈতিক নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। প্রবীণ রাজনীতিক সিরাজুল আলম খান ওতপ্রোতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভেতরে-বাইরে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এনডব্লিউ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চান ৭ মার্চের ভাষণে যুদ্ধের ঘোষণা আপনি দেননি কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে, তাই ভাষণে আমি ঘোষণা করি যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’
ফ্রস্ট প্রশ্ন করেন, আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি বললে কী ঘটত? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশেষ করে ওইদিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কারণ, বিশ^কে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চাইনি। এমন কিছু হলে পাকিস্তান বিশ্বের সমর্থন পেত বাঙালির ওপর আঘাত হানার, সেই সুযোগটি তারা নিত। আমি চেয়েছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক, জনগণ তো প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। ওই ভাষণের ১৮ দিন পর ২৫ মার্চ আঘাত হানে পাকিস্তান। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি তা প্রতিরোধ করে। ওই ভাষণই বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।’
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে আলোচনায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পর্বের শেষ ধাপ হলো ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। আমি মনে করি এর আগে গণজাগরণ ঘটে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকা- শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান যখন বলে দিলেন ৩ তারিখ সংসদ বসবে না; তখন আওয়ামী লীগের প্রেস কনফারেন্স করছিলেন বঙ্গবন্ধু পূর্বাণী হোটেলে। প্রেস কনফারেন্স অর্ধসমাপ্ত রেখে তারা রাস্তায় নেমে পড়লেন। ৩ মার্চ সংসদ না বসার বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে মুখে মুখে রটে গেল, জনতার মধ্যে ছড়িয়ে গেল, জনারণ্য হয়ে গেল, মানুষ নেমে গেল রাস্তায়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এত সহজ-সরল ও সাদামাটা ছিল যে, সবার হদয়ে গ্রথিত হয়ে গেল। উজ্জীবিত-উদ্বেলিত করল শেষ দুটি লাইন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম... তারপর থেমে গেল বজ্রকণ্ঠ। অতৃপ্ত মুক্তিপাগল বাঙালি থামেনি, গর্জন উঠল। আবার বাজল এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জনসমুদ্রের আকাক্সক্ষা বুঝেই বঙ্গবন্ধু শেষ লাইনটি বলে জয় বাংলা দিয়ে শেষ করলেন অমর কবিতা।’
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। এসব স্লোগানে মেতে উঠল চারদিক। এই স্লোগানগুলো জনতা থেকে এলো। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, দেওয়ার আগেই মানুষ এই স্লোগান ধরে ফেলল। ভুট্টোর মুখে লাথি মার এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়া অবস্থা আমার জীবনে ওই প্রথম দেখেছিলাম। সে জন্য আমি বলছি এটা গণজাগরণের ঊর্ধ্বতন ধাপ, গণঅভ্যুত্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। সরকারি দলের একপক্ষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন আমরা শুনলাম। সেদিনের মহাসমুদ্রে আমি সহস্রাধিক ন্যাপকর্মীসহ উপস্থিত ছিলাম।’
সিরাজুল আলম খান এক ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৪/৫ ও ৬ মার্চ পর্যন্ত ২/৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড ও বিএলএফ হাইকমান্ডের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করতেন। প্রতিটি বৈঠকেই প্রসঙ্গ থাকত ৭ মার্চের বক্তৃতা। ৬ মার্চ সন্ধ্যায় বিএলএফ বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি করে, ভাষণে সংক্ষেপে অতীত ইতিহাস, অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে পরিচালনা করা ও স্বাধীনতার আহ্বান উল্লেখ করে বক্তৃতা শেষ করা। তবে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড স্বাধীনতার সংগ্রাম লাইনটি বলার বিষয়ে আপত্তি তোলে।’ বিএলএফের অন্যতম এ নেতা বলেন, ‘৫ মার্চ ৭ মার্চের ভাষণের বিষয় নিয়ে বিএলএফের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোদের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সঙ্গে আলাপ করেছি”। ভাষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বিএলএফ সদস্যরা অনুরোধ করেন এ ভাষণ খুবই আবেগময় হতে হবে। তারা সে সম্পর্কিত তিনটি ভাগ করে দিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ৬ মার্চ সকাল থেকে বিএলএফ ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নেতাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড মুক্তির বিষয়টি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার পরামর্শ দেয়। তবে বিএলএফ দাবি করে দুটি প্রসঙ্গই থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে বিএলএফ ও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডে আপস হয়। তবে মুক্তি ও স্বাধীনতার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে থাকতে হবে অনুরোধ করে ৬ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায় কয়েকটি বিষয় নোট দিয়ে চলে যায় বিএলএফ সদস্যরা।’
টাঙ্গাইলের ফজলুর রহমান ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ৭০-এর নির্বাচনে গণপরিষদ মেম্বার হন তিনি। ওই জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। এ ভাষণ অমর এক কীর্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর আবেদনও শেষ হওয়ার নয়।’ তিনি বলেন, ‘সেদিনের রেসকোর্স ময়দান বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের মহাকাব্যে মুক্তিকামী জাতিকে শৃঙ্খলমুক্ত হতে গেলে কী করতে হবে তার সবই তুলে ধরা হয়েছে। ভাষণের শেষ অংশে বজ্রকণ্ঠ থেমে গেলেও থামেনি বীরজনতা। তারা বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে শুনতে চেয়েছেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
প্রসঙ্গত, বিএলএফের সদস্য ছিলেন সিরাজুল আলম খান, প্রয়াত শেখ ফজলুল হক মনি, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। পরে আরও অনেকেই যুক্ত হন এ সংগঠনে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সদস্য ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত খুনি খন্দকার মোশতাক।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন নিয়ন্ত্রণ করছে ১৩ পরিবার। জমি বিক্রি, রিসোর্ট তৈরি কিংবা সেখানে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করতে গেলে লাগবে তাদের সুদৃষ্টি। পরিবারগুলো খুশি থাকলে যে কেউ প্রাসাদও তৈরি করতে পারেন সেখানে। ৫০ বছর ধরে তারা বলতে গেলে এলাকাটি শাসন করছেন। তাদের পেছনে আছেন উপজেলার প্রভাবশালীরা।
এ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ছোট ছোট দোকানপাটের মধ্যে বেশির ভাগেরই মালিক ওই ১৩ পরিবারের সদস্যরা। এক চেটিয়াত্বের কারণে যে যার মতো পারছে পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পর্যটকরা কারও কাছে প্রতিকার চাইতে পারছেন না।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের উন্নয়নের জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। তবে বেশ কিছু সমস্যা আছে। সেগুলোও সমাধানের চেষ্টা চলছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে রিসোর্টসহ অন্যান্য স্থাপনা যাতে কেউ নির্মাণ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
১৩ পরিবারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পরিবারগুলোর কর্তাব্যক্তিরা কেউ এখন আর বেঁচে নেই। তাদের স্বজনরা আছেন। তাদের জায়গা-জমি আছে। সেগুলো হয়তো তারা কেনাবেচা করেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন নিয়ে আমরা আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনে নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কোনো গ্রুপ বা মহল পর্যটকদের জিম্মি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ট্রলার বা স্পিডবোটগুলো আলাদাভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যটকরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত এ দ্বীপে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসেন। এখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের প্রভাবশালীদেরও হোটেল ও রিসোর্ট আছে।
সেন্টমার্টিনে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কথা বলে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন কারা নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যটন খাতসমৃদ্ধ হলেও যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তাসহ মৌলিক অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ। জরুরি কাজে টেকনাফ ও জেলা সদর কক্সবাজার আসা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে বেশ কটি জাহাজে পর্যটকরা দ্বীপে আসা-যাওয়া করেন। টেকনাফ থেকে স্পিডবোট থাকলেও শুষ্ক মৌসুম ছাড়া চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে জাহাজভাড়া। তার সঙ্গে রয়েছে ঘাটে চাঁদাবাজি। বর্তমানে টেকনাফের দমদমিয়া থেকে জাহাজভাড়া যাওয়া-আসা জনপ্রতি ১২০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকার বেশি লাগে। এ ছাড়া ঘাটের ইজারাও বেশি আদায় করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার সময় বেশি ভাড়া হাঁকা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি স্পিডবোটচালক জানান, প্রতি মাসে স্থানীয় নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। ১৩ পরিবারের কেউ না কেউ চাঁদা তোলেন। তারা নিজেদের শ্রমিক লীগ নেতাকর্মী দাবি করেন। তবে চাঁদার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় না। চাঁদা দেওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির’ ইশারায় ১৩ পরিবার সব অপকর্ম চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। জায়গা বিক্রি করতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে করতে হচ্ছে। তাদের আত্মীয়স্বজনরা দোকানপাট তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ী জানান, বছর-তিনেক আগে সেন্টমার্টিন বাজার থেকে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে একটি আবাসিক হোটেল করতে ২০ শতাংশ জমি পছন্দ করেন। জমিটি টেকনাফের এক ব্যবসায়ীর। দর-কষাকষির পর্যায়ে জমির মালিক টালবাহানা করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে হাসেনা বারোর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। পরে জানা যায়, হাসেনা বারোর পরিবারটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি। মূলত তাদের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে জমিটি কিনতে হয়েছে। জমির মালিক সেন্টমার্টিন থাকেন।
একই কথা বলেছেন ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ১৩ পরিবারের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন অবহিত আছে। জায়গা কেনাবেচার সঙ্গে তারা জড়িত। তাদের একটি পরিবারের মাধ্যমে ১০ বছর আগে সেন্টমার্টিন বাজারের পাশে একটি জায়গা কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে জমির দাম প্রায় দুই কোটি টাকা।
১৩ পরিবারের সদস্যরা সাগরের পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে হকারদেরও নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যটকদের যারা ছবি তোলেন তারাও তাদের লোক। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় লোকজনও তাদের সহায়তা করেন।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে প্রচলিত ১৩ পরিবারের নাম দুইব্রা বারো, শেয়ানদারা বারো, তইজ্রাহাতু বারো, আহমেইদ্রা বারো, গুলাবারো, লোকমালা বারো, সারো বারো, হাসেনা বারো, ছইন্না বারো, লাঠিম মিয়া, জুলহাইস্রা বারো, আবদুল হক বারো ও ইসহাক বারোর পরিবার সেন্টমার্টিন নিয়ন্ত্রণ করে। এসব পরিবারের মধ্যে অনেকেই কোটি টাকার মালিক।
ইসহাক বারোর পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আবদুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৩ পরিবার ছাড়া কেউ এখানে ব্যবসা করতে পারে না। সেন্টমার্টিনের বাইরে থেকে আসা লোকজন তাদের ম্যানেজ করে হোটেল, রিসোর্ট তৈরি করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার দাদি জুলেখা বিবির কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে ২২ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। পরে তিনি রিসোর্ট তৈরি করেন। বর্তমানে জমিটির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এখানে জমির দাম আকাশছোঁয়া।
রশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৩ পরিবারকে ম্যানেজ করে কেউ কেউ অবৈধভাবে রিসোর্ট ও টংঘর তৈরি করে ব্যবসা করছেন। এজন্য প্রশাসনের একটি চক্রকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কয়েক মাস আগে স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তবে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখে শুধু লোকদেখানো অভিযানে ছোট ছোট টংঘর ও ত্রিপল দিয়ে করা দোকান, বাঁশের বেড়ার ভাসমান স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। প্রভাবশালীদের একটি অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ হয়নি। বরং অবৈধ ভবনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে।
রিসোর্টের রুম ভাড়াও নির্ধারিত থাকে না। যে রুমের ভাড়া হওয়ার কথা এক হাজার টাকা, সেই রুমের ভাড়া রাখা হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম নিয়েও নৈরাজ্য আছে। ঘাটে হয়রানির সমস্যা তো আছেই।
আপেল শাহরিয়ার ও আজাদ রহমান নামের দুই পর্যটক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৫ দিন আগে তারা ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার পর জাহাজে সেন্টমার্টিন গিয়েছেন তারা। যাওয়ার পথে নানাভাবে হয়রানি হতে হয়েছে। সেন্টমার্টিনে একাধিক চক্রের কাছে পর্যটকদের জিম্মি থাকা, নিরাপত্তার অভাব, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার কথা জানান।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার বাণিজ্যিক ভবন শিরিন ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের আগে একাধিকবার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ভবনের পশ্চিম পাশ লাগোয়া স্যুয়ারেজের লাইনে মাঝেমধ্যে আগুন লাগলেও সেটিকে গুরুত্ব দেননি ভবন মালিক। তিনি দেশের বাইরে থাকায় নেওয়া হয়নি সংস্কারের উদ্যোগও। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে আসছিল ভবনটিতে। বিস্ফোরণের পর ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত রবিবার সকালে ওই ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন মারা গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মো. ফারুকুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।’
অবহেলায় মৃত্যুর মামলা হবে না কেন জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের কেউ অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেনি।’
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল জানায়, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিস্ফোরণে তিনজনের প্রাণ যাওয়ার পর ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। দুর্ঘটনায় আহতরা এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাদের উন্নত চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
ভবনটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ : শিরিন ম্যানশনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম দেশ রূপান্তরকে জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া স্যুয়ারেজের লাইনে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগত। ভবনটির উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে স্যুয়ারেজের প্রধান লাইন গেছে। ওই স্যুয়ারেজের লাইনের সঙ্গেই ভবনটির তিনতলার তিনটি টয়লেটের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই সংযোগ থেকে অনেকবার আগুন লেগেছে। বালু ও পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। ছোট আগুন হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া প্রয়োজন হতো না। তিনি বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলায় থাকা খাবারের হোটেলটিতে গ্যাসের লাইন রয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গ্যাসের লাইন নেই।
ভবনটির দোকানিরাও নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, স্যুয়ারেজের লাইনের জন্য টয়লেট প্রতি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নিত মালিকপক্ষ, কিন্তু কোনো সমস্যা হলে ঠিক করে দিত না।
ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ভবনটি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবন-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি সায়েন্স ল্যাব এলাকার বিধ্বস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। গতকাল এ-সংক্রান্ত একাধিক ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনের দেয়ালে। সেখানে লেখা, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ, আদেশক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের গতকাল সকালে ড্রেসিং করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, রবিবার বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঁচজনকে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে ধানম-ির পপুলার হাসপাতাল থেকে আরও একজনকে আনা হয়। তার নাম স্বপ্না রানী সাহা (৩৯)। তার শরীরের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন অন্যদের মধ্যে যথাক্রমে আশরাফুজ্জামান ও হাফিজুর রহমানের শরীরের ৬ ও ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশা, জহুর আলী ও আকবরের শরীরে ৩৮, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ দগ্ধ। তবে কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলছেন না তিনি।
একই দুর্ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগে কবির, জাকির হোসেন জুয়েল, আইসিইউতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুর নবী, আর জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (মিনি আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন সিএনজি অটোরিকশাচালক সোহেল। নুর নবী ও সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড : আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বোর্ড গঠনের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, নুর নবীর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। গতকাল তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর : বিস্ফোরণে নিহত সাদিকুর রহমান তুষার (৩১), সফিকুজ্জামান (৪৪) ও আব্দুল মান্নানের (৬৩) মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতেই পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন প্রভাষক ডা. ফাহমিদা নার্গিস। এর আগে মরদেহ তিনটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রমজান আলী।
সুরতহাল প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, তিনজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম রয়েছে। শরীরের কোথাও দগ্ধ হয়নি। ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণের ফলে ধ্বংসাবশেষ শরীরের ওপর পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
পবিত্র শবেবরাত আজ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ মঙ্গলবার রাতে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনায় ‘নফল ইবাদত-বন্দেগির’ মধ্য দিয়ে পবিত্র শবেবরাত পালন করবেন। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রজনী। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগারসহ বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শবেবরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্যম-িত পবিত্র শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।’ খবর বাসসের।
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শবেবরাতের মাহাত্ম্য উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ, নাতসহ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৫০ রানে হারানোর তৃপ্তিটা যেন খুব বেশি করে মনে করিয়ে দিল দিন পাঁচেক আগে ৩ উইকেটে হারের কষ্টটা। সেদিন রানটা ২০৯-এর একটু বেশি হলে আর মোস্তাফিজুর রহমান উইকেট পেলে ম্যাচটা জিততে পারত বাংলাদেশ। তাহলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে ঘরের মাটিতে সাত বছর ধরে কোনো সিরিজ না হারার গৌরবও থাকত অক্ষুন্ন।
তিন ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানো গেছে, পাওয়া গেছে সান্ত¡নার জয়। সাকিব আল হাসান ব্যাটে-বলে অনন্য, ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের পর ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। হাফসেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম (৭০) ও নাজমুল হোসেন শান্তও (৫৩)। তারপরও টস জিতে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভার পুরো খেলতে পারেনি বাংলাদেশ; ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রানেই অলআউট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ রানটাই যে যথেষ্ট হবে, সেটা কে ভেবেছিল!
রান তাড়ার শুরুতেই মনে হচ্ছিল হেসেখেলেই জিতবে ইংল্যান্ড। বিনা উইকেটে দলীয় রান ৫০ হয়ে গেল ৮.৪ ওভারেই। নবম ওভারের শেষ বলে ফিল সল্টকে সাকিব যখন মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে আউট করলেন তখন স্কোর বোর্ডে ৫৪ রান। পুঁজিটা কম হলে চেপে ধরতে হয় দুই প্রান্ত থেকেই, সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সাকিব-তাইজুল ইসলামরা উইকেট পেলেও মোস্তাফিজ পাচ্ছিলেন না। কাল পেস বোলাররাও শুরুতে উইকেটের দেখা পেলেন, ডাভিড মালানকে রানের খাতা খোলার আগেই মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দিলেন এবাদত হোসেন। দুই বল পর সাকিব মাত্র ১৯ রানেই বোল্ড করলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কে। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট হারাল ইংল্যান্ড, সেই যে চাপে পড়া, সেখান থেকে আর বের হয়ে আসা হয়নি।
জস বাটলার ম্যাচের পর বলেছেন, সিরিজ নিশ্চিত হওয়াতে আর উইল জ্যাকসের চোটের কারণে সুযোগ আসে স্যাম কারেনকে ওপরে ব্যাট করতে পাঠানোর। অপ্রত্যাশিতভাবে এ বোলারকে পাঁচে ব্যাট করতে আসতে দেখে অনেকেই বিস্মিত, তবে জেমস ভিনসের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি ভালোই সামাল দিয়েছিলেন। পথের কাঁটা দূর করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, কারেন ক্যাচ দিলেন লিটন দাসের হাতে। ভিনসকে ফেরালেন সাকিব, বল এ ইংলিশের ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ল মুশফিকের গ্লাভসে।
জয়ের সুবাস পাওয়া যাচ্ছে বটে, তবুও তখনো বাটলার আর মইন আলি উইকেটে। এ দুজনের ব্যাটিং সামর্থ্য বিবেচনা করলে ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ফসকে যাওয়াটাও অসম্ভব নয়। এবারে উদ্ধারকর্তা হয়ে এলেন তাইজুল, বাটলারকে আউট করলেন লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে। এবাদতের ভয়ংকর স্যালুট দেখে মাঠ ছাড়লেন মইনও। ক্রিস ওকস একটু লড়াই করছিলেন, আদিল রশিদকেও ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন তাইজুল। জয় তখন শুধু সময়ের ব্যাপার। নিজের বোলিং স্পেলের শেষ ডেলিভারিতে সাকিব পেয়েছিলেন পঞ্চম উইকেটের দেখা, মাঠের আম্পায়ার আউটও দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউতে দেখা গেল বল যাচ্ছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। তাই বেঁচে গেলেন জোফরা আর্চার, হলো না সাকিবের ৫ উইকেট শিকার। ৩০০তম উইকেট শিকারের দিনে হাফসেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বটা একটুর জন্য ফসকে গেল।
সেই ফসকে যাওয়া শিকারটাই ওয়ানডে সিরিজে মোস্তাফিজের একমাত্র সাফল্য। ওকস সোজা ব্যাটে খেলেছিলেন, বল চলে যায় সরাসরি বোলার বরাবর। মোস্তাফিজ প্রথম দফায় ধরতে না পারলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ঠিকই ধরেছেন। তাতেই ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে অলআউট ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের জয় ৫০ রানে যা রানের হিসাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়।
ম্যাচ শেষে সাকিব বললেন, ‘গত ছয়-সাত বছর ধরে ঘরের মাঠে আমরা ভালো খেলছি। আমরা এ ম্যাচটা কোনোরকমে খেলে হেরেই যেতে পারতাম, কিন্তু না, আমরা অনেক চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা জিতেছি। আমাদের বোলাররা নিজেদের মেলে ধরেছে আর ম্যাচটা জিতিয়েছে।’
বাটলার অবশ্য হারের চেয়ে আসন্ন বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানোর ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী, ‘এ সফরে আমরা যা চেয়েছি তাই হচ্ছে। আমরা এরকম উইকেটেই খেলতে চেয়েছি, নিজেদের চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছি। আমরা আজকেও (গতকাল) জিততে চেয়েছিলাম তবে সিরিজ জিতেই খুশি।’
দুদিন বিরতি দিয়ে চট্টগ্রামেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে দুই সরকারের একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের বেসরকারি খাতগুলোকে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের জন্য একক প্ল্যাটফরমে আনতে হবে।
গতকাল সোমবার কাতারের রাজধানীতে দোহা ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩ ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশকে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলকে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। একই সঙ্গে তিনি কাতারে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং জাতিগঠন প্রচেষ্টায় তাদের অংশগ্রহণ কামনা করেন।
কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের কিছু থ্রাস্ট সেক্টরের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। তিনি জানান, তার সরকার অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অফশোর গ্যাস অনুসন্ধান ও জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থায় কাতারের দক্ষতা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশের কৃষি প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটিও কাতারের সঙ্গে বাই-ব্যাক ব্যবস্থায় কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সেখানে কাতার রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি উভয় ক্ষেত্রেই জড়িত হতে পারে।
এ ছাড়া কাতারের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বিবেচনা করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ড মার্কেটকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা শিগগিরই পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে ব্যাঘাত বাংলাদেশের মতো দেশকে কঠিন জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও রপ্তানির সুযোগ অন্বেষণ করতে কাতারকে অনুরোধ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও কাতার দৃঢ় ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এবং এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায় দুদেশের মানুষের মধ্যে একটি চমৎকার সেতুবন্ধ। আমি আজ কাতারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে দেখে আনন্দিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, কাতার ন্যাশনাল ভিশন, ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। আমরা কাতারে উন্নত কর্মসংস্থানের বাজার পূরণে আমাদের কর্মীবাহিনীকে জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সজ্জিত করতে পারি। আমাদের জনগণের ভালো যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা কাতার সরকার ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রেমিট্যান্স উপার্জনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে এবং এটি এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আমরা ২০৩০-এর প্রথমার্ধের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম হয়ে উঠব বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নপূরণে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং কাতারের নেতৃত্ব ও জনগণ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে ৫ মূল সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য পাঁচটি মূল সহায়তা চেয়েছেন, যা একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে উন্নীত করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ একে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।’
কিউএনসিসি অডিটোরিয়াম-৩-এ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে ‘স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেটিভ সোসাইটির জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ মূল সমর্থনগুলো উপস্থাপন করেন।
প্রথম সহায়তা হিসেবে সরকারপ্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকর প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদান করুন।
দ্বিতীয়টিতে তিনি বলেন, এলডিসিগুলোতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা করুন।
তৃতীয় সহায়তা হিসেবে তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলায় পেশাদার গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
তিনি আরও বলেন, চতুর্থত, উত্তরণের পরও বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি-রাসায়নিকের জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে এলডিসি মওকুফের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। পঞ্চম সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন দুটির জন্যই সহায়ক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা।
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী রূপকল্পে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত করেন। তিনি বলেন, এটি চারটি মূল উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তার সরকার জনগণের কাছে ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই সময় এটিকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কিন্তু, কভিড-১৯ মহামারী প্রমাণ করেছে, আমরা আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি।’
তিনি বলেন, এই মহামারী আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিত নয়। তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ করা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, যে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য এলডিসিগুলোর গড় জিডিপি ব্যয় এখনো ০.৬ শতাংশের নিচে রয়েছে ও তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে রয়েছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসি উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই তার যোগ্যতা প্রমাণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অন্তর্বর্তীকালে আমাদের সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ। জাতীয় প্রয়োজন নির্ণয়ে এলডিসির জন্য আমরা ইউএন টেকনোলজি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি।’ তার সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান-মনস্কতার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রযুক্তিগত বিষয়সহ দেশীয়ভাবে তৈরি জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘আরও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে আমাদের সহনশীলতা প্রযুক্তিতে যাওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সরকার পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুটি পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। আমাদের লক্ষ্য অগ্রাধিকারভিত্তিক ফ্লোটিং সোলার প্যানেল, অবশোর উইন্ড টারবাইন ও গ্রিন হাইড্রোজেনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।’
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
রাষ্ট্রায়ত্ত এসেনসিয়াল ড্রাগস সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধের চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করে। সাশ্রয়ীমূল্য কিন্তু মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির, যিনি পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আকর্ষণীয় মুনাফা ও নিয়মিত সম্প্রসারণে অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিবেদক আলতাফ মাসুদ-এর সঙ্গে।
গভর্নমেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরেটরি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৮৩ সালে এটি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড নামে পুনঃনামকরণ করা হয়। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি নিজস্ব সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা পৌঁছে দেওয়া। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর এসেনসিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির। এরপর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সাড়ে আট বছরে গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানটি আজ সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অপরিহার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এসেনসিয়াল ড্রাগস ইতিমধ্যেই সরকারের একটি ইউনিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি মানুষ এ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ সেবন করছেন, যা বিনামূল্যে সরকার প্রদান করছে। পরিবার পরিকল্পনায় যেসব ওষুধ প্রয়োজন হয় সেগুলোও উৎপাদন করছে কোম্পানিটি।
দেশ রূপান্তরকে অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জানিয়েছেন, বর্তমানে আমরা ১২৩ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করি। এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিস্টামিনসহ জেনারেল প্রোডাক্টগুলো উৎপাদন করা হচ্ছে। এর বাইরে কিছু ব্যয়বহুল ওষুধও উৎপাদন করা হচ্ছে। বাইরের কোম্পানির তুলনায় আমরা সরকারকে ১৫-২০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে মানসম্মত ওষুধ দিতে পারছি। আমাদের উৎপাদিত ওষুধের মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারের শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
২০১৪ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগসের বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা, যা এখন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এহ্সানুল কবির বলেন, সরকার আমাদের উৎপাদিত ওষুধে ৫ থেকে ৭ শতাংশ মুনাফা দেয়। সরকারের কাছে ওষুধ বিক্রির অর্থে উৎপাদনসহ সব খরচ মেটানোর পরও আমরা প্রতি বছর ভালো মুনাফা করছি। সর্বশেষ হিসাববছরে আমাদের প্রতিষ্ঠান ১১০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।
এসেনসিয়াল ড্রাগসের ওষুধ মানসম্মত ও সাশ্রয়ী হলে বাইরে পাওয়া যায় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, আমরা সরকারের চাহিদাই মেটাতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানাগুলো অনেক পুরনো, যার কারণে এর উৎপাদন সক্ষমতা কম ছিল। যখন আমাদের কারখানাগুলো তৈরি হয় তখন সারা দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিল আটটা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে। কিন্তু এ সময়ে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা তেমনটা বাড়েনি। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওষুধের কেনার যে বাজেট, তার ৭০ শতাংশ আমরা সরবরাহ করতে পারছি।
কারখানা সম্প্রসারণের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্ল্যান্টটা মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জে ৩১ একর জমিতে আপাতত ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। মানিকগঞ্জের প্ল্যান্ট চালু হলে হাসপাতালগুলোর শতভাগ ওষুধ আমরা সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি। শুধু তাই নয়, রপ্তানিও করতে পারব।
গোপালগঞ্জে নতুন প্ল্যান্ট করা হয়েছে, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইনজেকশন, সাল্যাইনসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হবে। দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে এহ্সানুল কবির বলেন, আমাদের গোপালগঞ্জের প্ল্যান্টের পাশে সাড়ে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করেছি, যেখানে ১২টি টিকা উৎপাদন করব। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যানিনজাইটিস, করোনা, টিউবারকলোসিসসহ বাংলাদেশে শিশুদের যে ১১টি টিকা দেওয়া হয় সেগুলোর সবই আমদানিনির্ভর, যা আমরা উৎপাদন করব। এর বাইরে করোনার টিকাও উৎপাদন করব। সেখানে উৎপাদন, বোতলজাত ও ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারÑ এ তিন পর্যায়ে উৎপাদন হবে। এ ছাড়া গবেষণা উন্নয়নেও ব্যবস্থা থাকছে। গোপালগঞ্জে ডায়ালাইসিস সøুইড তৈরি হবে, যার ফলে ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক কমে যাবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সরকার দেবে ৫০ কোটি। ইতিমধ্যেই ডিপিপি তৈরি হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে কাজ শুরু হবে আশা করছি। কয়েকটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বগুড়ায় ২১ বছর আগে একটি প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেখানে অবকাঠামো তৈরির আগেই মেশিন কেনা হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। আমি সেখানে ভবন তৈরিসহ সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করেছি, যা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। বগুড়ার প্ল্যান্টে উন্নতমানের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করা হচ্ছে।
এহ্সানুল কবির পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি অবসরে এখনো রোগীদের পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকেন। ওষুধ কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় তার মূল পেশা কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলছিলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার কারণে কোম্পানি পরিচালনায় অবশ্যই কিছু সুবিধা পেয়েছি। একজন ডাক্তার হওয়ার কারণে আমি বুঝতে পারি কোন ওষুধটি মানুষের বেশি প্রয়োজন। কোন ওষুধটা ডেভেলপ করলে মানুষের সত্যিকারের উপকার হবে সেগুলো আমরা তৈরি করে সাশ্রয়ীমূল্যে সরবরাহ করেছি। তিনি জানান, এসেনসিয়াল ড্রাগসে কাজ শুরুর আগে তিনটি দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজ করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও এখানে কাজে লাগছে।
আমি চেষ্টা করছি কর্মিবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এ জন্য সামর্থ্যরে মধ্য থেকে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করেছি। আমি যোগ দেওয়ার পর ২০১৫ সালে আমি শ্রমিকদের বেতন দ্বিগুণ করে দিয়েছি। তাদের খাবারের মান উন্নয়ন করেছি। ঢাকার যত শ্রমিক আছে তাদের সবার জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছি। মধুপুরে আমাদের একটি কারখানা আছে, যেখানকার শ্রমিকদের জন্য বীরশ্রেষ্ঠদের নামে চারটি ডরমিটরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কারখানায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের পাঁচটা প্ল্যান্টে শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য বার্ষিক বনভোজনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের কারখানাগুলোতে যেসব অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন, তারা কিন্তু আগে ঈদ বোনাস পেত না। আমি তাদের জন্য ঈদ অ্যালাউন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যা দিয়ে তারা নিজেদের পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে পারছেন বলেন এহ্সানুল কবির।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’