
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৫০ রানে হারানোর তৃপ্তিটা যেন খুব বেশি করে মনে করিয়ে দিল দিন পাঁচেক আগে ৩ উইকেটে হারের কষ্টটা। সেদিন রানটা ২০৯-এর একটু বেশি হলে আর মোস্তাফিজুর রহমান উইকেট পেলে ম্যাচটা জিততে পারত বাংলাদেশ। তাহলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে ঘরের মাটিতে সাত বছর ধরে কোনো সিরিজ না হারার গৌরবও থাকত অক্ষুন্ন।
তিন ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানো গেছে, পাওয়া গেছে সান্ত¡নার জয়। সাকিব আল হাসান ব্যাটে-বলে অনন্য, ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের পর ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। হাফসেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম (৭০) ও নাজমুল হোসেন শান্তও (৫৩)। তারপরও টস জিতে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভার পুরো খেলতে পারেনি বাংলাদেশ; ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রানেই অলআউট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ রানটাই যে যথেষ্ট হবে, সেটা কে ভেবেছিল!
রান তাড়ার শুরুতেই মনে হচ্ছিল হেসেখেলেই জিতবে ইংল্যান্ড। বিনা উইকেটে দলীয় রান ৫০ হয়ে গেল ৮.৪ ওভারেই। নবম ওভারের শেষ বলে ফিল সল্টকে সাকিব যখন মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে আউট করলেন তখন স্কোর বোর্ডে ৫৪ রান। পুঁজিটা কম হলে চেপে ধরতে হয় দুই প্রান্ত থেকেই, সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সাকিব-তাইজুল ইসলামরা উইকেট পেলেও মোস্তাফিজ পাচ্ছিলেন না। কাল পেস বোলাররাও শুরুতে উইকেটের দেখা পেলেন, ডাভিড মালানকে রানের খাতা খোলার আগেই মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দিলেন এবাদত হোসেন। দুই বল পর সাকিব মাত্র ১৯ রানেই বোল্ড করলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কে। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট হারাল ইংল্যান্ড, সেই যে চাপে পড়া, সেখান থেকে আর বের হয়ে আসা হয়নি।
জস বাটলার ম্যাচের পর বলেছেন, সিরিজ নিশ্চিত হওয়াতে আর উইল জ্যাকসের চোটের কারণে সুযোগ আসে স্যাম কারেনকে ওপরে ব্যাট করতে পাঠানোর। অপ্রত্যাশিতভাবে এ বোলারকে পাঁচে ব্যাট করতে আসতে দেখে অনেকেই বিস্মিত, তবে জেমস ভিনসের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি ভালোই সামাল দিয়েছিলেন। পথের কাঁটা দূর করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, কারেন ক্যাচ দিলেন লিটন দাসের হাতে। ভিনসকে ফেরালেন সাকিব, বল এ ইংলিশের ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ল মুশফিকের গ্লাভসে।
জয়ের সুবাস পাওয়া যাচ্ছে বটে, তবুও তখনো বাটলার আর মইন আলি উইকেটে। এ দুজনের ব্যাটিং সামর্থ্য বিবেচনা করলে ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ফসকে যাওয়াটাও অসম্ভব নয়। এবারে উদ্ধারকর্তা হয়ে এলেন তাইজুল, বাটলারকে আউট করলেন লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে। এবাদতের ভয়ংকর স্যালুট দেখে মাঠ ছাড়লেন মইনও। ক্রিস ওকস একটু লড়াই করছিলেন, আদিল রশিদকেও ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন তাইজুল। জয় তখন শুধু সময়ের ব্যাপার। নিজের বোলিং স্পেলের শেষ ডেলিভারিতে সাকিব পেয়েছিলেন পঞ্চম উইকেটের দেখা, মাঠের আম্পায়ার আউটও দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউতে দেখা গেল বল যাচ্ছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। তাই বেঁচে গেলেন জোফরা আর্চার, হলো না সাকিবের ৫ উইকেট শিকার। ৩০০তম উইকেট শিকারের দিনে হাফসেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বটা একটুর জন্য ফসকে গেল।
সেই ফসকে যাওয়া শিকারটাই ওয়ানডে সিরিজে মোস্তাফিজের একমাত্র সাফল্য। ওকস সোজা ব্যাটে খেলেছিলেন, বল চলে যায় সরাসরি বোলার বরাবর। মোস্তাফিজ প্রথম দফায় ধরতে না পারলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ঠিকই ধরেছেন। তাতেই ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানে অলআউট ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের জয় ৫০ রানে যা রানের হিসাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়।
ম্যাচ শেষে সাকিব বললেন, ‘গত ছয়-সাত বছর ধরে ঘরের মাঠে আমরা ভালো খেলছি। আমরা এ ম্যাচটা কোনোরকমে খেলে হেরেই যেতে পারতাম, কিন্তু না, আমরা অনেক চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা জিতেছি। আমাদের বোলাররা নিজেদের মেলে ধরেছে আর ম্যাচটা জিতিয়েছে।’
বাটলার অবশ্য হারের চেয়ে আসন্ন বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানোর ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী, ‘এ সফরে আমরা যা চেয়েছি তাই হচ্ছে। আমরা এরকম উইকেটেই খেলতে চেয়েছি, নিজেদের চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছি। আমরা আজকেও (গতকাল) জিততে চেয়েছিলাম তবে সিরিজ জিতেই খুশি।’
দুদিন বিরতি দিয়ে চট্টগ্রামেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন নিয়ন্ত্রণ করছে ১৩ পরিবার। জমি বিক্রি, রিসোর্ট তৈরি কিংবা সেখানে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করতে গেলে লাগবে তাদের সুদৃষ্টি। পরিবারগুলো খুশি থাকলে যে কেউ প্রাসাদও তৈরি করতে পারেন সেখানে। ৫০ বছর ধরে তারা বলতে গেলে এলাকাটি শাসন করছেন। তাদের পেছনে আছেন উপজেলার প্রভাবশালীরা।
এ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ছোট ছোট দোকানপাটের মধ্যে বেশির ভাগেরই মালিক ওই ১৩ পরিবারের সদস্যরা। এক চেটিয়াত্বের কারণে যে যার মতো পারছে পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পর্যটকরা কারও কাছে প্রতিকার চাইতে পারছেন না।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের উন্নয়নের জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। তবে বেশ কিছু সমস্যা আছে। সেগুলোও সমাধানের চেষ্টা চলছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে রিসোর্টসহ অন্যান্য স্থাপনা যাতে কেউ নির্মাণ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
১৩ পরিবারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পরিবারগুলোর কর্তাব্যক্তিরা কেউ এখন আর বেঁচে নেই। তাদের স্বজনরা আছেন। তাদের জায়গা-জমি আছে। সেগুলো হয়তো তারা কেনাবেচা করেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন নিয়ে আমরা আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনে নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কোনো গ্রুপ বা মহল পর্যটকদের জিম্মি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ট্রলার বা স্পিডবোটগুলো আলাদাভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যটকরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত এ দ্বীপে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসেন। এখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের প্রভাবশালীদেরও হোটেল ও রিসোর্ট আছে।
সেন্টমার্টিনে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কথা বলে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন কারা নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যটন খাতসমৃদ্ধ হলেও যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তাসহ মৌলিক অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ। জরুরি কাজে টেকনাফ ও জেলা সদর কক্সবাজার আসা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে বেশ কটি জাহাজে পর্যটকরা দ্বীপে আসা-যাওয়া করেন। টেকনাফ থেকে স্পিডবোট থাকলেও শুষ্ক মৌসুম ছাড়া চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে জাহাজভাড়া। তার সঙ্গে রয়েছে ঘাটে চাঁদাবাজি। বর্তমানে টেকনাফের দমদমিয়া থেকে জাহাজভাড়া যাওয়া-আসা জনপ্রতি ১২০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকার বেশি লাগে। এ ছাড়া ঘাটের ইজারাও বেশি আদায় করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার সময় বেশি ভাড়া হাঁকা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি স্পিডবোটচালক জানান, প্রতি মাসে স্থানীয় নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। ১৩ পরিবারের কেউ না কেউ চাঁদা তোলেন। তারা নিজেদের শ্রমিক লীগ নেতাকর্মী দাবি করেন। তবে চাঁদার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় না। চাঁদা দেওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির’ ইশারায় ১৩ পরিবার সব অপকর্ম চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। জায়গা বিক্রি করতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে করতে হচ্ছে। তাদের আত্মীয়স্বজনরা দোকানপাট তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ী জানান, বছর-তিনেক আগে সেন্টমার্টিন বাজার থেকে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে একটি আবাসিক হোটেল করতে ২০ শতাংশ জমি পছন্দ করেন। জমিটি টেকনাফের এক ব্যবসায়ীর। দর-কষাকষির পর্যায়ে জমির মালিক টালবাহানা করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে হাসেনা বারোর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। পরে জানা যায়, হাসেনা বারোর পরিবারটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি। মূলত তাদের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে জমিটি কিনতে হয়েছে। জমির মালিক সেন্টমার্টিন থাকেন।
একই কথা বলেছেন ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ১৩ পরিবারের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন অবহিত আছে। জায়গা কেনাবেচার সঙ্গে তারা জড়িত। তাদের একটি পরিবারের মাধ্যমে ১০ বছর আগে সেন্টমার্টিন বাজারের পাশে একটি জায়গা কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে জমির দাম প্রায় দুই কোটি টাকা।
১৩ পরিবারের সদস্যরা সাগরের পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে হকারদেরও নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যটকদের যারা ছবি তোলেন তারাও তাদের লোক। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় লোকজনও তাদের সহায়তা করেন।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে প্রচলিত ১৩ পরিবারের নাম দুইব্রা বারো, শেয়ানদারা বারো, তইজ্রাহাতু বারো, আহমেইদ্রা বারো, গুলাবারো, লোকমালা বারো, সারো বারো, হাসেনা বারো, ছইন্না বারো, লাঠিম মিয়া, জুলহাইস্রা বারো, আবদুল হক বারো ও ইসহাক বারোর পরিবার সেন্টমার্টিন নিয়ন্ত্রণ করে। এসব পরিবারের মধ্যে অনেকেই কোটি টাকার মালিক।
ইসহাক বারোর পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আবদুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৩ পরিবার ছাড়া কেউ এখানে ব্যবসা করতে পারে না। সেন্টমার্টিনের বাইরে থেকে আসা লোকজন তাদের ম্যানেজ করে হোটেল, রিসোর্ট তৈরি করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার দাদি জুলেখা বিবির কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে ২২ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। পরে তিনি রিসোর্ট তৈরি করেন। বর্তমানে জমিটির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এখানে জমির দাম আকাশছোঁয়া।
রশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৩ পরিবারকে ম্যানেজ করে কেউ কেউ অবৈধভাবে রিসোর্ট ও টংঘর তৈরি করে ব্যবসা করছেন। এজন্য প্রশাসনের একটি চক্রকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কয়েক মাস আগে স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তবে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখে শুধু লোকদেখানো অভিযানে ছোট ছোট টংঘর ও ত্রিপল দিয়ে করা দোকান, বাঁশের বেড়ার ভাসমান স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। প্রভাবশালীদের একটি অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ হয়নি। বরং অবৈধ ভবনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে।
রিসোর্টের রুম ভাড়াও নির্ধারিত থাকে না। যে রুমের ভাড়া হওয়ার কথা এক হাজার টাকা, সেই রুমের ভাড়া রাখা হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম নিয়েও নৈরাজ্য আছে। ঘাটে হয়রানির সমস্যা তো আছেই।
আপেল শাহরিয়ার ও আজাদ রহমান নামের দুই পর্যটক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৫ দিন আগে তারা ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার পর জাহাজে সেন্টমার্টিন গিয়েছেন তারা। যাওয়ার পথে নানাভাবে হয়রানি হতে হয়েছে। সেন্টমার্টিনে একাধিক চক্রের কাছে পর্যটকদের জিম্মি থাকা, নিরাপত্তার অভাব, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার কথা জানান।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার বাণিজ্যিক ভবন শিরিন ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের আগে একাধিকবার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ভবনের পশ্চিম পাশ লাগোয়া স্যুয়ারেজের লাইনে মাঝেমধ্যে আগুন লাগলেও সেটিকে গুরুত্ব দেননি ভবন মালিক। তিনি দেশের বাইরে থাকায় নেওয়া হয়নি সংস্কারের উদ্যোগও। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে আসছিল ভবনটিতে। বিস্ফোরণের পর ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত রবিবার সকালে ওই ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন মারা গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মো. ফারুকুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।’
অবহেলায় মৃত্যুর মামলা হবে না কেন জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের কেউ অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেনি।’
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল জানায়, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিস্ফোরণে তিনজনের প্রাণ যাওয়ার পর ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। দুর্ঘটনায় আহতরা এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাদের উন্নত চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
ভবনটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ : শিরিন ম্যানশনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম দেশ রূপান্তরকে জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া স্যুয়ারেজের লাইনে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগত। ভবনটির উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে স্যুয়ারেজের প্রধান লাইন গেছে। ওই স্যুয়ারেজের লাইনের সঙ্গেই ভবনটির তিনতলার তিনটি টয়লেটের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই সংযোগ থেকে অনেকবার আগুন লেগেছে। বালু ও পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। ছোট আগুন হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া প্রয়োজন হতো না। তিনি বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলায় থাকা খাবারের হোটেলটিতে গ্যাসের লাইন রয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গ্যাসের লাইন নেই।
ভবনটির দোকানিরাও নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, স্যুয়ারেজের লাইনের জন্য টয়লেট প্রতি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নিত মালিকপক্ষ, কিন্তু কোনো সমস্যা হলে ঠিক করে দিত না।
ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ভবনটি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবন-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি সায়েন্স ল্যাব এলাকার বিধ্বস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। গতকাল এ-সংক্রান্ত একাধিক ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনের দেয়ালে। সেখানে লেখা, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ, আদেশক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের গতকাল সকালে ড্রেসিং করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, রবিবার বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঁচজনকে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে ধানম-ির পপুলার হাসপাতাল থেকে আরও একজনকে আনা হয়। তার নাম স্বপ্না রানী সাহা (৩৯)। তার শরীরের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন অন্যদের মধ্যে যথাক্রমে আশরাফুজ্জামান ও হাফিজুর রহমানের শরীরের ৬ ও ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশা, জহুর আলী ও আকবরের শরীরে ৩৮, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ দগ্ধ। তবে কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলছেন না তিনি।
একই দুর্ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগে কবির, জাকির হোসেন জুয়েল, আইসিইউতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুর নবী, আর জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (মিনি আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন সিএনজি অটোরিকশাচালক সোহেল। নুর নবী ও সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড : আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বোর্ড গঠনের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, নুর নবীর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। গতকাল তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর : বিস্ফোরণে নিহত সাদিকুর রহমান তুষার (৩১), সফিকুজ্জামান (৪৪) ও আব্দুল মান্নানের (৬৩) মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতেই পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন প্রভাষক ডা. ফাহমিদা নার্গিস। এর আগে মরদেহ তিনটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রমজান আলী।
সুরতহাল প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, তিনজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম রয়েছে। শরীরের কোথাও দগ্ধ হয়নি। ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণের ফলে ধ্বংসাবশেষ শরীরের ওপর পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। ১৮ মিনিটের কালজয়ী এ ভাষণের শেষ কটি শব্দমালা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক ভাষণের আটটি শব্দের শেষ দুটি লাইন হয়ে গেল সাত কোটি মানুষের মনের ভাষা। হয়ে গেল মুক্তিকামী বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র।
দিনটি ছিল রবিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপেক্ষায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। তিনি আসলেন মহাসমুদ্রে আর শুরু হলো গগণবিদারী স্লোগান, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ এই সেøাগানগুলো জনতার কাছ থেকে আসল। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, তার আগেই মুক্তিপাগল কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা এ স্লোগান তুলে ধরল।
২টা ৪৫ মিনিটে ডায়াসে এসে দাঁড়ালেন ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুহূর্তেই মহাসমুদ্রের গর্জন থেমে পিনপতন নীরবতা। মাইকে বজ্রকণ্ঠে রাজনীতির কবি যখন সম্বোধন করলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’, আবার রেসকোর্সের মহাসমুদ্র সেস্লোগানে স্লোগানে গর্জন তুলল, মহানায়ক বজ্রকণ্ঠে শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা যেমন দিলেন, দিয়ে গেলেন নির্দেশনাও।
বক্তব্যের শেষে তিনি বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’, কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেল তার বজ্রকণ্ঠের ধ্বনি; কিন্তু মহাসমুদ্রে উপস্থিত কৃষক, শ্রমিক ছাত্র জনতা থামল না; তাদের গগনবিদারী গর্জন আরও বেড়ে গেল। মুক্তিকামী বাঙালি জানান দিল বজ্রকণ্ঠে আরও কিছু শুনতে চায় তারা। অতৃপ্ত বাঙালির আকাক্সক্ষা বুঝেই থেমে যাওয়া বজ্রকণ্ঠ বেজে উঠল আবার। বঙ্গবন্ধু শোনালেন পরের লাইন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে কয়েকটি শব্দমালায় গাঁথা দুটি লাইন অপ্রতিরোধ্য দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
এ ভাষণের ব্যাখ্যায় প্রবীণ রাজনীতিকরা দাবি করেন, মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘোষণা বঙ্গবন্ধু মূলত পরোক্ষভাবে দেন। কীভাবে জয়ী হতে হবে সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতিকরা বলেন, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকা অথচ লিখেছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ৫ মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার ও ৬ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দিয়ে প্রতিবেদন ছাপে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় দেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিকের সঙ্গে। একজন হলেন তৎকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফের) অন্যতম সদস্য সিরাজুল আলম খান ও তৎকালীন বাম রাজনৈতিক নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। প্রবীণ রাজনীতিক সিরাজুল আলম খান ওতপ্রোতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভেতরে-বাইরে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এনডব্লিউ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চান ৭ মার্চের ভাষণে যুদ্ধের ঘোষণা আপনি দেননি কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে, তাই ভাষণে আমি ঘোষণা করি যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’
ফ্রস্ট প্রশ্ন করেন, আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি বললে কী ঘটত? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশেষ করে ওইদিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কারণ, বিশ^কে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চাইনি। এমন কিছু হলে পাকিস্তান বিশ্বের সমর্থন পেত বাঙালির ওপর আঘাত হানার, সেই সুযোগটি তারা নিত। আমি চেয়েছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক, জনগণ তো প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। ওই ভাষণের ১৮ দিন পর ২৫ মার্চ আঘাত হানে পাকিস্তান। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি তা প্রতিরোধ করে। ওই ভাষণই বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।’
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে আলোচনায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পর্বের শেষ ধাপ হলো ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। আমি মনে করি এর আগে গণজাগরণ ঘটে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকা- শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান যখন বলে দিলেন ৩ তারিখ সংসদ বসবে না; তখন আওয়ামী লীগের প্রেস কনফারেন্স করছিলেন বঙ্গবন্ধু পূর্বাণী হোটেলে। প্রেস কনফারেন্স অর্ধসমাপ্ত রেখে তারা রাস্তায় নেমে পড়লেন। ৩ মার্চ সংসদ না বসার বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে মুখে মুখে রটে গেল, জনতার মধ্যে ছড়িয়ে গেল, জনারণ্য হয়ে গেল, মানুষ নেমে গেল রাস্তায়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এত সহজ-সরল ও সাদামাটা ছিল যে, সবার হদয়ে গ্রথিত হয়ে গেল। উজ্জীবিত-উদ্বেলিত করল শেষ দুটি লাইন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম... তারপর থেমে গেল বজ্রকণ্ঠ। অতৃপ্ত মুক্তিপাগল বাঙালি থামেনি, গর্জন উঠল। আবার বাজল এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জনসমুদ্রের আকাক্সক্ষা বুঝেই বঙ্গবন্ধু শেষ লাইনটি বলে জয় বাংলা দিয়ে শেষ করলেন অমর কবিতা।’
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা; তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। এসব স্লোগানে মেতে উঠল চারদিক। এই স্লোগানগুলো জনতা থেকে এলো। এগুলো কোনো নেতা দেয়নি, দেওয়ার আগেই মানুষ এই স্লোগান ধরে ফেলল। ভুট্টোর মুখে লাথি মার এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়া অবস্থা আমার জীবনে ওই প্রথম দেখেছিলাম। সে জন্য আমি বলছি এটা গণজাগরণের ঊর্ধ্বতন ধাপ, গণঅভ্যুত্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। সরকারি দলের একপক্ষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন আমরা শুনলাম। সেদিনের মহাসমুদ্রে আমি সহস্রাধিক ন্যাপকর্মীসহ উপস্থিত ছিলাম।’
সিরাজুল আলম খান এক ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৪/৫ ও ৬ মার্চ পর্যন্ত ২/৩ ঘণ্টা অন্তর অন্তর আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড ও বিএলএফ হাইকমান্ডের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করতেন। প্রতিটি বৈঠকেই প্রসঙ্গ থাকত ৭ মার্চের বক্তৃতা। ৬ মার্চ সন্ধ্যায় বিএলএফ বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি করে, ভাষণে সংক্ষেপে অতীত ইতিহাস, অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে পরিচালনা করা ও স্বাধীনতার আহ্বান উল্লেখ করে বক্তৃতা শেষ করা। তবে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড স্বাধীনতার সংগ্রাম লাইনটি বলার বিষয়ে আপত্তি তোলে।’ বিএলএফের অন্যতম এ নেতা বলেন, ‘৫ মার্চ ৭ মার্চের ভাষণের বিষয় নিয়ে বিএলএফের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোদের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সঙ্গে আলাপ করেছি”। ভাষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বিএলএফ সদস্যরা অনুরোধ করেন এ ভাষণ খুবই আবেগময় হতে হবে। তারা সে সম্পর্কিত তিনটি ভাগ করে দিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ৬ মার্চ সকাল থেকে বিএলএফ ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নেতাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড মুক্তির বিষয়টি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার পরামর্শ দেয়। তবে বিএলএফ দাবি করে দুটি প্রসঙ্গই থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে বিএলএফ ও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডে আপস হয়। তবে মুক্তি ও স্বাধীনতার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে থাকতে হবে অনুরোধ করে ৬ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায় কয়েকটি বিষয় নোট দিয়ে চলে যায় বিএলএফ সদস্যরা।’
টাঙ্গাইলের ফজলুর রহমান ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ৭০-এর নির্বাচনে গণপরিষদ মেম্বার হন তিনি। ওই জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। এ ভাষণ অমর এক কীর্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর আবেদনও শেষ হওয়ার নয়।’ তিনি বলেন, ‘সেদিনের রেসকোর্স ময়দান বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের মহাকাব্যে মুক্তিকামী জাতিকে শৃঙ্খলমুক্ত হতে গেলে কী করতে হবে তার সবই তুলে ধরা হয়েছে। ভাষণের শেষ অংশে বজ্রকণ্ঠ থেমে গেলেও থামেনি বীরজনতা। তারা বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে শুনতে চেয়েছেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
প্রসঙ্গত, বিএলএফের সদস্য ছিলেন সিরাজুল আলম খান, প্রয়াত শেখ ফজলুল হক মনি, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। পরে আরও অনেকেই যুক্ত হন এ সংগঠনে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সদস্য ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত খুনি খন্দকার মোশতাক।
পবিত্র শবেবরাত আজ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ মঙ্গলবার রাতে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনায় ‘নফল ইবাদত-বন্দেগির’ মধ্য দিয়ে পবিত্র শবেবরাত পালন করবেন। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রজনী। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগারসহ বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শবেবরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্যম-িত পবিত্র শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।’ খবর বাসসের।
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শবেবরাতের মাহাত্ম্য উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ, নাতসহ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে দুই সরকারের একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের বেসরকারি খাতগুলোকে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের জন্য একক প্ল্যাটফরমে আনতে হবে।
গতকাল সোমবার কাতারের রাজধানীতে দোহা ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩ ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশকে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলকে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। একই সঙ্গে তিনি কাতারে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং জাতিগঠন প্রচেষ্টায় তাদের অংশগ্রহণ কামনা করেন।
কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের কিছু থ্রাস্ট সেক্টরের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। তিনি জানান, তার সরকার অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অফশোর গ্যাস অনুসন্ধান ও জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থায় কাতারের দক্ষতা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশের কৃষি প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটিও কাতারের সঙ্গে বাই-ব্যাক ব্যবস্থায় কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সেখানে কাতার রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি উভয় ক্ষেত্রেই জড়িত হতে পারে।
এ ছাড়া কাতারের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বিবেচনা করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ড মার্কেটকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা শিগগিরই পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে ব্যাঘাত বাংলাদেশের মতো দেশকে কঠিন জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও রপ্তানির সুযোগ অন্বেষণ করতে কাতারকে অনুরোধ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও কাতার দৃঢ় ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এবং এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায় দুদেশের মানুষের মধ্যে একটি চমৎকার সেতুবন্ধ। আমি আজ কাতারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে দেখে আনন্দিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, কাতার ন্যাশনাল ভিশন, ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। আমরা কাতারে উন্নত কর্মসংস্থানের বাজার পূরণে আমাদের কর্মীবাহিনীকে জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সজ্জিত করতে পারি। আমাদের জনগণের ভালো যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা কাতার সরকার ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রেমিট্যান্স উপার্জনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে এবং এটি এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আমরা ২০৩০-এর প্রথমার্ধের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম হয়ে উঠব বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নপূরণে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং কাতারের নেতৃত্ব ও জনগণ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে ৫ মূল সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য পাঁচটি মূল সহায়তা চেয়েছেন, যা একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে উন্নীত করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ একে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।’
কিউএনসিসি অডিটোরিয়াম-৩-এ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে ‘স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেটিভ সোসাইটির জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ মূল সমর্থনগুলো উপস্থাপন করেন।
প্রথম সহায়তা হিসেবে সরকারপ্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকর প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদান করুন।
দ্বিতীয়টিতে তিনি বলেন, এলডিসিগুলোতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সহায়তা করুন।
তৃতীয় সহায়তা হিসেবে তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলায় পেশাদার গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
তিনি আরও বলেন, চতুর্থত, উত্তরণের পরও বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি-রাসায়নিকের জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে এলডিসি মওকুফের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। পঞ্চম সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন দুটির জন্যই সহায়ক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা।
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী রূপকল্পে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত করেন। তিনি বলেন, এটি চারটি মূল উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তার সরকার জনগণের কাছে ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই সময় এটিকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কিন্তু, কভিড-১৯ মহামারী প্রমাণ করেছে, আমরা আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি।’
তিনি বলেন, এই মহামারী আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিত নয়। তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ করা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, যে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য এলডিসিগুলোর গড় জিডিপি ব্যয় এখনো ০.৬ শতাংশের নিচে রয়েছে ও তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে রয়েছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসি উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই তার যোগ্যতা প্রমাণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অন্তর্বর্তীকালে আমাদের সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ। জাতীয় প্রয়োজন নির্ণয়ে এলডিসির জন্য আমরা ইউএন টেকনোলজি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি।’ তার সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান-মনস্কতার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রযুক্তিগত বিষয়সহ দেশীয়ভাবে তৈরি জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘আরও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে আমাদের সহনশীলতা প্রযুক্তিতে যাওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সরকার পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুটি পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। আমাদের লক্ষ্য অগ্রাধিকারভিত্তিক ফ্লোটিং সোলার প্যানেল, অবশোর উইন্ড টারবাইন ও গ্রিন হাইড্রোজেনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।’
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।