
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও সেখানকার শরণার্থীরা রোহিঙ্গা সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ঢাকা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনায় নিয়োজিত থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি ও সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎসহ বেশ কটি বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৪ মার্চ দোহায় পৌঁছান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ (ইউক্রেনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো ফোকাস (দৃষ্টি) এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে।’
আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ এরই মধ্যে সম্প্রচার করা হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ অংশটি আলজাজিরায় আগামী ১১ মার্চ (শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিট) জিএমটি ৪টা ৩০ মিনিটে সম্প্রচার করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমারে নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড এবং পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয় তখন আমরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, আমরা তাদের আসতে দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবার জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন। আমরা তাদের জন্য আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসানচর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা... আমরা সেখানে শিশুদের জন্য ভালো থাকার ব্যবস্থা এবং চমৎকার সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
রোহিঙ্গা শিবিরে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আগুনে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) একে অপরের সঙ্গে লড়াইরত। তারা মাদক, অস্ত্র, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।’
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলডিসি দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান শেষে গতকাল বিকেলে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বিমানটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের তারা যেসব দেশে কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনভঙ্গ করে কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সাবধানও করে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, এটা আর বরদাশত করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন আপনি কাতারে আছেন, এ দেশের প্রচলিত আইন আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোনো চেষ্টা করব না, কোনো ব্যবস্থাও নেব না, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণও অনেকে ঠিকভাবে নেন না। প্রশিক্ষণের সময় অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন বলে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করেন, সেই অপরাধের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠানোর যে সুযোগ আমরা পাই সে সুযোগও হারিয়ে যায়। আরও ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগ থাকে সেটা তারা পান না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ।
তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দেশে এসেছেন (৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে) বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি দেশের মানুষের জন্য দুবেলা-দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। তাদের জীবনমান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৈধপথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোঁকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধপথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সবাইকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে শবেবরাতের রাত হওয়ায় সবার কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা জনগণের চাহিদা মেটাতে কাজ করছি এবং আমরা তাদের একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট লাগামহীন দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং নির্যাতনের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করে তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চলেছে। বাসস
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে তিনজনের প্রাণহানির রেশ না কাটতেই পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় স্তম্ভিত মানুষ। বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিস্ফোরণের মাত্রা এত ব্যাপক ছিল যে, পাশের দুটি ভবনের কয়েকটি তলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মতো অবস্থা হয়েছে গোটা এলাকার। পথচারীসহ ২১ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর নিখোঁজ আছেন একজন। হতাহতরা মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন এবং দগ্ধ হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে র্যাব বলছে, এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। রহস্যময় এ বিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন।
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের ক্যাফে কুইন মার্কেট নামে একটি সাততলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাশের আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আটকা পড়েন ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পরও গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্ধার হয়েছে দুজনের রক্তাক্ত মরদেহ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে গুলিস্তান বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইন টাওয়ার ভবনে বিস্ফোরণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ১৯ জনের মরদেহ এবং ৪০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে হাসপাতাল সূত্রে ২০ জনের মরদেহ পাওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া গত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও একজন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা সাততলা ভবনের বেজমেন্টে মূল বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের ক্লু খোঁজা হচ্ছে। আমরা অনুমান করছি, মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান আছে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান বলেছেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি।’ আর সেনাবাহিনী বলেছে, ভবনে বিস্ফোরকদ্রব্যের কোনো আলামত মেলেনি।
উল্লেখ্য, সায়েন্স ল্যাবের ঘটনায় গ্যাসজনিত বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ভবনটির সামনের সড়কে ছিল তীব্র যানজট। সে অবস্থায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ভবনের ইট, পাথর, কাচসহ বিভিন্ন মালামাল উড়ে এসে পড়ে সড়কে। সেগুলোর আঘাতে অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিস্ফোরণের সময় কয়েকশ লোক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পথচারীদের কারও পা, কারও হাত, কারও চোখমুখ আবার কারও মাথায় গুরুতর জখম হয়। বিস্ফোরণে ভবনের চুরমার কাচের টুকরো উড়ে এসে বিদ্ধ হলে অনেকেই গুরুতর জখম হন। ভবনটির সামনের সড়কের বিপরীত পাশে ফুটপাতের টং দোকানি মো. ফয়েজ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়ি। এরপরই চারপাশে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো ইটের গুঁড়া ও ভাঙা কাচের টুকরো উড়ে এসে পড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে কয়েকশ মানুষ। যাদের অনেকে মারা গেছেন বলে মনে হয়েছে।’
পাশের কাদের ম্যানশন নামের ভবন-মালিক শফিউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আসরের নামাজের সময় বিস্ফোরণ হয়। ওই সময় আমি বাসায় ছিলাম। বিকট শব্দ শুনতে পাই, পুরো বাসা কেঁপে ওঠে। বাইরে এসে দেখি রাস্তায় রক্তে ভেসে গেছে, মানুষ লাল হয়ে আছে। একশর বেশি লোককে শুধু রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০-২৫টি অ্যাম্বুলেন্সে করে সবাইকে নিয়ে গেছে।’
স্থানীয় জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবনের পাশে গাড়িতে যারা ছিল সবাই যেন ঝলসে গিয়েছিল। রিকশায় থাকা এক লোক কাতরাচ্ছিল। যে যেভাবে পারে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাফে কুইন ভবনটির সামনের সড়কটিতে দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে বাস, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি। বিস্ফোরণ ঘটনায় ভবন ও এর দুই পাশের আরও দুটি ভবনের দেয়াল, জানালা ও কলাপসিবল গেট ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে সড়কের ওপর পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দোকানগুলো। ভিড় করে উৎসুক জনতা, এ সময় উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে তাদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে একে একে চলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আটকেপড়াদের একেক করে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তদারকি করতে দেখা গেছে। সেখানে স্বজনের খোঁজে ভিড় করেন অনেকেই। প্রায় তিন ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোর পর হঠাৎ সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, ভবনটির কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হচ্ছে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধারকাজে বিরতি দেয় ফায়ার সার্ভিস। তখন পর্যন্ত ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করেনি তারা। গতকালও দিনভর চলেছে উদ্ধার অভিযান। ভবনের ভেঙে পড়া ইট-পাথরের নিচ থেকে গতকাল বিকেলেও দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ডগ স্কোয়াডও ব্যবহার করা হয় তল্লাশিতে। বেজমেন্টে লোকজন আটকেপড়া থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান অভিযান স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দিনমনি শর্মা। তিনি জানান, মেহেদি হাসান স্বপন নামে একজন নিখোঁজ বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। গতকাল পুরোদমে অভিযান চালানো হয়েছে।
বিস্ফোরণ হওয়া সাততলা ভবনটি বাণিজ্যিক ও আবাসিক কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে। ভবনের বেজমেন্ট থেকে তিনতলা পর্যন্ত স্যানিটারির পণ্যের দোকান ও গুদাম, বাকিটা আবাসিক। ক্ষতিগ্রস্ত পাশের দুটি বহুতল ভবনও বাণিজ্যিক এবং আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই দুটি ভবনের একটিতে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়ের সব গ্লাস ভেঙে পড়েছে, অন্যটির দোতলা পর্যন্ত থাকা দোকানের বেশিরভাগ ধ্বংস হয়েছে। আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সামনের আরও কিছু ভবনের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের সময় আস্ত ইট উড়ে গিয়ে ওইসব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনার পরপরই ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। গতকাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
২০ জন নিহত : বিস্ফোরণে গতকাল পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তিথিরচড় গ্রামের সুমন, বরিশাল সদর উপজেলার কাজিরহাট গ্রামের ইসহাক মৃধা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শেখদি এলাকার মনসুর হোসেন, বংশাল আলুবাজার এলাকার মো. ইসমাইল হোসেন, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার পশ্চিম লালপুর গ্রামের আল-আমিন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকার রাহাত, চকবাজারের ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নদী বেগম, মুন্সীগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর গ্রামের মাঈন উদ্দিন, বংশাল কেপি ঘোষ স্ট্রিটের নাজমুল হোসেন, মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা গ্রামের ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দির আবু জাফর সিদ্দিক, বংশাল আগামসিহ লেনের আকুতি বেগম, শরীয়তপুরের নড়িয়ার কাঠাকুলী গ্রামের ইদ্রিস মীর, রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকার নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের উলুকাঠা গ্রামের হৃদয়, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের আবদুল হাকিম সিয়াম, বংশালের নর্থ সাউথ রোডের বাসিন্দা মমিন উদ্দিন সুমন ও মমিনের দোকানের কর্মচারী রবিন হোসেন। নিহতরা দোকান কর্মচারী, সিরামিক পণ্যের ক্রেতা ও পথচারী বলে জানা গেছে।
মধ্যরাতে লাশ হস্তান্তর : ঘটনার পর হতাহতদের নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ২০০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে তারা।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার থেকে মো. সুমন জানান, রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ১৭২ জন টিকিট নিয়ে চিকিৎসা নেন এবং ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির অবতারণা হয়। মধ্যরাতে ১৬ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবীর কুমার দাশ জানান, মর্গে থাকা ১৬টি লাশ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, গতকাল উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহও হস্তান্তর করা হয়। এর মাঝে গতকাল আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই স্বজনরা নিয়ে গেছেন সুমনের মরদেহ। পরে লোকজন এসে তার নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সব মিলিয়ে ১৯ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বজনরা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া লাশ নিয়ে যাওয়া সম্রাটের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
আহত একজনের মৃত্যু : বিস্ফোরণের ঘটনায় ১১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা হলেন হাসান, ইয়াসিন, মুসা হায়দার, খলিল, আজম, ওলি শিকদার, বাবলু, আলআমিন, বাচ্চু মিয়া, জাহান ও মোস্তফা। মোস্তফাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটের হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসা মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন। তিনি বলেন, মুসার শরীরের ৯৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ২০ জন। এর মধ্যে একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মাথায় আঘাতসহ মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে। অনেকের শরীরের হাড়গোড় ভেঙে গেছে।
তদন্ত কমিটি ও মামলা : বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ফায়ার সার্ভিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি তিন সদস্যের নাম পরে জানানো হবে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় বংশাল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। এর আগের দিন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। গতকাল রাতে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও ডিএমপির সিটিটিসি তদন্ত করছে। তারা যদি এমন কোনো কিছু পায়, যাতে মনে হয় নাশকতা বা বিস্ফোরক তাহলে অন্য মামলা হবে। আপাতত অপমৃত্যুর মামলার আলোকে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে।
যা বললেন সংশ্লিষ্টরা : ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিস্ফোরণের কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন, কেন বিস্ফোরণ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন এটা কোনো নাশকতামূলক ঘটনা নয়। অনেক সময় নানা কারণে বিস্ফোরণ হয়, কখনো মিথেন গ্যাস, কখনো এসির গ্যাস। এটা গ্যাসজনিত কোনো বিস্ফোরণ হতে পারে। এরপরও তদন্ত করা হবে এটা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা।’
একইদিন রাত ১১টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণটি ভবনের বেজমেন্টে হয়েছে। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এতে কোনো বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি।’
‘এই রকম কপাল আমার, একসঙ্গেই দুজনের লাশ নিয়ে যাচ্ছি বাসায়। ওদের দুইটা সন্তান। ওদের সামনে কী করে যাব? ওদের কী করে বুঝ দেব?’ গত মঙ্গলবার গুলিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দম্পতির লাশ বুঝে পেয়ে এ কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাদের চাচা জয়নাল আবেদিন। তার এমন বুকফাটা কান্নার বেদনার্ত সুরে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
খানিক পর চাচা জয়নালের কান্নার আওয়াজও যেন ফুরিয়ে আসছিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। একটু শান্ত হয়ে আসার পর তিনি জানান, মমিনুল ইসলাম ও স্ত্রী নদী বেগম দম্পতি চকবাজার ইসলামবাগে নিজেদের বাড়িতে থাকতেন। ক্যামেরাসহ কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করতেন মমিনুল। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পোরকরা গ্রামে। বাড়ির জন্য স্যানিটারি পণ্য কিনতে সিদ্দিকবাজার গিয়েছিলেন বিকেলে। সেখানে ফুপাতো ভাইয়ের দোকানে নিজের মোটরসাইকেল রেখে স্ত্রীকে নিয়ে পণ্যগুলো কিনতে যান। তখনই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। জয়নালের মতো কেউ বুঝে নেন ভাই, বোন, কেউবা মায়ের মরদেহ। স্বজনের নিথর দেহটি বুঝে পেয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তারা। পঞ্চাশোর্ধ্ব দুলাল মিয়া ছেলে আবদুল হাকিম সিয়ামের লাশ বুঝে নেন মঙ্গলবার মধ্যরাতে। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। এ যেন পৃথিবীসমান বেদনাময় দৃশ্য। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার এলাকায়। দু-তিন বছর ধরে সিদ্দিকবাজারে জয়নাল স্টোর নামে স্যানিটারি দোকানে চাকরি করছে সিয়াম। বাবা সিদ্দিকবাজার রোডে এইচআর পলিমার নামে একটি দোকানে কাজ করেন।
দুলাল মিয়া জানান, সেদিন বিকেলে রিকশাচালক তাকে বলেন বিস্ফোরণের কথা। তখন ছেলের কথা মাথায় আসতেই তার দোকানে যান তিনি। জানতে পারেন নিজের দোকান থেকে মাল আনতে আরেকটি দোকানে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে আহত হয় সিয়াম। পরে চিকিৎসাধীন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।
স্বজন হারানোর বেদনার্ত মুহূর্তে মরদেহ বুঝে পাওয়ার অব্যবস্থাপনা মানতে পারছিলেন না অনেক স্বজন। সম্রাট ও সুমন নামে দুজনের লাশ স্বজনরা মর্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু যারা স্বজনের লাশও পাননি তাদের কষ্ট দেখার যেন কেউ ছিল না। গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। পুলিশ তাকে সামনে যেতে নিষেধ করলে তিনি খুব অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘আমার স্বপন ভাই ভেতরে আটকে আছেন, তাকে বের করে নিয়ে আসুন।’
কামাল জানান, বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে টাইলসের দোকানে ম্যানেজার ছিলেন স্বপন। দোকানটি ভবনের বেজমেন্টে ছিল। তার সঙ্গে আর চার কর্মচারী কাজ করতেন, তাদের একজনকে হাসপাতালে পাওয়া গেছে। তবে বাকিদের সন্ধান মেলেনি। তারা ভেতরেই জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় আছেন।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের ডগ স্কোয়াডের একটি দল পাশের ভবন দিয়ে প্রবেশ করে। তারা সেখান থেকে ভেতরে মরদেহ থাকার আলামত পান। এরপর ফায়ার সার্ভিস ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু কামালের ভাই স্বপনের সন্ধান মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকার সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, সবখানে খুঁজেছি; কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।’
সেদিন ভাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন খলিল শিকদার ও অলি শিকদার নামে ভ্যানচালক দুই ভাই। বিস্ফোরণে তাদের শরীরের অনেকটা পুড়ে গেছে। বড় ভাই অলির অবস্থা বেশি গুরুতর। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুরো শরীর পুড়েছে। খবর পেয়ে খলিলের স্ত্রী কোহিনুর বেগম সন্তানদের নিয়ে মাদারীপুর থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন। স্বামীর আয়েই সংসার চলে। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে তাদের। স্বামীর চিকিৎসা, সংসার সব মিলিয়ে কোহিনুরের দিশেহারা অবস্থা।
বেঁচে ফেরাদের মুখে ঘটনার বর্ণনা : ‘বিকট শব্দে পাশের দেয়াল ভেঙে গায়ের ওপর যখন পড়ল, একই সময় গরম হাওয়া চোখ-মুখ ঝলসে দিল। ভেবেছিলাম মারা যাচ্ছি। কিছু সময় পর হামাগুড়ি দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে দোকান থেকে কোনোমতে বের হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার বর্ণনা দেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সাইফুল ইসলাম (২৫)। মাথা, মুখ ও পিঠে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর শয্যায় কাতরাতে দেখা যায় সাইফুলকে। তার পাশে বসা স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।
গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদককে সাইফুল বলেন, ‘বিকট শব্দের পর সব অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা চারজন কর্মী ছিলাম আর অনেক কাস্টমার আমাদের দোকানে ছিল।’ সোনিয়া জানান, শরীরে ৪০টির বেশি সেলাই লেগেছে সাইফুলের।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন খলিলুর রহমান (৩০)। সবজির বীজ বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক তিনি। ঘটনার সময় কার্টনভর্তি মাল মাথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বিকট একটা শব্দ শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শরীরের পেছন দিকে কাচ ও ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী।
একই ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় আছেন মো. শহীদুল। তিনি পুরান ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তের শ্রমিক। ঘটনার সময় ওই সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। শহীদুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেঁচে আছি, এটাই সৌভাগ্য। তবে বাম হাত ও বাম পা আঘাতে জখম হয়েছে, সেখানে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।’
ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পল্লব চক্রবর্তী। তিনি জানান, তার পণ্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। পুরান ঢাকার গোপীবাগে পরিবার নিয়ে থাকেন। পণ্য পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে আহত হন। তার বাম পা পুরোটাই জখম হয়েছে, নাক ও মুখ কাচের আঘাতে কেটে গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়া করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার জন্য চলছে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো করলেও পরে খেই হারিয়েছে কমিশন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম নিয়ে আপত্তি থাকায় এবং অর্থ-সংকটের কারণে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি স্থগিত করেছে সরকার। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অংশীজনদের দাবি ছিল, সব কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা বা সিসিটিভি ক্যামেরা (সিসিক্যাম) স্থাপন করা উচিত। এটি করা গেলে নির্বাচনে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা আসবে। কিন্তু অর্থ-সংকটের কারণ দেখিয়ে এ প্রকল্পও বাতিল হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
গত ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজধানীর নির্বাচন ভবনের পঞ্চমতলায় ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান।
সিইসি পরে সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় নির্বাচনে এই ক্যামেরা ব্যবহার হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে নেবে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওই বক্তব্যের পর সংসদের ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে কাজ শুরু করে কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বেশ কটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, সব আসনেই সিসিক্যাম ব্যবহার করা সম্ভব। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থের ছাড় হলে আগামী মে মাসেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে ইসি-সূত্র জানায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৩০০ আসনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র হতে পারে। ভোটকক্ষ হতে পারে সোয়া দুই লাখের বেশি। প্রত্যেক কক্ষে একটি করে সিসিক্যাম বসালে সোয়া দুই লাখের বেশি ক্যামেরা লাগবে। ভোটকক্ষের বাইরে দুটি করে বসাতে চাইলে সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিক্যামের প্রয়োজন হবে।
এতে বর্তমান বাজার মূল্যে কমবেশি ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কমিশন সব আসনে নাকি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিক্যাম বসাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। অর্থপ্রাপ্তি, জনবল ও মনিটরিং টিমের সামর্থ্য অনুযায়ী কমিশন একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার চায় ইসি। প্রতিষ্ঠানটি সিসিটিভি ক্যামেরার মূল চাবিকাঠি বা মাস্টার অ্যাডমিনের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রাখবে। আর আসনভিত্তিক যে রিটার্নিং অফিসাররা থাকবে তাদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ের মনিটরিং পাওয়ার দেওয়া হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। আমরা ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা রাখার পক্ষে। তবে দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। মাস্টার অ্যাডমিন ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে থাকলেও স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারদের মূল দায়িত্বে রাখা হবে। সব আসনে অথবা অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টাকা পেলে টেন্ডারের কাজ শুরু করব।’
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ১২৪২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরা বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।’
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে ইসি সিসিটিভির জন্য ১৩১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে। এর মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাড়া, কানেকশন সেট, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির জন্য (২২,৫০০০টি) ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; ১৬ চ্যানেল ডিভিআরের জন্য ৮ কোটি ৭৫ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ৮ কোটি ৭৫ লাখ; হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (৫০০ গিগাবাইট ক্ষমতার ২ হাজার ৫০০টি) বাবদ ২ কোটি ৭৫ লাখ; মনিটর ভাড়া (প্রতি আসনে ৫টি করে) ৭ কোটি ৫০ লাখ; মনিটর ভাড়া (কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা) বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ১০ কোটি; কেবল কানেকশন বাবদ ১০ কোটি ৮০ লাখ; ডিকোডার মেশিন ভাড়া বাবদ ৬২ কোটি ৫০ লাখ; সার্ভার ভাড়া বাবদ ৫০ কোটি এবং সিসিটিভি স্থাপন ও সাপোর্ট সার্ভিস বাবদ ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি খরচ হবে যেখানে ইন্টারনেট নেই সেখানে এর ব্যবস্থা করার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা থেকে তার টেনে লাইন চালু করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরই মধ্যে ছয়টি প্রপোজাল জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানসহ আইডিইএ (আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস) প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সব প্রস্তাব দেখে একটি খসড়া প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসের শুরুতে টেন্ডার করা না গেলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না। প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা সংগ্রহ করতে হবে। এত ক্যামেরা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোগাড় করা সম্ভব নয়। এজন্য ২-৩ মাস সময় লাগবে। সারা দেশে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও দেড় মাস। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ফিক্সড করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। টেস্টিংয়ের কাজ করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহকে ডেডলাইন ধরে তারা কাজ শেষ করতে চান সংশ্লিষ্টরা। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিয়েই কাজ গুছিয়ে রাখতে চান তারা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভাগওয়ারি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে কর্মকর্তাদের। রিটার্নিং অফিসাররা ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুসরণ করবেন। ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে যে ডেটা স্টোর আছে তার সঙ্গে আরও ৭০ থেকে ৮০টি নতুন যোগ করা হবে। তিনটি বিষয়ের কাজ করতে দেওয়া হবে রিটার্নিং অফিসারদের। ভিডিও দেখা, রেকর্ড করা ও স্ক্রিনশর্ট নেওয়ার কাজ করতে পারবেন তারা। কোনো কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিলেও অটো রেকর্ড হবে এবং ডেটা কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হবে। কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ সিস্টেম চালু হবে। ইসির আগারগাঁওয়ের অফিস থেকে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর ক্যামেরা মনিটর করা হবে। প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কেন্দ্রের সার্ভারে ঢুকে যেকোনো সিসিটিভিতে সেখানকার পরিস্থিতিও দেখতে পারবেন মাস্টার অ্যাডমিন।
নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কারিগরি সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত এলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।’
অর্থ-সংকটের যুক্তিতে প্রকল্প সরকার বাতিল করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনো কিছুতেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকার কি এই প্রকল্প পাস করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু করার ইচ্ছা থাকলে সিসিটিভির বিষয়গুলোর প্রতি তারা ইতিবাচক থাকবে।’
জানিপপ সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ-সংকটে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিছু টাকা খরচ হলেও প্রকল্পটি রাখা উচিত।’
ঘরের মাঠটাই শুধু বাংলাদেশকে একটু সাহস দিতে পারে। এর বাইরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে স্বাগতিকদের পক্ষে কিছু নেই। গত ডিসেম্বরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি পুরো শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেনি। তবুও জস বাটলারের নেতৃত্বে দলে যারা আছেন তারাই কম ভয়ংকর কোন দিক থেকে? এই ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে রুখে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চট্টগ্রামে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অবশ্যই অসম লড়াই, তবুও বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে এ সিরিজ থেকে বড় শিক্ষার সুযোগ দেখছেন। পাশাপাশি শেষ ওয়ানডে জয়ের আত্মবিশ্বাসে তাক লাগানো কিছু করার লক্ষ্য সাকিব আল হাসানদের। এদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ক্রিস ওকসেরও সুরটা সমীহের। বাংলাদেশ ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জ উপহার দেবে বলে জানান তিনি।
গত বছর প্রায় পুরোটাই টি-টোয়েন্টি খেলে কাটাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এ ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বিরতি পড়েছিল।
পরের বিশ্বকাপ আগামী বছর। তার আগে বিস্তর সময় আছে এ ফরম্যাট নিয়ে কাটাছেঁড়া করার। একই সঙ্গে কোচ বদল হওয়ায় এ ফরম্যাটে নতুন শুরুরও একটা ব্যাপার থাকছে। সেই শুরুটা হচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। কোচ হাথুরুসিংহে ব্যাপারটিকে সাদরে গ্রহণ করছেন। জানালেন এ সিরিজ দিয়ে তিনি ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির সেরা পরীক্ষায় মানসিকতা দেখতে চান, ‘আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য আমি খুব খোলামন নিয়ে বসে আছি। এ সিরিজটা অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা জিততে চাইব এটাই প্রথম লক্ষ্য তবে এটাও দেখতে চাই যে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা কোথায়। আমি তো জাদুকর নই যে সব বদলে দেব। ক্রিকেটাররাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে প্রমাণ করে দেখাবে কেন আমি তাদের নির্বাচন করব। আমি বলব টি-টোয়েন্টি স্কিল দেখানোর এটা সুবর্ণ সুযোগ।’
ওয়ানডেতে দুই দলের নিয়মিত দেখা হলেও এ ফরম্যাটে দুই দলের দেখা হয় না বললেই চলে। ২০২১ বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশকে অনায়াসে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ফরম্যাটের হিসেবে দুই দলের লড়াইটা নতুন। হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে এ সুযোগটা নিতে পারে বাংলাদেশ। সুযোগ আরও একদিক থেকে আছে। ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল নিয়ে এলেও বিশ্বকাপজয়ী দলের অনেকেই নেই এ সফরে। বাংলাদেশের মতো ইংল্যান্ডও বিশ্বকাপের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে। বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, অ্যালেক্স হেলস, ডেভিড উইলি ও ক্রিস জর্ডানরা না থাকায় ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ছন্দটা একটু গুছিয়ে উঠতে হবে। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা বিপিএল খেলে টি-টোয়েন্টির ছন্দেই আছেন। নতুন যুক্ত হওয়া রনি তালুকদার, তানভীর আহমেদ, শামীম পাটোয়ারী ও রেজাউর রহমান রাজারা বিপিএলের সেরা পারফরমার। সব মিলিয়ে শক্তির দিক থেকে না হলেও সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ছন্দের দিক থেকে একটু এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
অবশ্য হাথুরুসিংহে বিপক্ষে কে আছেন বা নেই এসব দিকে তাকাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ায় বসেই ইংল্যান্ডকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন। ওই দলের শক্তি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই অবগত। এ ফরম্যাটে নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ইংল্যান্ডের স্টোকসদের না পেলে বরং অন্য শিক্ষা নিতে চাইছেন হাথুরু, ‘দুই ফরম্যাটেই তো ওরা চ্যাম্পিয়ন। ৫০ ওভারে ওদের দলটা খুবই স্থিতিশীল। টি-টোয়েন্টি দলও তেমন। তবে এবার অনেককেই তারা বিশ্রাম দিয়েছে। অবশ্যই ২০২২-এর অনেকেই ২০২৪ বিশ্বকাপ খেলবে না। ওরা নতুন দল গড়তে চাইছে। আমরা দেখতে পারব বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কীভাবে দল তৈরি করে।’ তবে এ সিরিজ থেকেই যে ২০২৪ আমেরিকা ও উইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করছেন তা লুকাননি হাথুরু, ‘টি-টোয়েন্টি দলটাকে মাত্রই দেখলাম। হ্যাঁ, আমরা পথচলাটা শুরু করেছি। কিন্তু এখান থেকে অনেক জল গড়াবে। ক্রিকেটারদের জন্য সঠিক সময় বিশ্বকাপ মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করার।’
ইংল্যান্ড অবশ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে অহমিকা দেখাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশকে সমীহ করছে টি-টোয়েন্টিতেও। দলটির পেসার ক্রিস ওকস কন্ডিশন ও ঘরের মাঠে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স সামনে রেখে ব্যাকফুটে থাকার কারণ দিলেন, ‘বাংলাদেশ, খুব, খুব ভালো দল। বিশেষত যখন ওদের কন্ডিশনে খেলা হবে। আমরা ভুলে যাইনি ওয়ানডেতে কী হয়েছে। সব শেষবারও আমরা হেরেছিলাম এবারও একটি ম্যাচ হারলাম। দুটো সিরিজই কিন্তু উত্তেজনার ছিল। টি-টোয়েন্টিতে আমরা একইরকম চ্যালেঞ্জ আশা করছি। হয়তো আমরা বিশ্বকাপ জিতে এসেছি কিন্তু এ কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারানো সত্যিই কঠিন হবে।’
ওকস জানালেন, ইংল্যান্ডের চিন্তা করার আরও কারণ আছে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে নতুন চার ক্রিকেটার যুক্ত করেছে। তাদের কাউকেই আগে দেখেননি ওকসরা। ওদের বিপক্ষে ম্যাচে মুখোমুখি হওয়াটা চ্যালেঞ্জের অন্য কারণ, ‘অবশ্যই এটা চ্যালেঞ্জের। কারণ একজন ব্যাটারের শক্তি-দুর্বলতা জানা থাকলে আপনি সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কিন্তু অপরিচিত কাউকে চেনার আগেই সে আপনার কাছ থেকে ২০-৩০ রান নিয়ে নিতে পারে বা আপনাকে আউট করে দিতে পারে। আমরা শুনেছি ওদের নতুনরা বিপিএলে খুব ভালো করে এসেছে। এটা ওদের আত্মবিশ্বাস দেবে। যেমনটা বলছিলাম এ সিরিজে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ আশা করছি।’
ওকস যতই চ্যালেঞ্জের কথা বলুক, টি-টোয়েন্টির হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে তারা যে অনেকটা এগিয়ে তা খালি চোখে স্পষ্ট। গত বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে আসরে প্রথমবার দুই জয় তোলা বাংলাদেশকে তৃপ্তির ঢেকুর দিতে পারে। তবে এ ফরম্যাটের মূল সুরটা ধরা বাকি থেকেছে নিশ্চিত। সেই সুর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসম লড়াইয়ে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকল।
দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে বছরে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ছে ৪০ হাজার মানুষের। এ ছাড়া আকস্মিক কিডনি বিকলের শিকার হচ্ছেন আরও ১৫-২০ হাজার মানুষ। কিডনি বিকল এসব রোগীর বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা কিডনি ডায়ালাইসিস।
এমন তথ্য জানিয়ে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে ব্রেন ডেথ রোগীদের কিডনিদান ও আত্মীয়স্বজনের থেকে কিডনি সংগ্রহের পরিমাণ খুবই সামান্য। এমনকি কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যবস্থাও দেশে খুবই অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল। এমন অবস্থায় বেঁচে থাকতে এসব কিডনি বিকল রোগীর শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায় কিডনি ডায়ালাইসিস। কিন্তু দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থাও অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডায়ালাইসিসও করাতে পারেন না এসব রোগী।
এমন অবস্থায় দেশের কিডনি বিকল রোগীদের মাত্র ১০ শতাংশ কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন বলে জানিয়েছে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন।
এ ব্যাপারে ক্যাম্পস প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন সংখ্যা এখনো অনেক কম। কারণ কিডনিদাতা পাওয়া যায় না। পৃথিবী জুড়েই কিডনিদাতার সংকট। আমেরিকাসহ আরও কিছু দেশ যত কিডনি প্রতিস্থাপন হয়, তার ৬০ শতাংশ নেওয়া হয় ব্রেন ডেথ রোগীদের থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেটা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত সারাহ নামের মাত্র একটা মেয়ে কিডনি দান করল। সে জন্য কিডনি বিকল রোগীদের বাঁচাতে নির্ভর করতে হয় ডায়ালাইসিসের ওপর।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ডায়ালাইসিসের খরচ এত বেশি যে কিডনি বিকল রোগীর ৯০ শতাংশই এই ব্যয় বহন করতে পারে না। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী বহন করতে পারে। আবার যে ১০ শতাংশ বহন করতে পারে, এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তাদের ৯০ শতাংশের পরিবার দেউলিয়া হয়ে যায়।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা’।
প্রয়োজন ৩০ হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন, আছে ২ হাজারের কম : এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতি বছর ৪০ হাজার কিডনি রোগীর কিডনি বিকল হচ্ছে। এসব রোগীর সবার ডায়ালাইসিস দিতে হয়। সে হিসেবে এক বছরে যাদের কিডনি বিকল হচ্ছে তাদের জন্য কমপক্ষে ছয় হাজার মেশিনের দরকার। কিন্তু যখন ডায়ালাইসিস করবে, তখন তারা কয়েক বছর বেঁচে থাকে। সে হিসেবে একজন কিডনি বিকল রোগী ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে যদি পাঁচ বছর বাঁচে, তাহলে পাঁচ বছরের জন্য ৩০ হাজার মেশিন দরকার। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি মিলে দুই হাজারের কম মেশিন আছে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এর মধ্যে বেশির ভাগই বেসরকারি পর্যায়ের মেশিন এবং সেখানে ডায়ালাইসিস ব্যয় বেশি।
সরকারি মেশিন ৩৮৭, ঢাকায় ২৫১ : সরকারের হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এবং সরকারি হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৩৮৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫১টি মেশিন ঢাকার ছয় প্রতিষ্ঠানে এবং বাকি ১৩৬টি মেশিন ঢাকার বাইরে পাঁচটি মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে। এর বাইরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে কিছু ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে।
অন্যদিকে, এই ১১টি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৪১টি ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় আটটি ও ঢাকার বাইরে ৩৩ মেশিন দিয়ে ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছে না।
ঢাকায় বেশি মেশিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে, কম মিটফোর্ডে : এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার ছয় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেশিন ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৬টি। এখানে দুটি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এমন তথ্য জানিয়ে হাসপাতালের ৬৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। দু-তিনটি নষ্ট আছে। সেগুলো ঠিক করছি। দৈনিক দুই শিফটে প্রায় ১০০ জনকে ডায়ালাইসিস দিই।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম ডায়ালাইসিস মেশিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল)। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী মো. রশীদ উন নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ২৭টি মেশিন আছে ডায়ালাইসিস করার জন্য। এখানে রোগী কম। দৈনিক গড়ে ৪০টার মতো ডায়ালাইসিস হয়। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা বেশি আছে। ৭-৮ বছরের পুরনো ৪টি মেশিন আছে। সেগুলো ঠিক করার জন্য কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এগুলো ঠিক করতে পারলে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। আগে ছিল আটটি মেশিন। এক বছর আগে ১৯টি নতুন যুক্ত হয়েছে। কিডনি বিভাগের ওয়ার্ডে ১৪টি বেড আছে। ডায়ালাইসিস ফি ৪১৪ টাকার মতো লাগে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ঠিক আছে।
কিডনি হাসপাতালে মেশিন ৫৮ : দেশের কিডনি রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘জাতীয় কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে’ ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা ৫৮টি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের নতুন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বাবরুল আলম। এই কর্মকর্তা জানান, সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপের অধীনে ৫০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। হাসপাতালের নিজস্ব মেশিন আছে আটটি। এগুলো দিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হয়।
এ ছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, দুটি মেশিন নষ্ট। সেটা ঠিক করতে দিয়েছি। আগে ১০টি মেশিন ছিল। ২০২২ সালে আরও ২০টি মেশিন এসেছে। আরও ২০টি মেশিন বসানোর জায়গা রেখেছি। সেটা শিগগির চালু করতে পারব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৪০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক। তিনি বলেন, দু-একটা মেশিন নষ্ট থাকতে পারে, সেগুলো আবার ঠিক করি। প্রতিদিন দু-তিন শিফটে একশোর বেশি ডায়ালাইসিস হয়। চাপ অনেক বেশি। তিন-চার মাস, অনেক সময় রোগীদের ছয় মাসও অপেক্ষা করতে হয় ডায়ালাইসিসের জন্য।
তবে এখানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, ৩২টি মেশিন চালু আছে। কোনো মেশিন নষ্ট নেই। এর মধ্যে ২০২২ সালের দিকে ৪-৫টি নতুন যুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালেও আনা হয়েছে কয়েকটি। প্রতিদিন ১০০-এর বেশি ডায়ালাইসিস হয়। সিরিয়ালে অনেক লম্বা তালিকা। চাপ বেশি।
বাইরে বেশি মেশিন চট্টগ্রাম মেডিকেলে : ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মেশিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোরের আছে ৩১টি। সেখানে দৈনিক ৯০ জনকে ডায়ালাইসিস করা হয়। বাকি ১৭টি মেশিন হাসপাতালের নিজস্ব।
এরপর সর্বোচ্চ মেশিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন আসা ১০টি মেশিন এক মাস আগে চালু হয়েছে। দুই শিফটে দৈনিক ৪০টি ডায়ালাইসিস হয়। কিন্তু এত কম মেশিন দিয়ে হয় না। আমরা সব মিলে ৫০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু করতে চাই। সে জন্য জায়গাও বরাদ্দ করে রেখেছি। পুরনো একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে। ওটা দিয়ে কোনো মতে চলছে। অসুবিধা হচ্ছে। কোনো রোগী তিন মাসের বেশি ডায়ালাইসিস পাবে না। তিন মাস পর তাকে আবার আবেদন করতে হবে।
বেশি নষ্ট রংপুর ও দিনাজপুরে : প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মেশিন বিকল দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ৪১টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি সচল ও নষ্ট ১৪টি। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জনের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।
এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩৯টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে সচল রয়েছে ২৬টি ও নষ্ট ১৩টি। অচল মেশিনের মধ্যে ৪টি মেরামতযোগ্য। এ ছাড়া ডায়ালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সচল রয়েছে। তবে একমাত্র রিপ্রোসেসর মেশিনটিও অচল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে চালু আছে ১৫টি। নষ্ট আছে ছয়টি। এসব মেশিন দেড় থেকে দুবছর ধরে নষ্ট। আর যে চালু ১৫টির মধ্যে সাতটি এক মাস হলো এসেছে। অর্থাৎ এর আগে মাত্র আটটি মেশিন দিয়ে চলত ডায়ালাইসিসের কাজ।
ডায়ালাইসিস সেবা বাড়ানোর পরামর্শ : এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, সরকারিপর্যায়ে থানা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস বাড়ানো দরকার। ডায়ালাইসিসকে সর্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অধীনে এনে সেবা দিতে হবে। বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস সেন্টারকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অর্থাৎ যার ডায়ালাইসিস লাগে, তিনি বাড়িতে বসে নিজের ডায়ালাইসিস নিজে করতে পারবেন। শুধু ডায়ালাইসিসের ফ্লুইড নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে ৫০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগী তাদের রোগপ্রতিরোধ করতে পারেন বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।