
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়া করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার জন্য চলছে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো করলেও পরে খেই হারিয়েছে কমিশন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম নিয়ে আপত্তি থাকায় এবং অর্থ-সংকটের কারণে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি স্থগিত করেছে সরকার। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অংশীজনদের দাবি ছিল, সব কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা বা সিসিটিভি ক্যামেরা (সিসিক্যাম) স্থাপন করা উচিত। এটি করা গেলে নির্বাচনে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা আসবে। কিন্তু অর্থ-সংকটের কারণ দেখিয়ে এ প্রকল্পও বাতিল হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
গত ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজধানীর নির্বাচন ভবনের পঞ্চমতলায় ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান।
সিইসি পরে সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় নির্বাচনে এই ক্যামেরা ব্যবহার হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে নেবে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওই বক্তব্যের পর সংসদের ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে কাজ শুরু করে কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বেশ কটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, সব আসনেই সিসিক্যাম ব্যবহার করা সম্ভব। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থের ছাড় হলে আগামী মে মাসেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে ইসি-সূত্র জানায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৩০০ আসনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র হতে পারে। ভোটকক্ষ হতে পারে সোয়া দুই লাখের বেশি। প্রত্যেক কক্ষে একটি করে সিসিক্যাম বসালে সোয়া দুই লাখের বেশি ক্যামেরা লাগবে। ভোটকক্ষের বাইরে দুটি করে বসাতে চাইলে সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিক্যামের প্রয়োজন হবে।
এতে বর্তমান বাজার মূল্যে কমবেশি ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কমিশন সব আসনে নাকি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিক্যাম বসাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। অর্থপ্রাপ্তি, জনবল ও মনিটরিং টিমের সামর্থ্য অনুযায়ী কমিশন একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার চায় ইসি। প্রতিষ্ঠানটি সিসিটিভি ক্যামেরার মূল চাবিকাঠি বা মাস্টার অ্যাডমিনের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রাখবে। আর আসনভিত্তিক যে রিটার্নিং অফিসাররা থাকবে তাদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ের মনিটরিং পাওয়ার দেওয়া হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। আমরা ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা রাখার পক্ষে। তবে দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। মাস্টার অ্যাডমিন ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে থাকলেও স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারদের মূল দায়িত্বে রাখা হবে। সব আসনে অথবা অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টাকা পেলে টেন্ডারের কাজ শুরু করব।’
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ১২৪২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরা বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।’
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে ইসি সিসিটিভির জন্য ১৩১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে। এর মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাড়া, কানেকশন সেট, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির জন্য (২২,৫০০০টি) ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; ১৬ চ্যানেল ডিভিআরের জন্য ৮ কোটি ৭৫ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ৮ কোটি ৭৫ লাখ; হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (৫০০ গিগাবাইট ক্ষমতার ২ হাজার ৫০০টি) বাবদ ২ কোটি ৭৫ লাখ; মনিটর ভাড়া (প্রতি আসনে ৫টি করে) ৭ কোটি ৫০ লাখ; মনিটর ভাড়া (কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা) বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ১০ কোটি; কেবল কানেকশন বাবদ ১০ কোটি ৮০ লাখ; ডিকোডার মেশিন ভাড়া বাবদ ৬২ কোটি ৫০ লাখ; সার্ভার ভাড়া বাবদ ৫০ কোটি এবং সিসিটিভি স্থাপন ও সাপোর্ট সার্ভিস বাবদ ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি খরচ হবে যেখানে ইন্টারনেট নেই সেখানে এর ব্যবস্থা করার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা থেকে তার টেনে লাইন চালু করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরই মধ্যে ছয়টি প্রপোজাল জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানসহ আইডিইএ (আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস) প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সব প্রস্তাব দেখে একটি খসড়া প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসের শুরুতে টেন্ডার করা না গেলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না। প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা সংগ্রহ করতে হবে। এত ক্যামেরা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোগাড় করা সম্ভব নয়। এজন্য ২-৩ মাস সময় লাগবে। সারা দেশে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও দেড় মাস। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ফিক্সড করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। টেস্টিংয়ের কাজ করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহকে ডেডলাইন ধরে তারা কাজ শেষ করতে চান সংশ্লিষ্টরা। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিয়েই কাজ গুছিয়ে রাখতে চান তারা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভাগওয়ারি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে কর্মকর্তাদের। রিটার্নিং অফিসাররা ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুসরণ করবেন। ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে যে ডেটা স্টোর আছে তার সঙ্গে আরও ৭০ থেকে ৮০টি নতুন যোগ করা হবে। তিনটি বিষয়ের কাজ করতে দেওয়া হবে রিটার্নিং অফিসারদের। ভিডিও দেখা, রেকর্ড করা ও স্ক্রিনশর্ট নেওয়ার কাজ করতে পারবেন তারা। কোনো কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিলেও অটো রেকর্ড হবে এবং ডেটা কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হবে। কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ সিস্টেম চালু হবে। ইসির আগারগাঁওয়ের অফিস থেকে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর ক্যামেরা মনিটর করা হবে। প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কেন্দ্রের সার্ভারে ঢুকে যেকোনো সিসিটিভিতে সেখানকার পরিস্থিতিও দেখতে পারবেন মাস্টার অ্যাডমিন।
নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কারিগরি সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত এলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।’
অর্থ-সংকটের যুক্তিতে প্রকল্প সরকার বাতিল করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনো কিছুতেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকার কি এই প্রকল্প পাস করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু করার ইচ্ছা থাকলে সিসিটিভির বিষয়গুলোর প্রতি তারা ইতিবাচক থাকবে।’
জানিপপ সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ-সংকটে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিছু টাকা খরচ হলেও প্রকল্পটি রাখা উচিত।’
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে তিনজনের প্রাণহানির রেশ না কাটতেই পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় স্তম্ভিত মানুষ। বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিস্ফোরণের মাত্রা এত ব্যাপক ছিল যে, পাশের দুটি ভবনের কয়েকটি তলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মতো অবস্থা হয়েছে গোটা এলাকার। পথচারীসহ ২১ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর নিখোঁজ আছেন একজন। হতাহতরা মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন এবং দগ্ধ হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে র্যাব বলছে, এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। রহস্যময় এ বিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন।
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের ক্যাফে কুইন মার্কেট নামে একটি সাততলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাশের আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আটকা পড়েন ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পরও গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্ধার হয়েছে দুজনের রক্তাক্ত মরদেহ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে গুলিস্তান বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইন টাওয়ার ভবনে বিস্ফোরণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ১৯ জনের মরদেহ এবং ৪০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে হাসপাতাল সূত্রে ২০ জনের মরদেহ পাওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া গত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও একজন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা সাততলা ভবনের বেজমেন্টে মূল বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের ক্লু খোঁজা হচ্ছে। আমরা অনুমান করছি, মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান আছে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান বলেছেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি।’ আর সেনাবাহিনী বলেছে, ভবনে বিস্ফোরকদ্রব্যের কোনো আলামত মেলেনি।
উল্লেখ্য, সায়েন্স ল্যাবের ঘটনায় গ্যাসজনিত বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ভবনটির সামনের সড়কে ছিল তীব্র যানজট। সে অবস্থায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ভবনের ইট, পাথর, কাচসহ বিভিন্ন মালামাল উড়ে এসে পড়ে সড়কে। সেগুলোর আঘাতে অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিস্ফোরণের সময় কয়েকশ লোক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পথচারীদের কারও পা, কারও হাত, কারও চোখমুখ আবার কারও মাথায় গুরুতর জখম হয়। বিস্ফোরণে ভবনের চুরমার কাচের টুকরো উড়ে এসে বিদ্ধ হলে অনেকেই গুরুতর জখম হন। ভবনটির সামনের সড়কের বিপরীত পাশে ফুটপাতের টং দোকানি মো. ফয়েজ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়ি। এরপরই চারপাশে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো ইটের গুঁড়া ও ভাঙা কাচের টুকরো উড়ে এসে পড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে কয়েকশ মানুষ। যাদের অনেকে মারা গেছেন বলে মনে হয়েছে।’
পাশের কাদের ম্যানশন নামের ভবন-মালিক শফিউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আসরের নামাজের সময় বিস্ফোরণ হয়। ওই সময় আমি বাসায় ছিলাম। বিকট শব্দ শুনতে পাই, পুরো বাসা কেঁপে ওঠে। বাইরে এসে দেখি রাস্তায় রক্তে ভেসে গেছে, মানুষ লাল হয়ে আছে। একশর বেশি লোককে শুধু রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০-২৫টি অ্যাম্বুলেন্সে করে সবাইকে নিয়ে গেছে।’
স্থানীয় জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবনের পাশে গাড়িতে যারা ছিল সবাই যেন ঝলসে গিয়েছিল। রিকশায় থাকা এক লোক কাতরাচ্ছিল। যে যেভাবে পারে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাফে কুইন ভবনটির সামনের সড়কটিতে দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে বাস, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি। বিস্ফোরণ ঘটনায় ভবন ও এর দুই পাশের আরও দুটি ভবনের দেয়াল, জানালা ও কলাপসিবল গেট ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে সড়কের ওপর পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দোকানগুলো। ভিড় করে উৎসুক জনতা, এ সময় উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে তাদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে একে একে চলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আটকেপড়াদের একেক করে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তদারকি করতে দেখা গেছে। সেখানে স্বজনের খোঁজে ভিড় করেন অনেকেই। প্রায় তিন ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোর পর হঠাৎ সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, ভবনটির কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হচ্ছে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধারকাজে বিরতি দেয় ফায়ার সার্ভিস। তখন পর্যন্ত ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করেনি তারা। গতকালও দিনভর চলেছে উদ্ধার অভিযান। ভবনের ভেঙে পড়া ইট-পাথরের নিচ থেকে গতকাল বিকেলেও দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ডগ স্কোয়াডও ব্যবহার করা হয় তল্লাশিতে। বেজমেন্টে লোকজন আটকেপড়া থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান অভিযান স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দিনমনি শর্মা। তিনি জানান, মেহেদি হাসান স্বপন নামে একজন নিখোঁজ বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। গতকাল পুরোদমে অভিযান চালানো হয়েছে।
বিস্ফোরণ হওয়া সাততলা ভবনটি বাণিজ্যিক ও আবাসিক কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে। ভবনের বেজমেন্ট থেকে তিনতলা পর্যন্ত স্যানিটারির পণ্যের দোকান ও গুদাম, বাকিটা আবাসিক। ক্ষতিগ্রস্ত পাশের দুটি বহুতল ভবনও বাণিজ্যিক এবং আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই দুটি ভবনের একটিতে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়ের সব গ্লাস ভেঙে পড়েছে, অন্যটির দোতলা পর্যন্ত থাকা দোকানের বেশিরভাগ ধ্বংস হয়েছে। আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সামনের আরও কিছু ভবনের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের সময় আস্ত ইট উড়ে গিয়ে ওইসব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনার পরপরই ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। গতকাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
২০ জন নিহত : বিস্ফোরণে গতকাল পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তিথিরচড় গ্রামের সুমন, বরিশাল সদর উপজেলার কাজিরহাট গ্রামের ইসহাক মৃধা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শেখদি এলাকার মনসুর হোসেন, বংশাল আলুবাজার এলাকার মো. ইসমাইল হোসেন, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার পশ্চিম লালপুর গ্রামের আল-আমিন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকার রাহাত, চকবাজারের ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নদী বেগম, মুন্সীগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর গ্রামের মাঈন উদ্দিন, বংশাল কেপি ঘোষ স্ট্রিটের নাজমুল হোসেন, মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা গ্রামের ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দির আবু জাফর সিদ্দিক, বংশাল আগামসিহ লেনের আকুতি বেগম, শরীয়তপুরের নড়িয়ার কাঠাকুলী গ্রামের ইদ্রিস মীর, রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকার নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের উলুকাঠা গ্রামের হৃদয়, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের আবদুল হাকিম সিয়াম, বংশালের নর্থ সাউথ রোডের বাসিন্দা মমিন উদ্দিন সুমন ও মমিনের দোকানের কর্মচারী রবিন হোসেন। নিহতরা দোকান কর্মচারী, সিরামিক পণ্যের ক্রেতা ও পথচারী বলে জানা গেছে।
মধ্যরাতে লাশ হস্তান্তর : ঘটনার পর হতাহতদের নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ২০০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে তারা।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার থেকে মো. সুমন জানান, রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ১৭২ জন টিকিট নিয়ে চিকিৎসা নেন এবং ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির অবতারণা হয়। মধ্যরাতে ১৬ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবীর কুমার দাশ জানান, মর্গে থাকা ১৬টি লাশ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, গতকাল উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহও হস্তান্তর করা হয়। এর মাঝে গতকাল আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই স্বজনরা নিয়ে গেছেন সুমনের মরদেহ। পরে লোকজন এসে তার নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সব মিলিয়ে ১৯ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বজনরা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া লাশ নিয়ে যাওয়া সম্রাটের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
আহত একজনের মৃত্যু : বিস্ফোরণের ঘটনায় ১১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা হলেন হাসান, ইয়াসিন, মুসা হায়দার, খলিল, আজম, ওলি শিকদার, বাবলু, আলআমিন, বাচ্চু মিয়া, জাহান ও মোস্তফা। মোস্তফাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটের হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসা মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন। তিনি বলেন, মুসার শরীরের ৯৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ২০ জন। এর মধ্যে একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মাথায় আঘাতসহ মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে। অনেকের শরীরের হাড়গোড় ভেঙে গেছে।
তদন্ত কমিটি ও মামলা : বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ফায়ার সার্ভিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি তিন সদস্যের নাম পরে জানানো হবে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় বংশাল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। এর আগের দিন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। গতকাল রাতে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও ডিএমপির সিটিটিসি তদন্ত করছে। তারা যদি এমন কোনো কিছু পায়, যাতে মনে হয় নাশকতা বা বিস্ফোরক তাহলে অন্য মামলা হবে। আপাতত অপমৃত্যুর মামলার আলোকে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে।
যা বললেন সংশ্লিষ্টরা : ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিস্ফোরণের কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন, কেন বিস্ফোরণ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন এটা কোনো নাশকতামূলক ঘটনা নয়। অনেক সময় নানা কারণে বিস্ফোরণ হয়, কখনো মিথেন গ্যাস, কখনো এসির গ্যাস। এটা গ্যাসজনিত কোনো বিস্ফোরণ হতে পারে। এরপরও তদন্ত করা হবে এটা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা।’
একইদিন রাত ১১টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণটি ভবনের বেজমেন্টে হয়েছে। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এতে কোনো বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও সেখানকার শরণার্থীরা রোহিঙ্গা সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ঢাকা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনায় নিয়োজিত থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি ও সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎসহ বেশ কটি বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৪ মার্চ দোহায় পৌঁছান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ (ইউক্রেনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো ফোকাস (দৃষ্টি) এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে।’
আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ এরই মধ্যে সম্প্রচার করা হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ অংশটি আলজাজিরায় আগামী ১১ মার্চ (শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিট) জিএমটি ৪টা ৩০ মিনিটে সম্প্রচার করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমারে নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড এবং পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয় তখন আমরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, আমরা তাদের আসতে দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবার জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন। আমরা তাদের জন্য আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসানচর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা... আমরা সেখানে শিশুদের জন্য ভালো থাকার ব্যবস্থা এবং চমৎকার সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
রোহিঙ্গা শিবিরে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আগুনে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) একে অপরের সঙ্গে লড়াইরত। তারা মাদক, অস্ত্র, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।’
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলডিসি দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান শেষে গতকাল বিকেলে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বিমানটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের তারা যেসব দেশে কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনভঙ্গ করে কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সাবধানও করে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, এটা আর বরদাশত করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন আপনি কাতারে আছেন, এ দেশের প্রচলিত আইন আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোনো চেষ্টা করব না, কোনো ব্যবস্থাও নেব না, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণও অনেকে ঠিকভাবে নেন না। প্রশিক্ষণের সময় অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন বলে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করেন, সেই অপরাধের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠানোর যে সুযোগ আমরা পাই সে সুযোগও হারিয়ে যায়। আরও ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগ থাকে সেটা তারা পান না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ।
তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দেশে এসেছেন (৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে) বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি দেশের মানুষের জন্য দুবেলা-দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। তাদের জীবনমান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৈধপথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোঁকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধপথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সবাইকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে শবেবরাতের রাত হওয়ায় সবার কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা জনগণের চাহিদা মেটাতে কাজ করছি এবং আমরা তাদের একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট লাগামহীন দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং নির্যাতনের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করে তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চলেছে। বাসস
‘এই রকম কপাল আমার, একসঙ্গেই দুজনের লাশ নিয়ে যাচ্ছি বাসায়। ওদের দুইটা সন্তান। ওদের সামনে কী করে যাব? ওদের কী করে বুঝ দেব?’ গত মঙ্গলবার গুলিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দম্পতির লাশ বুঝে পেয়ে এ কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাদের চাচা জয়নাল আবেদিন। তার এমন বুকফাটা কান্নার বেদনার্ত সুরে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
খানিক পর চাচা জয়নালের কান্নার আওয়াজও যেন ফুরিয়ে আসছিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। একটু শান্ত হয়ে আসার পর তিনি জানান, মমিনুল ইসলাম ও স্ত্রী নদী বেগম দম্পতি চকবাজার ইসলামবাগে নিজেদের বাড়িতে থাকতেন। ক্যামেরাসহ কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করতেন মমিনুল। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পোরকরা গ্রামে। বাড়ির জন্য স্যানিটারি পণ্য কিনতে সিদ্দিকবাজার গিয়েছিলেন বিকেলে। সেখানে ফুপাতো ভাইয়ের দোকানে নিজের মোটরসাইকেল রেখে স্ত্রীকে নিয়ে পণ্যগুলো কিনতে যান। তখনই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। জয়নালের মতো কেউ বুঝে নেন ভাই, বোন, কেউবা মায়ের মরদেহ। স্বজনের নিথর দেহটি বুঝে পেয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তারা। পঞ্চাশোর্ধ্ব দুলাল মিয়া ছেলে আবদুল হাকিম সিয়ামের লাশ বুঝে নেন মঙ্গলবার মধ্যরাতে। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। এ যেন পৃথিবীসমান বেদনাময় দৃশ্য। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার এলাকায়। দু-তিন বছর ধরে সিদ্দিকবাজারে জয়নাল স্টোর নামে স্যানিটারি দোকানে চাকরি করছে সিয়াম। বাবা সিদ্দিকবাজার রোডে এইচআর পলিমার নামে একটি দোকানে কাজ করেন।
দুলাল মিয়া জানান, সেদিন বিকেলে রিকশাচালক তাকে বলেন বিস্ফোরণের কথা। তখন ছেলের কথা মাথায় আসতেই তার দোকানে যান তিনি। জানতে পারেন নিজের দোকান থেকে মাল আনতে আরেকটি দোকানে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে আহত হয় সিয়াম। পরে চিকিৎসাধীন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।
স্বজন হারানোর বেদনার্ত মুহূর্তে মরদেহ বুঝে পাওয়ার অব্যবস্থাপনা মানতে পারছিলেন না অনেক স্বজন। সম্রাট ও সুমন নামে দুজনের লাশ স্বজনরা মর্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু যারা স্বজনের লাশও পাননি তাদের কষ্ট দেখার যেন কেউ ছিল না। গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। পুলিশ তাকে সামনে যেতে নিষেধ করলে তিনি খুব অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘আমার স্বপন ভাই ভেতরে আটকে আছেন, তাকে বের করে নিয়ে আসুন।’
কামাল জানান, বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে টাইলসের দোকানে ম্যানেজার ছিলেন স্বপন। দোকানটি ভবনের বেজমেন্টে ছিল। তার সঙ্গে আর চার কর্মচারী কাজ করতেন, তাদের একজনকে হাসপাতালে পাওয়া গেছে। তবে বাকিদের সন্ধান মেলেনি। তারা ভেতরেই জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় আছেন।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের ডগ স্কোয়াডের একটি দল পাশের ভবন দিয়ে প্রবেশ করে। তারা সেখান থেকে ভেতরে মরদেহ থাকার আলামত পান। এরপর ফায়ার সার্ভিস ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু কামালের ভাই স্বপনের সন্ধান মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকার সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, সবখানে খুঁজেছি; কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।’
সেদিন ভাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন খলিল শিকদার ও অলি শিকদার নামে ভ্যানচালক দুই ভাই। বিস্ফোরণে তাদের শরীরের অনেকটা পুড়ে গেছে। বড় ভাই অলির অবস্থা বেশি গুরুতর। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুরো শরীর পুড়েছে। খবর পেয়ে খলিলের স্ত্রী কোহিনুর বেগম সন্তানদের নিয়ে মাদারীপুর থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন। স্বামীর আয়েই সংসার চলে। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে তাদের। স্বামীর চিকিৎসা, সংসার সব মিলিয়ে কোহিনুরের দিশেহারা অবস্থা।
বেঁচে ফেরাদের মুখে ঘটনার বর্ণনা : ‘বিকট শব্দে পাশের দেয়াল ভেঙে গায়ের ওপর যখন পড়ল, একই সময় গরম হাওয়া চোখ-মুখ ঝলসে দিল। ভেবেছিলাম মারা যাচ্ছি। কিছু সময় পর হামাগুড়ি দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে দোকান থেকে কোনোমতে বের হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার বর্ণনা দেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সাইফুল ইসলাম (২৫)। মাথা, মুখ ও পিঠে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর শয্যায় কাতরাতে দেখা যায় সাইফুলকে। তার পাশে বসা স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।
গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদককে সাইফুল বলেন, ‘বিকট শব্দের পর সব অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা চারজন কর্মী ছিলাম আর অনেক কাস্টমার আমাদের দোকানে ছিল।’ সোনিয়া জানান, শরীরে ৪০টির বেশি সেলাই লেগেছে সাইফুলের।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন খলিলুর রহমান (৩০)। সবজির বীজ বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক তিনি। ঘটনার সময় কার্টনভর্তি মাল মাথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বিকট একটা শব্দ শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শরীরের পেছন দিকে কাচ ও ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী।
একই ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় আছেন মো. শহীদুল। তিনি পুরান ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তের শ্রমিক। ঘটনার সময় ওই সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। শহীদুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেঁচে আছি, এটাই সৌভাগ্য। তবে বাম হাত ও বাম পা আঘাতে জখম হয়েছে, সেখানে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।’
ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পল্লব চক্রবর্তী। তিনি জানান, তার পণ্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। পুরান ঢাকার গোপীবাগে পরিবার নিয়ে থাকেন। পণ্য পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে আহত হন। তার বাম পা পুরোটাই জখম হয়েছে, নাক ও মুখ কাচের আঘাতে কেটে গেছে।
ঘরের মাঠটাই শুধু বাংলাদেশকে একটু সাহস দিতে পারে। এর বাইরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে স্বাগতিকদের পক্ষে কিছু নেই। গত ডিসেম্বরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি পুরো শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেনি। তবুও জস বাটলারের নেতৃত্বে দলে যারা আছেন তারাই কম ভয়ংকর কোন দিক থেকে? এই ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে রুখে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চট্টগ্রামে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অবশ্যই অসম লড়াই, তবুও বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে এ সিরিজ থেকে বড় শিক্ষার সুযোগ দেখছেন। পাশাপাশি শেষ ওয়ানডে জয়ের আত্মবিশ্বাসে তাক লাগানো কিছু করার লক্ষ্য সাকিব আল হাসানদের। এদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ক্রিস ওকসেরও সুরটা সমীহের। বাংলাদেশ ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জ উপহার দেবে বলে জানান তিনি।
গত বছর প্রায় পুরোটাই টি-টোয়েন্টি খেলে কাটাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এ ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বিরতি পড়েছিল।
পরের বিশ্বকাপ আগামী বছর। তার আগে বিস্তর সময় আছে এ ফরম্যাট নিয়ে কাটাছেঁড়া করার। একই সঙ্গে কোচ বদল হওয়ায় এ ফরম্যাটে নতুন শুরুরও একটা ব্যাপার থাকছে। সেই শুরুটা হচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। কোচ হাথুরুসিংহে ব্যাপারটিকে সাদরে গ্রহণ করছেন। জানালেন এ সিরিজ দিয়ে তিনি ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির সেরা পরীক্ষায় মানসিকতা দেখতে চান, ‘আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য আমি খুব খোলামন নিয়ে বসে আছি। এ সিরিজটা অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা জিততে চাইব এটাই প্রথম লক্ষ্য তবে এটাও দেখতে চাই যে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা কোথায়। আমি তো জাদুকর নই যে সব বদলে দেব। ক্রিকেটাররাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে প্রমাণ করে দেখাবে কেন আমি তাদের নির্বাচন করব। আমি বলব টি-টোয়েন্টি স্কিল দেখানোর এটা সুবর্ণ সুযোগ।’
ওয়ানডেতে দুই দলের নিয়মিত দেখা হলেও এ ফরম্যাটে দুই দলের দেখা হয় না বললেই চলে। ২০২১ বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশকে অনায়াসে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ফরম্যাটের হিসেবে দুই দলের লড়াইটা নতুন। হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে এ সুযোগটা নিতে পারে বাংলাদেশ। সুযোগ আরও একদিক থেকে আছে। ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল নিয়ে এলেও বিশ্বকাপজয়ী দলের অনেকেই নেই এ সফরে। বাংলাদেশের মতো ইংল্যান্ডও বিশ্বকাপের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে। বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, অ্যালেক্স হেলস, ডেভিড উইলি ও ক্রিস জর্ডানরা না থাকায় ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ছন্দটা একটু গুছিয়ে উঠতে হবে। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা বিপিএল খেলে টি-টোয়েন্টির ছন্দেই আছেন। নতুন যুক্ত হওয়া রনি তালুকদার, তানভীর আহমেদ, শামীম পাটোয়ারী ও রেজাউর রহমান রাজারা বিপিএলের সেরা পারফরমার। সব মিলিয়ে শক্তির দিক থেকে না হলেও সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ছন্দের দিক থেকে একটু এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
অবশ্য হাথুরুসিংহে বিপক্ষে কে আছেন বা নেই এসব দিকে তাকাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ায় বসেই ইংল্যান্ডকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন। ওই দলের শক্তি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই অবগত। এ ফরম্যাটে নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ইংল্যান্ডের স্টোকসদের না পেলে বরং অন্য শিক্ষা নিতে চাইছেন হাথুরু, ‘দুই ফরম্যাটেই তো ওরা চ্যাম্পিয়ন। ৫০ ওভারে ওদের দলটা খুবই স্থিতিশীল। টি-টোয়েন্টি দলও তেমন। তবে এবার অনেককেই তারা বিশ্রাম দিয়েছে। অবশ্যই ২০২২-এর অনেকেই ২০২৪ বিশ্বকাপ খেলবে না। ওরা নতুন দল গড়তে চাইছে। আমরা দেখতে পারব বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কীভাবে দল তৈরি করে।’ তবে এ সিরিজ থেকেই যে ২০২৪ আমেরিকা ও উইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করছেন তা লুকাননি হাথুরু, ‘টি-টোয়েন্টি দলটাকে মাত্রই দেখলাম। হ্যাঁ, আমরা পথচলাটা শুরু করেছি। কিন্তু এখান থেকে অনেক জল গড়াবে। ক্রিকেটারদের জন্য সঠিক সময় বিশ্বকাপ মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করার।’
ইংল্যান্ড অবশ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে অহমিকা দেখাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশকে সমীহ করছে টি-টোয়েন্টিতেও। দলটির পেসার ক্রিস ওকস কন্ডিশন ও ঘরের মাঠে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স সামনে রেখে ব্যাকফুটে থাকার কারণ দিলেন, ‘বাংলাদেশ, খুব, খুব ভালো দল। বিশেষত যখন ওদের কন্ডিশনে খেলা হবে। আমরা ভুলে যাইনি ওয়ানডেতে কী হয়েছে। সব শেষবারও আমরা হেরেছিলাম এবারও একটি ম্যাচ হারলাম। দুটো সিরিজই কিন্তু উত্তেজনার ছিল। টি-টোয়েন্টিতে আমরা একইরকম চ্যালেঞ্জ আশা করছি। হয়তো আমরা বিশ্বকাপ জিতে এসেছি কিন্তু এ কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারানো সত্যিই কঠিন হবে।’
ওকস জানালেন, ইংল্যান্ডের চিন্তা করার আরও কারণ আছে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে নতুন চার ক্রিকেটার যুক্ত করেছে। তাদের কাউকেই আগে দেখেননি ওকসরা। ওদের বিপক্ষে ম্যাচে মুখোমুখি হওয়াটা চ্যালেঞ্জের অন্য কারণ, ‘অবশ্যই এটা চ্যালেঞ্জের। কারণ একজন ব্যাটারের শক্তি-দুর্বলতা জানা থাকলে আপনি সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কিন্তু অপরিচিত কাউকে চেনার আগেই সে আপনার কাছ থেকে ২০-৩০ রান নিয়ে নিতে পারে বা আপনাকে আউট করে দিতে পারে। আমরা শুনেছি ওদের নতুনরা বিপিএলে খুব ভালো করে এসেছে। এটা ওদের আত্মবিশ্বাস দেবে। যেমনটা বলছিলাম এ সিরিজে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ আশা করছি।’
ওকস যতই চ্যালেঞ্জের কথা বলুক, টি-টোয়েন্টির হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে তারা যে অনেকটা এগিয়ে তা খালি চোখে স্পষ্ট। গত বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে আসরে প্রথমবার দুই জয় তোলা বাংলাদেশকে তৃপ্তির ঢেকুর দিতে পারে। তবে এ ফরম্যাটের মূল সুরটা ধরা বাকি থেকেছে নিশ্চিত। সেই সুর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসম লড়াইয়ে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকল।
দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে বছরে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ছে ৪০ হাজার মানুষের। এ ছাড়া আকস্মিক কিডনি বিকলের শিকার হচ্ছেন আরও ১৫-২০ হাজার মানুষ। কিডনি বিকল এসব রোগীর বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা কিডনি ডায়ালাইসিস।
এমন তথ্য জানিয়ে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে ব্রেন ডেথ রোগীদের কিডনিদান ও আত্মীয়স্বজনের থেকে কিডনি সংগ্রহের পরিমাণ খুবই সামান্য। এমনকি কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যবস্থাও দেশে খুবই অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল। এমন অবস্থায় বেঁচে থাকতে এসব কিডনি বিকল রোগীর শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায় কিডনি ডায়ালাইসিস। কিন্তু দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থাও অপ্রতুল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডায়ালাইসিসও করাতে পারেন না এসব রোগী।
এমন অবস্থায় দেশের কিডনি বিকল রোগীদের মাত্র ১০ শতাংশ কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন বলে জানিয়েছে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন।
এ ব্যাপারে ক্যাম্পস প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন সংখ্যা এখনো অনেক কম। কারণ কিডনিদাতা পাওয়া যায় না। পৃথিবী জুড়েই কিডনিদাতার সংকট। আমেরিকাসহ আরও কিছু দেশ যত কিডনি প্রতিস্থাপন হয়, তার ৬০ শতাংশ নেওয়া হয় ব্রেন ডেথ রোগীদের থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেটা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত সারাহ নামের মাত্র একটা মেয়ে কিডনি দান করল। সে জন্য কিডনি বিকল রোগীদের বাঁচাতে নির্ভর করতে হয় ডায়ালাইসিসের ওপর।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ডায়ালাইসিসের খরচ এত বেশি যে কিডনি বিকল রোগীর ৯০ শতাংশই এই ব্যয় বহন করতে পারে না। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী বহন করতে পারে। আবার যে ১০ শতাংশ বহন করতে পারে, এই ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তাদের ৯০ শতাংশের পরিবার দেউলিয়া হয়ে যায়।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা’।
প্রয়োজন ৩০ হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন, আছে ২ হাজারের কম : এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতি বছর ৪০ হাজার কিডনি রোগীর কিডনি বিকল হচ্ছে। এসব রোগীর সবার ডায়ালাইসিস দিতে হয়। সে হিসেবে এক বছরে যাদের কিডনি বিকল হচ্ছে তাদের জন্য কমপক্ষে ছয় হাজার মেশিনের দরকার। কিন্তু যখন ডায়ালাইসিস করবে, তখন তারা কয়েক বছর বেঁচে থাকে। সে হিসেবে একজন কিডনি বিকল রোগী ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে যদি পাঁচ বছর বাঁচে, তাহলে পাঁচ বছরের জন্য ৩০ হাজার মেশিন দরকার। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি মিলে দুই হাজারের কম মেশিন আছে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এর মধ্যে বেশির ভাগই বেসরকারি পর্যায়ের মেশিন এবং সেখানে ডায়ালাইসিস ব্যয় বেশি।
সরকারি মেশিন ৩৮৭, ঢাকায় ২৫১ : সরকারের হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এবং সরকারি হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৩৮৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫১টি মেশিন ঢাকার ছয় প্রতিষ্ঠানে এবং বাকি ১৩৬টি মেশিন ঢাকার বাইরে পাঁচটি মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে। এর বাইরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে কিছু ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে।
অন্যদিকে, এই ১১টি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৪১টি ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় আটটি ও ঢাকার বাইরে ৩৩ মেশিন দিয়ে ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছে না।
ঢাকায় বেশি মেশিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে, কম মিটফোর্ডে : এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার ছয় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেশিন ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৬টি। এখানে দুটি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এমন তথ্য জানিয়ে হাসপাতালের ৬৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। দু-তিনটি নষ্ট আছে। সেগুলো ঠিক করছি। দৈনিক দুই শিফটে প্রায় ১০০ জনকে ডায়ালাইসিস দিই।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম ডায়ালাইসিস মেশিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল)। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী মো. রশীদ উন নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ২৭টি মেশিন আছে ডায়ালাইসিস করার জন্য। এখানে রোগী কম। দৈনিক গড়ে ৪০টার মতো ডায়ালাইসিস হয়। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা বেশি আছে। ৭-৮ বছরের পুরনো ৪টি মেশিন আছে। সেগুলো ঠিক করার জন্য কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এগুলো ঠিক করতে পারলে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। আগে ছিল আটটি মেশিন। এক বছর আগে ১৯টি নতুন যুক্ত হয়েছে। কিডনি বিভাগের ওয়ার্ডে ১৪টি বেড আছে। ডায়ালাইসিস ফি ৪১৪ টাকার মতো লাগে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ঠিক আছে।
কিডনি হাসপাতালে মেশিন ৫৮ : দেশের কিডনি রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘জাতীয় কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে’ ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা ৫৮টি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের নতুন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বাবরুল আলম। এই কর্মকর্তা জানান, সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপের অধীনে ৫০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। হাসপাতালের নিজস্ব মেশিন আছে আটটি। এগুলো দিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হয়।
এ ছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, দুটি মেশিন নষ্ট। সেটা ঠিক করতে দিয়েছি। আগে ১০টি মেশিন ছিল। ২০২২ সালে আরও ২০টি মেশিন এসেছে। আরও ২০টি মেশিন বসানোর জায়গা রেখেছি। সেটা শিগগির চালু করতে পারব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৪০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক। তিনি বলেন, দু-একটা মেশিন নষ্ট থাকতে পারে, সেগুলো আবার ঠিক করি। প্রতিদিন দু-তিন শিফটে একশোর বেশি ডায়ালাইসিস হয়। চাপ অনেক বেশি। তিন-চার মাস, অনেক সময় রোগীদের ছয় মাসও অপেক্ষা করতে হয় ডায়ালাইসিসের জন্য।
তবে এখানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, ৩২টি মেশিন চালু আছে। কোনো মেশিন নষ্ট নেই। এর মধ্যে ২০২২ সালের দিকে ৪-৫টি নতুন যুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালেও আনা হয়েছে কয়েকটি। প্রতিদিন ১০০-এর বেশি ডায়ালাইসিস হয়। সিরিয়ালে অনেক লম্বা তালিকা। চাপ বেশি।
বাইরে বেশি মেশিন চট্টগ্রাম মেডিকেলে : ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মেশিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোরের আছে ৩১টি। সেখানে দৈনিক ৯০ জনকে ডায়ালাইসিস করা হয়। বাকি ১৭টি মেশিন হাসপাতালের নিজস্ব।
এরপর সর্বোচ্চ মেশিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন আসা ১০টি মেশিন এক মাস আগে চালু হয়েছে। দুই শিফটে দৈনিক ৪০টি ডায়ালাইসিস হয়। কিন্তু এত কম মেশিন দিয়ে হয় না। আমরা সব মিলে ৫০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু করতে চাই। সে জন্য জায়গাও বরাদ্দ করে রেখেছি। পুরনো একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে। ওটা দিয়ে কোনো মতে চলছে। অসুবিধা হচ্ছে। কোনো রোগী তিন মাসের বেশি ডায়ালাইসিস পাবে না। তিন মাস পর তাকে আবার আবেদন করতে হবে।
বেশি নষ্ট রংপুর ও দিনাজপুরে : প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মেশিন বিকল দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ৪১টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি সচল ও নষ্ট ১৪টি। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জনের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।
এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩৯টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে সচল রয়েছে ২৬টি ও নষ্ট ১৩টি। অচল মেশিনের মধ্যে ৪টি মেরামতযোগ্য। এ ছাড়া ডায়ালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সচল রয়েছে। তবে একমাত্র রিপ্রোসেসর মেশিনটিও অচল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে চালু আছে ১৫টি। নষ্ট আছে ছয়টি। এসব মেশিন দেড় থেকে দুবছর ধরে নষ্ট। আর যে চালু ১৫টির মধ্যে সাতটি এক মাস হলো এসেছে। অর্থাৎ এর আগে মাত্র আটটি মেশিন দিয়ে চলত ডায়ালাইসিসের কাজ।
ডায়ালাইসিস সেবা বাড়ানোর পরামর্শ : এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, সরকারিপর্যায়ে থানা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস বাড়ানো দরকার। ডায়ালাইসিসকে সর্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অধীনে এনে সেবা দিতে হবে। বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস সেন্টারকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অর্থাৎ যার ডায়ালাইসিস লাগে, তিনি বাড়িতে বসে নিজের ডায়ালাইসিস নিজে করতে পারবেন। শুধু ডায়ালাইসিসের ফ্লুইড নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে ৫০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগী তাদের রোগপ্রতিরোধ করতে পারেন বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।