
গুলিস্তান ও সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে রাজধানী ঢাকা এখন বিস্ফোরণের নগরী।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক শোভাযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের। এই সরকারের ব্যর্থতার কারণে ঢাকা মহানগরী বিস্ফোরণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিপজ্জনক নগরীতে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন ধরে শুধু বিস্ফোরণ হচ্ছে। নিয়মিত তদারকির অভাবে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘যে ভবনে বিস্ফোরণ হচ্ছে, সেই ভবন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে সায়েন্স ল্যাবে তিনজন মারা গেলেন। গত মঙ্গলবার একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণের ফলে ১৭ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে দুজন মহিলা। এর আগে চট্টগ্রামে বিস্ফোরণে সাতজন মারা যান। কেন হচ্ছে এসব? সরকারের যে ডিপার্টমেন্টগুলো রয়েছে, যাদের এগুলো দেখার কথা, নজরদারিতে রাখার কথা। তারা কোনো কাজ করে না, সব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যার কারণে এই ভবনগুলোতে কোনো নিরাপত্তা নেই। বিস্ফোরণ প্রতিরোধ করার, আগুনকে প্রতিরোধ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের যে বাতাস, সেটাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। ইংল্যান্ডে প্রকাশিত ইকোনমিকস পত্রিকা বলছে, ‘এখন দুর্নীতির বাতাস বাংলাদেশকে গ্রাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, নারী প্রধানমন্ত্রীর সময়ে নারী নির্যাতন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি একজন সাবেক এমপি। তাকে শুধু কথা বলার অপরাধে, পোস্ট করার অপরাধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আড়াই মাস অমানবিক নির্যাতন করে আটক রাখা হয়। সাবেক এমপি হিসেবে ডিভিশন তার প্রাপ্য কিন্তু তাকেও দেওয়া হয়নি।
মহিলা দলের নেত্রীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বোনরা, আপনাদের আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। আরও বেশি সংগঠিত হতে হবে। দেশের মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের সংগঠিত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া। আমি যেখানেই যাই, বয়স্ক মহিলারা জিজ্ঞেস করেন, খালেদা জিয়া কেমন আছেন? তিনি তাদের বুকের মধ্যে রয়েছেন। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন। চলমান আন্দোলনে তারা আরও বেশি করে শরিক হবেন।’
সে সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়াবা ইউসুফ, দক্ষিণের আহ্বায়ক রুমা আক্তার প্রমুখ।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে তিনজনের প্রাণহানির রেশ না কাটতেই পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় স্তম্ভিত মানুষ। বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিস্ফোরণের মাত্রা এত ব্যাপক ছিল যে, পাশের দুটি ভবনের কয়েকটি তলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মতো অবস্থা হয়েছে গোটা এলাকার। পথচারীসহ ২১ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর নিখোঁজ আছেন একজন। হতাহতরা মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন এবং দগ্ধ হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে র্যাব বলছে, এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। রহস্যময় এ বিস্ফোরণ নিয়ে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন।
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের ক্যাফে কুইন মার্কেট নামে একটি সাততলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাশের আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আটকা পড়েন ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পরও গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্ধার হয়েছে দুজনের রক্তাক্ত মরদেহ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে গুলিস্তান বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইন টাওয়ার ভবনে বিস্ফোরণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ১৯ জনের মরদেহ এবং ৪০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে হাসপাতাল সূত্রে ২০ জনের মরদেহ পাওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া গত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও একজন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা সাততলা ভবনের বেজমেন্টে মূল বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের ক্লু খোঁজা হচ্ছে। আমরা অনুমান করছি, মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান আছে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান বলেছেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি।’ আর সেনাবাহিনী বলেছে, ভবনে বিস্ফোরকদ্রব্যের কোনো আলামত মেলেনি।
উল্লেখ্য, সায়েন্স ল্যাবের ঘটনায় গ্যাসজনিত বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ভবনটির সামনের সড়কে ছিল তীব্র যানজট। সে অবস্থায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় ভবনের ইট, পাথর, কাচসহ বিভিন্ন মালামাল উড়ে এসে পড়ে সড়কে। সেগুলোর আঘাতে অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিস্ফোরণের সময় কয়েকশ লোক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পথচারীদের কারও পা, কারও হাত, কারও চোখমুখ আবার কারও মাথায় গুরুতর জখম হয়। বিস্ফোরণে ভবনের চুরমার কাচের টুকরো উড়ে এসে বিদ্ধ হলে অনেকেই গুরুতর জখম হন। ভবনটির সামনের সড়কের বিপরীত পাশে ফুটপাতের টং দোকানি মো. ফয়েজ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়ি। এরপরই চারপাশে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো ইটের গুঁড়া ও ভাঙা কাচের টুকরো উড়ে এসে পড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে কয়েকশ মানুষ। যাদের অনেকে মারা গেছেন বলে মনে হয়েছে।’
পাশের কাদের ম্যানশন নামের ভবন-মালিক শফিউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আসরের নামাজের সময় বিস্ফোরণ হয়। ওই সময় আমি বাসায় ছিলাম। বিকট শব্দ শুনতে পাই, পুরো বাসা কেঁপে ওঠে। বাইরে এসে দেখি রাস্তায় রক্তে ভেসে গেছে, মানুষ লাল হয়ে আছে। একশর বেশি লোককে শুধু রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০-২৫টি অ্যাম্বুলেন্সে করে সবাইকে নিয়ে গেছে।’
স্থানীয় জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবনের পাশে গাড়িতে যারা ছিল সবাই যেন ঝলসে গিয়েছিল। রিকশায় থাকা এক লোক কাতরাচ্ছিল। যে যেভাবে পারে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাফে কুইন ভবনটির সামনের সড়কটিতে দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে বাস, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি। বিস্ফোরণ ঘটনায় ভবন ও এর দুই পাশের আরও দুটি ভবনের দেয়াল, জানালা ও কলাপসিবল গেট ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে সড়কের ওপর পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দোকানগুলো। ভিড় করে উৎসুক জনতা, এ সময় উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে তাদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে একে একে চলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আটকেপড়াদের একেক করে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তদারকি করতে দেখা গেছে। সেখানে স্বজনের খোঁজে ভিড় করেন অনেকেই। প্রায় তিন ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোর পর হঠাৎ সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, ভবনটির কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হচ্ছে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধারকাজে বিরতি দেয় ফায়ার সার্ভিস। তখন পর্যন্ত ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করেনি তারা। গতকালও দিনভর চলেছে উদ্ধার অভিযান। ভবনের ভেঙে পড়া ইট-পাথরের নিচ থেকে গতকাল বিকেলেও দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ডগ স্কোয়াডও ব্যবহার করা হয় তল্লাশিতে। বেজমেন্টে লোকজন আটকেপড়া থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান অভিযান স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দিনমনি শর্মা। তিনি জানান, মেহেদি হাসান স্বপন নামে একজন নিখোঁজ বলে তার স্বজনরা দাবি করেছেন। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। গতকাল পুরোদমে অভিযান চালানো হয়েছে।
বিস্ফোরণ হওয়া সাততলা ভবনটি বাণিজ্যিক ও আবাসিক কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানা গেছে। ভবনের বেজমেন্ট থেকে তিনতলা পর্যন্ত স্যানিটারির পণ্যের দোকান ও গুদাম, বাকিটা আবাসিক। ক্ষতিগ্রস্ত পাশের দুটি বহুতল ভবনও বাণিজ্যিক এবং আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই দুটি ভবনের একটিতে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়ের সব গ্লাস ভেঙে পড়েছে, অন্যটির দোতলা পর্যন্ত থাকা দোকানের বেশিরভাগ ধ্বংস হয়েছে। আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সামনের আরও কিছু ভবনের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের সময় আস্ত ইট উড়ে গিয়ে ওইসব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনার পরপরই ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। গতকাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
২০ জন নিহত : বিস্ফোরণে গতকাল পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তিথিরচড় গ্রামের সুমন, বরিশাল সদর উপজেলার কাজিরহাট গ্রামের ইসহাক মৃধা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শেখদি এলাকার মনসুর হোসেন, বংশাল আলুবাজার এলাকার মো. ইসমাইল হোসেন, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার পশ্চিম লালপুর গ্রামের আল-আমিন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকার রাহাত, চকবাজারের ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নদী বেগম, মুন্সীগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর গ্রামের মাঈন উদ্দিন, বংশাল কেপি ঘোষ স্ট্রিটের নাজমুল হোসেন, মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা গ্রামের ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দির আবু জাফর সিদ্দিক, বংশাল আগামসিহ লেনের আকুতি বেগম, শরীয়তপুরের নড়িয়ার কাঠাকুলী গ্রামের ইদ্রিস মীর, রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকার নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের উলুকাঠা গ্রামের হৃদয়, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের আবদুল হাকিম সিয়াম, বংশালের নর্থ সাউথ রোডের বাসিন্দা মমিন উদ্দিন সুমন ও মমিনের দোকানের কর্মচারী রবিন হোসেন। নিহতরা দোকান কর্মচারী, সিরামিক পণ্যের ক্রেতা ও পথচারী বলে জানা গেছে।
মধ্যরাতে লাশ হস্তান্তর : ঘটনার পর হতাহতদের নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ২০০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে তারা।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার থেকে মো. সুমন জানান, রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ১৭২ জন টিকিট নিয়ে চিকিৎসা নেন এবং ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির অবতারণা হয়। মধ্যরাতে ১৬ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবীর কুমার দাশ জানান, মর্গে থাকা ১৬টি লাশ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, গতকাল উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহও হস্তান্তর করা হয়। এর মাঝে গতকাল আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই স্বজনরা নিয়ে গেছেন সুমনের মরদেহ। পরে লোকজন এসে তার নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সব মিলিয়ে ১৯ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে স্বজনরা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া লাশ নিয়ে যাওয়া সম্রাটের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
আহত একজনের মৃত্যু : বিস্ফোরণের ঘটনায় ১১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা হলেন হাসান, ইয়াসিন, মুসা হায়দার, খলিল, আজম, ওলি শিকদার, বাবলু, আলআমিন, বাচ্চু মিয়া, জাহান ও মোস্তফা। মোস্তফাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটের হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসা মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন। তিনি বলেন, মুসার শরীরের ৯৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ২০ জন। এর মধ্যে একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মাথায় আঘাতসহ মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে। অনেকের শরীরের হাড়গোড় ভেঙে গেছে।
তদন্ত কমিটি ও মামলা : বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ফায়ার সার্ভিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি তিন সদস্যের নাম পরে জানানো হবে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় বংশাল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। এর আগের দিন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। গতকাল রাতে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও ডিএমপির সিটিটিসি তদন্ত করছে। তারা যদি এমন কোনো কিছু পায়, যাতে মনে হয় নাশকতা বা বিস্ফোরক তাহলে অন্য মামলা হবে। আপাতত অপমৃত্যুর মামলার আলোকে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে।
যা বললেন সংশ্লিষ্টরা : ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিস্ফোরণের কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন, কেন বিস্ফোরণ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন এটা কোনো নাশকতামূলক ঘটনা নয়। অনেক সময় নানা কারণে বিস্ফোরণ হয়, কখনো মিথেন গ্যাস, কখনো এসির গ্যাস। এটা গ্যাসজনিত কোনো বিস্ফোরণ হতে পারে। এরপরও তদন্ত করা হবে এটা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা।’
একইদিন রাত ১১টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণটি ভবনের বেজমেন্টে হয়েছে। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এতে কোনো বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও সেখানকার শরণার্থীরা রোহিঙ্গা সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ঢাকা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনায় নিয়োজিত থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি ও সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎসহ বেশ কটি বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৪ মার্চ দোহায় পৌঁছান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ (ইউক্রেনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো ফোকাস (দৃষ্টি) এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে।’
আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ এরই মধ্যে সম্প্রচার করা হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ অংশটি আলজাজিরায় আগামী ১১ মার্চ (শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিট) জিএমটি ৪টা ৩০ মিনিটে সম্প্রচার করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমারে নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড এবং পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয় তখন আমরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, আমরা তাদের আসতে দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবার জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন। আমরা তাদের জন্য আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসানচর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা... আমরা সেখানে শিশুদের জন্য ভালো থাকার ব্যবস্থা এবং চমৎকার সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
রোহিঙ্গা শিবিরে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আগুনে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হারানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) একে অপরের সঙ্গে লড়াইরত। তারা মাদক, অস্ত্র, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।’
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলডিসি দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদান শেষে গতকাল বিকেলে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বিমানটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের তারা যেসব দেশে কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইনভঙ্গ করে কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সাবধানও করে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, এটা আর বরদাশত করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন আপনি কাতারে আছেন, এ দেশের প্রচলিত আইন আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোনো চেষ্টা করব না, কোনো ব্যবস্থাও নেব না, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণও অনেকে ঠিকভাবে নেন না। প্রশিক্ষণের সময় অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন বলে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করেন, সেই অপরাধের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠানোর যে সুযোগ আমরা পাই সে সুযোগও হারিয়ে যায়। আরও ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগ থাকে সেটা তারা পান না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ।
তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দেশে এসেছেন (৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে) বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি দেশের মানুষের জন্য দুবেলা-দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। তাদের জীবনমান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বৈধপথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোঁকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধপথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সবাইকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে শবেবরাতের রাত হওয়ায় সবার কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা জনগণের চাহিদা মেটাতে কাজ করছি এবং আমরা তাদের একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট লাগামহীন দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং নির্যাতনের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করে তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চলেছে। বাসস
‘এই রকম কপাল আমার, একসঙ্গেই দুজনের লাশ নিয়ে যাচ্ছি বাসায়। ওদের দুইটা সন্তান। ওদের সামনে কী করে যাব? ওদের কী করে বুঝ দেব?’ গত মঙ্গলবার গুলিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দম্পতির লাশ বুঝে পেয়ে এ কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাদের চাচা জয়নাল আবেদিন। তার এমন বুকফাটা কান্নার বেদনার্ত সুরে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
খানিক পর চাচা জয়নালের কান্নার আওয়াজও যেন ফুরিয়ে আসছিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। একটু শান্ত হয়ে আসার পর তিনি জানান, মমিনুল ইসলাম ও স্ত্রী নদী বেগম দম্পতি চকবাজার ইসলামবাগে নিজেদের বাড়িতে থাকতেন। ক্যামেরাসহ কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করতেন মমিনুল। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পোরকরা গ্রামে। বাড়ির জন্য স্যানিটারি পণ্য কিনতে সিদ্দিকবাজার গিয়েছিলেন বিকেলে। সেখানে ফুপাতো ভাইয়ের দোকানে নিজের মোটরসাইকেল রেখে স্ত্রীকে নিয়ে পণ্যগুলো কিনতে যান। তখনই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। জয়নালের মতো কেউ বুঝে নেন ভাই, বোন, কেউবা মায়ের মরদেহ। স্বজনের নিথর দেহটি বুঝে পেয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তারা। পঞ্চাশোর্ধ্ব দুলাল মিয়া ছেলে আবদুল হাকিম সিয়ামের লাশ বুঝে নেন মঙ্গলবার মধ্যরাতে। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। এ যেন পৃথিবীসমান বেদনাময় দৃশ্য। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার এলাকায়। দু-তিন বছর ধরে সিদ্দিকবাজারে জয়নাল স্টোর নামে স্যানিটারি দোকানে চাকরি করছে সিয়াম। বাবা সিদ্দিকবাজার রোডে এইচআর পলিমার নামে একটি দোকানে কাজ করেন।
দুলাল মিয়া জানান, সেদিন বিকেলে রিকশাচালক তাকে বলেন বিস্ফোরণের কথা। তখন ছেলের কথা মাথায় আসতেই তার দোকানে যান তিনি। জানতে পারেন নিজের দোকান থেকে মাল আনতে আরেকটি দোকানে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে আহত হয় সিয়াম। পরে চিকিৎসাধীন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।
স্বজন হারানোর বেদনার্ত মুহূর্তে মরদেহ বুঝে পাওয়ার অব্যবস্থাপনা মানতে পারছিলেন না অনেক স্বজন। সম্রাট ও সুমন নামে দুজনের লাশ স্বজনরা মর্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু যারা স্বজনের লাশও পাননি তাদের কষ্ট দেখার যেন কেউ ছিল না। গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। পুলিশ তাকে সামনে যেতে নিষেধ করলে তিনি খুব অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘আমার স্বপন ভাই ভেতরে আটকে আছেন, তাকে বের করে নিয়ে আসুন।’
কামাল জানান, বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে টাইলসের দোকানে ম্যানেজার ছিলেন স্বপন। দোকানটি ভবনের বেজমেন্টে ছিল। তার সঙ্গে আর চার কর্মচারী কাজ করতেন, তাদের একজনকে হাসপাতালে পাওয়া গেছে। তবে বাকিদের সন্ধান মেলেনি। তারা ভেতরেই জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় আছেন।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের ডগ স্কোয়াডের একটি দল পাশের ভবন দিয়ে প্রবেশ করে। তারা সেখান থেকে ভেতরে মরদেহ থাকার আলামত পান। এরপর ফায়ার সার্ভিস ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু কামালের ভাই স্বপনের সন্ধান মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকার সব হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি, সবখানে খুঁজেছি; কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।’
সেদিন ভাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন খলিল শিকদার ও অলি শিকদার নামে ভ্যানচালক দুই ভাই। বিস্ফোরণে তাদের শরীরের অনেকটা পুড়ে গেছে। বড় ভাই অলির অবস্থা বেশি গুরুতর। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুরো শরীর পুড়েছে। খবর পেয়ে খলিলের স্ত্রী কোহিনুর বেগম সন্তানদের নিয়ে মাদারীপুর থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন। স্বামীর আয়েই সংসার চলে। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে তাদের। স্বামীর চিকিৎসা, সংসার সব মিলিয়ে কোহিনুরের দিশেহারা অবস্থা।
বেঁচে ফেরাদের মুখে ঘটনার বর্ণনা : ‘বিকট শব্দে পাশের দেয়াল ভেঙে গায়ের ওপর যখন পড়ল, একই সময় গরম হাওয়া চোখ-মুখ ঝলসে দিল। ভেবেছিলাম মারা যাচ্ছি। কিছু সময় পর হামাগুড়ি দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে দোকান থেকে কোনোমতে বের হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার বর্ণনা দেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সাইফুল ইসলাম (২৫)। মাথা, মুখ ও পিঠে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর শয্যায় কাতরাতে দেখা যায় সাইফুলকে। তার পাশে বসা স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।
গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদককে সাইফুল বলেন, ‘বিকট শব্দের পর সব অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা চারজন কর্মী ছিলাম আর অনেক কাস্টমার আমাদের দোকানে ছিল।’ সোনিয়া জানান, শরীরে ৪০টির বেশি সেলাই লেগেছে সাইফুলের।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন খলিলুর রহমান (৩০)। সবজির বীজ বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক তিনি। ঘটনার সময় কার্টনভর্তি মাল মাথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বিকট একটা শব্দ শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। শরীরের পেছন দিকে কাচ ও ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী।
একই ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় আছেন মো. শহীদুল। তিনি পুরান ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তের শ্রমিক। ঘটনার সময় ওই সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। শহীদুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেঁচে আছি, এটাই সৌভাগ্য। তবে বাম হাত ও বাম পা আঘাতে জখম হয়েছে, সেখানে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।’
ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পল্লব চক্রবর্তী। তিনি জানান, তার পণ্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। পুরান ঢাকার গোপীবাগে পরিবার নিয়ে থাকেন। পণ্য পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে আহত হন। তার বাম পা পুরোটাই জখম হয়েছে, নাক ও মুখ কাচের আঘাতে কেটে গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়া করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তার জন্য চলছে চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো করলেও পরে খেই হারিয়েছে কমিশন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম নিয়ে আপত্তি থাকায় এবং অর্থ-সংকটের কারণে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি স্থগিত করেছে সরকার। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অংশীজনদের দাবি ছিল, সব কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা বা সিসিটিভি ক্যামেরা (সিসিক্যাম) স্থাপন করা উচিত। এটি করা গেলে নির্বাচনে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা আসবে। কিন্তু অর্থ-সংকটের কারণ দেখিয়ে এ প্রকল্পও বাতিল হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
গত ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজধানীর নির্বাচন ভবনের পঞ্চমতলায় ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান।
সিইসি পরে সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় নির্বাচনে এই ক্যামেরা ব্যবহার হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে নেবে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওই বক্তব্যের পর সংসদের ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে কাজ শুরু করে কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বেশ কটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, সব আসনেই সিসিক্যাম ব্যবহার করা সম্ভব। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থের ছাড় হলে আগামী মে মাসেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে ইসি-সূত্র জানায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৩০০ আসনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র হতে পারে। ভোটকক্ষ হতে পারে সোয়া দুই লাখের বেশি। প্রত্যেক কক্ষে একটি করে সিসিক্যাম বসালে সোয়া দুই লাখের বেশি ক্যামেরা লাগবে। ভোটকক্ষের বাইরে দুটি করে বসাতে চাইলে সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিক্যামের প্রয়োজন হবে।
এতে বর্তমান বাজার মূল্যে কমবেশি ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কমিশন সব আসনে নাকি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিক্যাম বসাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। অর্থপ্রাপ্তি, জনবল ও মনিটরিং টিমের সামর্থ্য অনুযায়ী কমিশন একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার চায় ইসি। প্রতিষ্ঠানটি সিসিটিভি ক্যামেরার মূল চাবিকাঠি বা মাস্টার অ্যাডমিনের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রাখবে। আর আসনভিত্তিক যে রিটার্নিং অফিসাররা থাকবে তাদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ের মনিটরিং পাওয়ার দেওয়া হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। আমরা ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা রাখার পক্ষে। তবে দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। মাস্টার অ্যাডমিন ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে থাকলেও স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারদের মূল দায়িত্বে রাখা হবে। সব আসনে অথবা অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টাকা পেলে টেন্ডারের কাজ শুরু করব।’
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ১২৪২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরা বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।’
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে ইসি সিসিটিভির জন্য ১৩১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে। এর মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাড়া, কানেকশন সেট, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির জন্য (২২,৫০০০টি) ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; ১৬ চ্যানেল ডিভিআরের জন্য ৮ কোটি ৭৫ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ৮ কোটি ৭৫ লাখ; হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (৫০০ গিগাবাইট ক্ষমতার ২ হাজার ৫০০টি) বাবদ ২ কোটি ৭৫ লাখ; মনিটর ভাড়া (প্রতি আসনে ৫টি করে) ৭ কোটি ৫০ লাখ; মনিটর ভাড়া (কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা) বাবদ ১২ কোটি ৫০ লাখ; সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি কানেকশন বাবদ ১০ কোটি; কেবল কানেকশন বাবদ ১০ কোটি ৮০ লাখ; ডিকোডার মেশিন ভাড়া বাবদ ৬২ কোটি ৫০ লাখ; সার্ভার ভাড়া বাবদ ৫০ কোটি এবং সিসিটিভি স্থাপন ও সাপোর্ট সার্ভিস বাবদ ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি খরচ হবে যেখানে ইন্টারনেট নেই সেখানে এর ব্যবস্থা করার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা থেকে তার টেনে লাইন চালু করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরই মধ্যে ছয়টি প্রপোজাল জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানসহ আইডিইএ (আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস) প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সব প্রস্তাব দেখে একটি খসড়া প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসের শুরুতে টেন্ডার করা না গেলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না। প্রায় সোয়া তিন লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা সংগ্রহ করতে হবে। এত ক্যামেরা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোগাড় করা সম্ভব নয়। এজন্য ২-৩ মাস সময় লাগবে। সারা দেশে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও দেড় মাস। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ফিক্সড করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। টেস্টিংয়ের কাজ করতে লাগবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহকে ডেডলাইন ধরে তারা কাজ শেষ করতে চান সংশ্লিষ্টরা। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিয়েই কাজ গুছিয়ে রাখতে চান তারা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভাগওয়ারি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে কর্মকর্তাদের। রিটার্নিং অফিসাররা ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুসরণ করবেন। ইসির কেন্দ্রীয় দপ্তরে যে ডেটা স্টোর আছে তার সঙ্গে আরও ৭০ থেকে ৮০টি নতুন যোগ করা হবে। তিনটি বিষয়ের কাজ করতে দেওয়া হবে রিটার্নিং অফিসারদের। ভিডিও দেখা, রেকর্ড করা ও স্ক্রিনশর্ট নেওয়ার কাজ করতে পারবেন তারা। কোনো কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিলেও অটো রেকর্ড হবে এবং ডেটা কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হবে। কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ সিস্টেম চালু হবে। ইসির আগারগাঁওয়ের অফিস থেকে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর ক্যামেরা মনিটর করা হবে। প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কেন্দ্রের সার্ভারে ঢুকে যেকোনো সিসিটিভিতে সেখানকার পরিস্থিতিও দেখতে পারবেন মাস্টার অ্যাডমিন।
নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কারিগরি সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত এলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে।’
অর্থ-সংকটের যুক্তিতে প্রকল্প সরকার বাতিল করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনো কিছুতেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকার কি এই প্রকল্প পাস করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু করার ইচ্ছা থাকলে সিসিটিভির বিষয়গুলোর প্রতি তারা ইতিবাচক থাকবে।’
জানিপপ সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ-সংকটে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিছু টাকা খরচ হলেও প্রকল্পটি রাখা উচিত।’
ঘরের মাঠটাই শুধু বাংলাদেশকে একটু সাহস দিতে পারে। এর বাইরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে স্বাগতিকদের পক্ষে কিছু নেই। গত ডিসেম্বরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি পুরো শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেনি। তবুও জস বাটলারের নেতৃত্বে দলে যারা আছেন তারাই কম ভয়ংকর কোন দিক থেকে? এই ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে রুখে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চট্টগ্রামে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। অবশ্যই অসম লড়াই, তবুও বাংলাদেশ কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে এ সিরিজ থেকে বড় শিক্ষার সুযোগ দেখছেন। পাশাপাশি শেষ ওয়ানডে জয়ের আত্মবিশ্বাসে তাক লাগানো কিছু করার লক্ষ্য সাকিব আল হাসানদের। এদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ক্রিস ওকসেরও সুরটা সমীহের। বাংলাদেশ ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জ উপহার দেবে বলে জানান তিনি।
গত বছর প্রায় পুরোটাই টি-টোয়েন্টি খেলে কাটাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এ ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বিরতি পড়েছিল।
পরের বিশ্বকাপ আগামী বছর। তার আগে বিস্তর সময় আছে এ ফরম্যাট নিয়ে কাটাছেঁড়া করার। একই সঙ্গে কোচ বদল হওয়ায় এ ফরম্যাটে নতুন শুরুরও একটা ব্যাপার থাকছে। সেই শুরুটা হচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। কোচ হাথুরুসিংহে ব্যাপারটিকে সাদরে গ্রহণ করছেন। জানালেন এ সিরিজ দিয়ে তিনি ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির সেরা পরীক্ষায় মানসিকতা দেখতে চান, ‘আমরা কী করতে পারি তা দেখার জন্য আমি খুব খোলামন নিয়ে বসে আছি। এ সিরিজটা অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা জিততে চাইব এটাই প্রথম লক্ষ্য তবে এটাও দেখতে চাই যে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা কোথায়। আমি তো জাদুকর নই যে সব বদলে দেব। ক্রিকেটাররাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে প্রমাণ করে দেখাবে কেন আমি তাদের নির্বাচন করব। আমি বলব টি-টোয়েন্টি স্কিল দেখানোর এটা সুবর্ণ সুযোগ।’
ওয়ানডেতে দুই দলের নিয়মিত দেখা হলেও এ ফরম্যাটে দুই দলের দেখা হয় না বললেই চলে। ২০২১ বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশকে অনায়াসে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ফরম্যাটের হিসেবে দুই দলের লড়াইটা নতুন। হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে এ সুযোগটা নিতে পারে বাংলাদেশ। সুযোগ আরও একদিক থেকে আছে। ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল নিয়ে এলেও বিশ্বকাপজয়ী দলের অনেকেই নেই এ সফরে। বাংলাদেশের মতো ইংল্যান্ডও বিশ্বকাপের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে। বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, অ্যালেক্স হেলস, ডেভিড উইলি ও ক্রিস জর্ডানরা না থাকায় ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ছন্দটা একটু গুছিয়ে উঠতে হবে। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা বিপিএল খেলে টি-টোয়েন্টির ছন্দেই আছেন। নতুন যুক্ত হওয়া রনি তালুকদার, তানভীর আহমেদ, শামীম পাটোয়ারী ও রেজাউর রহমান রাজারা বিপিএলের সেরা পারফরমার। সব মিলিয়ে শক্তির দিক থেকে না হলেও সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ছন্দের দিক থেকে একটু এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
অবশ্য হাথুরুসিংহে বিপক্ষে কে আছেন বা নেই এসব দিকে তাকাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ায় বসেই ইংল্যান্ডকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন। ওই দলের শক্তি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই অবগত। এ ফরম্যাটে নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ইংল্যান্ডের স্টোকসদের না পেলে বরং অন্য শিক্ষা নিতে চাইছেন হাথুরু, ‘দুই ফরম্যাটেই তো ওরা চ্যাম্পিয়ন। ৫০ ওভারে ওদের দলটা খুবই স্থিতিশীল। টি-টোয়েন্টি দলও তেমন। তবে এবার অনেককেই তারা বিশ্রাম দিয়েছে। অবশ্যই ২০২২-এর অনেকেই ২০২৪ বিশ্বকাপ খেলবে না। ওরা নতুন দল গড়তে চাইছে। আমরা দেখতে পারব বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কীভাবে দল তৈরি করে।’ তবে এ সিরিজ থেকেই যে ২০২৪ আমেরিকা ও উইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করছেন তা লুকাননি হাথুরু, ‘টি-টোয়েন্টি দলটাকে মাত্রই দেখলাম। হ্যাঁ, আমরা পথচলাটা শুরু করেছি। কিন্তু এখান থেকে অনেক জল গড়াবে। ক্রিকেটারদের জন্য সঠিক সময় বিশ্বকাপ মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করার।’
ইংল্যান্ড অবশ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে অহমিকা দেখাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশকে সমীহ করছে টি-টোয়েন্টিতেও। দলটির পেসার ক্রিস ওকস কন্ডিশন ও ঘরের মাঠে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স সামনে রেখে ব্যাকফুটে থাকার কারণ দিলেন, ‘বাংলাদেশ, খুব, খুব ভালো দল। বিশেষত যখন ওদের কন্ডিশনে খেলা হবে। আমরা ভুলে যাইনি ওয়ানডেতে কী হয়েছে। সব শেষবারও আমরা হেরেছিলাম এবারও একটি ম্যাচ হারলাম। দুটো সিরিজই কিন্তু উত্তেজনার ছিল। টি-টোয়েন্টিতে আমরা একইরকম চ্যালেঞ্জ আশা করছি। হয়তো আমরা বিশ্বকাপ জিতে এসেছি কিন্তু এ কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারানো সত্যিই কঠিন হবে।’
ওকস জানালেন, ইংল্যান্ডের চিন্তা করার আরও কারণ আছে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে নতুন চার ক্রিকেটার যুক্ত করেছে। তাদের কাউকেই আগে দেখেননি ওকসরা। ওদের বিপক্ষে ম্যাচে মুখোমুখি হওয়াটা চ্যালেঞ্জের অন্য কারণ, ‘অবশ্যই এটা চ্যালেঞ্জের। কারণ একজন ব্যাটারের শক্তি-দুর্বলতা জানা থাকলে আপনি সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কিন্তু অপরিচিত কাউকে চেনার আগেই সে আপনার কাছ থেকে ২০-৩০ রান নিয়ে নিতে পারে বা আপনাকে আউট করে দিতে পারে। আমরা শুনেছি ওদের নতুনরা বিপিএলে খুব ভালো করে এসেছে। এটা ওদের আত্মবিশ্বাস দেবে। যেমনটা বলছিলাম এ সিরিজে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ আশা করছি।’
ওকস যতই চ্যালেঞ্জের কথা বলুক, টি-টোয়েন্টির হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে তারা যে অনেকটা এগিয়ে তা খালি চোখে স্পষ্ট। গত বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে আসরে প্রথমবার দুই জয় তোলা বাংলাদেশকে তৃপ্তির ঢেকুর দিতে পারে। তবে এ ফরম্যাটের মূল সুরটা ধরা বাকি থেকেছে নিশ্চিত। সেই সুর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসম লড়াইয়ে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।