
মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রোজা। বৈশি্বক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। মুষ্টিমেয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। ফলে এবার রোজায় মানুষকে আরও বেশি খরচ করতে হবে। গড়ে চারজনের একটি পরিবারের খরচ বাড়তে পারে ১০ হাজার টাকার বেশি।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত বছরের মতো একই মানের ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরি খেতে হলে এবার খরচ হবে বেশি। বাড়তি খরচ চালাতে না পেরে খাবারের মান কমাতে বাধ্য হবেন অনেকে।
দেশে রোজার মাসে সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারে ইফতারিতে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলু চপ, ছোলা, খেজুর, কলা, চিড়া, মুড়ি, শরবত কমবেশি খেয়ে থাকে। সাধারণ আয়ের বেশিরভাগ পরিবারে রাতের খাবার ও সাহরিতে মাছ বা মাংস, শাক বা সবজি, ডাল খাওয়া হয়। অনেকে দুধ-কলাও খেয়ে থাকে।
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ৫২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন রাহাত হোসেন। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে কলেজপড়–য়া দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার পরিবারে গত রমজানে প্রতিদিনের ইফতারিতে গড়ে একজনের জন্য একটি খেজুর, দুটি পেঁয়াজু, একটি আলুর চপ, একটি বেগুনি, একটি কলা, একটি বড় জিলাপি, পরিমাণমতো চিড়া, দুজনের জন্য মাঝারি আকারের একটি শসা, ফল, শরবত খেতে খরচ ছিল ৭-৮ হাজার টাকা। রাতের খাবার ও সাহরিতে গত রমজানে গড়ে মাঝারি আকারের এক টুকরো মাছ বা মাংস, শাক বা সবজি ভাজি, ডাল, মাঝেমধ্যে রাতে দুধ-কলা খেতে খরচ ছিল ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। রাহাত হোসেনের পরিবারে ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরিতে মোট খরচ ছিল ২২-২৫ হাজার টাকা। হিসাব করে দেখা যায়, একই খাবারে এবারের রমজানে ৩৫ হাজার টাকার বেশিই লাগবে।
রাহাত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত রোজার মতো খেতে গেলে এবার খরচ ১২-১৫ হাজার টাকার বেশিই লাগবে। অন্য খরচ কমিয়ে যে খাবারের মান ঠিক রাখব তার উপায় নেই। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ, ছেলেদের পড়ার খরচ সবই বেড়েছে। আয় তো বাড়েনি। এবার রমজানে খাবার থেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক কিছু কমাতে হবে। এখনই আমরা মাংস, ডিম, দুধ কম খাই।’
খুলনার টুটপাড়ায় বসবাসকারী গৃহিণী শামিয়া জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার পরিবারের আয় মাসে ৩২ হাজার টাকা। গত রোজায় ইফতারিতে পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, আলুর চপ, শসা, চিড়া-কলা খেয়েছি। এবারে খাবার তেলের দামই তো বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চিনি, বেসন, ছোলা সবকিছুরই দাম বেশি। আগের মতোই আমার স্বামী একই বেতন পায়। এবারে ইফতারিতে একটি ভাজির পদ, সঙ্গে চিড়া ও কলা রাখব বলে ভেবেছি।’
মধ্যবিত্ত পরিবারের চেয়েও বিপাকে আছে কম আয়ের মানুষ। নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেকে শুধু ছোলা, মুড়ি দিয়েও ইফতারি সেরে ফেলার কথা বলেছেন। রাতের খাবার এবং সাহরি ভাতের সঙ্গে নিরামিষ তরকারি, ভর্তা বা ভাজি দিয়েই সারবেন বলে জানিয়েছেন।
রিকশাচালক মতি মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর রোজায় রাতের খাবার ও সেহেরিতে প্রায় প্রতিদিনই মাছ খাইতাম। মাঝেমধ্যে গোশত খাইতাম। এবার মাছ, মুরগি কেমনে খাইবো? রাতে আর সেহেরিতে বেশিরভাগ দিন ভাজি, ভর্তা দিয়েই খাইতে হইবো। ইফতারিতে ছোলা আর মুড়ি ছাড়া ভালো-মন্দ খাইবো কেমনে? সবকিছুর দাম ম্যালা বাইড়া গেছে।’
গত বছর ডিসেম্বরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে হিসাব করে দেখিয়েছিল, চার সদস্যের একটি পরিবারে মাছ ও মাংস ছাড়া ‘কম্প্রোমাইজ ডায়েটে’ প্রয়োজন হয় ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা। এই ন্যূনতম খরচও মেটাতে পারছেন না ৩৯টি সেক্টরের ৩০টির কর্মীরা। ফার্মাসিউটিক্যাল, শিপব্রেকিং, ট্যানারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড অ্যানামেল, রি-রোলিং মিলস, প্রাইভেট রোড ভেহিক্যাল, লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ফ্যাক্টরি এবং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড টিম্বার খাত ছাড়া কোনো সেক্টরের কর্মীদের এ ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নেই। অন্যদিকে মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা ব্যয় করার সক্ষমতা পাওয়া যায়নি ৩৯ খাতের কারোরই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গবেষণাটি করা হয়েছিল ডিসেম্বরে। এখন তো সময় আরও গড়িয়েছে। অনেক পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সেভাবে আয় না বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়ছে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। তবে যা বাড়ার কথা অনেকে কৃত্রিম পণ্য সংকট দেখিয়েও তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে ফেলেছে। গত রমজানের তুলনায় এবারে ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরিতে খাবার খরচ দ্বিগুণ না হলেও তার কাছাকাছি বাড়বে। অনেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল নিয়মিত খেতে পারবে না বলে মনে করছি।’
বেশিরভাগ পরিবারে শবেবরাতের পর থেকেই রমজানের জন্য খেজুর, আলু, ছোলা, বুট, ডাল, বেসন, পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, শরবত, গুঁড়া দুধ, চিড়া, মুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য কেনা শুরু করে। রমজান শেষ হওয়ার দুই-চার দিন আগপর্যন্ত এসব পণ্যের চাহিদা বাড়তি থাকে। অন্যদিকে বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি, মাছ, মাংস, তরল দুধ, ফলের চাহিদা বেশি থাকে রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শুধু রোজায় ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। রোজায় চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে রোজায়। সারা বছর পাঁচ লাখ টন মসুর ডালের শুধু রোজার এক মাসে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই এ সময়ে লাগে। আর ২৬ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজের ৫ লাখ টনই দরকার হয় রোজায়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈশি^ক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এবারে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও পণ্যের দাম গত রমজানের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে কিছু সুযোগ-সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী রমজান সামনে রেখে এসব কারণকে অজুহাত দেখিয়ে দাম যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানুষ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল। প্রোটিনের জোগান আসে এমন পণ্যের দাম গত এক বছরে বেড়েছে ২০.৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে রুই মাছের দাম ২১.২১ শতাংশ ও গরুর মাংসের দাম ২৪.৭৮ শতংশ বেড়েছে। ডালের কেজি গত এক বছরে ১৩০ থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৪.৬২ শতাংশ। ডিমের হালিপ্রতি বেড়েছে ৩১.৫৮ শতাংশ। গত এক বছরে শর্করা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৩৫.৫১ শতাংশ। নাজিরশাইলের দাম ২০.২৯ শতাংশ, মোটা চালের ১৭.৯৫ শতাংশ ও আটা ৬৪.২৯ শতাংশ বেড়েছে। চিনির কেজি ৪৩.৫৩ শতাংশ, মিল্ক ভিটার দুধ প্রতি লিটার ২৮.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে সাড়ে ১৮ শতাংশ।
বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গতবার রোজায় মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮-৪০ টাকা থাকলেও এবারে ৫০-৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চালও বেড়ে ৬০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। মসুরের ডাল গত রোজায় প্রতি কেজি ১২০ টাকা, এবার ১৪০, অ্যাংকর ডাল ৬০ থেকে বেড়ে এ বছর ৮০ টাকা। গতবার এক কেজি বেসন ৮০ টাকা ছিল, এবার তা ১২০, প্রতি কেজি ছোলা ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এবারে ৯০ টাকা। গত রোজায় খেজুর মানভেদে প্রতি কেজি ৩০০-৫৫০ টাকা ছিল, এবার ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। গতবার সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১২০ টাকা লিটার বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকায়। যে লবণ ছিল ৩৫, এবার সেটা ৪২ টাকা, চিড়া ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম ৬৬ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা হয়েছে। চিনি ছিল ৬৫, এবার প্রায় দ্বিগুণ ১২০ টাকা। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, গতবার মুড়ি ৬০, এবার ৭০ টাকা। গত রোজায় গুঁড়ো দুধ কেজি ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যে থাকলেও এবার ৮১৫-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পোলাওর চাল ১২০ থেকে বেড়ে ১৭০ এবং খোলাটা ১০০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম, সেমাই, সুজি এবং দেশি-বিদেশি ফলের দামও বাড়তি। গত রোজায় এক কেজি আপেলের দাম ছিল ১৭০-১৮০, এবার ২৮০-৩০০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, গত রোজায় গরুর মাংসের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ এবং খাসির মাংস ৮০০ টাকা ছিল। এরই মধ্যে দাম বেড়ে গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ এবং খাসি ১ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।
গতবার ডিমের ডজন ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। এবার ১৩৫ টাকা। তরল দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। গত রোজায় বড় আকারের তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা থাকলেও এবার ২২০-২৫০ টাকা। দেড় কেজির রুই, কাতলা, কালবাউশসহ বড় মাছের গত রোজায় গড়ে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা ছিল। এরই মধ্যে দাম বেড়ে ৩৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছর পাঙ্গাশের কেজি ছিল ৯০-১১০ টাকা। এবার তা ১৬০-১৭০ টাকা।
গতবার রোজায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ছিল ১১০-১২০ টাকা। এবার রোজার আগেই দাম উঠেছে ২২০-২৩০ টাকা। সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেড়ে এখন ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত রোজায় বেগুন, শসা এ ধরনের সবজি অন্যগুলোর দাম গড়ে ২০-৩০ টাকার মধ্যে ছিল। এবার সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপের কেজি ৩০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩৫-৪০, লম্বা বেগুন ৪০-৫০, শসা ৪০ ও লেবুর হালি ৪০-৫০ টাকা।
‘বাবারে আমার আগেই তুই চইলা গেলি। আমার বয়স হয়েছে। খোদা ক্যান আমারে তোর আগে নিয়ে গেল না’ এভাবেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের লাশঘরের সামনে বিলাপ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। তিনি গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ভবন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত মেহেদী হাসান স্বপনের বাবা গোলাম রাব্বানি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে স্বপনের লাশ ভবনের বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তাছাড়া গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াসিন আরাফাত মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩ জনে।
গত মঙ্গলবার ক্যাফে কুইন মার্কেট হিসেবে পরিচিত ভবনে বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন স্বপন। গতকাল ভবনের বেজমেন্টে তার লাশ পাওয়া যায়। বেজমেন্টের দক্ষিণ পাশের সিঁড়ির নিচে পড়েছিল স্বপনের লাশ। তার খোঁজে গত তিন দিন ভবনের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। স্বপনের লাশ উদ্ধারের পর তার বড় ভাই তানভীর হাসান কাঁদতে কাঁদতে মোবাইল ফোনে বাড়িতে খবর জানিয়ে বলছিলেন, ‘ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে, তোরা কবর খোঁড়।’ তিনি বলছিলেন, ‘ও (স্বপন) ছিল সবার ছোট, ওই সবার আগে চলে গেল।’
পরিবারের লোকজন শনাক্ত করার পর স্বপনের লাশ পুলিশের সহযোগিতায় নেওয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে। সেখানে বাবাসহ পরিবারে অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ পরিবারকে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
বিধ্বস্ত সাততলা ভবনটির বেজমেন্টে থাকা বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের দোকানের ব্যবস্থাপক ছিলেন স্বপন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পশ্চিম এনায়েতপুর গ্রামে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, ভবনটির বেজমেন্ট থেকে স্বপনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বপনের বড় ভাই তানভীর হাসান সোহাগ মরদেহ শনাক্ত করেন। ভেতরে আর কোনো মরদেহ নেই।
এ সময় তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনে দ্বিতীয় দফা অপারেশন বা উদ্ধারকাজের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবকাঠামোগত ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষা করছে ফায়ার সার্ভিস। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, উদ্ধারকাজ শুরুর জন্য ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত আছে। তবে অবকাঠামোগত ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে। এ নিয়ে তারা আলাদা একটি টিম করেছেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরেই নতুন করে অভিযান শুরু করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয়তলার ছাদ ধসে বেজমেন্টের ওপর পড়েছে।
ভবনটি ১০ তলা করার পরিকল্পনা থাকলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেজমেন্ট ও একতলা পর্যন্ত হয়। এর বেজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবার হোটেল ক্যাফে কুইন। এ রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের সংযোগ ছিল, যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। পরে ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাততলা পর্যন্ত করা হয়। ভবনটির প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ সালে তার মৃত্যুতে তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বর্তমানে ভবনটির মালিক। ভবনটির বেজমেন্টে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচতলায় পাঁচটি দোকান, দোতলাতে কাপড়ের দুটি দোকান ছিল, যেগুলোর জন্য অনেক কাচ এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয় এবং বেশি শক্তির এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলো সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে যেটা দুই-তিন বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।
ভবনটি নিয়ে রাজউক কী করবে : ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে নাকি সংস্কার করা হবে তা দ্রুত সময়েই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাজউকের তদন্ত কমিটি সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানিয়ে বলেন, বেজমেন্টসহ নিচতলার কলাম ও পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রথমে এটাকে স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) করতে হবে। এরপর সংস্কার করলে ভবনটি নিরাপদ হবে নাকি ঝুঁকি থাকবে তা জানানো হবে। ভবনের ২৪ কলামের মধ্যে ৯টি কলাম বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তকাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জানাতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ভবনটি স্থিতিশীল করার কাজ গতকাল বিকেল থেকে শুরু করলে আজ শুক্রবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভবনের কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা ভবনের ভার নিতে পারছে না। কলামগুলোকে আলাদা করে সাপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে ভার নিতে পারে। স্থিতিশীল করার পর ডিটেইল অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। সেখানে বোঝা যাবে, ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে নাকি মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।’
এখনো কমছে না উৎসুক জনতার ভিড় : সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটনার দুদিন পরও গতকাল ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। যদিও কারোর কোনো অভিযোগ নেই, তারা শুধুই বিধ্বস্ত ভবনটি দেখছে। ফায়ার সার্ভিস, র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে উদ্ধার অভিযান ও উদ্ধার করা লাশ নিতে অ্যাম্বুলেন্স আসতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, ভিড় এড়াতে পূর্ব পাশের গুলিস্তান ও বংশাল রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। এরপরও উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘœ হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপর ধাওয়া দিয়ে তাদের হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও ঘটনাস্থলে ফিরে আসছে জনতা।
আহতদের অবস্থা : বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা রাজন ছাড়া বাকিদের সবার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একজন আইসিইউতে। আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি পাঁচজনকে চিকিৎসকরা দেখে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তবে তারা পরবর্তী চিকিৎসা নিতে আসবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা রাজনের গতকাল অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা রয়েছেন।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া নয়জনের মধ্যে ইয়াসিন আরাফাত নামে একজন গতকাল মারা গেছেন। বাকি আটজন চিকিৎসাধীন। ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আটজনের মধ্যে দুজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। ২০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড মিলে সব রোগী দেখছে। গতকাল অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে তাদের শরীরে ড্রেসিং করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে।’
চার দিনের ব্যবধানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তিনটি ঘটনায় অনেক মানুষের হতাহত হওয়া এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি আবারও জোরালো হয়েছে। জনসাধারণের অসচেতনতা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
সাম্প্রতিক এবং অতীতের বিভিন্ন ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও স্যুয়ারেজের লাইনের ত্রুটির কারণেই বড় বিপর্যয় হচ্ছে। প্লাম্বিং সমস্যাই এখন যন্ত্রণার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ থেকে শুরু করে পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকে সরকারের একাধিক সংস্থা। কিন্তু তারা কেউই যথাদায়িত্ব পালন করছে না। তেমন কোনো জবাবাদিহিতার আওতায়ও নেওয়া হয় না তাদের। ভবনের পাশাপাশি কারখানায় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এর ফল হচ্ছে বিপর্যয়।’
তারা মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি জনসাধারণেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুন মানলে ও সর্বস্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এম আনসার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনুমোদন ছাড়া ৮০ শতাংশের বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে যেনতেনভাবে। অথচ ভবন রাতারাতি তৈরি হয় না। এ ক্ষেত্রে রাজউকের নজরদারির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তিতাস, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাও দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। যখনই দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন পর আবার সবাই ভুলে যায়। দায়িত্বে অবহেলার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। আইনের প্রয়োগও হয় না। ফলে একই ধরনের বা তার চেয়েও বড় দুর্ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণের পর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ঠিক আছে কি না; ভবনে নির্মাণত্রুটি বা অন্য সমস্যা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত তদারকি করতে হয়। অসংগতি থাকলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করতে হবে যাতে কেউ খরচ বাঁচাতে যেনতেন নির্মাণকাজ করতে না পারে। এটি করা হয় না। সব পর্যায়ে জবাবদিহির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নৈতিকতারও বেশ অবনতি ঘটেছে। কারণ সেবা সংস্থাগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের বেতনভাতা কিন্তু সাধারণ মানুষই বিভিন্নভাবে বহন করে। এখানে নৈতিকতা থাকলে দায়িত্বে অবহেলার মতো বড় অন্যায় কখনোই সম্ভব হতো না।’
‘সাধারণ মানুষেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। যার যে কাজ তাকে দিয়ে তা করানো হয় না। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ প্রকৌশলী বা স্থপতির সাহায্য ছাড়াই মিস্ত্রি দিয়ে তাদের ভবন নির্মাণ করছেন। আর গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সংযোগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ইলেকট্রিশিয়ানদের ওপর নির্ভরশীল। সামান্য কিছু অর্থ বাঁচানোর জন্য রাজমিস্ত্রি কিংবা ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে কাজ করানোর এ মানসিকতা বদলাতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে এর আর্থিকমূল্য পরিমাপ অযোগ্য’ যোগ করেন তিনি।
এম আনসার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগের সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা বা অন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। নাগরিকদেরও নিজের এবং অন্যের নিরাপত্তায় সচেতন হতে হবে। কারণ একটা ভবনের ভেতরে বিদ্যুৎ-গ্যাস কিংবা অন্যান্য লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কিন্তু কেবল সরকারের না। নাগরিকদেরও সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে।’
তিনি মনে করেন, ‘ঢাকায় জনবসতি এত ঘন যে, এটি এখন বসবাসের অনুপযোগী নগরী। মূলত পড়ালেখা ও আয়রোজগারের উদ্দেশ্যে মানুষ ঢাকায় আসছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় এসব সুবিধা থাকলেও সেখানকার গুণগত মান নিম্নমানের। সরকার সারা দেশে এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করলে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে। তখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকবে না। নতুন ভবন নির্মাণেও মানুষ নিয়ম মানবে।’
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ঢাকা ও তার চারপাশে জালের মতো জড়িয়ে থাকা গ্যাস পাইপলাইনের ৬০ শতাংশের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৫০ বছরের পুরনো পাইপলাইনও রয়েছে। পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব পাইপলাইনে ছিদ্র হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলে পার পাওয়ার আর সুযোগ নেই। এসব নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিতাসেরও বড় ধরনের গাফিলতি রয়েছে। তারা ঠিকমতো মনিটরিং করে না।’
তিনি বলেন, ‘তিতাসের অধিকাংশ লাইন অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপর্ণ। পাইপলাইনগুলো কোথায় কী অবস্থায় আছে সে সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা তাদের নেই। জরিপের মাধ্যমে সংস্থাটির পুরো পাইপলাইন নেটওয়ার্ক মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। অব্যবহৃত লাইনগুলো বন্ধ করে ব্যবহৃত লাইনে গ্যাস ডিটেক্টর (পাইপলাইনে ছিদ্র শনাক্তকরণ যন্ত্র) বসাতে হবে, যাতে কোথায় লিকেজ হলে সহজেই জানা যায়। ঢাকা শহর এত দুর্গন্ধের নগরীতে পরিণত হয়েছে যে, অনেক সময় গ্যাস লিকেজের গন্ধও নাকে আসে না। তিতাসকে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইন সরিয়ে নতুন লাইন স্থাপন করতে হবে।’
ড. ইজাজ বলেন, ‘বাসাবাড়িতে ঠিকমতো গ্যাস না থাকায় অনেক সময় চুলা চালু রাখা হয়। পরে যখন লাইনে গ্যাস আসে তখন তা ঘরের মধ্যে জমে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক হতে হবে। যতটা সম্ভব ঘরের জানালা খুলে রাখতে হবে, যাতে গ্যাস জমতে না পারে। বাসায় কেউ না থাকলে আগে দরজা-জানালা খুলে গ্যাসের চুলা পরীক্ষা করে কিছুক্ষণ পর বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা দরকার। ছোটখাটো লিকেজ হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শে তা বন্ধের চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’
বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াসির আরাফাত খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও সিদ্দিকবাজারে যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা গ্যাস জমে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে মগবাজারে যে বিপর্যয় হয়েছিল, সেখানেও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্যাসের এবং ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইনগুলো বেশ পুরনো। অনেক ক্ষেত্রে এসব লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিকেজ ঘটে। গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে সেই গ্যাস স্যুয়ারেজ লাইন ও শৌচাগারের পাইপের মাধ্যমে ভবনে জমতে পারে। বদ্ধ স্থানে জমে থাকা এসব গ্যাস পরে বিস্ফোরণ কিংবা বৈদ্যুতিক স্পার্কের মাধ্যমে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।’
বদ্ধ স্থানে গ্যাস জমলেই বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই ভবনে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমবে। গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লাইনগুলো নিয়মিত চেক করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দ্রুত মেরামত কিংবা পুনরায় স্থাপন করতে হবে। গ্যাস পাইপলাইনে গন্ধযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে লিকেজ হলে সহজে শনাক্ত করা যায়। জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।
বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক দিশেহারা। জস বাটলারের মুখাবয়বে রাজ্যের হতাশা, ম্যাচ হেরে যাওয়ার একরাশ ভয়। জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে টেনে আনলেন সাত বোলার। তবুও এদিন বাংলাদেশকে থামাতে পারলেন না। অসম লড়াইয়ের কাগুজে পরিসংখ্যানকে স্রেফ কাগজ বানিয়ে ছুড়ে ফেলল টাইগাররা। এই ফরম্যাটে কোনো বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এমন দাপুটে জয় কখনো পেয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে যাই হোক দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকল। বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারাল ৬ উইকেটে, তাও ১২ বল হাতে রেখে। আর এই দাপুটে জয়েই টাইগাররা রাঙাল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ৫০তম জয়। ২০২৪ বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন চেহারার বাংলাদেশের এ যেন নতুন শুরু। যেখানে নেই কোনো সংকোচ-ভয়-দ্বিধা। থাকছে শুধুই দ্যুতি।
স্পষ্ট আত্মবিশ্বাসী এক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে আগের ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে হারানোর স্মৃতি টাটকা। ওয়ানডের সেই সাহস টি-টোয়েন্টিতে নিয়ে এসেছেন সাকিবরা। শুধু একার পারফরম নয়, পুরো দল হয়ে জ্বলে উঠলেন। তাতে পুড়ে ছারখার ইংল্যান্ড। একটি জয় এক দলকে কতটা আত্মবিশ্বাস দিতে পারে তা ম্যাচ শেষে সাকিবের কথায় স্পষ্ট। বাংলাদেশ অধিনায়ক এখনই আগামী বছরের বিশ্বকাপে ভালো করার স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমরা দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা শুরুর ১০ ওভারে চাপে ছিলাম, কিন্তু প্যানিক হইনি। মাথা ঠা-া রেখে সবাই নিজেদের দায়িত্বটা পূর্ণ করেছে। শুধু আমার ক্যাচ পড়া ছাড়া আজ দিনটি আমাদের সবার। টি-টোয়েন্টিতে যখন আপনি কম ভাববেন তখন ভালোও করবেন। আমাদের ড্রেসিংরুমের আবহাওয়াটা এখন দারুণ। আমার বিশ্বাস আমরা এই আবহাওয়াটা ধরে রাখতে পারব। ২০২৪ বিশ্বকাপের জন্য এর চেয়ে ভালো শুরু আর হয় না। বিশ্বকাপের আগে আমরা দারুণ একটি দল দাঁড় করাতে পারব।’
সাকিবের কথায় ‘ড্রেসিংরুমের আবহ’ বিষয়টি সত্যিই দেখার মতো। বোলিংয়ে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। সেই কথায় পরে আসা যাক তবে ব্যাটিংয়ে যে মানসিকতা বাংলাদেশ কাল দেখিয়েছে এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এই ক্রিকেটের খোঁজে গত বছরগুলো মাথা খুঁটে মরেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। দল বদলের সঙ্গে সেই ক্রিকেটের শুরু হলো। নিজেদের ইনিংসে প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রানের মতো করে বিশাল স্কোরের আভাষ দিচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু হাসান মাহমুদের আগুন ঝড়া বোলিংয়ে শেষ ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান নিতে পেরেছে তারা। তাই স্কোর আটকে গেল ১৫০ পেরোতেই। এরপর টি-টোয়েন্টি রান তাড়ায় যা করতে হয় ব্যাটাররা তাই করলেন। টি-টোয়েন্টিতে হয়তো প্রথমবার পাওয়ার প্লেতে বিপক্ষের চেয়ে বেশি রান করল বাংলাদেশ। ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে বাংলাদেশ করেছে ৫৪, ইংল্যান্ডের চেয়ে তিন রান বেশি। রনি-লিটনের বিধ্বংসী শুরুটা টেনে নিয়ে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গত চার ইনিংসে তৃতীয় ফিফটি করা ব্যাটারের সঙ্গে যোগ দিলেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। শেষে অধিনায়ক সাকিব শেষ তুলির আঁচড় টেনেছেন। পুরো ইনিংস জুড়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের ‘ইনট্যান্ট’ ছিল অবিশ্বাস্য। জয়ের তাড়নায় এমন ছুটে চলা ওপেনার থেকে মিডলঅর্ডার; আগের দলগুলোয় যা ছিল অনুপস্থিত।
ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশের পাল্টা ঘুসি উপহার দেওয়া শুরু হয় তাদের ইনিংস থেকে। বাংলাদেশি দর্শকরা এতদিন যা দেখে ক্লান্ত সেই চিত্রে আজ বিপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ শেষ ওভারগুলোতে রান তুলতে পারেননি ইংলিশরা। হাসান মাহমুদ দ্বিতীয় স্পেলে এলেন ১৭তম ওভারে। তার ওভার শুরুর আগেই ১৬তম ওভারের শেষ বলে ১৩ বলে ২০ রান করা বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। ৫.১ ওভারে তাদের ৪৭ রানের জুটি থামে। পরের বলেই মানে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বড় শট নিতে গিয়ে বাটলার ৪২ বলে ৬৭ রানে ডিপে ধরা পড়েন শান্তর হাতে। এমন গুচ্ছাকারে উইকেট হারিয়ে কতবার বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। আজ সেই জায়গায় ইংল্যান্ড। হাসান নিজের শেষ ওভারেও স্যাম কারেনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কারেনের ঝড়ো ৩৩ রান বাংলাদেশের সিরিজে ফেরার স্বপ্ন শেষ করে। তবে এদিন ব্যর্থ এ অলরাউন্ডার। শেষ চার ওভারে ২১ রান হওয়ায় বড় রানের স্বপ্ন দেখতে পারেনি ইংল্যান্ড।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ শুরু থেকেই ছিল আগ্রাসী। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম আন্তর্জাতিকে ক্রিকেটে নেমেও স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন রনি তালুকদার। তার ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংস দেখে মনেই হয়নি তিনি আট বছর বিরতি শেষে ফিরেছেন। বিপিএলে খেলার মতো সাবলীল ব্যাটিং দিয়ে অপর ওপেনার লিটনের চেয়েও বেশি ছন্দে ছিলেন। মাত্র ৩.৩ ওভারে ৩৩ রানের জুটি গড়ে রশিদ খানের গুগলি পড়তে না পারায় বোল্ড হন রনি। ছন্দে থাকা শান্ত তিনে নেমে রনির রেখে যাওয়া হাল ধরেন। মার্ক উডকে এক ওভারে চারটি চারে লাইনছাড়া করেন। এখানেই না থেকে রশিদ খান-মঈন আলিদের ইনসাইড আউট-কাট দারুণ সব শটে বাউন্ডারি ছাড়া করেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন ১৭০ স্ট্রাইকরেটে। ৩০ বলে ৮ চারে তার ৫১ অনেক সমালোচনার জবাবও। অবশ্য বিশ্বকাপ থেকেই শান্ত ব্যাট দিয়ে সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন। উডের দারুণ গতির বলে পরাস্ত হওয়ার আগে দুই সতীর্থ ১০ বলে ১২ রান করা লিটন ও ১৭ বলে অসাধারণ এক ছক্কা ও দুই চারে ২৪ করা হৃদয়কে হারিয়েছেন শান্ত। ১১২ রানে তার বিদায়ের পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে আর বিপদ হতে দেননি সাকিব। ২৪ বলে ৬ চারে ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করেন।
চান্দিকা হাথুরুসিংহে সবে এলেন। টি-টোয়েন্টি দলের কাউকে তেমন চেনেনও না। একাদশ সাজানোর দায়িত্বটা যে শুধু সাকিবের ওপরেই পড়ে তা আর বলতে হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলে পরিবর্তন আসার পর সংস্কৃতি বদলেছেন সাকিব। বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের অনুশীলনে-আলোচনায় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকেও দূরে রেখেছিলেন দলীয় পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে! এবার নতুন কোচ আসায় আরও একটি বদল হলো বাংলাদেশ দলে। সাকিব প্রথমদিনই দলে নতুন এনে নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। পারফরম করে নতুন যুক্তরা অধিনায়ককে সঠিক প্রমাণ করেছেন। সব মিলিয়ে আঁধারে থাকা ফরম্যাটে ‘নতুন’ বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দ্যুতি পেল নতুন শুরুতে।
ঢাকার উত্তরায় গাড়ি থেকে কোনো অস্ত্র ছাড়াই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কোম্পানিটির কর্মীদের কাছেও কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিনতাইকারীরা টাকা পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে রূপান্তরিত মাইক্রোবাসে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের খালি হাতেই কুপোকাত করেছিল। যদিও প্রথমে পুলিশ বলেছিল, ছিনতাইকারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে ওই টাকা লুট করেছিল।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, ছিনতাইয়ের ৯ ঘণ্টার মধ্যে লুট হওয়া টাকার একটি বড় অংশ (প্রায় ৯ কোটি টাকা) উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মানি প্ল্যান্ট লিংকের দুই পরিচালক ও গাড়িচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
ডিবির সূত্র জানায়, সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা টাকার চারটি বাক্স ছিনতাই করে পালিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দ্রুত অভিযানে নামে। অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে ৯ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িচালককে আটকও করে। তার কাছ থেকে তিনটি টাকার বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে। একটি বাক্স নিয়ে অন্য ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, ছিনতাই হওয়া টাকাভর্তি চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের অভিযান চলমান রয়েছে, অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) খন্দকার মুহিদউদ্দিন বলেন, খিলক্ষেতসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া টাকার একটি বড় অংশ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করছি, বাকি টাকা উদ্ধার এবং দুর্বৃত্তদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, গতকাল সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকার গাড়ি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা গাড়িটি ঘিরে ধরে গাড়িতে থাকা লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেডের বিভিন্ন বুথে টাকা রাখার জন্য যাচ্ছিল।
এ ঘটনার পর উত্তরা, তুরাগ ও সাভারসহ আশপাশের এলাকার তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়। ছিনতাইকারীরা এ বিশাল অঙ্কের টাকা লুটে নিয়ে যে পথে পালায়, ওই পথের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস কিংবা বাসাবাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে কি না গোয়েন্দারা তা খুঁজতে শুরু করে। একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়েছে লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গোয়েন্দারা তা শনাক্ত করার চেষ্টা চালায়।
তবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ গতকাল বলেন, ‘রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার হোটেল রিজেন্সির আশপাশের এলাকা থেকে আমরা লুট হওয়া বেশিরভাগ টাকা উদ্ধার করেছি। এখনো অভিযান চলছে। কত টাকা উদ্ধার হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোট চার ট্রাংক টাকা লুট হয়েছিল। এর মধ্যে তিন ট্রাংক উদ্ধার হয়েছে। এখনো গোনা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ৯ কোটি টাকার মতো উদ্ধার হয়েছে।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সগীর আহমেদ বলেন, ‘মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি বার্ষিক চুক্তিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ধারিত বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে আছে। তাদের কাছ থেকেই টাকা ছিনতাই হয়।’
এ বিষয়ে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি প্রতিদিনই এটিএম বুথে টাকা লোড করে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সাভার ইপিজেডে যাচ্ছিল। উত্তরা দিয়াবাড়ী দিয়ে যাওয়ার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস আমাদের টাকার গাড়ির সামনে এসে পথ আটকে দেয়। এরপর ওই মাইক্রো থেকে চার-পাঁচজন লোক বের হয়ে আমাদের ড্রাইভারসহ সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করে চাবি কেড়ে নেয় এবং গাড়ি থেকে লোকজনকে ফেলে দেয়। এরপর তাদের একজন আমাদের গাড়িটা ড্রাইভ করে চলে যায়।’ একে ‘ডাকাতি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি নিয়ে কিছুদূর গিয়ে তারা দেখে তখনো আমাদের একজন লোক গাড়িতে ছিল। এরপর গাড়ি থামিয়ে তাকে মারধর করে ফেলে দেয়। এরপর চারটা (টাকার) ট্রাংক নিয়ে “ডাকাতরা” তাদের গাড়িতে উঠে চলে যায়।’
এরপর তুরাগ থানায় গিয়ে পুলিশকে অবহিত করলে তৎপরতা শুরু হয় বলে জানান যশোদা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দিন আমরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ওই টাকা আবার ছেঁড়াফাটা বাছাই করে ভালো টাকাগুলো আবার লোড করি। এটাই আমাদের সার্ভিস।’
তুরাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার জানান, সিকিউরিটি কোম্পানির একটি গাড়িতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ওই ব্যাংকের সাভার ইপিজেড বুথে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ছিনতাইকারীরা যেকোনো মাধ্যমে এ খবর পেয়ে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে ওতপেতে ছিল। টাকা বহনকারী গাড়ি সেখানে পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা একটি মাইক্রোবাস রাস্তার মধ্যে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে এর গতিরোধ করে। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশের উপকমিশনার (উত্তরা জোন) মোর্শেদ আলম জানান, উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই এলাকায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা টাকা উদ্ধার এবং দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হচ্ছে।
জানা গেছে, সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় র্যাব-পুলিশের একাধিক দল। তারা আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে ওই টাকা পরিবহনে যুক্ত গাড়ির চালক ও অন্য আরোহীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের মুখ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের এডিসি বদরুল রহমান জিল্লু জানান, ঘটনার পর থেকে টাকা উদ্ধারে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে ডিবির একাধিক দল কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত টাকার বাকি অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এদিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এতে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ টাকা বহন ও এটিএম বুথে জমার দায়িত্ব টাকা বহনকারী সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের। আবার এ টাকা বীমার আওতায় রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এটি একটি বড় ধরনের ঘটনা। এ কারণে র্যাব ছায়াতদন্ত করছে। আশা করছি, ছিনতাইকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
রাত তখন ৯টার মতো হবে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে হেঁটে গেলে কিনব্রিজ খুব অল্প সময়ের পথ। ট্রেন থেকে নেমে অনায়াসে ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছে যাই। কিন্তু যখন ব্রিজে উঠতে গেলাম, মনে হলো পাহাড়ে উঠছি। ওপরের দিকে উঠতে গিয়ে এবার শক্তিটা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আবার পাহাড়ের মতোই সামনের দিকে কি আছে পুরোপুরি দেখাও যাচ্ছে না। নিচ থেকে ওপরে উঠে মাঝখানে কিছুটা জায়গা সমতলের মতো। তারপর আবার ঢালু রাস্তা। এই ঢাল ধরে অন্যপাশ দিয়ে নামতে গিয়ে খরচ হওয়া শক্তিটা ফিরে পাওয়া গেল যেন।
সিলেটের সুরমা নদীর ওপরে প্রথম যে সেতু সেটা কিনব্রিজ, যা দুই ভাগে বিভক্ত নগরীকে সংযুক্ত করেছে। একপাশে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন, অন্যপাশে বন্দর বাজার। ফলে কিনব্রিজের বিশ্রাম নেই। সম্ভবত ক্লান্তি নেই। হাজার হাজার মানুষ, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের হালকা যানবাহন প্রতিদিন তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে।
সুরমাতীরের দুপাড়ের মানুষের যোগাযোগের জন্য ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল কিনব্রিজ। লোহার কাঠামোতে দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। দিনে দিনে সেতুটি দেশ ও বিদেশে সিলেটের প্রতীক হয়ে ওঠে।
কিনব্রিজের মাঝামাঝি পৌঁছেই মন খারাপ হয়ে গেছে। সিলেট আর কিনব্রিজ যেখানে সমার্থক সেখানে অনাদর আর অবহেলায় পড়ে আছে সেই ঐতিহ্যের স্মারক। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি যান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে কিনব্রিজ। বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। একটু ভুল কিংবা অসতর্ক হলেই পথচারী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সেতুর দুপাশে সাইনবোর্ড ঝোলানো ‘ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ’। অর্থাৎ শুধু রিকশা, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারে।
সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা পণ্যবোঝাই ঠেলাগাড়িকে দু-তিনজন মিলে ঠেলে ওপরে তুলছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল, রিকশা ঠেলে ওপরে তুলছেন এক যুবক। মনে পড়ল ছোটবেলায় পড়া ‘ধারালো বর্শার মতো স্বর্ণময় সূর্যরশ্মি ফলা/কীনব্রিজে আঘাত হানে/শুরু হয় জনতার চলা।’ ‘কীনব্রিজে সূর্যোদয়’ নামে সুরমাপাড়ের কবি দিলওয়ারের কবিতার এ পঙ্ক্তিগুলো।
ধনুকের মতো বাঁকা কিনব্রিজ। রাস্তা থেকে সেতুটি বেশ উঁচুতে হওয়ায় শুধু প্যাডেলের ওপর ভর করে পার হওয়া বেশ কঠিন। পণ্যবোঝাই ঠেলাগাড়ি একা টেনে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এজন্য রিকশা বা ঠেলাচালকের প্রয়োজন পড়ে ‘ঠেলাওয়ালার’।
রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনির এই কাজ করেন ১০০-১২০ শ্রমিক। তারা ‘কিনব্রিজের ঠেলাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
সিলেটে রিকশার ইতিহাস আর কিনব্রিজের এই ঠেলাওয়ালাদের ইতিহাস একই। প্রতিবার রিকশা ঠেলে সেতুর ওপরে তুললে মজুরি ১০ টাকা করে পাওয়া যায়। পণ্যবাহী ঠেলাগাড়ি কিংবা ভ্যানগাড়ি ঠেললে ২০-৩০ টাকা করে একেকজন পান। পণ্য বেশি হলে ২-৪ জন একসঙ্গে ঠেলে সেতুর ওপরে তোলেন। দিন শেষে এক একজনের ৬০০-৯০০ টাকা উপার্জন হয়।
সেতুতে দাঁড়িয়ে কথা হয় ঠেলাওয়ালা আসমত মিয়ার সঙ্গে। তার বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায়। তিনি জানান, ১০ বছর ধরে এখানে ঠেলার কাজ করছেন। এটা বেশ কষ্টের হলেও স্বাধীন পেশা। কোনো পুঁজি লাগে না, কারও অধীনে কাজ করা লাগে না। মালিককে জমা দিতে হয় না। যখন ইচ্ছে কাজ করা যায়, ভালো না লাগলে বিশ্রাম নেওয়া যায়।
কালন মিয়া নামে আরেক ঠেলাওয়ালা বলেন, ১০ বছর একটানা ঠেলার কাজ করে অন্যকাজে চলে গিয়েও ছয় মাস পর ফিরে এসেছেন। তার ভাষায়, এ কাজে একটা নেশা আছে। আয় ভালো। কালন বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়া রিকশা ঠেলি। শরীরের ঘাম পায়ে ফেইলা ইনকাম করি। কষ্ট আছে, তৃপ্তিও আছে।’
শুধু যে যানবাহনে করে মানুষ যাতায়াত করে বিষয়টা এমন নয়। যতক্ষণ সেতুতে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার কাছে মনে হলো, যানবাহনের চেয়ে হেঁটেই বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। এক পথচারী জানালেন, কিনব্রিজকে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ হাঁটার সেতু বলে বছর দু-এক আগে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই সেতু টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দ্রুত সংস্কারকাজ প্রয়োজন।
‘মামা হাতকড়া (সাতকড়া) নিতায় নি। লুসাই ফাড়র (পাহাড়) হাতকড়া’ আবদুল লতিফ নামে এক সবজি বিক্রেতার ডাকে পেছনে ফিরে তাকালাম। শুধু আবদুল লতিফ নন, সেতুর উভয় প্রান্তে প্রায় ৪০-৫০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান চোখে পড়ল। তারা সবজি, লেবু, নাগামরিচ (সিলেটের জনপ্রিয় মরিচ), মোবাইল সিম, ইয়ারফোন, টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন।
এক বিক্রেতা জানান, মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে তাদের তুলে দিয়ে যায়, কয়েক দিন পর তারা আবার এসে বসে যান। অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে এখানে বিক্রি বেশি।
সেতুর বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সভা-অনুষ্ঠানের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে কবিরাজি ও হাকিমি চিকিৎসার লোভনীয় বিজ্ঞাপন। তেমনি এক বিজ্ঞাপন, ‘বিয়ে হচ্ছে না, বিদেশে যেতে পারছেন না, এখনই চলে আসুন হুজুরের কাছে’। দেশের অন্য যেকোনো জায়গায় হলে, বিদেশের জায়গায় চাকরি লেখা থাকত, কিন্তু সিলেটের মানুষ তো চাকরি নয়, বিদেশে যেতেই পছন্দ করেন।
কিনব্রিজের ঢাল বেয়ে নামতে নামতে চোখে পড়ল সিলেটের আরেক প্রতীকখ্যাত নিদর্শন আলী আমজাদের ঘড়ি। ছোটবেলা থেকেই মানুষের মুখে মুখে ‘চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি, আলী আমজাদের ঘড়ি, আর জিতু মিয়ার বাড়ি’ প্রবাদটি শুনে শুনে বড় হয়েছি। তখন মানুষ কিছুটা অহংকার নিয়েই নিজেদের ঐতিহ্যের এই ৩টি বিষয় নিয়ে গল্প করতেন।
আলী আমজাদের ঘড়ির বয়স হয়েছে ১৪৫ বছর। কিনব্রিজ এলাকায় সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের ‘জিরো’ পয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজাদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে বন্দর বাজার যাওয়ার পথে ঠিক প্রবেশমুখে লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি। গুগল জানাচ্ছে, এ ঘড়ি স্থাপিত হয় ১৮৭৪ সালে। সিলেটের মানুষের রুচিবোধ আর শৈল্পিক হৃদয়ের এক বড় উদাহরণ এ ঘড়ি সিলেটের প্রতীক হিসেবে এখন দেশ-বিদেশে সুপরিচিত।
পথচারী স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল হুসেন জানান, তৎকালীন বড়লাট সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। এর নাম রাখেন, নিজের ছেলে আলী আমজাদ খানের নামে। সেই থেকে আলী আমজাদের ঘড়ি নামেই এর পরিচিতি।
স্থানীয় আরেক পথচারী আক্ষেপ করে বলেন, আলী আমজাদের ঘড়ি কখন চলে, আর কখন বন্ধ থাকে কেউ জানেন না। প্রশাসন এই নিদর্শনটি টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টাই করছে না।
জানা গেল, কিনব্রিজ সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু আর হয়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সেতুর মালিকানা মূলত সড়ক ও জনপদ বিভাগের। বিভাগীয় কমিশনারের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাধ্যমে সংস্কারকাজ করানোর। যদিও সেটা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
সিলেটের নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শন কিনব্রিজ ও আলী আমজাদের ঘড়ির বেহাল অবস্থা দেখে মন খারাপ নিয়েই ফিরে এলাম, ভাবলাম এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে স্থাপনা দুটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।