
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জীবনমুখী ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একটি চলচ্চিত্র ব্যক্তির জীবন যেমন পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি একটি সমাজকেও বদলে দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা লক্ষ করবেন জীবনধর্মী চলচ্চিত্র যখন নির্মাণ করা হয় সেগুলো কিন্তু মানুষকে সব থেকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সেখান থেকে পায়। আবার একটা সিনেমা পারে মানুষের জীবন পাল্টে দিতে বা সমাজের চিত্রটা পাল্টে দিতে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জীবনধর্মী সৃষ্টির গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিনেমা, নাটক সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখে, মানুষের চিন্তা-চেতনার আরও উৎকর্ষ ঘটাতে পারে এবং মানুষকে অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে।
তিনি বলেন, যারা আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক, যারা সাহিত্য রচনা করেন এবং যাদের রচনার ওপর ভিত্তি করেই সিনেমা হয় তারাও যদি এ রকম জীবনধর্মী রচনা তৈরি করেন, নাটক তৈরি করেন বা সাহিত্য তৈরি করেন আর তার ওপর ভিত্তি করে যদি সিনেমাগুলো হয় সেটা আমাদের সমাজটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যেভাবে তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, উন্নত করতে চাচ্ছে, মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাচ্ছে, মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে সেই সুযোগটা এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী ২৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১-এর ৩৪টি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তিনি নিজেও আগামী বাজেটে উদ্যোগ নেবেন এই অনুদানটা বাড়িয়ে দেওয়ার। কেননা বরাদ্দ ভালো থাকলে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার মাঝে মেধা আছে, চিন্তাশক্তি আছে এবং শৈল্পিক মনোভাবটা আছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাকালে অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি দারুণভাবে বেড়েছে। সেখানে সরকার যে অনুদান দিচ্ছে, এটা একটা পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যথেষ্ট নয়। এই অনুদান আরও বাড়াতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি আমাদের কিছু চলচ্চিত্র হয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং দেশের মানুষও সেগুলো লুফে নিয়েছে এবং দেশের সীমানা পেরিয়ে বাইরেও সেগুলো চাহিদা পেয়েছে। কাজেই সেভাবেই আমাদের কাজ করা দরকার।
তিনি কষ্ট করে দেশের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ায় কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি এফডিসিতে কমপ্লেক্স তৈরির কাজের ধীর গতিতে উষ্মা প্রকাশ করেন এবং কাজ দ্রুত শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গাজীপুরে নির্মাণাধীন ফিল্মসিটি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, তার সরকার ফিল্ম আর্কাইভ এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দিয়েছে। এখন প্রশিক্ষণটা জরুরি।
তার সরকারের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। তাই এখন এই সেন্সর বোর্ড বাদ দিয়ে সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেটা আরও উৎকর্ষ সাধনের জন্যই করা হয়েছে। তবে নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রে সমাজের জন্য ক্ষতিকর কিছু থাকলে সেগুলো অবশ্যই পরিহার করা হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সরকার যাতে ভবিষ্যতে সার্টিফিকেশন পদক্ষেপটা আইনগতভাবে নিতে পারে সেজন্য ব্যবস্থাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় ছিল অশ্লীল সিনেমা, মারদাঙ্গা বা শুধু অনুকরণ করা। সেগুলো না করে ভালো জিনিসটা শিক্ষা নেওয়া আর মন্দ জিনিসটাকে পরিহার করা দরকার। সমাজের জন্য কোনটা ভালো সেটা বিবেচনায় আনা। যখনই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন সে বিষয়টা দেখবেন। এমন সিনেমা দরকার বাবা-মা, ভাই-বোন, সবাই মিলে যাতে দেখতে পারে।
তিনি এ সময় শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপরও গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা এ বিষয়টায় একটু পিছিয়ে আছি। এ ক্ষেত্রে আরও অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা উচিত। এ ধরনের চলচ্চিত্র যারা নির্মাণ করবেন তাদের জন্য অনুদানটা আর একটু ভালোভাবে দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
অশ্লীলতা ও পাইরেসি বন্ধে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পাইরেসি বন্ধে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। সেটা হলে এগুলো বন্ধ হবে।
পুরনো চলচ্চিত্র বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য এগুলো ডিজিটালাইজড করে নতুনভাবে প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপরও তিনি জোর দেন। কেননা এ চলচ্চিত্রগুলোর আবেদন কোনো দিনও শেষ হওয়ার নয়।
৯৬ সালে সরকারে আসার পর কলাকুশলী এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য মিডিয়া সেক্টরকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের ৪৫টি টিভি চ্যানেল, ৩২টি কমিউনিটি বেতারের প্রচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে, ২৭টি এফএম বেতারের অনুমোদন তার সরকার দিয়েছে। যেখানে আগে মাত্র একটি টিভি চ্যানেল ও একটি বেতার ছিল।
তার সরকারের অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে দিনভর বিভিন্ন চ্যানেল ও টকশোতে সরকারের ঢালাও সমালোচনার পরও যারা বলেন যে, তারা ঠিকভাবে কথা বলার সুযোগ পান না, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেকে কথা বলে, টকশো হয়, সারা দিন অনেক কথা। অনেক কথা বলার পর কেউ কেউ বলবে আমরা কথা বলতে পারি না। অথচ বাংলাদেশে এখন ২৪৫৫টি পত্রিকা, ১৭০টি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, ১৪টি আইপি টিভি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবাই তো মন ভরে কথা বলছে। কথা বলতে পারল না-টা কোথায়। কে মুখটা বন্ধ করল আমি জানি না।’
তিনি বলেন, তার সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে বিদেশি মুদ্রায় স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে হতো। আর সরকার এখন দ্বিতীয় স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপণের ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে করে আবহাওয়ার তথ্যপ্রাপ্তি এবং সম্প্রচারে আরও উৎকর্ষ আসে। কেননা তার সরকার চায় এই শিল্পটা যেন সব সময় চালু থাকে, ভালো এবং উন্নতমানের থাকে।
শেখ হাসিনা এ সময় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটিকে আরও চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয় করারও পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলচ্চিত্র এমন একটা শক্তিশালী গণমাধ্যম যা দেশের মানুষের মনমানসিকতা বদলে তাকে আরও উন্নতমানের করে দিতে পারে, আর আমাদের জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সে দেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।’ বাসস
মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রোজা। বৈশি্বক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। মুষ্টিমেয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। ফলে এবার রোজায় মানুষকে আরও বেশি খরচ করতে হবে। গড়ে চারজনের একটি পরিবারের খরচ বাড়তে পারে ১০ হাজার টাকার বেশি।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত বছরের মতো একই মানের ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরি খেতে হলে এবার খরচ হবে বেশি। বাড়তি খরচ চালাতে না পেরে খাবারের মান কমাতে বাধ্য হবেন অনেকে।
দেশে রোজার মাসে সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারে ইফতারিতে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলু চপ, ছোলা, খেজুর, কলা, চিড়া, মুড়ি, শরবত কমবেশি খেয়ে থাকে। সাধারণ আয়ের বেশিরভাগ পরিবারে রাতের খাবার ও সাহরিতে মাছ বা মাংস, শাক বা সবজি, ডাল খাওয়া হয়। অনেকে দুধ-কলাও খেয়ে থাকে।
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ৫২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন রাহাত হোসেন। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে কলেজপড়–য়া দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার পরিবারে গত রমজানে প্রতিদিনের ইফতারিতে গড়ে একজনের জন্য একটি খেজুর, দুটি পেঁয়াজু, একটি আলুর চপ, একটি বেগুনি, একটি কলা, একটি বড় জিলাপি, পরিমাণমতো চিড়া, দুজনের জন্য মাঝারি আকারের একটি শসা, ফল, শরবত খেতে খরচ ছিল ৭-৮ হাজার টাকা। রাতের খাবার ও সাহরিতে গত রমজানে গড়ে মাঝারি আকারের এক টুকরো মাছ বা মাংস, শাক বা সবজি ভাজি, ডাল, মাঝেমধ্যে রাতে দুধ-কলা খেতে খরচ ছিল ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। রাহাত হোসেনের পরিবারে ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরিতে মোট খরচ ছিল ২২-২৫ হাজার টাকা। হিসাব করে দেখা যায়, একই খাবারে এবারের রমজানে ৩৫ হাজার টাকার বেশিই লাগবে।
রাহাত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত রোজার মতো খেতে গেলে এবার খরচ ১২-১৫ হাজার টাকার বেশিই লাগবে। অন্য খরচ কমিয়ে যে খাবারের মান ঠিক রাখব তার উপায় নেই। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ, ছেলেদের পড়ার খরচ সবই বেড়েছে। আয় তো বাড়েনি। এবার রমজানে খাবার থেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক কিছু কমাতে হবে। এখনই আমরা মাংস, ডিম, দুধ কম খাই।’
খুলনার টুটপাড়ায় বসবাসকারী গৃহিণী শামিয়া জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার পরিবারের আয় মাসে ৩২ হাজার টাকা। গত রোজায় ইফতারিতে পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, আলুর চপ, শসা, চিড়া-কলা খেয়েছি। এবারে খাবার তেলের দামই তো বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চিনি, বেসন, ছোলা সবকিছুরই দাম বেশি। আগের মতোই আমার স্বামী একই বেতন পায়। এবারে ইফতারিতে একটি ভাজির পদ, সঙ্গে চিড়া ও কলা রাখব বলে ভেবেছি।’
মধ্যবিত্ত পরিবারের চেয়েও বিপাকে আছে কম আয়ের মানুষ। নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেকে শুধু ছোলা, মুড়ি দিয়েও ইফতারি সেরে ফেলার কথা বলেছেন। রাতের খাবার এবং সাহরি ভাতের সঙ্গে নিরামিষ তরকারি, ভর্তা বা ভাজি দিয়েই সারবেন বলে জানিয়েছেন।
রিকশাচালক মতি মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর রোজায় রাতের খাবার ও সেহেরিতে প্রায় প্রতিদিনই মাছ খাইতাম। মাঝেমধ্যে গোশত খাইতাম। এবার মাছ, মুরগি কেমনে খাইবো? রাতে আর সেহেরিতে বেশিরভাগ দিন ভাজি, ভর্তা দিয়েই খাইতে হইবো। ইফতারিতে ছোলা আর মুড়ি ছাড়া ভালো-মন্দ খাইবো কেমনে? সবকিছুর দাম ম্যালা বাইড়া গেছে।’
গত বছর ডিসেম্বরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে হিসাব করে দেখিয়েছিল, চার সদস্যের একটি পরিবারে মাছ ও মাংস ছাড়া ‘কম্প্রোমাইজ ডায়েটে’ প্রয়োজন হয় ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা। এই ন্যূনতম খরচও মেটাতে পারছেন না ৩৯টি সেক্টরের ৩০টির কর্মীরা। ফার্মাসিউটিক্যাল, শিপব্রেকিং, ট্যানারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড অ্যানামেল, রি-রোলিং মিলস, প্রাইভেট রোড ভেহিক্যাল, লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ফ্যাক্টরি এবং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড টিম্বার খাত ছাড়া কোনো সেক্টরের কর্মীদের এ ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নেই। অন্যদিকে মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা ব্যয় করার সক্ষমতা পাওয়া যায়নি ৩৯ খাতের কারোরই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গবেষণাটি করা হয়েছিল ডিসেম্বরে। এখন তো সময় আরও গড়িয়েছে। অনেক পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সেভাবে আয় না বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়ছে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। তবে যা বাড়ার কথা অনেকে কৃত্রিম পণ্য সংকট দেখিয়েও তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে ফেলেছে। গত রমজানের তুলনায় এবারে ইফতারি, রাতের খাবার ও সাহরিতে খাবার খরচ দ্বিগুণ না হলেও তার কাছাকাছি বাড়বে। অনেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল নিয়মিত খেতে পারবে না বলে মনে করছি।’
বেশিরভাগ পরিবারে শবেবরাতের পর থেকেই রমজানের জন্য খেজুর, আলু, ছোলা, বুট, ডাল, বেসন, পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, শরবত, গুঁড়া দুধ, চিড়া, মুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য কেনা শুরু করে। রমজান শেষ হওয়ার দুই-চার দিন আগপর্যন্ত এসব পণ্যের চাহিদা বাড়তি থাকে। অন্যদিকে বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি, মাছ, মাংস, তরল দুধ, ফলের চাহিদা বেশি থাকে রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শুধু রোজায় ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। রোজায় চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে রোজায়। সারা বছর পাঁচ লাখ টন মসুর ডালের শুধু রোজার এক মাসে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই এ সময়ে লাগে। আর ২৬ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজের ৫ লাখ টনই দরকার হয় রোজায়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈশি^ক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এবারে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও পণ্যের দাম গত রমজানের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে কিছু সুযোগ-সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী রমজান সামনে রেখে এসব কারণকে অজুহাত দেখিয়ে দাম যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানুষ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল। প্রোটিনের জোগান আসে এমন পণ্যের দাম গত এক বছরে বেড়েছে ২০.৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে রুই মাছের দাম ২১.২১ শতাংশ ও গরুর মাংসের দাম ২৪.৭৮ শতংশ বেড়েছে। ডালের কেজি গত এক বছরে ১৩০ থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৪.৬২ শতাংশ। ডিমের হালিপ্রতি বেড়েছে ৩১.৫৮ শতাংশ। গত এক বছরে শর্করা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৩৫.৫১ শতাংশ। নাজিরশাইলের দাম ২০.২৯ শতাংশ, মোটা চালের ১৭.৯৫ শতাংশ ও আটা ৬৪.২৯ শতাংশ বেড়েছে। চিনির কেজি ৪৩.৫৩ শতাংশ, মিল্ক ভিটার দুধ প্রতি লিটার ২৮.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে সাড়ে ১৮ শতাংশ।
বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গতবার রোজায় মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮-৪০ টাকা থাকলেও এবারে ৫০-৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চালও বেড়ে ৬০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। মসুরের ডাল গত রোজায় প্রতি কেজি ১২০ টাকা, এবার ১৪০, অ্যাংকর ডাল ৬০ থেকে বেড়ে এ বছর ৮০ টাকা। গতবার এক কেজি বেসন ৮০ টাকা ছিল, এবার তা ১২০, প্রতি কেজি ছোলা ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এবারে ৯০ টাকা। গত রোজায় খেজুর মানভেদে প্রতি কেজি ৩০০-৫৫০ টাকা ছিল, এবার ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। গতবার সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১২০ টাকা লিটার বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকায়। যে লবণ ছিল ৩৫, এবার সেটা ৪২ টাকা, চিড়া ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম ৬৬ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা হয়েছে। চিনি ছিল ৬৫, এবার প্রায় দ্বিগুণ ১২০ টাকা। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, গতবার মুড়ি ৬০, এবার ৭০ টাকা। গত রোজায় গুঁড়ো দুধ কেজি ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যে থাকলেও এবার ৮১৫-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পোলাওর চাল ১২০ থেকে বেড়ে ১৭০ এবং খোলাটা ১০০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম, সেমাই, সুজি এবং দেশি-বিদেশি ফলের দামও বাড়তি। গত রোজায় এক কেজি আপেলের দাম ছিল ১৭০-১৮০, এবার ২৮০-৩০০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, গত রোজায় গরুর মাংসের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ এবং খাসির মাংস ৮০০ টাকা ছিল। এরই মধ্যে দাম বেড়ে গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ এবং খাসি ১ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।
গতবার ডিমের ডজন ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। এবার ১৩৫ টাকা। তরল দুধ ও মাছের মতো সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারের দাম চড়া। গত রোজায় বড় আকারের তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা থাকলেও এবার ২২০-২৫০ টাকা। দেড় কেজির রুই, কাতলা, কালবাউশসহ বড় মাছের গত রোজায় গড়ে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা ছিল। এরই মধ্যে দাম বেড়ে ৩৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছর পাঙ্গাশের কেজি ছিল ৯০-১১০ টাকা। এবার তা ১৬০-১৭০ টাকা।
গতবার রোজায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ছিল ১১০-১২০ টাকা। এবার রোজার আগেই দাম উঠেছে ২২০-২৩০ টাকা। সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেড়ে এখন ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত রোজায় বেগুন, শসা এ ধরনের সবজি অন্যগুলোর দাম গড়ে ২০-৩০ টাকার মধ্যে ছিল। এবার সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপের কেজি ৩০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩৫-৪০, লম্বা বেগুন ৪০-৫০, শসা ৪০ ও লেবুর হালি ৪০-৫০ টাকা।
‘বাবারে আমার আগেই তুই চইলা গেলি। আমার বয়স হয়েছে। খোদা ক্যান আমারে তোর আগে নিয়ে গেল না’ এভাবেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের লাশঘরের সামনে বিলাপ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। তিনি গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ভবন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত মেহেদী হাসান স্বপনের বাবা গোলাম রাব্বানি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে স্বপনের লাশ ভবনের বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তাছাড়া গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াসিন আরাফাত মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩ জনে।
গত মঙ্গলবার ক্যাফে কুইন মার্কেট হিসেবে পরিচিত ভবনে বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন স্বপন। গতকাল ভবনের বেজমেন্টে তার লাশ পাওয়া যায়। বেজমেন্টের দক্ষিণ পাশের সিঁড়ির নিচে পড়েছিল স্বপনের লাশ। তার খোঁজে গত তিন দিন ভবনের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। স্বপনের লাশ উদ্ধারের পর তার বড় ভাই তানভীর হাসান কাঁদতে কাঁদতে মোবাইল ফোনে বাড়িতে খবর জানিয়ে বলছিলেন, ‘ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে, তোরা কবর খোঁড়।’ তিনি বলছিলেন, ‘ও (স্বপন) ছিল সবার ছোট, ওই সবার আগে চলে গেল।’
পরিবারের লোকজন শনাক্ত করার পর স্বপনের লাশ পুলিশের সহযোগিতায় নেওয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে। সেখানে বাবাসহ পরিবারে অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ পরিবারকে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
বিধ্বস্ত সাততলা ভবনটির বেজমেন্টে থাকা বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের দোকানের ব্যবস্থাপক ছিলেন স্বপন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পশ্চিম এনায়েতপুর গ্রামে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, ভবনটির বেজমেন্ট থেকে স্বপনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বপনের বড় ভাই তানভীর হাসান সোহাগ মরদেহ শনাক্ত করেন। ভেতরে আর কোনো মরদেহ নেই।
এ সময় তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনে দ্বিতীয় দফা অপারেশন বা উদ্ধারকাজের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবকাঠামোগত ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষা করছে ফায়ার সার্ভিস। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, উদ্ধারকাজ শুরুর জন্য ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত আছে। তবে অবকাঠামোগত ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে। এ নিয়ে তারা আলাদা একটি টিম করেছেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরেই নতুন করে অভিযান শুরু করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয়তলার ছাদ ধসে বেজমেন্টের ওপর পড়েছে।
ভবনটি ১০ তলা করার পরিকল্পনা থাকলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেজমেন্ট ও একতলা পর্যন্ত হয়। এর বেজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবার হোটেল ক্যাফে কুইন। এ রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের সংযোগ ছিল, যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। পরে ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাততলা পর্যন্ত করা হয়। ভবনটির প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ সালে তার মৃত্যুতে তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বর্তমানে ভবনটির মালিক। ভবনটির বেজমেন্টে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচতলায় পাঁচটি দোকান, দোতলাতে কাপড়ের দুটি দোকান ছিল, যেগুলোর জন্য অনেক কাচ এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয় এবং বেশি শক্তির এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলো সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে যেটা দুই-তিন বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।
ভবনটি নিয়ে রাজউক কী করবে : ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে নাকি সংস্কার করা হবে তা দ্রুত সময়েই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাজউকের তদন্ত কমিটি সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানিয়ে বলেন, বেজমেন্টসহ নিচতলার কলাম ও পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রথমে এটাকে স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) করতে হবে। এরপর সংস্কার করলে ভবনটি নিরাপদ হবে নাকি ঝুঁকি থাকবে তা জানানো হবে। ভবনের ২৪ কলামের মধ্যে ৯টি কলাম বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তকাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জানাতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ভবনটি স্থিতিশীল করার কাজ গতকাল বিকেল থেকে শুরু করলে আজ শুক্রবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভবনের কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা ভবনের ভার নিতে পারছে না। কলামগুলোকে আলাদা করে সাপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে ভার নিতে পারে। স্থিতিশীল করার পর ডিটেইল অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। সেখানে বোঝা যাবে, ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে নাকি মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।’
এখনো কমছে না উৎসুক জনতার ভিড় : সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটনার দুদিন পরও গতকাল ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। যদিও কারোর কোনো অভিযোগ নেই, তারা শুধুই বিধ্বস্ত ভবনটি দেখছে। ফায়ার সার্ভিস, র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে উদ্ধার অভিযান ও উদ্ধার করা লাশ নিতে অ্যাম্বুলেন্স আসতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, ভিড় এড়াতে পূর্ব পাশের গুলিস্তান ও বংশাল রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। এরপরও উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘœ হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপর ধাওয়া দিয়ে তাদের হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও ঘটনাস্থলে ফিরে আসছে জনতা।
আহতদের অবস্থা : বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা রাজন ছাড়া বাকিদের সবার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একজন আইসিইউতে। আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি পাঁচজনকে চিকিৎসকরা দেখে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তবে তারা পরবর্তী চিকিৎসা নিতে আসবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা রাজনের গতকাল অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা রয়েছেন।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া নয়জনের মধ্যে ইয়াসিন আরাফাত নামে একজন গতকাল মারা গেছেন। বাকি আটজন চিকিৎসাধীন। ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আটজনের মধ্যে দুজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। ২০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড মিলে সব রোগী দেখছে। গতকাল অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে তাদের শরীরে ড্রেসিং করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে।’
চার দিনের ব্যবধানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের তিনটি ঘটনায় অনেক মানুষের হতাহত হওয়া এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি আবারও জোরালো হয়েছে। জনসাধারণের অসচেতনতা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
সাম্প্রতিক এবং অতীতের বিভিন্ন ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও স্যুয়ারেজের লাইনের ত্রুটির কারণেই বড় বিপর্যয় হচ্ছে। প্লাম্বিং সমস্যাই এখন যন্ত্রণার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ থেকে শুরু করে পরে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকে সরকারের একাধিক সংস্থা। কিন্তু তারা কেউই যথাদায়িত্ব পালন করছে না। তেমন কোনো জবাবাদিহিতার আওতায়ও নেওয়া হয় না তাদের। ভবনের পাশাপাশি কারখানায় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এর ফল হচ্ছে বিপর্যয়।’
তারা মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি জনসাধারণেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুন মানলে ও সর্বস্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এম আনসার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনুমোদন ছাড়া ৮০ শতাংশের বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে যেনতেনভাবে। অথচ ভবন রাতারাতি তৈরি হয় না। এ ক্ষেত্রে রাজউকের নজরদারির ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তিতাস, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাও দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। যখনই দুর্ঘটনা ঘটে তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন পর আবার সবাই ভুলে যায়। দায়িত্বে অবহেলার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। আইনের প্রয়োগও হয় না। ফলে একই ধরনের বা তার চেয়েও বড় দুর্ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণের পর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ঠিক আছে কি না; ভবনে নির্মাণত্রুটি বা অন্য সমস্যা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত তদারকি করতে হয়। অসংগতি থাকলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করতে হবে যাতে কেউ খরচ বাঁচাতে যেনতেন নির্মাণকাজ করতে না পারে। এটি করা হয় না। সব পর্যায়ে জবাবদিহির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নৈতিকতারও বেশ অবনতি ঘটেছে। কারণ সেবা সংস্থাগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের বেতনভাতা কিন্তু সাধারণ মানুষই বিভিন্নভাবে বহন করে। এখানে নৈতিকতা থাকলে দায়িত্বে অবহেলার মতো বড় অন্যায় কখনোই সম্ভব হতো না।’
‘সাধারণ মানুষেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। যার যে কাজ তাকে দিয়ে তা করানো হয় না। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ প্রকৌশলী বা স্থপতির সাহায্য ছাড়াই মিস্ত্রি দিয়ে তাদের ভবন নির্মাণ করছেন। আর গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সংযোগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ইলেকট্রিশিয়ানদের ওপর নির্ভরশীল। সামান্য কিছু অর্থ বাঁচানোর জন্য রাজমিস্ত্রি কিংবা ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে কাজ করানোর এ মানসিকতা বদলাতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে এর আর্থিকমূল্য পরিমাপ অযোগ্য’ যোগ করেন তিনি।
এম আনসার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগের সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা বা অন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। নাগরিকদেরও নিজের এবং অন্যের নিরাপত্তায় সচেতন হতে হবে। কারণ একটা ভবনের ভেতরে বিদ্যুৎ-গ্যাস কিংবা অন্যান্য লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কিন্তু কেবল সরকারের না। নাগরিকদেরও সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে।’
তিনি মনে করেন, ‘ঢাকায় জনবসতি এত ঘন যে, এটি এখন বসবাসের অনুপযোগী নগরী। মূলত পড়ালেখা ও আয়রোজগারের উদ্দেশ্যে মানুষ ঢাকায় আসছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় এসব সুবিধা থাকলেও সেখানকার গুণগত মান নিম্নমানের। সরকার সারা দেশে এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করলে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে। তখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকবে না। নতুন ভবন নির্মাণেও মানুষ নিয়ম মানবে।’
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ঢাকা ও তার চারপাশে জালের মতো জড়িয়ে থাকা গ্যাস পাইপলাইনের ৬০ শতাংশের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৫০ বছরের পুরনো পাইপলাইনও রয়েছে। পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব পাইপলাইনে ছিদ্র হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলে পার পাওয়ার আর সুযোগ নেই। এসব নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিতাসেরও বড় ধরনের গাফিলতি রয়েছে। তারা ঠিকমতো মনিটরিং করে না।’
তিনি বলেন, ‘তিতাসের অধিকাংশ লাইন অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপর্ণ। পাইপলাইনগুলো কোথায় কী অবস্থায় আছে সে সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা তাদের নেই। জরিপের মাধ্যমে সংস্থাটির পুরো পাইপলাইন নেটওয়ার্ক মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। অব্যবহৃত লাইনগুলো বন্ধ করে ব্যবহৃত লাইনে গ্যাস ডিটেক্টর (পাইপলাইনে ছিদ্র শনাক্তকরণ যন্ত্র) বসাতে হবে, যাতে কোথায় লিকেজ হলে সহজেই জানা যায়। ঢাকা শহর এত দুর্গন্ধের নগরীতে পরিণত হয়েছে যে, অনেক সময় গ্যাস লিকেজের গন্ধও নাকে আসে না। তিতাসকে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইন সরিয়ে নতুন লাইন স্থাপন করতে হবে।’
ড. ইজাজ বলেন, ‘বাসাবাড়িতে ঠিকমতো গ্যাস না থাকায় অনেক সময় চুলা চালু রাখা হয়। পরে যখন লাইনে গ্যাস আসে তখন তা ঘরের মধ্যে জমে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক হতে হবে। যতটা সম্ভব ঘরের জানালা খুলে রাখতে হবে, যাতে গ্যাস জমতে না পারে। বাসায় কেউ না থাকলে আগে দরজা-জানালা খুলে গ্যাসের চুলা পরীক্ষা করে কিছুক্ষণ পর বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা দরকার। ছোটখাটো লিকেজ হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শে তা বন্ধের চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’
বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াসির আরাফাত খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও সিদ্দিকবাজারে যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা গ্যাস জমে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে মগবাজারে যে বিপর্যয় হয়েছিল, সেখানেও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্যাসের এবং ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইনগুলো বেশ পুরনো। অনেক ক্ষেত্রে এসব লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিকেজ ঘটে। গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে সেই গ্যাস স্যুয়ারেজ লাইন ও শৌচাগারের পাইপের মাধ্যমে ভবনে জমতে পারে। বদ্ধ স্থানে জমে থাকা এসব গ্যাস পরে বিস্ফোরণ কিংবা বৈদ্যুতিক স্পার্কের মাধ্যমে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।’
বদ্ধ স্থানে গ্যাস জমলেই বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই ভবনে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমবে। গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লাইনগুলো নিয়মিত চেক করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দ্রুত মেরামত কিংবা পুনরায় স্থাপন করতে হবে। গ্যাস পাইপলাইনে গন্ধযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে লিকেজ হলে সহজে শনাক্ত করা যায়। জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।
বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক দিশেহারা। জস বাটলারের মুখাবয়বে রাজ্যের হতাশা, ম্যাচ হেরে যাওয়ার একরাশ ভয়। জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে টেনে আনলেন সাত বোলার। তবুও এদিন বাংলাদেশকে থামাতে পারলেন না। অসম লড়াইয়ের কাগুজে পরিসংখ্যানকে স্রেফ কাগজ বানিয়ে ছুড়ে ফেলল টাইগাররা। এই ফরম্যাটে কোনো বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এমন দাপুটে জয় কখনো পেয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে যাই হোক দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকল। বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারাল ৬ উইকেটে, তাও ১২ বল হাতে রেখে। আর এই দাপুটে জয়েই টাইগাররা রাঙাল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ৫০তম জয়। ২০২৪ বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন চেহারার বাংলাদেশের এ যেন নতুন শুরু। যেখানে নেই কোনো সংকোচ-ভয়-দ্বিধা। থাকছে শুধুই দ্যুতি।
স্পষ্ট আত্মবিশ্বাসী এক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে আগের ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে হারানোর স্মৃতি টাটকা। ওয়ানডের সেই সাহস টি-টোয়েন্টিতে নিয়ে এসেছেন সাকিবরা। শুধু একার পারফরম নয়, পুরো দল হয়ে জ্বলে উঠলেন। তাতে পুড়ে ছারখার ইংল্যান্ড। একটি জয় এক দলকে কতটা আত্মবিশ্বাস দিতে পারে তা ম্যাচ শেষে সাকিবের কথায় স্পষ্ট। বাংলাদেশ অধিনায়ক এখনই আগামী বছরের বিশ্বকাপে ভালো করার স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমরা দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা শুরুর ১০ ওভারে চাপে ছিলাম, কিন্তু প্যানিক হইনি। মাথা ঠা-া রেখে সবাই নিজেদের দায়িত্বটা পূর্ণ করেছে। শুধু আমার ক্যাচ পড়া ছাড়া আজ দিনটি আমাদের সবার। টি-টোয়েন্টিতে যখন আপনি কম ভাববেন তখন ভালোও করবেন। আমাদের ড্রেসিংরুমের আবহাওয়াটা এখন দারুণ। আমার বিশ্বাস আমরা এই আবহাওয়াটা ধরে রাখতে পারব। ২০২৪ বিশ্বকাপের জন্য এর চেয়ে ভালো শুরু আর হয় না। বিশ্বকাপের আগে আমরা দারুণ একটি দল দাঁড় করাতে পারব।’
সাকিবের কথায় ‘ড্রেসিংরুমের আবহ’ বিষয়টি সত্যিই দেখার মতো। বোলিংয়ে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। সেই কথায় পরে আসা যাক তবে ব্যাটিংয়ে যে মানসিকতা বাংলাদেশ কাল দেখিয়েছে এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এই ক্রিকেটের খোঁজে গত বছরগুলো মাথা খুঁটে মরেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। দল বদলের সঙ্গে সেই ক্রিকেটের শুরু হলো। নিজেদের ইনিংসে প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রানের মতো করে বিশাল স্কোরের আভাষ দিচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু হাসান মাহমুদের আগুন ঝড়া বোলিংয়ে শেষ ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান নিতে পেরেছে তারা। তাই স্কোর আটকে গেল ১৫০ পেরোতেই। এরপর টি-টোয়েন্টি রান তাড়ায় যা করতে হয় ব্যাটাররা তাই করলেন। টি-টোয়েন্টিতে হয়তো প্রথমবার পাওয়ার প্লেতে বিপক্ষের চেয়ে বেশি রান করল বাংলাদেশ। ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে বাংলাদেশ করেছে ৫৪, ইংল্যান্ডের চেয়ে তিন রান বেশি। রনি-লিটনের বিধ্বংসী শুরুটা টেনে নিয়ে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গত চার ইনিংসে তৃতীয় ফিফটি করা ব্যাটারের সঙ্গে যোগ দিলেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। শেষে অধিনায়ক সাকিব শেষ তুলির আঁচড় টেনেছেন। পুরো ইনিংস জুড়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের ‘ইনট্যান্ট’ ছিল অবিশ্বাস্য। জয়ের তাড়নায় এমন ছুটে চলা ওপেনার থেকে মিডলঅর্ডার; আগের দলগুলোয় যা ছিল অনুপস্থিত।
ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশের পাল্টা ঘুসি উপহার দেওয়া শুরু হয় তাদের ইনিংস থেকে। বাংলাদেশি দর্শকরা এতদিন যা দেখে ক্লান্ত সেই চিত্রে আজ বিপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ শেষ ওভারগুলোতে রান তুলতে পারেননি ইংলিশরা। হাসান মাহমুদ দ্বিতীয় স্পেলে এলেন ১৭তম ওভারে। তার ওভার শুরুর আগেই ১৬তম ওভারের শেষ বলে ১৩ বলে ২০ রান করা বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। ৫.১ ওভারে তাদের ৪৭ রানের জুটি থামে। পরের বলেই মানে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বড় শট নিতে গিয়ে বাটলার ৪২ বলে ৬৭ রানে ডিপে ধরা পড়েন শান্তর হাতে। এমন গুচ্ছাকারে উইকেট হারিয়ে কতবার বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। আজ সেই জায়গায় ইংল্যান্ড। হাসান নিজের শেষ ওভারেও স্যাম কারেনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন। মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কারেনের ঝড়ো ৩৩ রান বাংলাদেশের সিরিজে ফেরার স্বপ্ন শেষ করে। তবে এদিন ব্যর্থ এ অলরাউন্ডার। শেষ চার ওভারে ২১ রান হওয়ায় বড় রানের স্বপ্ন দেখতে পারেনি ইংল্যান্ড।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ শুরু থেকেই ছিল আগ্রাসী। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম আন্তর্জাতিকে ক্রিকেটে নেমেও স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন রনি তালুকদার। তার ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংস দেখে মনেই হয়নি তিনি আট বছর বিরতি শেষে ফিরেছেন। বিপিএলে খেলার মতো সাবলীল ব্যাটিং দিয়ে অপর ওপেনার লিটনের চেয়েও বেশি ছন্দে ছিলেন। মাত্র ৩.৩ ওভারে ৩৩ রানের জুটি গড়ে রশিদ খানের গুগলি পড়তে না পারায় বোল্ড হন রনি। ছন্দে থাকা শান্ত তিনে নেমে রনির রেখে যাওয়া হাল ধরেন। মার্ক উডকে এক ওভারে চারটি চারে লাইনছাড়া করেন। এখানেই না থেকে রশিদ খান-মঈন আলিদের ইনসাইড আউট-কাট দারুণ সব শটে বাউন্ডারি ছাড়া করেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন ১৭০ স্ট্রাইকরেটে। ৩০ বলে ৮ চারে তার ৫১ অনেক সমালোচনার জবাবও। অবশ্য বিশ্বকাপ থেকেই শান্ত ব্যাট দিয়ে সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন। উডের দারুণ গতির বলে পরাস্ত হওয়ার আগে দুই সতীর্থ ১০ বলে ১২ রান করা লিটন ও ১৭ বলে অসাধারণ এক ছক্কা ও দুই চারে ২৪ করা হৃদয়কে হারিয়েছেন শান্ত। ১১২ রানে তার বিদায়ের পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে আর বিপদ হতে দেননি সাকিব। ২৪ বলে ৬ চারে ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করেন।
চান্দিকা হাথুরুসিংহে সবে এলেন। টি-টোয়েন্টি দলের কাউকে তেমন চেনেনও না। একাদশ সাজানোর দায়িত্বটা যে শুধু সাকিবের ওপরেই পড়ে তা আর বলতে হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলে পরিবর্তন আসার পর সংস্কৃতি বদলেছেন সাকিব। বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের অনুশীলনে-আলোচনায় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকেও দূরে রেখেছিলেন দলীয় পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে! এবার নতুন কোচ আসায় আরও একটি বদল হলো বাংলাদেশ দলে। সাকিব প্রথমদিনই দলে নতুন এনে নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। পারফরম করে নতুন যুক্তরা অধিনায়ককে সঠিক প্রমাণ করেছেন। সব মিলিয়ে আঁধারে থাকা ফরম্যাটে ‘নতুন’ বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দ্যুতি পেল নতুন শুরুতে।
ঢাকার উত্তরায় গাড়ি থেকে কোনো অস্ত্র ছাড়াই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কোম্পানিটির কর্মীদের কাছেও কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিনতাইকারীরা টাকা পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে রূপান্তরিত মাইক্রোবাসে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের খালি হাতেই কুপোকাত করেছিল। যদিও প্রথমে পুলিশ বলেছিল, ছিনতাইকারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে ওই টাকা লুট করেছিল।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, ছিনতাইয়ের ৯ ঘণ্টার মধ্যে লুট হওয়া টাকার একটি বড় অংশ (প্রায় ৯ কোটি টাকা) উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মানি প্ল্যান্ট লিংকের দুই পরিচালক ও গাড়িচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
ডিবির সূত্র জানায়, সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা টাকার চারটি বাক্স ছিনতাই করে পালিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দ্রুত অভিযানে নামে। অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে ৯ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িচালককে আটকও করে। তার কাছ থেকে তিনটি টাকার বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে। একটি বাক্স নিয়ে অন্য ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, ছিনতাই হওয়া টাকাভর্তি চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের অভিযান চলমান রয়েছে, অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) খন্দকার মুহিদউদ্দিন বলেন, খিলক্ষেতসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া টাকার একটি বড় অংশ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করছি, বাকি টাকা উদ্ধার এবং দুর্বৃত্তদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, গতকাল সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকার গাড়ি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা গাড়িটি ঘিরে ধরে গাড়িতে থাকা লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেডের বিভিন্ন বুথে টাকা রাখার জন্য যাচ্ছিল।
এ ঘটনার পর উত্তরা, তুরাগ ও সাভারসহ আশপাশের এলাকার তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়। ছিনতাইকারীরা এ বিশাল অঙ্কের টাকা লুটে নিয়ে যে পথে পালায়, ওই পথের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস কিংবা বাসাবাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে কি না গোয়েন্দারা তা খুঁজতে শুরু করে। একই সঙ্গে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়েছে লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গোয়েন্দারা তা শনাক্ত করার চেষ্টা চালায়।
তবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ গতকাল বলেন, ‘রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার হোটেল রিজেন্সির আশপাশের এলাকা থেকে আমরা লুট হওয়া বেশিরভাগ টাকা উদ্ধার করেছি। এখনো অভিযান চলছে। কত টাকা উদ্ধার হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোট চার ট্রাংক টাকা লুট হয়েছিল। এর মধ্যে তিন ট্রাংক উদ্ধার হয়েছে। এখনো গোনা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ৯ কোটি টাকার মতো উদ্ধার হয়েছে।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সগীর আহমেদ বলেন, ‘মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি বার্ষিক চুক্তিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ধারিত বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে আছে। তাদের কাছ থেকেই টাকা ছিনতাই হয়।’
এ বিষয়ে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি প্রতিদিনই এটিএম বুথে টাকা লোড করে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সাভার ইপিজেডে যাচ্ছিল। উত্তরা দিয়াবাড়ী দিয়ে যাওয়ার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস আমাদের টাকার গাড়ির সামনে এসে পথ আটকে দেয়। এরপর ওই মাইক্রো থেকে চার-পাঁচজন লোক বের হয়ে আমাদের ড্রাইভারসহ সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করে চাবি কেড়ে নেয় এবং গাড়ি থেকে লোকজনকে ফেলে দেয়। এরপর তাদের একজন আমাদের গাড়িটা ড্রাইভ করে চলে যায়।’ একে ‘ডাকাতি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি নিয়ে কিছুদূর গিয়ে তারা দেখে তখনো আমাদের একজন লোক গাড়িতে ছিল। এরপর গাড়ি থামিয়ে তাকে মারধর করে ফেলে দেয়। এরপর চারটা (টাকার) ট্রাংক নিয়ে “ডাকাতরা” তাদের গাড়িতে উঠে চলে যায়।’
এরপর তুরাগ থানায় গিয়ে পুলিশকে অবহিত করলে তৎপরতা শুরু হয় বলে জানান যশোদা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দিন আমরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ওই টাকা আবার ছেঁড়াফাটা বাছাই করে ভালো টাকাগুলো আবার লোড করি। এটাই আমাদের সার্ভিস।’
তুরাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার জানান, সিকিউরিটি কোম্পানির একটি গাড়িতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ওই ব্যাংকের সাভার ইপিজেড বুথে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ছিনতাইকারীরা যেকোনো মাধ্যমে এ খবর পেয়ে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের পাশে ওতপেতে ছিল। টাকা বহনকারী গাড়ি সেখানে পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা একটি মাইক্রোবাস রাস্তার মধ্যে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে এর গতিরোধ করে। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশের উপকমিশনার (উত্তরা জোন) মোর্শেদ আলম জানান, উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই এলাকায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা টাকা উদ্ধার এবং দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হচ্ছে।
জানা গেছে, সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় র্যাব-পুলিশের একাধিক দল। তারা আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে ওই টাকা পরিবহনে যুক্ত গাড়ির চালক ও অন্য আরোহীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের মুখ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের এডিসি বদরুল রহমান জিল্লু জানান, ঘটনার পর থেকে টাকা উদ্ধারে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে ডিবির একাধিক দল কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত টাকার বাকি অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এদিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে এতে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ টাকা বহন ও এটিএম বুথে জমার দায়িত্ব টাকা বহনকারী সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের। আবার এ টাকা বীমার আওতায় রয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এটি একটি বড় ধরনের ঘটনা। এ কারণে র্যাব ছায়াতদন্ত করছে। আশা করছি, ছিনতাইকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী সড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়া ৩টার দিকে ঢাকাগামী অপর সড়কটিও অবরোধ করা হয়। এর আগে পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ তিন দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শামসুজ্জামান শামস ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে শামস ভাইকে মুক্ত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তির আগ পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখব। শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাই এর নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের খবরে সেখানে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
সুপারস্টার শাকিব খানের জন্মদিন ছিল ২৮ মার্চ। বিশেষ দিনটিতে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় সিক্ত হন নায়ক। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তাকে।
বিশেষ ওই দিনটি ঘরোয়া আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীরের সঙ্গে কেক কাটেন তিনি। সমাজমাধ্যম ছড়িয়ে আছে সেসব ছবি।
অভিনেতার জন্মদিনে ছেলে বীরকে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন বুবলী। তারই একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন বুবলী।
নায়িকা ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখেন—'বাবার জন্মদিনে যখন বাবা ছেলের দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি।' এর পরই জুড়ে দেন একটি রেড হার্ট ইমো।
বুবলীর পোস্ট করা নজরকাড়া ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্তব্য পড়েছে প্রায় তিন হাজার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।