
বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিশ্চিতে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপমহাপরিচালক সিয়াংচেন ঝ্যাং। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে, তার মানে হলো এখানে সবকিছু সহজে হবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নিশ্চিত করতে পারলেই এ দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এফবিসিসিআই আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রথম দিনের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সিয়াংচেন ঝ্যাং এ কথা বলেন।
সকাল ১০টায় বিআইসিসিতে তিন দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’রও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৫তম। অর্থনীতির এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বেসরকারি খাতের অবদানের জন্যই। তাদের হাত ধরেই দেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলারে। বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব না দিলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির বিকাশ সম্ভব হতো না।’
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সামিটের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
শীর্ষ এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭ দেশের ২০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা।
বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিনটি প্ল্যানারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউজ রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুর রয়েছে এ সামিটে।
সম্মেলনে ডব্লিউটিও উপমহাপরিচালক বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। তার মতে, বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ। এ দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তিনি বলেন, আরও বৃহৎ আকারের অর্থনীতি হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবচেয়ে বেশি দরকার বেসরকারি বিনিয়োগ। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত একটি দেশ। এই অঞ্চলের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। বাংলাদেশের ডায়নামিক তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
সিয়াংচেন ঝ্যাং মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নিয়ম-কানুন সহজ করা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। ডব্লিউটিও বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করেছে এবং এ দেশের আগামীর উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক বড় কোম্পানি এবং বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ তৈরিতে আমদানিকারকদের সঙ্গে ‘বিজনেস লিডার্স প্যানেল : বাংলাদেশ-দি বিগ পিকচার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনের এডিটর এটলার্জ ও বিখ্যাত উপস্থাপক রিচার্ড কোয়েস্ট। এ ছাড়া সিএনএনের পক্ষ থেকে ‘সিএনএন ইনসাইটস : দি গ্লোবাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ভিউ অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেশনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা জোরালোভাবে ব্যবসা পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছি। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয় আসে পোশাক খাত থেকে। আমরা রপ্তানি আয়ের বৈচিত্র্যায়নের জন্য কাজ করছি।’
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ব্যবসার ক্ষেত্রগুলো কী কী এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পোশাক খাতের বাইরেও রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল শিল্পসহ দেশে এখন ১২টি খাত রপ্তানিযোগ্য পণ্যের জন্য প্রস্তুত আছে।
মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ কী পেল কোয়েস্টের এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা মেগা প্রকল্পে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করার চেষ্টা করছি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের জন্য “গেম চেঞ্জার” হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ সৌদির সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছি। ফলে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে কিছু সুবিধা হারাবে; বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য সুবিধা, কোটা ব্যবস্থা ও শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো হারাতে পারে বাংলাদেশ।’ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সৌদির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির এখনই উপযুক্ত সময়; যাতে দুই এলডিসি-পরবর্তী সময়ে দুই দেশই মুক্ত বাণিজ্য সহজে সম্পন্ন করতে পারে।’
একই দিনে ‘বাংলাদেশ গ্রোথ স্টোরি : হোয়াটস দ্য ফিউচার রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রিচার্ড কোয়েস্ট।
এ সময় বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, ভালো বন্ধু। কিন্তু আমরা চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ছি এমনটা ভাবা ভুল হবে। চীনের ঋণের ফাঁদে পড়া নিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এখানে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমাদের ঋণের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে বিশ্বের অন্য সংস্থার কাছ থেকে আমরা আরও কয়েকগুণ বেশি ঋণ নিয়েছি। আমরা জাপান, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও ঋণ নিই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে এ মুহূর্তে কমোডিটির দামসহ অন্য সব খাতের দামে মানুষ ভুগছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি আমরা দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কর্মীদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে, আমরা উৎপাদনে ভ্যালু এডিশন করছি।’
দুই মন্ত্রীর কাছে রিচার্ড কোয়েস্টের সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল, পাঁচ বছর পর বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান? উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এখন ৬ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়। এটি ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পাঁচ বছর পর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে।
জ¦ালানি-বিদ্যুৎ, লজিস্টিক ও বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব : বিদ্যুৎ-জ¦ালানি, লজিস্টিক এবং কৃষি খাতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী মজিদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসাবি।
গতকাল সম্মেলনের প্রথম দিনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, এসব খাতে সৌদি আরবের প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। কোন কোন খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে, সে বিষয়ে সৌদির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে দেশের বিনিয়োগ খাত তাদের (সৌদি বিনিয়োগকারী) আকৃষ্ট করতে পারলে তারা বিনিয়োগ করবে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সমুদ্রবন্দর এবং রংপুর চিনিকলের জায়গাটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তর করার পর সেখানে গ্যাসলাইন সংযোগে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব।
এসব বিষয়ের বাইরে আরবি ভাষা শিখিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে সৌদি আরব।
প্রক্রিয়াজাত কৃষি খাদ্য এবং ই-কমার্সে বিনিয়োগ করবে চীন : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি, প্রক্রিয়াজাত কৃষি খাদ্য এবং ই-কমার্স খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চান বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক দেশ। তারা (চীন) বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চায়। আর আমরাও বলছি, চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। তোমরা এসে দেখো। বাংলাদেশে অনেকগুলো খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে চীনের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।’
এফবিসিসিআইর অংশীদার হিসেবে এ সামিটে সহায়তা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় চায় সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হোক। বিশেষ করে সরকারি চাকরি সহজ করার জন্য গত এক যুগে নানা নির্দেশনা এসেছে সেখান থেকে। কিন্তু এলে কী হবে! ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি’। আর যাদের হাতে চাকরি সহজ করার দায়িত্ব তারা শোনে না বেকারের আর্তনাদ। আর শোনে না বলেই চাকরি নিয়ে মানুষের এত হয়রানি, দুর্ভোগ আর আর্তনাদের কষ্টগাথা।
সরকারি হোক বা বেসরকারি, চাকরির বাজারে ঘোর মন্দা না হলেও মন্দা চলছে। চাকরির বাজার যত সংকুচিত হচ্ছে, ততই কদর বাড়ছে বাঁকা পথের খেলোয়াড়দের। নিয়োগের খেলা বুঝে নিয়ে তারা নিজেদের পকেট ভরছে দুই হাতে। অথচ কয়েক বছর আগেও তারা শুধু সাধারণ নয়, অতি সাধারণ ছিল। কেউ ছিল ছোট ব্যবসায়ী, কেউবা রোজগারহীন। নিয়োগ দুর্নীতির বদৌলতে তারাই এখন কোটি টাকার মালিক। এ ছা-পোষা, সাধারণ মানুষগুলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করছেন। কেউ আবার দুর্নীতিবাজের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে কোটি টাকা কামাচ্ছেন। দিন দিন স্ফীত হচ্ছে তাদের ব্যাংক স্থিতি আর অন্যান্য সম্পত্তি। আর যারা দুর্নীতিবাজ, তাদের বৃদ্ধি কোনো হিসাবেই কুলায় না। তারা দেশের ব্যাংকে রেখে স্বস্তিও পায় না। পাচার করে দেয় বিদেশে, তাদের সেকেন্ড হোমে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই সরকারপ্রধান চাকরির বাজারের দুর্দশা ঘোচানোর নির্দেশনা দেন সচিব সভায়। সভায় বলা হয়, সংবিধানে একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গঠনের সুযোগ আছে। আলাদা পিএসসি করে শূন্য পদ পূরণে গতি আনার নির্দেশনা পেলেন সচিবরা। কমিটির পর উপকমিটি হয় আর সময়ক্ষেপণ হয়। অনেক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একাধিক পিএসসি করার রাস্তা কৌশলে আটকে দেওয়া হয়।
ফের নির্দেশনা আসায় ২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে গঠন করা হয় সচিব কমিটি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শূন্য পদের তথ্য এনে জানার চেষ্টা করা হয় এত শূন্য পদের কারণ কী। এ কমিটি পদ সৃজনে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে। একটি নতুন পদ সৃজন থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ পর্যন্ত পাঁচ বছর সময় লাগে। এ তথ্য খুঁজে বের করা হলেও তা বেকার সমস্যা কমায়নি মোটেও। ওই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বিশ্বব্যাংকে যোগদানের সময় ঘনিয়ে আসায় তাড়াহুড়ো করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। যা কোনো কার্যকর পরিবর্তন আনতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
আইন ও বিভিন্ন বিধি অনুযায়ী পিএসসি শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়োগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়। এ কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ বা ইনস্টিটিউট সুনাম কুড়ালে আরও কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে প্রতিযোগিতায় নামে। একপর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ পড়াশোনা করানো, চাকরির প্রার্থী বাছাই করা তাদের কাজ নয়। এ চিন্তা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে জনবল নিয়োগে আউটসোর্সিং নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপরই ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আসে পিএসসির কাঁধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার।
সরকারের ১৩ গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির) বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ করতে হলে পিএসসিতে ১৯২টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি বিলুপ্ত করে অভিন্ন বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি করতে হবে। এ ছাড়া তিনটি অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন সংশোধন করাসহ পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পিএসসি।
কৌশলে পিএসসি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত বেতন গ্রেডের পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণসংক্রান্ত পিএসসির প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এসব পদে নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণসংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালে। কমিটির দায়িত্ব ছিল ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত বেতন গ্রেডের পদে নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। নির্ধারিত সময়তো বটেই, তিন বছরেও কমিটি কোনো সুপারিশ করতে পারেনি। এ কমিটি একই কাজ করার জন্য আরও তিন মাস সময় নিয়েছে।
পিএসসির আদলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ করা হলে চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। কিন্তু সরকারের এ উদ্যোগটিও আটকে আছে। সরকারের একের পর এক উদ্যোগ আটকে দিলেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে টাকা ফেরত না দিয়ে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়ে দেওয়া বা বেকারের আর্তনাদ বন্ধ করতে পারলেন না কর্তারা। চাকরি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টাকার অঙ্কও বাড়ছে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছে।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাকরি নিয়ে প্রতারণা কোনো পর্যায়ে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয় প্রতারকের খপ্পরে পড়বেন না।
গত বছর ২২ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। শুধু ভূমি নয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ আরও কিছু মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কারোনা মহামারীর সময় বেকার সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। মহামারী ও সেই ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এ পর্যায়ে এসেও চাকরির নামে প্রতারণা বেড়েছে। মাসের পর মাস বেকার থাকার ফলে অনেকে ভুয়া চাকরির ফাঁদে পা দিচ্ছেন। প্রার্থীকে জাল নিয়োগ প্রস্তাব বা নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে। স্মার্টফোনে হরদম চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এগুলো থেকে কীভাবে বেকাররা নিজেদের রক্ষা করবেন জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্মার্টফোনে আসা অযাচিত লিংক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ লিংকগুলো যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তাতে সাড়া দেওয়া যাবে না। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। চাকরির জন্য কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরিপ্রার্থী সোহেল হায়দার জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে শুধু যে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, তা নয়। অনেক সময় ছোট ছোট পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি এমন নানা অজুহাতে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে প্রতারক সরে পড়ে। চাকরি প্রার্থীরা যখন বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
অবসরে যাওয়া একজন শ্রম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে হলে চাকরি বাজার সহজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ কীভাবে চাকরি পাবে সেটা দৃশ্যমান করতে হবে। সরকারের কর্মকর্তাদের চাকরি দিয়ে ঘুষ আদায় বন্ধ করতে হবে। চাকরি দেওয়ার পদ্ধতি সহজ ও স্বচ্ছ না করলে প্রতারণা বন্ধ করা যাবে না।
তিনি মনে করেন, চাকরির বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ লাখ তরুণ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন। তারা সবাই চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। অথচ তাদের উপযোগী চাকরি নেই। এসব শিক্ষিত চাকরি প্রার্থী আরামদায়ক কাজ করতে চান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হারে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর তৈরি করছে, সেই পরিমাণ আরামদায়ক চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না বা হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই সরকার যতই উদ্যোগ নিক না কেন, চাকরি সহজ করা সহজ নয়। সরকার প্রতি বছর গড়ে ৫০ হাজারের বেশি শূন্য পদ পূরণ করতে পারে না। পদ শূন্য থাকার পরও পারে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে চাকরি খাতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। যে সংস্কারের উদ্যোগ আছে, বাস্তবায়ন নেই।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় অনেক কম। ভারতের এ ব্যয় জিডিপির তুলনায় ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের দেশে সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। সরকারি সেবাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে গেলে মানবসম্পদে আরও ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এসব জায়গায় জবাবদিহি, দক্ষতা, মেধার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির বিষয়গুলো নিশ্চিত না করলে এ ধরনের প্রশাসন দিয়ে লাভ হবে না।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা অবশ্যই এমন কিছু আশা করেননি। বাংলাদেশকে যতই সমীহ করা হোক না কেন, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সহজ জয় আশা করেছিল দলটি। কিন্তু চট্টগ্রামে পাশার দান পুরোপুরি উল্টে যাওয়ায় এখন বিশাল বিপদে তারা। বিশ্বকাপ জয়ের পর টি-টোয়েন্টির প্রথম সিরিজেই হারের মুখে। ইংল্যান্ড নিজেদের উন্নতি নিয়ে
এতটাই ব্যস্ত যে, ম্যাচের আগের দিন নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বাতিল করে দিয়েছে। আত্মমগ্ন থেকে সিরিজ বাঁচানোর মরণপণ চেষ্টা সফরকারীদের মধ্যে। ইংল্যান্ডের মতো প্রত্যয়ী বাংলাদেশও। তবে এটা সিরিজ জয়ের প্রত্যয়। ইংল্যান্ডকে এমন বাগে পেয়ে সুযোগটা যেন হাতছাড়া না হয়। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সুর বেঁধে দেওয়া হাসান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে সেই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে গেলেন। প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ শিবিরে এ বিশ্বাসটা এখন দৃঢ়।
বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে দুর্বোধ্য ফরম্যাট এই টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ জেতায় ফরম্যাটের সবকিছু ধরা হয়ে গেছে এমন ভাবারও উপায় নেই। এটা ঠিক, ম্যাচটিতে সাকিব আল হাসানদের জয়ের ধরন অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছে। বাংলাদেশ এই এক জয়ে এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সিরিজে হারানোর স্বপ্ন দেখতে পারে। সেই স্বপ্ন পূরণে একাদশে আজ বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। শুধু এক জায়গাতেই সুযোগটা নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তা নাসুম আহমেদের বদলে বাঁহাতি অন্য স্পিনার তানভীর ইসলামকে খেলানোর। কারণ এই বিপিএলে মিরপুরে দারুণ সফল ছিলেন তানভীর। এ ছাড়া উইনিং একাদশ ভাঙার কোনো কারণ নেই।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ এ ফরম্যাটটিতে সেভাবে এগোতে পারেনি। মাঝের সময়ে শুধু জিম্বাবুয়ে-উইন্ডিজ-আয়ারল্যান্ডকে নিয়মিত হারাতে পেরেছে। একবার পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। তবে ওইসব সিরিজের চেয়ে এবার ইংল্যান্ডকে হারানোর ধরন ও দৃশ্যপট একদম আলাদা।
এবার ‘সবকিছু ঠিক’ হওয়া পূর্ণতা পাবে সিরিজ নিশ্চিত হলে। হাতে দুই ম্যাচ থাকায় সেই সম্ভাবনা একটু বেশি বাংলাদেশের কোর্টে। পেসার হাসান মাহমুদও বললেন সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশই অনেকটা এগিয়ে, ‘আমরা ইনশাআল্লাহ সিরিজ জিতব। মোমেন্টাম যেহেতু আমাদের দিকে আছে, ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে। অধিনায়ক আমাদের সাহস দিচ্ছেন। দলে সবাই আমরা তরুণ। সবকিছু মিলে ঠিকঠাক চলছে।’ হাসানের বিশ্বাস, এই দলটার শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, সব ফরম্যাটেই ভালো কিছু করার সামর্থ্য আছে। সাকিবের নেতৃত্বে তারুণ্যের উদ্দীপনায় তারা সেরা হতেই পারেন। সেই পথে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জয় বিশেষ গুরুত্ব রাখবে, ‘এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যে দল আছে, আমি মনে করি, এখানে সেরা খেলোয়াড়দের সমন্বয় হয়েছে। সবাই খুবই এনার্জেটিক এবং মাঠে শেষপর্যন্ত চেষ্টা করে। এটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, এ ব্যাচটাকে এগিয়ে নিতে পারি, আমার মনে হয় ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি; যে কোনো সংস্করণে আমরা এগিয়ে থাকব সবার থেকে।’
সিরিজ মিরপুরে ফেরায় একটু চিন্তাও আছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে মিরপুরেই দুটি ম্যাচ হেরে চট্টগ্রাম পাড়ি জমায় বাংলাদেশ। হাসানের বিশ্বাস, মাঠ এক হলেও ফরম্যাট আলাদা হওয়া এবং টানা দুই জয় স্মৃতিতে থাকা বাংলাদেশকে আজকের ম্যাচে এগিয়ে রাখবে, ‘ওয়ানডে তো এখন শেষ। টি-টোয়েন্টির দিকে ফোকাস। আমরা ওদের প্রথম ম্যাচে হারিয়েছি। এখন মোমেন্টাম অবশ্যই আমাদের দিকে। চেষ্টা থাকবে এটা ধরে রাখার। মিরপুরে খেলা যেহেতু হবে, অবশ্যই ভালো উইকেটেই হবে। এখন পর্যন্ত আমরা খুব ভালো খেলেছি। ওদের চট্টগ্রামে হারিয়েছি। চেষ্টা থাকবে এখানেও হারানোর।’
মিরপুরের উইকেট এক রহস্যময় চরিত্র। দীর্ঘদিন এখানে খেলে আসা বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও এর চরিত্র ধরতে পারেন না। তবে গত বিপিএল থেকে সেরা উইকেট দিচ্ছেন কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। তাই লম্বা কিউরেটর ক্যারিয়ারে এই প্রথম উইকেট নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। এমন স্পোর্টিং উইকেট আজ উপহার দিলে কোনো ক্ষতি নেই বাংলাদেশের। প্রথম দুই ওয়ানডে ভুলে এখন গত দুই ম্যাচের সাফল্যে তাকিয়ে হাসানরা। এই পেসার তো বলেই দিলেন, ‘বিপিএলের মতো উইকেট হলে তো খুব ভালো। আমরা উপভোগ করব এখানে বল করা। উইকেট যেমনই হোক কোনো সমস্যা নেই, ওদের সামলানোর মতো আমাদেরও ভালো পেসার আছে।’
মাত্র ৬ ওয়ানডে ও ১১ টি-টোয়েন্টি খেলা একজন তরুণের মুখে ইংল্যান্ডকে থামিয়ে দেওয়ার এ আত্মবিশ্বাস পরিবর্তিত বাংলাদেশকে চেনাচ্ছে। যারা অপেক্ষায় আছে সেরাদের বিপক্ষে সিরিজ জয় উদযাপনের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়া মানেই হচ্ছে মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উন্নয়ন উপহার দেয়। গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। আমরা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০৪১ সালে আমাদের জনগোষ্ঠী স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের গ্রাম, কৃষি সবকিছু হবে স্মার্ট। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের উন্নয়ন করা। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্য ডেল্টাপ্ল্যান করে এই ভূখণ্ড আরও উন্নত করব।’ তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন ২৬ লাখ টন খাদ্য মজুদ রেখে যাই। এরপর আসে লুটেরার দল, সন্ত্রাসীর দল বিএনপি। তারা আবার বাংলাদেশকে খাদ্যঘাটতির দেশে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আবার যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখি সেই ২৬ লাখ টন খাদ্যঘাটতি। আল্লাহর রহমতে দেশে এখন আর খাদ্যঘাটতি নেই। ২১ লাখ টন খাদ্য এখন মজুদ আছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শুনেছি, বিএনপির কোনো এক নেতা আছে নাকি সারা দিন মাইক নিয়ে বসে থাকে। তারা নাকি বলে, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি। আচ্ছা ময়মনসিংহবাসী আপনারাই বলুন, আমরা কি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি? বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই, বিএনপি কমায়। বিএনপির আমলে দুর্নীতিবাজরা কমিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। বিদ্যুৎ না হলে এত কথা মাইকে আসত কীভাবে।
৪২ মিনিট বক্তব্যের শুরুতে নেতাকর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, তা বাস্তবায়ন করা। আমি আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। উদ্বোধন করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মাসে ৭৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম, সেগুলো যতেœ রাখবেন। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ৩০টি প্রকল্প পড়ে শোনান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ময়মনসিংহ বিভাগ করেছে। প্রতিটি বিভাগের মতো এ বিভাগে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, একটি পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছু সম্ভব হয়নি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় নতুন শহরকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি মানুষের ঘর দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গৃহহীন ও রাস্তার মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। দেশের একটি মানুষও যেন ভূমিহীন না থাকে সেজন্য কাজ করছি। আমরা আজকে প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেই আমরা সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। অনেক দুর্গম এলাকায়ও সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন শতভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। কে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মোবাইল ফোন দিয়েছে।
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থল সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে একযোগে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যার ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প।
জনসভা মঞ্চে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে গোটা ময়মনসিংহে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে শহরজুড়ে রঙ-বেরঙের সাজে তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে ফেলা হয় নগরী। বিভাগীয় শহরের বাইরের সড়কগুলোতেও নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। জনসভাস্থল সার্কিট হাউজ মাঠে নির্মাণ করা হয় বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ।
সরকারি চাকরির ৭৭ শতাংশই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। নথিপত্রে এখন অবশ্য এসব চাকরিকে শ্রেণি হিসেবে বিভাজন না করে বেতন গ্রেড হিসেবে দেখানো হয়। সেই হিসেবে চাকরিগুলো ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের। এই বিরাট অংশের চাকরি নিয়ে এন্তার অভিযোগ। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, ঘুষ দিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, শূন্য পদ পূরণে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়, টাকা কামানোর সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে শূন্য পদের সংখ্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয় না।
এসব অভিযোগ থেকে বের হয়ে আসার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের শরণাপন্ন হয়েছিল সরকার। কিন্তু কমিশন পাশ কাটিয়ে যাওয়ায় তিন বছর আগে সংস্কার করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস তো দূরের কথা, তিন বছরেও কমিটি কোনো কাজ করেনি। তিন বছর পর এসে কমিটি আরও তিন মাসের সময় নিয়েছে।
বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০তম পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখার যুগ্ম সচিব বা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের উপসচিবকে এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিটিকে চারটি দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম দায়িত্ব ছিল বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ। দ্বিতীয় দায়িত্ব ছিল বেষ্টনী বিধি প্রণয়ন ও এর আইনগত প্রায়োগিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। তৃতীয় ছিল বার্ষিক ভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক পুল গঠনের প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা। আর চতুর্থ দায়িত্ব ছিল বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনের আওতাভুক্ত করা হলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা।
এই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার দায়িত্ব দিয়ে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ঠিক তিন বছর পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনের সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে নেওয়া হয়। নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি আগামী ৩১ মের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, করোনার কারণে কমিটি কাজ করতে পারেনি। তা ছাড়া বেষ্টনী নিয়োগবিধির কাজটি বেশ জটিল। এই কাজ করতে গিয়ে নতুন নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে; যা থেকে মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হতে পারে। এসব কারণে তারা ধীরে ধীরে তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু চাকরিপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, করোনা মহামারির সময়ও সরকারের কোনো কাজ বন্ধ ছিল না। ২০২১ সালের মার্চ ও এপ্রিলএই দুই মাস সবকিছু স্থবির থাকলেও তারপর সবকিছুতেই রুটিন কাজ হয়েছে; বরং করোনার এই সময়টাতে সরকার চাকরি-বাকরির বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। কিছু ক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বয়স বাড়িয়েছে। তা ছাড়া ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন জারিরও প্রায় এক বছর পর মহামারি দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলে এখানে কর্মকর্তাদের অনীহাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা।
বাসশ্রমিকদের সঙ্গে বচসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দুইশর বেশি আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ।
সংঘর্ষ চলাকালে দেড়শ জনের বেশি আহতকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম জানান। রাত ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেড়শ জনের বেশি আহত চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সন্ধ্যার পরপর শুরু হওয়া এই সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। আগুন দেওয়া হয় বিনোদপুর গেটসংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। সেখানে পুলিশের একটিসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাস্থলে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’
সংঘর্ষের ঘটনায় দুদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে রবি ও সোমবারের সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসা এবং ভাড়াকে কেন্দ্র করে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এলে আবারও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বচসা হয়। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের পর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দোকানপাট ও পুলিশ বক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।