
বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিশ্চিতে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপমহাপরিচালক সিয়াংচেন ঝ্যাং। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে, তার মানে হলো এখানে সবকিছু সহজে হবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নিশ্চিত করতে পারলেই এ দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এফবিসিসিআই আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রথম দিনের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সিয়াংচেন ঝ্যাং এ কথা বলেন।
সকাল ১০টায় বিআইসিসিতে তিন দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’রও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৫তম। অর্থনীতির এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বেসরকারি খাতের অবদানের জন্যই। তাদের হাত ধরেই দেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলারে। বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব না দিলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির বিকাশ সম্ভব হতো না।’
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সামিটের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
শীর্ষ এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭ দেশের ২০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা।
বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিনটি প্ল্যানারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউজ রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুর রয়েছে এ সামিটে।
সম্মেলনে ডব্লিউটিও উপমহাপরিচালক বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। তার মতে, বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ। এ দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তিনি বলেন, আরও বৃহৎ আকারের অর্থনীতি হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবচেয়ে বেশি দরকার বেসরকারি বিনিয়োগ। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত একটি দেশ। এই অঞ্চলের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। বাংলাদেশের ডায়নামিক তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
সিয়াংচেন ঝ্যাং মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নিয়ম-কানুন সহজ করা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। ডব্লিউটিও বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করেছে এবং এ দেশের আগামীর উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক বড় কোম্পানি এবং বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ তৈরিতে আমদানিকারকদের সঙ্গে ‘বিজনেস লিডার্স প্যানেল : বাংলাদেশ-দি বিগ পিকচার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনের এডিটর এটলার্জ ও বিখ্যাত উপস্থাপক রিচার্ড কোয়েস্ট। এ ছাড়া সিএনএনের পক্ষ থেকে ‘সিএনএন ইনসাইটস : দি গ্লোবাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ভিউ অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেশনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা জোরালোভাবে ব্যবসা পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছি। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয় আসে পোশাক খাত থেকে। আমরা রপ্তানি আয়ের বৈচিত্র্যায়নের জন্য কাজ করছি।’
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ব্যবসার ক্ষেত্রগুলো কী কী এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পোশাক খাতের বাইরেও রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল শিল্পসহ দেশে এখন ১২টি খাত রপ্তানিযোগ্য পণ্যের জন্য প্রস্তুত আছে।
মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ কী পেল কোয়েস্টের এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা মেগা প্রকল্পে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করার চেষ্টা করছি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের জন্য “গেম চেঞ্জার” হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ সৌদির সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছি। ফলে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে কিছু সুবিধা হারাবে; বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য সুবিধা, কোটা ব্যবস্থা ও শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো হারাতে পারে বাংলাদেশ।’ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সৌদির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির এখনই উপযুক্ত সময়; যাতে দুই এলডিসি-পরবর্তী সময়ে দুই দেশই মুক্ত বাণিজ্য সহজে সম্পন্ন করতে পারে।’
একই দিনে ‘বাংলাদেশ গ্রোথ স্টোরি : হোয়াটস দ্য ফিউচার রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রিচার্ড কোয়েস্ট।
এ সময় বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, ভালো বন্ধু। কিন্তু আমরা চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ছি এমনটা ভাবা ভুল হবে। চীনের ঋণের ফাঁদে পড়া নিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এখানে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমাদের ঋণের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে বিশ্বের অন্য সংস্থার কাছ থেকে আমরা আরও কয়েকগুণ বেশি ঋণ নিয়েছি। আমরা জাপান, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও ঋণ নিই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে এ মুহূর্তে কমোডিটির দামসহ অন্য সব খাতের দামে মানুষ ভুগছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি আমরা দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কর্মীদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে, আমরা উৎপাদনে ভ্যালু এডিশন করছি।’
দুই মন্ত্রীর কাছে রিচার্ড কোয়েস্টের সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল, পাঁচ বছর পর বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান? উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এখন ৬ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়। এটি ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পাঁচ বছর পর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে।
জ¦ালানি-বিদ্যুৎ, লজিস্টিক ও বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব : বিদ্যুৎ-জ¦ালানি, লজিস্টিক এবং কৃষি খাতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী মজিদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসাবি।
গতকাল সম্মেলনের প্রথম দিনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, এসব খাতে সৌদি আরবের প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। কোন কোন খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে, সে বিষয়ে সৌদির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে দেশের বিনিয়োগ খাত তাদের (সৌদি বিনিয়োগকারী) আকৃষ্ট করতে পারলে তারা বিনিয়োগ করবে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সমুদ্রবন্দর এবং রংপুর চিনিকলের জায়গাটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তর করার পর সেখানে গ্যাসলাইন সংযোগে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব।
এসব বিষয়ের বাইরে আরবি ভাষা শিখিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে সৌদি আরব।
প্রক্রিয়াজাত কৃষি খাদ্য এবং ই-কমার্সে বিনিয়োগ করবে চীন : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি, প্রক্রিয়াজাত কৃষি খাদ্য এবং ই-কমার্স খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চান বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক দেশ। তারা (চীন) বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চায়। আর আমরাও বলছি, চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। তোমরা এসে দেখো। বাংলাদেশে অনেকগুলো খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে চীনের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।’
এফবিসিসিআইর অংশীদার হিসেবে এ সামিটে সহায়তা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় চায় সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হোক। বিশেষ করে সরকারি চাকরি সহজ করার জন্য গত এক যুগে নানা নির্দেশনা এসেছে সেখান থেকে। কিন্তু এলে কী হবে! ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি’। আর যাদের হাতে চাকরি সহজ করার দায়িত্ব তারা শোনে না বেকারের আর্তনাদ। আর শোনে না বলেই চাকরি নিয়ে মানুষের এত হয়রানি, দুর্ভোগ আর আর্তনাদের কষ্টগাথা।
সরকারি হোক বা বেসরকারি, চাকরির বাজারে ঘোর মন্দা না হলেও মন্দা চলছে। চাকরির বাজার যত সংকুচিত হচ্ছে, ততই কদর বাড়ছে বাঁকা পথের খেলোয়াড়দের। নিয়োগের খেলা বুঝে নিয়ে তারা নিজেদের পকেট ভরছে দুই হাতে। অথচ কয়েক বছর আগেও তারা শুধু সাধারণ নয়, অতি সাধারণ ছিল। কেউ ছিল ছোট ব্যবসায়ী, কেউবা রোজগারহীন। নিয়োগ দুর্নীতির বদৌলতে তারাই এখন কোটি টাকার মালিক। এ ছা-পোষা, সাধারণ মানুষগুলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করছেন। কেউ আবার দুর্নীতিবাজের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে কোটি টাকা কামাচ্ছেন। দিন দিন স্ফীত হচ্ছে তাদের ব্যাংক স্থিতি আর অন্যান্য সম্পত্তি। আর যারা দুর্নীতিবাজ, তাদের বৃদ্ধি কোনো হিসাবেই কুলায় না। তারা দেশের ব্যাংকে রেখে স্বস্তিও পায় না। পাচার করে দেয় বিদেশে, তাদের সেকেন্ড হোমে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই সরকারপ্রধান চাকরির বাজারের দুর্দশা ঘোচানোর নির্দেশনা দেন সচিব সভায়। সভায় বলা হয়, সংবিধানে একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গঠনের সুযোগ আছে। আলাদা পিএসসি করে শূন্য পদ পূরণে গতি আনার নির্দেশনা পেলেন সচিবরা। কমিটির পর উপকমিটি হয় আর সময়ক্ষেপণ হয়। অনেক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একাধিক পিএসসি করার রাস্তা কৌশলে আটকে দেওয়া হয়।
ফের নির্দেশনা আসায় ২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে গঠন করা হয় সচিব কমিটি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শূন্য পদের তথ্য এনে জানার চেষ্টা করা হয় এত শূন্য পদের কারণ কী। এ কমিটি পদ সৃজনে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে। একটি নতুন পদ সৃজন থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ পর্যন্ত পাঁচ বছর সময় লাগে। এ তথ্য খুঁজে বের করা হলেও তা বেকার সমস্যা কমায়নি মোটেও। ওই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বিশ্বব্যাংকে যোগদানের সময় ঘনিয়ে আসায় তাড়াহুড়ো করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। যা কোনো কার্যকর পরিবর্তন আনতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
আইন ও বিভিন্ন বিধি অনুযায়ী পিএসসি শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়োগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়। এ কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ বা ইনস্টিটিউট সুনাম কুড়ালে আরও কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে প্রতিযোগিতায় নামে। একপর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ পড়াশোনা করানো, চাকরির প্রার্থী বাছাই করা তাদের কাজ নয়। এ চিন্তা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে জনবল নিয়োগে আউটসোর্সিং নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপরই ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আসে পিএসসির কাঁধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার।
সরকারের ১৩ গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির) বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ করতে হলে পিএসসিতে ১৯২টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি বিলুপ্ত করে অভিন্ন বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি করতে হবে। এ ছাড়া তিনটি অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন সংশোধন করাসহ পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পিএসসি।
কৌশলে পিএসসি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত বেতন গ্রেডের পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণসংক্রান্ত পিএসসির প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এসব পদে নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণসংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালে। কমিটির দায়িত্ব ছিল ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত বেতন গ্রেডের পদে নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। নির্ধারিত সময়তো বটেই, তিন বছরেও কমিটি কোনো সুপারিশ করতে পারেনি। এ কমিটি একই কাজ করার জন্য আরও তিন মাস সময় নিয়েছে।
পিএসসির আদলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ করা হলে চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। কিন্তু সরকারের এ উদ্যোগটিও আটকে আছে। সরকারের একের পর এক উদ্যোগ আটকে দিলেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে টাকা ফেরত না দিয়ে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়ে দেওয়া বা বেকারের আর্তনাদ বন্ধ করতে পারলেন না কর্তারা। চাকরি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টাকার অঙ্কও বাড়ছে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছে।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাকরি নিয়ে প্রতারণা কোনো পর্যায়ে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয় প্রতারকের খপ্পরে পড়বেন না।
গত বছর ২২ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। শুধু ভূমি নয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ আরও কিছু মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কারোনা মহামারীর সময় বেকার সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। মহামারী ও সেই ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এ পর্যায়ে এসেও চাকরির নামে প্রতারণা বেড়েছে। মাসের পর মাস বেকার থাকার ফলে অনেকে ভুয়া চাকরির ফাঁদে পা দিচ্ছেন। প্রার্থীকে জাল নিয়োগ প্রস্তাব বা নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে। স্মার্টফোনে হরদম চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এগুলো থেকে কীভাবে বেকাররা নিজেদের রক্ষা করবেন জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্মার্টফোনে আসা অযাচিত লিংক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ লিংকগুলো যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তাতে সাড়া দেওয়া যাবে না। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। চাকরির জন্য কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরিপ্রার্থী সোহেল হায়দার জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে শুধু যে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, তা নয়। অনেক সময় ছোট ছোট পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি এমন নানা অজুহাতে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে প্রতারক সরে পড়ে। চাকরি প্রার্থীরা যখন বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
অবসরে যাওয়া একজন শ্রম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে হলে চাকরি বাজার সহজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ কীভাবে চাকরি পাবে সেটা দৃশ্যমান করতে হবে। সরকারের কর্মকর্তাদের চাকরি দিয়ে ঘুষ আদায় বন্ধ করতে হবে। চাকরি দেওয়ার পদ্ধতি সহজ ও স্বচ্ছ না করলে প্রতারণা বন্ধ করা যাবে না।
তিনি মনে করেন, চাকরির বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ লাখ তরুণ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন। তারা সবাই চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। অথচ তাদের উপযোগী চাকরি নেই। এসব শিক্ষিত চাকরি প্রার্থী আরামদায়ক কাজ করতে চান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হারে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর তৈরি করছে, সেই পরিমাণ আরামদায়ক চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না বা হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই সরকার যতই উদ্যোগ নিক না কেন, চাকরি সহজ করা সহজ নয়। সরকার প্রতি বছর গড়ে ৫০ হাজারের বেশি শূন্য পদ পূরণ করতে পারে না। পদ শূন্য থাকার পরও পারে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে চাকরি খাতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। যে সংস্কারের উদ্যোগ আছে, বাস্তবায়ন নেই।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় অনেক কম। ভারতের এ ব্যয় জিডিপির তুলনায় ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের দেশে সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। সরকারি সেবাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে গেলে মানবসম্পদে আরও ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এসব জায়গায় জবাবদিহি, দক্ষতা, মেধার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির বিষয়গুলো নিশ্চিত না করলে এ ধরনের প্রশাসন দিয়ে লাভ হবে না।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা অবশ্যই এমন কিছু আশা করেননি। বাংলাদেশকে যতই সমীহ করা হোক না কেন, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সহজ জয় আশা করেছিল দলটি। কিন্তু চট্টগ্রামে পাশার দান পুরোপুরি উল্টে যাওয়ায় এখন বিশাল বিপদে তারা। বিশ্বকাপ জয়ের পর টি-টোয়েন্টির প্রথম সিরিজেই হারের মুখে। ইংল্যান্ড নিজেদের উন্নতি নিয়ে
এতটাই ব্যস্ত যে, ম্যাচের আগের দিন নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বাতিল করে দিয়েছে। আত্মমগ্ন থেকে সিরিজ বাঁচানোর মরণপণ চেষ্টা সফরকারীদের মধ্যে। ইংল্যান্ডের মতো প্রত্যয়ী বাংলাদেশও। তবে এটা সিরিজ জয়ের প্রত্যয়। ইংল্যান্ডকে এমন বাগে পেয়ে সুযোগটা যেন হাতছাড়া না হয়। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সুর বেঁধে দেওয়া হাসান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে সেই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে গেলেন। প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ শিবিরে এ বিশ্বাসটা এখন দৃঢ়।
বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে দুর্বোধ্য ফরম্যাট এই টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ জেতায় ফরম্যাটের সবকিছু ধরা হয়ে গেছে এমন ভাবারও উপায় নেই। এটা ঠিক, ম্যাচটিতে সাকিব আল হাসানদের জয়ের ধরন অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছে। বাংলাদেশ এই এক জয়ে এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সিরিজে হারানোর স্বপ্ন দেখতে পারে। সেই স্বপ্ন পূরণে একাদশে আজ বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। শুধু এক জায়গাতেই সুযোগটা নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তা নাসুম আহমেদের বদলে বাঁহাতি অন্য স্পিনার তানভীর ইসলামকে খেলানোর। কারণ এই বিপিএলে মিরপুরে দারুণ সফল ছিলেন তানভীর। এ ছাড়া উইনিং একাদশ ভাঙার কোনো কারণ নেই।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ এ ফরম্যাটটিতে সেভাবে এগোতে পারেনি। মাঝের সময়ে শুধু জিম্বাবুয়ে-উইন্ডিজ-আয়ারল্যান্ডকে নিয়মিত হারাতে পেরেছে। একবার পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। তবে ওইসব সিরিজের চেয়ে এবার ইংল্যান্ডকে হারানোর ধরন ও দৃশ্যপট একদম আলাদা।
এবার ‘সবকিছু ঠিক’ হওয়া পূর্ণতা পাবে সিরিজ নিশ্চিত হলে। হাতে দুই ম্যাচ থাকায় সেই সম্ভাবনা একটু বেশি বাংলাদেশের কোর্টে। পেসার হাসান মাহমুদও বললেন সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশই অনেকটা এগিয়ে, ‘আমরা ইনশাআল্লাহ সিরিজ জিতব। মোমেন্টাম যেহেতু আমাদের দিকে আছে, ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে। অধিনায়ক আমাদের সাহস দিচ্ছেন। দলে সবাই আমরা তরুণ। সবকিছু মিলে ঠিকঠাক চলছে।’ হাসানের বিশ্বাস, এই দলটার শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, সব ফরম্যাটেই ভালো কিছু করার সামর্থ্য আছে। সাকিবের নেতৃত্বে তারুণ্যের উদ্দীপনায় তারা সেরা হতেই পারেন। সেই পথে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জয় বিশেষ গুরুত্ব রাখবে, ‘এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যে দল আছে, আমি মনে করি, এখানে সেরা খেলোয়াড়দের সমন্বয় হয়েছে। সবাই খুবই এনার্জেটিক এবং মাঠে শেষপর্যন্ত চেষ্টা করে। এটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, এ ব্যাচটাকে এগিয়ে নিতে পারি, আমার মনে হয় ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি; যে কোনো সংস্করণে আমরা এগিয়ে থাকব সবার থেকে।’
সিরিজ মিরপুরে ফেরায় একটু চিন্তাও আছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে মিরপুরেই দুটি ম্যাচ হেরে চট্টগ্রাম পাড়ি জমায় বাংলাদেশ। হাসানের বিশ্বাস, মাঠ এক হলেও ফরম্যাট আলাদা হওয়া এবং টানা দুই জয় স্মৃতিতে থাকা বাংলাদেশকে আজকের ম্যাচে এগিয়ে রাখবে, ‘ওয়ানডে তো এখন শেষ। টি-টোয়েন্টির দিকে ফোকাস। আমরা ওদের প্রথম ম্যাচে হারিয়েছি। এখন মোমেন্টাম অবশ্যই আমাদের দিকে। চেষ্টা থাকবে এটা ধরে রাখার। মিরপুরে খেলা যেহেতু হবে, অবশ্যই ভালো উইকেটেই হবে। এখন পর্যন্ত আমরা খুব ভালো খেলেছি। ওদের চট্টগ্রামে হারিয়েছি। চেষ্টা থাকবে এখানেও হারানোর।’
মিরপুরের উইকেট এক রহস্যময় চরিত্র। দীর্ঘদিন এখানে খেলে আসা বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও এর চরিত্র ধরতে পারেন না। তবে গত বিপিএল থেকে সেরা উইকেট দিচ্ছেন কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। তাই লম্বা কিউরেটর ক্যারিয়ারে এই প্রথম উইকেট নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। এমন স্পোর্টিং উইকেট আজ উপহার দিলে কোনো ক্ষতি নেই বাংলাদেশের। প্রথম দুই ওয়ানডে ভুলে এখন গত দুই ম্যাচের সাফল্যে তাকিয়ে হাসানরা। এই পেসার তো বলেই দিলেন, ‘বিপিএলের মতো উইকেট হলে তো খুব ভালো। আমরা উপভোগ করব এখানে বল করা। উইকেট যেমনই হোক কোনো সমস্যা নেই, ওদের সামলানোর মতো আমাদেরও ভালো পেসার আছে।’
মাত্র ৬ ওয়ানডে ও ১১ টি-টোয়েন্টি খেলা একজন তরুণের মুখে ইংল্যান্ডকে থামিয়ে দেওয়ার এ আত্মবিশ্বাস পরিবর্তিত বাংলাদেশকে চেনাচ্ছে। যারা অপেক্ষায় আছে সেরাদের বিপক্ষে সিরিজ জয় উদযাপনের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়া মানেই হচ্ছে মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উন্নয়ন উপহার দেয়। গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। আমরা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০৪১ সালে আমাদের জনগোষ্ঠী স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদের গ্রাম, কৃষি সবকিছু হবে স্মার্ট। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের উন্নয়ন করা। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্য ডেল্টাপ্ল্যান করে এই ভূখণ্ড আরও উন্নত করব।’ তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন ২৬ লাখ টন খাদ্য মজুদ রেখে যাই। এরপর আসে লুটেরার দল, সন্ত্রাসীর দল বিএনপি। তারা আবার বাংলাদেশকে খাদ্যঘাটতির দেশে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আবার যখন সরকার গঠন করি, তখন দেখি সেই ২৬ লাখ টন খাদ্যঘাটতি। আল্লাহর রহমতে দেশে এখন আর খাদ্যঘাটতি নেই। ২১ লাখ টন খাদ্য এখন মজুদ আছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শুনেছি, বিএনপির কোনো এক নেতা আছে নাকি সারা দিন মাইক নিয়ে বসে থাকে। তারা নাকি বলে, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি। আচ্ছা ময়মনসিংহবাসী আপনারাই বলুন, আমরা কি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি? বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই, বিএনপি কমায়। বিএনপির আমলে দুর্নীতিবাজরা কমিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। বিদ্যুৎ না হলে এত কথা মাইকে আসত কীভাবে।
৪২ মিনিট বক্তব্যের শুরুতে নেতাকর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, তা বাস্তবায়ন করা। আমি আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। উদ্বোধন করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মাসে ৭৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম, সেগুলো যতেœ রাখবেন। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ৩০টি প্রকল্প পড়ে শোনান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ময়মনসিংহ বিভাগ করেছে। প্রতিটি বিভাগের মতো এ বিভাগে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, একটি পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছু সম্ভব হয়নি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় নতুন শহরকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি মানুষের ঘর দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গৃহহীন ও রাস্তার মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। দেশের একটি মানুষও যেন ভূমিহীন না থাকে সেজন্য কাজ করছি। আমরা আজকে প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেই আমরা সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। অনেক দুর্গম এলাকায়ও সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন শতভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। কে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মোবাইল ফোন দিয়েছে।
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থল সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে একযোগে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যার ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প।
জনসভা মঞ্চে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে গোটা ময়মনসিংহে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে শহরজুড়ে রঙ-বেরঙের সাজে তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে ফেলা হয় নগরী। বিভাগীয় শহরের বাইরের সড়কগুলোতেও নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। জনসভাস্থল সার্কিট হাউজ মাঠে নির্মাণ করা হয় বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ।
সরকারি চাকরির ৭৭ শতাংশই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। নথিপত্রে এখন অবশ্য এসব চাকরিকে শ্রেণি হিসেবে বিভাজন না করে বেতন গ্রেড হিসেবে দেখানো হয়। সেই হিসেবে চাকরিগুলো ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের। এই বিরাট অংশের চাকরি নিয়ে এন্তার অভিযোগ। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, ঘুষ দিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, শূন্য পদ পূরণে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়, টাকা কামানোর সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে শূন্য পদের সংখ্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয় না।
এসব অভিযোগ থেকে বের হয়ে আসার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের শরণাপন্ন হয়েছিল সরকার। কিন্তু কমিশন পাশ কাটিয়ে যাওয়ায় তিন বছর আগে সংস্কার করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস তো দূরের কথা, তিন বছরেও কমিটি কোনো কাজ করেনি। তিন বছর পর এসে কমিটি আরও তিন মাসের সময় নিয়েছে।
বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০তম পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখার যুগ্ম সচিব বা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের উপসচিবকে এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিটিকে চারটি দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম দায়িত্ব ছিল বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ। দ্বিতীয় দায়িত্ব ছিল বেষ্টনী বিধি প্রণয়ন ও এর আইনগত প্রায়োগিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। তৃতীয় ছিল বার্ষিক ভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক পুল গঠনের প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা। আর চতুর্থ দায়িত্ব ছিল বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনের আওতাভুক্ত করা হলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা।
এই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার দায়িত্ব দিয়ে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ঠিক তিন বছর পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনের সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে নেওয়া হয়। নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি আগামী ৩১ মের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, করোনার কারণে কমিটি কাজ করতে পারেনি। তা ছাড়া বেষ্টনী নিয়োগবিধির কাজটি বেশ জটিল। এই কাজ করতে গিয়ে নতুন নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে; যা থেকে মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হতে পারে। এসব কারণে তারা ধীরে ধীরে তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু চাকরিপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, করোনা মহামারির সময়ও সরকারের কোনো কাজ বন্ধ ছিল না। ২০২১ সালের মার্চ ও এপ্রিলএই দুই মাস সবকিছু স্থবির থাকলেও তারপর সবকিছুতেই রুটিন কাজ হয়েছে; বরং করোনার এই সময়টাতে সরকার চাকরি-বাকরির বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। কিছু ক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বয়স বাড়িয়েছে। তা ছাড়া ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন জারিরও প্রায় এক বছর পর মহামারি দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলে এখানে কর্মকর্তাদের অনীহাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা।
বাসশ্রমিকদের সঙ্গে বচসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দুইশর বেশি আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ।
সংঘর্ষ চলাকালে দেড়শ জনের বেশি আহতকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম জানান। রাত ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেড়শ জনের বেশি আহত চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সন্ধ্যার পরপর শুরু হওয়া এই সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। আগুন দেওয়া হয় বিনোদপুর গেটসংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। সেখানে পুলিশের একটিসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাস্থলে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’
সংঘর্ষের ঘটনায় দুদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে রবি ও সোমবারের সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসা এবং ভাড়াকে কেন্দ্র করে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এলে আবারও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বচসা হয়। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের পর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দোকানপাট ও পুলিশ বক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।