
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) আট দেশের কূটনীতিকদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় গুলশান-২-এ ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি গঠিত পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থা ও নির্বাচনের বিষয়ে দেশের মানুষ যেভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো একইভাবে নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই অংশ হিসেবে ইইউ দেখছে, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা কী? মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা কাজ করছে দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে সেটার ওপর তো তাদের স্বাভাবিকভাবে একটা দৃষ্টি আছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকে এই বৈঠক।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে, এখানে যে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। এই প্রেক্ষাপটেই তো আলোচনা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট থাকার কারণেই তো এসব আলোচনা চলছে। আগামী নির্বাচনে যদি দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ যে সংকটের দিকে যাবে এই শঙ্কা তো দেশের ভেতরে যেভাবে কাজ করছে, দেশের বাইরেও কাজ করছে। এই শঙ্কা থেকেই তারা জানতে চেয়েছেন যে, কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, কীভাবে এটাকে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করা যায়। সবার উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশের মানুষের যে চিন্তা যে এটাকে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, নির্বাচিত সরকার হবে।’
‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান কি আপনারা পরিষ্কার করেছেন কি না?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সেটা আমরা খোলাখুলিভাবে বলেছি।’ বিষয়গুলো নিয়ে ইইউ কী মনে করে জানতে চাইলে খসরু বলেন, ‘তারা কী মনে করেন সেটা তারাই বলতে পারবে।’
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিষয় নিয়ে আলোচনায় উঠেছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলে আমীর খসরু ছাড়াও অংশ নেন সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচি শুরু হয়। ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। সবশেষ গত শনিবার মানববন্ধন করেছে দলটি। আগামী ১৮ মার্চ সারা দেশে মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
নভেম্বরের ১৩ তারিখে অ্যাডিলেডে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় বাংলাদেশেই প্রথম বিশ ওভারের সংস্করণের সিরিজ খেলতে পা রাখা ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপ জয়টা ছিল ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের প্রামাণ্য দলিল। অন্যদিকে একই আসরে শুধুই জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জয় পাওয়াটা ছিল বাংলাদেশের জন্যও সতর্কবার্তা। মাস চারেকের ব্যবধানে দুই দলের পুরোই বিপ্রতীপ অবস্থান! দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কাছে ৪ উইকেটের হার থেকে ইংল্যান্ড বুঝেছে যে স্পিনসহায়ক উইকেটে খেলার কৌশলটা আলাদা আর বাংলাদেশ পেয়েছে ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর আত্মবিশ্বাস।
দুই দেশের টি-টোয়েন্টিতে সাফল্যের ব্যবধান এতটাই বেশি যে, কোনো তুলনাই চলে না। ইংল্যান্ড দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তিনবারের ফাইনালিস্ট। অন্যদিকে বাংলাদেশ কখনো গ্রুপ পর্বই ডিঙ্গাতে পারেনি, এখন পর্যন্ত মূল পর্বে জয়ই মাত্র তিনটি। সেই ইংল্যান্ড দলকেই যখন বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে দেয়, তখন প্রেস বক্সে জনা পাঁচেক ব্রিটিশ সাংবাদিকের চোখে রাজ্যের বিস্ময়। সংবাদ সম্মেলনে আসা জস বাটলার ও মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে তাদের একটাই প্রশ্ন; ইংল্যান্ড কি খানিকটা হালকাভাবেই নিয়েছিল বাংলাদেশকে?
অবশ্য ম্যাচের পরিস্থিতি সেই আভাস দেয় না বরং জানান দেয় ইংল্যান্ড তাদের স্বভাবসুলভ ক্রিকেটটাই খেলতে চেয়েছিল। টস জিতে সাকিব বোলিং নেন, ইংল্যান্ড পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ৫০ রান। সপ্তম ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এসে নিজের বলে নিজেই নেন ফিল সল্টের ক্যাচ। ঠিক পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড বাটলার। ওয়ানডাউনে নামা মইন আলি মিরাজের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন পরের ওভারেই। নিয়মিত উইকেট হারানোর এ চাপটা ধীর করে দেয় রানের চাকা, এ বৃত্ত থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের মেরুদ-টা ভেঙেছেন মিরাজ; এক ওভারে দুই বলের ব্যবধানে তুলে নিয়েছেন স্যাম কারেন আর ক্রিস ওকসের উইকেট। দুজনই স্টাম্পড, লিটনের হাতে। পরের ওভারে মিরাজের শিকার ক্রিস জর্ডানও। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। সঙ্গে তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সাকিব ও হাসান একটি করে উইকেট নিলে মাত্র ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। মোস্তাফিজ ইনিংসের শেষ ওভারে নিজে উইকেট নিয়েছেন, লিটন দাসের সহায়তায় রানআউট করেছেন দুজন। লিটন আগে দুটি স্টাম্পিংও করেন।
জয়ের জন্য ১২০ বলে বাংলাদেশের চাই ১১৮ রান। এমন আপাত সহজ সমীকরণটাও কঠিন হয়ে গেল জোফরা আর্চারের সামনে। কাল বেশ জোরে বল করেছেন আর্চার, আফিফ হোসেনকে বোল্ড করেছেন যে ডেলিভারিতে তাতে বলের আঘাতে বেলস ছিটকে গিয়ে পড়েছে বাউন্ডারি লাইনের কাছে। লিটন ও রনি তালুকদার দুজনই আউট হয়েছেন ৯ রান করে, তৌহিদ হৃদয় করেন ১৭ রান। সাকিব নিজে আউট হয়েছেন তৃতীয় বলে, কোনো রান না করেই। ভরসা যে নাজমুল হোসেন শান্ত আর মিরাজ, ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সহঅধিনায়ক ও অধিনায়ক। তাদের ৩২ বলে ৪১ রানের জুটিটায় জয় নাগালের ভেতর আসে বাংলাদেশের। জয়ের খুব কাছে দলকে রেখে ২০ রানে আউট হয়ে যান মিরাজ, শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেনও টিকতে পারেননি। শান্ত একটা দিক আগলে ছিলেন ঠিকই, তবে শেষটা ব্যাটসম্যান তাসকিনের। ক্রিস জর্ডানের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুই চার মেরে তাসকিন নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের জয়। তাতে ২-০-তে নিশ্চিত হয়েছে সিরিজও। এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করাটাই যে মিস্টার হোয়াইট সিরিজে বাংলাদেশের লক্ষ্য, তা ঘোষণা করে দিয়েছেন ম্যাচসেরা মিরাজ, ‘আমরাই এখন ভালো দল। চেষ্টা থাকবে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার।’
জয়ী দলটার নাম বাংলাদেশ হলেই সবাই খুশি আর সেই জয় যদি হয় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে তখন জয়ের আনন্দ আরও বেড়ে যায়! কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগই মেলে কালেভদ্রে, তাই তাদের হারানোর আনন্দটাও হয় বেশি।
ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মিরাজ, বল হাতে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ২০ রানের ইনিংস। সিরিজের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে একাদশের বাইরে থাকা মিরাজ কাল সুযোগ পেয়েই করেছেন বাজিমাত। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ৭ উইকেট নেওয়া মিরাজকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেতে লেগে গেল আরও সাত বছর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটাই টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ, মিরাজ খেললেন প্রথমবার এবং এবারও ম্যাচসেরা। এ অলরাউন্ডার বললেন, বড় দলের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই বলেই জয়ের আনন্দটা বেশি, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এই প্রথম আমরা ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জিতেছি, তাও টি-টোয়েন্টি। ওরা তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়ে নিজেদের কাছে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা, ওদের সঙ্গে আমাদের খেলা বেশি হয় না। খেলার তেমন সুযোগও পাই না। ২০ বছরে মনে হয় ১০টা টি-টোয়েন্টিও খেলিনি ওদের সঙ্গে (এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে মোট তিনটি)। এটাই প্রথম সিরিজ ছিল। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া, যেহেতু আমরা সিরিজটা জিতেছি।’
চট্টগ্রামে আগের ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি, ঢাকায় শামীম হোসেনকে বসিয়ে দলে নেওয়া হয় মিরাজকে। একাদশে জায়গা না পাওয়া ও ফেরা নিয়ে মিরাজ বললেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর ভরসা করে আমাকে এ ম্যাচে খেলিয়েছে। মনে করেছে, আমি এ ম্যাচে খেললে দলকে কিছু একটা দিতে পারব, বিশেষ করে এই উইকেটে। তারা যে আমাকে বিশ্বাস করেছিল, তার প্রতিদান দিতে পেরে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে।’
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের পর ইংল্যান্ডও টি-টোয়েন্টিতে ধরাশায়ী বাংলাদেশের কাছে। এবারই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তাই মিরাজের আনন্দটা বেড়েছে বহুগুণে, ‘অবশ্যই প্রতিটি দেশের সঙ্গে জিতলে অনেক ভালো লাগে। নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না নিউজিল্যান্ডকে হারালে, অস্ট্রেলিয়াকে হারালে ভালো লাগবে... অবশ্যই প্রতিটি দলকে হারালেই আমাদের অনুভূতি একইরকম থাকে। কারণ দিন শেষে, জিতছে কে? বাংলাদেশ। আমরা সবাই জিতেছি, এটা কিন্তু একটা আনন্দের বিষয়। আজকে দেখেন সবাই কিন্তু অনেক খুশি। আপনারা যারা আছেন খুশি, আমরা খুশি, ম্যানেজমেন্ট খুশি, সারা বাংলাদেশের মানুষ; সবাই খুশি। কারণ আমরা বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছি। আমরা যদি জিতি, বাংলাদেশই জেতে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতলে বাংলাদেশ জেতে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেও বাংলাদেশ জেতে। অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে হলে আরও ভালো লাগে।’
বাংলাদেশের জয়ের উইকেটের ভূমিকার চেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ভালো বোলিংকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন মিরাজ, ‘ওরা (ইংল্যান্ড) কিন্তু শুরুটা খুব ভালো করেছিল। প্রথম ছয় ওভারে ৫০ রানে ১ উইকেট ছিল। সাকিব ভাই একটা ব্রেকথ্রু দিল, এপাশ থেকে হাসান মাহমুদ দিল। তারপর আমি টানা দুই উইকেট নিলাম। এটা ওদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। জুটি না হলে দলের জন্য রান তোলাটা কঠিন হয়ে যায়। ওরা এখানেই ভুল করেছে। ওরা যদি ভুল না করত, তাহলে ১৬০-এর বেশি রান হতো যেভাবে শুরুটা হয়েছিল। আমাদের বোলারদের অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের বোলাররা খুব ভালো করেছে। আপনি যতই বলেন, উইকেট খারাপ, খারাপ, অনেক টার্ন করছিল। কিন্তু এমন ছিল না যে খেলা যাচ্ছিল না। ওরা ভালো শুরু করেছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের বোলাররা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
সিরিজ জয়ের পর মিরাজদের লক্ষ্য সিরিজে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে ব্রিটিশ এক সাংবাদিককে কথাটা শুনিয়ে দিয়েছেন মিরাজ, করেননি কোনো রাখঢাক। একই সঙ্গে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো দল। অতীত যাই বলুক, বর্তমান কিন্তু মিরাজেরই পক্ষে!
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সততার শক্তি, বস্তুনিষ্ঠতার প্রতিচ্ছবি আর দায়িত্বশীলতার প্রতীক হয়ে এগিয়ে যাবে দেশ রূপান্তর এমন প্রত্যাশা সুধীজনদের। সময়ের এই পাঠকপ্রিয় পত্রিকার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন তারা। একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে পত্রিকাটি ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করেন। গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানের ‘ওয়েস্টিন’ হোটেলের বলরুমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আনন্দঘন সন্ধ্যা।
পাঠকের ভালোবাসা ও আস্থায় দেশ রূপান্তর চার পেরিয়ে পাঁচ-এ পা রেখেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাড়া দিয়ে এসেছিলেন সরকারের মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিত্রতারকা, সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নানা পেশার মানুষ। অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয় দেশ রূপান্তর পরিবার। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত অমিত হাবিবের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়।
দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও ডিজিটাল বিভাগের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান পলাশের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় এ মিলনমেলা শুধুই একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। অতিথিদের একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে ভালোবাসার বন্ধন।
শুরু থেকেই মঞ্চে ছিলেন রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল, রূপায়ণ গ্রুপের ডিরেক্টর রোকেয়া বেগম নাসিমা, বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, কুয়েত অ্যাম্বাসাডর গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান ওয়ালিদ মুকাই আলী, রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নওরিন জাহান মিতুল, রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাবরিনা রশীদ নোভা ও দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন। তারা আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন।
‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’ এমন সেøাগান ধারণ করে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে দেশ রূপান্তর। যখন কি না ছাপা পত্রিকা একরকম চ্যালেঞ্জের মুখে। অনলাইন পোর্টালে অবাধ তথ্যপ্রবাহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাসছে ততক্ষণাৎ সংবাদ, ইউটিউবে চলছে নিউজের ভিডিও কনটেন্ট। এমন সময়ে ছাপা কাগজের পত্রিকা কতটুকু টিকবে এ নিয়ে ছিল শঙ্কাও। কিন্তু সব সংবাদ যে সংবাদ নয়, সংবাদ পরিবেশনে যে লাগে বস্তুনিষ্ঠতা, দায়িত্বশীলতা। এই প্রত্যয় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে দেশ রূপান্তর। কিছুদিনের মধ্যে সব শঙ্কা ছাপিয়ে পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে পত্রিকাটি। দেশের অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা হিসেবে সব শ্রেণির পাঠকের মন জয় করে। আর এর মূল কারিগর ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত অমিত হাবিব। তার আদর্শ ও চিন্তা অনুসরণ করে দেশ রূপান্তর এখনো এগিয়ে যাচ্ছে।
পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা, নতুনত্ব, সব শ্রেণির পাঠকের রুচির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন পাঠকের দোরগোড়ায় হাজির হয় দেশ রূপান্তর। পাঠকের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের যে একপ্রকার খরা চলছে তা অনেকটাই পূরণ করে চলেছে দেশ রূপান্তর। গতকাল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মুখেও ছিল এ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।
চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মঞ্চে কেক কাটেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল এ সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুনকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সাংবাদিকরা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করবে, নতুন প্রজন্মকে তুলে ধরবে। এককথায় দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশ রূপান্তরের কাছেও আমাদের সেই প্রত্যাশা রইল। এগিয়ে যাক দেশ রূপান্তর।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ, ন্যায় ও সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশ রূপান্তর বেশ জনপ্রিয় পত্রিকা হয়ে উঠছে। এমনভাবে তারা খবর প্রকাশ করে তাতে অচিরেই পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশ রূপান্তর একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। যখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখন বালিশ ওঠাতে কী পরিমাণ খরচ হয় এ পত্রিকায় এমন একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছিলাম। ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তাদের সবাইকে দুদকে পাঠানো হয়। এটি সম্ভব হয়েছিল শুধু দেশ রূপান্তরের জন্য। এতেই বোঝা যায় এই পত্রিকাটি কেমন।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘বয়সে নবীন হলেও পরিপক্বতার জায়গায় বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে দেশ রূপান্তর। বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন এবং দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের জন্য যে ভূমিকা রাখা দরকার তা দেশ রূপান্তর রাখবে সেই কামনা করি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হলো সমাজের অসংগতিগুলো তুলে ধরে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশ করা। সেই কাজটি নিরন্তর করে যাচ্ছে দেশ রূপান্তর। এখন যতই অনলাইন নিয়ে কথা উঠুক না কেন, প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব মোটেও কমেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব রয়েছে এবং সেটি যেন নেতিবাচক না হয় সেটিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই। গণমাধ্যম সেখানে এই ব্র্যান্ডিংয়ের কাজটি করতে পারে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দেশ রূপান্তর আলোড়ন তুলেছে। বর্তমানে পত্রিকাটি এখন আরও বেশি মসৃণ ও সুন্দর হচ্ছে। আমরা আশা করি পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশেনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দিচ্ছে দেশ রূপান্তর। খবরের পেছনের খবর তুলে ধরছে পত্রিকাটি। সংবাদ ছাড়াও পাঠকের যে নানারকম চাহিদা থাকে, সেটিও পূরণ করে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে দেশ রূপান্তর।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দেশ রূপান্তরের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপ, এর চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘রূপায়ণ গ্রুপ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, আমি দোয়া করি তারা আরও সামনে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি দেশ রূপান্তর পত্রিকা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘দেশ রূপান্তর অল্প সময়ের মধ্যে সুনামের সঙ্গে পাঠকের চাহিদা পূরণ করছে। আমরা আশা করি এ পত্রিকা মানুষের কথা বলবে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে থাকবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দেশ রূপান্তর পাঁচে পা রেখেছে এ কথাটি না বলে আমি বলতে চাই পাঁচে পাঁচ পেয়েছে। আশা করি তাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দেশ রূপান্তরের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে বলেন, ‘আমি এ পত্রিকার সাফল্য কামনা করি।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘দেশ রূপান্তর একসময় সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে সেই প্রত্যাশা করি। সে জন্য সবাইকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষায় পত্রিকাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘পাঠকের কাছে সঠিক খবর পৌঁছে দিতে অবদান রাখছে দেশ রূপান্তর। আমি আশা করি ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে এ পত্রিকা।’
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি শুধু এখানে এসেছি বর্তমানে যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে মানসম্মত সাংবাদিকতা করে তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য। সেরকম একটি পত্রিকা হলো দেশ রূপান্তর। এই পত্রিকার প্রতিবেদন যখন দেখি তখন নিজেও উৎসাহবোধ করি।’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘দেশ এখন রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই রূপান্তরকে তুলে ধরবে দেশ রূপান্তর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ রূপান্তর দেশের কল্যাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, সেই প্রত্যাশা করি।’
দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে গত পাঁচ বছরে দেশ রূপান্তর যে অবস্থান তৈরি করেছে, তাতে ভবিষ্যতে এ পত্রিকাটি আরও বিস্মৃত ও আরও পাঠকপ্রিয় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দেশ ও সমাজের উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় দেশ রূপান্তর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার মাধ্যমে স্মার্ট বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, ‘আজকের এ পরিবেশ দেখে আমি অভিভূত। দেশ রূপান্তরের সাফল্য কামনা করছি।’
দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল তার বক্তব্যের শুরুতেই দেশ রূপান্তরের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকারসহ এর সঙ্গে যুক্ত সব সংবাদকর্মীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বিগত চার বছরে আপনাদের আন্তরিকতার কারণে দেশ রূপান্তর এখন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দেশ রূপান্তর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সততা নিয়ে কখনো আপস করেনি, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ রূপান্তরকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমিত হাবিব। তার দেখানো পথ অনুসরণ করেই এ পত্রিকাটি এখনো পাঠক মহলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।’ মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, ‘বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপায়ণ গ্রুপ দেশ রূপান্তরের কোনো খবর এবং সংবাদকর্মীদের ওপর কোনোরকম খবরদারি করেনি। আমাদের প্রত্যাশা দেশ রূপান্তর আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, ‘ছাপা পত্রিকা টিকবে কি না এমন একটি চ্যালেঞ্জের সময়ে দেশ রূপান্তর প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের মৃত্যুর পর সেই চ্যালেঞ্জটি আরও বেড়ে যায়। একটা কঠিন পরিস্থিতিতে আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। অমিতদার শূন্যতা পূরণের চেষ্টা আমরা করছি। পাশাপাশি দেশ রূপান্তর পত্রিকাকে পাঠকমহলে আরও জনপ্রিয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এর অনেকটাই পেরেছে দেশ রূপান্তর।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, গণমাধ্যমের জন্য একটি কঠিন সময় যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দাপটের এ সময়ে কোনটা আসল খবর, কোনটা নয় এরকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, ছাপা পত্রিকাতে এখনো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আর সেই বিশ্বাসকে আরও সামনে নিতেই দেশ রূপান্তরের এ প্রচেষ্টা।’ এ সময় মোস্তফা মামুন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার, রূপায়ণ গ্রুপের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান প্রমুখ।
দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, ঢাকা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপির প্রথম সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক শুভেচ্ছা জানান ফুল দিয়ে।
শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দীন, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন-অর-রশীদ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি মনজুর রহমান, উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান, গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ, র্যাবের মহাপরিচালকের পক্ষে মেজর আবদুল হাদি প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত চন্দ, ইউজিসির পরিচালক শামসুল আরেফিন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল বারী মজুমদার, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি জনসংযোগ সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত। আরও এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল। এ ছাড়া সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় কায়সার হামিদ, জনিসহ অন্যান্যরা এসেছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, ডিপিডিসির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল আলিম, এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক মাহবুব ইমাম মোরশেদ, প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হাসান খান, উপব্যবস্থাপক আমির হোসেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনের সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান আবু মিয়া আকন্দ তুহিন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির পরিচালক মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও কমিউনিকেশনসের প্রধান মোহাম্মদ তারেক উদ্দীন, দি ইবনে সিনহা ট্রাস্টের সহকারী ব্যবস্থাপক আল ইমরান, প্রবাসী পল্লী গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শিকদার এম আরিফুল ইসলাম, হামদর্দ পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ, বিটিসিএলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী তাহেরুল ইসলাম, পারটেক্স গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. নাহিদ ইউসুফ, কনকর্ড গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দীন ভূঁইয়া প্রমুখ।
শোবিজ তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নুসরাত ফারিয়া, ফাহমিদা নবী, আজিজুল হাকিম, নিপুণ আক্তার, আঁখি আলমগীর, বাপ্পি চৌধুরী, সাইমন সাদিক, রোশান, দেবাশিষ বিশ্বাস, এস ডি রুবেল, নাদের চৌধুরী, নিরব, স্পর্শিয়া, বেলাল খান, পুতুল, বুলবুল টুম্পা, ফারিয়া শাহরিন, বিপ্লব সাহা, আবদুল আজিজ, সৈকত নাসির প্রমুখ।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে অথবা কাগজপত্র জাল করে ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং হুন্ডিতে নিজেরা অর্থ পাচার করেছে। অন্যকেও একইভাবে অর্থ পাচার করতে সহযোগিতা করেছে। অর্থ পাচারে জড়িত এমন নতুন ৫২৮ ব্যক্তির নামের তালিকা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতিমধ্যে শতাধিক ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য তালাশের কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দেশ রূপান্তরকে জানায়, হুন্ডিতে মানি এক্সেচেঞ্জারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। অন্যদিকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থের একাংশ দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকের চালান আনা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কুরিয়ার সার্ভিস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ইমিগ্রেশনের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অর্থ পাচার করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচারে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাচারকারীদের সহযোগিতা করেছেন ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বেশির ভাগ অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, নেপালসহ আরও কয়েকটি দেশে।
পুলিশ সূত্র জানায়, অর্থ পাচারে জড়িত এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিআইডি আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশনও তৎপর। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ট্রান্সফারপ্রাইসিং সেল এবং ট্যাক্সেস অ্যান্ড লিগ্যাল এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা অর্থ পাচার রোধে একযোগে কাজ করছে।
অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে যারা অর্থ পাচার করছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা নিয়ে কাজ চলছে।’
সিআইডির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত কাউকে কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কয়েক শ ঘটনার তদন্ত চলছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআইডি ইতিমধ্যে অর্থ পাচারে জড়িত ৫২৮ জনের নামের তালিকা করেছে। তাদের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা অঞ্চলের লোকই বেশি। এর আগে পুলিশের আরেকটি সংস্থা অর্থ পাচারকারী শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা দুদকে পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন অনেকেই। এ জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় ৫২৮ জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। প্রয়োজনে তাদের ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। অনেকে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, রেস্তোরাঁ, দোকান বা অন্য সম্পদ কিনেছেন। অবশ্য তালিকার কারও নাম জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জারের মাধ্যমে পাচার : অর্থ পাচারকারীদের নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি মানি এক্সচেঞ্জার যে দেশে অর্থ পাঠায়, সেই দেশে নিজস্ব প্রতিনিধি রাখে। প্রতিনিধি বাংলাদেশি বা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক হতে পারে। এ দেশ থেকে অনলাইন, ওয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টেলিগ্রামে সাংকেতিকভাবে যোগাযোগ করে অর্থ পাঠানো হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে এমন এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর বেশিও হতে পারে বলে ধারণা সিআইডির। সম্প্রতি সিআইডির অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির কার্যালয় পাওয়া গেছে। এই অভিযানে ১৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। যে দুটির কার্যালয় পাওয়া যায়নি সেগুলো ‘প্রতারণামূলক বা ফেরারি’ বলে উল্লেখ করেছে সিআইডি। সংস্থাটি জানায়, তারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ করেছে। ফোনে ফোনে যোগাযোগ করেও তারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা লেনদেন করেছে। এ ছাড়া তারা হুন্ডিতে অর্থ পাচার করেছে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন ৭৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এ হিসাবে সংখ্যাটি মাসে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৫০০ কোটি। এই পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে বলেই ধারণা সংস্থাটির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে অনুমোদিত মানি একচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান দুই শর বেশি। বিএফআইইউর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে সিআইডি।
মিথ্যা ঘোষণায় অর্থ পাচার : বাস্তবে অস্তিত্ব নেই অথচ কাগজে-কলমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার করা হয়েছে। তবে পাচার করা অর্থের একাংশ দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকের চালান এনে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের নাম ব্যবহার করেও অর্থ পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমাদানিকালে কোকেনের বড় চালান আটকের নজির রয়েছে।
এনবিআরের সদস্য এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আনা অনেক চালান আটক করা হয়েছে। জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
অর্থ পাচারে জড়িত নতুন করে যে ৫২৮ ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে, তাদের অনেকে জাল কাগজপত্র তৈরি করে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিথ্যা তথ্যে অর্থ পাচারের পুরো বিষয়টি করে থাকে। এরাই বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করানো থেকে ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকে। এর বেশির ভাগ কাজের প্রস্তাব এনে দেয় অন্য কেউ। এই ওপরের ব্যক্তিটি কে, তা তালিকার ব্যক্তিরা অনেক সময় জানে না। তবে সরাসরিও অনেক কাজের প্রস্তাব আসে।
অর্থ পাচার রোধে ২০০২ সালে প্রথম মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয়। এই আইনে ২৭ ধরনের অপরাধ করলে তা আমলে নেবে তদন্তকারী সংস্থা। পুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত করে।
পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআইডি আট বছরে ২৪৭টি মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা তদন্ত করেছে। মামলা করেছে ৪৭৭টি।
পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস হলে অর্থ পাচারে জড়িত অভিযোগে দেশের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তিসহ ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ২০২০ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়।
পাচার করা অর্থে কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে তোলার তথ্যও আসে সংবাদমাধ্যমে। গত বছর সরকার কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের দ্বৈত কর চুক্তি হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে ওই সব দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা মিলবে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট টেকনাফের ইয়াবা কারবারি নূরুল ইসলাম ভুট্টু, সৈয়দ আলম, নূরুল আলম নামের তিন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি মানি লন্ডারিং মামলা হয়। এগুলোই দেশে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রথম মানি লন্ডারিং মামলা। এর মধ্যে ভুট্টু ও তার ৪৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু মামলা আছে তদন্ত করতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় প্রভাবশালীরা তদন্ত বাধাগ্রস্ত করে।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আইনের প্রয়োগ এবং কঠোর নজরদারি ছাড়া এটা কমানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার হচ্ছে। হুন্ডিতে পাচারকারীরা আন্তর্জাতিকভাবে সংঘবদ্ধ।
শিক্ষার্থীদের ওপর এলাকাবাসীর হামলার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলকারী শিক্ষার্থীরা ১১টার দিকে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ছাত্রলীগ নেতাদের সহায়তায় বেলা ২টার দিকে উপাচার্য ভবনে ফেরেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টা থেকে শুরু করে দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। তারা আগুন জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করতে থাকেন। বেলা ২টার দিকে তারা হলে ফিরে যান। তবে সোয়া ২টার দিকে আবারও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে গেলেও সাড়ে ৫টার দিকে আবারও দলে দলে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবরোধ চলছিল। এ ছাড়া রাত ৮টার দিকে আরেক দল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে রেলপথে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকালের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত রাবার বুলেট ছোড়ার প্রতিবাদে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশাসন ভবনে তালা লাগান তারা। এ সময় প্রশাসন ভবনে অবস্থানরত অনেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে এসে সমাবেশে রূপ নেয়। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন।
একপর্যায়ে আলোচনায় বসতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। তবে তারা ঘটনাস্থল বিনোদপুরে আলোচনায় বসতে চান। কিন্তু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে বসতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হন। তখন উপাচার্য শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের তোপের মুখে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে রক্ষায় মানববঢাল সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রাধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছনার শিকার হন। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও শিক্ষকরা উপাচার্যের সামনে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহায়তায় নিরাপদে নিজ বাসভবনে ফেরেন উপাচার্য। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীদের দাবি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, উপাচার্যকে ঘটনার জবাব দিতে হবে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকের ওপর হামলা : আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় লাইভ চলাকালে চ্যানেল ২৪-এর রিপোর্টার আবরার শাঈর ও ক্যামেরাপারসন লেলিনের ওপর চড়াও হন শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের ধাওয়া করে মারধর ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র রায়ের ওপর চড়াও হন তারা। এ সময় এগিয়ে এলে আরও কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ১ ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা উপাচার্যকে নিরাপত্তা দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করলে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে চড়-থাপ্পড় দেন।
রামেকে ৮৭ শিক্ষার্থী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৮৭ শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজনের আঘাত গুরুতর। আর একজন গত শনিবার রাত থেকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।
শিক্ষক সমিতির নিন্দা : শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা ও পুলিশের অতর্কিত রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ নিন্দা জানান।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ : সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চার দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে যায়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভিসিকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, চিকিৎসারত শিক্ষার্থীদের সব ব্যয় বহন করা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা : শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তসলিম আলী (৪৫) খোঁজাপুর এলাকার মৃত মতলেব শেখের ছেলে।
আমরণ অনশনে আট শিক্ষার্থী : সাত দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী। বিকেল ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন তারা। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, সোহাইব খান ও ফয়সাল আহমেদ, দর্শন বিভাগের শাহাদাৎ হোসেন ও রাবেয়া মুহিব, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের রিমি আক্তার ও রাবিয়া জান্নাত রাইসা এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত হাওলাদার।
সার্বিক বিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয়দের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ওই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটি তারা করতে পারেনি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়ার তালিকা দিলে আমি সেটি নিয়ে কাজ করব। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ চলমান রয়েছে।’
বর্তমান সময়ে একটি খবর অনেক শেয়ার হতে দেখেছি ফেসবুকে। সেট হলো বিয়ে বিচ্ছেদের খবর। আধুনিক তরুণ-তরুণীরা একসঙ্গে বেশি দিন থাকতে চান না। এ মানসিকতা কেন গড়ে উঠল? এমনকি প্রেমের বিয়েও টিকছে না। এই জটিল পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা মনে পড়ল। যেমন-
‘আমাদের সোসাইটির সমস্যাটাই এখানে। আমরা সব সময় সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে চিন্তা করি। আরে বাবা প্রেমটা তো প্রেমই। প্রেমের আবার পরিণতি থাকতে হবে কেন? সম্পর্কের আগে অবশ্যই মানুষ চিন্তা ভাবনা করে সম্পর্কে জড়াবে না। কারণ এটা মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে হয়ে যায়। কারো সাথে জোর করে তো সম্পর্ক হয় না।’
কথাগুলো বলেছে কুঞ্জ। সুশ্রী, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কুঞ্জ অবশ্য বাস্তব কোনো চরিত্র নয়। একটি উপন্যাসের চরিত্র। উপন্যাসটির নাম ‘প্রেম যমুনার মাতাল হাওয়া’। এর লেখক মাহবুব নাহিদ।
কুঞ্জ বাস্তবে বিচরণ না করলেও আধুনিক সময়ের নাগরিকদের মনের এক জটিল জিজ্ঞাসাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এই যে ‘প্রেমের আবার পরিণতি থাকতে হবে কেন?’ কিংবা বিয়ের পরও প্রেম থাকে কি না-এ সংকট অনেকের বেঁচে থাকাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।
উপন্যাসেও কুঞ্জকে আমরা পাই বিপন্ন অবস্থায়। সৌহার্দ্যের সঙ্গে তার প্রেমের পর বিয়ে হলেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
আমাদের সমাজে বিয়ের পর সেপারেশনে থাকা একজন নারীকে কী যন্ত্রণা পোহাতে হয় তার উদাহরণ এই কুঞ্জ। ঘরের মা থেকে শুরু করে সমাজের নানা অংশের মানুষ তাদের জীবন বিষিয়ে তোলে।
‘বিষ’ দিয়ে শুরু হয় মাহবুব নাহিদের উপন্যাস ‘প্রেম যমুনার মাতাল হাওয়া’। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের হাসি, কষ্ট, রাগ, অভিমান নিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাসটি এগিয়ে যেতে থাকে কুঞ্জকে কেন্দ্র করে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কুঞ্জ সৌহার্দ্যের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর এক বান্ধবীর বাবার রিসোর্টে কাজের অফার পায়। তবে পরিবারের নির্দেশে একা শ্রীমঙ্গলে যাওয়া হয় না তার। বোন বৃন্তকে সঙ্গে নিতে হয়। এই বৃন্ত খুব মজার এক চরিত্র উপন্যাসে। নিজের দুষ্টু বুদ্ধি দিয়ে পরিবারের সব মুশকিল আসান করে সে।
শ্রীমঙ্গলে কুঞ্জর সঙ্গে দেখা হয় দিহানের। দিহানও মজার একটি চরিত্র। ক্ষণে ক্ষণে পাঠককে হাসাতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। দিহানের আচরণে কুঞ্জ মাঝে মাঝে রেগে যায় আবার হেসেও দেয়।
তাদের দুজনের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হওয়ার সময়ে রিসোর্টে এসে হাজির সৌহার্দ্য। উপন্যাসের শুরু থেকে যে কষ্ট কুঞ্জর মনকে আবদ্ধ করে রাখছিল, পাঠকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এখানে এসে।
এরপর এক বৃষ্টির দিনে কুঞ্জ আর সৌহার্দ্য দেখা থেকে শুরু করে প্রেমের ঘটনা জানা যায়। আধুনিক মনস্ক দুটি ব্যক্তি কত যে টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যায়! তারপর তাদের যখন সংসার হয়, যতই প্রেম থাকুক, দুজন মানুষ যখন সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকতে শুরু করে-তখন তাদের একে অপরের অন্য রূপ দেখতে পায়। যেমন সৌহার্দ্য বলে, ‘আমরা পুরুষ মানুষ ভারী অদ্ভুত এ বুঝলে। তুমি হয়তো জান না। প্রায় প্রত্যেক পুরুষের মাঝেই এক ধরনের অচেনা সত্তা বাস করে। ভয়ংকর সত্তা। অবচেতন মনে এরা ভয়ংকর কল্পনায় মেতে ওঠে। অথচ নিজেও সেটা কোনো দিন টের পায় না। তুমি সেই রূপ দেখেছ তাই তোমার কাছে আমার অপ্রকাশ্য আর কিছুই নেই। তুমি যদি শাস্তিস্বরূপ আমাকে আজীবন দূরে সরিয়ে রাখতে চাও, রাখতে পারো। কিন্তু বিশ্বাস করো কুঞ্জ, আমরা দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসি। আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারব না। অযথা এই শাস্তি নিজেকে দিও না।’
কুঞ্জও যেমন ভাবে, ‘প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে গেলো কুঞ্জ। পুরুষ মানুষ এমনও হয়! এ আবেগের নাম কি দেবে সে? তার নিজের একজন ইস্পাতের মতো কঠিন পুরুষ মানুষ আছে। সেই মানুষের সম্পূর্ণ বিপরীত এই পুরুষ মানুষটি। তার মানুষটা উদাসীন, প্রিয়তমা ও সংসারের বাইরে ভিন্ন একজন মানুষ। আর দিহান, প্রচণ্ড সংসারীমনা, প্রিয়তমাকে ভালোবেসে সর্বক্ষণ নিজের উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ধরনের একজন। জগতে কত অদ্ভুত প্রজাতির মানুষ বাস করে তা বোঝা মুশকিল।’
শেষ পর্যন্ত কুঞ্জ ভাবে, ‘ভালোবাসা এমন একটা অসহ্য বিষয়, না একেবারে ছেড়ে থাকা যায়, না পুরোপুরি নিয়ে থাকা যায়!’
একটি সরল উপন্যাসে জীবনের জটিল দিকটি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন মাহবুব নাহিদ। তার উপন্যাসে এমন একটি মেসেজ আছে যা বিয়ে বিচ্ছেদ, সম্পর্কের টানাপোড়েনের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। কী সেই মেসেজ তা অবশ্য পাঠককে পড়েই জানতে হবে।
বইটি প্রকাশ করেছে দাঁড়িকমা, প্রচ্ছদ করেছেন সাদিতউজ্জামান। ৮০ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২৫০ টাকা।
রাজধানীর বনানীর একটি ক্লাবে গোপন বৈঠক চলাকাল বিএনপির ৫৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার (১৯ মার্চ) রাতে তাদের আটক করা হয়। সোমবার (২০ মার্চ) সকালে এই তথ্য জানিয়েছেন বনানী থানার ডিউটি অফিসার এসআই সিদ্দিক।
তিনি জানান, রোববার রাতে বনানী ক্লাবে গোপন বৈঠকে রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে রাত একটার দিকে সেখানে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ৫৪ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দ বনানী ক্লাবে গোপন বৈঠক করছে বলে খবর আসে পুলিশের কাছে। পরে ক্লাবটিতে অভিযান চালানো হয়।
আটকদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনার মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাই প্রতিটি সেক্টরকে উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কারণ সরকারের একার পক্ষে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
সোমবার (২০ মার্চ) সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ১১তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার কথা বিবেচনা করে নতুন দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর যখন আমরা এলডিসি থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, আমরা কিছু সুযোগ পাব... আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন যে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর লক্ষ্য হবে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থাকায় বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আমরা খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি করতে পারতাম। আমরা এর জন্য উদ্যোগ নিতে পারি।তিনি বলেন, দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন এবং সেসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার রপ্তানি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, ভারত গ্রহণের পর, আমরা এক বছরের ভিত্তিতে নীতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্জনগুলো ধরে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সরকার ২০২৪ (২০২১-২০০৪) পর্যন্ত রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করেছে।...কিন্তু এর পর আমরা কী করব? এরই মধ্যে, আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। আমি মনে করি আগামী দিনে আমরা কী করব বা আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব তা বিবেচনা করার এটাই সঠিক সময়।
তিনি বিশ্বব্যাপী বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে অর্থনীতির জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, আমাদের সারা বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, আমাদের রপ্তানি ঝুড়িতে নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য আমরা একটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি-২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে।
প্রধানমন্ত্রী আইসিটি এবং ডিজিটাল ডিভাইস, আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও মাঝারি ওজনের শিল্প, মোটরযান এবং ইলেকট্রনিক মোটর গাড়ির কথা উল্লেখ করে পণ্য বৈচিত্র্যের কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভেতর বিভক্তি আবারও প্রকট হয়ে উঠছে। আজ সোমবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে সেই বিভাজন ও দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এরশাদের স্ত্রী, পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং এরশাদের ভাই ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের আলাদা কর্মসূচি নিয়েছেন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করছেন দুপক্ষের নেতাকর্মীরা। কেউ কাউকে আমন্ত্রণ জানাননি। এমনকি যৌথভাবে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালনে কোনো উদ্যোগও নেয়নি কোনোপক্ষ।
জাপায় অভ্যন্তরীণ বিভাজন এতটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দুপক্ষের শীর্ষনেতারা পরস্পরকে দলের ‘কেউ না’ বলেও মন্তব্য করেছেন। জিএম কাদেরপন্থিরা বলছেন, তাদের অংশই পার্টির মূল। রওশন এরশাদের সঙ্গে যারা আছেন, তারা পার্টির কেউ না। আবার রওশনপন্থিদের অভিমত, পার্টির মূলধারার নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে আছেন। সুতরাং তারাই জাপার মূল অংশ। এই পক্ষ জিএম কাদেরপন্থিদের ‘প্রতারক’ বলেও মন্তব্য করেছেন ও কাদেরপন্থিরা তাদের ‘কেউ না’ বলে জানিয়েছেন।
৯৪তম জন্মদিন আজ : আজ পালিত হচ্ছে এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের ‘লাল দালান’ বাড়িখ্যাত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান ১৯৫২ সালে। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালে তার প্রতিষ্ঠিত দল জাপার প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এরপর গ্রেপ্তার হয়ে ছয় বছর কারারুদ্ধ ছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক কীর্তি গড়েছেন এরশাদ। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালীন ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে জয়ী হন। এরশাদের হাতে গড়া জাপা এখন সংসদে প্রধান বিরোধী দল। দশম জাতীয় সংসদেও প্রধান বিরোধী দল ছিল জাপা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এরশাদ।
পরস্পরকে অস্বীকার দুপক্ষের : পৃথকভাবে জন্মদিন পালনের ব্যাপারে জিএম কাদেরপন্থি জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পার্টির পক্ষ থেকে আমরা জন্মদিন পালন করছি। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল (আজ সোমবার) জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্যারের (এরশাদ) প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও বিকেল ৩টায় বনানী কার্যালয়ে কেক কাটব। আর স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে ২২ মার্চ আলোচনা সভা হবে। সেখানে কাদের সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন অতিথি অংশ নেবেন।’
এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে রওশনপন্থিদের কর্মসূচির ব্যাপারে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডামের পক্ষ থেকে তার বাসভবনে পারিবারিকভাবে মিলাদের আয়োজন করেছে। তারা একসঙ্গে জন্মদিন পালনের কোনো আলাপ-আলোচনা জাপার কারও সঙ্গে, বিশেষ করে আমার সঙ্গে করেনি।’
পৃথক এ জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ব্যাপারে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পার্টির বাইরে কেউ কিছু বললে আমাদের বলার কিছু নেই। তারা পার্টির কেউ কিছু না।’
কিন্তু রওশনপন্থি জাপার নেতা ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু স্যার জীবিত নেই, ম্যাডাম জীবিত আছেন, তাই তার বাসায় একটা কোরআন তেলাওয়াত দোয়ার আয়োজন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছি। জিএম কাদের আমাদের কোনোদিন ডাকেন না। সুতরাং আমরা তো স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালন করব।’
কাদেরপন্থি জাপার ব্যাপারে এ নেতা বলেন, ‘পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়েছিল জানুয়ারিতে। ওই অনুষ্ঠানটা একসঙ্গে করার কথা ছিল। এর জন্য একটা যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানে দেখা গেল, একটা প্রতারণা করে জিএম কাদেররা শুধু ম্যাডামকে নিয়ে গেছেন। আমাদের মঞ্চে আনুপাতিক হারে আসন দেবে বা কোথায় বসবে, সেটা আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলোর কিছুই করা হয়নি। তাদের এখন আমরা প্রতারক হিসেবে জানি। ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হবে কি না, সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’
দুপক্ষের পৃথক কর্মসূচি : জন্মদিন উপলক্ষে জিএম কাদেরপন্থি জাপা সকাল ১০টায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার বিকেল ৩টায় কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে আলোচনা সভা রয়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন জিএম কাদের। জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি-০২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির তথ্য জানান।
অন্যদিকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আজ বেলা ১১টায় গুলশানের ৬৭ নম্বর সড়কের ৪/১-এ বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া ও কেক কাটার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে এবং এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ এমপিসহ পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া স্বাধানীতা দিবস উপলক্ষে ২৭ মার্চ আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে : গত বছর নভেম্বরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দলের ভেতর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগও নিতে দেখা গেছে এরশাদের ছোটভাই ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে। এরই অংশ হিসেবে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার নেতারা রওশন এরশাদের সঙ্গে কয়েক দফা দেখা করেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দল পরিচালনায় বেশ কিছু অঙ্গীকারও করেন।
ঐক্যের অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে ১ জানুয়ারি জাপার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়। প্রায় চার বছর পর ওই অনুষ্ঠানে একমঞ্চে পাশাপাশি বসেন দেবর-ভাবি কাদের-রওশন। এমনকি টানা ১১ মাস পর সেদিন পার্টির কোনো অনুষ্ঠানে সশরীরেও যোগ দেন রওশন এরশাদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দলের এক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে মঞ্চে ছিলেন এ দুই নেতা।
জাপা নেতরা জানান, জানুয়ারির পর দুপক্ষের মধ্যে আর কোনো ধরনের সমঝোতা বা ঐক্যের আভাস পাওয়া যায়নি। বরং জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে রওশনপন্থি দুই নেতার মামলার কারণে দেবর-ভাবির সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। সেই অবনতির সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে দেখা দেয় এরশাদের জন্মদিন।
এ ব্যাপারে রওশনপন্থি নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানান, জিএম কাদের গত ৬ মার্চ এরশাদের জন্মদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সেই কর্মসূচির ব্যাপারে রওশন এরশাদকে কিছুই বলেননি। জিএম কাদের ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করতে রাজি না। উনি বিভাজন রেখেই যাচ্ছেন।
দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হচ্ছে জানিয়ে রওশনপন্থি শীর্ষ নেতারা জানান, রওশনপন্থি জাপা ইতিমধ্যেই দেশের ৫২ জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। এসব জেলায় যারা পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন ও এরশাদের সময় থেকে পার্টির সঙ্গে আছেন, জিএম কাদের তাদের বাদ দিয়ে নিজের লোকজনদের নিয়ে কমিটি করেছেন। মূলধারার লোকজনদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করছেন। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ ১৫ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহ্বায়ক কমিটির তথ্য জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, রওশন এরশাদ আবারও জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোজার পর থেকে সম্মেলনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি সম্মেলন স্থগিত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারেন। সম্মেলন হবে।
জিএম কাদেরের মামলার ব্যাপারে রওশনপন্থি নেতারা বলেন, আমরাও চাই মামলা থেকে জিএম কাদের অব্যাহতি পাক। সে জন্য আমরা নতুন করে আপিল করিনি। আপিল করেও ঝুলিয়ে রেখেছি। উনি যদি সোজা পথে আসেন তাহলে মামলাটা শেষ করব। কিন্তু উনি সেটা চাইছেন না বলে আমরাও সময়ক্ষেপণ করছি। আমরা ওনাকে সুযোগ দিচ্ছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) হল দখল, উন্নয়নকাজের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রী ও সাংবাদিক হেনস্তাসহ নানা বিশৃঙ্খলায় অছাত্র ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নাম আসছে বারবার। সেই সব অছাত্র, বহিষ্কৃত ও বহিরাগতদের ক্যাস্পাস ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তারা এখনো বহাল।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ মার্চের মধ্যে ছাত্রত্বহীন ও বহিরাগতদের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি; বরং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে রাতে অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত রাতে অভিযান চালানো শুরু করেছি। ক্যাম্পাসে বহিরাগত লোকজনকে আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাতে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে দেখলেই আমরা তাদের সতর্ক করে দিই, যেন তারা অকারণে ঘোরাঘুরি না করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যারা হলে আছেন ও যারা বহিষ্কৃত, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই প্রশাসন তাদের ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশনা দিলেও সেটা বাস্তবায়নে উদাসীনতা দেখাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে যারা অছাত্র আছে, তাদের হাত ধরেই অধিকাংশ অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে অনিরাপদ। আবার যেসব জুনিয়র শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও এই অছাত্ররাই নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ, উপগ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, উপাচার্যের কক্ষ ভাঙচুর, শিক্ষক প্রার্থীকে মারধর, হল দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রী হেনস্তা, সাংবাদিক হেনস্তাসহ ইত্যাদি ঘটনায় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বেশির ভাগ ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রত্ব নেই। এতে ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই সংকট কাটাতে অছাত্র ও বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও আবাসিক হলগুলো ছাড়েনি তারা। অংশ নিচ্ছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। এমনকি বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সদস্য সচিব ও প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদার তার দায়িত্ব গ্রহণের সময় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে অনেক অছাত্র ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে না পেরে প্রশাসনিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা তাদের ব্যর্থতা।’
প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী।
তবে সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেছেন আরেক সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয়। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি নতুন নিয়োগ পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। তবে আমরা কিছুটা সময় নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে এ বিষয়টির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। কারণ, এতে অনেকগুলো বিষয়ের সমন্বয় প্রয়োজন।’
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
একাত্তরের যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বিশেষ করে নজরুল ছিলেন বাঙালির সংগ্রামী চৈতন্যের অগ্নিস্রোত। কথা না-থাকলেও সেই দুর্বার সময়ে বিষণœতার কবি জীবনানন্দ দাশ ওই অগ্নিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেলেন। কেন ঢুকলেন তা বিচার করতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানসচৈতন্যের দিকে তাকাতে হবে। কল্পনাবিলাসী, আবেগপ্রবণ, ভাবুক, দুঃখবাদী, বিষন্ন, প্রকৃতিমুগ্ধ, কৃষিভিত্তিক জীবনবিলাসী বাঙালি রক্তাক্ত বিদ্রোহের ভেতরও ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ আর ‘দু’দণ্ড শান্তি’-এর মতো ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে কেন বারবার স্মরণ করত? এ প্রশ্ন অনিবার্য। আশ্চর্য এই যে, ভাববাদী রোমান্টিকরা তো বটেই, চরম বস্তুবাদী রিয়ালিস্টিক পাঠকও জীবনানন্দকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কোন জাদুতে? জীবনানন্দ নিজেই কি ম্যাজিক বা ম্যাজিশিয়ান, তার শব্দ, চিত্রকল্প, উপমা, কাব্যভাব কি ম্যাজিক? জীবনানন্দ মুগ্ধতা কি ক্রমবিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাঙালির বাঙালি হয়ে ওঠার নানা উপাদান অর্থাৎ চারিত্রিক এবং সাংস্কৃতিক নানা দুর্বলতার ফল মাত্র? বাঙালির মানসচেতনার সীমাবদ্ধতার কথা সত্যি জানতেন জীবনানন্দ। তিনি নিজেও যে একই গোত্রের। তার কবিতার শব্দ-প্রযুক্তিবিদ্যা, ধ্বনিমাধুর্য প্রবাহ, রূপকল্পের আবেগী ব্যবহার, অতীন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যবহার বাঙালিকে বিস্মিত করেছে।
দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘরে ও বাইরে চিরক্লান্ত, আশাশূন্য, বিধ্বস্ত এবং ঘোর অবসাদাক্রান্ত বাঙালিকে জীবনানন্দের কবিতা গভীর আত্মমুখী আঁধারে ডুবিয়ে দেয়। সমকালের, সমাজের, রাষ্ট্রের, পরিবার এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত রোগ, অসহায়ত্বকে ধরতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ। নিজের জীবনের ওপর পরীক্ষাও করেছেন। তার অকাল মৃত্যুও ভেতর গোপন অদৃশ্য ব্যাধির ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই।
জীবনানন্দের কবিতার ভেতরই জটিল রহস্য রয়েছে। তার কবিতা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সমাজ ও ব্যক্তিকে আশ্রয় নিয়ে ‘দু’দণ্ড শান্তি’ নিতে উসকে দেয়। মানুষের মগজে, স্নায়ুতন্ত্রীতে মাদকের মতো ‘প্রশান্তির জগৎ’ তৈরি করে। যে কাব্য সমালোচকরা তার কাব্যে জীবনবিমুখতা, আত্মপলায়নপরতা কিংবা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের চর্চার অভিযোগ এনেছেন, তাদের সব যুক্তিকে বাতিল করা যায় না। এ কথাও সত্য যে, তাকে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গুরুত্ব লঘু করা না। কেন যায় না তা নিয়ে আমরা তর্কে যাব না, কেননা আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, উদ্দেশ্য বরং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ এবং চর্চার সীমানাটা খুঁজে দেখা। এ দেখাটা স্বাধীন দেশের বাঙালির জন্য জরুরি।
সাহিত্যের দহলিজে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে, বুদ্ধিজীবী মহলে জীবনানন্দ চর্চা পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও চর্চার সঙ্গে জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ চর্চারও একটা যোগসূত্র দেখা যায়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কিছু আগে বা পরে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র রণেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় বাংলাবাজার থেকে বের হয়। ব্যাপক সাড়াও ফেলে। জীবনানন্দ অনুসন্ধানের আগে আমরা জেনে নিতে চাই তার শিল্পের মননজগৎ তৈরির পেছনের সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং আন্তর্জাতিক কার্য-কারণগুলো। জীবনানন্দের কাব্যসাধনা এবং তার বিকাশ ও পরিণতি ঘটে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন, সময়ের সেই প্রভাবেই তিনি আন্দোলিত হয়েছেন।
বাংলায় উপনিবেশিক শাসন-শোষণ, জমিদারতন্ত্র, হিন্দু বর্ণবাদ, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মধর্মে সংঘাত, হিন্দুধর্মের শাক্ত আর বৈষ্ণব মতবাদীদের পরস্পর বিদ্বেষ, দেবী কালী আর অবতার কৃষ্ণের বিবাদ সমাজ অভ্যন্তরে তৈরি করে অস্থিরতা। সেই ইতিহাসই পরবর্তীকালে দেখিয়ে দেয় কেমন করে ভাঙন ধরে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একেশ্বরবাদী, পৌত্তলিকতা-বিরোধী নতুন ধর্ম ব্রাহ্মবাদেও। শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে এর বর্ণনা আছে। বরিশালের ব্রাহ্মসন্তান জীবনানন্দ দাশও এ থেকে মুক্ত ছিলেন না। ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে হিন্দুপ্রধান কলকাতা শহরে জীবনানন্দের জীবন-জীবিকাও সংকটে পড়ে। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়ে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শেও তিনি শান্তি পাননি। ব্যক্তির এই সামাজিক হতাশা তার কাব্যে সংক্রমিত হয়। একটা কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সাতচল্লিশের আগে ও পরে পূর্ববঙ্গের ‘বাঙাল’ আর দেব-দেবী বিদ্বেষী ব্রাহ্মদের জন্য মহানগর কলকাতা এক দুর্ভোগের স্থান হয়ে ওঠে।
বাংলা তো বিশ্বমানচিত্রের বাইরে নয়, বিশ্বেরই সে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যে কোনো কম্পনই তাকে ছুঁয়ে যাবে। বিশ্বপুঁজির মহাসংকটের নগ্ন প্রকাশ ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তথাকথিত উন্নত ইউরোপ তো বটেই, উপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলোতেও মানুষের হতাশা, ভয়ংকর ভীতি ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর মৃত্যুর প্রেতছায়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন-প্রকম্পন থামতে না থামতেই এসে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আরও জটিল, আরও বহুমাত্রিক বিভীষিকা নেমে আসে বিশ্বে। বঙ্গ-ভারতের গণমানসে মুক্তির স্পৃহা জেগে ওঠে। উপনিবেশিক শোষণ আর দেশীয় উৎপীড়ন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র লড়াই সামনে এসে দাঁড়ায়। শাসকরা দেশীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটায় স্বাধীনতা, আজাদী, স্বরাজের নামে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানবসভ্যতা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা বুঝতে পেরে পুঁজিবাদী শক্তি ইউরোপের দেশে দেশে ব্যক্তির মুক্তি, সামাজিক মুক্তি এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নানারকম নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটানোর জন্য একদল দার্শনিককে কাজে নামিয়ে দেয়। জীবনবিমুখ অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে কবর থেকে টেনে তুলে আনে। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাবশিষ্যরাই বিস্ময়করভাবে আত্মসমর্পণ করে সোরেন কিয়ের্কগার্ড-এর বাতিল অস্তিত্ববাদের প্রেতের কাছে। তারা উচ্চকণ্ঠ হলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করলেন যে, হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, দুঃখবাদ আর আত্মবিচ্ছিন্নতার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব জীবনের সুখ-আনন্দ-পরম শান্তি।
দর্শনচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, কিয়ের্কগার্ড দর্শনের মৌল উপাদান হলো এই ধারণা যে, মানব অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ নিঃসঙ্গতা, কোনো মানুষই এই নিঃসঙ্গতাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না। হেগেলের যুক্তিবাদকে খণ্ডন করে কিয়ের্কগার্ড দাবি করেন ঈশ্বরই হচ্ছে একমাত্র পথ। ব্যক্তিমানুষকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে পাপবোধ, আত্মগ্লানি, অনুতাপ, নৈরাশ্য, যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-উৎপীড়ন, হিংসা, হিংস্রতা থেকে মুক্তির জন্য। ব্যক্তির দুঃখ ভোগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই ব্যক্তির চেতনায় ধর্ম ও ঈশ্বরভাব জাগ্রত হবে। এতেই তার আত্মার মুক্তি ঘটবে।
কিয়ের্কগার্ডের জন্য দর্শনচর্চার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং মানুষের অবসাদ-নৈরাশ্য। সেই ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সেই ভাষাই তার সংযোগ ঘটায় কিয়ের্কগার্ড দর্শনের সঙ্গে। রুশ বিপ্লব এবং বস্তুবাদী দর্শন তাকে আন্দোলিত করে না। তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি নিজের লেখায়। ‘আধুনিক কবিতা : কবিতার কথা’ তার দলিল। দ্বিধাশূন্য জীবনানন্দ বলছেন, ‘কিয়ের্কগার্ড প্রভৃতি দার্শনিকের অস্তিত্ববাদ যা প্রমাণ করেছে সেটা মানুষের প্রাণধর্মে টিকে থাকার... দার্শনিক তথ্য হিসেবে মানুষকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন... তার সাহিত্যিক শিষ্যদের রীতির চেয়ে আরও নিপুণ ও নির্ভুল প্রয়োগে, মানুষের জীবনের এই অন্তর্নিঃসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে...।’ সহজ কথায়, এটা নির্মম সত্য যে, জীবনানন্দ বাঙালি পাঠকদের ঘাড়ে তার নিজস্ব অন্তর্নিঃসহায়তার বোঝা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কেবল কিয়ের্কগার্ড নয়, ফ্রেডারিখ নিটসে, পাস্কাল, মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড অ্যাডলার এবং আরও অনেকে বিজ্ঞানবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন যুদ্ধবিধ্বস্ত নৈরাশ্যবাদী ক্লান্ত মানুষের সামনে তুলে রেখে গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বিশ্বাস করতেন বুদ্ধি, মুক্তি, বিজ্ঞান নয়; বরং মানুষের বিশ্বাস, তার অনুভূতিই জীবন বাস্তবতার আসল সত্য। জীবনানন্দ যখন এসব চর্চা শুরু করেন তার আগেই সারা ইউরোপে যুক্তিবাদ আর বিজ্ঞানবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে মরণসংকট থেকে রক্ষা করা।
যুদ্ধ, ধ্বংস, চূড়ান্ত শোষণ, মানবতার মহাবিপর্যয় না ঘটিয়ে ব্যাধিতে আক্রান্ত যে পুঁজিবাদ টিকতে পারে না, এই বাস্তবতার ভেতর দার্শনিক রুশোর দর্শনে কথিত সেই ‘ঘধঃঁৎধষ গধহ’ সার্ত্রে-এর বিশ্বাসে কোনো রূপ নেয়? সার্ত্রে ব্যক্তিমানুষকে তার বাস্তব স্থান আর সময়কালের সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত ব্যক্তিসত্তার কল্পনার দিকে টেনে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিমানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের বন্ধন থেকে কোনোভাবেই মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারে না। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদও ব্যক্তিমানুষকে তার প্রত্যাশিত মুক্তি এনে দিতে পারে না। ব্যক্তিমানুষ চূড়ান্তভাবেই নিঃসঙ্গ; পৃথিবীর বিপক্ষেও সে। একেবারেই একা।
সার্ত্রের ভাববাদী দর্শন ব্যক্তিমানবসত্তা সম্পর্কে কী বলে? অতলান্তিক কালস্রোতে ভাসমান মানুষ মুহূর্তকালের ভেতরই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এই শূন্যতা তাকে আতঙ্কের ভেতর ঠেলে দেয় এবং দাঁড় করিয়ে দেয় বিমূর্ত এক সত্তার সামনে। সেই সত্তাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, বরং অতীন্দ্রিয়। স্বাধীনতা যেহেতু অসীম এবং নিরঙ্কুশ তাই প্রতিকূল সমাজে ব্যক্তিমানুষ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমন বিশ্বাসের ভেতর সার্ত্রে মনে করতেন উৎকণ্ঠা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। ব্যক্তিমানুষ কখনো সমষ্টি বা সঙ্ঘের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, মিলিত হওয়ার চেষ্টাটা কেবলই দুঃস্বপ্ন। সার্ত্রের ভাবশিষ্যরা তো এই দর্শনই তাদের সাহিত্যের নানা শাখায় প্রয়োগ করেছেন।
সার্ত্রে কেবল ইউরোপ নয়, ইংরেজি ভাষাকে বাহন করে বঙ্গভারতে শিক্ষিত শ্রেণির একাংশের চেতনায় প্রবেশ করেন। জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই দলে। সার্ত্রে চিরন্তন সত্যবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ধর্মবাদ এবং বুর্জোয়া নৈতিকতাবাদের বিরোধিতা করে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের পক্ষ নিলেও সামাজিক শ্রেণি ও শ্রেণি দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে সম্মত হননি। বস্তুজগৎ এবং মানবমনের দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। তার দাবি ছিল, ‘No general ethics can shwo you what is to be done’ এবং ‘ও I have got to limit myself to what I see’
মানব অস্তিত্বরক্ষার সুনির্ধারিত কোনো অর্থ বা কারণ সার্ত্রের বিশ্বাসের দর্শনে নেই। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত মানুষ অন্ধের মতো আশ্রয় সন্ধানে আবর্তিত হবে। নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ তার নিত্যসঙ্গী। জীবন ও জগৎ তার কাছে অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার হেঁয়ালি এবং যুক্তিশূন্য। তার গল্পের নায়ককে তাই উচ্চারণ করতে হয়, ‘The nausea is not inside me, I feel it out There... I am the one who is within it......’
বিস্ময়কর এটাই যে, অস্তিত্ববাদী এই দর্শনকে মহাযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষদের একাংশ বরণ করে নেয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং ভয়াবহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা, অবক্ষয়ী নৈতিকতার ভেতর মনোলোকের এই অন্তঃসারশূন্যতা ব্যক্তিমানুষকে মহাশূন্যে ভাসমান মৃত গ্রহের ভগ্ন অণুর মতো ঘিরে ধরে। সে সময়ের কবিরা তো মানবচেতনার আশা-প্রত্যাশা আর নতুন স্বপ্নের বদলে দেখতে পেলেন চরাচরের চারদিকে কেবলই নির্জন শূন্যতা আর মৃত্যু। কাফ্কার মতো সংবেদনশীল শিল্পীও লিখলেন, ‘ÔI am separated from all things by a hollwo space...’। আলবেয়ার কামুও একই পথের পথিক। স্যামুয়েল বেকেট তো বলেই ফেললেন, ‘...I was born or not, have lived or not, am dead or merely dying...’। ইউরোপের অনেক কবি-সাহিত্যিক আত্মনিমগ্নতার ওই অন্ধকারে ডুব দেন।
আর ওই যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের অভিঘাতে ইউরোপে জন্মাল Sur-realism, Dadaism, Futurism, বিশেষ করে পরাবাস্তববাদ। এর প্রভাব বাঙালি মননেও পড়ে। কলকাতার অনেক পরে, কবরে ভূত হয়ে যাওয়ার পর পরাবাস্তববাদ ঢাকাতেও উঁকি মারে। বাঙালি যখন গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লড়াই করছে, তখনই এই ভূত ঢাকায় এসে হাজির। বাংলাদেশের কাব্যদর্শনের এই দেউলিয়াপনার বাইরে মনুষ্যত্বের পক্ষে, মুক্তির প্রশ্নে একদল কবির আবির্ভাব ওই পরাবাস্তব প্রেতাত্মাকে পরাভূত করেছিল। ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র-গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধবিষয়ক কবিতার দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও লেখক