
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম গত বছরের শেষ দিক থেকেই বলে আসছিলেন জানুয়ারি থেকে ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। সরকারের পদক্ষেপের কারণে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। যেটি জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী গতকাল রবিবার একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাড়া-কমা নিয়ে অস্বস্তির কিছু নেই। এ বছর মূল্যস্ফীতি অত্যন্ত সহনীয় থাকবে। আমি মনে করি না কোনো ধরনের চাপ পড়ছে।
তিনি বলেন, এটা ইনফ্ল্যাশন, হাইপার নয়। পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ বেড়েছে, জিম্বায়ুতে ৩০০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। কাজেই এ দেশের মূল্যস্ফীতি জিম্বাবুয়ের তুলনায় অস্বস্তিকর নয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪১২টি পণ্যের ওপর দেশের মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হতো। কিন্তু এখন থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৭০০টি পণ্যের মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হবে।
বিবিএসের তথ্য হালনাগাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। কিন্তু খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম থাকলেও অস্বস্তি বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। অবশ্য এটি জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
তবে শহরের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতেও গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। জানুয়ারিতেও যা ছিল ৮ দশমিক ৬৭। শহরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭৫, আগের মাসেও যা ছিল ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রমিকের গড় মজুরি হার বেড়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। যেটি আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
তবে বিবিএসে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, বাস্তবে সে চিত্র আরও বেশি। গত মাসে ডাল, ছোলা ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। নিত্যপণ্যের এই উচ্চমূল্যে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি করা যাচ্ছে না খাদ্যপণ্য। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছে, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের এলসি খোলা স্বাভাবিক রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা নানা সুবিধা নেওয়ার পরও আমদানি কম দেখিয়ে দেশের বাজারে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। আজ এক পণ্যের দাম বাড়লে কাল বাড়ছে আরেক পণ্যের দাম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন রোজার এক সপ্তাহ আগে আর পণ্যের দাম বাড়ে না। এক-দেড় মাস আগেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। রোজা এলে সেই দামটা স্থিতিশীল হয়ে যায়। পরে সেটা আর কমে না।
এদিকে রমজানে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই সুযোগে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মূলত আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। এবার ডলার সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর তেল, চিনি, ছোলাসহ কিছু পণ্যের এলসি খোলা কমে গেছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় এর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা এই পণ্যগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি।
জানা গেছে, বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ ডলার সংকটের এই সময়েও সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের ‘আমদানি স্বল্পতা’ দেখিয়েছে দেশের বড় কোম্পানিগুলো। সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মূলধনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র (এলসি) খুলতে চাহিদামতো ডলার পায়নি। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ কোম্পানিগুলো এবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ববাজারে কমলেও ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। রমজান মাস সামনে রেখে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানোর অপকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা।
নভেম্বরের ১৩ তারিখে অ্যাডিলেডে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় বাংলাদেশেই প্রথম বিশ ওভারের সংস্করণের সিরিজ খেলতে পা রাখা ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপ জয়টা ছিল ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের প্রামাণ্য দলিল। অন্যদিকে একই আসরে শুধুই জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জয় পাওয়াটা ছিল বাংলাদেশের জন্যও সতর্কবার্তা। মাস চারেকের ব্যবধানে দুই দলের পুরোই বিপ্রতীপ অবস্থান! দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কাছে ৪ উইকেটের হার থেকে ইংল্যান্ড বুঝেছে যে স্পিনসহায়ক উইকেটে খেলার কৌশলটা আলাদা আর বাংলাদেশ পেয়েছে ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর আত্মবিশ্বাস।
দুই দেশের টি-টোয়েন্টিতে সাফল্যের ব্যবধান এতটাই বেশি যে, কোনো তুলনাই চলে না। ইংল্যান্ড দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তিনবারের ফাইনালিস্ট। অন্যদিকে বাংলাদেশ কখনো গ্রুপ পর্বই ডিঙ্গাতে পারেনি, এখন পর্যন্ত মূল পর্বে জয়ই মাত্র তিনটি। সেই ইংল্যান্ড দলকেই যখন বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে দেয়, তখন প্রেস বক্সে জনা পাঁচেক ব্রিটিশ সাংবাদিকের চোখে রাজ্যের বিস্ময়। সংবাদ সম্মেলনে আসা জস বাটলার ও মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে তাদের একটাই প্রশ্ন; ইংল্যান্ড কি খানিকটা হালকাভাবেই নিয়েছিল বাংলাদেশকে?
অবশ্য ম্যাচের পরিস্থিতি সেই আভাস দেয় না বরং জানান দেয় ইংল্যান্ড তাদের স্বভাবসুলভ ক্রিকেটটাই খেলতে চেয়েছিল। টস জিতে সাকিব বোলিং নেন, ইংল্যান্ড পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ৫০ রান। সপ্তম ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এসে নিজের বলে নিজেই নেন ফিল সল্টের ক্যাচ। ঠিক পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড বাটলার। ওয়ানডাউনে নামা মইন আলি মিরাজের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন পরের ওভারেই। নিয়মিত উইকেট হারানোর এ চাপটা ধীর করে দেয় রানের চাকা, এ বৃত্ত থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের মেরুদ-টা ভেঙেছেন মিরাজ; এক ওভারে দুই বলের ব্যবধানে তুলে নিয়েছেন স্যাম কারেন আর ক্রিস ওকসের উইকেট। দুজনই স্টাম্পড, লিটনের হাতে। পরের ওভারে মিরাজের শিকার ক্রিস জর্ডানও। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। সঙ্গে তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সাকিব ও হাসান একটি করে উইকেট নিলে মাত্র ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। মোস্তাফিজ ইনিংসের শেষ ওভারে নিজে উইকেট নিয়েছেন, লিটন দাসের সহায়তায় রানআউট করেছেন দুজন। লিটন আগে দুটি স্টাম্পিংও করেন।
জয়ের জন্য ১২০ বলে বাংলাদেশের চাই ১১৮ রান। এমন আপাত সহজ সমীকরণটাও কঠিন হয়ে গেল জোফরা আর্চারের সামনে। কাল বেশ জোরে বল করেছেন আর্চার, আফিফ হোসেনকে বোল্ড করেছেন যে ডেলিভারিতে তাতে বলের আঘাতে বেলস ছিটকে গিয়ে পড়েছে বাউন্ডারি লাইনের কাছে। লিটন ও রনি তালুকদার দুজনই আউট হয়েছেন ৯ রান করে, তৌহিদ হৃদয় করেন ১৭ রান। সাকিব নিজে আউট হয়েছেন তৃতীয় বলে, কোনো রান না করেই। ভরসা যে নাজমুল হোসেন শান্ত আর মিরাজ, ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সহঅধিনায়ক ও অধিনায়ক। তাদের ৩২ বলে ৪১ রানের জুটিটায় জয় নাগালের ভেতর আসে বাংলাদেশের। জয়ের খুব কাছে দলকে রেখে ২০ রানে আউট হয়ে যান মিরাজ, শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেনও টিকতে পারেননি। শান্ত একটা দিক আগলে ছিলেন ঠিকই, তবে শেষটা ব্যাটসম্যান তাসকিনের। ক্রিস জর্ডানের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুই চার মেরে তাসকিন নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের জয়। তাতে ২-০-তে নিশ্চিত হয়েছে সিরিজও। এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করাটাই যে মিস্টার হোয়াইট সিরিজে বাংলাদেশের লক্ষ্য, তা ঘোষণা করে দিয়েছেন ম্যাচসেরা মিরাজ, ‘আমরাই এখন ভালো দল। চেষ্টা থাকবে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার।’
জয়ী দলটার নাম বাংলাদেশ হলেই সবাই খুশি আর সেই জয় যদি হয় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে তখন জয়ের আনন্দ আরও বেড়ে যায়! কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগই মেলে কালেভদ্রে, তাই তাদের হারানোর আনন্দটাও হয় বেশি।
ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মিরাজ, বল হাতে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ২০ রানের ইনিংস। সিরিজের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে একাদশের বাইরে থাকা মিরাজ কাল সুযোগ পেয়েই করেছেন বাজিমাত। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ৭ উইকেট নেওয়া মিরাজকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেতে লেগে গেল আরও সাত বছর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটাই টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ, মিরাজ খেললেন প্রথমবার এবং এবারও ম্যাচসেরা। এ অলরাউন্ডার বললেন, বড় দলের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই বলেই জয়ের আনন্দটা বেশি, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এই প্রথম আমরা ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জিতেছি, তাও টি-টোয়েন্টি। ওরা তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়ে নিজেদের কাছে খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা, ওদের সঙ্গে আমাদের খেলা বেশি হয় না। খেলার তেমন সুযোগও পাই না। ২০ বছরে মনে হয় ১০টা টি-টোয়েন্টিও খেলিনি ওদের সঙ্গে (এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে মোট তিনটি)। এটাই প্রথম সিরিজ ছিল। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া, যেহেতু আমরা সিরিজটা জিতেছি।’
চট্টগ্রামে আগের ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি, ঢাকায় শামীম হোসেনকে বসিয়ে দলে নেওয়া হয় মিরাজকে। একাদশে জায়গা না পাওয়া ও ফেরা নিয়ে মিরাজ বললেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর ভরসা করে আমাকে এ ম্যাচে খেলিয়েছে। মনে করেছে, আমি এ ম্যাচে খেললে দলকে কিছু একটা দিতে পারব, বিশেষ করে এই উইকেটে। তারা যে আমাকে বিশ্বাস করেছিল, তার প্রতিদান দিতে পেরে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে।’
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের পর ইংল্যান্ডও টি-টোয়েন্টিতে ধরাশায়ী বাংলাদেশের কাছে। এবারই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তাই মিরাজের আনন্দটা বেড়েছে বহুগুণে, ‘অবশ্যই প্রতিটি দেশের সঙ্গে জিতলে অনেক ভালো লাগে। নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না নিউজিল্যান্ডকে হারালে, অস্ট্রেলিয়াকে হারালে ভালো লাগবে... অবশ্যই প্রতিটি দলকে হারালেই আমাদের অনুভূতি একইরকম থাকে। কারণ দিন শেষে, জিতছে কে? বাংলাদেশ। আমরা সবাই জিতেছি, এটা কিন্তু একটা আনন্দের বিষয়। আজকে দেখেন সবাই কিন্তু অনেক খুশি। আপনারা যারা আছেন খুশি, আমরা খুশি, ম্যানেজমেন্ট খুশি, সারা বাংলাদেশের মানুষ; সবাই খুশি। কারণ আমরা বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছি। আমরা যদি জিতি, বাংলাদেশই জেতে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতলে বাংলাদেশ জেতে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেও বাংলাদেশ জেতে। অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে হলে আরও ভালো লাগে।’
বাংলাদেশের জয়ের উইকেটের ভূমিকার চেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ভালো বোলিংকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন মিরাজ, ‘ওরা (ইংল্যান্ড) কিন্তু শুরুটা খুব ভালো করেছিল। প্রথম ছয় ওভারে ৫০ রানে ১ উইকেট ছিল। সাকিব ভাই একটা ব্রেকথ্রু দিল, এপাশ থেকে হাসান মাহমুদ দিল। তারপর আমি টানা দুই উইকেট নিলাম। এটা ওদের মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। জুটি না হলে দলের জন্য রান তোলাটা কঠিন হয়ে যায়। ওরা এখানেই ভুল করেছে। ওরা যদি ভুল না করত, তাহলে ১৬০-এর বেশি রান হতো যেভাবে শুরুটা হয়েছিল। আমাদের বোলারদের অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের বোলাররা খুব ভালো করেছে। আপনি যতই বলেন, উইকেট খারাপ, খারাপ, অনেক টার্ন করছিল। কিন্তু এমন ছিল না যে খেলা যাচ্ছিল না। ওরা ভালো শুরু করেছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের বোলাররা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
সিরিজ জয়ের পর মিরাজদের লক্ষ্য সিরিজে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে ব্রিটিশ এক সাংবাদিককে কথাটা শুনিয়ে দিয়েছেন মিরাজ, করেননি কোনো রাখঢাক। একই সঙ্গে বলেছেন, এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো দল। অতীত যাই বলুক, বর্তমান কিন্তু মিরাজেরই পক্ষে!
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সততার শক্তি, বস্তুনিষ্ঠতার প্রতিচ্ছবি আর দায়িত্বশীলতার প্রতীক হয়ে এগিয়ে যাবে দেশ রূপান্তর এমন প্রত্যাশা সুধীজনদের। সময়ের এই পাঠকপ্রিয় পত্রিকার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন তারা। একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে পত্রিকাটি ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করেন। গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানের ‘ওয়েস্টিন’ হোটেলের বলরুমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আনন্দঘন সন্ধ্যা।
পাঠকের ভালোবাসা ও আস্থায় দেশ রূপান্তর চার পেরিয়ে পাঁচ-এ পা রেখেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাড়া দিয়ে এসেছিলেন সরকারের মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিত্রতারকা, সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নানা পেশার মানুষ। অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয় দেশ রূপান্তর পরিবার। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত অমিত হাবিবের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়।
দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও ডিজিটাল বিভাগের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান পলাশের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় এ মিলনমেলা শুধুই একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। অতিথিদের একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে ভালোবাসার বন্ধন।
শুরু থেকেই মঞ্চে ছিলেন রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল, রূপায়ণ গ্রুপের ডিরেক্টর রোকেয়া বেগম নাসিমা, বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, কুয়েত অ্যাম্বাসাডর গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান ওয়ালিদ মুকাই আলী, রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নওরিন জাহান মিতুল, রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাবরিনা রশীদ নোভা ও দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন। তারা আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন।
‘দায়িত্বশীলদের দৈনিক’ এমন সেøাগান ধারণ করে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে দেশ রূপান্তর। যখন কি না ছাপা পত্রিকা একরকম চ্যালেঞ্জের মুখে। অনলাইন পোর্টালে অবাধ তথ্যপ্রবাহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাসছে ততক্ষণাৎ সংবাদ, ইউটিউবে চলছে নিউজের ভিডিও কনটেন্ট। এমন সময়ে ছাপা কাগজের পত্রিকা কতটুকু টিকবে এ নিয়ে ছিল শঙ্কাও। কিন্তু সব সংবাদ যে সংবাদ নয়, সংবাদ পরিবেশনে যে লাগে বস্তুনিষ্ঠতা, দায়িত্বশীলতা। এই প্রত্যয় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে দেশ রূপান্তর। কিছুদিনের মধ্যে সব শঙ্কা ছাপিয়ে পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে পত্রিকাটি। দেশের অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা হিসেবে সব শ্রেণির পাঠকের মন জয় করে। আর এর মূল কারিগর ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত অমিত হাবিব। তার আদর্শ ও চিন্তা অনুসরণ করে দেশ রূপান্তর এখনো এগিয়ে যাচ্ছে।
পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা, নতুনত্ব, সব শ্রেণির পাঠকের রুচির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন পাঠকের দোরগোড়ায় হাজির হয় দেশ রূপান্তর। পাঠকের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের যে একপ্রকার খরা চলছে তা অনেকটাই পূরণ করে চলেছে দেশ রূপান্তর। গতকাল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মুখেও ছিল এ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।
চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মঞ্চে কেক কাটেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল এ সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুনকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সাংবাদিকরা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করবে, নতুন প্রজন্মকে তুলে ধরবে। এককথায় দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশ রূপান্তরের কাছেও আমাদের সেই প্রত্যাশা রইল। এগিয়ে যাক দেশ রূপান্তর।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ, ন্যায় ও সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশ রূপান্তর বেশ জনপ্রিয় পত্রিকা হয়ে উঠছে। এমনভাবে তারা খবর প্রকাশ করে তাতে অচিরেই পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশ রূপান্তর একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। যখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখন বালিশ ওঠাতে কী পরিমাণ খরচ হয় এ পত্রিকায় এমন একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছিলাম। ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর তাদের সবাইকে দুদকে পাঠানো হয়। এটি সম্ভব হয়েছিল শুধু দেশ রূপান্তরের জন্য। এতেই বোঝা যায় এই পত্রিকাটি কেমন।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘বয়সে নবীন হলেও পরিপক্বতার জায়গায় বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে দেশ রূপান্তর। বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন এবং দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের জন্য যে ভূমিকা রাখা দরকার তা দেশ রূপান্তর রাখবে সেই কামনা করি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হলো সমাজের অসংগতিগুলো তুলে ধরে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশ করা। সেই কাজটি নিরন্তর করে যাচ্ছে দেশ রূপান্তর। এখন যতই অনলাইন নিয়ে কথা উঠুক না কেন, প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব মোটেও কমেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব রয়েছে এবং সেটি যেন নেতিবাচক না হয় সেটিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই। গণমাধ্যম সেখানে এই ব্র্যান্ডিংয়ের কাজটি করতে পারে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দেশ রূপান্তর আলোড়ন তুলেছে। বর্তমানে পত্রিকাটি এখন আরও বেশি মসৃণ ও সুন্দর হচ্ছে। আমরা আশা করি পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশেনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দিচ্ছে দেশ রূপান্তর। খবরের পেছনের খবর তুলে ধরছে পত্রিকাটি। সংবাদ ছাড়াও পাঠকের যে নানারকম চাহিদা থাকে, সেটিও পূরণ করে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে দেশ রূপান্তর।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দেশ রূপান্তরের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপ, এর চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘রূপায়ণ গ্রুপ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, আমি দোয়া করি তারা আরও সামনে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি দেশ রূপান্তর পত্রিকা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘দেশ রূপান্তর অল্প সময়ের মধ্যে সুনামের সঙ্গে পাঠকের চাহিদা পূরণ করছে। আমরা আশা করি এ পত্রিকা মানুষের কথা বলবে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে থাকবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দেশ রূপান্তর পাঁচে পা রেখেছে এ কথাটি না বলে আমি বলতে চাই পাঁচে পাঁচ পেয়েছে। আশা করি তাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দেশ রূপান্তরের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে বলেন, ‘আমি এ পত্রিকার সাফল্য কামনা করি।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘দেশ রূপান্তর একসময় সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে সেই প্রত্যাশা করি। সে জন্য সবাইকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষায় পত্রিকাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘পাঠকের কাছে সঠিক খবর পৌঁছে দিতে অবদান রাখছে দেশ রূপান্তর। আমি আশা করি ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে এ পত্রিকা।’
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি শুধু এখানে এসেছি বর্তমানে যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে মানসম্মত সাংবাদিকতা করে তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য। সেরকম একটি পত্রিকা হলো দেশ রূপান্তর। এই পত্রিকার প্রতিবেদন যখন দেখি তখন নিজেও উৎসাহবোধ করি।’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘দেশ এখন রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই রূপান্তরকে তুলে ধরবে দেশ রূপান্তর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ রূপান্তর দেশের কল্যাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, সেই প্রত্যাশা করি।’
দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে গত পাঁচ বছরে দেশ রূপান্তর যে অবস্থান তৈরি করেছে, তাতে ভবিষ্যতে এ পত্রিকাটি আরও বিস্মৃত ও আরও পাঠকপ্রিয় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দেশ ও সমাজের উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় দেশ রূপান্তর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার মাধ্যমে স্মার্ট বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, ‘আজকের এ পরিবেশ দেখে আমি অভিভূত। দেশ রূপান্তরের সাফল্য কামনা করছি।’
দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল তার বক্তব্যের শুরুতেই দেশ রূপান্তরের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকারসহ এর সঙ্গে যুক্ত সব সংবাদকর্মীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বিগত চার বছরে আপনাদের আন্তরিকতার কারণে দেশ রূপান্তর এখন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দেশ রূপান্তর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সততা নিয়ে কখনো আপস করেনি, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ রূপান্তরকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমিত হাবিব। তার দেখানো পথ অনুসরণ করেই এ পত্রিকাটি এখনো পাঠক মহলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।’ মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, ‘বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপায়ণ গ্রুপ দেশ রূপান্তরের কোনো খবর এবং সংবাদকর্মীদের ওপর কোনোরকম খবরদারি করেনি। আমাদের প্রত্যাশা দেশ রূপান্তর আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, ‘ছাপা পত্রিকা টিকবে কি না এমন একটি চ্যালেঞ্জের সময়ে দেশ রূপান্তর প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের মৃত্যুর পর সেই চ্যালেঞ্জটি আরও বেড়ে যায়। একটা কঠিন পরিস্থিতিতে আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। অমিতদার শূন্যতা পূরণের চেষ্টা আমরা করছি। পাশাপাশি দেশ রূপান্তর পত্রিকাকে পাঠকমহলে আরও জনপ্রিয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয় এর অনেকটাই পেরেছে দেশ রূপান্তর।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, গণমাধ্যমের জন্য একটি কঠিন সময় যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দাপটের এ সময়ে কোনটা আসল খবর, কোনটা নয় এরকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, ছাপা পত্রিকাতে এখনো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আর সেই বিশ্বাসকে আরও সামনে নিতেই দেশ রূপান্তরের এ প্রচেষ্টা।’ এ সময় মোস্তফা মামুন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আবদুল গাফফার, রূপায়ণ গ্রুপের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান প্রমুখ।
দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, ঢাকা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপির প্রথম সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক শুভেচ্ছা জানান ফুল দিয়ে।
শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দীন, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন-অর-রশীদ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি মনজুর রহমান, উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান, গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ, র্যাবের মহাপরিচালকের পক্ষে মেজর আবদুল হাদি প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত চন্দ, ইউজিসির পরিচালক শামসুল আরেফিন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল বারী মজুমদার, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি জনসংযোগ সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত। আরও এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল। এ ছাড়া সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় কায়সার হামিদ, জনিসহ অন্যান্যরা এসেছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, ডিপিডিসির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল আলিম, এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক মাহবুব ইমাম মোরশেদ, প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হাসান খান, উপব্যবস্থাপক আমির হোসেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনের সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান আবু মিয়া আকন্দ তুহিন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির পরিচালক মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও কমিউনিকেশনসের প্রধান মোহাম্মদ তারেক উদ্দীন, দি ইবনে সিনহা ট্রাস্টের সহকারী ব্যবস্থাপক আল ইমরান, প্রবাসী পল্লী গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শিকদার এম আরিফুল ইসলাম, হামদর্দ পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ, বিটিসিএলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী তাহেরুল ইসলাম, পারটেক্স গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. নাহিদ ইউসুফ, কনকর্ড গ্রুপের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দীন ভূঁইয়া প্রমুখ।
শোবিজ তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নুসরাত ফারিয়া, ফাহমিদা নবী, আজিজুল হাকিম, নিপুণ আক্তার, আঁখি আলমগীর, বাপ্পি চৌধুরী, সাইমন সাদিক, রোশান, দেবাশিষ বিশ্বাস, এস ডি রুবেল, নাদের চৌধুরী, নিরব, স্পর্শিয়া, বেলাল খান, পুতুল, বুলবুল টুম্পা, ফারিয়া শাহরিন, বিপ্লব সাহা, আবদুল আজিজ, সৈকত নাসির প্রমুখ।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে অথবা কাগজপত্র জাল করে ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং হুন্ডিতে নিজেরা অর্থ পাচার করেছে। অন্যকেও একইভাবে অর্থ পাচার করতে সহযোগিতা করেছে। অর্থ পাচারে জড়িত এমন নতুন ৫২৮ ব্যক্তির নামের তালিকা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতিমধ্যে শতাধিক ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য তালাশের কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দেশ রূপান্তরকে জানায়, হুন্ডিতে মানি এক্সেচেঞ্জারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। অন্যদিকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থের একাংশ দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকের চালান আনা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কুরিয়ার সার্ভিস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ইমিগ্রেশনের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অর্থ পাচার করেছে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচারে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাচারকারীদের সহযোগিতা করেছেন ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বেশির ভাগ অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, নেপালসহ আরও কয়েকটি দেশে।
পুলিশ সূত্র জানায়, অর্থ পাচারে জড়িত এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিআইডি আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশনও তৎপর। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ট্রান্সফারপ্রাইসিং সেল এবং ট্যাক্সেস অ্যান্ড লিগ্যাল এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা অর্থ পাচার রোধে একযোগে কাজ করছে।
অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশে যারা অর্থ পাচার করছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা নিয়ে কাজ চলছে।’
সিআইডির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত কাউকে কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কয়েক শ ঘটনার তদন্ত চলছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআইডি ইতিমধ্যে অর্থ পাচারে জড়িত ৫২৮ জনের নামের তালিকা করেছে। তাদের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা অঞ্চলের লোকই বেশি। এর আগে পুলিশের আরেকটি সংস্থা অর্থ পাচারকারী শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা দুদকে পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন অনেকেই। এ জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় ৫২৮ জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। প্রয়োজনে তাদের ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। অনেকে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, রেস্তোরাঁ, দোকান বা অন্য সম্পদ কিনেছেন। অবশ্য তালিকার কারও নাম জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জারের মাধ্যমে পাচার : অর্থ পাচারকারীদের নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি মানি এক্সচেঞ্জার যে দেশে অর্থ পাঠায়, সেই দেশে নিজস্ব প্রতিনিধি রাখে। প্রতিনিধি বাংলাদেশি বা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক হতে পারে। এ দেশ থেকে অনলাইন, ওয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টেলিগ্রামে সাংকেতিকভাবে যোগাযোগ করে অর্থ পাঠানো হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে এমন এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর বেশিও হতে পারে বলে ধারণা সিআইডির। সম্প্রতি সিআইডির অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির কার্যালয় পাওয়া গেছে। এই অভিযানে ১৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। যে দুটির কার্যালয় পাওয়া যায়নি সেগুলো ‘প্রতারণামূলক বা ফেরারি’ বলে উল্লেখ করেছে সিআইডি। সংস্থাটি জানায়, তারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ করেছে। ফোনে ফোনে যোগাযোগ করেও তারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা লেনদেন করেছে। এ ছাড়া তারা হুন্ডিতে অর্থ পাচার করেছে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন ৭৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এ হিসাবে সংখ্যাটি মাসে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৫০০ কোটি। এই পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে বলেই ধারণা সংস্থাটির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে অনুমোদিত মানি একচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান দুই শর বেশি। বিএফআইইউর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে সিআইডি।
মিথ্যা ঘোষণায় অর্থ পাচার : বাস্তবে অস্তিত্ব নেই অথচ কাগজে-কলমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার করা হয়েছে। তবে পাচার করা অর্থের একাংশ দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকের চালান এনে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের নাম ব্যবহার করেও অর্থ পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমাদানিকালে কোকেনের বড় চালান আটকের নজির রয়েছে।
এনবিআরের সদস্য এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আনা অনেক চালান আটক করা হয়েছে। জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
অর্থ পাচারে জড়িত নতুন করে যে ৫২৮ ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে, তাদের অনেকে জাল কাগজপত্র তৈরি করে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিথ্যা তথ্যে অর্থ পাচারের পুরো বিষয়টি করে থাকে। এরাই বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করানো থেকে ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকে। এর বেশির ভাগ কাজের প্রস্তাব এনে দেয় অন্য কেউ। এই ওপরের ব্যক্তিটি কে, তা তালিকার ব্যক্তিরা অনেক সময় জানে না। তবে সরাসরিও অনেক কাজের প্রস্তাব আসে।
অর্থ পাচার রোধে ২০০২ সালে প্রথম মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয়। এই আইনে ২৭ ধরনের অপরাধ করলে তা আমলে নেবে তদন্তকারী সংস্থা। পুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত করে।
পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআইডি আট বছরে ২৪৭টি মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা তদন্ত করেছে। মামলা করেছে ৪৭৭টি।
পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস হলে অর্থ পাচারে জড়িত অভিযোগে দেশের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তিসহ ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ২০২০ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়।
পাচার করা অর্থে কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে তোলার তথ্যও আসে সংবাদমাধ্যমে। গত বছর সরকার কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের দ্বৈত কর চুক্তি হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে ওই সব দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা মিলবে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট টেকনাফের ইয়াবা কারবারি নূরুল ইসলাম ভুট্টু, সৈয়দ আলম, নূরুল আলম নামের তিন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি মানি লন্ডারিং মামলা হয়। এগুলোই দেশে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রথম মানি লন্ডারিং মামলা। এর মধ্যে ভুট্টু ও তার ৪৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু মামলা আছে তদন্ত করতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় প্রভাবশালীরা তদন্ত বাধাগ্রস্ত করে।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আইনের প্রয়োগ এবং কঠোর নজরদারি ছাড়া এটা কমানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার হচ্ছে। হুন্ডিতে পাচারকারীরা আন্তর্জাতিকভাবে সংঘবদ্ধ।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) আট দেশের কূটনীতিকদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় গুলশান-২-এ ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি গঠিত পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থা ও নির্বাচনের বিষয়ে দেশের মানুষ যেভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো একইভাবে নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এরই অংশ হিসেবে ইইউ দেখছে, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা কী? মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা কাজ করছে দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে সেটার ওপর তো তাদের স্বাভাবিকভাবে একটা দৃষ্টি আছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকে এই বৈঠক।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে, এখানে যে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। এই প্রেক্ষাপটেই তো আলোচনা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট থাকার কারণেই তো এসব আলোচনা চলছে। আগামী নির্বাচনে যদি দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ যে সংকটের দিকে যাবে এই শঙ্কা তো দেশের ভেতরে যেভাবে কাজ করছে, দেশের বাইরেও কাজ করছে। এই শঙ্কা থেকেই তারা জানতে চেয়েছেন যে, কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, কীভাবে এটাকে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করা যায়। সবার উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশের মানুষের যে চিন্তা যে এটাকে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, নির্বাচিত সরকার হবে।’
‘নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান কি আপনারা পরিষ্কার করেছেন কি না?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সেটা আমরা খোলাখুলিভাবে বলেছি।’ বিষয়গুলো নিয়ে ইইউ কী মনে করে জানতে চাইলে খসরু বলেন, ‘তারা কী মনে করেন সেটা তারাই বলতে পারবে।’
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিষয় নিয়ে আলোচনায় উঠেছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলে আমীর খসরু ছাড়াও অংশ নেন সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচি শুরু হয়। ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। সবশেষ গত শনিবার মানববন্ধন করেছে দলটি। আগামী ১৮ মার্চ সারা দেশে মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।