
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্ট কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি তারা। তাদের সঙ্গে সংলাপ করার কিছুই নেই।
কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ বা তার জোটের প্রস্তুতি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে সরকারের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪-৮ মার্চ এ সফর করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো সাময়িক কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটাকে আমরা এবং আমাদের জনগণ মোকাবিলা করবে।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে সংলাপ হয়েছে। ২০ জন, ৩০ জন নিয়ে এসে সংলাপে বসেছে। চা-বার্গার খেয়ে গেছে। তারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নির্বাচন থেকে সরিয়ে তারপর সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদের সঙ্গে কীসের কথা বলব, কীসের বৈঠক করব?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে তারা। এরপরও সেই খুনিদের সঙ্গে বসেছি, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। আপনারা দেখেছেন, সবাই আমাকে মানা করেছে ফোন করতে। তবুও আমি তখন তাকে (খালেদা জিয়া) ফোন করি। আমার সঙ্গে কী ব্যবহারটাই না করল? উনি অবরোধ তুললেন না। কী অপমানিত হতে হলো আমাকে?’
খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার ছোট ছেলে (কোকো রহমান) মারা গেল। আমি তার বাসায় গেলাম। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আপনারা দেখেছেন। আমাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা এতটুকু ভদ্রতা জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ। কেউ কি পারবে বাবার খুনিদের সঙ্গে বসতে?’
বিএনপি ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলে নেতা হবে পারে না। আর এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন এই দলের কাছে কী আশা করবেন। তারপরও অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট। এটুকু সহানুভূতি পাচ্ছে সেটা আমার কারণে। ওদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক, কীসের কী?’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিষয়ে ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০ জনের নামে (ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন) যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যামিশন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাদের ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংশোধনী-সংস্কার আনা হয়েছে।’
গত ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, সেটি যদি ভেবেন দেখেন কী পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের পর ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা, ২০০৭ সালের নির্বাচন, মনে করুন। এ ঘটনাগুলো যেন আবার না ঘটে সে জন্যই আমরা সংস্কাগুলো করেছি। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে যে তারা কীভাবে চায়? নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই আছে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে।’
সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তারা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে গেছে। এ ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘœ হতে পারে, শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর কী প্রমাণ করতে হবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনেও যেন জনগণ স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই প্রস্তুতি আছে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে ওদের (বিএনপির) জন্মই হয়েছে অস্ত্র হাতে নিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন সেনার মাধ্যমে। তিনি হলেন সেনাবাহিনীর প্রধান, আবার সেই অবস্থাতেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসেছে, অস্ত্র হাতে নিয়ে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল হলো বিএনপি। কাজেই এদের কাছে জনগণ আর বেশি কী আশা করবে।’
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সরকার সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সবার। সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সত্যের জয় হয়। এটা কেউ ঢাকতে পারে না এটা আমি বিশ্বাস করি।’
শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে এমন কোনো চাপ নেই : আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোনো চাপই টলাতে পারবে না এমন প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর ওপরে আল্লাহ। আমার মাথায় আছে বাবার হাত। কে কী চাপ দিল, এতে আমার কিছু আসে যায় না।’
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি দূতাবাসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব বিষয়ে কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। আমি জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে কিছু যায় আসে না। কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন কি থেমে গেছে?’
পদ্মা সেতুসহ উন্নয়ন কাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন, কেন? একটা ভদ্রলোক তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো জানি না। একটাই সুবিধা, এমডি পদে থাকলে মানি লন্ডারিং করা যায়। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। সেই চাপ কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপরও সেতু বানিয়ে দেখালাম।’
নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের জন্য ৪০ জনের ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০ জনের নাম খয়রাত করে কেন বিজ্ঞাপন দিতে হবে? একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদ হারিয়েছেন। তার বয়স হয়ে গেছে ৭০। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি ওই পদে থাকতে পারেন না। এ জন্য কত দেন-দরবার। কত জায়গা থেকে ফোন, কত কিছু। আমেরিকা থেকে ফোন। এটা কিন্তু ঠিক বিবৃতি না। এটা একটা বিজ্ঞাপন। আমার প্রশ্নটা হলো নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়।’
রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার থাকায় এবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানার ছোট ছেলে ববিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো পরিকল্পনা চলছে?
সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এমন কিছুরই পরিকল্পনা নেই। আমাদের দুই বোনের পাঁচ সন্তান। তারা সবসময় দেশের জন্য কাজ করছে। আপনাদের জন্য কাজ করছে। আজকের সিআরআই যত গবেষণামূলক কাজ আছে করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। আমাদের সন্তানদের অবদান রয়েছে এতে। আজকে যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, অটিজম নিয়ে কাজ করা এসবে তাদের অবদান রয়েছে। তারা কিন্তু দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা কেউই রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে কাজ করে না। তারা কিন্তু কেউ কোনো দলীয় পদেও নেই।’
নতুন রাষ্ট্রপতি একজন পোড় খাওয়া মানুষ : দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি একজন পোড় খাওয়া মানুষ। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিত্ব আছে। আমরা চাইব যেন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারও সবসময় এ প্রচেষ্টাই থাকবে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। কারণ আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। সে জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
নতুন রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। পঁচাত্তর-পরবর্তী জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে ডান্ডাবেড়ি দিয়ে রেখেছিলেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী। দীর্ঘদিন তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে ছিলেন। পরে বিএনপির সময় বাধ্য হয়ে তাকে চাকরি ছাড়তেও হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কাতার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের অর্জনগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া সরকারপ্রধান বরাবরের মতো আবারও সবাইকে কৃষি উৎপাদনে ভূমিকার রাখার আহ্বান জানান। তিনি নিজেকে কৃষক দাবি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ কোনো কৃষিভূমি অনাবাদি রাখবেন না। এ সময় তিনি বিদ্যুৎসহ সবকিছুতে সাশ্রয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান।
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় গুলিতে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও দুই সেনা সদস্য, যারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন। গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত নাজিম উদ্দিন সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত শমসের আলীর ছেলে নাজিম ৩০ বছর ধরে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি পাহাড়িদের কাছে ‘বর্ম পার্টি’ নামে পরিচিত। সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে গত অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই সময় থেকে ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন সময়ে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’ এবং ‘বর্ম পার্টি’র অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর রবিবার বেলা ১টায় কেএনএ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুজন সেনাসদস্য আহত হন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি এর আগে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বিয়া’র মতো একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকারের নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছে থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে ও পরবর্তী সময়ে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত শনিবার ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং চারজন শ্রমিককে এখনো কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাতজন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ গতকাল (রবিবার) সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট নিরাপত্তার কারণে গত রবিবার ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া কেএনএর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘি্নত করছে।’
ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে আসার আগে সমর্থকদের মনে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল। একে তো তারা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তার ওপর তাদের ব্যাটিং দর্শন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস মিলে ভারতের বোলারদের যেভাবে নাকাল করে বিনা উইকেটে ১৬৯ রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন, সেটা হরর ছবির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তার ওপর মঈন আলী, অ্যালেক্স হেলসের বিপিএলের পারফরম্যান্স মনে রাখলে বোলারদের পালানোর পথই খোঁজার কথা। সেই সঙ্গে জোফ্রা আর্চারের ফেরা এবং বাংলাদেশের চিরন্তন জুজু লেগস্পিনে আদিল রশিদের সঙ্গে রেহান আহমেদের অন্তর্ভুক্তি সব দিকেই ভয় ধরাচ্ছিল। কিন্তু আজ শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার আগে সবকিছুই ধুয়ে-মুছে সাফ! সিরিজের প্রথম দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দল আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা জিতলেই ‘মিস্টার হোয়াইট’ সিরিজে ইংল্যান্ড হবে হোয়াইটওয়াশ।
সোমবার অনুশীলন করেনি কোনো দলই। বাংলাদেশ দল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে আর ইংল্যান্ড সিরিজ হেরে বিমর্ষ। যদিও জস বাটলার বারবারই বলছেন যে এই সফরে তারা নিয়মিত খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করছেন। যেটাকে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের কাছে মনে হয়েছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কুফল। স্কাই স্পোর্টসে ম্যাচ-পরবর্তী বিশ্লেষণে নাসের বলেছেন, ‘আমাদের ১৮টা কাউন্টি আছে, আমরা কি এক-দুজন ক্রিকেটারকে বদলি হিসেবে পাঠাতে পারতাম না? অলিভার পোপ বা জ্যাক ক্রলি তো সাদা বলে বেশ ভালো খেলে। আমাদের একজন ব্যাটসম্যান কম এ ব্যাপারটা আমি মোটেও মানতে পারছি না।’ আসলে উইল জ্যাকস ও টম অ্যাবেল চোটে পড়ার পর ইংল্যান্ড দল আর তাদের কোনো বদলি নেয়নি।
জুনের মাঝামাঝি শুরু হবে অ্যাশেজ। ইংল্যান্ডের কাছে এই টেস্ট সিরিজের মর্যাদা যেকোনো ক্রিকেট সিরিজের চেয়েই বেশি। ওদিকে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন যারা টি-টোয়েন্টিতে খেলেন, যেমন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুক। লিয়াম লিভিংস্টোন ও জনি বেয়ারস্টো ভুগছেন চোটে। হেলস, স্যাম বিলিংস, জেসন রয়রা খেলছেন পিএসএলে। বাংলাদেশ সফরে তাই খেলোয়াড় সংকটেই পড়েছে ইংল্যান্ড। যার প্রভাবটা পড়েছে মাঠের খেলায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দল সুবিধাটা পেয়েছে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া বিপিএলের। আসরের সেরা তিন ব্যাটসম্যান ও সেরা দুই উইকেটশিকারিকে নির্বাচকরা নিয়েছেন দলে। রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়রা দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টির আগ্রাসী মানসিকতা, সেই সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও তারুণ্যের ছোঁয়া মাঠে চনমনে ভাব। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচসেরা মেহেদি হাসান মিরাজ যেমন বলেছেন, ‘এখন যে খেলোয়াড়রা আছে, তারা সবাই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই, আমি কীভাবে খেলব, ধরে খেলব নাকি এ রকম না। এখানে প্রতিটা বলেই ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে খেলতে হয়। আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই মানসিকতা পরিবর্তন করেছে যে আমরা কীভাবে গ্লেমপ্ল্যান করব, কীভাবে খেলব। এভাবেই হচ্ছে। আর কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার এসেছে। তারাও ভালো ক্রিকেট খেলছে।’
দলের তরুণরা ভালো করায় তৃপ্তি নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠেও। সাবেক অধিনায়ক গতকাল বলেছেন, ‘আমরা যে ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে খেলতে পেরেছি। অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করছি, চেষ্টা করছিলাম। সব সময় হচ্ছিল না।’ দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় হাবিবুলকে দিচ্ছে বাড়তি তৃপ্তি, ‘সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে আমরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি।’
মিরাজ তো দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর দ্বিধাহীন কণ্ঠেই জানিয়েছেন লক্ষ্য এখন ৩-০। মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটার আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষার পার্থক্য বলছে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। খেলোয়াড়রা দেশে ফিরতে পারলেই বাঁচেন! ইংল্যান্ড থেকে আসা জনাকয় সাংবাদিকও শেষ টি-টোয়েন্টির আগেই দেশের বিমান ধরেছেন।
তিন সিংহের আতঙ্ক তাই আপাতত উধাও; বরং আরও একবার বাঘের হুংকারের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় মাইক্রোবাস উল্টে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। রবিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের রাঙামাটিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার খামারবাসা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪০) ও তোতা মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫০), ঝরিনা খাতুন (৪০), আশিক (৭)। তারা একে অপরের আত্মীয়-স্বজন।
দগ্ধরা হলেন, আক্কাস আলী (৫৫), তোতা মিয়া (৬০), তোতা মিয়ার নাতি ইয়াসিন (৫), একই ইউনিয়নের পূর্ব সালকোডা গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার (২৬)। এদের মধ্যে আক্কাস মিয়াকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব-অফিসার আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নামক স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধে আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও দুই নারীসহ পুড়ে যাওয়া চারজনের মরদেহ গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাত নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তোতা মিয়া জানান, রবিবার রাত ১০টায় মেয়ের বাসা ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী রেজিয়া, ছোট বোন দুলেনা বেগম ও নাতি ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে মাইক্রোবাসে করে রওনা হই। ত্রিশাল পার হওয়ার পর রাত ২টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস মাইক্রোবাসটিকে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লেগে যায়। আমরা জানালা দিয়ে কোনো রকমে বের হই। কিন্তু আমার স্ত্রী, ছোট বোন দুলেনাসহ চারজন গাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। তারা চারজন গাড়ির ভেতরে পুড়ে মারা যায়।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাইক্রোবাস চালক পলাতক রয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না : মায়ের হাতের পিঠা খাওয়া হলো না, শেষবারের মতো কথাও বলতে পারলাম না। কথাগুলো বলছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে মাইক্রোবাস উল্টে আগুন লেগে নিহত রেজিয়া খাতুনের মেয়ে শিখা আক্তার। গতকাল সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন বাবা তোতা মিয়ার পাশে বসে বিলাপ করছিল শিখা আক্তার।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিল, আমি ও আমার স্বামী গার্মেন্টসে কাজ করি। ঢাকার শাহাদাতপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ইয়াসিন আমার মা-বাবার সঙ্গে থাকত। দিনের বেলায় যানজটের ভোগান্তি কমাতে রবিবার রাতে আমার ঢাকার বাসায় আসার জন্য ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও ফুফুসহ আরও বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাসে রাত ১০টার দিকে ধৌবাউড়া থেকে রওনা দেন। পরে রাতে খবর পাই মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মা-ফুফুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আমার ছেলে, বাবাসহ অন্যরা আহত হয়েছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মা আমার জন্য পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসছিল, কিন্তু আমার মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না, শেষ বারের মতো মায়ের সঙ্গে কথাও বলতে পারলাম না। আমার মা গ্রামের বাড়ি থেকে আসার সময় আমার জন্য গরুর দুধ, পিঠা, শাক-সবজি নিয়ে আসত। এখন আর কেউ আমার জন্য এসব নিয়ে আসবে না। আমি এতিম হয়ে গেলাম।
উল্লেখ্য, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নাম স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে মারা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেওয়ার পথে অপর একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আরও চারজন আহত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বিনিয়োগের উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এ দেশে বিনিয়োগ করলে সফল হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ যুবক। এদের কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। নির্মাণাধীন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মযজ্ঞ চালু হলে ২০৪১ নয়, তার আগেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাব।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাণিজ্যে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করেই ৮৯৬ জন নিবন্ধন করে সামিটে অংশ নিয়েছেন। এ সামিটের ফলে আগামীতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সহজ হবে। এ সামিটে বিদেশিদের মধ্যে জাপানিরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের যুবকদের কাজে লাগিয়ে আগামী অর্থনীতিতে কৃষির অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। সরকারের সঙ্গে এ দেশের কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ কৃষিতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ এতে বেশি অভ্যস্ত।
জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এসএমইদের অংশগ্রহণ বেশি। চাকরির বাজারের ২৪ শতাংশের বেশি এ খাতে। কিন্তু জিডিপিতে তাদের অংশগ্রহণ কম। তারা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের লিঙ্কেজ কম। তাদের লিঙ্কেজ বাড়ানোর জন্য কাজ করব আমরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এখন সরকার ব্যবসাবান্ধব। পদ্মা সেতু চালু করেছে। বিভিন্ন বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ বলে দেয় ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে নয়, সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ নেতা বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯মতম ভোক্তার বাজার। এখানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। যার ৬৮ শতাংশ জনশক্তি কর্মক্ষম। এখানে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কারণ আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। এখানে ভোক্তাবাজার আছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এটি বুঝেই দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখানে বিনিয়োগ করলে সফল হবেই।
বিজনেস সামিট প্রসঙ্গে এফবিসিসি সভাপতি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশ বিজনেস সামিট করেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু ভুলত্রুটি হলেও সফলতাই বেশি। সফল হওয়ার অন্যতম কারণ ৮৯৬ জন সামিটে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। ৩০০-এর বেশি বিদেশি এসেছে। সামিটে প্রতিটি সেশন ছিল প্রাণবন্ত। বেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে সেশনগুলোতে অংশ নিয়েছেন। এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরও বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই সামিটের উদ্দেশ্য ছিল ব্র্যান্ডিং করা ও দেশের সক্ষমতা তুলে ধরা, এতে আমরা সফল হয়েছি। তিনি জানান, ব্যবসা সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনগুলোতে বেশ কিছু ব্যবসার চ্যালেঞ্জ প্রতিবন্ধকতার কথা উঠে এসেছে। প্রতিটি সেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাব। আশা করছি সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামিটে কৃষিপণ্যের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ খাতের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আছে। কীভাবে কৃষিপণ্যকে আরও বহুমুখী করে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করা যায় এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, এম এ মোমেন, আমীন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন এবং এম এ রাজ্জাক খান রাজ এবং বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ।
এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিটের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। গত শনিবার সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিন প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউজ রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সামিটে।
এবারের সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ৩০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপ ঘোষণা করে ইসি। গত ৬ মাসেও রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিশন। দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতি এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ কমিশনের।
‘অমসৃণ ও খানাখন্দে ভরা’ ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন নির্বাচন কমিশনকে হোঁচটও খাইয়েছে। ইসি বলছে, ‘অমসৃণ রাস্তায় স্টিয়ারিংয়ে থাকা চালক পূর্ণ গতিতে গাড়ি চালাতে না পারায় পরিকল্পনার অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অথচ নকশা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।’
অংশীজনরা (স্টেকহোল্ডারস) বলছেন, সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আস্থা অর্জনের বিকল্প নেই। এটা এখনো তৈরি করতে পারেনি কমিশন। আর বিএনপি বলছে, জনগণের বিশ্বাস অর্জিত না হলে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তারা।
দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতিই রোডম্যাপের বড় বাধা এ কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচন সংকটে পড়বে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। দ্বাদশ নির্বাচনে ঘোষিত রোডম্যাপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংস্কার করার কথা বলেছিল ইসি। এখনো তা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও ২৭ নভেম্বর তিন দফা চিঠির পর টনক নড়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। ২৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাব যাচাই করা হচ্ছে। যদিও কবে হবে, অন্ধকারে রয়েছে ইসি।
ইসির সূত্র বলছে, ভোটে অনিয়ম রোধ ও প্রার্থিতার কিছু বিধান, রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২০৩০ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা বলে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে ইসি। আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাবও ছিল। ভোটের সময় বা ভোটের ফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের পরে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ের অভিযোগের তদন্ত যেন কমিশন করতে পারে, অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট যেন বাতিল করতে পারে, সে প্রস্তাবও রয়েছে। ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে দ্বিমত করে জানিয়েছে, ৯১ ধারা দিয়েই কভার করা সম্ভব। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১ শতাংশ ভোটারের ভোট অনুমোদন করতে পারবেন এ বিষয়টি আইনে নির্ধারিত করে দিতে বলেছিল ইসি। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা বিধিমালা দিয়ে কভার করা সম্ভব।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইসি যুক্তি তুলে ধরে ফিরতি চিঠি দিলেও ১২ মার্চ পর্যন্ত জবাব জানায়নি মন্ত্রণালয়।’
রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় যে কাজটিতে এখনো পিছিয়ে সেটি হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল; প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন; ১৫০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার; ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত ডেটাবেইস ও অ্যাপ্লিকেশন সফওয়্যার প্রণয়ন; প্রার্থী, পর্যবেক্ষক, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ডেটাবেইস এবং দ্রুত ফলাফল প্রেরণসংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে ইসি। সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার বিষয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অগ্রগতি জানায়নি ইসি। অর্থ সংকটের কারণে এই প্রকল্পও বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মে মাসের শুরুতে টেন্ডার না করতে পারলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
ইসির আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত। তবে টেকনিক্যাল কাজ নির্দিষ্ট সময়ের পরে করলে জটিলতা দেখা দেবে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া ছিল নিকট অতীতে ইসির বড় একটি পদক্ষেপ। তবে তদন্তে ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলেও শাস্তি হয়নি। কোন প্রার্থীর কারণে ভোটে অনিয়ম হলো, ইসির তদন্তে তা-ও উঠে আসেনি। প্রার্থী, স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ৬টি আসনে সীমানার পরিবর্তন এনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে ইসি। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সীমানা চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইসি সময়মতো জনশুমারির প্রতিবেদন পায়নি। আবার জনশুমারি অনুযায়ী ৭৫টির মতো আসনে জনসংখ্যার বড় ব্যবধান থাকলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ জনসংখ্যার আসনের সঙ্গে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার আসনের ব্যবধান অনেক বেশি হলেও (৮৮ শতাংশ) জনসংখ্যার পার্থক্যকে আমলে নেওয়া হয়নি। যেমন সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-১৯ আসনের জনসংখ্যা ১৯ লাখ ২ হাজার ২৯। অপরদিকে ঝালকাঠী-১ আসনের জনসংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬। পার্থক্য ৮৮ শতাংশের বেশি। এ রকম আসনের (২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) কথা ভাবা হয়নি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, খসড়া প্রকাশের পর অংশীজনের দাবি-আপত্তি বিবেচনায় সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজটি এগিয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিল ইসি। গত ১৫ জানুয়ারি তারা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ ভোটার। আর পুরনো তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে প্রায় ২২ লাখ মৃত ভোটার; অর্থাৎ ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখে। ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। সাধারণত খসড়া ভোটার তালিকাকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয় বলে ইসি সূত্র জানায়।
ইসির রোডম্যাপের প্রথম বিষয় ছিল সংলাপ। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি শেষ হলেও সবচেয়ে বেশি সমালোচিতও হয়েছে। ৩৯টি দলকে ডাকা হলেও বিএনপিসহ নয়টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছ থেকে ৩১৯টি প্রস্তাব পেয়েছে ইসি। অনেকগুলোর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গত ১৩ মার্চ প্রথম সংলাপ হয় শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, দ্বিতীয় সংলাপ বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে, তৃতীয় দফার সংলাপ প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রথম ও দ্বিতীয় সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশেরও কম ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ও নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সংলাপে অংশ নেওয়া সব অংশীজন জাতির সামনে তা পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। এটি করা তাদের পক্ষে কঠিন বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অমসৃণ পথে কাজ করতে গিয়ে আরও যেসব সমস্যায় পড়েছে ইসি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বগুড়ায় উপনির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের অভিযোগ ইসির খ-াতে ব্যর্থ হওয়া; ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে একজন প্রার্থীর উধাও হয়ে যাওয়া এবং সে ব্যাপারে ইসির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারা; জুনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি, কিন্তু তিনি তা না মানায় ইসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ভোটে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথে অবৈধ ব্যক্তিদের ইভিএমের বোতাম টেপার ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ইসির ব্যবস্থা নিতে না পারা।
নতুন দল নিবন্ধনের কাজটি রোডম্যাপ অনুযায়ী শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৯৮টি দল আবেদন করেছিল। মাঠপর্যায়ের খোঁজ নেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে ৬২টি দল। দলগুলোর কাগজপত্র ও মাঠপর্যায়ের কর্মকান্ডে মিল পাওয়া গেলে তাদের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের বিষয়ে ইসি জানিয়েছে, আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ইসিতে আবেদন না করলেও দেশের ব্যক্তি ও সংস্থা মিলে ২১০টি আবেদন কমিশনে জমা পড়েছে। জনসংযোগ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান।
ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ। প্রশিক্ষণ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরও চলবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইসির কর্মকাণ্ডে এখনো জনগণ আস্থা আনতে পারেনি। দিনের ভোট যে রাতে হয়, তা ক্ষমতাসীন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও ইসির বক্তব্যে পরোক্ষভাবে এসেছে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের মূল কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব হয়নি, হবেও না।’
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।