
ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে আসার আগে সমর্থকদের মনে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল। একে তো তারা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তার ওপর তাদের ব্যাটিং দর্শন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস মিলে ভারতের বোলারদের যেভাবে নাকাল করে বিনা উইকেটে ১৬৯ রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন, সেটা হরর ছবির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তার ওপর মঈন আলী, অ্যালেক্স হেলসের বিপিএলের পারফরম্যান্স মনে রাখলে বোলারদের পালানোর পথই খোঁজার কথা। সেই সঙ্গে জোফ্রা আর্চারের ফেরা এবং বাংলাদেশের চিরন্তন জুজু লেগস্পিনে আদিল রশিদের সঙ্গে রেহান আহমেদের অন্তর্ভুক্তি সব দিকেই ভয় ধরাচ্ছিল। কিন্তু আজ শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার আগে সবকিছুই ধুয়ে-মুছে সাফ! সিরিজের প্রথম দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দল আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা জিতলেই ‘মিস্টার হোয়াইট’ সিরিজে ইংল্যান্ড হবে হোয়াইটওয়াশ।
সোমবার অনুশীলন করেনি কোনো দলই। বাংলাদেশ দল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে আর ইংল্যান্ড সিরিজ হেরে বিমর্ষ। যদিও জস বাটলার বারবারই বলছেন যে এই সফরে তারা নিয়মিত খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করছেন। যেটাকে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের কাছে মনে হয়েছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কুফল। স্কাই স্পোর্টসে ম্যাচ-পরবর্তী বিশ্লেষণে নাসের বলেছেন, ‘আমাদের ১৮টা কাউন্টি আছে, আমরা কি এক-দুজন ক্রিকেটারকে বদলি হিসেবে পাঠাতে পারতাম না? অলিভার পোপ বা জ্যাক ক্রলি তো সাদা বলে বেশ ভালো খেলে। আমাদের একজন ব্যাটসম্যান কম এ ব্যাপারটা আমি মোটেও মানতে পারছি না।’ আসলে উইল জ্যাকস ও টম অ্যাবেল চোটে পড়ার পর ইংল্যান্ড দল আর তাদের কোনো বদলি নেয়নি।
জুনের মাঝামাঝি শুরু হবে অ্যাশেজ। ইংল্যান্ডের কাছে এই টেস্ট সিরিজের মর্যাদা যেকোনো ক্রিকেট সিরিজের চেয়েই বেশি। ওদিকে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন যারা টি-টোয়েন্টিতে খেলেন, যেমন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুক। লিয়াম লিভিংস্টোন ও জনি বেয়ারস্টো ভুগছেন চোটে। হেলস, স্যাম বিলিংস, জেসন রয়রা খেলছেন পিএসএলে। বাংলাদেশ সফরে তাই খেলোয়াড় সংকটেই পড়েছে ইংল্যান্ড। যার প্রভাবটা পড়েছে মাঠের খেলায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দল সুবিধাটা পেয়েছে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া বিপিএলের। আসরের সেরা তিন ব্যাটসম্যান ও সেরা দুই উইকেটশিকারিকে নির্বাচকরা নিয়েছেন দলে। রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়রা দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টির আগ্রাসী মানসিকতা, সেই সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও তারুণ্যের ছোঁয়া মাঠে চনমনে ভাব। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচসেরা মেহেদি হাসান মিরাজ যেমন বলেছেন, ‘এখন যে খেলোয়াড়রা আছে, তারা সবাই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই, আমি কীভাবে খেলব, ধরে খেলব নাকি এ রকম না। এখানে প্রতিটা বলেই ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে খেলতে হয়। আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই মানসিকতা পরিবর্তন করেছে যে আমরা কীভাবে গ্লেমপ্ল্যান করব, কীভাবে খেলব। এভাবেই হচ্ছে। আর কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার এসেছে। তারাও ভালো ক্রিকেট খেলছে।’
দলের তরুণরা ভালো করায় তৃপ্তি নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠেও। সাবেক অধিনায়ক গতকাল বলেছেন, ‘আমরা যে ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে খেলতে পেরেছি। অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করছি, চেষ্টা করছিলাম। সব সময় হচ্ছিল না।’ দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় হাবিবুলকে দিচ্ছে বাড়তি তৃপ্তি, ‘সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে আমরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি।’
মিরাজ তো দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর দ্বিধাহীন কণ্ঠেই জানিয়েছেন লক্ষ্য এখন ৩-০। মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটার আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষার পার্থক্য বলছে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। খেলোয়াড়রা দেশে ফিরতে পারলেই বাঁচেন! ইংল্যান্ড থেকে আসা জনাকয় সাংবাদিকও শেষ টি-টোয়েন্টির আগেই দেশের বিমান ধরেছেন।
তিন সিংহের আতঙ্ক তাই আপাতত উধাও; বরং আরও একবার বাঘের হুংকারের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্ট কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি তারা। তাদের সঙ্গে সংলাপ করার কিছুই নেই।
কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ বা তার জোটের প্রস্তুতি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে সরকারের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪-৮ মার্চ এ সফর করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো সাময়িক কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটাকে আমরা এবং আমাদের জনগণ মোকাবিলা করবে।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে সংলাপ হয়েছে। ২০ জন, ৩০ জন নিয়ে এসে সংলাপে বসেছে। চা-বার্গার খেয়ে গেছে। তারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নির্বাচন থেকে সরিয়ে তারপর সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদের সঙ্গে কীসের কথা বলব, কীসের বৈঠক করব?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে তারা। এরপরও সেই খুনিদের সঙ্গে বসেছি, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। আপনারা দেখেছেন, সবাই আমাকে মানা করেছে ফোন করতে। তবুও আমি তখন তাকে (খালেদা জিয়া) ফোন করি। আমার সঙ্গে কী ব্যবহারটাই না করল? উনি অবরোধ তুললেন না। কী অপমানিত হতে হলো আমাকে?’
খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার ছোট ছেলে (কোকো রহমান) মারা গেল। আমি তার বাসায় গেলাম। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আপনারা দেখেছেন। আমাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা এতটুকু ভদ্রতা জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ। কেউ কি পারবে বাবার খুনিদের সঙ্গে বসতে?’
বিএনপি ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলে নেতা হবে পারে না। আর এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন এই দলের কাছে কী আশা করবেন। তারপরও অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট। এটুকু সহানুভূতি পাচ্ছে সেটা আমার কারণে। ওদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক, কীসের কী?’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিষয়ে ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০ জনের নামে (ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন) যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যামিশন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাদের ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংশোধনী-সংস্কার আনা হয়েছে।’
গত ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, সেটি যদি ভেবেন দেখেন কী পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের পর ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা, ২০০৭ সালের নির্বাচন, মনে করুন। এ ঘটনাগুলো যেন আবার না ঘটে সে জন্যই আমরা সংস্কাগুলো করেছি। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে যে তারা কীভাবে চায়? নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই আছে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে।’
সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তারা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে গেছে। এ ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘœ হতে পারে, শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর কী প্রমাণ করতে হবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনেও যেন জনগণ স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই প্রস্তুতি আছে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে ওদের (বিএনপির) জন্মই হয়েছে অস্ত্র হাতে নিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন সেনার মাধ্যমে। তিনি হলেন সেনাবাহিনীর প্রধান, আবার সেই অবস্থাতেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসেছে, অস্ত্র হাতে নিয়ে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল হলো বিএনপি। কাজেই এদের কাছে জনগণ আর বেশি কী আশা করবে।’
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সরকার সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সবার। সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সত্যের জয় হয়। এটা কেউ ঢাকতে পারে না এটা আমি বিশ্বাস করি।’
শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে এমন কোনো চাপ নেই : আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোনো চাপই টলাতে পারবে না এমন প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর ওপরে আল্লাহ। আমার মাথায় আছে বাবার হাত। কে কী চাপ দিল, এতে আমার কিছু আসে যায় না।’
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি দূতাবাসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব বিষয়ে কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। আমি জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে কিছু যায় আসে না। কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন কি থেমে গেছে?’
পদ্মা সেতুসহ উন্নয়ন কাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন, কেন? একটা ভদ্রলোক তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো জানি না। একটাই সুবিধা, এমডি পদে থাকলে মানি লন্ডারিং করা যায়। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। সেই চাপ কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপরও সেতু বানিয়ে দেখালাম।’
নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের জন্য ৪০ জনের ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০ জনের নাম খয়রাত করে কেন বিজ্ঞাপন দিতে হবে? একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদ হারিয়েছেন। তার বয়স হয়ে গেছে ৭০। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি ওই পদে থাকতে পারেন না। এ জন্য কত দেন-দরবার। কত জায়গা থেকে ফোন, কত কিছু। আমেরিকা থেকে ফোন। এটা কিন্তু ঠিক বিবৃতি না। এটা একটা বিজ্ঞাপন। আমার প্রশ্নটা হলো নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়।’
রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার থাকায় এবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানার ছোট ছেলে ববিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো পরিকল্পনা চলছে?
সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এমন কিছুরই পরিকল্পনা নেই। আমাদের দুই বোনের পাঁচ সন্তান। তারা সবসময় দেশের জন্য কাজ করছে। আপনাদের জন্য কাজ করছে। আজকের সিআরআই যত গবেষণামূলক কাজ আছে করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। আমাদের সন্তানদের অবদান রয়েছে এতে। আজকে যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, অটিজম নিয়ে কাজ করা এসবে তাদের অবদান রয়েছে। তারা কিন্তু দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা কেউই রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে কাজ করে না। তারা কিন্তু কেউ কোনো দলীয় পদেও নেই।’
নতুন রাষ্ট্রপতি একজন পোড় খাওয়া মানুষ : দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি একজন পোড় খাওয়া মানুষ। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিত্ব আছে। আমরা চাইব যেন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারও সবসময় এ প্রচেষ্টাই থাকবে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। কারণ আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। সে জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
নতুন রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। পঁচাত্তর-পরবর্তী জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে ডান্ডাবেড়ি দিয়ে রেখেছিলেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী। দীর্ঘদিন তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে ছিলেন। পরে বিএনপির সময় বাধ্য হয়ে তাকে চাকরি ছাড়তেও হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কাতার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের অর্জনগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া সরকারপ্রধান বরাবরের মতো আবারও সবাইকে কৃষি উৎপাদনে ভূমিকার রাখার আহ্বান জানান। তিনি নিজেকে কৃষক দাবি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ কোনো কৃষিভূমি অনাবাদি রাখবেন না। এ সময় তিনি বিদ্যুৎসহ সবকিছুতে সাশ্রয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান।
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় গুলিতে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও দুই সেনা সদস্য, যারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন। গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত নাজিম উদ্দিন সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত শমসের আলীর ছেলে নাজিম ৩০ বছর ধরে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি পাহাড়িদের কাছে ‘বর্ম পার্টি’ নামে পরিচিত। সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে গত অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই সময় থেকে ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন সময়ে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’ এবং ‘বর্ম পার্টি’র অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর রবিবার বেলা ১টায় কেএনএ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুজন সেনাসদস্য আহত হন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি এর আগে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বিয়া’র মতো একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকারের নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছে থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে ও পরবর্তী সময়ে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত শনিবার ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং চারজন শ্রমিককে এখনো কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাতজন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ গতকাল (রবিবার) সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট নিরাপত্তার কারণে গত রবিবার ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া কেএনএর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘি্নত করছে।’
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় মাইক্রোবাস উল্টে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। রবিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের রাঙামাটিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার খামারবাসা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪০) ও তোতা মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫০), ঝরিনা খাতুন (৪০), আশিক (৭)। তারা একে অপরের আত্মীয়-স্বজন।
দগ্ধরা হলেন, আক্কাস আলী (৫৫), তোতা মিয়া (৬০), তোতা মিয়ার নাতি ইয়াসিন (৫), একই ইউনিয়নের পূর্ব সালকোডা গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার (২৬)। এদের মধ্যে আক্কাস মিয়াকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব-অফিসার আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নামক স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধে আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও দুই নারীসহ পুড়ে যাওয়া চারজনের মরদেহ গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাত নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তোতা মিয়া জানান, রবিবার রাত ১০টায় মেয়ের বাসা ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী রেজিয়া, ছোট বোন দুলেনা বেগম ও নাতি ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে মাইক্রোবাসে করে রওনা হই। ত্রিশাল পার হওয়ার পর রাত ২টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস মাইক্রোবাসটিকে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লেগে যায়। আমরা জানালা দিয়ে কোনো রকমে বের হই। কিন্তু আমার স্ত্রী, ছোট বোন দুলেনাসহ চারজন গাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। তারা চারজন গাড়ির ভেতরে পুড়ে মারা যায়।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাইক্রোবাস চালক পলাতক রয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না : মায়ের হাতের পিঠা খাওয়া হলো না, শেষবারের মতো কথাও বলতে পারলাম না। কথাগুলো বলছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে মাইক্রোবাস উল্টে আগুন লেগে নিহত রেজিয়া খাতুনের মেয়ে শিখা আক্তার। গতকাল সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন বাবা তোতা মিয়ার পাশে বসে বিলাপ করছিল শিখা আক্তার।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিল, আমি ও আমার স্বামী গার্মেন্টসে কাজ করি। ঢাকার শাহাদাতপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ইয়াসিন আমার মা-বাবার সঙ্গে থাকত। দিনের বেলায় যানজটের ভোগান্তি কমাতে রবিবার রাতে আমার ঢাকার বাসায় আসার জন্য ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও ফুফুসহ আরও বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাসে রাত ১০টার দিকে ধৌবাউড়া থেকে রওনা দেন। পরে রাতে খবর পাই মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মা-ফুফুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আমার ছেলে, বাবাসহ অন্যরা আহত হয়েছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মা আমার জন্য পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসছিল, কিন্তু আমার মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না, শেষ বারের মতো মায়ের সঙ্গে কথাও বলতে পারলাম না। আমার মা গ্রামের বাড়ি থেকে আসার সময় আমার জন্য গরুর দুধ, পিঠা, শাক-সবজি নিয়ে আসত। এখন আর কেউ আমার জন্য এসব নিয়ে আসবে না। আমি এতিম হয়ে গেলাম।
উল্লেখ্য, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নাম স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে মারা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেওয়ার পথে অপর একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আরও চারজন আহত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বিনিয়োগের উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এ দেশে বিনিয়োগ করলে সফল হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ যুবক। এদের কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। নির্মাণাধীন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মযজ্ঞ চালু হলে ২০৪১ নয়, তার আগেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাব।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাণিজ্যে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করেই ৮৯৬ জন নিবন্ধন করে সামিটে অংশ নিয়েছেন। এ সামিটের ফলে আগামীতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সহজ হবে। এ সামিটে বিদেশিদের মধ্যে জাপানিরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের যুবকদের কাজে লাগিয়ে আগামী অর্থনীতিতে কৃষির অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। সরকারের সঙ্গে এ দেশের কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ কৃষিতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ এতে বেশি অভ্যস্ত।
জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এসএমইদের অংশগ্রহণ বেশি। চাকরির বাজারের ২৪ শতাংশের বেশি এ খাতে। কিন্তু জিডিপিতে তাদের অংশগ্রহণ কম। তারা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের লিঙ্কেজ কম। তাদের লিঙ্কেজ বাড়ানোর জন্য কাজ করব আমরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এখন সরকার ব্যবসাবান্ধব। পদ্মা সেতু চালু করেছে। বিভিন্ন বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ বলে দেয় ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে নয়, সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ নেতা বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯মতম ভোক্তার বাজার। এখানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। যার ৬৮ শতাংশ জনশক্তি কর্মক্ষম। এখানে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কারণ আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। এখানে ভোক্তাবাজার আছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এটি বুঝেই দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখানে বিনিয়োগ করলে সফল হবেই।
বিজনেস সামিট প্রসঙ্গে এফবিসিসি সভাপতি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশ বিজনেস সামিট করেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু ভুলত্রুটি হলেও সফলতাই বেশি। সফল হওয়ার অন্যতম কারণ ৮৯৬ জন সামিটে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। ৩০০-এর বেশি বিদেশি এসেছে। সামিটে প্রতিটি সেশন ছিল প্রাণবন্ত। বেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে সেশনগুলোতে অংশ নিয়েছেন। এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরও বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই সামিটের উদ্দেশ্য ছিল ব্র্যান্ডিং করা ও দেশের সক্ষমতা তুলে ধরা, এতে আমরা সফল হয়েছি। তিনি জানান, ব্যবসা সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনগুলোতে বেশ কিছু ব্যবসার চ্যালেঞ্জ প্রতিবন্ধকতার কথা উঠে এসেছে। প্রতিটি সেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাব। আশা করছি সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামিটে কৃষিপণ্যের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ খাতের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আছে। কীভাবে কৃষিপণ্যকে আরও বহুমুখী করে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করা যায় এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, এম এ মোমেন, আমীন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন এবং এম এ রাজ্জাক খান রাজ এবং বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ।
এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিটের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। গত শনিবার সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিন প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউজ রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সামিটে।
এবারের সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ৩০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপ ঘোষণা করে ইসি। গত ৬ মাসেও রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিশন। দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতি এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ কমিশনের।
‘অমসৃণ ও খানাখন্দে ভরা’ ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন নির্বাচন কমিশনকে হোঁচটও খাইয়েছে। ইসি বলছে, ‘অমসৃণ রাস্তায় স্টিয়ারিংয়ে থাকা চালক পূর্ণ গতিতে গাড়ি চালাতে না পারায় পরিকল্পনার অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অথচ নকশা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।’
অংশীজনরা (স্টেকহোল্ডারস) বলছেন, সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আস্থা অর্জনের বিকল্প নেই। এটা এখনো তৈরি করতে পারেনি কমিশন। আর বিএনপি বলছে, জনগণের বিশ্বাস অর্জিত না হলে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তারা।
দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতিই রোডম্যাপের বড় বাধা এ কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচন সংকটে পড়বে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। দ্বাদশ নির্বাচনে ঘোষিত রোডম্যাপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংস্কার করার কথা বলেছিল ইসি। এখনো তা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও ২৭ নভেম্বর তিন দফা চিঠির পর টনক নড়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। ২৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাব যাচাই করা হচ্ছে। যদিও কবে হবে, অন্ধকারে রয়েছে ইসি।
ইসির সূত্র বলছে, ভোটে অনিয়ম রোধ ও প্রার্থিতার কিছু বিধান, রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২০৩০ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা বলে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে ইসি। আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাবও ছিল। ভোটের সময় বা ভোটের ফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের পরে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ের অভিযোগের তদন্ত যেন কমিশন করতে পারে, অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট যেন বাতিল করতে পারে, সে প্রস্তাবও রয়েছে। ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে দ্বিমত করে জানিয়েছে, ৯১ ধারা দিয়েই কভার করা সম্ভব। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১ শতাংশ ভোটারের ভোট অনুমোদন করতে পারবেন এ বিষয়টি আইনে নির্ধারিত করে দিতে বলেছিল ইসি। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা বিধিমালা দিয়ে কভার করা সম্ভব।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইসি যুক্তি তুলে ধরে ফিরতি চিঠি দিলেও ১২ মার্চ পর্যন্ত জবাব জানায়নি মন্ত্রণালয়।’
রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় যে কাজটিতে এখনো পিছিয়ে সেটি হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল; প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন; ১৫০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার; ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত ডেটাবেইস ও অ্যাপ্লিকেশন সফওয়্যার প্রণয়ন; প্রার্থী, পর্যবেক্ষক, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ডেটাবেইস এবং দ্রুত ফলাফল প্রেরণসংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে ইসি। সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার বিষয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অগ্রগতি জানায়নি ইসি। অর্থ সংকটের কারণে এই প্রকল্পও বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মে মাসের শুরুতে টেন্ডার না করতে পারলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
ইসির আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত। তবে টেকনিক্যাল কাজ নির্দিষ্ট সময়ের পরে করলে জটিলতা দেখা দেবে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া ছিল নিকট অতীতে ইসির বড় একটি পদক্ষেপ। তবে তদন্তে ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলেও শাস্তি হয়নি। কোন প্রার্থীর কারণে ভোটে অনিয়ম হলো, ইসির তদন্তে তা-ও উঠে আসেনি। প্রার্থী, স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ৬টি আসনে সীমানার পরিবর্তন এনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে ইসি। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সীমানা চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইসি সময়মতো জনশুমারির প্রতিবেদন পায়নি। আবার জনশুমারি অনুযায়ী ৭৫টির মতো আসনে জনসংখ্যার বড় ব্যবধান থাকলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ জনসংখ্যার আসনের সঙ্গে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার আসনের ব্যবধান অনেক বেশি হলেও (৮৮ শতাংশ) জনসংখ্যার পার্থক্যকে আমলে নেওয়া হয়নি। যেমন সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-১৯ আসনের জনসংখ্যা ১৯ লাখ ২ হাজার ২৯। অপরদিকে ঝালকাঠী-১ আসনের জনসংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬। পার্থক্য ৮৮ শতাংশের বেশি। এ রকম আসনের (২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) কথা ভাবা হয়নি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, খসড়া প্রকাশের পর অংশীজনের দাবি-আপত্তি বিবেচনায় সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজটি এগিয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিল ইসি। গত ১৫ জানুয়ারি তারা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ ভোটার। আর পুরনো তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে প্রায় ২২ লাখ মৃত ভোটার; অর্থাৎ ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখে। ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। সাধারণত খসড়া ভোটার তালিকাকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয় বলে ইসি সূত্র জানায়।
ইসির রোডম্যাপের প্রথম বিষয় ছিল সংলাপ। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি শেষ হলেও সবচেয়ে বেশি সমালোচিতও হয়েছে। ৩৯টি দলকে ডাকা হলেও বিএনপিসহ নয়টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছ থেকে ৩১৯টি প্রস্তাব পেয়েছে ইসি। অনেকগুলোর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গত ১৩ মার্চ প্রথম সংলাপ হয় শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, দ্বিতীয় সংলাপ বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে, তৃতীয় দফার সংলাপ প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রথম ও দ্বিতীয় সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশেরও কম ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ও নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সংলাপে অংশ নেওয়া সব অংশীজন জাতির সামনে তা পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। এটি করা তাদের পক্ষে কঠিন বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অমসৃণ পথে কাজ করতে গিয়ে আরও যেসব সমস্যায় পড়েছে ইসি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বগুড়ায় উপনির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের অভিযোগ ইসির খ-াতে ব্যর্থ হওয়া; ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে একজন প্রার্থীর উধাও হয়ে যাওয়া এবং সে ব্যাপারে ইসির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারা; জুনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি, কিন্তু তিনি তা না মানায় ইসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ভোটে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথে অবৈধ ব্যক্তিদের ইভিএমের বোতাম টেপার ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ইসির ব্যবস্থা নিতে না পারা।
নতুন দল নিবন্ধনের কাজটি রোডম্যাপ অনুযায়ী শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৯৮টি দল আবেদন করেছিল। মাঠপর্যায়ের খোঁজ নেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে ৬২টি দল। দলগুলোর কাগজপত্র ও মাঠপর্যায়ের কর্মকান্ডে মিল পাওয়া গেলে তাদের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের বিষয়ে ইসি জানিয়েছে, আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ইসিতে আবেদন না করলেও দেশের ব্যক্তি ও সংস্থা মিলে ২১০টি আবেদন কমিশনে জমা পড়েছে। জনসংযোগ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান।
ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ। প্রশিক্ষণ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরও চলবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইসির কর্মকাণ্ডে এখনো জনগণ আস্থা আনতে পারেনি। দিনের ভোট যে রাতে হয়, তা ক্ষমতাসীন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও ইসির বক্তব্যে পরোক্ষভাবে এসেছে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের মূল কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব হয়নি, হবেও না।’
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।