
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপ ঘোষণা করে ইসি। গত ৬ মাসেও রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিশন। দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতি এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ কমিশনের।
‘অমসৃণ ও খানাখন্দে ভরা’ ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন নির্বাচন কমিশনকে হোঁচটও খাইয়েছে। ইসি বলছে, ‘অমসৃণ রাস্তায় স্টিয়ারিংয়ে থাকা চালক পূর্ণ গতিতে গাড়ি চালাতে না পারায় পরিকল্পনার অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অথচ নকশা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।’
অংশীজনরা (স্টেকহোল্ডারস) বলছেন, সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আস্থা অর্জনের বিকল্প নেই। এটা এখনো তৈরি করতে পারেনি কমিশন। আর বিএনপি বলছে, জনগণের বিশ্বাস অর্জিত না হলে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে না তারা।
দেশের বিরোধপূর্ণ রাজনীতিই রোডম্যাপের বড় বাধা এ কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচন সংকটে পড়বে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। দ্বাদশ নির্বাচনে ঘোষিত রোডম্যাপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংস্কার করার কথা বলেছিল ইসি। এখনো তা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও ২৭ নভেম্বর তিন দফা চিঠির পর টনক নড়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। ২৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাব যাচাই করা হচ্ছে। যদিও কবে হবে, অন্ধকারে রয়েছে ইসি।
ইসির সূত্র বলছে, ভোটে অনিয়ম রোধ ও প্রার্থিতার কিছু বিধান, রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২০৩০ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা বলে সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে ইসি। আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাবও ছিল। ভোটের সময় বা ভোটের ফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের পরে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ের অভিযোগের তদন্ত যেন কমিশন করতে পারে, অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট যেন বাতিল করতে পারে, সে প্রস্তাবও রয়েছে। ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে দ্বিমত করে জানিয়েছে, ৯১ ধারা দিয়েই কভার করা সম্ভব। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১ শতাংশ ভোটারের ভোট অনুমোদন করতে পারবেন এ বিষয়টি আইনে নির্ধারিত করে দিতে বলেছিল ইসি। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা বিধিমালা দিয়ে কভার করা সম্ভব।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইসি যুক্তি তুলে ধরে ফিরতি চিঠি দিলেও ১২ মার্চ পর্যন্ত জবাব জানায়নি মন্ত্রণালয়।’
রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বিতীয় যে কাজটিতে এখনো পিছিয়ে সেটি হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল; প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন; ১৫০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার; ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত ডেটাবেইস ও অ্যাপ্লিকেশন সফওয়্যার প্রণয়ন; প্রার্থী, পর্যবেক্ষক, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ডেটাবেইস এবং দ্রুত ফলাফল প্রেরণসংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে ইসি। সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার বিষয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অগ্রগতি জানায়নি ইসি। অর্থ সংকটের কারণে এই প্রকল্পও বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মে মাসের শুরুতে টেন্ডার না করতে পারলে ৩০০ আসনে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যাবে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
ইসির আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত। তবে টেকনিক্যাল কাজ নির্দিষ্ট সময়ের পরে করলে জটিলতা দেখা দেবে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া ছিল নিকট অতীতে ইসির বড় একটি পদক্ষেপ। তবে তদন্তে ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলেও শাস্তি হয়নি। কোন প্রার্থীর কারণে ভোটে অনিয়ম হলো, ইসির তদন্তে তা-ও উঠে আসেনি। প্রার্থী, স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের ৬টি আসনে সীমানার পরিবর্তন এনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা চূড়ান্ত করেছে ইসি। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সীমানা চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইসি সময়মতো জনশুমারির প্রতিবেদন পায়নি। আবার জনশুমারি অনুযায়ী ৭৫টির মতো আসনে জনসংখ্যার বড় ব্যবধান থাকলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ জনসংখ্যার আসনের সঙ্গে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার আসনের ব্যবধান অনেক বেশি হলেও (৮৮ শতাংশ) জনসংখ্যার পার্থক্যকে আমলে নেওয়া হয়নি। যেমন সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-১৯ আসনের জনসংখ্যা ১৯ লাখ ২ হাজার ২৯। অপরদিকে ঝালকাঠী-১ আসনের জনসংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬। পার্থক্য ৮৮ শতাংশের বেশি। এ রকম আসনের (২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ) কথা ভাবা হয়নি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, খসড়া প্রকাশের পর অংশীজনের দাবি-আপত্তি বিবেচনায় সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজটি এগিয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিল ইসি। গত ১৫ জানুয়ারি তারা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ ভোটার। আর পুরনো তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে প্রায় ২২ লাখ মৃত ভোটার; অর্থাৎ ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখে। ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। সাধারণত খসড়া ভোটার তালিকাকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয় বলে ইসি সূত্র জানায়।
ইসির রোডম্যাপের প্রথম বিষয় ছিল সংলাপ। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি শেষ হলেও সবচেয়ে বেশি সমালোচিতও হয়েছে। ৩৯টি দলকে ডাকা হলেও বিএনপিসহ নয়টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর কাছ থেকে ৩১৯টি প্রস্তাব পেয়েছে ইসি। অনেকগুলোর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গত ১৩ মার্চ প্রথম সংলাপ হয় শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, দ্বিতীয় সংলাপ বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে, তৃতীয় দফার সংলাপ প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রথম ও দ্বিতীয় সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশেরও কম ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ও নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সংলাপে অংশ নেওয়া সব অংশীজন জাতির সামনে তা পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। এটি করা তাদের পক্ষে কঠিন বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অমসৃণ পথে কাজ করতে গিয়ে আরও যেসব সমস্যায় পড়েছে ইসি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বগুড়ায় উপনির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের অভিযোগ ইসির খ-াতে ব্যর্থ হওয়া; ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে একজন প্রার্থীর উধাও হয়ে যাওয়া এবং সে ব্যাপারে ইসির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারা; জুনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি, কিন্তু তিনি তা না মানায় ইসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ভোটে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথে অবৈধ ব্যক্তিদের ইভিএমের বোতাম টেপার ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ইসির ব্যবস্থা নিতে না পারা।
নতুন দল নিবন্ধনের কাজটি রোডম্যাপ অনুযায়ী শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৯৮টি দল আবেদন করেছিল। মাঠপর্যায়ের খোঁজ নেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে ৬২টি দল। দলগুলোর কাগজপত্র ও মাঠপর্যায়ের কর্মকান্ডে মিল পাওয়া গেলে তাদের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের বিষয়ে ইসি জানিয়েছে, আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ইসিতে আবেদন না করলেও দেশের ব্যক্তি ও সংস্থা মিলে ২১০টি আবেদন কমিশনে জমা পড়েছে। জনসংযোগ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান।
ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ। প্রশিক্ষণ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরও চলবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইসির কর্মকাণ্ডে এখনো জনগণ আস্থা আনতে পারেনি। দিনের ভোট যে রাতে হয়, তা ক্ষমতাসীন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও ইসির বক্তব্যে পরোক্ষভাবে এসেছে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের মূল কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব হয়নি, হবেও না।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংলাপ কার সঙ্গে করব? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্ট কী? নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি তারা। তাদের সঙ্গে সংলাপ করার কিছুই নেই।
কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ বা তার জোটের প্রস্তুতি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে সরকারের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গত ৪-৮ মার্চ এ সফর করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো সাময়িক কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটাকে আমরা এবং আমাদের জনগণ মোকাবিলা করবে।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে সংলাপ হয়েছে। ২০ জন, ৩০ জন নিয়ে এসে সংলাপে বসেছে। চা-বার্গার খেয়ে গেছে। তারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নির্বাচন থেকে সরিয়ে তারপর সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদের সঙ্গে কীসের কথা বলব, কীসের বৈঠক করব?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে তারা। এরপরও সেই খুনিদের সঙ্গে বসেছি, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। আপনারা দেখেছেন, সবাই আমাকে মানা করেছে ফোন করতে। তবুও আমি তখন তাকে (খালেদা জিয়া) ফোন করি। আমার সঙ্গে কী ব্যবহারটাই না করল? উনি অবরোধ তুললেন না। কী অপমানিত হতে হলো আমাকে?’
খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার ছোট ছেলে (কোকো রহমান) মারা গেল। আমি তার বাসায় গেলাম। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আপনারা দেখেছেন। আমাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা এতটুকু ভদ্রতা জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ। কেউ কি পারবে বাবার খুনিদের সঙ্গে বসতে?’
বিএনপি ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের গঠনতন্ত্র নিজেরা ভঙ্গ করছে। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলে নেতা হবে পারে না। আর এখন সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন এই দলের কাছে কী আশা করবেন। তারপরও অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের আকুতিতে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট। এটুকু সহানুভূতি পাচ্ছে সেটা আমার কারণে। ওদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক, কীসের কী?’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিষয়ে ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০ জনের নামে (ওয়াশিংটন পোস্টের বিজ্ঞাপন) যেটা এসেছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যামিশন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাদের ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে। নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, তার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংশোধনী-সংস্কার আনা হয়েছে।’
গত ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা চিন্তা করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে সন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, সেটি যদি ভেবেন দেখেন কী পাওয়া যায়। ২০০৬ সালের পর ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা, ২০০৭ সালের নির্বাচন, মনে করুন। এ ঘটনাগুলো যেন আবার না ঘটে সে জন্যই আমরা সংস্কাগুলো করেছি। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে যে তারা কীভাবে চায়? নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই আছে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে।’
সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তারা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে গেছে। এ ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘœ হতে পারে, শান্তিপূর্ণ হতে পারে, অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর কী প্রমাণ করতে হবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনেও যেন জনগণ স্বাধীনভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে সেই প্রস্তুতি আছে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোই এর প্রমাণ।’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে ওদের (বিএনপির) জন্মই হয়েছে অস্ত্র হাতে নিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন সেনার মাধ্যমে। তিনি হলেন সেনাবাহিনীর প্রধান, আবার সেই অবস্থাতেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসেছে, অস্ত্র হাতে নিয়ে। আর সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল হলো বিএনপি। কাজেই এদের কাছে জনগণ আর বেশি কী আশা করবে।’
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সরকার সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সবার। সবাইকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সত্যের জয় হয়। এটা কেউ ঢাকতে পারে না এটা আমি বিশ্বাস করি।’
শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে এমন কোনো চাপ নেই : আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোনো চাপই টলাতে পারবে না এমন প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে টলাতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর ওপরে আল্লাহ। আমার মাথায় আছে বাবার হাত। কে কী চাপ দিল, এতে আমার কিছু আসে যায় না।’
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি দূতাবাসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব বিষয়ে কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। আমি জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে কিছু যায় আসে না। কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন কি থেমে গেছে?’
পদ্মা সেতুসহ উন্নয়ন কাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন, কেন? একটা ভদ্রলোক তাকে একটি ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু তা তো জানি না। একটাই সুবিধা, এমডি পদে থাকলে মানি লন্ডারিং করা যায়। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। সেই চাপ কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপরও সেতু বানিয়ে দেখালাম।’
নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের জন্য ৪০ জনের ‘খোলা চিঠি’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০ জনের নাম খয়রাত করে কেন বিজ্ঞাপন দিতে হবে? একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদ হারিয়েছেন। তার বয়স হয়ে গেছে ৭০। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি ওই পদে থাকতে পারেন না। এ জন্য কত দেন-দরবার। কত জায়গা থেকে ফোন, কত কিছু। আমেরিকা থেকে ফোন। এটা কিন্তু ঠিক বিবৃতি না। এটা একটা বিজ্ঞাপন। আমার প্রশ্নটা হলো নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়।’
রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার থাকায় এবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানার ছোট ছেলে ববিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো পরিকল্পনা চলছে?
সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এমন কিছুরই পরিকল্পনা নেই। আমাদের দুই বোনের পাঁচ সন্তান। তারা সবসময় দেশের জন্য কাজ করছে। আপনাদের জন্য কাজ করছে। আজকের সিআরআই যত গবেষণামূলক কাজ আছে করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। আমাদের সন্তানদের অবদান রয়েছে এতে। আজকে যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, অটিজম নিয়ে কাজ করা এসবে তাদের অবদান রয়েছে। তারা কিন্তু দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা কেউই রাজনৈতিক অভিলাষ নিয়ে কাজ করে না। তারা কিন্তু কেউ কোনো দলীয় পদেও নেই।’
নতুন রাষ্ট্রপতি একজন পোড় খাওয়া মানুষ : দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, তিনি একজন পোড় খাওয়া মানুষ। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিত্ব আছে। আমরা চাইব যেন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারও সবসময় এ প্রচেষ্টাই থাকবে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। কারণ আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। সে জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
নতুন রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। পঁচাত্তর-পরবর্তী জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে ডান্ডাবেড়ি দিয়ে রেখেছিলেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী। দীর্ঘদিন তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে ছিলেন। পরে বিএনপির সময় বাধ্য হয়ে তাকে চাকরি ছাড়তেও হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কাতার সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের অর্জনগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া সরকারপ্রধান বরাবরের মতো আবারও সবাইকে কৃষি উৎপাদনে ভূমিকার রাখার আহ্বান জানান। তিনি নিজেকে কৃষক দাবি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ কোনো কৃষিভূমি অনাবাদি রাখবেন না। এ সময় তিনি বিদ্যুৎসহ সবকিছুতে সাশ্রয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান।
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় গুলিতে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও দুই সেনা সদস্য, যারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন। গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত নাজিম উদ্দিন সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত শমসের আলীর ছেলে নাজিম ৩০ বছর ধরে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি পাহাড়িদের কাছে ‘বর্ম পার্টি’ নামে পরিচিত। সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে গত অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই সময় থেকে ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন সময়ে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বীয়া’ এবং ‘বর্ম পার্টি’র অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর রবিবার বেলা ১টায় কেএনএ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুজন সেনাসদস্য আহত হন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি এর আগে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দোল শারক্বিয়া’র মতো একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকারের নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছে থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে ও পরবর্তী সময়ে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত শনিবার ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং চারজন শ্রমিককে এখনো কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাতজন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ গতকাল (রবিবার) সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট নিরাপত্তার কারণে গত রবিবার ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া কেএনএর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘি্নত করছে।’
ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে আসার আগে সমর্থকদের মনে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল। একে তো তারা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তার ওপর তাদের ব্যাটিং দর্শন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস মিলে ভারতের বোলারদের যেভাবে নাকাল করে বিনা উইকেটে ১৬৯ রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন, সেটা হরর ছবির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তার ওপর মঈন আলী, অ্যালেক্স হেলসের বিপিএলের পারফরম্যান্স মনে রাখলে বোলারদের পালানোর পথই খোঁজার কথা। সেই সঙ্গে জোফ্রা আর্চারের ফেরা এবং বাংলাদেশের চিরন্তন জুজু লেগস্পিনে আদিল রশিদের সঙ্গে রেহান আহমেদের অন্তর্ভুক্তি সব দিকেই ভয় ধরাচ্ছিল। কিন্তু আজ শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামার আগে সবকিছুই ধুয়ে-মুছে সাফ! সিরিজের প্রথম দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দল আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা জিতলেই ‘মিস্টার হোয়াইট’ সিরিজে ইংল্যান্ড হবে হোয়াইটওয়াশ।
সোমবার অনুশীলন করেনি কোনো দলই। বাংলাদেশ দল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে আর ইংল্যান্ড সিরিজ হেরে বিমর্ষ। যদিও জস বাটলার বারবারই বলছেন যে এই সফরে তারা নিয়মিত খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করছেন। যেটাকে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের কাছে মনে হয়েছে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কুফল। স্কাই স্পোর্টসে ম্যাচ-পরবর্তী বিশ্লেষণে নাসের বলেছেন, ‘আমাদের ১৮টা কাউন্টি আছে, আমরা কি এক-দুজন ক্রিকেটারকে বদলি হিসেবে পাঠাতে পারতাম না? অলিভার পোপ বা জ্যাক ক্রলি তো সাদা বলে বেশ ভালো খেলে। আমাদের একজন ব্যাটসম্যান কম এ ব্যাপারটা আমি মোটেও মানতে পারছি না।’ আসলে উইল জ্যাকস ও টম অ্যাবেল চোটে পড়ার পর ইংল্যান্ড দল আর তাদের কোনো বদলি নেয়নি।
জুনের মাঝামাঝি শুরু হবে অ্যাশেজ। ইংল্যান্ডের কাছে এই টেস্ট সিরিজের মর্যাদা যেকোনো ক্রিকেট সিরিজের চেয়েই বেশি। ওদিকে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন যারা টি-টোয়েন্টিতে খেলেন, যেমন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুক। লিয়াম লিভিংস্টোন ও জনি বেয়ারস্টো ভুগছেন চোটে। হেলস, স্যাম বিলিংস, জেসন রয়রা খেলছেন পিএসএলে। বাংলাদেশ সফরে তাই খেলোয়াড় সংকটেই পড়েছে ইংল্যান্ড। যার প্রভাবটা পড়েছে মাঠের খেলায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দল সুবিধাটা পেয়েছে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া বিপিএলের। আসরের সেরা তিন ব্যাটসম্যান ও সেরা দুই উইকেটশিকারিকে নির্বাচকরা নিয়েছেন দলে। রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়রা দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টির আগ্রাসী মানসিকতা, সেই সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও তারুণ্যের ছোঁয়া মাঠে চনমনে ভাব। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচসেরা মেহেদি হাসান মিরাজ যেমন বলেছেন, ‘এখন যে খেলোয়াড়রা আছে, তারা সবাই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই, আমি কীভাবে খেলব, ধরে খেলব নাকি এ রকম না। এখানে প্রতিটা বলেই ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে খেলতে হয়। আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই মানসিকতা পরিবর্তন করেছে যে আমরা কীভাবে গ্লেমপ্ল্যান করব, কীভাবে খেলব। এভাবেই হচ্ছে। আর কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার এসেছে। তারাও ভালো ক্রিকেট খেলছে।’
দলের তরুণরা ভালো করায় তৃপ্তি নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠেও। সাবেক অধিনায়ক গতকাল বলেছেন, ‘আমরা যে ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে খেলতে পেরেছি। অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করছি, চেষ্টা করছিলাম। সব সময় হচ্ছিল না।’ দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় হাবিবুলকে দিচ্ছে বাড়তি তৃপ্তি, ‘সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে আমরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি।’
মিরাজ তো দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর দ্বিধাহীন কণ্ঠেই জানিয়েছেন লক্ষ্য এখন ৩-০। মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটার আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষার পার্থক্য বলছে, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। খেলোয়াড়রা দেশে ফিরতে পারলেই বাঁচেন! ইংল্যান্ড থেকে আসা জনাকয় সাংবাদিকও শেষ টি-টোয়েন্টির আগেই দেশের বিমান ধরেছেন।
তিন সিংহের আতঙ্ক তাই আপাতত উধাও; বরং আরও একবার বাঘের হুংকারের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় মাইক্রোবাস উল্টে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। রবিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের রাঙামাটিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার খামারবাসা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী দোলেনা খাতুন (৪০) ও তোতা মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫০), ঝরিনা খাতুন (৪০), আশিক (৭)। তারা একে অপরের আত্মীয়-স্বজন।
দগ্ধরা হলেন, আক্কাস আলী (৫৫), তোতা মিয়া (৬০), তোতা মিয়ার নাতি ইয়াসিন (৫), একই ইউনিয়নের পূর্ব সালকোডা গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল মিয়া (৩২) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার (২৬)। এদের মধ্যে আক্কাস মিয়াকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব-অফিসার আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নামক স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিদগ্ধে আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও দুই নারীসহ পুড়ে যাওয়া চারজনের মরদেহ গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাত নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তোতা মিয়া জানান, রবিবার রাত ১০টায় মেয়ের বাসা ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী রেজিয়া, ছোট বোন দুলেনা বেগম ও নাতি ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মুন্সিরহাট থেকে মাইক্রোবাসে করে রওনা হই। ত্রিশাল পার হওয়ার পর রাত ২টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস মাইক্রোবাসটিকে ওভারটেক করতে যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লেগে যায়। আমরা জানালা দিয়ে কোনো রকমে বের হই। কিন্তু আমার স্ত্রী, ছোট বোন দুলেনাসহ চারজন গাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। তারা চারজন গাড়ির ভেতরে পুড়ে মারা যায়।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাইক্রোবাস চালক পলাতক রয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না : মায়ের হাতের পিঠা খাওয়া হলো না, শেষবারের মতো কথাও বলতে পারলাম না। কথাগুলো বলছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে মাইক্রোবাস উল্টে আগুন লেগে নিহত রেজিয়া খাতুনের মেয়ে শিখা আক্তার। গতকাল সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন বাবা তোতা মিয়ার পাশে বসে বিলাপ করছিল শিখা আক্তার।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিল, আমি ও আমার স্বামী গার্মেন্টসে কাজ করি। ঢাকার শাহাদাতপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ইয়াসিন আমার মা-বাবার সঙ্গে থাকত। দিনের বেলায় যানজটের ভোগান্তি কমাতে রবিবার রাতে আমার ঢাকার বাসায় আসার জন্য ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা ও ফুফুসহ আরও বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাসে রাত ১০টার দিকে ধৌবাউড়া থেকে রওনা দেন। পরে রাতে খবর পাই মাইক্রোবাসটি খাদে পড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মা-ফুফুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আমার ছেলে, বাবাসহ অন্যরা আহত হয়েছে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মা আমার জন্য পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসছিল, কিন্তু আমার মায়ের হাতের পিঠা খেতে পারলাম না, শেষ বারের মতো মায়ের সঙ্গে কথাও বলতে পারলাম না। আমার মা গ্রামের বাড়ি থেকে আসার সময় আমার জন্য গরুর দুধ, পিঠা, শাক-সবজি নিয়ে আসত। এখন আর কেউ আমার জন্য এসব নিয়ে আসবে না। আমি এতিম হয়ে গেলাম।
উল্লেখ্য, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার রাঙামাটি নাম স্থানে রবিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পড়ে তাৎক্ষণিক আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চার যাত্রী আগুনে পুড়ে মারা যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেওয়ার পথে অপর একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আরও চারজন আহত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বিনিয়োগের উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এ দেশে বিনিয়োগ করলে সফল হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ যুবক। এদের কাজে লাগিয়ে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। নির্মাণাধীন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মযজ্ঞ চালু হলে ২০৪১ নয়, তার আগেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাব।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাণিজ্যে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করেই ৮৯৬ জন নিবন্ধন করে সামিটে অংশ নিয়েছেন। এ সামিটের ফলে আগামীতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সহজ হবে। এ সামিটে বিদেশিদের মধ্যে জাপানিরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের যুবকদের কাজে লাগিয়ে আগামী অর্থনীতিতে কৃষির অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। সরকারের সঙ্গে এ দেশের কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ কৃষিতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ এতে বেশি অভ্যস্ত।
জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এসএমইদের অংশগ্রহণ বেশি। চাকরির বাজারের ২৪ শতাংশের বেশি এ খাতে। কিন্তু জিডিপিতে তাদের অংশগ্রহণ কম। তারা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের লিঙ্কেজ কম। তাদের লিঙ্কেজ বাড়ানোর জন্য কাজ করব আমরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এখন সরকার ব্যবসাবান্ধব। পদ্মা সেতু চালু করেছে। বিভিন্ন বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ বলে দেয় ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে নয়, সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ নেতা বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯মতম ভোক্তার বাজার। এখানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। যার ৬৮ শতাংশ জনশক্তি কর্মক্ষম। এখানে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কারণ আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। এখানে ভোক্তাবাজার আছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ, এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এটি বুঝেই দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখানে বিনিয়োগ করলে সফল হবেই।
বিজনেস সামিট প্রসঙ্গে এফবিসিসি সভাপতি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশ বিজনেস সামিট করেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু ভুলত্রুটি হলেও সফলতাই বেশি। সফল হওয়ার অন্যতম কারণ ৮৯৬ জন সামিটে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। ৩০০-এর বেশি বিদেশি এসেছে। সামিটে প্রতিটি সেশন ছিল প্রাণবন্ত। বেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে সেশনগুলোতে অংশ নিয়েছেন। এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরও বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই সামিটের উদ্দেশ্য ছিল ব্র্যান্ডিং করা ও দেশের সক্ষমতা তুলে ধরা, এতে আমরা সফল হয়েছি। তিনি জানান, ব্যবসা সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনগুলোতে বেশ কিছু ব্যবসার চ্যালেঞ্জ প্রতিবন্ধকতার কথা উঠে এসেছে। প্রতিটি সেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাব। আশা করছি সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামিটে কৃষিপণ্যের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ খাতের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আছে। কীভাবে কৃষিপণ্যকে আরও বহুমুখী করে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করা যায় এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, এম এ মোমেন, আমীন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন এবং এম এ রাজ্জাক খান রাজ এবং বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ।
এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিটের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। গত শনিবার সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিন প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউজ রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সামিটে।
এবারের সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ৩০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।