
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিন বিএনপিপন্থি শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন দাবি করে তাকে অপসারণের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন জাবি ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকমীরা। অন্যদিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সব কটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে বাইরে অবস্থান নেন জাবি ছাত্রলীগের আরেকটি অংশের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের এই দুটি পক্ষেরই দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তারা এর অবসান চান।
গত ১ জানুয়ারি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে সাময়িক মেয়াদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের পাঁচটি ছাত্র হলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করা, সনদে মানসম্মত কাগজ ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালো আচরণ করার দাবিও তুলে ধরা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হয়ে কয়েকজন শিক্ষক সেখানে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। এর পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শর্তসাপেক্ষে কার্যালয় খুলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবারের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অপসারণ না করা হলে পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় একই কর্মসূচি (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে তালা) পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় অবরোধে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সায় ছিল না। তাদের মতের বাইরে গিয়েই এই অবরোধ করা হয়েছে। গতকাল তালা ঝোলানোর আলাদা দুই কর্মসূচিকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় অবরোধে নেতৃত্ব দেন সহসভাপতি এনামুল হক এনাম, আরিফুল ইসলাম প্রিতম, মো. সাজ্জাদ হোসেন, রাতুল রায় ধ্রুব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর রাফি চৌধুরীসহ কয়েকজন। সেখানে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সহসভাপতি আর রাফি চৌধুরী বলেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বারবার বলার পরেও কোনো কর্ণপাত করেননি। একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির একজনকে নিয়োগ করার প্রতিবাদে আমরা প্রত্যেক নেতাকর্মী নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে এখানে দাঁড়িয়েছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ সকালের (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) অবরোধের বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় অবরোধ চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে মুরাদ চত্বরে যান জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকে মিছিল বের করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন তারা। বেলা সোয়া ২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ প্রশাসনের অন্যরা সেখানে যান। ৩টার দিকে আলোচনার জন্য প্রশাসনিক ভবনের ফটক খুলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।
বৈঠকে প্রবেশের আগে ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সুপারিশপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে আমরা তৎপর রয়েছি। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে সেটিই আমরা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি।’
বৈঠক শেষে বিকেল ৫টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ খতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে সেটি নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করা হবে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অপসারণের ব্যাপারে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
শিফট পদ্ধতি বাতিল ও ফরমের মূল্য কমানোর দাবি : জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন হয়েছে। একই সঙ্গে ভর্তির আবেদন ফরমের মূল্য কমানোরও দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসব দাবিতে মানববন্ধন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
মানববন্ধন চলাকালে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য শারমিন আক্তার বলেন, ‘শিফট পদ্ধতির কারণে ভর্তি পরীক্ষায় চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। আর ফরমের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই আবেদন করতে পারেন না।’
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) এবারের নির্বাচন যে সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত হচ্ছে না তা অনুমিতই ছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি হলো গতকাল বুধবার। ভোটের প্রথম দিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা, ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ-বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর, বিচারপ্রার্থীদের আতঙ্ক সব মিলিয়ে নজিরবিহীন পরিস্থিতি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। হতবিহ্বলতায় বিচারপ্রার্থীরা আতঙ্কে দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্ট ও ভোটকেন্দ্রের (সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তন) আশপাশে কয়েকশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়, যা অতীতে কখনো হয়নি বলে জানান উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের মতো সুরক্ষিত জায়গায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ সচরাচর থাকে উৎসবমুখর। কিন্তু গতবার থেকে (২০২২-২৩) সেই পরিবেশ অনেকটাই আর নেই। এবারের নির্বাচন নিয়েও কয়েক দিন ধরে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে নানা শঙ্কা ছিল। গত সোমবার পদত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। ভোটের আগের রাতে (মঙ্গলবার) আওয়ামী লীগপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সাব-কমিটির আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করলে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর পর্যায়ে চলে যায়। ওইদিন রাতে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ব্যালটে সিল দেওয়া ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচনে লড়ছেন।
গতকাল সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় অন্তত দুই ঘণ্টা পর। সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা তাদের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনের ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর চেষ্টা করেন। তবে, তারা নীল প্যানেলের আইনজীবীদের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টার বেশি সময় নির্বাচনে অচলাবস্থা চলে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে চলতে থাকে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের সেøাগান-পাল্টা সেøাগান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নীল প্যানেলের প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল কেন্দ্রের বাইরে এসে অভিযোগ করেন, তাদের কোনো প্রার্থী ও এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ (মাহবুব উদ্দিন খোকন) বেশ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর পুলিশের : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে ভোটকেন্দ্রে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। বুট দিয়ে লাথি মারে। পরিচয়পত্র দেখানোর পরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এ সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আক্তার, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদাউস তানভী, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম নূর মোহাম্মদ, অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এর মধ্যে এটিএন নিউজের জাবেদ আক্তারকে মেঝেতে ফেলে পেটানো হয়। এ ছাড়া বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমকে লাঠিপেটাসহ গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জাবেদ আক্তারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে নিয়ে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
জাবেদ আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে এগিয়ে যাই। কিন্তু অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে আমার পায়ে সমস্যা। হাঁটতে কষ্ট হয়। হাতজোড় করলেও তারা ক্ষান্ত হয়নি।’
সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহ করি। আজকে (গতকাল) সেখানে (ভোটকেন্দ্রে) ঝামেলা হচ্ছে শুনে খবর সংগ্রহে যাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় সাংবাদিকরা কেন অনিরাপদ থাকবেন?’
এ সময় নির্বাচনে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন কবির মঞ্জুসহ অন্তত ১৫ আইনজীবী পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন নারী আইনজীবীকেও মারধর করা হয় বলে জানান তারা। গতকাল প্রথম দিনের বিশৃঙ্খল ভোটে ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ২১৭ জন ভোট দিয়েছেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির।
সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইন, আদালত ও মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা। সংগঠনের সাবেক সভাপতি এম বদিউজ্জামান, বর্তমান সভাপতি আশুতোষ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
নির্বাচন অলিখিতভাবে বর্জন বিএনপিপন্থিদের : ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি অবগত করতে বিকেল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ শতাধিকের বেশি আইনজীবী ছিলেন। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে কত ব্যালট থাকবে এবং কতগুলো ব্যবহার হবে তা সব প্রার্থীকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আগের রাতে (মঙ্গলবার) আমাদের চোখের সামনে ব্যালটে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে সিল দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে পুলিশ মোতায়েন করতে হলে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়াই এত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কখনো দেখিনি।’
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘যেহেতু এটি কোনো ভোটের পর্যায়ে পড়ে না তাই বর্জনের প্রসঙ্গ আসছে না। আমাদের কথা হলো এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষের কিছুক্ষণ পর অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন আইনজীবী সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে হামলা চালায়। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে থাকা প্যান্ডেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এরপর সেখান থেকে মিছিল করে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিচতলায় অন্তত দুটি আইনজীবী চেম্বারের দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন তারা। এর একটু পর পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা সটকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর সরকারপন্থি আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে মিছিল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিএনপিবিরোধী সেøাগান দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। এ সময় একজন আইনজীবীর চেম্বারের দরজার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টে সংঘর্ষের ঘটনায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। এতে মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে।
সাংবাদিক নিপীড়ন নিন্দার ঝড় : সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে এলআরএফ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গতকাল কমিশনের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এ ধরণের হামলা স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায়। হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে কমিশন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের যুবসমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং বৃহৎ পরিসরে সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নার্সের শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে। উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে নিজেরও একটা আত্মতৃপ্তি আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরে ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজ’-এর দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান-২০২৩-এ প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে যারা আজ গ্র্যাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদের জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা এবং ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে, ডাক্তারদের সহানুভূতি এবং নার্সদের সেবা পেয়েই কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। তাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘যারা চার বছর কঠোর অধ্যবসায়ের ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জনগণের সেবায় নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন। আপনাদের অর্জিত জ্ঞান আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। সব ক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে, এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে, সেটাই আমি চাই।’ তিনি এ সময় সেবাধর্মের প্রতীক বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা উল্লেখ করেন, যিনি মানব সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। খবর বাসসের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা এই নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করবেন বলেও জানান। এ জন্য জমিও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল এবং দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক। স্নাতক বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজের ২১০ জন স্নাতকের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। তিনি ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য একাডেমিক রেকর্ডের জন্য ‘প্রাইমিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড’ও তুলে দেন।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আমরা এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বরই থাকব।’
গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে নির্মাণাধীন ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
এর আগে সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছান পিটার হাস। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলীসহ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক) গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কমকর্তা দীপেশ নন্দা প্রমুখ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিস প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা টিম পিটার হাস ও অন্যান্য অতিথির নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়। কেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার ক্যালাম ডেভিড কর্নফোর্থ পিটার হাসকে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা দেন।
রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, সব আইন মেনেই ইউএমপিএলের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চমান বজায় রাখছে। প্রকল্প কোম্পানি পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদী ঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের অ্যাপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সহায়তা করা।
ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার জন্য পিটার হাসের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাস টারবাইন সরবরাহে জিইসহ মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানেরও প্রশংসা করেন।
নাফিজ সরাফাত বলেন, ইউএমপিএল, জিই এবং নেব্রাসসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এসইআরভি, এআইআইবি, ডিইজি ও ওপেক তহবিল থেকে প্রকল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগ এখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জনগণকে সাশ্রয়ীমূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প। কেন্দ্রটি অন্যান্য বিদ্যমান কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গত করবে।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ কেন্দ্রটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। কেন্দ্রটিতে জিই-এর অত্যাধুনিক গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ৬২ শতাংশের বেশি দক্ষতায় কাজ করে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে।
ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী বলেন, সর্বোচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন উচ্চপ্রযুক্তির বিদ্যুৎপ্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। কমদামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণেই বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষস্থান দখল করবে এই কেন্দ্র। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান ও ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
জিই গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দিপেশ নন্দা বলেন, জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় অবদান রেখে চলেছে। ইউএমপিএলের প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে জিই গর্বিত। কেন্দ্রটিতে জ¦ালানি কম ব্যবহার হওয়ায় গ্যাস সাশ্রয় হবে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
২০১৮ সালের ২৫ জুন কেন্দ্রটি নির্মাণের স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ও জিই-এর কনসোর্টিয়ামকে সম্মতিপত্র দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে নেব্রাস পাওয়ার কিউপিএসসির প্রতিষ্ঠান নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভি. ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব নিয়ে এ প্রকল্পে যুক্ত হয়। পরের বছরের ২৪ জুলাই প্রকল্প কোম্পানি ইউএমপিএলের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি বা পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই সময়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি (জিএসএ) হয়। উদ্যোক্তা কোম্পানির সঙ্গে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট টার্ন-কি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) ঠিকাদারি চুক্তি হয়। জিই এই বিদ্যুকেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোক্তাদের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিই-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করবে।
শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর দখলে নিচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। শিক্ষা প্রশাসনেই শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা টিকতে পারছেন না। ইতিমধ্যে বেশ কটি শিক্ষা দপ্তর প্রায় শূন্য; শিক্ষা ক্যাডারের লোকজন বলতে গেলে নেই। আরও কয়েকটি দপ্তরে যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাতে শিগগির শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘শিক্ষা’ একটি বিশেষায়িত দপ্তর। এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কেউ এলে তার পক্ষে তাল মেলানো সহজ নয়। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা চাকরির শুরুতেই ‘শিক্ষা’ নিয়ে কাজ করেন। তাদের এ-বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণও থাকে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তারা যেভাবে শিক্ষা-প্রশাসনের কাজ সামলান, অন্য ক্যাডারের সদস্যদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরে খুব অল্প সময়ের জন্য আসে। আবার ভালো পদায়ন হলেই চলে যায়। অল্প সময়ে একটা দপ্তরের কাজ পুরোপুরি বোঝে ওঠা সম্ভব নয়।
এ কারণে শিক্ষার মানেরও যথা উন্নয়ন হচ্ছে না।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ফলে শিক্ষার নতুন দপ্তর হবে, এটাই স্বাভাবিক। যে দপ্তরই হোক, তাতে শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, আমাদের পদগুলো দখল করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই সরকারকে সহযোগিতা করতে। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত এর সমাধান না হলে ফুঁসে উঠতে পারেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা।’
সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) প্রায় পুরোটা চলে গেছে প্রশাসন ক্যাডারের দখলে। একজন মহাপরিচালক, দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ১০ জন বিভাগীয় পরিচালকের সবাই প্রশাসন ক্যাডারের। তারা অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পদমর্যাদার। বিভিন্ন উপপরিচালক পদেও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন। শিক্ষা ক্যাডারের দু-একজন কর্মকর্তাও আছেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পদে একজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। বেশির ভাগ পরিচালক পদে রয়েছেন যুগ্মসচিবরা। এখানে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য নেই বললেই চলে। এমনকি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদটিও দখল করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।
সাত বছর আগে মাদ্রাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগে মাদ্রাসাবিষয়ক কাজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকেই হতো। ফলে মাদ্রাসার কাজ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের জানা। কিন্তু এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন অতিরিক্ত সচিব। পরিচালক পদেও এখন প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়িত হচ্ছে। অন্যান্য পদে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা থাকলেও তারা একে একে প্রত্যাহৃত হচ্ছেন। সম্প্রতি এই অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা ক্যাডারের ১৯ জনকে প্রেষণে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাতথ্য ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান একজন অতিরিক্ত সচিব। এই দপ্তরের পরিচালক পদগুলোতেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা রয়েছেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলও প্রশাসন ক্যাডারের। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানেও প্রশাসন ক্যাডারের দু-একজন সদস্য আছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) পদগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখনো শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের হাতে। সেখানেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। শিক্ষার একাধিক প্রকল্পে পিডি প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।
মাদ্রাসা অধিদপ্তর নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডার ও প্রশাসন-ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরের নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, নবম গ্রেডের ওপরে যারা তারা এখানে পদায়ন পাবেন। শুরুতে মহাপরিচালক পদে একজন যুগ্মসচিবকে পদায়িত করলেও এখন আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা আদালত পর্যন্ত যান। আদালত এ বিষয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের বাইরে কাউকে পদায়ন করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে সরকার আপিল করলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এবং মামলাটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। এই সুযোগে শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ কর্মকর্তাকে মাদ্রাসা অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে নিয়মিত বেঞ্চে মামলার শুনানি হলে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু তা না মেনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ক্যাডারের আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা চালান, তাই তারা প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষেই থাকেন। শিক্ষা দপ্তরগুলোতে যে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের আধিক্য থাকা উচিত সে কথা তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে তুলেও ধরেন না।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরের পদগুলো শিক্ষা ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত। মাদ্রাসা অধিদপ্তর কিছুদিন আগেও মাউশি অধিদপ্তরের অংশ ছিল। ফলে মাদ্রাসা অধিদপ্তর মাউশির আদলেই হওয়া উচিত। দুই অধিদপ্তরের কাজের ধরনও এক। কিন্তু একটা বিশেষ ক্যাডার মাদ্রাসা অধিদপ্তরে দখলদারিত্ব করছে। এমনকি আদালত শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষে রায় দিলেও তারা মানছেন না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দপ্তর নিয়েও মামলা চলছে।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।