
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন আজ। সারা দেশে দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে উদযাপন করা হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এ নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ ও তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা-সংগ্রামের ডাক দেন; যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমণ্ডির বাসভবনে কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্যসাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।
বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।’
‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্ব দান করেছিলেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলাদেশ সফরের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্তব্য বইয়ে তিনি লেখেন, এই উপমহাদেশের প্রতিটি মুক্তিকামী, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থপতি এবং পিতা। মমতা বলেন, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মঞ্চে অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বে মর্যাদা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সেই বিরল নেতা, যার প্রতি ধর্মমত-নির্বিশেষে সব মানুষ প্রণাম জানিয়ে ধন্য হয়।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিত্রিত করলেও ইতিহাসই তার প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করে, যখন তার এককালীন ঘোরতর শত্রু তাকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবেক পাকিস্তানি (বেলুচিস্তান) অফিসার মেজর জেনারেল তোজাম্মেল হোসেন মালিক পরে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘বস্তুত মুজিব দেশদ্রোহী ছিলেন না (পাকিস্তানে তাকে সেভাবে চিত্রিত করা হলেও)। নিজ জনগণের জন্য তিনি ছিলেন এক মহান দেশপ্রেমিক।’ আরেকজন সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন পাকিস্তানি জান্তার মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ৭ মার্চের ভাষণের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালিক তার ‘পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল আশাব্যঞ্জক বাণী শ্রবণ শেষে মসজিদ অথবা গির্জা থেকে তারা বেরিয়ে আসছেন।’ বাসস
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা কৌশল অনুসরণ করে চলেছে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে দুই দলের কাছে। ধর্মভিত্তিক বা ইসলামি দলগুলোকে আসন ছাড়ার প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে আলাদা মোর্চা করে দলগুলোকে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রস্তাবও আছে। আওয়ামী লীগ ও ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কথা জানা গেছে।
বিএনপি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে যাবে না বললেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গে রাখতে ভেতরে ভেতরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির দিকে ঝুঁকে থাকা ধর্মভিত্তিক দলকে সঙ্গে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্তত ছয়টি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। তবে উভয়পক্ষই বৈঠক ও প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও প্রস্তাবের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে খেলাফতে আন্দোলনের আমির মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে সেটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে তো অনেক রকম কথা শোনা যায়। তবে আমাদের কাছে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি। আর আমরাও নিজেরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ এখনো করছি না।’ বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নতুন ফ্রন্ট নিয়ে আ.লীগে দোলাচল না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো লিয়াজোঁ নেই।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কৌশলগত কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই সঙ্গে থাকবে আশ্বাস দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল অন্য জোটে না গিয়ে নিজেদের আলাদা একটি ফ্রন্ট গঠনের কথাও জানিয়েছে। ওই নেতারা বলেন, আলাদা ফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করার যে তৎপরতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে দলের বড় একটি অংশের দ্বিমত পাওয়া গেছে। দলটির বিভিন্ন পদের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে থাকবে যতই আশ্বাস দিক ইসলামি দলের নেতারা, শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, ভোটও দেবে না আওয়ামী লীগকে।
ওই নেতারা বলেন, ইসলামি দলগুলোর নেতারা সুযোগ বঞ্চিত হতে চান না, আবার তাদের মধ্যে ভয়ভীতিও আছে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে জানান, আগামী নির্বাচনে তার দল কোন জোটে যাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক মাস লাগবে। তখন তারা বুঝতে পারবেন তাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করা নিয়ে তোড়জোড় কেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের একটি অংশ ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন। ওই অংশটি বিভিন্ন সময়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে গুজব সৃষ্টি ও অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ খুঁজবে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ধর্মভিত্তিক দলকে। তাছাড়া সব দলই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বড় একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে। ওই বছরের ৫ মে ঢাকায় তা-ব চালায় তারা। পরে বিএনপি তাদের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। সেটাও বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভোটের আগে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। জোটে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বশর্ত থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে যে কেউ জোটে আসতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনের আগে জোটের পরিধি বাড়ার কথা জানালেও ইসলামি দলগুলোর ১৪ দলে আসার সুযোগ নেই বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহাজোট করতেই পারে। তবে ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। এ সংখ্যা বাড়বে না।’ তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোট হবে। না এলে ওইসব দল আলাদা জোটেও নির্বাচন করতে পারে। তবে জুনের পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করা দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষার মতো।’ তিনি বলেন, এরা সুবিধা নেবে ঠিকই, সুবিধা নেওয়া শেষ হলেই বেকায়দায়ও ফেলবে। হেফাজত যেমন আচরণ করেছে ঠিক সেটাই করবে তারাও। ফলে এসব দল বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য উত্তম বলে মনে করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য করা মূলত আদর্শচ্যুত হওয়া।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাদেরই দুজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মভিত্তিক দলের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে তারা যাবে না এ আশ্বাসও দিয়েছে কয়েকটি দল।
কয়েকটি ইসলামি দলের শীর্ষসারির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন। তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কারোরই সঙ্গী হবেন না।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিলেও ভোটের সময়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে উল্টে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে মধ্যমসারির কয়েক নেতার কাছ থেকে। অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তারা নাও থাকতে পারেন। হেফাজতের মতো হামলা-মামলার খড়গ এড়াতে এবং সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হতে চায় না বলেই ইসলামপন্থি ওই দলগুলো সরকারের সঙ্গী হওয়ার কথা ভাবছে।
দলগুলোর মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শুভাকাক্সক্ষী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ধর্মভিত্তিক দল ডানপন্থি দল বা জোটের সঙ্গেই ভিড়বে। আর বর্তমান পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হবে তারা। তবে ভোট অন্য যাবে অন্য পক্ষে।
ওইসব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ধ্যান-দরবার করছেন তারা বাদে অন্য নেতারাও দাবি করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে যতই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, মিটিং-সিটিং হোক, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বললেও তলে তলে সমর্থন দিবে সরকারবিরোধী জোটকে। তারা সুবিধা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সঙ্গ দেবে, সঙ্গ ছাড়বে। কিন্তু ভোট নৌকার পক্ষে কখনোই যাবে না।
তবে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ইসলামি ওই দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা মনে করেন, যেসব দলকে তারা সঙ্গী করতে চান সেসব দল জামায়াতবিরোধী। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তাদের।
খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পক্ষেই তার দলের অবস্থান। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তার দল আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে না গিয়ে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে আলাদা জোট করার চিন্তা করছেন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবেশ শান্তই ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তারপর কয়েক দফায় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি; শেষ পর্যন্ত মারপিট। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের প্রথম দিনের মতো আগ্রাসী ছিল না পুলিশ। তবে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট নেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের চিত্র এরকমই ছিল।
ভোটের প্রথম দিনই নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। কার্যত ভোট থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। গতকালও ভোটের প্রচারে কিংবা ভোট দেওয়ায় আগ্রহ ছিল না তাদের। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি। প্রথম দিন ভোট পড়েছিল ২ হাজার ২১৭টি। দ্বিতীয় দিনে পড়েছে ১ হাজার ৯২০টি। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন।
দুদিনে ভোট পড়েছে অর্ধেকের কম। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় ভোটগণনা শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। ভোটের প্রথম দিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা, ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর, সরকারপন্থি-বিএনপিপন্থিদের হট্টগোল, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর, বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সব মিলিয়ে নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি ছিল সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ : আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আট বিচারপতি এজলাসে ছিলেন। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিস্তারিত শুনে প্রধান বিচারপতি তাদের বেলা ১১টায় তার খাসকামরায় যেতে বলেন। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আইনজীবীদের জানান প্রধান বিচারপতি। ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। কিছুক্ষণ পর হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা আমাদের কথা শুনেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি।’
প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই, অ্যাটর্নি জেনারেল : দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা যেহেতু বারের বিষয় (আইনজীবী সমিতির) এতে তার কিছু করণীয় নেই। বার অ্যাসোসিয়েশন ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টার সুরাহা করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। পরিবেশ যেন ঠিক থাকে তা-ও বলেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুপক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একপক্ষ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেলে আরেকপক্ষ বাধা দেবে। এরকম হলে অবশ্যই পরিবেশ ঠিক থাকবে না। তাই দায় সমানভাবে নিতে হবে। বিএনপিপন্থিরা কিন্তু নির্বাচনে আসতে চাচ্ছিল না।’ বিএনপিপন্থিদের নতুন নির্বাচনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন তারা চাইতেই পারেন। সমিতি ও বারের সদস্যরা যদি মনে করেন তাহলে সে দাবি বিবেচনা করে দেখবেন।’
কয়েক দফায় আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সে সময় বিএনপিপন্থি কোনো প্রার্থী বা আইনজীবীকে দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী ভোটকেন্দ্রের বাইরের প্যান্ডেলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। সরকারপন্থি আইনজীবীরাও কাছেই ছিলেন। একপর্যায়ে দুপক্ষ সেøাগান-পাল্টা সেøাগান দেয়। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তাদের মধ্যে।
বিএনপিপন্থিরা ‘ভোট চোর’ ‘ভোট চোর’ স্লোগান দেয়। সরকারপন্থিরা ‘সাদা’ ‘সাদা’ ও ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেয়। এরকম চলে অন্তত ৪০ মিনিট। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থিরা পিছু হটলে কেন্দ্রের সামনে সরকারপন্থিরা অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ফের সংগঠিত হয়ে কেন্দ্রের সামনে এলে সরকারপন্থিরা তাদের ঠেকাতে চায়। সে সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং ধস্তাধস্তি হয়।
ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ : গত বুধবার সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদও। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে আসেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ‘যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত, মর্মাহত। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাম্য ছিল না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করব।’ তার বক্তব্যের পর মোবাইল ফোনে এলআরএফ সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। সে সময় অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ সে সময় এলআরএফ কার্যালয়ে ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। উচ্চ আদালতে প্রভাব বিস্তার করা এক মন্ত্রী ও একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও আইনজীবী নেতার।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের আরও সতর্ক ও সংযম প্রদর্শন করে চলতে হবে। কারণ চলতি বছরই জাতীয় নির্বাচন।’ তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভোটকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করা না করা নিয়ে বিতর্ককে আরও উসকে দেবে, যা সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। সুপ্রিম কোর্টে উদ্ভূত পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। ভোট শেষে এই ঘটনা নিয়ে তিনি বসবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেষ্টা করেছিলাম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়িয়ে যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়। কিন্তু পারিনি। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ ও বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটেছে। বিকল্প অনেক উপায় ছিল এমন লক্ষ্য পূরণে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাইকোর্ট চত্বরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন আইনজীবী নেতার কক্ষে বসে গত বুধবারের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। তাদের মুখেও শোনা গেছে অস্বস্তির কথা। সেদিন অনেক আইনজীবীকে তাদের আইন পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। অথচ আদালত অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোট চলছিল। ভোট নিয়ে ভ্রƒক্ষেপ ছিল না ওই সরকারি দল সমর্থক আইনজীবীদের। তারা কোনোভাবেই ভোটকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার সমালোচিত হয়েছে তা সমর্থন করছেন না।
উচ্চ আদালতে আইন পেশায় জড়িত এক প্রভাবশালী আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বুধবারের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। দুই জনের ব্যক্তিস্বার্থ ও এক মন্ত্রীর বাহবা নেওয়ার চেষ্টায় মূলত এ ঘটনা ঘটেছে। এটি বড় ক্ষতির মুখেমুখি করতে পারে সরকার ও আওয়ামী লীগকে।’ তিনি বলেন, এই নির্বাচন কি সরকার পরিবর্তনের? তাহলে এত বড় ঝুঁকি কেন নিতে হবে?
সিনিয়র এ আইনজীবী আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেমন গ্রহণ করা হয় না, তেমনি এখানে যাদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন, যারা দক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তাদের অন্তর্ভুক্ত করা বা পরামর্শ শোনা হয় না। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের ভেতরে। এ কারণে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বছরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বিতর্কে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী একাধিক দল নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থের কারণে এসব ছোটখাটো ভোটে জিতে মরিয়া অবস্থান নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলা অযৌক্তিক।
সুপ্রিম কোর্ট বারের এবারের (২০২৩-২০২৪) নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল নির্বাচন করেছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম. মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আইনজীবী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মূলত ব্যালট নাকি ইসিএমে (ইলেকট্রনিক কাউন্টিং মেশিন) নির্বাচন হবে তা নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধ মারামারিতে গড়ায়। সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ব্যালটে ভোটগ্রহণের পক্ষে অনড় থাকেন। এ নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধের কারণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ভোটের আগে পদত্যাগ করেন। দুই পক্ষ মিলে তাকে ফেরানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয় ব্যালটে অনড় অবস্থানের কারণে। পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ইসিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়।
আওয়ামীপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তাদের কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাতে ‘ঘি না পড়ে’ সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে তাদের দ্বারা সৃষ্টি না হয় যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেয়।
‘আরা যদি দেশত ফিরি যাইন ন ফারি আহারা মরি যামু। আরা এ দেশত ন থাকতি চাই। আরা আর বালা লাহে না। নিজ দেশে মরি গিয়ে ভালো’ কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান। তার সঙ্গে সুর মেলান অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা। নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তাদের মতো অন্য রোহিঙ্গরাও। তবে রোহিঙ্গাদের ভেতরে থাকা কিছু চক্র বাধা দিচ্ছে, যাতে তারা নিজ দেশে যেতে না পারেন। ওই চক্রগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র। দুপক্ষের এসব চক্র রোহিঙ্গাদের ঘিরে নানাভাবে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকেই প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে তারা ইয়াবার চালান আনছে নিয়মিত। মাদক কারবারিদের পাশাপাশি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার সদস্যদের তৎপরতা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকা- নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এসবের কারণে ওইসব এনজিওর কর্মকা- নজরদারি করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচিত হন। বিশ্বনেতারা সরকারপ্রধানের প্রশংসা করে বিবৃতি দেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফর করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের ভালো পরিবেশে রাখতে নোয়াখালীর ভাসানচরে একটি আবাসন পল্লীও গড়ে তোলে সরকার। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তারপরও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল। এমনকি তাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিচ্ছে মিয়ানমারকে। গত বুধবার মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য টেকনাফে এসেছে। ওইদিনই সেখানে একজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। গতকাল আরেক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জুলেখা বিবি, আবিদুর রহিম, জুলহাস মিয়াসহ শতাধিক রোহিঙ্গা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চান। স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চান সেখানে গিয়ে। জান্তা সরকার তাদের মেরে ফেললেও দেশেই মরতে চান তারা। আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা জানান, যদি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে আত্মাহুতি দেবেন।
ক্যাম্পের লোকজন আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চলে আসছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাদের বসবাস। ক্যাম্পের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একাধিক মাদক চক্র। এ ছাড়া খুন, ডাকাতি ও অপহরণকারী একাধিক চক্রও সেখানে ত্রাস ছড়াচ্ছে। কুতুপালংসহ কয়েকটি ক্যাম্পে অপরাধীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব অপরাধী নিজেদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি, খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। এসব চক্রের মধ্যে মাস্টার রফিক, মৌলবি ইউনুছ, আনাস, আরসা ও মুন্না গ্রুপের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
তারা জানান, আরসাও চাচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার না যেতে পারে। পাশাপাশি কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু চক্রও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা যেন নিজ দেশে ফেরত না যেতে পারে। তারা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে বোঝাচ্ছে যে, মিয়ানমার সরকার আগের মতো দমনপীড়ন চালাবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধও করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। আরসার বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। রোহিঙ্গাদের একটি চক্র অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।’
জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে দেশি-বিদেশি অর্ধশত এনজিও কাজ করছে। রোহিঙ্গা শিশুদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কয়েকজন রোহিঙ্গা। তারা নাম প্রকাশ না করে বলে, আরসা, স্থানীয় কিছু চক্র ও কয়েকটি এনজিও চায় না রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত যাক। কারণ তারা চলে গেলে এনজিওগুলো সমস্যায় পড়বে।
রোহিঙ্গারা বলছে, তারা দেশে ফিরতে মরিয়া। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলকে জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া, সবাইকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, মিয়ানমারের অন্য নাগরিকরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় ওই ধরনের সুবিধা দেওয়া, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা তাদের সহায়-সম্পদ ফেরত দেওয়া, গৃহপালিত পশুগুলো ফেরত দেওয়া, সবুজ রঙে পরিচয়পত্র ফেরত ও নতুন করে কার্ড তৈরি করে বসবাস করার সুযোগ দেওয়া এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহলকে নজরে রাখতে অনুরোধ জানায় রোহিঙ্গারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে হত্যাকা-সহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠতে সরকার নানাভাবে কাজ করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গারাও দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে।’
আমি যখন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পৌঁছাই, তখন শেষ বিকেল। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। একসময় এই কলেজ ক্যাম্পাসে কত আড্ডা দিয়েছি। স্মৃতিকে পেছনে সরিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। প্রধান ফটক থেকে মিনিট-চার হাঁটার পর নজরে পড়ে টিনের বোর্ডে খোদাই করা এক আহ্বান। ‘দাঁড়াও পথিকবর আমার নাম কাইজেলিয়া!’ এমন আহ্বান উপেক্ষা করা যায়। প্রবল বিস্ময়ে বোর্ডের বাকি লেখাগুলো পড়ে নিলাম।
বাংলাদেশে দুর্লভ প্রজাতির গাছ ‘কাইজেলিয়া’। একশ বছরের বেশি বয়সী গাছটির অবস্থান কলেজের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে। এর আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশের সেনেগালে। বোর্ডে লেখা তথ্য অনুযায়ী, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে ১৯২০ সালের দিকে কোনো এক বৃক্ষপ্রেমী কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে গাছটির উচ্চতা ২০-২৫ মিটার। কাইজেলিয়া ‘বিগনোনিয়াসিয়া’ গোত্রের বৃক্ষ, বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাইজেলিয়া আফ্রিকানা’। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের, পাকলে বাদামি হয়ে যায়। তবে এটি বিষাক্ত হলেও প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস, বাত, ছত্রাক দমন, মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসারের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। শুরুর মতো করে শেষ লাইনে তার বেঁচে থাকার আকুলতা যে কারও হৃদয়ে নাড়া দেবে। ‘যদি তোমরা পরিচর্যা না করো অচিরেই আমি মারা যাব’ আমাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমাদের।
এদিকে কাইজেলিয়া বৃক্ষের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংগঠন ‘কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ’ (কাকাশিস)। এই সংগঠনের এক সদস্য জানান, শতবর্ষী কাইজেলিয়া আমাদের কলেজের ঐতিহ্য। প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। এমনকি মাঝেমধ্যে বিদেশি অতিথিরাও গাছটি দেখতে আসেন।
কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দুলাল সরকার জানান, বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছ কাইজেলিয়া। এটি বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় একটি বৃক্ষ। কলেজের মালী বাতুল সিং। বর্তমানে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে লাগানো কাইজেলিয়ার দুটি গাছ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সামনে বড় হচ্ছে। একই কথা জানান, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ। তিনি জানান, মালী বাতুল সিংয়ের দেশীয় পদ্ধতিতে লাগানো কয়েকটি চারা ২০১৪ তার ক্যাম্পাসে লাগিয়েছিলেন। বর্তমানে গাছগুলো বেঁচে আছে এবং বড় হচ্ছে।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে কাইজেলিয়ার কয়েকটি চারা উৎপাদন করেছিলেন। বাকৃবির বিজ্ঞানীরা সেই চারাগুলো রোপণ করলেও বাঁচাতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়েছিলেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক মালী বাতুল সিং। এ অসাধ্যসাধন করলেও বাতুলের চাকরি স্থায়ী হয়নি কারমাইকেল কলেজে।
বাতুল সিং জানান, ৮-৯ বছরের প্রচেষ্টার পর তিনি ২০১২ সালের দিকে কাইজেলিয়া গাছের চারা দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। এমন সাফল্যের পর আমার প্রত্যাশা ছিল কারমাইকেল কলেজে স্থায়ী চাকরি পাব, কিন্তু পাইনি। বাতুল সিংয়ের স্বপ্ন নিজ হাতে দেশের প্রতিটি জেলায় এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত একটি করে কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করে বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষটিকে বাঁচিয়ে রাখা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ৫০টিরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। এর বিনিময়ে কোনো টাকা নেন কি না জানতে চাইলে বাতুল সিং বলেন, ‘কাইজেলিয়া আমার সন্তানের মতো। এর চারা দিতে পারলেই আমি খুশি। যারা টাকার বিনিময়ে চারা নিতে চান, আমি তাদের চারা দিই না। আমি চাই গাছটা বাংলাদেশে বেঁচে থাকুক।’
বাতুলের আক্ষেপ আর প্রত্যাশার গল্প পেরিয়ে আমরা আবার অতীতে ফিরে যাই। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেল এই কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারই নামানুসারে কলেজের নাম করা হয় ‘কারমাইকেল কলেজ’। শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন বাঙালি জমিদারের সহযোগিতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে এর অস্থায়ী ভবন হিসেবে পাঠদান চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ। কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ওয়াটকিন।
৬১০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত কলেজের মূল ভবন ইন্দোস্যারানিক আদলে নির্মিত স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য-নিদর্শন, যা বাংলার সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস মোগলীয় নির্মাণ কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়। মূল ভবনের অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যকীর্তি পর্যটকদের প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ করে তুলতে যথেষ্ট। গম্বুজের ব্যাপক ব্যবহার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের পরিচায়ক। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গম্বুজ ভবনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কার্নিশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মারলন অলংকরণের কারুকাজ সন্নিবেশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্দোস্যারানিক স্থাপত্য সৌকর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি। এই ভবন রংপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বছর জুড়ে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে এই কলেজে।
কলেজে ঢুকতেই হাতের বামে পড়বে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, একটু এগিয়ে গেলে শিক্ষকদের ডরমেটরি, যা হোয়াইট হাউজ নামে পরিচিত। পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলেজ প্রাইমারি স্কুল)। স্কুল পেরিয়ে সামনের দিকে এগোলে চৌরাস্তা বা জিরো পয়েন্ট। এ ছাড়া কলেজটিতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দ্বিতল ছাত্রী বিশ্রামাগার, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন, ক্যানটিন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ডরমেটরি, সাব-পোস্ট অফিস, অডিটোরিয়াম (নির্মাণাধীন), প্রশাসনিক ভবন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও ১৯৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। কভিডের সময় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছেন এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাম ভর্তির কারণে অনেকেই ভর্তি বাতিল করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন, ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হুসেন।
কলেজ ক্যাম্পাসেই কথা হয়, কারমাইকেল কলেজের নাট্য-সাহিত্য সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হাসানের সঙ্গে। আরিফ জানান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কারমাইকেল কলেজের সুনাম থাকলেও বর্তমানে তাদের কষ্ট করে সংগঠন চালাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা নেই, ফলে ভালো প্রোগ্রাম করা যাচ্ছে না।
এখানকার ছাত্রীরা সান্ধ্য আইনে বন্দি বলে জানান ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা। তিনি জানান, মেয়েদের জন্য তিনটি হল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে মেয়েশিক্ষার্থীদের মেসে থাকতে হয়। মেস মালিকরা সন্ধ্যার মধ্যে মেসে ঢোকার নির্দেশ জারি করেছেন। ফলে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরা অথবা টাউন হলের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শেষ করে মেসে প্রবেশ করা তার মতো আরও অনেক ছাত্রীর জন্য এক বড় বিড়ম্বনা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে তারা সংকটে পড়েছেন। একদিকে খাবারের খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মেসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মেস মালিকরা।
কলেজটিতে মেয়েদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে তাপসী রাবেয়া হল, বেগম রোকেয়া হল ও জাহানারা ইমাম হল। ছেলেদের জন্য রয়েছে জিএল হল, ওসমানী হল, সিএম হল এবং কেবি ছাত্রাবাস (শুধু হিন্দু ছাত্রদের জন্য)। এর মধ্যে সিএম হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কলেজটিতে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের।
২৮ বছর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে কলেজটিতে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো থেকে বারবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর ছাত্র সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হচ্ছে।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর মো. আমজাদ হুসেন বলেন, ১০৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন, যা আমাদের ক্যাম্পাসের পড়াশোনার মানের পরিচয় বহন করে। কলেজের সোনালি অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আগামীতে আরও সোনার সন্তান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন কলেজের শিক্ষকরা।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
কাল ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনটি উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
দিনের প্রথম প্রহর থেকে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। দিনটি উপলক্ষে এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে, ফুল আর রং-তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
গণপূর্ত বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দিনটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধের মিনার থেকে শুরু করে পায়ে চলার পথ সবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রং-তুলির আঁচড় পড়েছে ফুলের টপসহ না স্থাপনায়। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রেখেছে গোটা সৌধ এলাকা।
স্বাধীনতা দিবসে সৌধ এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলায় সেজেছে নতুন সাজে। সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও ভবনগুলো সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ বাতিতে।
সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, দিবসটি পালন করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর উপজেলা চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। গোটা সৌধ এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়াও সড়ক-মহাসড়কে বসানো হয়েছে নিরাপত্তাচৌকি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
নাম আছে কিন্তু নিবন্ধন নেই। বেশির ভাগেরই কার্যালয় নেই। বছরের পর বছর চলে ইচ্ছেমতো কমিটি দিয়ে। এ নিয়ে আছে কোন্দল। দলাদলিতে সংগঠন ভেঙে একই নামে হয় আরেক সংগঠন। রয়েছে শাখা সংগঠন। ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের লোগো। সংগঠনের নেতাদের অনেকে ব্যবহার করেন ভিজিটিং কার্ড। নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ।
নানা দাবিতে কালেভদ্রে এসব সংগঠনকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এমন গুরুত্বহীন ও নামসর্বস্ব অগণিত সংগঠন গড়ে উঠেছে দেশজুড়ে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলসহ (জামুকা) বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এমন অবৈধ সংগঠনের সংখ্যা শতাধিকের বেশি। এর মধ্যে কিছু সংগঠন নেতিবাচক নানা কারণে প্রায়ই আলোচনায় আসে।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে জামুকার আড়াইশোর বেশি নিবন্ধিত সংগঠনের বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এখন মুক্তিযুদ্ধের নামে নিবন্ধনহীন এসব সংগঠন চেতনা বাস্তবায়ন তো করছেই না, উল্টো মুক্তিযুদ্ধের সম্মান হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এসব সংগঠনকে আশকারা ও প্রশ্রয় দেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তবে দীর্ঘ দিন ধরে জামুকার নাম ভাঙিয়ে এসব চললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জামুকা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি নেই।
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রজন্ম লীগের নামে একাধিক সংগঠন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, মুক্তিযুদ্ধ ফ্রন্ট, শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ, ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এমন নানা নামে সংগঠনের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে এক নামের আদলে একাধিক সংগঠনও রয়েছে।
‘প্রজন্ম লীগ’ নামটি ব্যবহার করে কয়েক বছরে দলাদলি ও কোন্দলে বেশ কয়েকটি সংগঠন হয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’ লীগ নামেই রয়েছে একাধিক সংগঠন। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা প্রজন্ম লীগ’ নামে রয়েছে কয়েকটি সংগঠন। একসময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক এসব সংগঠনের পোস্টার ও তৎপরতা ছিল। এখনো আছে, তবে সমালোচনার মুখে কিছুটা সীমিত। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন আলোচনায় আসে ২০১৯ সালের শেষদিকে। যদিও বিরোধের জের ধরে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন করেছে একটি পক্ষ। তবে তাদের তৎপরতা এখন আর আগের মতো নেই। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠন জামুকা থেকে নিবন্ধন নিয়েছিল কয়েক বছর আগে। জামুকার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক নামে দুটি সংগঠন হওয়ায় সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। আর নানা নেতিবাচক কর্মকা-ে এসব সংগঠন নিয়ে তারাও বিব্রত।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংগঠন চালাতে অবশ্যই জামুকার অনুমোদন লাগবে। ওদের বিষয়ে যতটুকু জানি এদের রেকর্ড ভালো নয়। কিন্তু আমাদের তো কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের জন্য এ ধরনের সংগঠন করা হয় এবং খুব সচেতনভাবেই এদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। কেননা কিছু লোকের উদ্দেশ্যই হলো মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এ সংগঠনগুলো সে কাজটিই করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর রাজনৈতিক দলগুলোর নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কিছু করে তাহলে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখবে।’ তিনি বলেন, ‘এরা যদি অনৈতিক কাজে জড়িত হয় তাহলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জামুকা এ বিষয়ে শক্ত ভূমিকা নিতে পারে।’
জামুকা থেকে গত ১৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোর তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা অভিযোগে অন্তত ৬টি সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। এত বেশিসংখ্যক সংগঠনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলে। এ নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দেশ রূপান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ইতিমধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে জামুকা। নানা অভিযোগ ও বিতর্কের মুখে তিন বছর ধরে নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে যা জানা গেল : রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকেন্দ্রিক কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকানা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি কার্যালয় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে দেশ রূপান্তর। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় (১০ গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) একটি ভবনের দোতলায় দুদিন গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কার্যালয় থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ। ভবনসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, মাঝেমধ্যে অফিসে কিছু লোকজনকে দেখা গেলেও বেশির ভাগ দিনই এটি বন্ধ থাকে।
একই ভবনে ‘শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি। সংগঠনের সাইনবোর্ডে লেখা একটি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এর নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন হাজি মো. এমদাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে এই ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর অফিসটি তারা সংগঠনের নামে ব্যবহার করেন। জামুকার অনুমোদন না থাকলেও আবেদন করা আছে। বিভিন্ন দিবসে তারা নানা কর্মসূচি পালনসহ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করেন। তবে এখন সংগঠনের কার্যক্রম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ভাতা চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ’ নামে একটি সংগঠন প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় দেখা যায়। ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের শাখা সংগঠন এটি। সংগঠনটির সভাপতি পরিচয় দেওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা বঞ্চিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের হয়ে আমরা মানবিক কারণে কর্মসূচি পালন করি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাদের সন্তানরা ভাতা পান। কিন্তু নাতি-নাতনিরা কেন বঞ্চিত হবেন?’ গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ছয়তলায় ‘শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় সম্প্রতি একাধিকবার গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম বহু সংগঠন দেশে আছে। এদের বিষয়ে নানা অভিযোগ শুনি। এগুলোর বিষয়ে একটাই সিদ্ধান্ত এরা অবৈধ ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। এদের কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে উল্টোটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মান সম্মানকে এরা ভূলুণ্ঠিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে কেউ এমন করুক এটা মানা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটি করতে পারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কেউ অভিযোগ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে এদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।’
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার নির্যাসে ভাববাদী গীতি ও চারণ কবিরা, সাধু সন্ন্যাসীরা যে বাণী ও বয়ান রেখে গিয়েছেন তা অনুভবের আয়নায় প্রতিফলনের সময় ফুরিয়ে যায় না। কেননা ‘দিন থাকতে দ্বীনের সাধনা’র কথা ভুলিয়ে দেওয়ার প্রথম প্রয়াস আদি মানব মানবীর জীবনে স্বর্গ থেকে বিদায়ের কারণ হিসেবেই এসেছিল, এখনো যা আছে অব্যাহত। শিক্ষা নেওয়ার জন্যই ইতিহাস অধ্যয়ন, সময়ের উত্থান পতনের পটভূমি বোঝাবার জন্য অতীত রোমন্থন, কিন্তু সেই ইতিহাস যদি প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণের নামে চর্বিত চর্বনে বিকৃত বিকারগ্রস্ত করা হয় তাহলে অতীত অনুসরণের মৌল ভূমিকায় ঘটে বিপত্তি। যে অনুসরণ বারবার ভুলিয়ে দিয়ে যায় সময়ের প্রবহমানতাকে, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে বর্তমানকে দায় দায়িত্বহীন করার প্রয়াস প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতের জন্য শুধু অন্ধকার অপেক্ষা করে। মানব সভ্যতার উত্থান বিকাশ ও পতনের নাড়ি নক্ষত্র ঘাঁটলে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে যে, মানুষই সভ্যতা সমৃদ্ধির স্রষ্টা, আবার এই মানুষই তার ধ্বংসকারী। বলাবাহুল্য মানুষই মানুষের শত্রু, যে শত্রুতা আদি মানব-মানবীর প্রথম সন্তানেরা পোষণ করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন অশুভ প্রবণতা প্রবৃত্তির দ্বারা। এ প্ররোচনা এখনো চলছে, চলছে বলেই স্বার্থান্ধ হয়ে অতীতের কাছে আশ্রয় মাঙতে গিয়ে বর্তমানকে উপেক্ষার উপলক্ষ মিলে যায় এবং ভবিষ্যৎ কেন কীভাবে অগ্রসরমান হবে সে বিবেচনার সুযোগ হয় হাতছাড়া। এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে আজকের বর্তমানই একদিন অতীত হবে, বর্তমানকে সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ভবিষ্যতে এখনকার কর্মসাফল্য দিয়ে তখনকার জাত কুল মান রক্ষা করা কঠিন হবে।
আত্মশুদ্ধি আর খোদার নৈকট্য অর্জনের অসীম রহমত ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান আমাদের মধ্যে সমুপস্থিত। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাহে রমজানে রোজা পালন বা সিয়াম সাধনাকে ‘পরহেজগারি অর্জনের জন্য’ ফরজ বা অবশ্য পালনীয় বলে বিধান দিয়েছেন। বলা হয়েছে ‘পূর্ববতী সম্প্রদায়ের জন্যও একই বিধান ছিল।’ অর্থাৎ রোজা পালন শুধু কোরআনের বিধান ঘোষিত হওয়ার পর থেকে প্রবর্তিত হয়নি। আত্মশুদ্ধি ও বিধাতার নৈকট্য লাভের জন্য কৃচ্ছ্র সাধনের এই এবাদত হিসেবে শুধু ইসলামেই নয়, স্থান কাল পাত্র ভেদে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মিক নির্বাণ লাভের এ সাধনা বিদ্যমান।
সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, আল কোরআনের এ ঘোষণা উপলব্ধি থেকেই আত্ম তাগিদ অনুভূত হয়। ৮ সংখ্যক সুরা আনফাল-এর ৫৩ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন’। ১৩ সংখ্যক সুরা আর রা’দ-এর ১১ আয়াতে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লার আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। এবং আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’
আল্লাহ্র নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূল নীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নেয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লার আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সুতরাং নেয়ামত প্রাপ্তির পর তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা, সচেতন দায়িত্ব পালনের দ্বারা এর মর্যাদা রক্ষা করা এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কোনো কোনো সময় আল্লাহ্ তায়ালা তার নিয়ামত এমন কোনো কোনো লোক বা সম্প্রদায়কে দান করেন, যে তার নিজের বা নিজেদের আমল বা কর্মের দ্বারা তার যোগ্য নয়, কিন্তু প্রদত্ত হওয়ার পর যদি সে নিজের আমল বা কর্মধারা সংশোধন করে কল্যাণের দিকে ফেরানোর পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে, তখন প্রদত্ত নিয়ামত তার বা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
আল্লাহমানুষকে বিবেক বুদ্ধি ও ভালো মন্দ জ্ঞানসহ সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তার প্রিয় বান্দা বিপথগামী হয়ে তার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হোক এটা তিনি চান না, তা সত্ত্বেও কেউ সঠিক ও কল্যাণের পরিবর্তে মন্দ ও অভিশপ্ত পথ নির্বাচন এবং সেখানে অনড় অবস্থান করলে; আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তার আনুগত্য ত্যাগ করে কুকর্ম, কুচরিত্র ও অবাধ্যতার পথ বেছে নিলে তার পরিণতি হয় দুঃখজনক। যে গজব নেমে আসে তা থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। কোনো ব্যক্তি বা জাতির জীবনে কল্যাণকর পরিবর্তন ততক্ষণ পর্যন্ত সূচিত হয় না, যতক্ষণ এই কল্যাণকর পরিবর্তনের জন্য নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নিজেদের তার যোগ্য করে না তোলা হয়।
আল কোরআনের ২৫ সংখ্যক সুরা আল ফোরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতসমূহে আত্মশুদ্ধি লাভের কয়েকটি গুণ ও দোষের লক্ষণ বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ৬টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলিসমূহ গোনাহ ও অবাধ্যতা থেকে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
১) নিজের বিশ^াস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে সৃষ্টিকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা।
২) নম্রতা সহকারে চলাফেরা করা চলন-বলন আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। যে পালনকর্তার ভরসা করে না এবং সবসময় দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সব সময় বিভ্রান্তিতে থাকে, দুঃখই ভোগ করে।
৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সালামের জবাব দেওয়া, কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, বিরূপ ভাব ও সংক্ষোভের উদ্রেক করতে পারে এমন সংলাপ পরিহার করা। সুবচন ও সুশীল আচরণ কখনই বিত-ার জন্ম দেয় না।
৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। যে সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের সে সময়ে কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও নামাজে দাঁড়ানোর মতো উত্তম কিছুই নেই। এ ইবাদত লোক দেখানোর জন্য নয় এবং এখানে নাম-যশের আশঙ্কা নেই।
৫) দিবারাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিত হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অন্বেষণ ও তার সাহায্য কামনা করা।
৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। বৈধ ও অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও অন্যায় এবং অপব্যয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি ব্যয়ের সময় মধ্যবর্তিতা ও সমতার ওপর কায়েম থাকে, সে কখনো ফকির ও অভাবগ্রস্ত হয় না।
৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক।
৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া।
৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।
১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতা সহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত।
১১) আল্লার আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অন্তদৃষ্টি-সম্পন্ন মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।
১২) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।
কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকা উচিত। মাত্রা অতিক্রম করলে অনেক ভালো জিনিস মন্দ রূপ বা আকার ধারণ করতে পারে। যেমন মাত্রা অতিক্রম করলেই সাহস হঠকারিতায়, আত্মউৎসর্গ আত্মহত্যায়, প্রতিযোগিতা হিংসায়, ধর্মভীরুতা ধর্মান্ধতার পরিণত হতে পারে। অবস্থা বিশেষে সমালোচনা পরচর্চায়, প্রশংসা চাটুবাদে, তেজ ক্রোধে, দেশপ্রেম দেশদ্রোহিতার স্তরে নেমে আসতে পারে। সব দেশ সমাজ সংসারে, রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতির অবকাঠামোয় এটি প্রায়শই লক্ষ করা যায়।
নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা যেমন সবার পছন্দ তেমনি সুরের মধ্যে পঞ্চম-স্বরই মিষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার বলেছেন তোমরা কোনো কিছুতেই সীমালঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উপদেশের ছলে বলেছেন, ‘মাটিতে হাঁটবে মধ্যম মেজাজে আর তোমার স্বর হওয়া উচিত মোলায়েম, স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই নিকৃষ্ট।’
করোনাকালে এ শিক্ষা সবাই পেয়েছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মানা মানে খাওয়া-দাওয়া, চলাচলে, চাওয়া-পাওয়ায়, মেলামেশা, আগ্রহ-আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে একটা পরিমিত বোধ মেনে চলা। নিয়মনিষ্ঠা পালন ও সহনশীলতা প্রকাশ যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। অধিক ভোজনেই অধিকাংশ রোগবালাইয়ের কারণ। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিশ্রমে মন ও শরীর ভেঙে পড়ে। অতি কথনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। অতিরিক্ত সব কিছু খারাপ। অতিভক্তি চোরের লক্ষণ এর চেয়ে সত্যবাক্য আর নেই।
লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান
মডেল ও অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন জয়নাল আবেদীন মাযহারী নামে কুমিল্লার এক আইনজীবী।
প্রভার ভাইরাল হওয়া সেই স্ক্যান্ডালের বিষয়ে ভুল স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
এছাড়া জবাব না দিলে ভাইরাল হওয়া স্ক্যান্ডালের কারণে গণউৎপাত, নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টির অভিযোগে প্রভার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ডাক বিভাগের রেজিস্ট্রি ৫১৪ নম্বর রশিদের মাধ্যমে এডি (প্রাপ্তিস্বীকার) সহ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশটি অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা, প্রযত্নে আহসান হাবীব নাসিম, অভিনয়শিল্পী সংঘ কার্যালয় ১০/এ, ব্লক-এ রোড নম্বর ২, নিকেতন, গুলশান-১ ঢাকা, এই ঠিকানায় পাঠানো হয়। ০৫৫/২৩ রেফারেন্স নম্বরীয় লিগ্যাল নোটিশটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রভার উল্লেখিত ঠিকানায় পৌঁছাবে।
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মাযহারী কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলা আড্ডা ইউনিয়নের পোম্বাইশ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন।
লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী সাদিয়া অভিনেত্রী প্রভাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতা আপনার কিছু কর্মকাণ্ড ধর্ম এবং প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যা তরুণ প্রজন্মকে গণউৎপাত হেতুতে বিপৎগামী করবে বলে আমার বিশ্বাস জন্মানোর কারণে জনস্বার্থে এবং নিজে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপনাকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করলাম।
দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অত্র নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আপনার উক্ত বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক সঠিক ছিল না, এমনকি উক্ত ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে পাবলিকলি ক্ষমাপ্রার্থনা চাইবেন। লিগ্যাল নোটিশের জবাব প্রদানপূর্বক তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।
অন্যথায় আমরা আপনার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। যার ধরুন আপনি আইনের আওতায় আসবেন এবং উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কেবল আপনি এককভাবে দায়ী থাকবেন।
এ বিষয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মাযহারী বলেন, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টির আশঙ্কা করছি। তার (প্রভার) এমন বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে প্রলুব্ধ হয়ে সমাজের নারী-পুরুষ এমন বেআইনি কাজে লিপ্ত হতে পারে। তাই অভিনেত্রী প্রভাকে আমার এ নোটিশ দেওয়া।
তিনি যদি নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে জবাব না দেন এবং জনসম্মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা না চান, তবে দেশের প্রচলিত আইনের ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।