
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। উচ্চ আদালতে প্রভাব বিস্তার করা এক মন্ত্রী ও একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও আইনজীবী নেতার।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের আরও সতর্ক ও সংযম প্রদর্শন করে চলতে হবে। কারণ চলতি বছরই জাতীয় নির্বাচন।’ তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভোটকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করা না করা নিয়ে বিতর্ককে আরও উসকে দেবে, যা সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। সুপ্রিম কোর্টে উদ্ভূত পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। ভোট শেষে এই ঘটনা নিয়ে তিনি বসবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেষ্টা করেছিলাম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়িয়ে যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়। কিন্তু পারিনি। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ ও বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটেছে। বিকল্প অনেক উপায় ছিল এমন লক্ষ্য পূরণে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাইকোর্ট চত্বরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন আইনজীবী নেতার কক্ষে বসে গত বুধবারের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। তাদের মুখেও শোনা গেছে অস্বস্তির কথা। সেদিন অনেক আইনজীবীকে তাদের আইন পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। অথচ আদালত অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোট চলছিল। ভোট নিয়ে ভ্রƒক্ষেপ ছিল না ওই সরকারি দল সমর্থক আইনজীবীদের। তারা কোনোভাবেই ভোটকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার সমালোচিত হয়েছে তা সমর্থন করছেন না।
উচ্চ আদালতে আইন পেশায় জড়িত এক প্রভাবশালী আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বুধবারের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। দুই জনের ব্যক্তিস্বার্থ ও এক মন্ত্রীর বাহবা নেওয়ার চেষ্টায় মূলত এ ঘটনা ঘটেছে। এটি বড় ক্ষতির মুখেমুখি করতে পারে সরকার ও আওয়ামী লীগকে।’ তিনি বলেন, এই নির্বাচন কি সরকার পরিবর্তনের? তাহলে এত বড় ঝুঁকি কেন নিতে হবে?
সিনিয়র এ আইনজীবী আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেমন গ্রহণ করা হয় না, তেমনি এখানে যাদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন, যারা দক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তাদের অন্তর্ভুক্ত করা বা পরামর্শ শোনা হয় না। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের ভেতরে। এ কারণে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বছরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বিতর্কে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী একাধিক দল নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থের কারণে এসব ছোটখাটো ভোটে জিতে মরিয়া অবস্থান নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলা অযৌক্তিক।
সুপ্রিম কোর্ট বারের এবারের (২০২৩-২০২৪) নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল নির্বাচন করেছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম. মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আইনজীবী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মূলত ব্যালট নাকি ইসিএমে (ইলেকট্রনিক কাউন্টিং মেশিন) নির্বাচন হবে তা নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধ মারামারিতে গড়ায়। সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ব্যালটে ভোটগ্রহণের পক্ষে অনড় থাকেন। এ নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধের কারণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ভোটের আগে পদত্যাগ করেন। দুই পক্ষ মিলে তাকে ফেরানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয় ব্যালটে অনড় অবস্থানের কারণে। পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ইসিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়।
আওয়ামীপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তাদের কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাতে ‘ঘি না পড়ে’ সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে তাদের দ্বারা সৃষ্টি না হয় যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেয়।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা কৌশল অনুসরণ করে চলেছে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে দুই দলের কাছে। ধর্মভিত্তিক বা ইসলামি দলগুলোকে আসন ছাড়ার প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে আলাদা মোর্চা করে দলগুলোকে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রস্তাবও আছে। আওয়ামী লীগ ও ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কথা জানা গেছে।
বিএনপি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে যাবে না বললেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গে রাখতে ভেতরে ভেতরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির দিকে ঝুঁকে থাকা ধর্মভিত্তিক দলকে সঙ্গে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্তত ছয়টি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। তবে উভয়পক্ষই বৈঠক ও প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও প্রস্তাবের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে খেলাফতে আন্দোলনের আমির মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে সেটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে তো অনেক রকম কথা শোনা যায়। তবে আমাদের কাছে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি। আর আমরাও নিজেরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ এখনো করছি না।’ বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নতুন ফ্রন্ট নিয়ে আ.লীগে দোলাচল না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো লিয়াজোঁ নেই।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কৌশলগত কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই সঙ্গে থাকবে আশ্বাস দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল অন্য জোটে না গিয়ে নিজেদের আলাদা একটি ফ্রন্ট গঠনের কথাও জানিয়েছে। ওই নেতারা বলেন, আলাদা ফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করার যে তৎপরতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে দলের বড় একটি অংশের দ্বিমত পাওয়া গেছে। দলটির বিভিন্ন পদের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে থাকবে যতই আশ্বাস দিক ইসলামি দলের নেতারা, শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, ভোটও দেবে না আওয়ামী লীগকে।
ওই নেতারা বলেন, ইসলামি দলগুলোর নেতারা সুযোগ বঞ্চিত হতে চান না, আবার তাদের মধ্যে ভয়ভীতিও আছে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে জানান, আগামী নির্বাচনে তার দল কোন জোটে যাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক মাস লাগবে। তখন তারা বুঝতে পারবেন তাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করা নিয়ে তোড়জোড় কেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের একটি অংশ ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন। ওই অংশটি বিভিন্ন সময়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে গুজব সৃষ্টি ও অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ খুঁজবে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ধর্মভিত্তিক দলকে। তাছাড়া সব দলই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বড় একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে। ওই বছরের ৫ মে ঢাকায় তা-ব চালায় তারা। পরে বিএনপি তাদের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। সেটাও বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভোটের আগে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। জোটে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বশর্ত থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে যে কেউ জোটে আসতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনের আগে জোটের পরিধি বাড়ার কথা জানালেও ইসলামি দলগুলোর ১৪ দলে আসার সুযোগ নেই বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহাজোট করতেই পারে। তবে ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। এ সংখ্যা বাড়বে না।’ তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোট হবে। না এলে ওইসব দল আলাদা জোটেও নির্বাচন করতে পারে। তবে জুনের পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করা দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষার মতো।’ তিনি বলেন, এরা সুবিধা নেবে ঠিকই, সুবিধা নেওয়া শেষ হলেই বেকায়দায়ও ফেলবে। হেফাজত যেমন আচরণ করেছে ঠিক সেটাই করবে তারাও। ফলে এসব দল বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য উত্তম বলে মনে করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য করা মূলত আদর্শচ্যুত হওয়া।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাদেরই দুজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মভিত্তিক দলের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে তারা যাবে না এ আশ্বাসও দিয়েছে কয়েকটি দল।
কয়েকটি ইসলামি দলের শীর্ষসারির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন। তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কারোরই সঙ্গী হবেন না।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিলেও ভোটের সময়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে উল্টে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে মধ্যমসারির কয়েক নেতার কাছ থেকে। অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তারা নাও থাকতে পারেন। হেফাজতের মতো হামলা-মামলার খড়গ এড়াতে এবং সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হতে চায় না বলেই ইসলামপন্থি ওই দলগুলো সরকারের সঙ্গী হওয়ার কথা ভাবছে।
দলগুলোর মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শুভাকাক্সক্ষী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ধর্মভিত্তিক দল ডানপন্থি দল বা জোটের সঙ্গেই ভিড়বে। আর বর্তমান পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হবে তারা। তবে ভোট অন্য যাবে অন্য পক্ষে।
ওইসব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ধ্যান-দরবার করছেন তারা বাদে অন্য নেতারাও দাবি করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে যতই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, মিটিং-সিটিং হোক, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বললেও তলে তলে সমর্থন দিবে সরকারবিরোধী জোটকে। তারা সুবিধা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সঙ্গ দেবে, সঙ্গ ছাড়বে। কিন্তু ভোট নৌকার পক্ষে কখনোই যাবে না।
তবে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ইসলামি ওই দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা মনে করেন, যেসব দলকে তারা সঙ্গী করতে চান সেসব দল জামায়াতবিরোধী। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তাদের।
খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পক্ষেই তার দলের অবস্থান। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তার দল আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে না গিয়ে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে আলাদা জোট করার চিন্তা করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন আজ। সারা দেশে দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে উদযাপন করা হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এ নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ ও তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা-সংগ্রামের ডাক দেন; যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমণ্ডির বাসভবনে কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্যসাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।
বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।’
‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্ব দান করেছিলেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলাদেশ সফরের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্তব্য বইয়ে তিনি লেখেন, এই উপমহাদেশের প্রতিটি মুক্তিকামী, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থপতি এবং পিতা। মমতা বলেন, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মঞ্চে অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বে মর্যাদা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সেই বিরল নেতা, যার প্রতি ধর্মমত-নির্বিশেষে সব মানুষ প্রণাম জানিয়ে ধন্য হয়।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিত্রিত করলেও ইতিহাসই তার প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করে, যখন তার এককালীন ঘোরতর শত্রু তাকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবেক পাকিস্তানি (বেলুচিস্তান) অফিসার মেজর জেনারেল তোজাম্মেল হোসেন মালিক পরে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘বস্তুত মুজিব দেশদ্রোহী ছিলেন না (পাকিস্তানে তাকে সেভাবে চিত্রিত করা হলেও)। নিজ জনগণের জন্য তিনি ছিলেন এক মহান দেশপ্রেমিক।’ আরেকজন সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন পাকিস্তানি জান্তার মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ৭ মার্চের ভাষণের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালিক তার ‘পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল আশাব্যঞ্জক বাণী শ্রবণ শেষে মসজিদ অথবা গির্জা থেকে তারা বেরিয়ে আসছেন।’ বাসস
দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবেশ শান্তই ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তারপর কয়েক দফায় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি; শেষ পর্যন্ত মারপিট। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের প্রথম দিনের মতো আগ্রাসী ছিল না পুলিশ। তবে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট নেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের চিত্র এরকমই ছিল।
ভোটের প্রথম দিনই নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। কার্যত ভোট থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। গতকালও ভোটের প্রচারে কিংবা ভোট দেওয়ায় আগ্রহ ছিল না তাদের। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি। প্রথম দিন ভোট পড়েছিল ২ হাজার ২১৭টি। দ্বিতীয় দিনে পড়েছে ১ হাজার ৯২০টি। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন।
দুদিনে ভোট পড়েছে অর্ধেকের কম। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় ভোটগণনা শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। ভোটের প্রথম দিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা, ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর, সরকারপন্থি-বিএনপিপন্থিদের হট্টগোল, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর, বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সব মিলিয়ে নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি ছিল সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ : আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আট বিচারপতি এজলাসে ছিলেন। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিস্তারিত শুনে প্রধান বিচারপতি তাদের বেলা ১১টায় তার খাসকামরায় যেতে বলেন। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আইনজীবীদের জানান প্রধান বিচারপতি। ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। কিছুক্ষণ পর হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা আমাদের কথা শুনেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি।’
প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই, অ্যাটর্নি জেনারেল : দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা যেহেতু বারের বিষয় (আইনজীবী সমিতির) এতে তার কিছু করণীয় নেই। বার অ্যাসোসিয়েশন ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টার সুরাহা করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। পরিবেশ যেন ঠিক থাকে তা-ও বলেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুপক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একপক্ষ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেলে আরেকপক্ষ বাধা দেবে। এরকম হলে অবশ্যই পরিবেশ ঠিক থাকবে না। তাই দায় সমানভাবে নিতে হবে। বিএনপিপন্থিরা কিন্তু নির্বাচনে আসতে চাচ্ছিল না।’ বিএনপিপন্থিদের নতুন নির্বাচনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন তারা চাইতেই পারেন। সমিতি ও বারের সদস্যরা যদি মনে করেন তাহলে সে দাবি বিবেচনা করে দেখবেন।’
কয়েক দফায় আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সে সময় বিএনপিপন্থি কোনো প্রার্থী বা আইনজীবীকে দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী ভোটকেন্দ্রের বাইরের প্যান্ডেলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। সরকারপন্থি আইনজীবীরাও কাছেই ছিলেন। একপর্যায়ে দুপক্ষ সেøাগান-পাল্টা সেøাগান দেয়। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তাদের মধ্যে।
বিএনপিপন্থিরা ‘ভোট চোর’ ‘ভোট চোর’ স্লোগান দেয়। সরকারপন্থিরা ‘সাদা’ ‘সাদা’ ও ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেয়। এরকম চলে অন্তত ৪০ মিনিট। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থিরা পিছু হটলে কেন্দ্রের সামনে সরকারপন্থিরা অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ফের সংগঠিত হয়ে কেন্দ্রের সামনে এলে সরকারপন্থিরা তাদের ঠেকাতে চায়। সে সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং ধস্তাধস্তি হয়।
ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ : গত বুধবার সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদও। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে আসেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ‘যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত, মর্মাহত। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাম্য ছিল না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করব।’ তার বক্তব্যের পর মোবাইল ফোনে এলআরএফ সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। সে সময় অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ সে সময় এলআরএফ কার্যালয়ে ছিলেন।
‘আরা যদি দেশত ফিরি যাইন ন ফারি আহারা মরি যামু। আরা এ দেশত ন থাকতি চাই। আরা আর বালা লাহে না। নিজ দেশে মরি গিয়ে ভালো’ কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান। তার সঙ্গে সুর মেলান অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা। নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তাদের মতো অন্য রোহিঙ্গরাও। তবে রোহিঙ্গাদের ভেতরে থাকা কিছু চক্র বাধা দিচ্ছে, যাতে তারা নিজ দেশে যেতে না পারেন। ওই চক্রগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র। দুপক্ষের এসব চক্র রোহিঙ্গাদের ঘিরে নানাভাবে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকেই প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে তারা ইয়াবার চালান আনছে নিয়মিত। মাদক কারবারিদের পাশাপাশি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার সদস্যদের তৎপরতা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকা- নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এসবের কারণে ওইসব এনজিওর কর্মকা- নজরদারি করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচিত হন। বিশ্বনেতারা সরকারপ্রধানের প্রশংসা করে বিবৃতি দেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফর করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের ভালো পরিবেশে রাখতে নোয়াখালীর ভাসানচরে একটি আবাসন পল্লীও গড়ে তোলে সরকার। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তারপরও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল। এমনকি তাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিচ্ছে মিয়ানমারকে। গত বুধবার মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য টেকনাফে এসেছে। ওইদিনই সেখানে একজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। গতকাল আরেক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জুলেখা বিবি, আবিদুর রহিম, জুলহাস মিয়াসহ শতাধিক রোহিঙ্গা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চান। স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চান সেখানে গিয়ে। জান্তা সরকার তাদের মেরে ফেললেও দেশেই মরতে চান তারা। আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা জানান, যদি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে আত্মাহুতি দেবেন।
ক্যাম্পের লোকজন আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চলে আসছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাদের বসবাস। ক্যাম্পের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একাধিক মাদক চক্র। এ ছাড়া খুন, ডাকাতি ও অপহরণকারী একাধিক চক্রও সেখানে ত্রাস ছড়াচ্ছে। কুতুপালংসহ কয়েকটি ক্যাম্পে অপরাধীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব অপরাধী নিজেদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি, খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। এসব চক্রের মধ্যে মাস্টার রফিক, মৌলবি ইউনুছ, আনাস, আরসা ও মুন্না গ্রুপের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
তারা জানান, আরসাও চাচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার না যেতে পারে। পাশাপাশি কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু চক্রও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা যেন নিজ দেশে ফেরত না যেতে পারে। তারা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে বোঝাচ্ছে যে, মিয়ানমার সরকার আগের মতো দমনপীড়ন চালাবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধও করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। আরসার বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। রোহিঙ্গাদের একটি চক্র অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।’
জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে দেশি-বিদেশি অর্ধশত এনজিও কাজ করছে। রোহিঙ্গা শিশুদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কয়েকজন রোহিঙ্গা। তারা নাম প্রকাশ না করে বলে, আরসা, স্থানীয় কিছু চক্র ও কয়েকটি এনজিও চায় না রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত যাক। কারণ তারা চলে গেলে এনজিওগুলো সমস্যায় পড়বে।
রোহিঙ্গারা বলছে, তারা দেশে ফিরতে মরিয়া। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলকে জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া, সবাইকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, মিয়ানমারের অন্য নাগরিকরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় ওই ধরনের সুবিধা দেওয়া, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা তাদের সহায়-সম্পদ ফেরত দেওয়া, গৃহপালিত পশুগুলো ফেরত দেওয়া, সবুজ রঙে পরিচয়পত্র ফেরত ও নতুন করে কার্ড তৈরি করে বসবাস করার সুযোগ দেওয়া এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহলকে নজরে রাখতে অনুরোধ জানায় রোহিঙ্গারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে হত্যাকা-সহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠতে সরকার নানাভাবে কাজ করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গারাও দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে।’
আমি যখন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পৌঁছাই, তখন শেষ বিকেল। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। একসময় এই কলেজ ক্যাম্পাসে কত আড্ডা দিয়েছি। স্মৃতিকে পেছনে সরিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। প্রধান ফটক থেকে মিনিট-চার হাঁটার পর নজরে পড়ে টিনের বোর্ডে খোদাই করা এক আহ্বান। ‘দাঁড়াও পথিকবর আমার নাম কাইজেলিয়া!’ এমন আহ্বান উপেক্ষা করা যায়। প্রবল বিস্ময়ে বোর্ডের বাকি লেখাগুলো পড়ে নিলাম।
বাংলাদেশে দুর্লভ প্রজাতির গাছ ‘কাইজেলিয়া’। একশ বছরের বেশি বয়সী গাছটির অবস্থান কলেজের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে। এর আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশের সেনেগালে। বোর্ডে লেখা তথ্য অনুযায়ী, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে ১৯২০ সালের দিকে কোনো এক বৃক্ষপ্রেমী কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে গাছটির উচ্চতা ২০-২৫ মিটার। কাইজেলিয়া ‘বিগনোনিয়াসিয়া’ গোত্রের বৃক্ষ, বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাইজেলিয়া আফ্রিকানা’। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের, পাকলে বাদামি হয়ে যায়। তবে এটি বিষাক্ত হলেও প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস, বাত, ছত্রাক দমন, মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসারের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। শুরুর মতো করে শেষ লাইনে তার বেঁচে থাকার আকুলতা যে কারও হৃদয়ে নাড়া দেবে। ‘যদি তোমরা পরিচর্যা না করো অচিরেই আমি মারা যাব’ আমাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমাদের।
এদিকে কাইজেলিয়া বৃক্ষের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংগঠন ‘কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ’ (কাকাশিস)। এই সংগঠনের এক সদস্য জানান, শতবর্ষী কাইজেলিয়া আমাদের কলেজের ঐতিহ্য। প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। এমনকি মাঝেমধ্যে বিদেশি অতিথিরাও গাছটি দেখতে আসেন।
কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দুলাল সরকার জানান, বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছ কাইজেলিয়া। এটি বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় একটি বৃক্ষ। কলেজের মালী বাতুল সিং। বর্তমানে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে লাগানো কাইজেলিয়ার দুটি গাছ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সামনে বড় হচ্ছে। একই কথা জানান, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ। তিনি জানান, মালী বাতুল সিংয়ের দেশীয় পদ্ধতিতে লাগানো কয়েকটি চারা ২০১৪ তার ক্যাম্পাসে লাগিয়েছিলেন। বর্তমানে গাছগুলো বেঁচে আছে এবং বড় হচ্ছে।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে কাইজেলিয়ার কয়েকটি চারা উৎপাদন করেছিলেন। বাকৃবির বিজ্ঞানীরা সেই চারাগুলো রোপণ করলেও বাঁচাতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়েছিলেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক মালী বাতুল সিং। এ অসাধ্যসাধন করলেও বাতুলের চাকরি স্থায়ী হয়নি কারমাইকেল কলেজে।
বাতুল সিং জানান, ৮-৯ বছরের প্রচেষ্টার পর তিনি ২০১২ সালের দিকে কাইজেলিয়া গাছের চারা দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। এমন সাফল্যের পর আমার প্রত্যাশা ছিল কারমাইকেল কলেজে স্থায়ী চাকরি পাব, কিন্তু পাইনি। বাতুল সিংয়ের স্বপ্ন নিজ হাতে দেশের প্রতিটি জেলায় এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত একটি করে কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করে বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষটিকে বাঁচিয়ে রাখা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ৫০টিরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। এর বিনিময়ে কোনো টাকা নেন কি না জানতে চাইলে বাতুল সিং বলেন, ‘কাইজেলিয়া আমার সন্তানের মতো। এর চারা দিতে পারলেই আমি খুশি। যারা টাকার বিনিময়ে চারা নিতে চান, আমি তাদের চারা দিই না। আমি চাই গাছটা বাংলাদেশে বেঁচে থাকুক।’
বাতুলের আক্ষেপ আর প্রত্যাশার গল্প পেরিয়ে আমরা আবার অতীতে ফিরে যাই। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেল এই কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারই নামানুসারে কলেজের নাম করা হয় ‘কারমাইকেল কলেজ’। শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন বাঙালি জমিদারের সহযোগিতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে এর অস্থায়ী ভবন হিসেবে পাঠদান চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ। কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ওয়াটকিন।
৬১০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত কলেজের মূল ভবন ইন্দোস্যারানিক আদলে নির্মিত স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য-নিদর্শন, যা বাংলার সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস মোগলীয় নির্মাণ কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়। মূল ভবনের অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যকীর্তি পর্যটকদের প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ করে তুলতে যথেষ্ট। গম্বুজের ব্যাপক ব্যবহার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের পরিচায়ক। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গম্বুজ ভবনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কার্নিশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মারলন অলংকরণের কারুকাজ সন্নিবেশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্দোস্যারানিক স্থাপত্য সৌকর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি। এই ভবন রংপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বছর জুড়ে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে এই কলেজে।
কলেজে ঢুকতেই হাতের বামে পড়বে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, একটু এগিয়ে গেলে শিক্ষকদের ডরমেটরি, যা হোয়াইট হাউজ নামে পরিচিত। পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলেজ প্রাইমারি স্কুল)। স্কুল পেরিয়ে সামনের দিকে এগোলে চৌরাস্তা বা জিরো পয়েন্ট। এ ছাড়া কলেজটিতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দ্বিতল ছাত্রী বিশ্রামাগার, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন, ক্যানটিন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ডরমেটরি, সাব-পোস্ট অফিস, অডিটোরিয়াম (নির্মাণাধীন), প্রশাসনিক ভবন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও ১৯৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। কভিডের সময় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছেন এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাম ভর্তির কারণে অনেকেই ভর্তি বাতিল করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন, ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হুসেন।
কলেজ ক্যাম্পাসেই কথা হয়, কারমাইকেল কলেজের নাট্য-সাহিত্য সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হাসানের সঙ্গে। আরিফ জানান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কারমাইকেল কলেজের সুনাম থাকলেও বর্তমানে তাদের কষ্ট করে সংগঠন চালাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা নেই, ফলে ভালো প্রোগ্রাম করা যাচ্ছে না।
এখানকার ছাত্রীরা সান্ধ্য আইনে বন্দি বলে জানান ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা। তিনি জানান, মেয়েদের জন্য তিনটি হল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে মেয়েশিক্ষার্থীদের মেসে থাকতে হয়। মেস মালিকরা সন্ধ্যার মধ্যে মেসে ঢোকার নির্দেশ জারি করেছেন। ফলে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরা অথবা টাউন হলের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শেষ করে মেসে প্রবেশ করা তার মতো আরও অনেক ছাত্রীর জন্য এক বড় বিড়ম্বনা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে তারা সংকটে পড়েছেন। একদিকে খাবারের খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মেসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মেস মালিকরা।
কলেজটিতে মেয়েদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে তাপসী রাবেয়া হল, বেগম রোকেয়া হল ও জাহানারা ইমাম হল। ছেলেদের জন্য রয়েছে জিএল হল, ওসমানী হল, সিএম হল এবং কেবি ছাত্রাবাস (শুধু হিন্দু ছাত্রদের জন্য)। এর মধ্যে সিএম হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কলেজটিতে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের।
২৮ বছর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে কলেজটিতে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো থেকে বারবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর ছাত্র সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হচ্ছে।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর মো. আমজাদ হুসেন বলেন, ১০৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন, যা আমাদের ক্যাম্পাসের পড়াশোনার মানের পরিচয় বহন করে। কলেজের সোনালি অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আগামীতে আরও সোনার সন্তান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন কলেজের শিক্ষকরা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।