
আমি যখন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পৌঁছাই, তখন শেষ বিকেল। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। একসময় এই কলেজ ক্যাম্পাসে কত আড্ডা দিয়েছি। স্মৃতিকে পেছনে সরিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। প্রধান ফটক থেকে মিনিট-চার হাঁটার পর নজরে পড়ে টিনের বোর্ডে খোদাই করা এক আহ্বান। ‘দাঁড়াও পথিকবর আমার নাম কাইজেলিয়া!’ এমন আহ্বান উপেক্ষা করা যায়। প্রবল বিস্ময়ে বোর্ডের বাকি লেখাগুলো পড়ে নিলাম।
বাংলাদেশে দুর্লভ প্রজাতির গাছ ‘কাইজেলিয়া’। একশ বছরের বেশি বয়সী গাছটির অবস্থান কলেজের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে। এর আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশের সেনেগালে। বোর্ডে লেখা তথ্য অনুযায়ী, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে ১৯২০ সালের দিকে কোনো এক বৃক্ষপ্রেমী কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে গাছটির উচ্চতা ২০-২৫ মিটার। কাইজেলিয়া ‘বিগনোনিয়াসিয়া’ গোত্রের বৃক্ষ, বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাইজেলিয়া আফ্রিকানা’। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের, পাকলে বাদামি হয়ে যায়। তবে এটি বিষাক্ত হলেও প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস, বাত, ছত্রাক দমন, মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসারের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। শুরুর মতো করে শেষ লাইনে তার বেঁচে থাকার আকুলতা যে কারও হৃদয়ে নাড়া দেবে। ‘যদি তোমরা পরিচর্যা না করো অচিরেই আমি মারা যাব’ আমাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমাদের।
এদিকে কাইজেলিয়া বৃক্ষের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংগঠন ‘কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ’ (কাকাশিস)। এই সংগঠনের এক সদস্য জানান, শতবর্ষী কাইজেলিয়া আমাদের কলেজের ঐতিহ্য। প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। এমনকি মাঝেমধ্যে বিদেশি অতিথিরাও গাছটি দেখতে আসেন।
কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দুলাল সরকার জানান, বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছ কাইজেলিয়া। এটি বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় একটি বৃক্ষ। কলেজের মালী বাতুল সিং। বর্তমানে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে লাগানো কাইজেলিয়ার দুটি গাছ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সামনে বড় হচ্ছে। একই কথা জানান, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ। তিনি জানান, মালী বাতুল সিংয়ের দেশীয় পদ্ধতিতে লাগানো কয়েকটি চারা ২০১৪ তার ক্যাম্পাসে লাগিয়েছিলেন। বর্তমানে গাছগুলো বেঁচে আছে এবং বড় হচ্ছে।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে কাইজেলিয়ার কয়েকটি চারা উৎপাদন করেছিলেন। বাকৃবির বিজ্ঞানীরা সেই চারাগুলো রোপণ করলেও বাঁচাতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়েছিলেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক মালী বাতুল সিং। এ অসাধ্যসাধন করলেও বাতুলের চাকরি স্থায়ী হয়নি কারমাইকেল কলেজে।
বাতুল সিং জানান, ৮-৯ বছরের প্রচেষ্টার পর তিনি ২০১২ সালের দিকে কাইজেলিয়া গাছের চারা দেশীয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। এমন সাফল্যের পর আমার প্রত্যাশা ছিল কারমাইকেল কলেজে স্থায়ী চাকরি পাব, কিন্তু পাইনি। বাতুল সিংয়ের স্বপ্ন নিজ হাতে দেশের প্রতিটি জেলায় এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত একটি করে কাইজেলিয়ার চারা রোপণ করে বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষটিকে বাঁচিয়ে রাখা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ৫০টিরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। এর বিনিময়ে কোনো টাকা নেন কি না জানতে চাইলে বাতুল সিং বলেন, ‘কাইজেলিয়া আমার সন্তানের মতো। এর চারা দিতে পারলেই আমি খুশি। যারা টাকার বিনিময়ে চারা নিতে চান, আমি তাদের চারা দিই না। আমি চাই গাছটা বাংলাদেশে বেঁচে থাকুক।’
বাতুলের আক্ষেপ আর প্রত্যাশার গল্প পেরিয়ে আমরা আবার অতীতে ফিরে যাই। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেল এই কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারই নামানুসারে কলেজের নাম করা হয় ‘কারমাইকেল কলেজ’। শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন বাঙালি জমিদারের সহযোগিতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে এর অস্থায়ী ভবন হিসেবে পাঠদান চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ। কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ওয়াটকিন।
৬১০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত কলেজের মূল ভবন ইন্দোস্যারানিক আদলে নির্মিত স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য-নিদর্শন, যা বাংলার সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস মোগলীয় নির্মাণ কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়। মূল ভবনের অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যকীর্তি পর্যটকদের প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ করে তুলতে যথেষ্ট। গম্বুজের ব্যাপক ব্যবহার মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের পরিচায়ক। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গম্বুজ ভবনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কার্নিশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মারলন অলংকরণের কারুকাজ সন্নিবেশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্দোস্যারানিক স্থাপত্য সৌকর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি। এই ভবন রংপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বছর জুড়ে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে এই কলেজে।
কলেজে ঢুকতেই হাতের বামে পড়বে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, একটু এগিয়ে গেলে শিক্ষকদের ডরমেটরি, যা হোয়াইট হাউজ নামে পরিচিত। পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলেজ প্রাইমারি স্কুল)। স্কুল পেরিয়ে সামনের দিকে এগোলে চৌরাস্তা বা জিরো পয়েন্ট। এ ছাড়া কলেজটিতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দ্বিতল ছাত্রী বিশ্রামাগার, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন, ক্যানটিন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ডরমেটরি, সাব-পোস্ট অফিস, অডিটোরিয়াম (নির্মাণাধীন), প্রশাসনিক ভবন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও ১৯৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। কভিডের সময় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছেন এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাম ভর্তির কারণে অনেকেই ভর্তি বাতিল করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন, ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হুসেন।
কলেজ ক্যাম্পাসেই কথা হয়, কারমাইকেল কলেজের নাট্য-সাহিত্য সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হাসানের সঙ্গে। আরিফ জানান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কারমাইকেল কলেজের সুনাম থাকলেও বর্তমানে তাদের কষ্ট করে সংগঠন চালাতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা নেই, ফলে ভালো প্রোগ্রাম করা যাচ্ছে না।
এখানকার ছাত্রীরা সান্ধ্য আইনে বন্দি বলে জানান ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা। তিনি জানান, মেয়েদের জন্য তিনটি হল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে মেয়েশিক্ষার্থীদের মেসে থাকতে হয়। মেস মালিকরা সন্ধ্যার মধ্যে মেসে ঢোকার নির্দেশ জারি করেছেন। ফলে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরা অথবা টাউন হলের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শেষ করে মেসে প্রবেশ করা তার মতো আরও অনেক ছাত্রীর জন্য এক বড় বিড়ম্বনা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে তারা সংকটে পড়েছেন। একদিকে খাবারের খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মেসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মেস মালিকরা।
কলেজটিতে মেয়েদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে তাপসী রাবেয়া হল, বেগম রোকেয়া হল ও জাহানারা ইমাম হল। ছেলেদের জন্য রয়েছে জিএল হল, ওসমানী হল, সিএম হল এবং কেবি ছাত্রাবাস (শুধু হিন্দু ছাত্রদের জন্য)। এর মধ্যে সিএম হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কলেজটিতে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের।
২৮ বছর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে কলেজটিতে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো থেকে বারবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর ছাত্র সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হচ্ছে।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর মো. আমজাদ হুসেন বলেন, ১০৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন, যা আমাদের ক্যাম্পাসের পড়াশোনার মানের পরিচয় বহন করে। কলেজের সোনালি অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আগামীতে আরও সোনার সন্তান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন কলেজের শিক্ষকরা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা কৌশল অনুসরণ করে চলেছে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে দুই দলের কাছে। ধর্মভিত্তিক বা ইসলামি দলগুলোকে আসন ছাড়ার প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে আলাদা মোর্চা করে দলগুলোকে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রস্তাবও আছে। আওয়ামী লীগ ও ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কথা জানা গেছে।
বিএনপি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে যাবে না বললেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গে রাখতে ভেতরে ভেতরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির দিকে ঝুঁকে থাকা ধর্মভিত্তিক দলকে সঙ্গে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্তত ছয়টি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। তবে উভয়পক্ষই বৈঠক ও প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও প্রস্তাবের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে খেলাফতে আন্দোলনের আমির মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে সেটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে তো অনেক রকম কথা শোনা যায়। তবে আমাদের কাছে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি। আর আমরাও নিজেরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ এখনো করছি না।’ বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নতুন ফ্রন্ট নিয়ে আ.লীগে দোলাচল না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো লিয়াজোঁ নেই।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কৌশলগত কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই সঙ্গে থাকবে আশ্বাস দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল অন্য জোটে না গিয়ে নিজেদের আলাদা একটি ফ্রন্ট গঠনের কথাও জানিয়েছে। ওই নেতারা বলেন, আলাদা ফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করার যে তৎপরতা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে দলের বড় একটি অংশের দ্বিমত পাওয়া গেছে। দলটির বিভিন্ন পদের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনে সরকারের সঙ্গে থাকবে যতই আশ্বাস দিক ইসলামি দলের নেতারা, শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, ভোটও দেবে না আওয়ামী লীগকে।
ওই নেতারা বলেন, ইসলামি দলগুলোর নেতারা সুযোগ বঞ্চিত হতে চান না, আবার তাদের মধ্যে ভয়ভীতিও আছে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে জানান, আগামী নির্বাচনে তার দল কোন জোটে যাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কয়েক মাস লাগবে। তখন তারা বুঝতে পারবেন তাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গী করা নিয়ে তোড়জোড় কেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের একটি অংশ ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন। ওই অংশটি বিভিন্ন সময়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে গুজব সৃষ্টি ও অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ খুঁজবে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ধর্মভিত্তিক দলকে। তাছাড়া সব দলই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বড় একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে। ওই বছরের ৫ মে ঢাকায় তা-ব চালায় তারা। পরে বিএনপি তাদের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। সেটাও বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভোটের আগে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। জোটে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বশর্ত থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে যে কেউ জোটে আসতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনের আগে জোটের পরিধি বাড়ার কথা জানালেও ইসলামি দলগুলোর ১৪ দলে আসার সুযোগ নেই বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহাজোট করতেই পারে। তবে ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। এ সংখ্যা বাড়বে না।’ তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোট হবে। না এলে ওইসব দল আলাদা জোটেও নির্বাচন করতে পারে। তবে জুনের পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করা দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষার মতো।’ তিনি বলেন, এরা সুবিধা নেবে ঠিকই, সুবিধা নেওয়া শেষ হলেই বেকায়দায়ও ফেলবে। হেফাজত যেমন আচরণ করেছে ঠিক সেটাই করবে তারাও। ফলে এসব দল বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য উত্তম বলে মনে করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য করা মূলত আদর্শচ্যুত হওয়া।
ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাদেরই দুজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মভিত্তিক দলের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে তারা যাবে না এ আশ্বাসও দিয়েছে কয়েকটি দল।
কয়েকটি ইসলামি দলের শীর্ষসারির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন। তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কারোরই সঙ্গী হবেন না।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিলেও ভোটের সময়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে উল্টে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে মধ্যমসারির কয়েক নেতার কাছ থেকে। অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তারা নাও থাকতে পারেন। হেফাজতের মতো হামলা-মামলার খড়গ এড়াতে এবং সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হতে চায় না বলেই ইসলামপন্থি ওই দলগুলো সরকারের সঙ্গী হওয়ার কথা ভাবছে।
দলগুলোর মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শুভাকাক্সক্ষী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ধর্মভিত্তিক দল ডানপন্থি দল বা জোটের সঙ্গেই ভিড়বে। আর বর্তমান পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হবে তারা। তবে ভোট অন্য যাবে অন্য পক্ষে।
ওইসব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ধ্যান-দরবার করছেন তারা বাদে অন্য নেতারাও দাবি করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে যতই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, মিটিং-সিটিং হোক, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বললেও তলে তলে সমর্থন দিবে সরকারবিরোধী জোটকে। তারা সুবিধা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সঙ্গ দেবে, সঙ্গ ছাড়বে। কিন্তু ভোট নৌকার পক্ষে কখনোই যাবে না।
তবে আওয়ামী লীগের যে নেতারা ইসলামি ওই দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা মনে করেন, যেসব দলকে তারা সঙ্গী করতে চান সেসব দল জামায়াতবিরোধী। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তাদের।
খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পক্ষেই তার দলের অবস্থান। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তার দল আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে না গিয়ে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে আলাদা জোট করার চিন্তা করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন আজ। সারা দেশে দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবে উদযাপন করা হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এ নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ ও তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা-সংগ্রামের ডাক দেন; যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমণ্ডির বাসভবনে কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্যসাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।
বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।’
‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্ব দান করেছিলেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলাদেশ সফরের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্তব্য বইয়ে তিনি লেখেন, এই উপমহাদেশের প্রতিটি মুক্তিকামী, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থপতি এবং পিতা। মমতা বলেন, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মঞ্চে অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বে মর্যাদা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সেই বিরল নেতা, যার প্রতি ধর্মমত-নির্বিশেষে সব মানুষ প্রণাম জানিয়ে ধন্য হয়।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিত্রিত করলেও ইতিহাসই তার প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করে, যখন তার এককালীন ঘোরতর শত্রু তাকে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবেক পাকিস্তানি (বেলুচিস্তান) অফিসার মেজর জেনারেল তোজাম্মেল হোসেন মালিক পরে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘বস্তুত মুজিব দেশদ্রোহী ছিলেন না (পাকিস্তানে তাকে সেভাবে চিত্রিত করা হলেও)। নিজ জনগণের জন্য তিনি ছিলেন এক মহান দেশপ্রেমিক।’ আরেকজন সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন পাকিস্তানি জান্তার মুখপাত্র মেজর সিদ্দিক সালিক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ৭ মার্চের ভাষণের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সালিক তার ‘পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল আশাব্যঞ্জক বাণী শ্রবণ শেষে মসজিদ অথবা গির্জা থেকে তারা বেরিয়ে আসছেন।’ বাসস
দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবেশ শান্তই ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তারপর কয়েক দফায় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি; শেষ পর্যন্ত মারপিট। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের প্রথম দিনের মতো আগ্রাসী ছিল না পুলিশ। তবে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট নেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের চিত্র এরকমই ছিল।
ভোটের প্রথম দিনই নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। কার্যত ভোট থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। গতকালও ভোটের প্রচারে কিংবা ভোট দেওয়ায় আগ্রহ ছিল না তাদের। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি। প্রথম দিন ভোট পড়েছিল ২ হাজার ২১৭টি। দ্বিতীয় দিনে পড়েছে ১ হাজার ৯২০টি। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন।
দুদিনে ভোট পড়েছে অর্ধেকের কম। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় ভোটগণনা শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। ভোটের প্রথম দিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা, ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর, সরকারপন্থি-বিএনপিপন্থিদের হট্টগোল, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর, বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সব মিলিয়ে নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি ছিল সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ : আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আট বিচারপতি এজলাসে ছিলেন। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিস্তারিত শুনে প্রধান বিচারপতি তাদের বেলা ১১টায় তার খাসকামরায় যেতে বলেন। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আইনজীবীদের জানান প্রধান বিচারপতি। ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। কিছুক্ষণ পর হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা আমাদের কথা শুনেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি।’
প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই, অ্যাটর্নি জেনারেল : দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা যেহেতু বারের বিষয় (আইনজীবী সমিতির) এতে তার কিছু করণীয় নেই। বার অ্যাসোসিয়েশন ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টার সুরাহা করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। পরিবেশ যেন ঠিক থাকে তা-ও বলেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুপক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একপক্ষ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেলে আরেকপক্ষ বাধা দেবে। এরকম হলে অবশ্যই পরিবেশ ঠিক থাকবে না। তাই দায় সমানভাবে নিতে হবে। বিএনপিপন্থিরা কিন্তু নির্বাচনে আসতে চাচ্ছিল না।’ বিএনপিপন্থিদের নতুন নির্বাচনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন তারা চাইতেই পারেন। সমিতি ও বারের সদস্যরা যদি মনে করেন তাহলে সে দাবি বিবেচনা করে দেখবেন।’
কয়েক দফায় আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সে সময় বিএনপিপন্থি কোনো প্রার্থী বা আইনজীবীকে দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী ভোটকেন্দ্রের বাইরের প্যান্ডেলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। সরকারপন্থি আইনজীবীরাও কাছেই ছিলেন। একপর্যায়ে দুপক্ষ সেøাগান-পাল্টা সেøাগান দেয়। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তাদের মধ্যে।
বিএনপিপন্থিরা ‘ভোট চোর’ ‘ভোট চোর’ স্লোগান দেয়। সরকারপন্থিরা ‘সাদা’ ‘সাদা’ ও ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দেয়। এরকম চলে অন্তত ৪০ মিনিট। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থিরা পিছু হটলে কেন্দ্রের সামনে সরকারপন্থিরা অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ফের সংগঠিত হয়ে কেন্দ্রের সামনে এলে সরকারপন্থিরা তাদের ঠেকাতে চায়। সে সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং ধস্তাধস্তি হয়।
ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ : গত বুধবার সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদও। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে আসেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ‘যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত, মর্মাহত। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাম্য ছিল না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করব।’ তার বক্তব্যের পর মোবাইল ফোনে এলআরএফ সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। সে সময় অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ সে সময় এলআরএফ কার্যালয়ে ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। উচ্চ আদালতে প্রভাব বিস্তার করা এক মন্ত্রী ও একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও আইনজীবী নেতার।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের আরও সতর্ক ও সংযম প্রদর্শন করে চলতে হবে। কারণ চলতি বছরই জাতীয় নির্বাচন।’ তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভোটকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করা না করা নিয়ে বিতর্ককে আরও উসকে দেবে, যা সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। সুপ্রিম কোর্টে উদ্ভূত পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। ভোট শেষে এই ঘটনা নিয়ে তিনি বসবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেষ্টা করেছিলাম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়িয়ে যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়। কিন্তু পারিনি। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ ও বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটেছে। বিকল্প অনেক উপায় ছিল এমন লক্ষ্য পূরণে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাইকোর্ট চত্বরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন আইনজীবী নেতার কক্ষে বসে গত বুধবারের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। তাদের মুখেও শোনা গেছে অস্বস্তির কথা। সেদিন অনেক আইনজীবীকে তাদের আইন পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। অথচ আদালত অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোট চলছিল। ভোট নিয়ে ভ্রƒক্ষেপ ছিল না ওই সরকারি দল সমর্থক আইনজীবীদের। তারা কোনোভাবেই ভোটকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার সমালোচিত হয়েছে তা সমর্থন করছেন না।
উচ্চ আদালতে আইন পেশায় জড়িত এক প্রভাবশালী আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বুধবারের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। দুই জনের ব্যক্তিস্বার্থ ও এক মন্ত্রীর বাহবা নেওয়ার চেষ্টায় মূলত এ ঘটনা ঘটেছে। এটি বড় ক্ষতির মুখেমুখি করতে পারে সরকার ও আওয়ামী লীগকে।’ তিনি বলেন, এই নির্বাচন কি সরকার পরিবর্তনের? তাহলে এত বড় ঝুঁকি কেন নিতে হবে?
সিনিয়র এ আইনজীবী আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেমন গ্রহণ করা হয় না, তেমনি এখানে যাদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন, যারা দক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তাদের অন্তর্ভুক্ত করা বা পরামর্শ শোনা হয় না। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের ভেতরে। এ কারণে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সিনিয়র-জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বছরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বিতর্কে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী একাধিক দল নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থের কারণে এসব ছোটখাটো ভোটে জিতে মরিয়া অবস্থান নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলা অযৌক্তিক।
সুপ্রিম কোর্ট বারের এবারের (২০২৩-২০২৪) নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল নির্বাচন করেছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম. মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আইনজীবী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মূলত ব্যালট নাকি ইসিএমে (ইলেকট্রনিক কাউন্টিং মেশিন) নির্বাচন হবে তা নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধ মারামারিতে গড়ায়। সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ব্যালটে ভোটগ্রহণের পক্ষে অনড় থাকেন। এ নিয়ে দুই প্যানেলের বিরোধের কারণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ভোটের আগে পদত্যাগ করেন। দুই পক্ষ মিলে তাকে ফেরানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয় ব্যালটে অনড় অবস্থানের কারণে। পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ইসিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়।
আওয়ামীপন্থি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তাদের কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাতে ‘ঘি না পড়ে’ সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে তাদের দ্বারা সৃষ্টি না হয় যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেয়।
‘আরা যদি দেশত ফিরি যাইন ন ফারি আহারা মরি যামু। আরা এ দেশত ন থাকতি চাই। আরা আর বালা লাহে না। নিজ দেশে মরি গিয়ে ভালো’ কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান। তার সঙ্গে সুর মেলান অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা। নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তাদের মতো অন্য রোহিঙ্গরাও। তবে রোহিঙ্গাদের ভেতরে থাকা কিছু চক্র বাধা দিচ্ছে, যাতে তারা নিজ দেশে যেতে না পারেন। ওই চক্রগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র। দুপক্ষের এসব চক্র রোহিঙ্গাদের ঘিরে নানাভাবে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকেই প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে তারা ইয়াবার চালান আনছে নিয়মিত। মাদক কারবারিদের পাশাপাশি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার সদস্যদের তৎপরতা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকা- নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এসবের কারণে ওইসব এনজিওর কর্মকা- নজরদারি করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচিত হন। বিশ্বনেতারা সরকারপ্রধানের প্রশংসা করে বিবৃতি দেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশ সফর করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের ভালো পরিবেশে রাখতে নোয়াখালীর ভাসানচরে একটি আবাসন পল্লীও গড়ে তোলে সরকার। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তারপরও রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে ব্যাকুল। এমনকি তাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিচ্ছে মিয়ানমারকে। গত বুধবার মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য টেকনাফে এসেছে। ওইদিনই সেখানে একজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। গতকাল আরেক রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জুলেখা বিবি, আবিদুর রহিম, জুলহাস মিয়াসহ শতাধিক রোহিঙ্গা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চান। স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চান সেখানে গিয়ে। জান্তা সরকার তাদের মেরে ফেললেও দেশেই মরতে চান তারা। আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা জানান, যদি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে আত্মাহুতি দেবেন।
ক্যাম্পের লোকজন আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চলে আসছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাদের বসবাস। ক্যাম্পের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একাধিক মাদক চক্র। এ ছাড়া খুন, ডাকাতি ও অপহরণকারী একাধিক চক্রও সেখানে ত্রাস ছড়াচ্ছে। কুতুপালংসহ কয়েকটি ক্যাম্পে অপরাধীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব অপরাধী নিজেদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি, খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। এসব চক্রের মধ্যে মাস্টার রফিক, মৌলবি ইউনুছ, আনাস, আরসা ও মুন্না গ্রুপের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
তারা জানান, আরসাও চাচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার না যেতে পারে। পাশাপাশি কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার কিছু চক্রও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা যেন নিজ দেশে ফেরত না যেতে পারে। তারা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে বোঝাচ্ছে যে, মিয়ানমার সরকার আগের মতো দমনপীড়ন চালাবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধও করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। আরসার বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। রোহিঙ্গাদের একটি চক্র অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।’
জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে দেশি-বিদেশি অর্ধশত এনজিও কাজ করছে। রোহিঙ্গা শিশুদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কয়েকজন রোহিঙ্গা। তারা নাম প্রকাশ না করে বলে, আরসা, স্থানীয় কিছু চক্র ও কয়েকটি এনজিও চায় না রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফেরত যাক। কারণ তারা চলে গেলে এনজিওগুলো সমস্যায় পড়বে।
রোহিঙ্গারা বলছে, তারা দেশে ফিরতে মরিয়া। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলকে জোরালোভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া, সবাইকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, মিয়ানমারের অন্য নাগরিকরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় ওই ধরনের সুবিধা দেওয়া, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা তাদের সহায়-সম্পদ ফেরত দেওয়া, গৃহপালিত পশুগুলো ফেরত দেওয়া, সবুজ রঙে পরিচয়পত্র ফেরত ও নতুন করে কার্ড তৈরি করে বসবাস করার সুযোগ দেওয়া এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মহলকে নজরে রাখতে অনুরোধ জানায় রোহিঙ্গারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে হত্যাকা-সহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠতে সরকার নানাভাবে কাজ করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গারাও দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে। কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।