
রাজধানীর একটি নামি স্কুলে আগের বছরগুলোর মতো এবারও শিক্ষার্থীদের বর্ষপঞ্জি দেওয়া হয়। তাতে মার্চের মাঝামাঝি তাদের প্রথম শ্রেণি-অভীক্ষা শুরুর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ পেয়ে শিক্ষকরা জানান, এ বছর শ্রেণি-অভীক্ষা হবে না। ফলে শিথিল অবস্থায় ছিল শিক্ষার্থীরা। প্রথম অভীক্ষার জন্য দেওয়া সিলেবাসও শেষ হয়নি তাদের। এখন হঠাৎ করে প্রচলিত নিয়মে শ্রেণি-অভীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে স্কুলটি। দশ বিষয়েরই। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শুধু রাজধানীর একটি স্কুলই নয়, দেশের বেশির ভাগ স্কুলেই এ বছর একই অবস্থা। নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে সবাই তালগোলে পড়ে গেছে। এ বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াই সারা বছর শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন চলবে। বছর শেষে মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু তা না মেনে অনেক স্কুল শ্রেণি-অভীক্ষা বা সিটি পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করেছে। কোনো স্কুল পরীক্ষা নিতেও শুরু করেছে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি বিষয় রয়েছে। এসবের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ। আর জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই পাঁচ বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে যে বিষয়গুলো আনার পরিকল্পনা ছিল তা সঠিকভাবে আনতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বইপত্র নিয়ে যা হয়েছে, মূল্যায়ন নিয়ে এর চেয়েও বেশি তালগোল অবস্থা তৈরি হবে। যে শিক্ষাক্রম হয়েছে, তা আমাদের শিক্ষকদের সক্ষমতার বাইরে। এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করার মতো শিক্ষক আমাদের নেই। বই যারা লিখেছেন তারাও নিরপেক্ষ থাকেননি।’ আগামী দিনের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম আরও সময় নিয়ে ধাপে ধাপে করা উচিত ছিল। আগে যথাযথভাবে বইপত্র তৈরি করতে হবে, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে; তারপর শিক্ষকদের তৈরি করতে হবে। চার-পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব নয়। আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে স্বস্তিতে নেই শিক্ষা প্রশাসন। গত মাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের অনুসন্ধানী পাঠ্যবই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ ও ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান এই তিনটি বই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনো সংশোধনের কাজ শেষ হয়নি। তিন মাস হতে চলছে বই তিনটি ঠিকমতো পড়াতে পারছেন না শিক্ষকরা। নতুন শিক্ষাক্রমের অন্যান্য বইতেও অসংখ্য ভুল আর অসংগতি ধরা পড়ছে। অথচ দুটি বই প্রত্যাহার করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি বইয়ের সংশোধন বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত তা করা যায়। যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে ওই দুটির আরেকটি করে অংশ রয়েছে, যা পড়লে শিক্ষার্থীরা পুরো পাঠই পাবে। আগামী বছরের বইগুলোর ব্যাপারে আমরা আরও সচেতন থাকব। এ বছরের বইগুলোর যথাযথ পরিমার্জন করা হবে আগামী বছর।’
আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো কিছু না বুঝলে সহায়ক বইয়ের সাহায্য নিতেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সহায়ক বই প্রকাশ করেনি। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। তারা প্রতিদিন লাইব্রেরিতে সহায়ক বইয়ের জন্য ধরনা দিচ্ছেন।
এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয় প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফল। দুপুরে ফল প্রকাশ হলেও বিকেলেই তা স্থগিত করা হয়। পরদিন ১ মার্চ রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, প্রথমবার প্রকাশিত ফলে যারা বৃত্তি পেয়েছিল, সংশোধিত ফলে তাদের অনেকের নাম নেই। অথচ বৃত্তি পেয়ে আনন্দ-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ করে ফেলেছিল তারা। তাদের আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা জেনে গিয়েছিল বৃত্তি পাওয়ার খবর। কিন্তু সংশোধিত ফলে যখন ওই শিক্ষার্থীর নাম এলো না তখন তাদের মন ভেঙে যায়।
১৪ বছর ধরে চালু থাকা সৃজনশীল পদ্ধতি শুরুতে বুঝতে হিমশিম খেয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এখন আবার নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ায় আবারও হিমশিম খাওয়ার দশায় পড়েছে তারা। অনেকেই তাল মেলাতে পারছে না। পরীক্ষা ও নম্বর বণ্টনের বিষয়টি তারা বুঝে উঠতে পারছে না। পরীক্ষার ওপর চাপ কমানোর ফলে স্কুলেও পড়ালেখার চাপ কমেছে। কোনো রকমে ক্লাস পার করেই দায় সারছেন অনেক শিক্ষক। আর অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক মাত্র পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা কতটা আত্মস্থ হতে পেরেছেন তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। বাস্তবভিত্তিক ও শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নিয়েও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বোঝানো একজন শিক্ষকের পক্ষে কষ্টকর। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিজ্ঞানাগার ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ নেই বেশির ভাগ স্কুলে। এটা বড় সমস্যা। এই শিক্ষকরাই যেহেতু সরাসরি শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন, তারা কতটুকু নির্মোহভাবে তা করতে পারবেন সে ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্দিহান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হবে। কারণ ধনী পরিবারের সন্তানরা এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণ পাওয়া একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করেছেন। এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আর প্রাইভেট পড়তে না পেরে পিছিয়ে পড়ছে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। আবার শহরের স্কুলের চেয়ে গ্রামের স্কুলগুলো আগে থেকেই পিছিয়ে আছে। কারণ শহরের স্কুলগুলোতে বেশি বেতন ও প্রাইভেটে বেশি শিক্ষার্থী পাওয়ায় অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা সেখানে শিক্ষকতা করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব শিক্ষক সমান যোগ্যতাসম্পন্ন নন। ফলে তারা এখনো সেভাবে নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে পারেননি। একদল শিক্ষার্থী মনে করছে, তাদের পরীক্ষা নেই। তারা রিলাক্স মুডে রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সহায়ক সামগ্রী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর এখনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। তারা কীভাবে বিষয়টির তদারকি করবেন, সেটা বড় সমস্যা।’
অনেক সময় ধরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২০১০ সালে যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়। এতে পরীক্ষা-পদ্ধতির সংস্কার, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন প্রভৃতি সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে মনোনিবেশ করেনি।
কভিড-পরবর্তী বিশ্ব ব্লেন্ডেড লার্নিং ও পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের সরকারও শিক্ষাক্রম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আমি বলব, মোটামুটি অগ্রসরতামুখী ও যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে বের হয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পারস্পরিক সমঝোতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই দেখলাম, শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যেসব দাবি তুলেছিল, এবারও একটি গোষ্ঠী প্রায় একই দাবি তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুটি বই প্রত্যাহার করে সরকার আত্মসমর্পণ করল। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। মনে হয়, আমরা স্রোতের উল্টো দিকে যাচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু বইতে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে। বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এজন্য আমাদের লেখকরা ক্ষমাও চেয়েছেন। বইগুলো এ বছর পরীক্ষামূলক বই হিসেবেই চলছে। কিন্তু দুটি বই প্রত্যাহার করায় আমরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিলাম তারা হতাশ হয়েছি।
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েও আমরা শুরুতে আপত্তি তুলেছিলাম। ২৯ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এ ব্যাপারে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। কারণ এই পরীক্ষা নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এরপর একবার বৃত্তির ফল দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাস্থার মধ্যে ফেলা হলো। এতে সবার মধ্যেই অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি, সরকার ভোটের চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নজর দেবে। দক্ষতানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো। এই জায়গায় জোর দিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর কিছু শিক্ষার্থীকে বৃত্তি না দিয়ে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। মিড-ডে মিল কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।
লেখক : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। যুদ্ধাপরাধ এবং শিশুদের ইউক্রেন থেকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুতিনকে দায়ী করে আইসিসির একজন বিচারক গতকাল শুক্রবার এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পুরোদমে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এটা বিশ্বাস করার ‘যৌক্তিক কারণ’ আদালতের আছে যে, পুতিন সরাসরি নিজে এবং অন্যদের সঙ্গে মিলে এসব অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন। যারা ওই শিশুদের রাশিয়ায় নেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের তিনি থামাননি।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। তবে মস্কো বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পুতিন ছাড়াও রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেক্সেইভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।
অবশ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা আইসিসির নেই। আর এই আদালতের আদেশ শুধু সেসব দেশের জন্যই খাটে, যারা এ আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের জন্য চুক্তি ‘রোম সংবিধিতে’ সই করেছিল।
আইসিসি গঠনের চুক্তিতে রাশিয়া সই করেনি। ফলে আইসিসির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতাও দেশটির নেই। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমাদের দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওই আদেশে অর্থহীন, এমনকি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও ওই আদেশ কোনো অর্থ বহন করে না। তিনি বলেন, রাশিয়া রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেরও অংশীদার নয়। ফলে ওই আদালতের আদেশ মানার কোনো দায়ও আমাদের নেই।
তবে আইসিসির ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল আন্দ্রেই কস্তিন বলেছেন, এটা শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর জন্যই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় আ স ম ফিরোজের সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আলোচনা সভার ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমিন মন্ডলের নাম না থাকা ও তাকে আগে ফুল দিতে না দেওয়ার জেরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। গতকাল সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
পটুয়াখালীর বাউফলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। আরেক পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। এ ছাড়াও হাসিব আলম তালুকদারের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোতালেব হাওলাদার তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনের দিকে রওনা হলে উপজেলা পরিষদের সামনের ফটকে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিপেটা পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বাধা উপেক্ষা করে মোতালেব হাওলাদার নেতাকর্মীদের নিয়ে জনতা ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে আ স ম ফিরোজ সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে মোতালেব হাওলাদারসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ সময় উত্তেজিত নেতাকর্মীদের ইটপাকেলের আঘাতে আহত হন পুলিশসহ আরও ১০ জন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শোয়েব মাহমুদ জানান, মোতালেব হাওলাদারের শরীরে বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়াও রিপন নামে তার এক কর্মীর শরীরে রাবার বুলেটের একাধিক আঘাত থাকায় তাদের দুজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন গ্রুপের পক্ষ থেকে র্যালি কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে সবাইকে সময় বেধে দিয়ে স্ব-স্ব স্থান থেকে র্যালি বের করতে বলা হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের (আওয়ামী লীগের) দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২০-৩০ জন নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা হলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।’
ব্যানারে এমপির নাম না থাকায় সংঘর্ষ : বেলকুচির সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন (৩৮), যুবলীগ নেতা রুবেল (২৮), উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোপাল (৪৫) ও ওলিফ মন্ডল (৫০)। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার ব্যানারে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও বেলকুচি আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডলের নাম ছিল না। বিষয়টি কেন্দ্র করে এমপি মমিন সমর্থকদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। আহতদের উদ্ধার করে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, ‘নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল পৌনে ৭টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হই। সকাল ৭টার দিকে এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল আসার পর জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্য প্রদান ও পুস্পস্তবক অর্পণের আগেই দলীয় কার্যালয়ে টানানো ব্যানারে এমপির নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে এমপির লোকজন আমার ওপর চড়াও হয়। আমি বলি, এটা দলের ব্যানার। এখানে শুধু বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর ছবি আর নাম থাকবে। নিচে আয়োজনে উপজেলা আওয়ামী লীগ লেখা রয়েছে। কিন্তু তারা সেটা মানতে নারাজ। উত্তেজিত হয়ে ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আজকের এই দিনে (বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন) বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
বেলকুচি থানার ওসি আসলাম আলী জানান, আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
বাংলাদেশ ও দুবাইয়ে আলোচিত আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় চলছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়া আরাভ খানের সঙ্গে দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মডেল, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি সামনে আসছে।
গত বুধবার আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান ‘আরাভ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ওই অনুষ্ঠানে সাকিব ছাড়াও চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, আলোচিত হিরো আলমসহ বিনোদনজগতের আরও কয়েকজনকে দেখা গেছে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রচারিত খবরে।
আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলাম ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকা-ের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তিনি সোহাগ মোল্লা, আপন, হৃদয় এসব নামেও পরিচিত। ওই ঘটনার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট করিয়ে দুবাইয়ে চলে যান।
পুলিশ সূত্র জানায়, আরাভের সোনা কারবারে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আলোচিত এক মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আছেন, যারা ২০২১ সালে মাদক কারবারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের যোগসাজশে সোনা কারবারে এসে দুবাইয়েও গড়ে তুলেছেন স্বর্ণের ব্যবসা। এ ছাড়া মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও আশকারা পেয়েছেন তিনি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও মডেলরা দুবাইয়ে গেলে তার সান্নিধ্য পান। সোনার দোকান উদ্বোধন হওয়ার পর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে এলেও অন্য অতিথিরা রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ইতিমধ্যে আরাভের সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয় ছিল আরাভের অন্যতম সহযোগী। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামী মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পাশাপাশি দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে গড়ে তোলেন আলিশান সোনার দোকান। ওই দোকানের ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দুজন বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা গুলশান ও বনানী এলাকায় পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আরাভসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল জড়িত। আলোচিত সেই মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ওই হত্যাকা-ের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন। তারা আরাভের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত দুবাই যান। ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মডেল বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন বলে তারা জানেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক টিম রাজধানীর বারিধারায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায়। ওই সময় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধনাঢ্য পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের তাদের বাসায় মাদক সেবনের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং ওই সব ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে তাদের বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনদের ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পিয়াসা ও রাজকে জামিনে কারাগার থেকে বের করে আনার জন্য আরাভ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আরাভ ঠান্ডা মাথার অপরাধী। সোনা চোরাচালান করেই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি। অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। তবে সাকিবের মতো তারকার টাকার পেছনে ছোটা খুবই দুঃখজনক। সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ পিয়াসা, নজরুল রাজ, ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আরাভের ভালো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও পুলিশের যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অবশ্য আরাভের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পিয়াসা ও রাজের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেওয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় চেহারা।
তবে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে আরাভ হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ২২ মিনিট ১৪ সেকেন্ড বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক সাংবাদিক ৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। ওই টাকা না দেওয়ায় তিনি সংবাদ প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আরাভ বলেন, ‘আমার দোষ শুধু ওই অফিসটা ছিল আমার।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরাভ জড়িত। তিনি চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার ফেসবুকে নিজেই স্বীকার করেছেন লাশ গুম করার সঙ্গে তিনি জড়িত। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১২টি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে জানান তিনি।
দুবাইয়ে অবস্থান করা এক ব্যবসায়ী টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ জুয়েলার্সে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার সোনা আছে। দোকানের লোগো বানাতেই খরচ হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। ক্রিকেটার সাকিবকে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আরাভ লাইমলাইটে আসা। মাস ছয়েক আগে আরাভ দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। দুবাইয়ে তার নামে আরও সাতটি ফ্ল্যাট আছে।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, আরাভকে দেখে বোঝা যাবে না যে অপরাধজগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তার আচার-ব্যবহার কিন্তু খুবই ভালো। অল্প সময়ে সবাইকে আপন করে নেন। গুলশান ও বনানী এলাকার কিছু ব্যবসায়ী ও মডেল প্রায়ই আসেন আরাভের কাছে। তার জুয়েলারির ব্যবসায়িক অংশীদার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই ব্যবসায়ী।
আরাভের কানাডা ও আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তাকে বাইরে খুব কমই দেখা যাচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠরা বলাবলি করছেন, যেকোনো সময় তিনি কানাডা বা আমেরিকায় চলে যাবেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে হয়তো দুবাই আসবেন এমন ধারণা সেখানকার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আরব আমিরাত সরকার তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দিয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দেশের বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর সরকারি হাসপাতালে এজন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া সব হাসপাতালে পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। সংবাদ সম্মেলনে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা-রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৫৮ ও ঢাকার বাইরে ৯ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৭৭১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন। ঢাকার পর বেশি রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ সংখ্যা ৪২৬ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৫৩২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা ঢাকায় শনাক্ত রোগীর চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যায় অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাই তাদের তথ্য দেওয়া হয় না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব রাখি।’
এ বছরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ছড়ানো এ সংখ্যাটাও উপেক্ষা করার মতো নয়। তাদের পরিষ্কার পানির উৎস সীমিত। তারা পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় খোলা পাত্রে রেখে দেয়, যা মশার জন্য একটা ভালো প্রজননক্ষেত্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না। তারা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়।’
সিটি করপোরেশনকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ : সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনগুলোকে জানিয়েছি, খুব দ্রুত যদি মশার স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা তাদের ম্যাপিং করে জানিয়ে দিই, কোথায় বেশি ছড়াচ্ছে। তাদের জায়গা থেকে আরেকটু বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। যেহেতু আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কোথায় কী হচ্ছে, তাই তাদের উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, লার্ভা ধ্বংসসহ তারা যেসব ব্যবস্থা নেয়, সেগুলোর মাধ্যমে যেন আমরা ভেক্টরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
অবশ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী, সে তথ্য জানাতে পারেনি অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে ঘনবসতি বেশি, সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।’
ডেঙ্গু বাড়ছে কয়েক কারণে : সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে জলাবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনঘনত্বের কারণের কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পর থেকে অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী দেখা দেয়। সব দেখে অনুমান করা হয়েছে, প্রাক মৌসুমেই ডেঙ্গু রোগী বেশি হবে।’
এ ব্যাপারে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ২০০০ সালে এটা বাংলাদেশে আসার পর মাঝে পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু কভিডের আগের বছর একটা বড় সংক্রমণ দেখেছি, গত বছর দেখলাম, এবারও হয়তো এমন কিছু একটা হতে পারে।’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১১ পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বাল্যবিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্ত্রী ও নিজ পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার (২৮ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটিপাছানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত কিশোরের নাম ইমরান (১৫) সে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। নুরুল ইসলামের প্রতিবেশী জিয়াউর রহমানের মেয়ে সাথী আক্তার ও ইমরান স্থানীয় পাঁচানী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ১০ দিন আগে প্রেমিকাকে নিয়ে নিজের বাড়ি পালিয়ে যায় ইমরান। পরে ইমরানের বাবা মেয়ের বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আট দিন সংসার করার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্ত্রী অভিমান করে বাবার বাড়ি চলে যায়। ইমরান তার স্ত্রীকে এনে দিতে পরিবারকে চাপ দিলে পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এই অভিমানে গতরাত ১০টার দিকে বিষ পান করে সে, ঘটনাটি টের পেয়ে তার পরিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্যু হয় ইমরানের।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিক হাসান বাবুল জানান, শনিবার আমার কাছে মেয়ের বাবা ও ছেলের বাবা এসেছিল। রবিবার দুই পক্ষকে ডাকলেও ছেলের বাবা সাড়া না দেওয়ায় সমস্যাটি সমাধান করতে পারিনি। রাতে ছেলে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় মেয়ে পক্ষের কোনো অবহেলা দেখছি না।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি আমাদের কেউ অবহিত করেনি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।