
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। যুদ্ধাপরাধ এবং শিশুদের ইউক্রেন থেকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুতিনকে দায়ী করে আইসিসির একজন বিচারক গতকাল শুক্রবার এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পুরোদমে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এটা বিশ্বাস করার ‘যৌক্তিক কারণ’ আদালতের আছে যে, পুতিন সরাসরি নিজে এবং অন্যদের সঙ্গে মিলে এসব অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন। যারা ওই শিশুদের রাশিয়ায় নেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের তিনি থামাননি।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। তবে মস্কো বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পুতিন ছাড়াও রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেক্সেইভনা লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।
অবশ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা আইসিসির নেই। আর এই আদালতের আদেশ শুধু সেসব দেশের জন্যই খাটে, যারা এ আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের জন্য চুক্তি ‘রোম সংবিধিতে’ সই করেছিল।
আইসিসি গঠনের চুক্তিতে রাশিয়া সই করেনি। ফলে আইসিসির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতাও দেশটির নেই। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমাদের দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওই আদেশে অর্থহীন, এমনকি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও ওই আদেশ কোনো অর্থ বহন করে না। তিনি বলেন, রাশিয়া রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেরও অংশীদার নয়। ফলে ওই আদালতের আদেশ মানার কোনো দায়ও আমাদের নেই।
তবে আইসিসির ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল আন্দ্রেই কস্তিন বলেছেন, এটা শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর জন্যই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
রাজধানীর একটি নামি স্কুলে আগের বছরগুলোর মতো এবারও শিক্ষার্থীদের বর্ষপঞ্জি দেওয়া হয়। তাতে মার্চের মাঝামাঝি তাদের প্রথম শ্রেণি-অভীক্ষা শুরুর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ পেয়ে শিক্ষকরা জানান, এ বছর শ্রেণি-অভীক্ষা হবে না। ফলে শিথিল অবস্থায় ছিল শিক্ষার্থীরা। প্রথম অভীক্ষার জন্য দেওয়া সিলেবাসও শেষ হয়নি তাদের। এখন হঠাৎ করে প্রচলিত নিয়মে শ্রেণি-অভীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে স্কুলটি। দশ বিষয়েরই। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শুধু রাজধানীর একটি স্কুলই নয়, দেশের বেশির ভাগ স্কুলেই এ বছর একই অবস্থা। নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে সবাই তালগোলে পড়ে গেছে। এ বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াই সারা বছর শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন চলবে। বছর শেষে মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু তা না মেনে অনেক স্কুল শ্রেণি-অভীক্ষা বা সিটি পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করেছে। কোনো স্কুল পরীক্ষা নিতেও শুরু করেছে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি বিষয় রয়েছে। এসবের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ। আর জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই পাঁচ বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে যে বিষয়গুলো আনার পরিকল্পনা ছিল তা সঠিকভাবে আনতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বইপত্র নিয়ে যা হয়েছে, মূল্যায়ন নিয়ে এর চেয়েও বেশি তালগোল অবস্থা তৈরি হবে। যে শিক্ষাক্রম হয়েছে, তা আমাদের শিক্ষকদের সক্ষমতার বাইরে। এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করার মতো শিক্ষক আমাদের নেই। বই যারা লিখেছেন তারাও নিরপেক্ষ থাকেননি।’ আগামী দিনের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম আরও সময় নিয়ে ধাপে ধাপে করা উচিত ছিল। আগে যথাযথভাবে বইপত্র তৈরি করতে হবে, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে; তারপর শিক্ষকদের তৈরি করতে হবে। চার-পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব নয়। আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে স্বস্তিতে নেই শিক্ষা প্রশাসন। গত মাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের অনুসন্ধানী পাঠ্যবই দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ ও ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান এই তিনটি বই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনো সংশোধনের কাজ শেষ হয়নি। তিন মাস হতে চলছে বই তিনটি ঠিকমতো পড়াতে পারছেন না শিক্ষকরা। নতুন শিক্ষাক্রমের অন্যান্য বইতেও অসংখ্য ভুল আর অসংগতি ধরা পড়ছে। অথচ দুটি বই প্রত্যাহার করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি বইয়ের সংশোধন বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত তা করা যায়। যে দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে ওই দুটির আরেকটি করে অংশ রয়েছে, যা পড়লে শিক্ষার্থীরা পুরো পাঠই পাবে। আগামী বছরের বইগুলোর ব্যাপারে আমরা আরও সচেতন থাকব। এ বছরের বইগুলোর যথাযথ পরিমার্জন করা হবে আগামী বছর।’
আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো কিছু না বুঝলে সহায়ক বইয়ের সাহায্য নিতেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সহায়ক বই প্রকাশ করেনি। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। তারা প্রতিদিন লাইব্রেরিতে সহায়ক বইয়ের জন্য ধরনা দিচ্ছেন।
এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয় প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফল। দুপুরে ফল প্রকাশ হলেও বিকেলেই তা স্থগিত করা হয়। পরদিন ১ মার্চ রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, প্রথমবার প্রকাশিত ফলে যারা বৃত্তি পেয়েছিল, সংশোধিত ফলে তাদের অনেকের নাম নেই। অথচ বৃত্তি পেয়ে আনন্দ-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ করে ফেলেছিল তারা। তাদের আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা জেনে গিয়েছিল বৃত্তি পাওয়ার খবর। কিন্তু সংশোধিত ফলে যখন ওই শিক্ষার্থীর নাম এলো না তখন তাদের মন ভেঙে যায়।
১৪ বছর ধরে চালু থাকা সৃজনশীল পদ্ধতি শুরুতে বুঝতে হিমশিম খেয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এখন আবার নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ায় আবারও হিমশিম খাওয়ার দশায় পড়েছে তারা। অনেকেই তাল মেলাতে পারছে না। পরীক্ষা ও নম্বর বণ্টনের বিষয়টি তারা বুঝে উঠতে পারছে না। পরীক্ষার ওপর চাপ কমানোর ফলে স্কুলেও পড়ালেখার চাপ কমেছে। কোনো রকমে ক্লাস পার করেই দায় সারছেন অনেক শিক্ষক। আর অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক মাত্র পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা কতটা আত্মস্থ হতে পেরেছেন তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। বাস্তবভিত্তিক ও শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নিয়েও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বোঝানো একজন শিক্ষকের পক্ষে কষ্টকর। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিজ্ঞানাগার ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ নেই বেশির ভাগ স্কুলে। এটা বড় সমস্যা। এই শিক্ষকরাই যেহেতু সরাসরি শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন, তারা কতটুকু নির্মোহভাবে তা করতে পারবেন সে ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্দিহান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হবে। কারণ ধনী পরিবারের সন্তানরা এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণ পাওয়া একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করেছেন। এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আর প্রাইভেট পড়তে না পেরে পিছিয়ে পড়ছে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। আবার শহরের স্কুলের চেয়ে গ্রামের স্কুলগুলো আগে থেকেই পিছিয়ে আছে। কারণ শহরের স্কুলগুলোতে বেশি বেতন ও প্রাইভেটে বেশি শিক্ষার্থী পাওয়ায় অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা সেখানে শিক্ষকতা করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব শিক্ষক সমান যোগ্যতাসম্পন্ন নন। ফলে তারা এখনো সেভাবে নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে পারেননি। একদল শিক্ষার্থী মনে করছে, তাদের পরীক্ষা নেই। তারা রিলাক্স মুডে রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সহায়ক সামগ্রী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর এখনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। তারা কীভাবে বিষয়টির তদারকি করবেন, সেটা বড় সমস্যা।’
অনেক সময় ধরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২০১০ সালে যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়। এতে পরীক্ষা-পদ্ধতির সংস্কার, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন প্রভৃতি সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে মনোনিবেশ করেনি।
কভিড-পরবর্তী বিশ্ব ব্লেন্ডেড লার্নিং ও পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের সরকারও শিক্ষাক্রম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আমি বলব, মোটামুটি অগ্রসরতামুখী ও যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা-পদ্ধতি থেকে বের হয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পারস্পরিক সমঝোতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই দেখলাম, শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যেসব দাবি তুলেছিল, এবারও একটি গোষ্ঠী প্রায় একই দাবি তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুটি বই প্রত্যাহার করে সরকার আত্মসমর্পণ করল। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। মনে হয়, আমরা স্রোতের উল্টো দিকে যাচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু বইতে তথ্যগত বিভ্রান্তি রয়েছে। বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এজন্য আমাদের লেখকরা ক্ষমাও চেয়েছেন। বইগুলো এ বছর পরীক্ষামূলক বই হিসেবেই চলছে। কিন্তু দুটি বই প্রত্যাহার করায় আমরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিলাম তারা হতাশ হয়েছি।
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েও আমরা শুরুতে আপত্তি তুলেছিলাম। ২৯ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এ ব্যাপারে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। কারণ এই পরীক্ষা নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এরপর একবার বৃত্তির ফল দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাস্থার মধ্যে ফেলা হলো। এতে সবার মধ্যেই অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি, সরকার ভোটের চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নজর দেবে। দক্ষতানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো। এই জায়গায় জোর দিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর কিছু শিক্ষার্থীকে বৃত্তি না দিয়ে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। মিড-ডে মিল কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।
লেখক : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় আ স ম ফিরোজের সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আলোচনা সভার ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমিন মন্ডলের নাম না থাকা ও তাকে আগে ফুল দিতে না দেওয়ার জেরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। গতকাল সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
পটুয়াখালীর বাউফলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। আরেক পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। এ ছাড়াও হাসিব আলম তালুকদারের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোতালেব হাওলাদার তার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনের দিকে রওনা হলে উপজেলা পরিষদের সামনের ফটকে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিপেটা পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বাধা উপেক্ষা করে মোতালেব হাওলাদার নেতাকর্মীদের নিয়ে জনতা ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে আ স ম ফিরোজ সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে মোতালেব হাওলাদারসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ সময় উত্তেজিত নেতাকর্মীদের ইটপাকেলের আঘাতে আহত হন পুলিশসহ আরও ১০ জন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শোয়েব মাহমুদ জানান, মোতালেব হাওলাদারের শরীরে বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়াও রিপন নামে তার এক কর্মীর শরীরে রাবার বুলেটের একাধিক আঘাত থাকায় তাদের দুজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন গ্রুপের পক্ষ থেকে র্যালি কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে সবাইকে সময় বেধে দিয়ে স্ব-স্ব স্থান থেকে র্যালি বের করতে বলা হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের (আওয়ামী লীগের) দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২০-৩০ জন নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা হলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।’
ব্যানারে এমপির নাম না থাকায় সংঘর্ষ : বেলকুচির সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামাল হোসেন (৩৮), যুবলীগ নেতা রুবেল (২৮), উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোপাল (৪৫) ও ওলিফ মন্ডল (৫০)। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার ব্যানারে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও বেলকুচি আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডলের নাম ছিল না। বিষয়টি কেন্দ্র করে এমপি মমিন সমর্থকদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। আহতদের উদ্ধার করে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, ‘নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল পৌনে ৭টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হই। সকাল ৭টার দিকে এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল আসার পর জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্য প্রদান ও পুস্পস্তবক অর্পণের আগেই দলীয় কার্যালয়ে টানানো ব্যানারে এমপির নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে এমপির লোকজন আমার ওপর চড়াও হয়। আমি বলি, এটা দলের ব্যানার। এখানে শুধু বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর ছবি আর নাম থাকবে। নিচে আয়োজনে উপজেলা আওয়ামী লীগ লেখা রয়েছে। কিন্তু তারা সেটা মানতে নারাজ। উত্তেজিত হয়ে ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আজকের এই দিনে (বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন) বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
বেলকুচি থানার ওসি আসলাম আলী জানান, আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
বাংলাদেশ ও দুবাইয়ে আলোচিত আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় চলছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়া আরাভ খানের সঙ্গে দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মডেল, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি সামনে আসছে।
গত বুধবার আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান ‘আরাভ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ওই অনুষ্ঠানে সাকিব ছাড়াও চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, আলোচিত হিরো আলমসহ বিনোদনজগতের আরও কয়েকজনকে দেখা গেছে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রচারিত খবরে।
আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলাম ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকা-ের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তিনি সোহাগ মোল্লা, আপন, হৃদয় এসব নামেও পরিচিত। ওই ঘটনার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট করিয়ে দুবাইয়ে চলে যান।
পুলিশ সূত্র জানায়, আরাভের সোনা কারবারে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আলোচিত এক মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আছেন, যারা ২০২১ সালে মাদক কারবারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের যোগসাজশে সোনা কারবারে এসে দুবাইয়েও গড়ে তুলেছেন স্বর্ণের ব্যবসা। এ ছাড়া মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও আশকারা পেয়েছেন তিনি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও মডেলরা দুবাইয়ে গেলে তার সান্নিধ্য পান। সোনার দোকান উদ্বোধন হওয়ার পর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে এলেও অন্য অতিথিরা রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ইতিমধ্যে আরাভের সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয় ছিল আরাভের অন্যতম সহযোগী। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামী মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পাশাপাশি দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে গড়ে তোলেন আলিশান সোনার দোকান। ওই দোকানের ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দুজন বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা গুলশান ও বনানী এলাকায় পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আরাভসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল জড়িত। আলোচিত সেই মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ওই হত্যাকা-ের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন। তারা আরাভের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত দুবাই যান। ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মডেল বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন বলে তারা জানেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক টিম রাজধানীর বারিধারায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায়। ওই সময় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধনাঢ্য পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের তাদের বাসায় মাদক সেবনের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং ওই সব ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে তাদের বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনদের ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পিয়াসা ও রাজকে জামিনে কারাগার থেকে বের করে আনার জন্য আরাভ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আরাভ ঠান্ডা মাথার অপরাধী। সোনা চোরাচালান করেই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি। অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। তবে সাকিবের মতো তারকার টাকার পেছনে ছোটা খুবই দুঃখজনক। সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ পিয়াসা, নজরুল রাজ, ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আরাভের ভালো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও পুলিশের যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অবশ্য আরাভের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পিয়াসা ও রাজের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেওয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় চেহারা।
তবে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে আরাভ হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ২২ মিনিট ১৪ সেকেন্ড বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক সাংবাদিক ৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। ওই টাকা না দেওয়ায় তিনি সংবাদ প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আরাভ বলেন, ‘আমার দোষ শুধু ওই অফিসটা ছিল আমার।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরাভ জড়িত। তিনি চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার ফেসবুকে নিজেই স্বীকার করেছেন লাশ গুম করার সঙ্গে তিনি জড়িত। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১২টি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে জানান তিনি।
দুবাইয়ে অবস্থান করা এক ব্যবসায়ী টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ জুয়েলার্সে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার সোনা আছে। দোকানের লোগো বানাতেই খরচ হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। ক্রিকেটার সাকিবকে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আরাভ লাইমলাইটে আসা। মাস ছয়েক আগে আরাভ দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। দুবাইয়ে তার নামে আরও সাতটি ফ্ল্যাট আছে।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, আরাভকে দেখে বোঝা যাবে না যে অপরাধজগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তার আচার-ব্যবহার কিন্তু খুবই ভালো। অল্প সময়ে সবাইকে আপন করে নেন। গুলশান ও বনানী এলাকার কিছু ব্যবসায়ী ও মডেল প্রায়ই আসেন আরাভের কাছে। তার জুয়েলারির ব্যবসায়িক অংশীদার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই ব্যবসায়ী।
আরাভের কানাডা ও আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তাকে বাইরে খুব কমই দেখা যাচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠরা বলাবলি করছেন, যেকোনো সময় তিনি কানাডা বা আমেরিকায় চলে যাবেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে হয়তো দুবাই আসবেন এমন ধারণা সেখানকার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আরব আমিরাত সরকার তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দিয়েছে।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।