
দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (টিকা) চোরাই পথে এনে সেগুলো ভেঙে পানি মিশিয়ে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক নকল টিকা তৈরি করেছে একটি চক্র। গত দুই বছরে চক্রটি দেশে চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি কিছু সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা ও পাশর্^বর্তী এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে সেই টিকা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নকল টিকা দেওয়ার চক্রের ৫ সদস্যকে গত বুধবার গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, নকল এই টিকার অন্যতম হোতা ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক হিমেল। তিনি পলাতক রয়েছেন। হিমেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার শিপনের নকল টিকা তৈরির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এসেছে দেশ রূপান্তরের হাতে। অভিযোগ ওঠার পর হিমেলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা বলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতারক চক্রটিকে সহায়তাকারী বেসরকারি চিকিৎসা সেবা দাতা সংস্থা ও হাসপাতালের ডজনখানেক মালিক জানতে চাইলে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আনিচ উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি প্রথমে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা ‘সারভারিক্স টিএম’-এর অ্যাম্পুলে পানি মিশিয়ে নারীদের শরীরে দিয়েছে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা ভেঙে তাতে পানি মিশিয়ে ‘সারভারিক্স টিএম’-এর অ্যাম্পুলে ঢুকিয়ে প্রয়োগ করা শুরু করে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই নজরদারিতে রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সাইফুল ইসলাম শিপন (২৬), ফয়সাল আহমেদ (৩২), আল আমিন (৩৪), নুরুজ্জামান সাগর (২৪) ও আতিকুল ইসলাম (১৯)।
নকল টিকার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল শনিবারও অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজে অভিযান চালিয়েছি। তবে হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যারা নকল টিকার সঙ্গে জড়িত তারা আত্মগোপনে চলে গেছে।’ অভিযানের খবর পেয়ে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ থেকে দুই বস্তা নকল টিকা সরিয়ে ফেলার কথা জানান তিনি।
যারা নকল টিকা নিয়েছেন তাদের একটি তালিকা পেয়েছে ডিবির তদন্তকারী দল। সেই তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা ও পার্শ¦বর্তী ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে নারীদের দেওয়া হয়েছে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক নকল টিকা। স্থানীয়দের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা ও ছাত্রীরাও নিয়েছেন নকল ওই টিকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল ক্যাম্প থেকে টিকা নিয়েছেন শতাধিক নারী, পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৪ নারী, মেরিট পাবলিক স্কুল থেকে ১৮ জন।
এ ছাড়া বছিলা চাঁদ উদ্যান স্কুল, মানিকনগর স্কুল, প্রগতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মানিকদি সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, নর্থ সিটি পাবলিক স্কুল রয়েছে এই তালিকায়।
৩৫০ টাকা মূল্যের হেপাটাইটিস-বির টিকা ভেঙে চক্রটি নকল টিকা বানিয়ে বিক্রি করছে ২৫ হাজার টাকায়। এভাবে কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে তারা। নকল এই টিকা নিয়ে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন নারীরা।
চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে জরায়ু ক্যানসারের টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন বনশ্রী এলাকার এক গৃহবধূ। তিনি দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। টিকা নেওয়ার পর তার শরীরে জ্বরের পাশাপাশি প্রচ- ব্যথাও অনুভব করেন। টিকার তৃতীয় ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ওই গৃহবধূ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম টিকা নিলে এমনিতেই শরীর খারাপ লাগে। এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম টিকাটি ভেজাল।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি এই টিকা নকল হয় তাহলে সরকারের যাদের দায়িত্ব ছিল এই টিকা দেওয়া কার্যক্রম দেখভাল করা, তাদের শাস্তি দাবি করছি।’
আরেক ভুক্তভোগী এক স্কুল শিক্ষিকা জানান, টিকা নেওয়ার পর তার শরীর ফুলে গিয়েছিল। পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে গেছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে তিন বছর ধরে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা সারভারিক্স আমদানি হয় না। এ ছাড়া হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক বি’ বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ। এরপরও চক্রটি পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে জেনেভ্যাক বি নিয়ে আসছে। বেশি আসছে বাংলাদেশের সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে।
প্রতারক চক্র একটি জেনেভ্যাক বি ভেঙে ১০টি নকল অ্যাম্পুলে ভরে জরায়ু ক্যানসারের ‘টিকা’ হিসেবে সরবরাহ করছে। যার একেকটি অ্যাম্পুলের দাম আড়াই হাজার টাকা। চক্রটি টিকা বাজারজাতকরণে বেসরকারি কিছু সংস্থার সহায়তা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, আল নূর ফাউন্ডেশন ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টার অন্যতম।
ডিবির একটি সূত্র বলছে, এসব ফাউন্ডেশনের শীর্ষ পযায়ের অন্তত ১২ জনকে নজরদারিতে রেখেছে ডিবি।
চক্রটির দেওয়া টিকা কার্ডে লেখা এ আর খান ফাউন্ডেশনের ফোন নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল-নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক এ এস ফারহান গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া শিপন একসময় আল-নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক ছিলেন। তাকে নানা অপকর্মের কারণে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি নকল টিকা দিয়ে থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
জানতে চাইলে ডিএমপির ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে জরায়ু ক্যানসারের প্রতিরোধমূলক টিকার নাম দিয়ে প্রতারণা করেছে। এদের সহায়তা করেছে কিছু কোম্পানি।’
তিনি বলেন, চক্রের মূল টার্গেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২৭ বছরে সিটি করপোরেশন ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং দিনে দিনে মশা বেড়েছে। মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা মহানগরে মশা নিয়ন্ত্রণ কেন সম্ভব হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের কাছ থেকেই। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখে তিনি বলেছিলেন, ঢাকা শহরে মশা নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয় তা ভুল।
মেয়রের এই স্বীকারোক্তি ধরে নিলে এত দিন যে ভুল পদ্ধতিতে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে এর পেছনে যে খরচ হয়েছে তা পুরোটাই গচ্চা গেছে।
কীটতত্ত্ববিদদেরও অভিমত, জনগণের রাজস্বের বিপুল পরিমাণ এই অর্থ গচ্চা যাওয়ার কারণ সিটি করপোরেশনের মশা নিধনে অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।
তাদের মতে, সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণকাজ কখনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করেনি। কীটতত্ত্ববিদৎরা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ পরিচালনার পরামর্শ দিলেও সিটি করপোরেশন সেসব শোনেনি।
মশা নিধনে ২৭ বছরে খরচ : ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২৭ অর্থবছরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাজেট পর্যালোচনা করে মশা নিয়ন্ত্রণকাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এ সময় মশার ওষুধ কেনা, ওষুধ ছিটানো, ওষুধ দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া, মালামাল পরিবহন, যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ সময় মশা নিয়ন্ত্রণকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৫০৬ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এই দুই খাতে মশা মারার নামে সিটি করপোরেশন খরচ করেছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর বা ১৬ বছর সময়কাল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ছিল। এ সময় ওষুধ কেনা ও ওষুধ প্রয়োগে খরচ হয়েছে ২১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। ওই সময় মশার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ করেছে ৯২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ডিসিসি ভাগ হয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে পরিচালিত হচ্ছে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছর পর্যন্ত ১১ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ওষুধ কেনা এবং ওষুধ প্রয়োগে খরচ করেছে ১৭৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ করেছে ২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মশক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে খরচ করেছে ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর একই সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে খরচ করেছে ৩২২ কোটি ২ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি ক্রয়ে খরচ করেছে ৩৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
ডিসিসির বাজেট বই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ওষুধ ছিটাতে খরচ করা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। ভাগ হওয়ার সময় ২০১১-১২ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ওই বছরে যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ২ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা।
ডিএনসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ করা হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ৬৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা।
বেতন-ভাতায় খরচ : ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে ডিসিসির মশক নিধন বিভাগের জনবল ছিল ১৬০ জন। এরা স্থায়ী বা নির্ধারিত বেতনভুক্ত ছিলেন। এদের মাসিক গড় বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। ডিসিসি তাদের মাসিক বেতন ৪৮ লাখ টাকা করে পরিশোধ করেছে। এই হিসাবে ডিসিসির সময়কালে ৯২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে।
ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগের বর্তমান স্থায়ী জনবল ৩৭৫ জন। এরা সবাই সরকারি বেতন কাঠামোতে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এদের মাসিক গড় বেতন ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ডিএসসিসি স্থায়ী জনবলের মাসে বেতন-ভাতা দিচ্ছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার। গত ১১ বছরে বেতন-ভাতায় খরচ ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে তিন বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে ৭১০ জন। এদের দৈনিক গড় বেতন ৫৫০ টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক বেতন খাতে খরচ ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। আর প্রতি মাসে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই হিসাব ৩ বছর তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
ডিএনসিসির স্থায়ী জনবল রয়েছে ৩০০ জন। এদের মাসিক গড় বেতন-ভাতা ৫০ হাজার টাকা। এই হিসাবে মাসিক বেতন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ১১ বছরে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ১৯৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আর অস্থায়ী জনবল রয়েছে ৬১২ জন। দৈনিক ৬০০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। সে হিসাবে দৈনিক মজুরি দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা। আর মাসে ১ কোটি ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। গত দুই বছর এসব কর্মীর বেতন-ভাতা বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
মশক নিয়ন্ত্রণে গলদ : ঢাকার বয়স ৪০০ বছর বা তারও বেশি। আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে এ অঞ্চলে শুরু থেকেই মশার কম-বেশি উপদ্রব ছিল। নগর সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রবও বেড়েছে।
ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ঢাকা পৌরসভা গঠিত হয়। সে সময় পৌরসভার মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি চালু হয়। ওই অধ্যাদেশ বলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভা ঢাকা সিটি করপোরেশনে পরিবর্তিত হয়। নাগরিক সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটি ভাগ করে। ঢাকা নগর সংস্থার ১৫৯ বছরের মশক নিধনের সফলতার গল্প নেই বললেই চলে। শুধু চল্লিশের দশকে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীবুল্লাহ বাহার ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তার কাজের সফলতার বিশ্লেষণে মশক নিয়ন্ত্রণের সফলতা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। এরপর আর কোনো স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পৌর মেয়র, প্রশাসক বা সিটি মেয়র ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখাতে পারেননি।
মশার লার্ভা নিধনে লার্বিসাইডিং এবং উড়ন্ত মশক নিধনে ফগিং কার্যক্রম সেই ২০০০ সাল থেকে চলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে রাজধানীর জলাশয়ে হাঁস, ব্যাঙ ও গাপ্পি মাছ ছেড়ে লার্ভা নিধনের চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। আর কদমগাছ রোপণ করে সেখানে ফিঙে পাখির আগমন ঘটিয়ে উড়ন্ত মশা নিধনের চেষ্টাও চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্গম জলাশয়ে ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব কমানোর তৎপরতাও চোখে পড়েছে নগরবাসীর। এত কিছুর পরও মশার উপদ্রব একটুও কমেছে বলে মনে করেন না ভুক্তভোগী ঢাকাবাসী।
কিউলেক্স মশার পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকাবাসী এডিস, কিউলেক্স মশার উপদ্রব সমানতালে সহ্য করছে।
এর মধ্যে এডিসবাহিত ডেঙ্গু জ¦র বড় আতঙ্কেও কারণ হয়ে উঠেছে। ২০০০ সালে যেখানে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে গত বছর রেকর্ড ২৮১ জন মারা গেছে এ রোগে। এর আগে ২০১৯ সালে মারা গেছে ১৭৯ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি জলাশয় পরিষ্কার না রাখা, পতিত জমিতে আবর্জনার ভাগাড় ও সেখানে জমে থাকা পানি, ঢাকনাযুক্ত ড্রেন এবং দুই ভবনের মাঝখানের ফেলে রাখা আবর্জনা মশা প্রজননের বড় উৎস। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে জানলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এর সমাধান বের করার বিষয়েও তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
বিশেষজ্ঞ অভিমত : কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশন অবৈজ্ঞানিক বা ভুল পদ্ধতিতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের সঠিক পরামর্শ দিলেও কখনো সে পরামর্শমতো কাজ করেনি। এজন্য মশা মারার নামে বছরে বিপুল অর্থ খরচ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘জনগণের এই অর্থ অপচয় করেছে সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজরা লুটপাটও করেছে। মশার কমা বা বাড়া মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। মশক নিধনে কার্যকর সুবিধা পেতে হলে সিটি করপোরেশনকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন, কখনো সিটি করপোরেশন সঠিক নিয়মে মশা নিয়ন্ত্রণকাজ করেনি। অনেক দিন পর হলেও মেয়র আতিকুল ইসলাম সেটা স্বীকার করেছেন। এখন তাদের উচিত সঠিক নিয়মে কাজ করা। ভুল স্বীকার করে বসে থাকলে চলবে না।
কর্তৃপক্ষের অভিমত : ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জোবায়দুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। আর নিজস্ব ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। ল্যাব থাকলে তখন নিজস্ব উপায়ে মশার প্রজনন স্পট চিহ্নিত করে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। কর্মীদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামছুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিএসসিসির মশক নিয়ন্ত্রণকাজে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিজস্ব ল্যাব না থাকা। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ডিএসসিসি সচেষ্ট রয়েছে। তবে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে সংস্থার মশক নিয়ন্ত্রণকাজের সক্ষমতা অনেক গুণ বেড়েছে। যেকোনো মশক নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণে আগ্রহী তারা।
পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের মামলায় গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সরকার। তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে পাঠানো হলে বিচারক মো. ইকবাল হোসেন মাহিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেল ৫টায় একই আদালত মাহিকে জামিন দিয়েছে। ফলে আদালতের আদেশে মাহিকে গাজীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলেও জামিন পাওয়ার পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একই মামলার আসামি তার স্বামী রকিব সরকারকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
মাহিয়া মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট রিপন চন্দ্র সরকার জানান, ওমরাহ পালন করতে গিয়ে জানেন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং একজন সেলিব্রেটি হওয়ায় তার পালিয়ে যাওয়া আশঙ্কা নেই। তিনটি বিষয় বিবেচনা করে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। তিনি আরও জানান, এর আগে আদালতে ওঠানো হলে তার জামিন চাওয়া হয়নি। যার কারণে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখন আমরা তার জামিন চাইলে বিচারক দুটি মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। রাত পৌনে ৮টায় গাজীপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মাহি।
পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাহি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বের হওয়ার সময় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জমিসংক্রান্ত বিরোধে মারামারির ঘটনায় হুকুমের আসামি হিসেবে দুটি মামলা রয়েছে।
মাহিকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহির গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি জানান, চিত্রনায়িকা মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার মাহির ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশ পুলিশ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। তিনি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যাচার, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করছেন। বাসন থানার পুলিশ মাহির ফেসবুক আইডিতে প্রবেশ করে ঘটনার সত্যতা পায়। এ বিষয়ে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরপরই জিএমপির একদল পুলিশ মাহিকে গ্রেপ্তার করে সরাসরি বাসন থানায় নিয়ে যায়। আদালতে হাজির করা হলে বিচারক শুনানি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানের নির্দেশ দেন। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় মাহি বলতে থাকেন, আদালতে তাকে কোনো কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে বাসন থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মাহিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সৌদি আরব থেকে মাহি শুক্রবার ভোরে ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী ব্যবসায়ী-আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ওই ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ নিয়ে প্রতিপক্ষকে জমি দখল দেওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ করেন তিনি। দেশে ফিরলে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন।
একই লাইভে রকিব সরকার বলেন, গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার গাড়ির একটি শোরুম রয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার লোকজন নিয়ে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে হামলা চালিয়ে ওই শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর করে। অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা মাহির অভিযোগ তদন্ত করা হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও এতিমখানায় খাবার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছি গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এ জন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। এটা ভালো করে জেনে আমি বলতে পারব।’
মাহি তার স্বামীর শোরুম ভাঙচুর ও দখলের অভিযোগ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তদন্ত করা হবে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন একটা অভিযোগ আসে, তখন তদন্ত করতে হয়। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। মাহির বক্তব্য সঠিক কি না, কিংবা পুলিশ যেটা করেছে, সেটি সঠিক কি না, তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।’
রকিব সরকারের পুরনো তিন মামলা সচল হচ্ছে : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রকিব সরকারের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর ঘটনা সত্য, কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় সে সব মামলার পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছিল। পুলিশ যেকোনো সময় মামলাগুলো সচল করতে পারে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। আমরা মামলাগুলো খতিয়ে দেখছি।’
মারামারি মামলার বাদী যা বলেন : মারামারি মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রকিব জোর করে আমার জমি দখল করে রেখেছে। জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রকিব আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ আমি কেন মার খেলাম, কেন আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভিযোগ দিলাম?’
মামলায় যারা গ্রেপ্তার : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় আসামি মাহি ও তার স্বামী রকিব। আর মারামারি মামলায় আসামি ২৮ জন। এ মামলায় মাহি ও রকিব হুকুমের আসামি। এ মামলায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত মাহি ছাড়া আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ (৩৮), আশিকুর রহমান (৩২), ফাহিম হোসেন হৃদয় (২২), জুয়েল রহমান (২৫), জমশের আলী (৪৪), মোস্তাক আহমেদ (২২), খালিদ সাইফুল্লাহ জুলহাস (৩০), সুজন ম-ল (৩৪) ও মাহবুব হাসান সাব্বির (১৮)।
লাইভে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বলায় অনুশোচনা প্রকাশ : জামিনে মুক্তির পর গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় স্বামী রকিব সরকারের ফারিশতা রেস্টুরেন্টে যান মাহি। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করেনি। তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেও পুলিশ তাকে পানি দেয়নি। পুলিশ সদস্যদের বলেছিলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রচণ্ড গরমে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তারপরও তার প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়। বিমানবন্দরে কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে দেওয়া হয়নি।
মাহিয়া মাহি আরও বলেন, ফেসবুক লাইভে তিনি পুলিশ প্রশাসন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে তার স্বামী দেশে এলে তার সঙ্গে আরও বেশি খারাপ আচরণ ও হয়রানি করা হতে পারে।
ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলার কারণে ক্ষমা চাইলেও এই চলচ্চিত্র নায়িকা পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে সরে যাননি বলে উল্লেখ করেন। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তিনি এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন। মাহি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমাদের গাড়ির শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুর করা হলো, অথচ পুলিশ উল্টো আমাদের এবং আমাদের কর্মচারীদের নামে মামলা দিয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।’ তবে তিনি কারা কর্র্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। কারা কর্র্তৃপক্ষ তাকে সম্মান দেখিয়ে মানবিক আচরণ করেছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী পাইপলাইন’ আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ¦ালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। এই পাইপলাইনের মতো আগামী দিনেও আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত উদযাপন করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একই সঙ্গে কাজ করব।’
গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন। এর মাধ্যমে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি নয়াদিল্লিতে তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নবনির্মিত পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি। এই পাইপলাইনটি বাংলাদেশের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত করবে এই পাইপলাইন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি, আমরা ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করি। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে।’
বিগত বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে সমস্যাগুলো একে একে আমরা সমাধান করেছি। যোগাযোগ স্থাপন করেছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছি। আমরা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি। দুই দেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক, সেটাই আমরা চাই। আমরা বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে বিনিয়োগ করুক। তাতে আমরা দুই দেশই লাভবান হব।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) একজন কর্মকর্তা গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকাল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনের কমিশনিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেছেন। এর আগে কমিশনিংয়ের জন্য ৯৩ লাখ লিটার ডিজেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৭ লাখ লিটার সব সময় পাইপলাইনের মধ্যেই থেকে যাবে। বাকি ৪৬ লাখ লিটার ডিজেল গত শুক্রবার ডিপোতে জমা হয়েছে। পরে নতুন এলসি খোলার পর আবার তেল আসবে। এভাবে আমাদের চাহিদা এবং ভারতের সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এলসি খোলার মাধ্যমে ডিজেল আমদানি করা হবে।’
জ্বালনি বিভাগ সূত্র জানায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়ে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিপিসি এবং ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পাইপলাইনের মধ্যে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং বাকি ৫ কিলোমিটার ভারতে বসানো হয়েছে। নবনির্মিত এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছর ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করবে বিপিসি। এর মধ্যে প্রথম তিন বছর দুই লাখ টন, পরবর্তী তিন বছর তিন লাখ টন, তার পরবর্তী চার বছর পাঁচ লাখ টন এবং শেষ পাঁচ বছর ১০ লাখ টন তেল আমদানি করা হবে।
বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগন ব্যবহার করে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইনের মধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী বার্ষিক প্রায় ২ দশমিক ৫ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। তবে সৈয়দপুর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হলে আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টন ডিজেল আমদানি করা যাবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির ফলে পরিবহন লস ও পরিবেশদূষণ হ্রাসের পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা আরও নির্বিঘ্ন ও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, প্রতিকূল পরিবেশেও পার্বতীপুরে তেল বিপণন কোম্পানির স্থাপনা হতে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে সাশ্রয়ী উপায়ে। পাশাপাশি সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহ সহজ ও নির্বিঘ্ন হবে। নতুন পাইপলাইন চালুর ফলে পার্বতীপুরে জ্বালানি তেলের মজুদের ক্ষমতা ২৯ হাজার টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ হাজার টনে উন্নীত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় বর্তমানে জাহাজে করে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ১১ দশমিক ৫০ ডলার। পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানির ফলে ব্যারেল প্রতি ৬ ডলার সাশ্রয় হবে।
আপনার পকেটে মাত্র ৫০ টাকা আছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টও শূন্যে। হঠাৎ আপনার পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। কল করলেন নির্দিষ্ট কল সেন্টারের নম্বরে। পরিস্থিতি শুনে কল সেন্টারের কর্মী বললেন একটু পরে একজন চিকিৎসক আপনাকে কল করবেন, অপেক্ষা করুন। ফোন সেটটি হাতে রাখুন। কল গেলে রিসিভ করবেন। মিনিট-দুই পর কল এলো। অপর প্রান্ত থেকে ডাক্তার তার পরিচয় দিলেন। রোগীর অবস্থা জানতে চাইলেন। রোগী কথা বলতে সক্ষম কি না জানতে চাইলেন। কষ্ট হলেও রোগী যতটুকু সম্ভব কথা বললেন। কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। এরপর আবার আপনার সঙ্গে কথা বললেন ডাক্তার। বললেন, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রোগী গাড়িতে নাকি-ট্যাক্সিতে যাবেন তাও জানতে চাইলেন। বললেন, অ্যাম্বুলেন্স দরকার নেই। অ্যাম্বুলেন্স শুধু মুমূর্ষু রোগীদের জন্য।
আপনার নিজস্ব গাড়ি নেই। নিজ খরচে ট্যাক্সিতে হাসপাতালে পৌঁছালেন। কিছু টাকা আপনার পকেটে থেকে গেল। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া আর খালি পকেট তো একই কথা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাউন্টারে রোগীর জন্ম-তারিখ আর নামের শেষাংশটুকু বললেন। কাউন্টার থেকে শুধু আপনার বাসার ঠিকানা শুনিয়ে ভর্তি কনফার্ম করা হলো। কয়েক সেকেন্ডে ওই তিনটি তথ্যসংবলিত লম্বা স্টিকার রোগীর হাতে ব্রেসলেটের মতো পরিয়ে দেওয়া হয়। ছুটে আসেন একজন ডাক্তার ও একজন নার্স। রোগীকে নিয়ে যায় একটি রুমে। নার্স রোগীর হাত থেকে রক্তের স্যাম্পল নেন। ডাক্তার কম্পিউটারে রোগীর মেডিকেল হিস্টরি দেখতে থাকেন। একই সঙ্গে চলে চেকআপ। নার্স ইসিজি করেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার জানান, রোগীর গলব্লাডারে স্টোন আছে। রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হবে। সার্জারির প্রয়োজন হবে। কাল-পরশুর মধ্যেই।
রাত ৩টা। ডাক্তার আপনাকে বললেন, বাসায় চলে যান। চিন্তার কোনো কারণ নেই। রোগীর দায়িত্ব আমাদের। ডাক্তার জানতে চাইলেন, কীভাবে যাবেন? নিজের গাড়ি আছে? ‘না’ জবাব শুনে বললেন, এখন তো বাসও বন্ধ হয়ে গেছে। আচ্ছা, আমরা ট্যাক্সি ডাকার ব্যবস্থা করছি। হাসপাতাল থেকে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবে না।
বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভিজিটর এলাউড। আপনি বা যে কেউ প্রতিদিন ওই সময়ে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। রোগী পরের চার দিন হাসপাতালে থাকল। একটা ইআরসিপি ও একটা ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি হলো। ওষুধ হাসপাতাল থেকেই। খাওয়া-দাওয়াও। ডাক্তার প্রতিদিন আপনাকে কাছে বসিয়ে হাসিমুখে ব্রিফ করবেন। প্রশ্ন আছে কি না জানতে চাইবেন। কোনো আপত্তি আছে কি না জানতে চাইবেন। রোগীকে নিয়ে তাদের চিকিৎসা-পরিকল্পনার উপকার ও ঝুঁকির কথা খোলামেলা জানান রোগীর সামনেই।
চার দিন পর রোগীর দরকারি ওষুধ আর একটি নির্দেশনাপত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এবার রোগী নিয়ে বাসায় যান। বাসায় কোনো সমস্যা হলে নির্দিষ্ট নম্বরে কল করবেন। একটি ফরমে সই দিয়ে আপনি বাসায় চলে এলেন।
এটি একটি পাবলিক হাসপাতাল, যার সেবার মান ও পরিবেশ বাংলাদেশের ইউনাইটেড, স্কয়ার, এভারকেয়ার হাসপাতালের চেয়েও উন্নত। হাসপাতাল থেকে যখন আপনি বিদায় নিলেন কেউ আপনার পথ আটকায়নি। বিলের কাগজ ধরিয়ে দেননি কিংবা বিল কাউন্টারে যেতে বলেননি। কত খরচ হলো আপনি জানতেও পারবেন না। তবে ধারণা করতে পারবেন কত বিল হতে পারে।
গল্পটা সত্য। পুরনো নয়, নতুন। দিন-কয়েক আগের। গল্পটা আমার। পাঠক হিসেবে যাতে উপলব্ধি করতে সহজ হয় তাই আমার জায়গায় আপনাকে বসিয়েছি। গল্প না বলে যদি ঘটনা বলতে চান তাও পারেন। ধরা যাক এটা গল্পই। গল্পটা বাংলাদেশের নয়, নেদারল্যান্ডসের। হিসাবটা টাকার নয়, ইউরোর। বাংলাদেশ কল্পনা করে হিসাবটা টাকায় বুঝে নিতে পারেন। এবার গল্পটা শেয়ার করার উদ্দেশ্যে আসা যাক।
নেদারল্যান্ডসে যা বাস্তব বাংলাদেশে তা কল্পনা। কিন্তু বাংলাদেশে কী তা একেবারে অসম্ভব? বাংলাদেশ কি এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে না? আমি বলি বাংলাদেশও পারে, পারবে। যারা সক্ষমতার দোহাই দেন তারা হয় বুঝে বলেন বা স্বার্থক্ষণœ হওয়ার আশঙ্কায় বলেন। শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এ ব্যবস্থা কার্যকর। এটা সম্ভব হচ্ছে স্বাস্থ্যবীমার কারণে। ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায়। সমৃদ্ধিশালী দেশগুলো যেমন স্বাস্থ্যবীমাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে, তেমনি মধ্যম আয়ের বা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও স্বাস্থ্যবীমার আওতায় চিকিৎসাসেবা রয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিনা খরচে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেবা নেওয়া যায়। কোনো দেশে হয়তো এ জন্য একটা সার্ভিস কার্ড লাগে। কোথাও তাও লাগে না। একটা শনাক্তকরণ নম্বর হলেই চলে।
এ ব্যবস্থা কিন্তু একদম ফ্রি নয়। টোকেন মানি দিতে হয়, যেটা হচ্ছে ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম। অবস্থা ও রোগের প্রকারভেদে কারও কম, কারও বেশি। পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় বিধানের মাধ্যমে ইনস্যুরেন্সধারী রোগী যখন হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে বাধ্য। হাসপাতাল ছাড়াও নিয়মিত চেকআপের জন্য এলাকায় এলাকায় নিযুক্ত জেনারেল প্র্যাকটিসের সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া হয়। যাবতীয় বিল নিয়ে নেওয়া হয় রোগীর সংশ্লিষ্ট ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে।
ইনস্যুরেন্স না থাকলে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে নগদ টাকা দিয়ে। ঠিক বাংলাদেশের মতো। ধরুন বাংলাদেশে মাসে ১৪৫ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে যদি প্রয়োজনমতো চিকিৎসা পাওয়া যায় খরচ ছাড়াই তাহলে তা কেন দেবেন না! মাসিক প্রিমিয়াম আরেকটু বেশি হলেও ক্ষতি নেই, বরং উপকারই হবে।
এখন দেশে ঘরে ঘরে রোগের প্রকোপ। মাসে গড়ে হাজারের বেশি টাকা চিকিৎসা-ব্যয়। অনেকে খরচের ভয়ে রোগ পুষে রাখেন। সহসা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। বিনামূল্যের কথা বলা হলে সরকারি হাসপাতালেও এখন অনেক খরচ। প্রাইভেট হাসপাতালে তো মানুষের দিশেহারা অবস্থা। একদিকে রাষ্ট্র ব্যয় করছে, মানুষও ব্যয় করছে পকেট থেকে। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে মুনাফা লুটে নিচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের ব্যবসায়ী চক্র। চিকিৎসকরাও এ চক্রের সঙ্গেই আছেন।
বাংলাদেশে আছে জুজুর ভয়। আছে স্বার্থগোষ্ঠীর বাধা। চিকিৎসা ব্যবসায়ীরা বাধা দেন, বাধা হয়ে দাঁড়ান চিকিৎসকদের অনেকে। তারা মনে করেন, দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে তাদের বাণিজ্য বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। যারা চিকিৎসা-বাণিজ্যের নামে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয় সেই পথ তো বন্ধ হতেই হবে। যেসব দেশ স্বাস্থ্যবীমা চালু করেছে, সেখানে চিকিৎসার নামে বাংলাদেশের মতো এমন বাণিজ্য নেই। চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায় না। সেখানে পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় খাতের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ লাভজনক।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে কাজ করছে প্রায় এক যুগ ধরে। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের এই কার্যক্রমের মডেলেই গলদ মনে করেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। স্বাস্থ্যবীমার কাজে গতি এলেই কোনো কোনো মহল বলার চেষ্টা করে, রাষ্ট্র এখনো স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত সাবসিডি দিতে সক্ষম নয়। কোনো রাষ্ট্রই ফ্রিতে চিকিৎসা দেয় না। হেলথ প্রিমিয়াম দিতে মানুষ অক্ষম।
সচ্ছল, সক্ষম মানুষদের প্রিমিয়াম থেকে প্রয়োজনমতো অসচ্ছল মানুষদের পেছনেও ব্যয় করা যায় যদি সদিচ্ছা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে ধনীদের প্রিমিয়ামের দিকে তাকাতে ভয় পান নীতিনির্ধারকরা। আগেই পরিকল্পনা করা হয় সরকারি টাকায় গরিবের কাছে ছুটে যাওয়ার। ফলে অজুহাত খাড়া করতে বেগ পেতে হয় না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয় না।
ইনস্যুরেন্স খাতের যারা স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে নড়াচড়া করেছেন তারাও প্রচলিত ধারার ঠিকাদারি মডেলের মধ্যেই থাকেন। নীতিনির্ধারকদের উপযুক্ত মোটিভেশন দিতে পারছেন না তারা। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান ছোট আকারে স্বাস্থ্যবীমার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলছে সাফল্যের সঙ্গে। দরকার সফল জাতীয় তৎপরতা।
মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা জরুরি। ধনী-গরিব সবার। মানুষের চিকিৎসাব্যয়ের ৭৪ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। বছরে হাজারো পরিবার শুধু জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে এ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে ফেঁপে উঠছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের বাণিজ্য।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। রাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন পরিকল্পিত কর্মকৌশল। মানুষ ভালো সিস্টেমকে স্বাগত জানায়, গ্রহণ করে।
নির্বাচন কমিশন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা চেয়েছে। আগেরবার তারা খাত নির্দিষ্ট না করে বরাদ্দ চেয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাহিদার নিরিখে এবার তারা খাত নির্দিষ্ট করে আগেরবার চাওয়া বরাদ্দের টাকাই আবার চেয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার পুরনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বিষয়টিও ছিল।
২০ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সব মিলিয়ে ইসি চেয়েছিল ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় ঢালাওভাবে বাজেট না চেয়ে কোন খাতে কত খরচ হবে তা স্পষ্ট করে সংশোধিত বাজেট দিতে বলেছিল।
এবার চিঠি দিয়ে বিভিন্ন খাত উল্লেখ করলেও একই পরিমাণ অর্থ চেয়ে ফের অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ইসি। এবার নির্বাচনগুলোর সংখ্যা ও সময় এবং ইভিএম মেরামতের বিষয়ে জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে বৈঠকে অগ্রগতির কথাও জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হবে, তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে বলেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। যে অর্থ আগে চাওয়া হয়েছিল, এবারও তাই চাওয়া হয়েছে। তবে চিঠির সঙ্গে এবার ১৩২৮টি নির্বাচন কোন সময়ে হবে ও কত খরচ হতে পারে তা উল্লেখ করা হয়েছে।’
চলতি মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানান তিনি।
ইসি সূত্র বলেছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসন, ৪৯০টি উপজেলা পরিষদে, ৫টি সিটি করপোরেশনে, ২০টি পৌরসভায় ও ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। একই অর্থবছরে জাতীয় সংসদের ১৫টি আসনের উপনির্বাচনও ধরা হয়েছে। সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যথাসম্ভব ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। একেকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনে গড়ে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, একেকটি উপজেলা নির্বাচনে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, পৌরসভা নির্বাচনে ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে শুধু নির্বাচন আয়োজনে ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী অর্থবছরের জন্য ইসি ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। এর মধ্যে ইসির কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক কর্মকর্তা জানান, ‘ইভিএম ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এসবের মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৮ সালে কেনা ইভিএম ব্যবহার করতে হলে প্রায় সবগুলো মেরামত করতে হবে। সম্প্রতি ইসির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে বিএমটিএফ। মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানায় বিএমটিএফ। এ ছাড়া ইভিএম সংরক্ষণ বাবদ গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাড়া হয়েছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ টাকা এখনো পরিশোধ করেনি ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ১২ মার্চ কক্সবাজারে এক কর্মশালায় জানিয়েছিলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে ইসির।’ আর ইসির সূত্র জানায়, ‘তা করতে হলে নির্বাচনের আগেই মেশিনগুলো মেরামত করতে হবে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় ইভিএমের বিষয়ে বেশি আপত্তি তুলেছিল। ঢালাওভাবে বাজেট না চেয়ে কতটি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে এবং কতটি ইভিএমের মেরামতে কত টাকা লাগবে নির্দিষ্ট করতে বলেছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিটিএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। চিঠিতে বিটিএমএফের দেওয়া তথ্যও সংযোজন করা হয়েছে।’
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে বৈঠকে তিনি ছাড়াও ইসির সচিব মো. জাহাংগীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। টাকা কমানোর কোনো খাত আছে কি না তা দেখে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছিল। আমরা সব উল্লেখ করেই ফিরতি চিঠি পাঠিয়েছি।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।