
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। খুনের মামলার আসামি ধরতে গিয়ে র্যাব পরিচয়ে একদল সাদা পোশাকধারী লোক তাকে গুলি করে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী রমিজা বেগম। গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবাড়ি বড়গাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে র্যাব বলছে, স্থানীয়রা তাদের আক্রমণ করলে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।
নিহত আবুল কাশেম ওই এলাকার প্রয়াত কদম আলীর ছেলে। তিনি পেশায় বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পী ছিলেন। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে আরও এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
নিহতের স্ত্রী রমিজা বেগমের দাবি, র্যাব সদস্য পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক মধ্যরাতে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেলিম নামে এক প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে র্যাব পরিচয়দানকারীরা তার স্বামীকে তার সামনে গুলি করে হত্যা করে।
তিনি বলেন, রাত দেড়টার দিকে টয়লেটে যাওয়ার জন্য তারা ঘরের বাইরে বের হন। এ সময় বাড়ির পাশের রাস্তায় কয়েকজনের চিৎকার শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে দেখতে পান তাদের পাশের বাড়ির সেলিম নামে এক যুবককে কয়েকজন জিনস প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা লোক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছিলেন। আবুল কাশেম তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাদা পোশাকধারীদের গালি দেন আবুল কাশেম। তখন তারা আবুল কাশেমের পেটে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এরপর তার মরদেহ উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে গুলির শব্দ পেয়ে এলাকায় ডাকাত পড়েছে জানিয়ে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পর এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সাদা পোশাকধারী লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ সময় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত হুমায়ুন কবিরের ছেলে সজীব বলেন, ‘গ্রামে ডাকাত এসেছে এটা শুনে অন্যদের মতো আমার বাবাও ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে তার পায়ে গুলি করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। অপারেশন করে তার দুই পা থেকে তিনটি বুলেট বের করা হয়েছে।’
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সিজান জানান, রাত ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল।
এ ব্যাপারে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) সকালে সোনারগাঁয়ের সাদিপুর এলাকা থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে র্যাব রাতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় জেলা পুলিশ ও জেলা ডিবি পুলিশের টিমও ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। র্যাব অন্যপথে আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র্যাবের ওপর স্থানীয়রা হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে র্যাব বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে র্যাব ফাঁকা গুলি ছুড়ে আটক আসামিকে নিয়ে চলে আসে।’
এই র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে আমরা জানতে পারি ওই এলাকায় একজন বৃদ্ধ মারা গেছেন। তবে কীভাবে সেই ব্যক্তি মারা গেছেন তা আমরা নিশ্চিত নই। যেহেতু দুই পক্ষের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে, তাই কাদের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না। এ হামলার ঘটনায় চার র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন।’
সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ ছিল, সেটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২৭ বছরে সিটি করপোরেশন ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং দিনে দিনে মশা বেড়েছে। মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা মহানগরে মশা নিয়ন্ত্রণ কেন সম্ভব হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের কাছ থেকেই। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখে তিনি বলেছিলেন, ঢাকা শহরে মশা নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয় তা ভুল।
মেয়রের এই স্বীকারোক্তি ধরে নিলে এত দিন যে ভুল পদ্ধতিতে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে এর পেছনে যে খরচ হয়েছে তা পুরোটাই গচ্চা গেছে।
কীটতত্ত্ববিদদেরও অভিমত, জনগণের রাজস্বের বিপুল পরিমাণ এই অর্থ গচ্চা যাওয়ার কারণ সিটি করপোরেশনের মশা নিধনে অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।
তাদের মতে, সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণকাজ কখনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করেনি। কীটতত্ত্ববিদৎরা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ পরিচালনার পরামর্শ দিলেও সিটি করপোরেশন সেসব শোনেনি।
মশা নিধনে ২৭ বছরে খরচ : ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২৭ অর্থবছরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাজেট পর্যালোচনা করে মশা নিয়ন্ত্রণকাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এ সময় মশার ওষুধ কেনা, ওষুধ ছিটানো, ওষুধ দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া, মালামাল পরিবহন, যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ সময় মশা নিয়ন্ত্রণকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৫০৬ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এই দুই খাতে মশা মারার নামে সিটি করপোরেশন খরচ করেছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর বা ১৬ বছর সময়কাল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ছিল। এ সময় ওষুধ কেনা ও ওষুধ প্রয়োগে খরচ হয়েছে ২১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। ওই সময় মশার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ করেছে ৯২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ডিসিসি ভাগ হয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে পরিচালিত হচ্ছে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছর পর্যন্ত ১১ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ওষুধ কেনা এবং ওষুধ প্রয়োগে খরচ করেছে ১৭৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ করেছে ২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মশক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে খরচ করেছে ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর একই সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে খরচ করেছে ৩২২ কোটি ২ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি ক্রয়ে খরচ করেছে ৩৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
ডিসিসির বাজেট বই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ওষুধ ছিটাতে খরচ করা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। ভাগ হওয়ার সময় ২০১১-১২ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ওই বছরে যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ২ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা।
ডিএনসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ করা হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ৬৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা।
বেতন-ভাতায় খরচ : ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে ডিসিসির মশক নিধন বিভাগের জনবল ছিল ১৬০ জন। এরা স্থায়ী বা নির্ধারিত বেতনভুক্ত ছিলেন। এদের মাসিক গড় বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। ডিসিসি তাদের মাসিক বেতন ৪৮ লাখ টাকা করে পরিশোধ করেছে। এই হিসাবে ডিসিসির সময়কালে ৯২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে।
ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগের বর্তমান স্থায়ী জনবল ৩৭৫ জন। এরা সবাই সরকারি বেতন কাঠামোতে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এদের মাসিক গড় বেতন ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ডিএসসিসি স্থায়ী জনবলের মাসে বেতন-ভাতা দিচ্ছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার। গত ১১ বছরে বেতন-ভাতায় খরচ ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে তিন বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে ৭১০ জন। এদের দৈনিক গড় বেতন ৫৫০ টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক বেতন খাতে খরচ ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। আর প্রতি মাসে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই হিসাব ৩ বছর তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
ডিএনসিসির স্থায়ী জনবল রয়েছে ৩০০ জন। এদের মাসিক গড় বেতন-ভাতা ৫০ হাজার টাকা। এই হিসাবে মাসিক বেতন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত ১১ বছরে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ১৯৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আর অস্থায়ী জনবল রয়েছে ৬১২ জন। দৈনিক ৬০০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। সে হিসাবে দৈনিক মজুরি দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা। আর মাসে ১ কোটি ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। গত দুই বছর এসব কর্মীর বেতন-ভাতা বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
মশক নিয়ন্ত্রণে গলদ : ঢাকার বয়স ৪০০ বছর বা তারও বেশি। আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে এ অঞ্চলে শুরু থেকেই মশার কম-বেশি উপদ্রব ছিল। নগর সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রবও বেড়েছে।
ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ঢাকা পৌরসভা গঠিত হয়। সে সময় পৌরসভার মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি চালু হয়। ওই অধ্যাদেশ বলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভা ঢাকা সিটি করপোরেশনে পরিবর্তিত হয়। নাগরিক সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটি ভাগ করে। ঢাকা নগর সংস্থার ১৫৯ বছরের মশক নিধনের সফলতার গল্প নেই বললেই চলে। শুধু চল্লিশের দশকে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীবুল্লাহ বাহার ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তার কাজের সফলতার বিশ্লেষণে মশক নিয়ন্ত্রণের সফলতা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। এরপর আর কোনো স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পৌর মেয়র, প্রশাসক বা সিটি মেয়র ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখাতে পারেননি।
মশার লার্ভা নিধনে লার্বিসাইডিং এবং উড়ন্ত মশক নিধনে ফগিং কার্যক্রম সেই ২০০০ সাল থেকে চলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে রাজধানীর জলাশয়ে হাঁস, ব্যাঙ ও গাপ্পি মাছ ছেড়ে লার্ভা নিধনের চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। আর কদমগাছ রোপণ করে সেখানে ফিঙে পাখির আগমন ঘটিয়ে উড়ন্ত মশা নিধনের চেষ্টাও চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্গম জলাশয়ে ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব কমানোর তৎপরতাও চোখে পড়েছে নগরবাসীর। এত কিছুর পরও মশার উপদ্রব একটুও কমেছে বলে মনে করেন না ভুক্তভোগী ঢাকাবাসী।
কিউলেক্স মশার পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকাবাসী এডিস, কিউলেক্স মশার উপদ্রব সমানতালে সহ্য করছে।
এর মধ্যে এডিসবাহিত ডেঙ্গু জ¦র বড় আতঙ্কেও কারণ হয়ে উঠেছে। ২০০০ সালে যেখানে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে গত বছর রেকর্ড ২৮১ জন মারা গেছে এ রোগে। এর আগে ২০১৯ সালে মারা গেছে ১৭৯ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি জলাশয় পরিষ্কার না রাখা, পতিত জমিতে আবর্জনার ভাগাড় ও সেখানে জমে থাকা পানি, ঢাকনাযুক্ত ড্রেন এবং দুই ভবনের মাঝখানের ফেলে রাখা আবর্জনা মশা প্রজননের বড় উৎস। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে জানলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এর সমাধান বের করার বিষয়েও তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
বিশেষজ্ঞ অভিমত : কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশন অবৈজ্ঞানিক বা ভুল পদ্ধতিতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের সঠিক পরামর্শ দিলেও কখনো সে পরামর্শমতো কাজ করেনি। এজন্য মশা মারার নামে বছরে বিপুল অর্থ খরচ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘জনগণের এই অর্থ অপচয় করেছে সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজরা লুটপাটও করেছে। মশার কমা বা বাড়া মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। মশক নিধনে কার্যকর সুবিধা পেতে হলে সিটি করপোরেশনকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন, কখনো সিটি করপোরেশন সঠিক নিয়মে মশা নিয়ন্ত্রণকাজ করেনি। অনেক দিন পর হলেও মেয়র আতিকুল ইসলাম সেটা স্বীকার করেছেন। এখন তাদের উচিত সঠিক নিয়মে কাজ করা। ভুল স্বীকার করে বসে থাকলে চলবে না।
কর্তৃপক্ষের অভিমত : ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জোবায়দুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। আর নিজস্ব ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। ল্যাব থাকলে তখন নিজস্ব উপায়ে মশার প্রজনন স্পট চিহ্নিত করে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। কর্মীদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামছুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিএসসিসির মশক নিয়ন্ত্রণকাজে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিজস্ব ল্যাব না থাকা। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ডিএসসিসি সচেষ্ট রয়েছে। তবে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে সংস্থার মশক নিয়ন্ত্রণকাজের সক্ষমতা অনেক গুণ বেড়েছে। যেকোনো মশক নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণে আগ্রহী তারা।
দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (টিকা) চোরাই পথে এনে সেগুলো ভেঙে পানি মিশিয়ে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক নকল টিকা তৈরি করেছে একটি চক্র। গত দুই বছরে চক্রটি দেশে চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি কিছু সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা ও পাশর্^বর্তী এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে ছয় হাজারের বেশি নারীকে সেই টিকা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নকল টিকা দেওয়ার চক্রের ৫ সদস্যকে গত বুধবার গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, নকল এই টিকার অন্যতম হোতা ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক হিমেল। তিনি পলাতক রয়েছেন। হিমেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার শিপনের নকল টিকা তৈরির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড এসেছে দেশ রূপান্তরের হাতে। অভিযোগ ওঠার পর হিমেলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা বলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতারক চক্রটিকে সহায়তাকারী বেসরকারি চিকিৎসা সেবা দাতা সংস্থা ও হাসপাতালের ডজনখানেক মালিক জানতে চাইলে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আনিচ উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি প্রথমে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা ‘সারভারিক্স টিএম’-এর অ্যাম্পুলে পানি মিশিয়ে নারীদের শরীরে দিয়েছে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে দেশে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বির টিকা ভেঙে তাতে পানি মিশিয়ে ‘সারভারিক্স টিএম’-এর অ্যাম্পুলে ঢুকিয়ে প্রয়োগ করা শুরু করে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই নজরদারিতে রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সাইফুল ইসলাম শিপন (২৬), ফয়সাল আহমেদ (৩২), আল আমিন (৩৪), নুরুজ্জামান সাগর (২৪) ও আতিকুল ইসলাম (১৯)।
নকল টিকার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল শনিবারও অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজে অভিযান চালিয়েছি। তবে হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যারা নকল টিকার সঙ্গে জড়িত তারা আত্মগোপনে চলে গেছে।’ অভিযানের খবর পেয়ে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ থেকে দুই বস্তা নকল টিকা সরিয়ে ফেলার কথা জানান তিনি।
যারা নকল টিকা নিয়েছেন তাদের একটি তালিকা পেয়েছে ডিবির তদন্তকারী দল। সেই তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা ও পার্শ¦বর্তী ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে নারীদের দেওয়া হয়েছে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক নকল টিকা। স্থানীয়দের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা ও ছাত্রীরাও নিয়েছেন নকল ওই টিকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল ক্যাম্প থেকে টিকা নিয়েছেন শতাধিক নারী, পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৪ নারী, মেরিট পাবলিক স্কুল থেকে ১৮ জন।
এ ছাড়া বছিলা চাঁদ উদ্যান স্কুল, মানিকনগর স্কুল, প্রগতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মানিকদি সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, নর্থ সিটি পাবলিক স্কুল রয়েছে এই তালিকায়।
৩৫০ টাকা মূল্যের হেপাটাইটিস-বির টিকা ভেঙে চক্রটি নকল টিকা বানিয়ে বিক্রি করছে ২৫ হাজার টাকায়। এভাবে কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে তারা। নকল এই টিকা নিয়ে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন নারীরা।
চিকিৎসা সেবাদানকারী বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে জরায়ু ক্যানসারের টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন বনশ্রী এলাকার এক গৃহবধূ। তিনি দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। টিকা নেওয়ার পর তার শরীরে জ্বরের পাশাপাশি প্রচ- ব্যথাও অনুভব করেন। টিকার তৃতীয় ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ওই গৃহবধূ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম টিকা নিলে এমনিতেই শরীর খারাপ লাগে। এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম টিকাটি ভেজাল।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি এই টিকা নকল হয় তাহলে সরকারের যাদের দায়িত্ব ছিল এই টিকা দেওয়া কার্যক্রম দেখভাল করা, তাদের শাস্তি দাবি করছি।’
আরেক ভুক্তভোগী এক স্কুল শিক্ষিকা জানান, টিকা নেওয়ার পর তার শরীর ফুলে গিয়েছিল। পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে গেছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে তিন বছর ধরে জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা সারভারিক্স আমদানি হয় না। এ ছাড়া হেপাটাইটিস-বির টিকা ‘জেনেভ্যাক বি’ বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ। এরপরও চক্রটি পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে জেনেভ্যাক বি নিয়ে আসছে। বেশি আসছে বাংলাদেশের সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে।
প্রতারক চক্র একটি জেনেভ্যাক বি ভেঙে ১০টি নকল অ্যাম্পুলে ভরে জরায়ু ক্যানসারের ‘টিকা’ হিসেবে সরবরাহ করছে। যার একেকটি অ্যাম্পুলের দাম আড়াই হাজার টাকা। চক্রটি টিকা বাজারজাতকরণে বেসরকারি কিছু সংস্থার সহায়তা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, আল নূর ফাউন্ডেশন ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টার অন্যতম।
ডিবির একটি সূত্র বলছে, এসব ফাউন্ডেশনের শীর্ষ পযায়ের অন্তত ১২ জনকে নজরদারিতে রেখেছে ডিবি।
চক্রটির দেওয়া টিকা কার্ডে লেখা এ আর খান ফাউন্ডেশনের ফোন নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল-নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক এ এস ফারহান গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া শিপন একসময় আল-নূর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক ছিলেন। তাকে নানা অপকর্মের কারণে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি নকল টিকা দিয়ে থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
জানতে চাইলে ডিএমপির ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে জরায়ু ক্যানসারের প্রতিরোধমূলক টিকার নাম দিয়ে প্রতারণা করেছে। এদের সহায়তা করেছে কিছু কোম্পানি।’
তিনি বলেন, চক্রের মূল টার্গেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের মামলায় গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সরকার। তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে পাঠানো হলে বিচারক মো. ইকবাল হোসেন মাহিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেল ৫টায় একই আদালত মাহিকে জামিন দিয়েছে। ফলে আদালতের আদেশে মাহিকে গাজীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলেও জামিন পাওয়ার পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একই মামলার আসামি তার স্বামী রকিব সরকারকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
মাহিয়া মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট রিপন চন্দ্র সরকার জানান, ওমরাহ পালন করতে গিয়ে জানেন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া তিনি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং একজন সেলিব্রেটি হওয়ায় তার পালিয়ে যাওয়া আশঙ্কা নেই। তিনটি বিষয় বিবেচনা করে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। তিনি আরও জানান, এর আগে আদালতে ওঠানো হলে তার জামিন চাওয়া হয়নি। যার কারণে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখন আমরা তার জামিন চাইলে বিচারক দুটি মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। রাত পৌনে ৮টায় গাজীপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মাহি।
পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাহি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বের হওয়ার সময় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জমিসংক্রান্ত বিরোধে মারামারির ঘটনায় হুকুমের আসামি হিসেবে দুটি মামলা রয়েছে।
মাহিকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহির গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি জানান, চিত্রনায়িকা মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার মাহির ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশ পুলিশ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। তিনি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যাচার, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করছেন। বাসন থানার পুলিশ মাহির ফেসবুক আইডিতে প্রবেশ করে ঘটনার সত্যতা পায়। এ বিষয়ে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরপরই জিএমপির একদল পুলিশ মাহিকে গ্রেপ্তার করে সরাসরি বাসন থানায় নিয়ে যায়। আদালতে হাজির করা হলে বিচারক শুনানি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানের নির্দেশ দেন। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় মাহি বলতে থাকেন, আদালতে তাকে কোনো কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে বাসন থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মাহিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সৌদি আরব থেকে মাহি শুক্রবার ভোরে ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী ব্যবসায়ী-আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ওই ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ নিয়ে প্রতিপক্ষকে জমি দখল দেওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ করেন তিনি। দেশে ফিরলে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন।
একই লাইভে রকিব সরকার বলেন, গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার গাড়ির একটি শোরুম রয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার লোকজন নিয়ে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে হামলা চালিয়ে ওই শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর করে। অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা মাহির অভিযোগ তদন্ত করা হবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও এতিমখানায় খাবার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছি গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। এ জন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। এটা ভালো করে জেনে আমি বলতে পারব।’
মাহি তার স্বামীর শোরুম ভাঙচুর ও দখলের অভিযোগ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তদন্ত করা হবে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন একটা অভিযোগ আসে, তখন তদন্ত করতে হয়। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। মাহির বক্তব্য সঠিক কি না, কিংবা পুলিশ যেটা করেছে, সেটি সঠিক কি না, তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।’
রকিব সরকারের পুরনো তিন মামলা সচল হচ্ছে : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রকিব সরকারের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর ঘটনা সত্য, কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় সে সব মামলার পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছিল। পুলিশ যেকোনো সময় মামলাগুলো সচল করতে পারে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। আমরা মামলাগুলো খতিয়ে দেখছি।’
মারামারি মামলার বাদী যা বলেন : মারামারি মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রকিব জোর করে আমার জমি দখল করে রেখেছে। জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রকিব আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ আমি কেন মার খেলাম, কেন আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভিযোগ দিলাম?’
মামলায় যারা গ্রেপ্তার : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় আসামি মাহি ও তার স্বামী রকিব। আর মারামারি মামলায় আসামি ২৮ জন। এ মামলায় মাহি ও রকিব হুকুমের আসামি। এ মামলায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত মাহি ছাড়া আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ (৩৮), আশিকুর রহমান (৩২), ফাহিম হোসেন হৃদয় (২২), জুয়েল রহমান (২৫), জমশের আলী (৪৪), মোস্তাক আহমেদ (২২), খালিদ সাইফুল্লাহ জুলহাস (৩০), সুজন ম-ল (৩৪) ও মাহবুব হাসান সাব্বির (১৮)।
লাইভে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বলায় অনুশোচনা প্রকাশ : জামিনে মুক্তির পর গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় স্বামী রকিব সরকারের ফারিশতা রেস্টুরেন্টে যান মাহি। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করেনি। তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেও পুলিশ তাকে পানি দেয়নি। পুলিশ সদস্যদের বলেছিলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রচণ্ড গরমে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তারপরও তার প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়। বিমানবন্দরে কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে দেওয়া হয়নি।
মাহিয়া মাহি আরও বলেন, ফেসবুক লাইভে তিনি পুলিশ প্রশাসন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে তার স্বামী দেশে এলে তার সঙ্গে আরও বেশি খারাপ আচরণ ও হয়রানি করা হতে পারে।
ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলার কারণে ক্ষমা চাইলেও এই চলচ্চিত্র নায়িকা পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে সরে যাননি বলে উল্লেখ করেন। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তিনি এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন। মাহি বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমাদের গাড়ির শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুর করা হলো, অথচ পুলিশ উল্টো আমাদের এবং আমাদের কর্মচারীদের নামে মামলা দিয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।’ তবে তিনি কারা কর্র্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। কারা কর্র্তৃপক্ষ তাকে সম্মান দেখিয়ে মানবিক আচরণ করেছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী পাইপলাইন’ আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন। এটি বাংলাদেশের জ¦ালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। এই পাইপলাইনের মতো আগামী দিনেও আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত উদযাপন করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একই সঙ্গে কাজ করব।’
গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন। এর মাধ্যমে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি নয়াদিল্লিতে তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নবনির্মিত পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি। এই পাইপলাইনটি বাংলাদেশের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত করবে এই পাইপলাইন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি, আমরা ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করি। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে।’
বিগত বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে সমস্যাগুলো একে একে আমরা সমাধান করেছি। যোগাযোগ স্থাপন করেছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছি। আমরা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি। দুই দেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক, সেটাই আমরা চাই। আমরা বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে বিনিয়োগ করুক। তাতে আমরা দুই দেশই লাভবান হব।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) একজন কর্মকর্তা গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকাল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনের কমিশনিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেছেন। এর আগে কমিশনিংয়ের জন্য ৯৩ লাখ লিটার ডিজেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৭ লাখ লিটার সব সময় পাইপলাইনের মধ্যেই থেকে যাবে। বাকি ৪৬ লাখ লিটার ডিজেল গত শুক্রবার ডিপোতে জমা হয়েছে। পরে নতুন এলসি খোলার পর আবার তেল আসবে। এভাবে আমাদের চাহিদা এবং ভারতের সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এলসি খোলার মাধ্যমে ডিজেল আমদানি করা হবে।’
জ্বালনি বিভাগ সূত্র জানায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়ে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিপিসি এবং ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পাইপলাইনের মধ্যে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং বাকি ৫ কিলোমিটার ভারতে বসানো হয়েছে। নবনির্মিত এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছর ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করবে বিপিসি। এর মধ্যে প্রথম তিন বছর দুই লাখ টন, পরবর্তী তিন বছর তিন লাখ টন, তার পরবর্তী চার বছর পাঁচ লাখ টন এবং শেষ পাঁচ বছর ১০ লাখ টন তেল আমদানি করা হবে।
বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগন ব্যবহার করে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা হয়। পাইপলাইনের মধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী বার্ষিক প্রায় ২ দশমিক ৫ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। তবে সৈয়দপুর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হলে আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টন ডিজেল আমদানি করা যাবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির ফলে পরিবহন লস ও পরিবেশদূষণ হ্রাসের পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা আরও নির্বিঘ্ন ও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, প্রতিকূল পরিবেশেও পার্বতীপুরে তেল বিপণন কোম্পানির স্থাপনা হতে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে সাশ্রয়ী উপায়ে। পাশাপাশি সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহ সহজ ও নির্বিঘ্ন হবে। নতুন পাইপলাইন চালুর ফলে পার্বতীপুরে জ্বালানি তেলের মজুদের ক্ষমতা ২৯ হাজার টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ হাজার টনে উন্নীত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় বর্তমানে জাহাজে করে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ১১ দশমিক ৫০ ডলার। পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানির ফলে ব্যারেল প্রতি ৬ ডলার সাশ্রয় হবে।
আপনার পকেটে মাত্র ৫০ টাকা আছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টও শূন্যে। হঠাৎ আপনার পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। কল করলেন নির্দিষ্ট কল সেন্টারের নম্বরে। পরিস্থিতি শুনে কল সেন্টারের কর্মী বললেন একটু পরে একজন চিকিৎসক আপনাকে কল করবেন, অপেক্ষা করুন। ফোন সেটটি হাতে রাখুন। কল গেলে রিসিভ করবেন। মিনিট-দুই পর কল এলো। অপর প্রান্ত থেকে ডাক্তার তার পরিচয় দিলেন। রোগীর অবস্থা জানতে চাইলেন। রোগী কথা বলতে সক্ষম কি না জানতে চাইলেন। কষ্ট হলেও রোগী যতটুকু সম্ভব কথা বললেন। কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। এরপর আবার আপনার সঙ্গে কথা বললেন ডাক্তার। বললেন, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রোগী গাড়িতে নাকি-ট্যাক্সিতে যাবেন তাও জানতে চাইলেন। বললেন, অ্যাম্বুলেন্স দরকার নেই। অ্যাম্বুলেন্স শুধু মুমূর্ষু রোগীদের জন্য।
আপনার নিজস্ব গাড়ি নেই। নিজ খরচে ট্যাক্সিতে হাসপাতালে পৌঁছালেন। কিছু টাকা আপনার পকেটে থেকে গেল। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া আর খালি পকেট তো একই কথা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাউন্টারে রোগীর জন্ম-তারিখ আর নামের শেষাংশটুকু বললেন। কাউন্টার থেকে শুধু আপনার বাসার ঠিকানা শুনিয়ে ভর্তি কনফার্ম করা হলো। কয়েক সেকেন্ডে ওই তিনটি তথ্যসংবলিত লম্বা স্টিকার রোগীর হাতে ব্রেসলেটের মতো পরিয়ে দেওয়া হয়। ছুটে আসেন একজন ডাক্তার ও একজন নার্স। রোগীকে নিয়ে যায় একটি রুমে। নার্স রোগীর হাত থেকে রক্তের স্যাম্পল নেন। ডাক্তার কম্পিউটারে রোগীর মেডিকেল হিস্টরি দেখতে থাকেন। একই সঙ্গে চলে চেকআপ। নার্স ইসিজি করেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার জানান, রোগীর গলব্লাডারে স্টোন আছে। রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হবে। সার্জারির প্রয়োজন হবে। কাল-পরশুর মধ্যেই।
রাত ৩টা। ডাক্তার আপনাকে বললেন, বাসায় চলে যান। চিন্তার কোনো কারণ নেই। রোগীর দায়িত্ব আমাদের। ডাক্তার জানতে চাইলেন, কীভাবে যাবেন? নিজের গাড়ি আছে? ‘না’ জবাব শুনে বললেন, এখন তো বাসও বন্ধ হয়ে গেছে। আচ্ছা, আমরা ট্যাক্সি ডাকার ব্যবস্থা করছি। হাসপাতাল থেকে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবে না।
বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভিজিটর এলাউড। আপনি বা যে কেউ প্রতিদিন ওই সময়ে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। রোগী পরের চার দিন হাসপাতালে থাকল। একটা ইআরসিপি ও একটা ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি হলো। ওষুধ হাসপাতাল থেকেই। খাওয়া-দাওয়াও। ডাক্তার প্রতিদিন আপনাকে কাছে বসিয়ে হাসিমুখে ব্রিফ করবেন। প্রশ্ন আছে কি না জানতে চাইবেন। কোনো আপত্তি আছে কি না জানতে চাইবেন। রোগীকে নিয়ে তাদের চিকিৎসা-পরিকল্পনার উপকার ও ঝুঁকির কথা খোলামেলা জানান রোগীর সামনেই।
চার দিন পর রোগীর দরকারি ওষুধ আর একটি নির্দেশনাপত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এবার রোগী নিয়ে বাসায় যান। বাসায় কোনো সমস্যা হলে নির্দিষ্ট নম্বরে কল করবেন। একটি ফরমে সই দিয়ে আপনি বাসায় চলে এলেন।
এটি একটি পাবলিক হাসপাতাল, যার সেবার মান ও পরিবেশ বাংলাদেশের ইউনাইটেড, স্কয়ার, এভারকেয়ার হাসপাতালের চেয়েও উন্নত। হাসপাতাল থেকে যখন আপনি বিদায় নিলেন কেউ আপনার পথ আটকায়নি। বিলের কাগজ ধরিয়ে দেননি কিংবা বিল কাউন্টারে যেতে বলেননি। কত খরচ হলো আপনি জানতেও পারবেন না। তবে ধারণা করতে পারবেন কত বিল হতে পারে।
গল্পটা সত্য। পুরনো নয়, নতুন। দিন-কয়েক আগের। গল্পটা আমার। পাঠক হিসেবে যাতে উপলব্ধি করতে সহজ হয় তাই আমার জায়গায় আপনাকে বসিয়েছি। গল্প না বলে যদি ঘটনা বলতে চান তাও পারেন। ধরা যাক এটা গল্পই। গল্পটা বাংলাদেশের নয়, নেদারল্যান্ডসের। হিসাবটা টাকার নয়, ইউরোর। বাংলাদেশ কল্পনা করে হিসাবটা টাকায় বুঝে নিতে পারেন। এবার গল্পটা শেয়ার করার উদ্দেশ্যে আসা যাক।
নেদারল্যান্ডসে যা বাস্তব বাংলাদেশে তা কল্পনা। কিন্তু বাংলাদেশে কী তা একেবারে অসম্ভব? বাংলাদেশ কি এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে না? আমি বলি বাংলাদেশও পারে, পারবে। যারা সক্ষমতার দোহাই দেন তারা হয় বুঝে বলেন বা স্বার্থক্ষণœ হওয়ার আশঙ্কায় বলেন। শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এ ব্যবস্থা কার্যকর। এটা সম্ভব হচ্ছে স্বাস্থ্যবীমার কারণে। ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায়। সমৃদ্ধিশালী দেশগুলো যেমন স্বাস্থ্যবীমাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে, তেমনি মধ্যম আয়ের বা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও স্বাস্থ্যবীমার আওতায় চিকিৎসাসেবা রয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিনা খরচে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেবা নেওয়া যায়। কোনো দেশে হয়তো এ জন্য একটা সার্ভিস কার্ড লাগে। কোথাও তাও লাগে না। একটা শনাক্তকরণ নম্বর হলেই চলে।
এ ব্যবস্থা কিন্তু একদম ফ্রি নয়। টোকেন মানি দিতে হয়, যেটা হচ্ছে ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম। অবস্থা ও রোগের প্রকারভেদে কারও কম, কারও বেশি। পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় বিধানের মাধ্যমে ইনস্যুরেন্সধারী রোগী যখন হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে বাধ্য। হাসপাতাল ছাড়াও নিয়মিত চেকআপের জন্য এলাকায় এলাকায় নিযুক্ত জেনারেল প্র্যাকটিসের সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া হয়। যাবতীয় বিল নিয়ে নেওয়া হয় রোগীর সংশ্লিষ্ট ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে।
ইনস্যুরেন্স না থাকলে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে নগদ টাকা দিয়ে। ঠিক বাংলাদেশের মতো। ধরুন বাংলাদেশে মাসে ১৪৫ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে যদি প্রয়োজনমতো চিকিৎসা পাওয়া যায় খরচ ছাড়াই তাহলে তা কেন দেবেন না! মাসিক প্রিমিয়াম আরেকটু বেশি হলেও ক্ষতি নেই, বরং উপকারই হবে।
এখন দেশে ঘরে ঘরে রোগের প্রকোপ। মাসে গড়ে হাজারের বেশি টাকা চিকিৎসা-ব্যয়। অনেকে খরচের ভয়ে রোগ পুষে রাখেন। সহসা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। বিনামূল্যের কথা বলা হলে সরকারি হাসপাতালেও এখন অনেক খরচ। প্রাইভেট হাসপাতালে তো মানুষের দিশেহারা অবস্থা। একদিকে রাষ্ট্র ব্যয় করছে, মানুষও ব্যয় করছে পকেট থেকে। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে মুনাফা লুটে নিচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের ব্যবসায়ী চক্র। চিকিৎসকরাও এ চক্রের সঙ্গেই আছেন।
বাংলাদেশে আছে জুজুর ভয়। আছে স্বার্থগোষ্ঠীর বাধা। চিকিৎসা ব্যবসায়ীরা বাধা দেন, বাধা হয়ে দাঁড়ান চিকিৎসকদের অনেকে। তারা মনে করেন, দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে তাদের বাণিজ্য বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। যারা চিকিৎসা-বাণিজ্যের নামে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয় সেই পথ তো বন্ধ হতেই হবে। যেসব দেশ স্বাস্থ্যবীমা চালু করেছে, সেখানে চিকিৎসার নামে বাংলাদেশের মতো এমন বাণিজ্য নেই। চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায় না। সেখানে পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় খাতের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ লাভজনক।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে কাজ করছে প্রায় এক যুগ ধরে। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের এই কার্যক্রমের মডেলেই গলদ মনে করেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। স্বাস্থ্যবীমার কাজে গতি এলেই কোনো কোনো মহল বলার চেষ্টা করে, রাষ্ট্র এখনো স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত সাবসিডি দিতে সক্ষম নয়। কোনো রাষ্ট্রই ফ্রিতে চিকিৎসা দেয় না। হেলথ প্রিমিয়াম দিতে মানুষ অক্ষম।
সচ্ছল, সক্ষম মানুষদের প্রিমিয়াম থেকে প্রয়োজনমতো অসচ্ছল মানুষদের পেছনেও ব্যয় করা যায় যদি সদিচ্ছা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে ধনীদের প্রিমিয়ামের দিকে তাকাতে ভয় পান নীতিনির্ধারকরা। আগেই পরিকল্পনা করা হয় সরকারি টাকায় গরিবের কাছে ছুটে যাওয়ার। ফলে অজুহাত খাড়া করতে বেগ পেতে হয় না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয় না।
ইনস্যুরেন্স খাতের যারা স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে নড়াচড়া করেছেন তারাও প্রচলিত ধারার ঠিকাদারি মডেলের মধ্যেই থাকেন। নীতিনির্ধারকদের উপযুক্ত মোটিভেশন দিতে পারছেন না তারা। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান ছোট আকারে স্বাস্থ্যবীমার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলছে সাফল্যের সঙ্গে। দরকার সফল জাতীয় তৎপরতা।
মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা জরুরি। ধনী-গরিব সবার। মানুষের চিকিৎসাব্যয়ের ৭৪ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। বছরে হাজারো পরিবার শুধু জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে এ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে ফেঁপে উঠছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের বাণিজ্য।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। রাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন পরিকল্পিত কর্মকৌশল। মানুষ ভালো সিস্টেমকে স্বাগত জানায়, গ্রহণ করে।
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনঘনত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এক-তৃতীয়াংশ নগর সুবিধায় ঢাকায় চার গুণের বেশি মানুষের বসবাস। অবকাঠামো বিবেচনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ বহন করছে দেশের রাজধানী শহর।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০-১২০ জন বসবাস করে। ঢাকায় বর্তমানে একর প্রতি বসবাস করছে ৪০০-৫০০ জন।
দুই সিটিতে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
রাজউকের ড্যাপের তথ্যমতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ ভাগ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ ভাগ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ ভাগ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
ড্যাপে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার লালবাগ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫১ জন মানুষ বসবাস করে। জনঘনত্বের দিক থেকে যা বিশে^র সর্বোচ্চ। চকবাজারে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন মানুষ বসবাস করে। যা বিশে^ তৃতীয়। কোতোয়ালিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৩ জন বসবাস করে। যা জনঘনত্বের দিক থেকে বিশে^ দশম।
রাজউকের নগরপরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে মূল ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। এ জন্য ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সেখান থেকে ঢাকার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের জন্য অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে মূল ঢাকার জনঘনত্ব কমবে। আর জনঘনত্ব কমলে মূল ঢাকা অনেকাংশ বসবাস উপযোগী হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ঢাকায় জলাভূমি ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমেছে ১৩৪ বর্গকিলোমিটার। আর এ সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কংক্রিট। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটি এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ কংক্রিট আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে।
পরিকল্পনাবিদদের এ সংগঠটি বলছে, পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে সড়ক থাকা দরকার ২৫ শতাংশ, জলাশয় ১৫ শতাংশ, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান থাকা দরকার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ নাগরিক সুবিধার জন্য ৬০ ভাগ জায়গা খালি থাকা দরকার। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মার্কেট গড়ে উঠবে। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অন্যান্য বিবেচনায় সড়ক, জলাশয়, সবুজ ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে কোনো শহরের ৪০ ভাগের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
নিরাপত্তার বিবেচনায়ও ঢাকা যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সেটা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৫ শতাংশ। আর গত বছর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গ্লোবাল লাইভবিলিটি ইনডেক্স অনুসারে ঢাকা বিশে^র সপ্তম কম বসবাসযোগ্য শহর।
চলতি মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সাড়ে আট ভাগ সবুজ রয়েছে। ঢাকার উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয়কেন্দ্রিক সুবজ এলাকা ধরে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার বর্তমান সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ। আর জনসংখ্যা রয়েছে চার গুণ অর্থাৎ, ঢাকা অবকাঠামোর তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ নিয়ে চলেছে। ভালো হতো ১২ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা থাকলে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাস্তবতা বিবেচনায় চাইলেই আদর্শ জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ইচ্ছা করলেই এখন সড়কের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে এখনো কিছু উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। সেটা হলো, বিদ্যমান সড়কগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
ড. আদিল বলেন, ‘ঢাকার উন্মুক্ত জায়গা বাড়ানো তো দূরের কথা, যেগুলো আছে সেগুলোও টিকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। এ জন্য পলিসি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এখনো ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট ছোট উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের ড্যাপের কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ঢাকার জনঘনত্ব কমানো এবং গণপরিসর বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে ঢাকায় নতুন কোনো কর্মস্থান সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন শিল্প, কলকারখানা এবং অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাহলে জনসংখ্যার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা হয় বাস্তবায়ন হয় না : ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে নগরপরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে ব্রিটিশরা। এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ধারণাপত্র বলা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টিপ্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতা ধরে বিশদ পরিকল্পনার সুপারিশ করেন ওই নগরপরিকল্পনাবিদ। কিন্তু ওই সুপারিশের আর বাস্তব রূপ পায়নি। সে সময় ঢাকার চারদিকে চারটি নদীর পাশাপাশি শহরে অনেক খালও ছিল। একসময় শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ত। ফলে জলাবদ্ধতা হতো না। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ।
এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ।
বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ঢাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি ধরা হতো। রাজউকের নেতৃত্বে প্রণয়ন করা এ মাস্টারপ্ল্যানের নাম ড্যাপ। মাস্টারপ্ল্যানটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গঠনের সূচকের বিবেচনায় ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। তবে ৩০ ভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য ড্যাপ সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এবারের ড্যাপে ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে এমন কিছু চরিত্র আছে, যারা সব সময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে এরা নীতিনির্ধারকও হয়ে ওঠে। ক্ষমতার মধু আহরণে এরা সামনের কাতারে থাকলেও, পালাবদলের আগেই ওরা রূপ পাল্টাতে শুরু করে! ওদের কাছে কি কোনো বার্তা আছে বদলে যাওয়া বা বদলে ফেলার বার্তা?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রবাসের মাটিতে কেমন যেন একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হতাশা, অনিশ্চয়তা নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, এরাও যেন দৃশ্যপটে আসতে শুরু করেছে। রূপ পাল্টে যারা আওয়ামী সেজে এতদিন চারদিক দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, খোলস পাল্টাতে এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করেছেন, প্রবাসের মাটিতে এরা রূপ পাল্টিয়ে ইতিমধ্যে নতুন রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এরা কি তাহলে নতুন কোনো আগমনী বার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন? কী সেই বার্তা? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার মালিক জনগণ, আর তার একমাত্র উপায় গণভোট। এখনো সেই গণভোটের বাকি এক বছর, তাহলে বসন্তের কোকিলদের মাঝে এত দৌড়ঝাঁপ কেন?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা নামের লগ্নিকারকদের দারুণ প্রভাব। সরকার ও রাজনীতিতে আড়ালে-আবডালে এরা নানাভাবে কলকাঠি নাড়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা পরিচয়ে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নানারকম কর্মকা- চালায়। সোজাসাপ্টা ভাষায়, আমরা যাদের ডিপ্লোমেট বা কূটনীতিক নামে চিনি, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়েও এরা তৎপর হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে মানবাধিকারের নামে চাপাচাপির বার্তা চালায়।
প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ আসতেই পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, তাদের মানবাধিকার তখন জাগ্রত হলো না!
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ যারা নিহত হলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হলো, পার্লামেন্টারিয়ান আহসান উল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক, অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হলেন, তখনো এদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না! সাঈদীকে চাঁদ দেখার গুজব রটিয়ে শত শত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অঙ্গার হয়ে অসার দেহ পড়ে থাকল, তখনো তাদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না!
একুশ বছরে বিকৃত ইতিহাস জেনে গড়ে উঠে একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস-ই সত্যরূপে আবির্ভূত হয়। গত এক যুগে একাত্তরের পরাজিত আদর্শের অনুসারী একদল সুবিধাবাদী রঙ পাল্টিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এই ধারাটি শুধু দেশে নয়, প্রবাসের মাটিতেও সক্রিয় ছিল। কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ দেখে এরা আবারও রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন ‘জয়বাংলা’ বলে যারা হুঙ্কার ছেড়েছিল, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে তাদের আপত্তি!
অগ্নিঝরা মার্চ আর বিজয়ের ডিসেম্বর! এ মাস দুটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অর্জনের মাস। তবুও এ মাসগুলোতেই যেন কিছু মানুষের হৃদয়ের দহন বেড়ে যায়! যন্ত্রণায় এদের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মাকে শীতল করতে এরা প্রচন্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এর অন্তরালে কাজ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী হীন প্রচেষ্টা। এই ঘৃণ্য অপশক্তির প্রথম টার্গেট ছিল ১৫ আগস্ট।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। পনেরো আগস্ট, ৩ নভেম্বর বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। প্রবাসে থাকলেও এসব দিবসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। ২০২২-এর বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজকদের মতে, প্রবাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকশিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। উপস্থিত বারোজন সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধার একজন বাদে কেউই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলেননি! এ মহান নেতার নামটিও উচ্চারণ করেননি। সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে চলার এমন হীন চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবজ্ঞা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছেন, তবুও চারদিকে এত ষড়যন্ত্র কেন?
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক শাসক দলের ব্যাপক ক্ষমতাবান নেতাদের মুহূর্তে কপর্দকহীন করে শেখ হাসিনা তাদের আইনের মুখোমুখি করেছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে রেল আর সড়ক যোগাযোগে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবধি বিস্তৃত হচ্ছে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ বড় বড় মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এতসবের পরও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আবারও বঙ্গবন্ধুর নামকে মুছে দিতে দেশি-বিদেশি লম্ফঝম্ফ দৃশ্যমান হচ্ছে! স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এরা দেশপ্রেমের ছদ্মাবরণে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সোল এজেন্ট, এদের রুখতেই হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও উন্নয়ন গবেষক
ক্যালগেরি, কানাডা
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর ৫টায় দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান এলাকার নিজ বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর একটি দল।
স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকার আলোচিত রিপোর্টটির কারণে তাকে আটক করা হয়েছে বলে সিআইডির দলটি উপস্থিত ব্যক্তিদের জানিয়েছেন।
এভাবে গভীর রাতে তল্লাশি চালিয়ে একজন সংবাদকর্মীকে আটক বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর চরম আঘাত বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বানানোর পর থেকেই বিরোধী মতের রাজনৈতিক কর্মীরা যেমন মতপ্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তেমনি গণমাধ্যম কর্মীরাও নির্যাতিত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামসহ সারাদেশে বহু গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরই সরকারি সংস্থা কিংবা দলের লোকের নির্যাতনের খবর এসেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। সেই সাথে গণমাধ্যম কর্মীসহ মত প্রকাশের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তাদের মামলা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবী জানান নেতৃবৃন্দ।
চারদিকে পাহাড় ও সবুজের অরণ্য। এই সবুজ বিনাশ করে সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। পাহাড়ি এলাকায় সড়ক নির্মাণের প্রকৌশলগত জ্ঞানের অভাব কিংবা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসের আওতায় চলে যাওয়া বা রেল লাইনের ওপর ব্রিজ নির্মাণসহ নানা জটিলতায় একের পর এক আটকে যাওয়া প্রকল্পটি ইতিমধ্যে ২৭ বছর পার করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ও পরিমার্জনে শুরুর ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প এখন ৩৫৩ কোটিতে পৌঁছেছে। তারপরও শেষের দেখা নেই ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ডিটি-বায়েজীদ (বায়েজীদ লিংক রোড) সংযোগ সড়কের।
দীর্ঘদিন ধরে রেললাইনের ওপরে নির্মিত ব্রিজের কাজ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার পর এখন চলছে। গত সপ্তাহে দেখা যায়, রেললাইনের ওপরের অংশে গার্ডার বসানোর কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতদিন রেললাইনের উভয় প্রান্তে গার্ডার বসলেও রেললাইনের ওপরের অংশে খালি রাখা হয়েছিল। রেললাইন বিড়ম্বনার পাশাপাশি রোডের গা ঘেঁষে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে রাস্তার ওপর পড়তে পারে এবং এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। অর্ধকাটা এসব পাহাড় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও রোড নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মধ্যে বিরোধ চলছে। পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। অর্ধকাটা এসব পাহাড় কেটে ঝুঁকিমুক্ত করার বিষয়ে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এখনো এর সুরাহা নেই। যথারীতি আরেকটি বর্ষা আসছে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে খাড়া পাহাড়। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতি হতে পারে সেই শঙ্কায় গত বছর বর্ষায় এই রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। এবারও কি একই পথে হাঁটতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় রোড বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাহাড়ের বিষয়টি নিয়ে এই সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের মিটিং রয়েছে। আশা করছি বিষয়টি সুরাহা হবে।’
এদিকে পাহাড় নিয়ে সুরাহার পথ সুগম হলেও জনগণের যাতায়াতের ওপর টোল বসাচ্ছে সিডিএ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে নগরবাসীর চলাচলের কোনো পথে টোল নেই (কর্ণফুলী সেতু ও টোল রোড ছাড়া)। এরমধ্যে টোল রোডটি শুধুমাত্র পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য নির্মিত। কিন্তু ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়কে টোল যুক্ত হতে যাচ্ছে। ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার ৩৫৩ কোটি টাকায় বর্ধিতকরণের অনুমোদনের সময় অতিরিক্ত ৩৩ কোটি টাকা টোল আদায়ের মাধ্যমে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘রোড মেইনটেনেন্স আমরা করব। একইসঙ্গে সড়কবাতি স্থাপন, রেললাইনের ওপরে ব্রিজ নির্মাণ, নালা সংস্কার কাজগুলো নতুন করে করা হবে।’ টোল প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘টোল প্লাজা বসবে ফৌজদারহাট অংশে। শহর প্রান্ত দিয়ে এসে টোল প্লাজা ক্রস করলেই শুধুমাত্র টোল দিতে হবে। রোডের সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে গেলে টোল দিতে হবে না।’
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চলতি বছরের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে দ্বিতীয় ব্রিজটি চালু করে আনুষ্ঠানিকভাবে তা ওপেন করে দিতে চাই। যদিও ইতিমধ্যে এই রোড দিয়ে অনেক যান চলাচল করছে। কিন্তু ওভারব্রিজটি চালু না করায় তা পূর্ণতা পায়নি।
টোল কবে থেকে যুক্ত হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আগামী বছর থেকে টোল যুক্ত হতে পারে।’
সড়কের ইতিবৃত্ত বায়েজীদ বোস্তামী রোডের সঙ্গে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডকে (ডিটি রোড) যুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রায় ছয় কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকার ওপর দিয়ে এই রোড নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ৪০ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের অধীনে ব্যাপক হারে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করলেও বর্ষা এলেই পুরো রাস্তাসহ পাহাড়ি ঢলে চলে যেত। ফলে প্রকল্পটি বারবার হোঁচট খায়। এই প্রকল্পের মাঝখানের এক কিলোমিটার অংশ আবার এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন করার সময় তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়ে নতুন করে বাঁক নিয়ে সড়কের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। দুই লেনের সেই প্রকল্প প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এসে আবারও নকশায় পরিবর্তন। এবার দুই লেনের পরিবর্তে চার লেনে উন্নীত করা হয়। যথারীতি বাজেট ৩২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০২১ সালে এসে তা ৩৫৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
প্রথমবারের মত মা হলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাহির স্বামী রাকিব সরকার।
তিনি জানান, মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন। পুত্রের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি।
২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে রাজশাহীর মেয়ে মাহির। পরবর্তীতে ‘অগ্নি’ ‘কী দারুণ দেখতে, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’সহ বেশ কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
দুই বছর আগে গাজীপুরের ব্যবসায়ী রকিবকে বিয়ে করেন মাহি। তার কয়েক মাস আগে পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মা হচ্ছেন বলে খবর দিয়েছিলেন এই চিত্রনায়িকা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’