
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
‘শুরু থেকেই বাস দ্রুতগতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলেন। কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমোচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত আর লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে।’ এভাবেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করছিলেন পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বাসের যাত্রী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর যুবক উজ্জ্বল। মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীবাহী এই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে কুতুবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত ইমাদ পরিবহনের বাসটি গতকাল ভোর সাড়ে ৪টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর পদ্মা সেতুর আগে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারায় সেটি। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে নিচে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটির সামনের অংশ একেবারে দুমড়েমুচড়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়েতে এটিই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১৪ জন মারা যান। পরে আহতদের উদ্ধার করে শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনজন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। আহতদের শিবচরের এবং ঢামেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই শুরুতে স্থানীয় মানুষ এগিয়ে আসেন উদ্ধারকাজে। পরে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস যোগ দেয়। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে ৫৪টি আসন ছিল, তবে যাত্রী ছিলেন কমপক্ষে ৬০ জন।
এ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে জেলা প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ইমাদ পরিবহনের বাসটি খুলনা থেকে ভোরে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী তোলে।
নিহতদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ ছিল শিবচরে। তাদের সবার লাশ পরিবারের কাছে বিকেল ৩টার মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে যাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয় তারা হলেন গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোস্তাক আহমেদ, সদর উপজেলার নশর আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি ও মুকসুদপুর এলাকার আমজেদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী, খুলনার সোনাডাঙা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন, সাউথ মেন্টাল রোড এলাকার চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসূন ঘোষ, ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদুখার ছেলে মহাদেব কুমার সাদুখা, আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন, বাগেরহাট জেলা শহরের শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার, ফরিদপুরের হিদাডাঙ্গা এলাকার সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন, নড়াইলের লোহাগড়া এলাকার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে ও ইমাদ পরিবহন বাসটির চালক জাহিদ হাসান, চালকের সহকারী মিরাজ এবং পাবনার সুজানগরের গহর আলীর ছেলে ইউসুফ আলী।
আর ঢামেক হাসপাতালে ছিল মিনহাজ বিশ্বাস (২০) ও শেখ আলী আকবরের (৭৫) লাশ। মিনহাজ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদী গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে। আর আলী আকবরের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায়।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেছেন, ‘অতিরিক্ত গতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দুর্ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এতে সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির, বুয়েটের এআরআইয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ-ই রাব্বি এবং মাদারীপুর বিআরটির সহকারী পরিচালক নুরুর হোসেন। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানান শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের সহায়তা : দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
খুলনা থেকে ১৭ যাত্রী নিয়ে ছাড়ে বাসটি : খুলনা থেকে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছিল। পথে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও গোপালগঞ্জ থেকেও আরও যাত্রী ওঠে বাসটিতে। খুলনার রয়্যাল মোড়ের কাউন্টার মাস্টার মো. শাফায়েত হোসেন মামুন জানান, ভোরে চারজন যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের বাসটি সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যায়। সেখান থেকে আরও কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ইমাদ পরিবহনের খুলনা জোনের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘ভোরে খুলনার ফুলতলা থেকে একজন যাত্রী নিয়ে বাসটি রয়্যাল মোড়ের কাউন্টারের সামনে আসে। রয়্যাল মোড় থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যায়। এখান থেকে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও গোপালগঞ্জ থেকে আরও যাত্রী ওঠে বাসটিতে।’
সোনাডাঙ্গা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে ওঠা যাত্রী রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন। তিনি পেছনের সিটে বসা ছিলেন। কীভাবে কী ঘটে গেল তা তিনি বলতে পারছেন না।
ঢামেকে চিকিৎসার জন্য ৯ জন : শিবচরের দুর্ঘটনায় আহতদের ঢামেক হাসপাতালে আনার আগে দুজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও ভর্তি রয়েছেন তিনজন। বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে চলে গেছেন। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে তাদের উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। আহতরা হলেন বাসযাত্রী ফয়সাল আহমেদ (৩৬), আ. হামিম (৫০), বদরুদ্দোজা (৩০), পঙ্কজ কান্তি দাস (৪০), ঝুমা (৩৪), বুলবুল আহমেদ (৫০) ও এনামুল (৩৫)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘মাদারীপুরের দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ৯ জনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থাতেই নিয়ে আসা হয়েছিল। আহতদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে পঙ্কজ কান্তি দাস, ঝুমা ও বুলবুল ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থা গুরুতর। বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে চলে গেছেন।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন মাদারিপুর (শিবচর) প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও ঢামেক প্রতিনিধি
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬
এদিকে রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বগুড়া, যশোরের মনিরামপুর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও মাগুরায় পুলিশ সদস্যসহ আরও চারজন নিহত হয়েছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকা : গত শনিবার রাতে দুর্ঘটনায় নিহত হন কোরবান ব্যাপারী (৩০) ও শাহাবুদ্দিন (৩০)। নিহত কোরবান ব্যাপারীর বাড়ি শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলায়। তার বাবার নাম মৃত আবদুল হক ব্যাপারী। রাজধানীর শ্যামপুর ফরিদাবাদ লেনে থাকেন তিনি। নিহতের বড় ভাই সাদিকুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিল কোরবান। ফরিদাবাদ স্কুলের সামনে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে সে। এতে সে ওই ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়। তাকে উদ্ধার হাসপাতালে নিলে রাত ২টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে নিহত শাহাবুদ্দিনের ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান জানান, শাহাবুদ্দিনকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কদমতলী ধলেশ্বর ঘাটে একটি বালুর ট্রাক ধাক্কা দেয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত দেড়টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
বগুড়া : বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জামাদার পুকুর এলাকায় ট্রাকের চাপায় আনুমানিক ৩৩ বছর বয়সী সাব্বির হোসেন নামে এক মোটরসাইকেলের চালক নিহত হয়েছেন।
মনিরামপুর (যশোর) : যশোরের মনিরামপুরের বটতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় এম এ খালেক (৪৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : সদর উপজেলার ব্র্যাকমোড়ে বালুবোঝাই ট্রাক্টরের চাপায় শিশু মেরাজ হোসেন (৪) নিহত হয়।
মাগুরা : মাগুরার রামনগর এলাকায় বাসের ধাক্কায় লাবনী ভদ্র (২৬) নামে এক নারী পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন লাবনী ভদ্রর স্বামী পুলিশ কনস্টেবল প্রসেনজিৎ বিশ্বাস (২৯) ও মেয়ে অঙ্কিতা বিশ্বাস (৪)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন মা-বাবার একমাত্র সন্তান সুইটি (২০)। বাসা নিয়ে থাকতেন রাজধানীর মিরপুরে। কিছুদিন আগে ছুটিতে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া এলাকায় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। গতকাল রবিবার সকালে বাবা মো. মাসুদ মিয়ার সঙ্গে বাসে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জ থেকে তারা উঠেছিলেন ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে। দুর্ঘটনায় বাবা মাসুদ মিয়া বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সুইটি।
মাসুদ মিয়ার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া গ্রামে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন। এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত। আহত মাসুদকে ভর্তি করা হয় শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার ইসলামিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে অঝোরে মেয়ের জন্য কাঁদছেন এই বাবা। শুধু মাঝে মাঝে বলে উঠছিলেন, ‘আমার মেয়েটা জীবিত আছে ভাই?’
সার্টিফিকেট আনা হলো না আফসানার, রোজার কেনাকাটা হলো না মাসুদের : এমএস সার্টিফিকেট আনা হলো না ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানা মিমির (২৬)। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার থেকে এমএস করেছেন। আফসানার এই সার্টিফিকেট আনাই যেন কাল হলো। এসব কথা বলে চিৎকার করে আর্তনাদ করছিলেন আফসানার মা কানিজ ফাতেমা। তার আহাজারিতে আশপাশের লোক জড়ো হয়ে তাকে সান্ত¡Íনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। গতকাল সকালে মা কানিজ ফাতেমা ও ছোট বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপা গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে আফসানাকে ইমাদ পরিবহনের বাসে উঠিয়ে দেন। তার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আফসানার বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ছোটবেলাতেই আফসানার বাবা মারা যান। অনেক কষ্ট করে আফসানা ও তার বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন মা কানিজ ফাতেমা।
অন্যদিকে মুকসুদপুরের মাসুদ খানের (৩০) মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আদমপুরে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা পাগলপ্রায়। নিহত মাসুদ খান আদমপুর গ্রামের আঞ্জু খানের ছেলে।
মাসুদের মা সুফিয়া বেগম আদরের ছোট সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাসুদ। এমএ পাস করে ঢাকা পাসপোর্ট অফিসের সামনে একটি দোকানে অনলাইনের কাজ করে। প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসে আমাকে দেখার জন্য। আজ বাড়ি থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় বলে গেছে, “মা, আগামী সপ্তাহে বাড়িতে আসার সময় রোজার বাজার করে নিয়ে আসব।” আমার সন্তান কি রোজার বাজার নিয়ে আর আসবে না?’
প্রতারণার মাধ্যমে জোর করে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি দখলের পাশাপাশি বন, নদী, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে বরগুনায় বেসরকারি উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা, নদীরক্ষা কমিশনের আপত্তি, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা কোনো কিছুই আটকাতে পারেনি এ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পর কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা খোলা নৌযানে পরিবহন করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও গত ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের স্ট্যাম্প ডিউটিবাবদ ১ হাজার ২৩ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার ৬১৮ টাকার কর মওকুফ করেছে সরকার।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে চুক্তি করে। বরগুনার তালতলী উপজেলার বিষখালী, পায়রা ও বলেশ^রের মোহনায় নদীর প্লাবন ভূমি দখল করে নির্মিত এ কেন্দ্রটি গত ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির দায়িত্বশীল সূত্রমতে, চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হলেও ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা এবং নদীরক্ষা কমিশনের আপত্তির কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। জটিলতা নিরসন হওয়ার পর ১ জানুয়ারি থেকেই কেন্দ্রের মালিককে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করা হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, অবৈধ দখলকৃত জমি কীভাবে বৈধ করা যায় সে জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে কেন্দ্রের মালিক। বিষয়টি সুরাহা করতে সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভাও হয়েছে।
চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড এবং বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহাযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের দৈনিক পরিচালন প্রতিবেদনে বিসিপিসিএল বা বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডকে কেন্দ্রটির উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রটি বিসিপিসিএল নয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
প্রকল্পের শুরুতে এ কেন্দ্রের ৪ শতাংশ মালিক দেশীয় প্রতিষ্ঠান আইসোটেকের এমন তথ্য জানানো হলেও এখন তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বনানীতে তাদের যে অফিস ছিল সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল আলমের মোবাইল নম্বরটি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে বন্ধ। তবে একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো মালিক এখন চীনা কোম্পানি চায়না রিসোর্স।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাও জিংকে ফোন করা হলে তিনি ইমেইলে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তীকালে তথ্য চেয়ে ইমেইল করার পর প্রায় এক মাস অপেক্ষা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রটির অংশীদার এবং তাদের কর্মকা- নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা। বিষয়টি জানতে পিডিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে এবং মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
নদীর জমি দখল করে নির্মিত এ কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছর তিনেক আগে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে নদীর জমিতে নির্মাণাধীন ওই কেন্দ্রের নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ করেন। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা যখন এ কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক চালু করবে তখন কমিশনের অনুমোদন নিতে এলে আমরা টিম পাঠাই। সেখানে গিয়ে দেখা যায় তারা বেশ কিছু নদীর জমি দখল করে এ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। আমাদের কাছে যতগুলো কাগজ জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো হয়েছে, তার বেশিরভাগই নদীশ্রেণির। এগুলো বন্দোবস্তযোগ্য নয়। এখন পর্যন্ত যে কাগজ পেয়েছি তাতে প্রায় ১০০ বিঘা নদীর জমি রয়েছে। বাকি কাগজগুলো পেলে বোঝা যাবে সেখানে মোট কী পরিমাণ নদীর জমি আছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু নদী দখল করে নয়। যদি আমরা প্রমাণ পাই কোথায় নদী কিংবা জলাভূমি দখল করে কোনো স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সে ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। সেটা হোক ৫ হাজার বা ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। তা কোনো বিষয় নয়। এখানে আমরা অনড়। কারণ নদী আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক হাঁস-মুরগি পালনের জন্য তাদের কাছ থেকে ১১.২৭ একর জমি লিজ নিয়েছিল। শর্ত ভঙ্গ করায় ওই জমির লিজ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণে আরও ৫৮.৩৯ একর জমি লিজ নিয়েছিল কেন্দ্রের মালিক। শর্ত ছিল সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ খাল বন্ধ না করে এই জমি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তারা সেই খাল ভরাট করে ফেলেছে। আমরা তাদের বলেছি খালটি যদি ঠিক করা না হয় তবে তাদের লিজ বাতিল করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই পুরো জমি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৮১ একর জমির প্রয়োজন হলেও বরগুনার কেন্দ্রটিতে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত অধিগ্রহণ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জোরপূর্বক ভূমিহীনদের উচ্ছেদ, সরকারি-বেসরকারি জমি দখলসহ হামলা-মামলা ও জাল দলিলের মাধ্যমে আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়বাবদ প্রায় ১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলেছে টিআইবি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে সরকারি খাস খতিয়ানের ১৬৫ একর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৭০ একর, রাখাইন ও স্থানীয়দের ব্যক্তিমালিকানার ৫০ একরসহ ভূমিহীনদের নামে চাষাবাদের জন্য বন্দোবস্তকৃত খাসজমি, বিআইডব্লিউটিএ ও বন বিভাগের জমি রয়েছে।
কেন্দ্রের জমি ক্রয়-বিক্রয় ও দলিল তৈরিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নেমে এর সত্যতা খুঁজে পেয়েছে দুদক। এসব ঘটনায় জড়িত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট প্রতারক চক্রের ৩৩ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পটুয়াখালী দুদক কার্যালয়ে ১২টি মামলা করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় প্রতারক চক্রের পাশাপাশি তালতলী উপজেলা ভূমি অফিস, আমতলী উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিস এবং বগি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় রাখাইন অধিবাসী চোথাই ফ্রু মাতুব্বর জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের মালিকের কাছে পাঁচ একর জমি বিক্রি করেন তিনি। এর বাইরে আরও ২০ একর জমি জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এই জমির টাকা চাইতে গেলে তাকে নানারকম ভয়ভীতি দেখানো হয়। একপর্যায়ে আমতলী আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় ইসমাইল, চান মিয়া, সিদ্দিক, জালালসহ একাধিক ভূমিহীন অধিবাসী বলেন, প্রকল্পে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকলেও তা না করে নামমাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে জোর করে তাদের দীর্ঘদিনের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেকেই।
বিদ্যুকেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত কয়লা ঢেকে পরিবহন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ কেন্দ্রের কয়লা আনা হচ্ছে খোলা নৌযানে করে। গত ১১ মার্চ এ ধরনের আটটি বার্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নোঙর করে কয়লা খালাস করা হয়। এতে নদীদূষণ হওয়ায় মাছ ও জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি সেখানকার সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নদী, বন ও পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় শুরু থেকেই আমরা এ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে আসছি। কেন্দ্রটি নির্মাণে নদীর জায়গা দখল করা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে বহু গাছ। নদী কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কেন্দ্রটি বাতিলের দাবি জানিয়েছি। নদীরক্ষা কমিশন দুবার তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই থামানো যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘তিনটি বড় নদীর মোহনায় এ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে যেটা ইলিশ “মাইগ্রেশনের” অন্যতম বড় রুট। নির্মাণকাজ শুরুর পরপরই ওই এলাকায় ইলিশ আসা বন্ধ হয়েছে। এখন নতুন করে কয়লা পরিবহন করছে উন্মুক্ত জাহাজে। ফলে বাতাসে কয়লার “ডাস্ট” উড়ে গিয়ে নদীদূষণ করছে। শুরু থেকেই অবৈধভাবে নির্মিত এ কেন্দ্রের কারণে মৎস্যসম্পদ ও মৎস্যজীবীদের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুন্দরবনের খুব কাছে হওয়ায় এটি সুন্দরবনেরও ক্ষতি করবে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার অসংখ্য জেলের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেংরাগিরি বনের ৬.৪ কিলোমিটার দূরে, গোড়াপদ্মা উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী থেকে ১.৯ কিলোমিটার ও হরিণঘাটা ইকোপার্ক থেকে ৮.৫ কিলোমিটার পূর্বে কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। এ কেন্দ্রের কারণে প্রাকৃতিকভাবে ম্যানগ্রোভ বনভূমি তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সøুইসগেট বন্ধ ও খাল ভরাটের কারণে জয়ালভাঙা খোট্টারচর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ফারইখাল ভরাট করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে সমুদ্রসৈকতের সন্নিকট থেকে বালু উত্তোলন করায় সৈকতের বালি সরে গিয়ে বন বিভাগের সৃজিত বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘এ কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহারের ফলে যে সালফার নিঃসরণ হবে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে টেংরাগিরি বনের জীববৈচিত্র্য ও বন ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি শব্দদূষণের কারণে এই এলাকায় পাখির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।’
প্রকল্পটি থেকে মাত্র ৬.৫ কিলোমিটার দূরে আন্ধারমানিক ইলিশ অভয়ারণ্যে এবং ৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত দেশের পঞ্চম ইলিশ প্রজননকেন্দ্র। এ প্রজননকেন্দ্র থেকে বছরে ৫০ হাজার টন বাড়তি ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষখালী, পায়রা ও বলেশ^রের মোহনায় গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ ও জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণ কখনোই বিএনপি-জামায়াত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে এবং তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।
তিনি বলেন, ‘বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীÑ এরা কোনো দিন এ দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কখনো মেনে নেবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।
দেশের উন্নয়নে তার সরকারের কাজগুলো ঘরে ঘরে মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) মানুষের কাছে বারবার মিথ্যা বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই সত্য করতে চায়। কিন্তু তাদের আমলে মানুষ কি পেয়েছেÑ খাবার জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেছে, শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি চেয়েছিল বলে রমজান মাসে ২৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া, ১৮ জন কৃষক সার চেয়েছিল বলে তাদের হত্যা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এগুলোই রেকর্ড, তারা এগুলোই করে গেছে। আর আজকে সারও কারও কাছে চাইতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি ও স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি, এখন থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিনও প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতিদের মনে কষ্ট হয় বলে তার মনে হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মনে রাখতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনিই এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই, তার বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্নের কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষার আলো বঞ্চিত থাকবে নাÑ প্রত্যেকটি মানুষের জীবন মান উন্নত হবে।
তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ এবং তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন তার বাংলাদেশ সেভাবেই বিশ্ব দরবারে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আওয়ামী লীগ এবং এর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন সভায় বক্তৃতা করেন।
আরও বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা-ু, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম সভাটি সঞ্চালনা করেন।
বিএনপির অপপ্রচারের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। এত মিথ্যা কথা তারা পায় কোথা থেকে? আমরা নাকি দেশের কোনোই উন্নয়ন করিনি, সবকিছু ফোকলা ও ধ্বংস করে দিয়েছি! আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল করেছি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি। এক দিনে ১০০ সেতু, ১০০ সড়ক নির্মাণÑ কোনো সরকার করতে পেরেছে? এসব কি উন্নয়ন না। চোখ থাকতেও কেউ অন্ধ হয়ে থাকলে তাদের কিছুই চোখে পড়ে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা ছয় লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি। দেশের উন্নয়ন না হলে এত বড় বাজেট কীভাবে দিলাম? গত ১৪ বছরে শিক্ষার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি, ২ লাখ ৫৩ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছি। বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, আমরাই প্রথম দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং আরও চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রত্যেক বিভাগেই আমরা একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। দেশের যদি উন্নতি না হয় তবে এসব আমরা করছি কীভাবে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারা দেশে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই হয়েছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এখন দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে। আমরা দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। এ কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারীর কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব আমরা হতে দিইনি। এসব কি উন্নয়ন নয়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিএনপিই আমরা যখন দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করলাম, তখন বলেছিল এটা ভালো না বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। আসলে তারা দেশকে ভিক্ষুকের জাতি ও ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কারণ তাদের নীতিই হচ্ছে দুর্নীতি, মানুষের অর্থ-সম্পদ লুটেপুটে খাওয়া।
খালেদা জিয়ার পরিবারের বিপুল অর্থবিত্ত কীভাবে হলোÑ সেই প্রশ্ন তুলে সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর্যন্ত টিভিতে দেখানো হলো জিয়া কিছু রেখে যায়নি। জিয়াউর রহমানের প্যান্ট কেটে ছোট করে (অলটার) তারেক ও কোকোকে পরানো হতো। একটা ভাঙা সুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেল। তাহলে সরকারের আসতে না আসতেই কীভাবে হাজার হাজার কেটি টাকার মালিক এরা হলো?
তিনি আরও বলেন, ‘কাদের টাকা চুরি করে হলো। চুরি তো চুরি, সে চুরি আবার ধরা পড়ল আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতে। ধরা পড়ল সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে। আমরা অবশ্য ৪০ কোটি টাকা ফেরত আনতে পেরেছি। এখনো বিএনপি নেতাদের বহু টাকা বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিজ করা আছে। তাহলে এই টাকা কাদের টাকা। জনগণের টাকাই এরা পাচার করেছে। আর জনগণকে গ্রেনেড হামলা, গুলি, খুন, হত্যা ছাড়া আর কিছু দিয়ে যেতে পারেনি। আর তাদের ভাঙা সুটকেস তো জাদুর বাক্সে পরিণত হয়ে গেল। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে, একটার পর একটা লঞ্চ হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে মিলে এ দেশের কিছু বেইমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এ দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংসের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই চেতনা ফিরিয়ে আনে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মই হয়েছিল এই বাঙালি জাতিকে একটি আত্মপরিচয়, একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য।
সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য যা যা প্রয়োজন তার সরকার তার ব্যবস্থা করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমাদের সবার নজর রাখতে হবে কেউ যেন খাদ্য মজুদ বা কালোবাজারি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা এক কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য দিচ্ছি। ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজন হলে আরও ৫০ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনব। আমরা দেশের কোনো মানুষকে কষ্টে থাকতে দেব না বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নিষেধাজ্ঞায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই : র্যাব সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটা আমাদের দেশ, আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে তারা কে কী করে না করে সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দপ্তরে র্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে নির্বিঘœ করার জন্য দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রমজান মাসের আগে কেউ যেন খাদ্য মজুদ এবং খাদ্যে ভেজাল দিতে না পারে এবং সমাজ থেকে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশেষ করে র্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন।
র্যাব সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে বোধ হয় সবার একটু মনটা খারাপ ছিল। এখন সেই চিন্তা আর নেই। আমি এটা বলতে পারি যারা এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কোন উদ্দেশ্যে করছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না কিন্তু বাংলাদেশ করে। যেকোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়। তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলব। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু করব। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা দরকার। দেশের উন্নয়ন দরকার এবং সেক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুন্দরবনে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ এবং জলদস্যুতা মোকাবিলায় র্যাবের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাযথ দায়িত্বশীলতা, কার্যকারিতা এবং সক্রিয়তার সঙ্গে এই বাহিনী অতীতের মতো ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এদেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের কাছে আজ এলিট ফোর্স র্যাব নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বশীল, কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে র্যাবের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়। বাসস
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ শুরুর আদেশ এসেছে আদালত থেকে। আগামী ২৩ মে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান গতকাল রবিবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের এ আদেশ দেন।
মামলাটির বিচারকাজ চলছে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অস্থায়ী এজলাসে। ২০০৭ সালে জরুরি সরকারের সময় দায়ের হওয়া আলোচিত এ মামলার বিচারকাজ ১৫ বছরের বেশি সময় পর শুরু হচ্ছে।
এর আগে ২০১৮ সালে দুটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া জেলে যান। করোনার প্রকোপ বাড়ার পর নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা হাজিরা দেন। মামলার অন্য আসামি জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউছুফ হোসাইন ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন অভিযোগ গঠনের সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। আর মামলার অন্য আসামি ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া পলাতক থাকায় তার জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে আদালত।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ মামলার ঘটনার অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলাটি যে ভুয়া তা আমরা সাক্ষীদের জেরার মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা করব।’
অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এর আগে তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ মামলা দীর্ঘদিন বিচারের অপেক্ষায় ছিল। সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় হুকুমদাতা, মানহানির মতো অভিযোগে অন্তত ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- পাওয়া খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করলে কারাবাস থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। এ ছাড়া অন্যসব মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতে হওয়া সাত বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে গ্যাটকো মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলাসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে আসামি করা হলেও তারা মৃত্যুবরণ করায় তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।