
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
সোমবার সকালে ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন টুইটারে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তার ছবি দিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, ‘আদৌ কি খেলা হবে?’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা মাঠে গড়িয়েছে ঠিকই, তবে এক ইনিংস। বিশেষ করে বললে মুশফিকুর রহিমের ৬০ বলে ১০০ রানের ইনিংসটা দেখতে বুঝি ইচ্ছে ছিল প্রকৃতিরও। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৩৪৯ রান তুলে দিয়ে যেই তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরলেন, অমনি বৃষ্টি নামল। সেই বৃষ্টি আর থামেনি। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস হওয়ার আর সুযোগই দেয়নি। পন্ড হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডে।
টস জিতে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি বেছে নিয়েছিলেন বোলিং। আকাশ তখনো মেঘলা, রাতভর হয়েছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে সুবিধা নেওয়ার মতোই পরিস্থিতি। আইরিশ বোলাররা শুরুতে বোলিংটাও করেছেন বেশ ভালো। প্রথম ওভারে ওঠে মাত্র ৩ রান, দ্বিতীয় ওভার মেডেন এবং তৃতীয় ওভারেও আসেনি কোনো রান। প্রথম ছয় ওভারের তিনটাই মেডেন। ম্যাচ শেষে আসা লিটন দাসও বললেন, ‘শুরুতে ব্যাট করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে খেলেও মনে হচ্ছে বিদেশে খেলছিলাম।’ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও খানিকটা উঁকি দেয় আর উইকেটে সময় কাটিয়ে ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন। কাল ছিল তামিম ইকবালের জন্মদিন, এই দিনে সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রানও পূরণ করেন এ বামহাতি ওপেনার। কিন্তু অসম্ভব একটি রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান ওয়ানডে অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। দুজনই করেন হাফসেঞ্চুরি, ১০১ রানের জুটি গড়ার পর ৭১ বলে ৭০ রান করা লিটনের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। লিটন নিজেই আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমি আর তামিম ভাই প্রথম ১০ ওভারে উইকেট দিইনি। যদিওবা ১১ নম্বর ওভারে গিয়ে উইকেট পড়েছে, রানআউট। ওই সময় উইকেট পড়লে ডিফারেন্ট বল গেম হতো। আমাদের রান হয়তো খুব বেশি ছিল না, ৪০-৪৫-এর মতো ছিল। এটা অনেক ইফিক্টেভ ইনিংস ছিল আপনি যদি দেখেন, ওই সময় যদি উইকেট পড়ে যেত, যদি আপনি তাড়াতাড়ি উইকেট হারাতেন, হাতে উইকেট কম থাকত। এরকম ক্যামিও ইনিংস খেলতে পারতেন না। আবার শান্ত যে ব্যাটিং করেছে খেলার অনেকটা ভিত তৈরি করে দিয়েছে। ২৫ ওভারে প্রায় ১৪০-এর কাছাকাছি। উইকেট যখন হাতে থাকবে, ভালো হয়ে যাবে, খেলা সহজ।’
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ১০৮ রান যা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। লিটনের চোখে মুশফিকের ইনিংসের মাহাত্ম্যটা এখানেই, ‘আমি যতদিন খেলছি বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় শেষদিকে গিয়ে ১০০ করেনি। যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে।’ মুশফিকের কালকের শতরানের ইনিংসই শুধু নয়, এ সিরিজেই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে মুগ্ধ লিটন, ‘মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল। যদিও রান বেশি না, ৪০ বা এর বেশি ছিল; এটা কিন্তু বড় ব্যবধান তৈরি করে দেয় ৩০০-এর বেশি রান করতে। আজকের (গতকাল) মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা তো পুরো ম্যাচের রঙই বদলে দিয়েছে। ম্যাচটা হলে অবশ্যই ভালো লাগত। কিন্তু এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’
আইরিশ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারও ম্যাচ শেষে বলে গেলেন মুশফিকের ইনিংসের প্রভাবের কথা, ‘খুবই ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস। বিধ্বংসী, পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।’
এক ইনিংসের ম্যাচে বেশ কিছু রেকর্ডই হয়েছে গতকাল। তামিমের ১৫ হাজার রান হয়েছে সব সংস্করণে, লিটনের ২০০০ ওয়ানডে রান ও মুশফিকের ৭০০০ ওয়ানডে রান হয়েছে এ ম্যাচেই। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের রেকর্ডও হয়েছে। শুধু হলো না সিরিজ নিশ্চিত। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগটা থেকে গেছে আয়ারল্যান্ডেরও। আর এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়েছে। সংকটে পড়েছে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও। ইতিমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের সরকারের মধ্যস্থতায় ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে সম্মত হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। শক্তিশালী অর্থনীতির দুই দেশে ব্যাংক খাতের সংকটের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশেও বিস্তর আলোচনা চলছে। বিশ্বায়নের এ যুগে এক দেশের সংকটের প্রভাব অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এমনিতেই ব্যাংক ঋণে বিশৃঙ্খলা, আমানত উত্তোলন ও ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভুগছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সহায়তার কারণে এখনো কোনো ব্যাংক ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। যদিও নানা অনিয়মের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর ব্যাংকিং খাতের সংকটের প্রভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখনই শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যেই সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়বে না। অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং নীতির সঙ্গে বাংলাদেশে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হলে এ খাতে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। বাংলাদেশি ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলাদেশের পোশাক খাতে প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’ এ ছাড়া পশ্চিমে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা তৈরি হলে আমাদের বৈদেশিক ঋণের ওপর বড় ধরনের প্রভাব তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা (মুডিস) সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা জানতে চাইলে ড. আহসান বলেন, মুডিসের র্যাংকিংয়ের কারণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত বিদেশের যেসব ঋণ পেত তা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে হাতে রাখার প্রবণতা ২ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও আগ্রাসী ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এতে সংকটের মুখে রয়েছে গ্রাহকের আমানত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত ১৬টি ব্যাংক আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করে ঋণ আমানতের সীমা অতিক্রম করেছে। একই অবস্থা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাত সংকট থেকে এখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশ^ব্যাপী ব্যাংক সংকটের কারণে দেশের ব্যাংক খাত আবারও চাপে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তা এত প্রকট আকার ধারণ করবে না। যদিও কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে তার তাপ পাশের বাড়িতেও লাগে। সে হিসেবে বিশ্বের ব্যাংক সংকটের কিছুটা প্রভাব হয়তো বাংলাদেশেও ফেলতে পারে। এ জন্য আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখনই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ দেশটির বড় ব্যাংকগুলো এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে যদি এটি বড় অর্থনৈতিক সংকটের রূপ নেয় তাহলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং বিশ্বের সবকটি দেশে কোনো না কোনো প্রভাব পড়বেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে থেকেই আমাদের দেশে ব্যাংক খাতের সংকট চলছিল। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বারবার বাজেট থেকে অর্থ সহায়তা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তলাবিহীন ঝুড়ির মতো যাই দেওয়া হয় তাই হারিয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে এতে যুক্ত হয়েছে ইসলামি খাতের ব্যাংকগুলো। সুতরাং সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের ঝুড়ির তলা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংস্কার আনার কথা। আমরা আশা করব তা আন্তর্জাতিকমানের বা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা মেনেই হবে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত আটটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ব্যাংকের সামষ্টিক প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রথম প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিচালকদের অতি প্রভাব, ঋণে বিশৃঙ্খলা ও কাঠামোগত কারণে এসব ব্যাংক সংকট থেকে উঠে আসতে পারছে না। তবে সবচেয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো। অনুমোদনের পর থেকে এসব ব্যাংক ঠিকমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনুমোদন নিয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক তা পূরণও করতে পারেনি। এরই মধ্যে ঋণে বিশৃঙ্খলার কারণে একটি ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকটির নামও পরিবর্তন করতে হয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় তারল্য সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ১০ দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেন। এসব ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয় নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচটি ব্যাংকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেওয়া হয়। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংককে পর্যবেক্ষণে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ার সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের দেশে তা করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ক্রেডিট সুইসের অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক ওইরকম সমস্যার মধ্যে নেই।’
সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক অবস্থানে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েক মাস থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাই নতুন করে সতর্কতা জারি করার প্রয়োজন নেই। আমরা সবসময়ই ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে সক্রিয় রয়েছি।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মূলধন ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দুর্বল। ২০২১ সালে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সিএআর অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলধন ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।
২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, তদারকি ও ঝুঁকির ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকিতে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ব্যাসেল কমিটি কিছু নীতিমালা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এ নীতিমালা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৪ সালের রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংকের সিএসআর অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১২ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ব্যাংকিং খাতের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা অবলোপন দেখিয়েছে। একই সময়ে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে দেশের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হলেও ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশে বর্তমানে মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বৈশ্বিক বাজার অন্বেষণে একটি উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদের এসব বাজার ধরতে হবে।’
গতকাল সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানিবিষয়ক ১১তম বৈঠকে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরও চার কিংবা পাঁচ বছরের জন্য নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে নতুন রপ্তানিনীতি গ্রহণ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, এ ছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না। একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রপ্তানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি। কাজেই আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’ এ সময় কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তার সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা কভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রপ্তানি থেকে আয় ছিল ১৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে।
রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রপ্তানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এজন্য আমাদের খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে।’
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাংলাদেশ কোনোভাবে আক্রান্ত হলে তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে। তিনি গতকাল অপরাহ্ণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবনির্মিত ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটির কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত ঘাঁটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। তবে যদি কখনো তেমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় তাহলে যেন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি সেভাবে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেভাবেই আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে তৈরি করে দিচ্ছি।’
জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’Ñ এর উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তারা সব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করুক সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে কর্তব্য পালনে তারা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সেভাবেই আমরা এই বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি বলেন, এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্রসম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।
সরকারপ্রধান দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও জোরালো হবে।
অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি থেকে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির প্রধান কমোডর এম আতিকুর রহমানের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। এরপরই ঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাবমেরিন ঘাঁটির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও প্রদর্শিত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সামরিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তাদের জন্য বহুতল ভবন, বিনোদনের সুব্যবস্থা, সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পঁচাত্তর সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর কোনো সরকারই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর সঙ্গে সংগতি রেখে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এবং এবং সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে রূপান্তরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে চারটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, চারটি বড় প্যাট্রল ক্রাফট, পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট এবং দুটি প্রশিক্ষণ জাহাজসহ ৩১টি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে। আর সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের নতুন মাইলফলক হলো এ সাবমেরিন ঘাঁটি। আমরা ২০১৭ সালের ১২ মার্চ দুটি সাবমেরিন যুক্ত করেছি। ফলে, আজ আমাদের নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্থানীয় শিপইয়ার্ডে নিজের এবং অন্যদের ব্যবহারের জন্য জাহাজ নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডে একটি বড়সহ পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘অপারেশন জ্যাকপটসহ’ নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাসস
আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ^াসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ^াস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।
জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ। সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।
হলি আর্টিজান হামলার পর জাপান সরকার বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাস দমনের জন্য কিছু বিশেষ গাড়ি অনুদান হিসেবে দেয়, যাতে শুধু শুল্ক দেওয়ার শর্ত ছিল বাংলাদেশের। চূড়ান্ত প্রকল্পে অনুদানের গাড়িতে প্রায় শতভাগ শুল্ক-কর হিসাব করে ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এতে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানির পর ওই গাড়িগুলোর অধিকাংশের শুল্ক, কাস্টমসে ৮২৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ৩৯ কোটি টাকার গাড়িতে শুধু শুল্ক বাবদ খরচ হচ্ছে ২৬৯ কোটি টাকার ওপরে। এ কারণে পুরো প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ২৮৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির ফ্লাডলাইট ভেহিক্যাল না থাকায় রাতে অভিযান কঠিন ছিল। এ জন্য জাপান সরকারের অনুদানে ৩৫টি বিশেষ ধরনের যানবাহন সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নেয় পুলিশ। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে জাপান সরকারের অনুদান ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও ভ্যাটে নতুন করে ৮২৬ শতাংশ ব্যয় হওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পূর্ণাঙ্গ ধারণা না নিয়ে ব্যয় নির্ধারণ করায় এখন নতুন অর্থের পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে ৩৫টি গাড়ি সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শুল্ক বিভাগ শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। কিন্তু আর্মড ভেহিক্যাল ও এসকর্ট ভেহিক্যালকে ‘বেইস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সেই অনুযায়ী ৮২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যা পুলিশের ধারণার বাইরে ছিল। এ কারণে নতুন করে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত এসপি ও প্রকল্প পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাপান সরকারের অনুদানের গাড়ি মধ্যে তিন ধরনের গাড়ি ছিল। রাতে অপারেশনের জন্য ফ্লাড লাইট ভেহিক্যাল, এসকর্ট ভেহিক্যাল ও আর্মড ফোর্সেস ভেহিক্যাল। কিন্তু কাস্টমস শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকেই স্পেশাল ভেহিক্যাল হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে, কিন্তু অন্যগুলোকে স্পেশাল না বলে বেইস ভেহিক্যাল বলছে। স্পেশাল বললে কাস্টমস ডিউটি ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ কিন্তু স্পেশাল না হলেই হয় ৮২৬ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কাস্টমস আমাদের গাড়িগুলো দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে আমাদের বকেয়া রয়ে গেছে। এ জন্যই এখন ব্যয় বেড়েছে।’
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে বিধায় এর সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
এ কার্যক্রমে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ কোটি ইয়েন অনুদান দিয়েছে জাইকা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি আরমার্ড ক্যারিয়ার (বিশেষ ব্র্যান্ডের গাড়ি) ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি এসকর্ট ভেহিক্যাল এবং ৫টি ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালসহ মোট ৩৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে। সবগুলোই কিনে দিয়েছে জাপান। এর আগে জাইকা কোস্টগার্ডের জন্য বেশ কিছু বোট অনুদান দিয়েছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সীমিত জনবল, লজিস্টিকস এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কয়েক বছরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অপারেশনে সফলতা অর্জন করেছে। এসব অপারেশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে ডিএমপিকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও লজিস্টিকসের অভাবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারের (এপিসি) মতো সুসজ্জিত যানবাহনের অভাবে অনেক সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।