
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়েছে। সংকটে পড়েছে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও। ইতিমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের সরকারের মধ্যস্থতায় ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে সম্মত হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। শক্তিশালী অর্থনীতির দুই দেশে ব্যাংক খাতের সংকটের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশেও বিস্তর আলোচনা চলছে। বিশ্বায়নের এ যুগে এক দেশের সংকটের প্রভাব অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এমনিতেই ব্যাংক ঋণে বিশৃঙ্খলা, আমানত উত্তোলন ও ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভুগছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সহায়তার কারণে এখনো কোনো ব্যাংক ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। যদিও নানা অনিয়মের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর ব্যাংকিং খাতের সংকটের প্রভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখনই শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যেই সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়বে না। অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং নীতির সঙ্গে বাংলাদেশে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হলে এ খাতে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। বাংলাদেশি ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলাদেশের পোশাক খাতে প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’ এ ছাড়া পশ্চিমে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা তৈরি হলে আমাদের বৈদেশিক ঋণের ওপর বড় ধরনের প্রভাব তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা (মুডিস) সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা জানতে চাইলে ড. আহসান বলেন, মুডিসের র্যাংকিংয়ের কারণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত বিদেশের যেসব ঋণ পেত তা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে হাতে রাখার প্রবণতা ২ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও আগ্রাসী ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এতে সংকটের মুখে রয়েছে গ্রাহকের আমানত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত ১৬টি ব্যাংক আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করে ঋণ আমানতের সীমা অতিক্রম করেছে। একই অবস্থা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাত সংকট থেকে এখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশ^ব্যাপী ব্যাংক সংকটের কারণে দেশের ব্যাংক খাত আবারও চাপে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তা এত প্রকট আকার ধারণ করবে না। যদিও কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে তার তাপ পাশের বাড়িতেও লাগে। সে হিসেবে বিশ্বের ব্যাংক সংকটের কিছুটা প্রভাব হয়তো বাংলাদেশেও ফেলতে পারে। এ জন্য আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখনই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ দেশটির বড় ব্যাংকগুলো এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে যদি এটি বড় অর্থনৈতিক সংকটের রূপ নেয় তাহলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং বিশ্বের সবকটি দেশে কোনো না কোনো প্রভাব পড়বেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে থেকেই আমাদের দেশে ব্যাংক খাতের সংকট চলছিল। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বারবার বাজেট থেকে অর্থ সহায়তা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তলাবিহীন ঝুড়ির মতো যাই দেওয়া হয় তাই হারিয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে এতে যুক্ত হয়েছে ইসলামি খাতের ব্যাংকগুলো। সুতরাং সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের ঝুড়ির তলা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংস্কার আনার কথা। আমরা আশা করব তা আন্তর্জাতিকমানের বা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা মেনেই হবে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত আটটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ব্যাংকের সামষ্টিক প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রথম প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিচালকদের অতি প্রভাব, ঋণে বিশৃঙ্খলা ও কাঠামোগত কারণে এসব ব্যাংক সংকট থেকে উঠে আসতে পারছে না। তবে সবচেয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো। অনুমোদনের পর থেকে এসব ব্যাংক ঠিকমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনুমোদন নিয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক তা পূরণও করতে পারেনি। এরই মধ্যে ঋণে বিশৃঙ্খলার কারণে একটি ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকটির নামও পরিবর্তন করতে হয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় তারল্য সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ১০ দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেন। এসব ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয় নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচটি ব্যাংকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেওয়া হয়। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংককে পর্যবেক্ষণে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ার সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের দেশে তা করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ক্রেডিট সুইসের অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক ওইরকম সমস্যার মধ্যে নেই।’
সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক অবস্থানে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েক মাস থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাই নতুন করে সতর্কতা জারি করার প্রয়োজন নেই। আমরা সবসময়ই ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে সক্রিয় রয়েছি।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মূলধন ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দুর্বল। ২০২১ সালে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সিএআর অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলধন ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।
২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, তদারকি ও ঝুঁকির ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকিতে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ব্যাসেল কমিটি কিছু নীতিমালা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এ নীতিমালা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৪ সালের রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংকের সিএসআর অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১২ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ব্যাংকিং খাতের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা অবলোপন দেখিয়েছে। একই সময়ে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে দেশের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হলেও ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশে বর্তমানে মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
সোমবার সকালে ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন টুইটারে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তার ছবি দিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, ‘আদৌ কি খেলা হবে?’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা মাঠে গড়িয়েছে ঠিকই, তবে এক ইনিংস। বিশেষ করে বললে মুশফিকুর রহিমের ৬০ বলে ১০০ রানের ইনিংসটা দেখতে বুঝি ইচ্ছে ছিল প্রকৃতিরও। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৩৪৯ রান তুলে দিয়ে যেই তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরলেন, অমনি বৃষ্টি নামল। সেই বৃষ্টি আর থামেনি। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস হওয়ার আর সুযোগই দেয়নি। পন্ড হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডে।
টস জিতে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি বেছে নিয়েছিলেন বোলিং। আকাশ তখনো মেঘলা, রাতভর হয়েছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে সুবিধা নেওয়ার মতোই পরিস্থিতি। আইরিশ বোলাররা শুরুতে বোলিংটাও করেছেন বেশ ভালো। প্রথম ওভারে ওঠে মাত্র ৩ রান, দ্বিতীয় ওভার মেডেন এবং তৃতীয় ওভারেও আসেনি কোনো রান। প্রথম ছয় ওভারের তিনটাই মেডেন। ম্যাচ শেষে আসা লিটন দাসও বললেন, ‘শুরুতে ব্যাট করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে খেলেও মনে হচ্ছে বিদেশে খেলছিলাম।’ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও খানিকটা উঁকি দেয় আর উইকেটে সময় কাটিয়ে ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন। কাল ছিল তামিম ইকবালের জন্মদিন, এই দিনে সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রানও পূরণ করেন এ বামহাতি ওপেনার। কিন্তু অসম্ভব একটি রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান ওয়ানডে অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। দুজনই করেন হাফসেঞ্চুরি, ১০১ রানের জুটি গড়ার পর ৭১ বলে ৭০ রান করা লিটনের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। লিটন নিজেই আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমি আর তামিম ভাই প্রথম ১০ ওভারে উইকেট দিইনি। যদিওবা ১১ নম্বর ওভারে গিয়ে উইকেট পড়েছে, রানআউট। ওই সময় উইকেট পড়লে ডিফারেন্ট বল গেম হতো। আমাদের রান হয়তো খুব বেশি ছিল না, ৪০-৪৫-এর মতো ছিল। এটা অনেক ইফিক্টেভ ইনিংস ছিল আপনি যদি দেখেন, ওই সময় যদি উইকেট পড়ে যেত, যদি আপনি তাড়াতাড়ি উইকেট হারাতেন, হাতে উইকেট কম থাকত। এরকম ক্যামিও ইনিংস খেলতে পারতেন না। আবার শান্ত যে ব্যাটিং করেছে খেলার অনেকটা ভিত তৈরি করে দিয়েছে। ২৫ ওভারে প্রায় ১৪০-এর কাছাকাছি। উইকেট যখন হাতে থাকবে, ভালো হয়ে যাবে, খেলা সহজ।’
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ১০৮ রান যা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। লিটনের চোখে মুশফিকের ইনিংসের মাহাত্ম্যটা এখানেই, ‘আমি যতদিন খেলছি বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় শেষদিকে গিয়ে ১০০ করেনি। যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে।’ মুশফিকের কালকের শতরানের ইনিংসই শুধু নয়, এ সিরিজেই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে মুগ্ধ লিটন, ‘মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল। যদিও রান বেশি না, ৪০ বা এর বেশি ছিল; এটা কিন্তু বড় ব্যবধান তৈরি করে দেয় ৩০০-এর বেশি রান করতে। আজকের (গতকাল) মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা তো পুরো ম্যাচের রঙই বদলে দিয়েছে। ম্যাচটা হলে অবশ্যই ভালো লাগত। কিন্তু এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’
আইরিশ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারও ম্যাচ শেষে বলে গেলেন মুশফিকের ইনিংসের প্রভাবের কথা, ‘খুবই ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস। বিধ্বংসী, পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।’
এক ইনিংসের ম্যাচে বেশ কিছু রেকর্ডই হয়েছে গতকাল। তামিমের ১৫ হাজার রান হয়েছে সব সংস্করণে, লিটনের ২০০০ ওয়ানডে রান ও মুশফিকের ৭০০০ ওয়ানডে রান হয়েছে এ ম্যাচেই। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের রেকর্ডও হয়েছে। শুধু হলো না সিরিজ নিশ্চিত। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগটা থেকে গেছে আয়ারল্যান্ডেরও। আর এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বৈশ্বিক বাজার অন্বেষণে একটি উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদের এসব বাজার ধরতে হবে।’
গতকাল সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানিবিষয়ক ১১তম বৈঠকে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরও চার কিংবা পাঁচ বছরের জন্য নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে নতুন রপ্তানিনীতি গ্রহণ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, এ ছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না। একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রপ্তানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি। কাজেই আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’ এ সময় কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তার সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা কভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রপ্তানি থেকে আয় ছিল ১৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে।
রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রপ্তানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এজন্য আমাদের খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে।’
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাংলাদেশ কোনোভাবে আক্রান্ত হলে তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে। তিনি গতকাল অপরাহ্ণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবনির্মিত ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটির কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত ঘাঁটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। তবে যদি কখনো তেমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় তাহলে যেন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি সেভাবে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেভাবেই আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে তৈরি করে দিচ্ছি।’
জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’Ñ এর উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তারা সব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করুক সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে কর্তব্য পালনে তারা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সেভাবেই আমরা এই বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি বলেন, এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্রসম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।
সরকারপ্রধান দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও জোরালো হবে।
অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি থেকে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির প্রধান কমোডর এম আতিকুর রহমানের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। এরপরই ঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাবমেরিন ঘাঁটির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও প্রদর্শিত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সামরিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তাদের জন্য বহুতল ভবন, বিনোদনের সুব্যবস্থা, সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পঁচাত্তর সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর কোনো সরকারই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর সঙ্গে সংগতি রেখে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এবং এবং সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে রূপান্তরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে চারটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, চারটি বড় প্যাট্রল ক্রাফট, পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট এবং দুটি প্রশিক্ষণ জাহাজসহ ৩১টি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে। আর সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের নতুন মাইলফলক হলো এ সাবমেরিন ঘাঁটি। আমরা ২০১৭ সালের ১২ মার্চ দুটি সাবমেরিন যুক্ত করেছি। ফলে, আজ আমাদের নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্থানীয় শিপইয়ার্ডে নিজের এবং অন্যদের ব্যবহারের জন্য জাহাজ নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডে একটি বড়সহ পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘অপারেশন জ্যাকপটসহ’ নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাসস
আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ^াসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ^াস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।
জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ। সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।
হলি আর্টিজান হামলার পর জাপান সরকার বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাস দমনের জন্য কিছু বিশেষ গাড়ি অনুদান হিসেবে দেয়, যাতে শুধু শুল্ক দেওয়ার শর্ত ছিল বাংলাদেশের। চূড়ান্ত প্রকল্পে অনুদানের গাড়িতে প্রায় শতভাগ শুল্ক-কর হিসাব করে ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এতে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানির পর ওই গাড়িগুলোর অধিকাংশের শুল্ক, কাস্টমসে ৮২৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ৩৯ কোটি টাকার গাড়িতে শুধু শুল্ক বাবদ খরচ হচ্ছে ২৬৯ কোটি টাকার ওপরে। এ কারণে পুরো প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ২৮৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির ফ্লাডলাইট ভেহিক্যাল না থাকায় রাতে অভিযান কঠিন ছিল। এ জন্য জাপান সরকারের অনুদানে ৩৫টি বিশেষ ধরনের যানবাহন সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নেয় পুলিশ। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে জাপান সরকারের অনুদান ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও ভ্যাটে নতুন করে ৮২৬ শতাংশ ব্যয় হওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পূর্ণাঙ্গ ধারণা না নিয়ে ব্যয় নির্ধারণ করায় এখন নতুন অর্থের পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে ৩৫টি গাড়ি সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শুল্ক বিভাগ শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। কিন্তু আর্মড ভেহিক্যাল ও এসকর্ট ভেহিক্যালকে ‘বেইস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সেই অনুযায়ী ৮২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যা পুলিশের ধারণার বাইরে ছিল। এ কারণে নতুন করে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত এসপি ও প্রকল্প পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাপান সরকারের অনুদানের গাড়ি মধ্যে তিন ধরনের গাড়ি ছিল। রাতে অপারেশনের জন্য ফ্লাড লাইট ভেহিক্যাল, এসকর্ট ভেহিক্যাল ও আর্মড ফোর্সেস ভেহিক্যাল। কিন্তু কাস্টমস শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকেই স্পেশাল ভেহিক্যাল হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে, কিন্তু অন্যগুলোকে স্পেশাল না বলে বেইস ভেহিক্যাল বলছে। স্পেশাল বললে কাস্টমস ডিউটি ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ কিন্তু স্পেশাল না হলেই হয় ৮২৬ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কাস্টমস আমাদের গাড়িগুলো দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে আমাদের বকেয়া রয়ে গেছে। এ জন্যই এখন ব্যয় বেড়েছে।’
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে বিধায় এর সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
এ কার্যক্রমে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ কোটি ইয়েন অনুদান দিয়েছে জাইকা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি আরমার্ড ক্যারিয়ার (বিশেষ ব্র্যান্ডের গাড়ি) ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি এসকর্ট ভেহিক্যাল এবং ৫টি ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালসহ মোট ৩৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে। সবগুলোই কিনে দিয়েছে জাপান। এর আগে জাইকা কোস্টগার্ডের জন্য বেশ কিছু বোট অনুদান দিয়েছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সীমিত জনবল, লজিস্টিকস এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কয়েক বছরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অপারেশনে সফলতা অর্জন করেছে। এসব অপারেশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে ডিএমপিকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও লজিস্টিকসের অভাবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারের (এপিসি) মতো সুসজ্জিত যানবাহনের অভাবে অনেক সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ৪১ বছর বয়সী মুমুর লাশ বাসার বাথরুমের জানালার সঙ্গে রশি থেকে ঝুলছিল। বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাতে শাহরিয়ার কবিরের মহাখালীর বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করেন তারা। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে শাহরিয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।