
আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ^াসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ^াস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।
জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ। সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
সোমবার সকালে ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন টুইটারে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তার ছবি দিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, ‘আদৌ কি খেলা হবে?’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা মাঠে গড়িয়েছে ঠিকই, তবে এক ইনিংস। বিশেষ করে বললে মুশফিকুর রহিমের ৬০ বলে ১০০ রানের ইনিংসটা দেখতে বুঝি ইচ্ছে ছিল প্রকৃতিরও। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৩৪৯ রান তুলে দিয়ে যেই তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরলেন, অমনি বৃষ্টি নামল। সেই বৃষ্টি আর থামেনি। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস হওয়ার আর সুযোগই দেয়নি। পন্ড হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডে।
টস জিতে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি বেছে নিয়েছিলেন বোলিং। আকাশ তখনো মেঘলা, রাতভর হয়েছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে সুবিধা নেওয়ার মতোই পরিস্থিতি। আইরিশ বোলাররা শুরুতে বোলিংটাও করেছেন বেশ ভালো। প্রথম ওভারে ওঠে মাত্র ৩ রান, দ্বিতীয় ওভার মেডেন এবং তৃতীয় ওভারেও আসেনি কোনো রান। প্রথম ছয় ওভারের তিনটাই মেডেন। ম্যাচ শেষে আসা লিটন দাসও বললেন, ‘শুরুতে ব্যাট করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে খেলেও মনে হচ্ছে বিদেশে খেলছিলাম।’ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও খানিকটা উঁকি দেয় আর উইকেটে সময় কাটিয়ে ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন। কাল ছিল তামিম ইকবালের জন্মদিন, এই দিনে সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রানও পূরণ করেন এ বামহাতি ওপেনার। কিন্তু অসম্ভব একটি রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান ওয়ানডে অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। দুজনই করেন হাফসেঞ্চুরি, ১০১ রানের জুটি গড়ার পর ৭১ বলে ৭০ রান করা লিটনের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। লিটন নিজেই আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমি আর তামিম ভাই প্রথম ১০ ওভারে উইকেট দিইনি। যদিওবা ১১ নম্বর ওভারে গিয়ে উইকেট পড়েছে, রানআউট। ওই সময় উইকেট পড়লে ডিফারেন্ট বল গেম হতো। আমাদের রান হয়তো খুব বেশি ছিল না, ৪০-৪৫-এর মতো ছিল। এটা অনেক ইফিক্টেভ ইনিংস ছিল আপনি যদি দেখেন, ওই সময় যদি উইকেট পড়ে যেত, যদি আপনি তাড়াতাড়ি উইকেট হারাতেন, হাতে উইকেট কম থাকত। এরকম ক্যামিও ইনিংস খেলতে পারতেন না। আবার শান্ত যে ব্যাটিং করেছে খেলার অনেকটা ভিত তৈরি করে দিয়েছে। ২৫ ওভারে প্রায় ১৪০-এর কাছাকাছি। উইকেট যখন হাতে থাকবে, ভালো হয়ে যাবে, খেলা সহজ।’
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ১০৮ রান যা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। লিটনের চোখে মুশফিকের ইনিংসের মাহাত্ম্যটা এখানেই, ‘আমি যতদিন খেলছি বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় শেষদিকে গিয়ে ১০০ করেনি। যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে।’ মুশফিকের কালকের শতরানের ইনিংসই শুধু নয়, এ সিরিজেই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে মুগ্ধ লিটন, ‘মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল। যদিও রান বেশি না, ৪০ বা এর বেশি ছিল; এটা কিন্তু বড় ব্যবধান তৈরি করে দেয় ৩০০-এর বেশি রান করতে। আজকের (গতকাল) মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা তো পুরো ম্যাচের রঙই বদলে দিয়েছে। ম্যাচটা হলে অবশ্যই ভালো লাগত। কিন্তু এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’
আইরিশ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারও ম্যাচ শেষে বলে গেলেন মুশফিকের ইনিংসের প্রভাবের কথা, ‘খুবই ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস। বিধ্বংসী, পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।’
এক ইনিংসের ম্যাচে বেশ কিছু রেকর্ডই হয়েছে গতকাল। তামিমের ১৫ হাজার রান হয়েছে সব সংস্করণে, লিটনের ২০০০ ওয়ানডে রান ও মুশফিকের ৭০০০ ওয়ানডে রান হয়েছে এ ম্যাচেই। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের রেকর্ডও হয়েছে। শুধু হলো না সিরিজ নিশ্চিত। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগটা থেকে গেছে আয়ারল্যান্ডেরও। আর এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়েছে। সংকটে পড়েছে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও। ইতিমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের সরকারের মধ্যস্থতায় ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে সম্মত হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। শক্তিশালী অর্থনীতির দুই দেশে ব্যাংক খাতের সংকটের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশেও বিস্তর আলোচনা চলছে। বিশ্বায়নের এ যুগে এক দেশের সংকটের প্রভাব অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এমনিতেই ব্যাংক ঋণে বিশৃঙ্খলা, আমানত উত্তোলন ও ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে বেশ কয়েক মাস ধরেই ভুগছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সহায়তার কারণে এখনো কোনো ব্যাংক ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। যদিও নানা অনিয়মের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর ব্যাংকিং খাতের সংকটের প্রভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখনই শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যেই সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়বে না। অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং নীতির সঙ্গে বাংলাদেশে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হলে এ খাতে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। বাংলাদেশি ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলাদেশের পোশাক খাতে প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’ এ ছাড়া পশ্চিমে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা তৈরি হলে আমাদের বৈদেশিক ঋণের ওপর বড় ধরনের প্রভাব তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা (মুডিস) সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা জানতে চাইলে ড. আহসান বলেন, মুডিসের র্যাংকিংয়ের কারণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত বিদেশের যেসব ঋণ পেত তা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে হাতে রাখার প্রবণতা ২ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও আগ্রাসী ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এতে সংকটের মুখে রয়েছে গ্রাহকের আমানত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত ১৬টি ব্যাংক আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করে ঋণ আমানতের সীমা অতিক্রম করেছে। একই অবস্থা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাত সংকট থেকে এখনো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশ^ব্যাপী ব্যাংক সংকটের কারণে দেশের ব্যাংক খাত আবারও চাপে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে তা এত প্রকট আকার ধারণ করবে না। যদিও কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে তার তাপ পাশের বাড়িতেও লাগে। সে হিসেবে বিশ্বের ব্যাংক সংকটের কিছুটা প্রভাব হয়তো বাংলাদেশেও ফেলতে পারে। এ জন্য আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখনই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ দেশটির বড় ব্যাংকগুলো এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে যদি এটি বড় অর্থনৈতিক সংকটের রূপ নেয় তাহলে শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং বিশ্বের সবকটি দেশে কোনো না কোনো প্রভাব পড়বেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে থেকেই আমাদের দেশে ব্যাংক খাতের সংকট চলছিল। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বারবার বাজেট থেকে অর্থ সহায়তা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তলাবিহীন ঝুড়ির মতো যাই দেওয়া হয় তাই হারিয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে এতে যুক্ত হয়েছে ইসলামি খাতের ব্যাংকগুলো। সুতরাং সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমাদের ঝুড়ির তলা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংস্কার আনার কথা। আমরা আশা করব তা আন্তর্জাতিকমানের বা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা মেনেই হবে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত আটটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ব্যাংকের সামষ্টিক প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রথম প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিচালকদের অতি প্রভাব, ঋণে বিশৃঙ্খলা ও কাঠামোগত কারণে এসব ব্যাংক সংকট থেকে উঠে আসতে পারছে না। তবে সবচেয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো। অনুমোদনের পর থেকে এসব ব্যাংক ঠিকমতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনুমোদন নিয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক তা পূরণও করতে পারেনি। এরই মধ্যে ঋণে বিশৃঙ্খলার কারণে একটি ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যাংকটি। গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকটির নামও পরিবর্তন করতে হয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় তারল্য সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ১০ দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেন। এসব ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয় নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক। পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচটি ব্যাংকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেওয়া হয়। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংককে পর্যবেক্ষণে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ার সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের দেশে তা করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ক্রেডিট সুইসের অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক ওইরকম সমস্যার মধ্যে নেই।’
সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক অবস্থানে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েক মাস থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাই নতুন করে সতর্কতা জারি করার প্রয়োজন নেই। আমরা সবসময়ই ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে সক্রিয় রয়েছি।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মূলধন ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দুর্বল। ২০২১ সালে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সিএআর অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলধন ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ব্যাসেল-৩ নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।
২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, তদারকি ও ঝুঁকির ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকিতে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ব্যাসেল কমিটি কিছু নীতিমালা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এ নীতিমালা ব্যাসেল-৩ নীতিমালা নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৪ সালের রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংকের সিএসআর অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১২ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ব্যাংকিং খাতের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা অবলোপন দেখিয়েছে। একই সময়ে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে দেশের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হলেও ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশে বর্তমানে মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বৈশ্বিক বাজার অন্বেষণে একটি উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদের এসব বাজার ধরতে হবে।’
গতকাল সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানিবিষয়ক ১১তম বৈঠকে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরও চার কিংবা পাঁচ বছরের জন্য নতুন রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে নতুন রপ্তানিনীতি গ্রহণ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, এ ছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না। একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রপ্তানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি। কাজেই আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রপ্তানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।’ এ সময় কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তার সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা কভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রপ্তানি থেকে আয় ছিল ১৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে।
রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রপ্তানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এজন্য আমাদের খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে।’
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাংলাদেশ কোনোভাবে আক্রান্ত হলে তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে। তিনি গতকাল অপরাহ্ণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবনির্মিত ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটির কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নবনির্মিত ঘাঁটির সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। তবে যদি কখনো তেমন পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় তাহলে যেন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি সেভাবে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সেভাবেই আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে তৈরি করে দিচ্ছি।’
জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’Ñ এর উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তারা সব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করুক সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে কর্তব্য পালনে তারা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সেভাবেই আমরা এই বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন সেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি বলেন, এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্রসম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।
সরকারপ্রধান দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও জোরালো হবে।
অনুষ্ঠানে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি থেকে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির প্রধান কমোডর এম আতিকুর রহমানের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। এরপরই ঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাবমেরিন ঘাঁটির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনও প্রদর্শিত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সামরিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তাদের জন্য বহুতল ভবন, বিনোদনের সুব্যবস্থা, সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পঁচাত্তর সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর কোনো সরকারই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর সঙ্গে সংগতি রেখে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এবং এবং সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে রূপান্তরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে চারটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, চারটি বড় প্যাট্রল ক্রাফট, পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট এবং দুটি প্রশিক্ষণ জাহাজসহ ৩১টি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হয়েছে। আর সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের নতুন মাইলফলক হলো এ সাবমেরিন ঘাঁটি। আমরা ২০১৭ সালের ১২ মার্চ দুটি সাবমেরিন যুক্ত করেছি। ফলে, আজ আমাদের নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে স্থানীয় শিপইয়ার্ডে নিজের এবং অন্যদের ব্যবহারের জন্য জাহাজ নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডে একটি বড়সহ পাঁচটি প্যাট্রল ক্রাফট নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘অপারেশন জ্যাকপটসহ’ নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাসস
হলি আর্টিজান হামলার পর জাপান সরকার বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সন্ত্রাস দমনের জন্য কিছু বিশেষ গাড়ি অনুদান হিসেবে দেয়, যাতে শুধু শুল্ক দেওয়ার শর্ত ছিল বাংলাদেশের। চূড়ান্ত প্রকল্পে অনুদানের গাড়িতে প্রায় শতভাগ শুল্ক-কর হিসাব করে ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এতে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানির পর ওই গাড়িগুলোর অধিকাংশের শুল্ক, কাস্টমসে ৮২৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে ৩৯ কোটি টাকার গাড়িতে শুধু শুল্ক বাবদ খরচ হচ্ছে ২৬৯ কোটি টাকার ওপরে। এ কারণে পুরো প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ২৮৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির ফ্লাডলাইট ভেহিক্যাল না থাকায় রাতে অভিযান কঠিন ছিল। এ জন্য জাপান সরকারের অনুদানে ৩৫টি বিশেষ ধরনের যানবাহন সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নেয় পুলিশ। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে জাপান সরকারের অনুদান ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও ভ্যাটে নতুন করে ৮২৬ শতাংশ ব্যয় হওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পূর্ণাঙ্গ ধারণা না নিয়ে ব্যয় নির্ধারণ করায় এখন নতুন অর্থের পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে ৩৫টি গাড়ি সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শুল্ক বিভাগ শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকে ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। কিন্তু আর্মড ভেহিক্যাল ও এসকর্ট ভেহিক্যালকে ‘বেইস ভেহিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সেই অনুযায়ী ৮২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যা পুলিশের ধারণার বাইরে ছিল। এ কারণে নতুন করে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত এসপি ও প্রকল্প পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাপান সরকারের অনুদানের গাড়ি মধ্যে তিন ধরনের গাড়ি ছিল। রাতে অপারেশনের জন্য ফ্লাড লাইট ভেহিক্যাল, এসকর্ট ভেহিক্যাল ও আর্মড ফোর্সেস ভেহিক্যাল। কিন্তু কাস্টমস শুধু ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালকেই স্পেশাল ভেহিক্যাল হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে, কিন্তু অন্যগুলোকে স্পেশাল না বলে বেইস ভেহিক্যাল বলছে। স্পেশাল বললে কাস্টমস ডিউটি ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ কিন্তু স্পেশাল না হলেই হয় ৮২৬ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কাস্টমস আমাদের গাড়িগুলো দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে আমাদের বকেয়া রয়ে গেছে। এ জন্যই এখন ব্যয় বেড়েছে।’
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে বিধায় এর সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
এ কার্যক্রমে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ কোটি ইয়েন অনুদান দিয়েছে জাইকা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি আরমার্ড ক্যারিয়ার (বিশেষ ব্র্যান্ডের গাড়ি) ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি এসকর্ট ভেহিক্যাল এবং ৫টি ফ্লাড লাইট ভেহিক্যালসহ মোট ৩৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে। সবগুলোই কিনে দিয়েছে জাপান। এর আগে জাইকা কোস্টগার্ডের জন্য বেশ কিছু বোট অনুদান দিয়েছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সীমিত জনবল, লজিস্টিকস এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কয়েক বছরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অপারেশনে সফলতা অর্জন করেছে। এসব অপারেশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে ডিএমপিকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও লজিস্টিকসের অভাবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারের (এপিসি) মতো সুসজ্জিত যানবাহনের অভাবে অনেক সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।