
বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদের শুরুতেই শিল্প খাতে গতি আনতে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প-সম্পর্কিত ১০টি প্রতিশ্রুতি এবং ৬০টি নির্দেশ নিয়ে প্রথমবারই গ্রহণ করেছেন একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা। তিন মেয়াদ মিলিয়ে গড়ে প্রায় ১৪ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির দুটি বাস্তবায়িত হয়েছে, আটটির কাজ চলছে। ৬০টি নির্দেশের মধ্যে ৩৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ২৫টির কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশ গত জানুয়ারি পর্যন্ত কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদন থেকে প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশ বাস্তবায়নের এ হিসাব পাওয়া গিয়েছে।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শিল্প খাতে গতি আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় সরকারের সর্বোচ্চপর্যায়ের অনেক নির্দেশও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম মেয়াদেই ১০ প্রতিশ্রুতি এবং ৬০ নির্দেশ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব কর্মপরিকল্পনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাস্তবায়নে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সরকারের প্রতি মেয়াদেই এসব কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১১ সালের ৫ মার্চ বন্ধ সরকারি ছয় কারখানা খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলস লিমিটেড (কেএনএম), চিটাগাং কেমিক্যাল কমপেক্স লিমিটেড (সিসিসি), ঢাকা লেদার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএলসিএল), বাংলাদেশ ইন্স্যুলেটর স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিআইএসএফ), নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লি (এনবিপিএমএল), দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড চালু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কারখানা চালুর প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এ কর্তৃপক্ষ থেকে ওই কর্তৃপক্ষ, ফাইল চালাচালি চলছেই।
প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, কেএনএমের জমির পরিমাণ ৮৭ দশমিক ৬১ একর। অতীতের দায়দেনা পরিশোধ করতে কেএনএমের ৫০ একর জমি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (নওপাজেকো) কাছে ৫৮৬ দশমিক ৫২ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রিতে চুক্তি হয়। নওপাজেকো কেএনএমকে ২৫৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা দিলেও বাকি আছে ৩৩২ দশমিক ১০ কোটি টাকা। কেএনএম থেকে পাওনা পরিশোধে অনুরোধ জানিয়ে নওপাজেকোকে ২৫ বার চিঠি পাঠিয়েছে। অথচ এখনো বাকি টাকা পরিশোধ করেনি। কেএনএমের ৩৭ দশমিক ৬১ একর জমি এবং খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস লিমিটেডের ৯ দশমিক ৯৬ জায়গা এক করে ৪৭ দশমিক ৫৭ একর জায়গায় আধুনিক কাগজ কল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রায় ১০ বছর পর ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর ওয়াসো ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত ১১ ডিসেম্বর কাজ শুরু করেছে। সরকারের সর্বোচ্চপর্যায়ে নির্দেশে আধুনিক কাগজ কল নির্মাণের অগ্রগতি এটাই।
২০১২ সালের ৩০ জুন টাঙ্গাইল শিল্পপার্ক, ২৫ ফেব্রুয়ারি বাইশদিয়া উপজেলায় জাহাজভাঙা শিল্প ও শিপইয়ার্ড এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলায় বিসিক শিল্প নগরী নির্মাণে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজ নির্মাণশিল্প ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং একই বছরে ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প নগরী নির্মাণে বলা হয়েছে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মুহুরী প্রজেক্টে জেগে ওঠা ১৭ হাজার একর জমিতে শিল্পপার্ক স্থাপনে এবং ২০১৮ সালের ২ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে নির্দেশ থাকলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বললেই চলে। ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিসিক থেকে শিল্প প্লট কিনে শিল্প নগরী স্থাপনে এবং একই বছরে ১১ মে মধুপুরে আনারসের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে নির্দেশ দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
নির্দেশে বলা হয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ও পুরনো প্রতিটি সরকারি কারখানায় বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি নির্মাণ করতে হবে। একইভাবে প্রতিটি বেসরকারি কারখানায়ও ইটিপি বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিল্পপার্কে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করতে হবে। বেসরকারি কারখানার মালিকরা ইটিপি নির্মাণের ব্যয় বহন করতে সক্ষম না হলে প্রয়োজনে সরকারি তহবিল থেকে তাদের ইটিপি নির্মাণ করে দিতে হবে। পরে কারখানার মালিকদের কাছ থেকে নির্মাণব্যয় ও একটি ফি আদায় করতে হবে। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও একই নির্দেশ দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ অনুযায়ী এখনো সব সরকারি-বেসরকারি কারখানায় ইটিপি স্থাপনের বিষয় নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই শেখ হাসিনা সরকারি চিনিকলগুলো লাভজনক করতে জোর দেন।
প্রসঙ্গত, চিনিকলগুলো আখ স্বল্পতায় বছরের সাত থেকে আট মাস বন্ধ থাকে। চিনিকলগুলোর অনেক পুরনো যন্ত্রপাতিতে উৎপাদন সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আখের পাশাপাশি সুগার বিট চাষ, র-চিনি আমদানি করে সরকারি চিনিকলে পরিশোধন করে চিনি উৎপাদন, চিনিকলের যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন এবং চিনিকলের অব্যবহৃত জায়গায় নতুন শিল্প নির্মাণে নির্দেশ দেন। চিনিকলের বয়লার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মোলাসেস থেকে ইথানল, বায়োগ্যাস এবং সার উৎপাদনেও নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারি ১৫ চিনিকলে পর্যায়ক্রমে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে প্রথম ধাপে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের জন্য ৩২৫ কোটি টাকা এবং ঠাকুরগাঁও চিনিকলের জন্য ৪৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ করা অর্থে দুই চিনিকলের পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত, নতুন যন্ত্রপাতি কেনা, বিদ্যুৎ কো-জেনারেশ করার কথা আছে। র-চিনি আমদানি করে পরিশোধিত চিনি উৎপাদন, মোলাসেস থেকে ইথানল বানানো, বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রস্তুতি নেওয়ারও কথা আছে। একই সঙ্গে সার বানানোর নির্দেশ আছে। এসব সার আখ এবং সুগার বিট উৎপাদনে ব্যবহার করার কথা। সুগার বিট ‘চিলার স্টোরেজ’ নির্মাণ করে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এসব উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ পর্যন্ত সরকারের ৯ চিনিকল বন্ধ করা হয়েছে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ দেশে অনেক ভালো উদ্যোগও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে বছরের পর বছর আটকে থাকে। প্রধানমন্ত্রী গতিশীল অর্থনীতি চান। এজন্য গতিশীল শিল্প খাত প্রয়োজন। অতীতে দেখেছি সরকারের সর্বোচ্চপর্যায়ের অনেক নির্দেশও এ দেশে এই হচ্ছে, এই হচ্ছে করে বছরের পর বছর পড়ে থাকে। এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এই ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর যে দুই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়েছে তা হলো, বরগুনায় এবং রাজশাহীতে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপন। জেলাপর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা নির্মাণের উদ্যোগকে উৎসাহিত করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে শিল্পনীতিতে সহায়ক সুযোগ রাখা, অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডে জনবল নিয়োগ, বিএসটিআইয়ের মানের উন্নয়ন, সময়মতো জাতীয় শিল্পনীতি প্রণয়নসহ ৩৫টি নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নে চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি সবগুলো শেষ হয়ে যাবে। এতে শিল্প খাতে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতিতে বিদেশি কোম্পানির পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পথ দেখান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে তখন আমদানির ঝোঁকের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এবারের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, জ্বালানির জন্য নিজস্ব দীর্ঘমেয়াদি উৎস থাকা দরকার। সংকট কাটাতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফলতা এলেও এখন অবহেলার কারণে গভীর সংকটে পড়েছে জ্বালানি খাত।
বর্তমানে সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আমদানির কারণে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তার পরও শিল্প-কারখানা ও ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েলের কাছ থেকে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, হবিগঞ্জ, রসিদপুর, কৈলাশটিলা ও বাখরাবাদ) কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তার গোড়াপত্তন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে আরও নতুন ২৩টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ফলে দেশে গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮টি। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় ওই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ এবং ২০১৬ সালে মহাপরিকল্পনা করার সময় আমি বলেছিলাম, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৯০ শতাংশ জ্বালানি আমদানি করতে হবে। এজন্য ২০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখনকার হিসেবে আরও বেশি অর্থের দরকার। তখন বলা হয়েছিল, আমাদের এক্সপোর্ট, রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, তাতে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না।’
ম তামিম বলেন, ‘ইকোনমিক গ্রোথ (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের অনিশ্চয়তাও রয়েছে। নানা কারণে এই গ্রোথ থমকে যেতে পারে। করোনা মহামারী এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। সামনে আরও দুই বছর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স বা অন্য কারণে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
‘বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল-গ্যাসে ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতে কিছুটা আছে। সেটাও যদি উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন অনেকে হয়তো গ্যাস-বিদ্যুৎও ঠিকমতো কিনতে পারবে না। জ্বালানি আমদানি করতে না পারলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট (কেন্দ্র ভাড়া) বেড়ে যাবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এই ব্যয় বাড়বে। বিদ্যুতের পাশাপাশি টার্মিনালের সক্ষমতার চেয়ে কম এলএনজি আমদানির কারণে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতা দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখান থেকে বের হয়ে দেশীয় জ্বালানির অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, দেশে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ছিল ২৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)। সেখান থেকে ১৯ টিসিএফ উত্তোলনের পর এখন মজুদ রয়েছে ৯.০৬ টিসিএফ। প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার হিসেবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে এই মজুদ দিয়ে আগামী ৮ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত চলবে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ১৩ বছরে পাঁচটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ফলে দৈনিক ১০০৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। পাশাপাশি কিছু পুরনো কূপ সংস্কারের মাধ্যমেও গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাগরে ও পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানির প্রচেষ্টার পাশাপাশি স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। তখন বলা হয়েছিল, দেশে অনুসন্ধান ও উৎপাদনে যে খরচ পড়ে, তার চেয়ে কম দামে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে এই দাম এখন অনেক বেড়েছে।
২০১৫ সালে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এমন দাবি তুলে যখন এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর না দেওয়ায় গত তিন বছরে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। বর্তমানে দৈনিক ২৮৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র আসছে। প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত ৫০ বছরে মাত্র ৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে পেট্রোবাংলা। অথচ এ সময়ে শুধু ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেই ১৬০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও বঙ্গোপসাগরে এখনো কোনো অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি অনুসন্ধানের আগে যে বহুমাত্রিক জরিপের প্রয়োজন সেই কাজই শুরু হয়নি এখন পর্যন্ত। অথচ ভারত ও মিয়ানমার তাদের ব্লক থেকে গ্যাস তুলতে শুরু করেছে।
তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, বর্তমানে চাহিদার ২২ শতাংশ পূরণ হচ্ছে আমদানি করা গ্যাসে। ২০২৫ সালে চাহিদার ৬০ শতাংশ এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এজন্য বর্তমানে দুটি এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি নতুন আরও টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গত চার বছরে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি খোলাবাজার থেকেও আমদানি করা হবে। আগামী কয়েক বছরে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে তার বেশির ভাগই আমদানি করা এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আমদানিনির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাস্তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যত পরিকল্পনা তার বাস্তবায়ন খুবই কম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে পায়রা ও রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। মাতারবাড়ী, মহেশখালীসহ আরও কিছু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এগুলো চালাতে যে কয়লা লাগবে তার পুরোটাই আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় অনেক বাড়বে। কারণ কয়লাও এখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে প্রতি ইউনিটে ব্যয় তিন ডলার। সেখানে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় ১৫-২০ ডলার। এর আগে এই এলএনজি ৩৫ ডলার পর্যন্ত দামে আমদানি করতে হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে ১০ ডলারে আমদানির কথা থাকলেও তা সরবরাহ হচ্ছে অনেক কম। ফলে আমদানিনির্ভরতার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানি আমদানি বাড়লে পরনির্ভরশীলতাও বাড়ে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা তথা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। এরপর কমতে থাকে। সরকার দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ফনফুট গ্যাস আবিষ্কারের দাবি করলেও বাস্তবে গ্যাসের উৎপাদন আগের চেয়ে কমেছে। সবাই এগুলো জানার পরও অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। দেশে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার সময় থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরালো হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
বদরূল ইমাম বলেন, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে ও পেট্রোবাংলার যৌথ জরিপে বাংলাদেশে ৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। এর এক বছর পর নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরেক গবেষণায় দেখানো হয়, মজুদ গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ ৪২ টিসিএফ। তার মানে দেশের গ্যাস এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এজন্য অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে।
‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে তিনটি কূপ খনন করলে একটাতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু সরকার কখনোই জোরালো অনুসন্ধানে যায়নি। ২০১৪ সালে সমুদ্র জয় করলাম। এরপর প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কিছুই করিনি। সেখানে অনুসন্ধান করলে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল,’ যোগ করেন তিনি।
সূত্র মতে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১১ সালে সমীক্ষা চালায় ফরাসি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান সøামবার্জার। তখন বলা হয়েছিল, দেশে বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কিছু সংস্কার ও পরিবর্তন আনলে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু পরে সেই সংস্কার আর করা হয়নি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে অবহেলা করে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকছে সরকার। পরিকল্পিত আমদানিপ্রীতির কারণে দেশে জ্বালানি সংকট প্রকট হয়েছে। ফলে দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম।’ তিনি মনে করেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় আমি প্রত্যেককে বাড়ি দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তরের সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি গতকাল ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে বাড়িপ্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গড়তে রোডম্যাপ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক-কৌশলগত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। গতকাল ঢাকায় প্রথম অ্যাভিয়েশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিট-২০২৩’-এর আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, দেশটির এই অঞ্চলে একটি বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমানশিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমানশিল্প এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য দেন।
‘মা, আপনার দয়ায় ঘর পেয়েছি, স্কুল পেয়েছি, মাদ্রাসা পেয়েছি, রাস্তা পেয়েছি। আমার আর কোনো চিন্তা নাই মা। আমি ভিক্ষা আর করব না।’
গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ দফায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বিনামূল্যে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সময় একথা বলেন সুবিধাভোগী মো. হানিফ। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমিসহ একটি ঘর পান। একই কেন্দ্রে ঘর পাওয়া দুধজানও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আনন্দাশ্রু সংবরণ করে মো. হানিফ আরও বলেন, ‘আমি ছোট্ট একটা দোকান করে আপনার দয়ায় দিন কাটায় দিব মা। আপনার জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করা ছাড়া আমার কিছু দেওয়ার নাই। আপনার জন্য দোয়া করি মা। আমি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি, তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী দুধজান বেগম বলেন, ‘ভাবসিলাম, আমি মারা গেলে কোনখানে আমারে মাটি দিব! আমার তো জায়গাবাড়ি নাই। বাপের ঘরে হইসিলাম, ভাইয়েরা পরিচয় দেয় না আমি গরিব বইলা। আল্লাহ আমারে অহন দাঁড়ানোর শক্তি দিছে। আফনার জন্য দোয়া করব, আফনি গরিবের পাশে খাঁড়াইছেন।’
চতুর্থ পর্যায়ে ঘর ও জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দেশের আরও সাত জেলাকে ভূমিহীন এবং গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা। এসব জেলার সব উপজেলাসহ মোট ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে এসব এলাকায় নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়লে তাদেরও ঘর করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে যদি ভূমিহীন পাওয়া যায় তাদেরও ঘরের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।’
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা আরও যদি কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থেকে থাকে তাদের তালিকা করবেন। আমরা তাদেরও ঘর করে দেব। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ছিন্নমূল মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। তাদের মুখে হাসি ফোটানোই বড় পাওয়া।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের পরে ভূমিহন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা শুধু স্বাধীনতাই দেননি, এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠত।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এই দল মানুষের পাশে থাকে, তাদের জন্য কাজ করে। আমাদের একটাই লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর দেশে কেউ ঠিকানাহীন থাকবে না। আমরা চাই, দেশের সবার ঘর-বাড়ি থাকবে।’
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯১ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছু জানতেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবার প্রথমে ছুটে যায়। রাস্তাঘাট বন্ধ ছিল, তারপরও আমরা ছুটে গিয়েছিলাম। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অনেক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে কক্সবাজারে বস্তিতে থাকত। আমরা তাদের পুনর্বাসন করেছি।’
সর্বমোট ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ায় জেলার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং উপকারভোগীরা সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।
নয়াপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, ইকবাল হোসেন সবুজ এবং মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় ৮ একর জমিতে ১৪২টি ঘর করা হয়েছে। এখানে স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ এবং কবরস্থানও গড়ে তোলা হয়েছে।
এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২ শতক জমির মালিকানাসহ ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। আরও ২২ হাজার ৬টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কূটনীতিকদের বাসা-অফিসে ছোটাছুটি বেড়েছে। শক্তিধর দেশের কূটনীতিকদেরও এ সংক্রান্ত ব্যস্ততা বেড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান অস্থিরতা নিরসনে রাজনৈতিক সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী দেশগুলো।
তাদের এ আগ্রহ ও তৎপরতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় নিজের বাসায় মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের। গতকাল বুধবার দুপুরে ওই ভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল। মধ্যাহ্নভোজের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সংলাপ নিয়ে উদ্যোগ ও কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গত দুটি নির্বাচন ও বিএনপি-জামায়াতের আমলে হওয়া নির্বাচনের অনিয়মের বিষয় পিটার হাসের কাছে তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফেরা সম্ভব নয় জানিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেন। সংলাপ প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, শর্তহীন হলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানায়।
আওয়ামী লীগের ওই প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
আওয়ামী লীগের সূত্রমতে, দলটির নেতারা পিটার হাসকে বলেছেন, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিএনপির সঙ্গে তারা সংলাপ করেছিলেন। কিন্তু সংলাপের পর ২০১৪ সালে বিএনপি একতরফা ভোট বর্জন করে অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। পরের নির্বাচনে মনোনয়ন বিক্রি করা শুরু করে। টাকা খেয়ে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কারণে যা হওয়ার তাই হয়েছে। তারা আরও বলেছেন, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে চায়। শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফল। এ সফলতাকে ভয় করে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে রঙ-তামাশা শুরু করেছে।
প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পিটার হাসকে জানানো হয়েছে, নিঃশর্ত সংলাপ হতে পারে। তবে শর্ত জুড়ে দিয়ে কোনো সংলাপ ও আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে না। কারণ সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করার ক্ষমতা জনগণ শেখ হাসিনাকে দেয়নি। আইনের মধ্যে, সংবিধানের মধ্যে থাকা সব ধরনের সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের কাছে চাইলে যেকোনো সহযোগিতা সরকার দেবে। তারা বলেছেন, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অসহযোগিতাই করেনি, নির্বাচন ঠেকানো ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করেছে। এবারও একই ধারাবাহিকতায় হাঁটছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী সেটা জানতে চান তিনি।
জবাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বিএনপি ২০০১ ও ’০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এর ফলেই এক-এগারোর মতো অনির্বাচিত সরকার এসেছে। এখন পাকিস্তান ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এ ধরনের সরকারের অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না। তারা বলেছেন, বিএনপি যে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে সে অনির্বাচিত সরকার কতদিন থাকবে সেটার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সূত্র আরও জানায়, দলটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, আইনি ও আর্থিকভাবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। কমিশনকে বর্তমান সরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এ ছাড়া অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা পিটার হাসের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয়েছে, তাও তুলে ধরা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পিটার হাস আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের কাছ থেকেই বেশি শুনতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওইদিন ওবায়দুল কাদের বৈঠক শেষে বেরিয়ে বলেছিলেন, তারা চান আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করুক। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কূটনৈতিক সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদল নিয়েও বৈঠক করছেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের বৈঠক-সাক্ষাৎ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিএনপিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা একাধিকবার এসব বৈঠকের সমালোচনা করে ‘বিদেশিদের কাছে বিএনপি ধরনা’ দিচ্ছে বলে সমালোচনা করেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যেতে হবে। আজকে (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলে এসেছি, এ দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অবৈধ ব্যক্তির হাতে গড়া অবৈধ দল হলো বিএনপি। আর এই অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব মির্জা ফখরুল। কেন বলছি? বিএনপির একটা গঠনতন্ত্র আছে, সেখানে কোথায় আছে ফখরুল ১২ বছর ধরে মহাসচিব থাকবেন। তাহলে তার বৈধতা হারায় নাই? তিনি যে পদত্যাগ দাবি করেন তার নিজেরই তো পদত্যাগ করা উচিত।’
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে। গুমোট আবহাওয়া কাটিয়ে রোদ ঝলমলে উজ্জ্বল দুপুরে কাল অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠের এক কোণে তিনটি প্র্যাকটিস উইকেটে টানা অনেকক্ষণ নেট করলেন তামিম ইকবাল। দল পরপর দুটো ম্যাচে তিনশ’র বেশি রান করেছে। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে এসেছে একটি শতরান আর চারটি অর্ধশত রানের ইনিংস। এমন রান স্বর্গেও অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৩ এবং ২৩ এর বেশি করতে পারেননি। তাই তো কাল প্রধান কোচ ও ব্যাটিং কোচ মিলে নেটে অনেকটা সময় ব্যাট করালেন তামিমকে। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ দলের প্রধান দুই বোলার একটানা বল করেছেন তামিমকে। নিবিড় মনোযোগে তামিমের ব্যাটিং দেখেছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। মোস্তাফিজের বল খেলতে তামিম একটু আড়ষ্টই ছিলেন শুরুতে। সিডন্স বার দুয়েক ধরিয়ে দিয়েছেন কোথায় হচ্ছে ভুল। তাসকিনের জোরের ওপর করা ডেলিভারিগুলোকে অবশ্য ভালোভাবেই মাঝব্যাটে খেলছিলেন তামিম। একটা সময় চন্দিকা হাথুরুসিংহে এসেও ডগস্টিক দিয়ে বল থ্রো করেছেন তামিমকে, দিয়েছেন পরামর্শও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচের পরও কিছুদিনের জন্য চলে যাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে, কারণ এরপরই যে চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আজকের পর তামিমকে আবারও জাতীয় দলে ব্যাট হাতে দেখা যাবে ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টে। তবে মিরপুরের উইকেট তো আর সিলেটের মতো ব্যাটিং স্বর্গ নয়। এই মাঠে সবশেষ ৫ ওয়ানডেতেই তিনশ’র বেশি রান করেছে বাংলাদেশ, সবশেষ দুই ওয়ানডেতে হয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটো ওয়ানডে ইনিংস। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায় এখানকার উইকেট ‘অ্যাবসলিউট বেল্টার’। এমন উইকেটে তামিমের রান না পাওয়াটা দুশ্চিন্তারই। আগের ম্যাচে অবশ্য সাবধানী শুরুর পর অসম্ভব এক রান নিতে গিয়েই রান-আউট হয়ে যান ২৩ রান করা তামিম। চোটের কারণে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকার পর তামিম খেলায় ফিরে এখনো নিজের ছাপটা রাখতে পারেননি। ইংল্যান্ড সিরিজে তিন ইনিংসে করেছেন ২৩, ৩৫ ও ১১ রান। আইরিশদের বিপক্ষে করেছেন যথাক্রমে ৩ ও ২৩ রান। অথচ এই সময়টায় নাজমুল হোসেন শান্তর হাফসেঞ্চুরি ৩টি, সদ্যই অভিষেক হওয়া তাওহিদ হৃদয়ও দুই ম্যাচে করেছেন ৯২ এবং ৪৯ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রান খরায় ভুগতে থাকা লিটন দাসও সবশেষ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানো আরেক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংস খেলার পর সবশেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ বলে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। তামিমের আশপাশের সবাই রানের দেখা পাচ্ছেন, পাচ্ছেন না কেবল অধিনায়ক নিজেই।
তৃতীয় ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে ডোনাল্ড বললেন, ‘সামনে চেমসফোর্ডে আমরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যে রকম উইকেটে খেলব, দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেটটা অনেকটা ওরকমই ছিল। এরপর সামনে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ, পাকিস্তানে এশিয়া কাপ ও ভারতের মাঠে বিশ্বকাপ আছে। ভারত-পাকিস্তানের উইকেটগুলো এরকমই হবে, অনেক রান হবে।’ বড় আসরগুলোর আগে ব্যাটসম্যানরা ঘরের মাঠে রান করবেন, এটাই তো থাকবে টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া। সেই চাওয়া অবশ্য পূরণ হয়েছে, তবে রানটা আসেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজারের বেশি রান করা তামিমের ব্যাটে ভর করে।
অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে বুকে আঘাত পাওয়া মেহেদি হাসান মিরাজকে কাল দেখা গেছে অনুশীলনে। বেশ চনমনে ভঙ্গিতেই বল করছিলেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। তবে অনুশীলনে ছিলেন না মুশফিকুর রহিম। পুত্র মায়ানের অসুস্থতার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকায় ফিরে গেছেন মুশফিক, কাল রাতেই তার সিলেটে ফেরার কথা। বুধবার অনুশীলনে দেখা যায়নি সাকিব আল হাসানকেও। মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতেও মাঠে নামেননি সাকিব, ছিলেন না অনুশীলনেও। অবশ্য সাকিব কখন কোথায় থাকেন সেই হদিস রাখাটাও এখন কঠিন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও খুব সম্ভবত হাল ছেড়ে দিয়েছে সাকিবের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে। না হলে ম্যাচের আগে হেলিকপ্টারে মাগুরা চলে যাওয়া, সিরিজের মাঝে সমাবর্তন, বিমানের সঙ্গে চুক্তি সইসহ নানান কাজে সিলেট থেকে ঢাকা চলে আসা...সব কিছুতেই যে নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ বিতর্কের জন্ম দিয়ে এসে সাকিব যেন আরও ভালো খেলেন!
দেশের মাটিতে গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড বাদে সবার সঙ্গেই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছিনতাই হয়েছে বৃষ্টিতে। আইরিশদের সামর্থ্য বিচারে এগিয়ে বাংলাদেশই। এখন পর্যন্ত সিরিজের দুটো ওয়ানডেতেই টস জিতেছে আয়ারল্যান্ড। তামিমের আজ টসটাও জেতা দরকার, সেই সঙ্গে ম্যাচও। তবে আরও দরকার ব্যাটে রান, কারণ টি-টোয়েন্টি দলের সাকিবের অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য ভিন্নভাবেই ভাবাতে পারে নীতিনির্ধারকদের।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।