
সৌদি আরবের সরকার একটি খরচে ছাড় দেওয়ায় হজযাত্রীদের জনপ্রতি খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমেছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা হজযাত্রীরা ছাড়ের এ অর্থ ফেরত পাবেন। এদিকে হজের জন্য নিবন্ধনের সময় ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় এ বছরের হজের জন্য ঘোষিত প্যাকেজে থাকা চার শ্রেণির সেবার মূল্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য কমিয়েছে সৌদি সরকার। এ জন্য নিবন্ধিত হজযাত্রীরা টাকা ফেরত পাবেন।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন, তাদের কমানোর টাকা ঢাকার হজ কার্যালয় থেকে খাবারের টাকা ফেরত দেওয়ার সময় একসঙ্গে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে হজযাত্রী ৪৬ হাজার ৭২৫ টাকা (৩৫ হাজার টাকা খাবার মূল্য+১১ হাজার ৭২৫ টাকা হ্রাস) ফেরত পাবেন। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জনপ্রতি ১১ হাজার ৭২৫ টাকা ফেরত দিতে নিবন্ধনকারী হজ এজেন্সিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্যাকেজ মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এবং হজযাত্রীদের বয়সসীমা না থাকায় অনেক হজযাত্রী নতুন করে হজে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করায় পরিবর্তিত প্যাকেজে নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী ২৭ মার্চ হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব ব্যাংককে অফিস সময়ের পরেও প্রস্তুতকৃত ভাউচারগুলোর অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। ২৫ মার্চ (শনিবার) হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতিতে বিদেশি কোম্পানির পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পথ দেখান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে তখন আমদানির ঝোঁকের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এবারের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, জ্বালানির জন্য নিজস্ব দীর্ঘমেয়াদি উৎস থাকা দরকার। সংকট কাটাতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফলতা এলেও এখন অবহেলার কারণে গভীর সংকটে পড়েছে জ্বালানি খাত।
বর্তমানে সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আমদানির কারণে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তার পরও শিল্প-কারখানা ও ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েলের কাছ থেকে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, হবিগঞ্জ, রসিদপুর, কৈলাশটিলা ও বাখরাবাদ) কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তার গোড়াপত্তন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে আরও নতুন ২৩টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ফলে দেশে গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮টি। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় ওই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ এবং ২০১৬ সালে মহাপরিকল্পনা করার সময় আমি বলেছিলাম, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৯০ শতাংশ জ্বালানি আমদানি করতে হবে। এজন্য ২০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। এখনকার হিসেবে আরও বেশি অর্থের দরকার। তখন বলা হয়েছিল, আমাদের এক্সপোর্ট, রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, তাতে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না।’
ম তামিম বলেন, ‘ইকোনমিক গ্রোথ (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের অনিশ্চয়তাও রয়েছে। নানা কারণে এই গ্রোথ থমকে যেতে পারে। করোনা মহামারী এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। সামনে আরও দুই বছর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স বা অন্য কারণে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
‘বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল-গ্যাসে ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতে কিছুটা আছে। সেটাও যদি উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন অনেকে হয়তো গ্যাস-বিদ্যুৎও ঠিকমতো কিনতে পারবে না। জ্বালানি আমদানি করতে না পারলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট (কেন্দ্র ভাড়া) বেড়ে যাবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এই ব্যয় বাড়বে। বিদ্যুতের পাশাপাশি টার্মিনালের সক্ষমতার চেয়ে কম এলএনজি আমদানির কারণে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতা দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখান থেকে বের হয়ে দেশীয় জ্বালানির অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, দেশে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ছিল ২৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)। সেখান থেকে ১৯ টিসিএফ উত্তোলনের পর এখন মজুদ রয়েছে ৯.০৬ টিসিএফ। প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার হিসেবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে এই মজুদ দিয়ে আগামী ৮ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত চলবে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ১৩ বছরে পাঁচটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ফলে দৈনিক ১০০৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। পাশাপাশি কিছু পুরনো কূপ সংস্কারের মাধ্যমেও গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাগরে ও পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানির প্রচেষ্টার পাশাপাশি স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। তখন বলা হয়েছিল, দেশে অনুসন্ধান ও উৎপাদনে যে খরচ পড়ে, তার চেয়ে কম দামে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে এই দাম এখন অনেক বেড়েছে।
২০১৫ সালে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এমন দাবি তুলে যখন এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর না দেওয়ায় গত তিন বছরে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। বর্তমানে দৈনিক ২৮৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র আসছে। প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত ৫০ বছরে মাত্র ৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে পেট্রোবাংলা। অথচ এ সময়ে শুধু ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেই ১৬০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও বঙ্গোপসাগরে এখনো কোনো অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি অনুসন্ধানের আগে যে বহুমাত্রিক জরিপের প্রয়োজন সেই কাজই শুরু হয়নি এখন পর্যন্ত। অথচ ভারত ও মিয়ানমার তাদের ব্লক থেকে গ্যাস তুলতে শুরু করেছে।
তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, বর্তমানে চাহিদার ২২ শতাংশ পূরণ হচ্ছে আমদানি করা গ্যাসে। ২০২৫ সালে চাহিদার ৬০ শতাংশ এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এজন্য বর্তমানে দুটি এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি নতুন আরও টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গত চার বছরে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি খোলাবাজার থেকেও আমদানি করা হবে। আগামী কয়েক বছরে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে তার বেশির ভাগই আমদানি করা এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আমদানিনির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাস্তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যত পরিকল্পনা তার বাস্তবায়ন খুবই কম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে পায়রা ও রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। মাতারবাড়ী, মহেশখালীসহ আরও কিছু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এগুলো চালাতে যে কয়লা লাগবে তার পুরোটাই আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় অনেক বাড়বে। কারণ কয়লাও এখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে প্রতি ইউনিটে ব্যয় তিন ডলার। সেখানে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় ১৫-২০ ডলার। এর আগে এই এলএনজি ৩৫ ডলার পর্যন্ত দামে আমদানি করতে হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে ১০ ডলারে আমদানির কথা থাকলেও তা সরবরাহ হচ্ছে অনেক কম। ফলে আমদানিনির্ভরতার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানি আমদানি বাড়লে পরনির্ভরশীলতাও বাড়ে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা তথা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। এরপর কমতে থাকে। সরকার দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ফনফুট গ্যাস আবিষ্কারের দাবি করলেও বাস্তবে গ্যাসের উৎপাদন আগের চেয়ে কমেছে। সবাই এগুলো জানার পরও অনুসন্ধানে অবহেলা করা হয়েছে। দেশে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার সময় থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরালো হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
বদরূল ইমাম বলেন, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে ও পেট্রোবাংলার যৌথ জরিপে বাংলাদেশে ৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। এর এক বছর পর নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরেক গবেষণায় দেখানো হয়, মজুদ গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ ৪২ টিসিএফ। তার মানে দেশের গ্যাস এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এজন্য অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে।
‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে তিনটি কূপ খনন করলে একটাতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু সরকার কখনোই জোরালো অনুসন্ধানে যায়নি। ২০১৪ সালে সমুদ্র জয় করলাম। এরপর প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কিছুই করিনি। সেখানে অনুসন্ধান করলে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল,’ যোগ করেন তিনি।
সূত্র মতে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১১ সালে সমীক্ষা চালায় ফরাসি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান সøামবার্জার। তখন বলা হয়েছিল, দেশে বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কিছু সংস্কার ও পরিবর্তন আনলে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু পরে সেই সংস্কার আর করা হয়নি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে অবহেলা করে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকছে সরকার। পরিকল্পিত আমদানিপ্রীতির কারণে দেশে জ্বালানি সংকট প্রকট হয়েছে। ফলে দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম।’ তিনি মনে করেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় আমি প্রত্যেককে বাড়ি দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তরের সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি গতকাল ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে বাড়িপ্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গড়তে রোডম্যাপ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক-কৌশলগত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। গতকাল ঢাকায় প্রথম অ্যাভিয়েশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিট-২০২৩’-এর আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, দেশটির এই অঞ্চলে একটি বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমানশিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমানশিল্প এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য দেন।
‘মা, আপনার দয়ায় ঘর পেয়েছি, স্কুল পেয়েছি, মাদ্রাসা পেয়েছি, রাস্তা পেয়েছি। আমার আর কোনো চিন্তা নাই মা। আমি ভিক্ষা আর করব না।’
গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ দফায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বিনামূল্যে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সময় একথা বলেন সুবিধাভোগী মো. হানিফ। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমিসহ একটি ঘর পান। একই কেন্দ্রে ঘর পাওয়া দুধজানও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আনন্দাশ্রু সংবরণ করে মো. হানিফ আরও বলেন, ‘আমি ছোট্ট একটা দোকান করে আপনার দয়ায় দিন কাটায় দিব মা। আপনার জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করা ছাড়া আমার কিছু দেওয়ার নাই। আপনার জন্য দোয়া করি মা। আমি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি, তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী দুধজান বেগম বলেন, ‘ভাবসিলাম, আমি মারা গেলে কোনখানে আমারে মাটি দিব! আমার তো জায়গাবাড়ি নাই। বাপের ঘরে হইসিলাম, ভাইয়েরা পরিচয় দেয় না আমি গরিব বইলা। আল্লাহ আমারে অহন দাঁড়ানোর শক্তি দিছে। আফনার জন্য দোয়া করব, আফনি গরিবের পাশে খাঁড়াইছেন।’
চতুর্থ পর্যায়ে ঘর ও জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দেশের আরও সাত জেলাকে ভূমিহীন এবং গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা। এসব জেলার সব উপজেলাসহ মোট ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে এসব এলাকায় নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়লে তাদেরও ঘর করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে যদি ভূমিহীন পাওয়া যায় তাদেরও ঘরের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।’
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা আরও যদি কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থেকে থাকে তাদের তালিকা করবেন। আমরা তাদেরও ঘর করে দেব। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ছিন্নমূল মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। তাদের মুখে হাসি ফোটানোই বড় পাওয়া।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের পরে ভূমিহন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা শুধু স্বাধীনতাই দেননি, এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠত।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এই দল মানুষের পাশে থাকে, তাদের জন্য কাজ করে। আমাদের একটাই লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর দেশে কেউ ঠিকানাহীন থাকবে না। আমরা চাই, দেশের সবার ঘর-বাড়ি থাকবে।’
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯১ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছু জানতেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবার প্রথমে ছুটে যায়। রাস্তাঘাট বন্ধ ছিল, তারপরও আমরা ছুটে গিয়েছিলাম। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অনেক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে কক্সবাজারে বস্তিতে থাকত। আমরা তাদের পুনর্বাসন করেছি।’
সর্বমোট ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ায় জেলার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং উপকারভোগীরা সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।
নয়াপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, ইকবাল হোসেন সবুজ এবং মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় ৮ একর জমিতে ১৪২টি ঘর করা হয়েছে। এখানে স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ এবং কবরস্থানও গড়ে তোলা হয়েছে।
এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২ শতক জমির মালিকানাসহ ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। আরও ২২ হাজার ৬টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কূটনীতিকদের বাসা-অফিসে ছোটাছুটি বেড়েছে। শক্তিধর দেশের কূটনীতিকদেরও এ সংক্রান্ত ব্যস্ততা বেড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান অস্থিরতা নিরসনে রাজনৈতিক সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী দেশগুলো।
তাদের এ আগ্রহ ও তৎপরতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় নিজের বাসায় মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের। গতকাল বুধবার দুপুরে ওই ভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল। মধ্যাহ্নভোজের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সংলাপ নিয়ে উদ্যোগ ও কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গত দুটি নির্বাচন ও বিএনপি-জামায়াতের আমলে হওয়া নির্বাচনের অনিয়মের বিষয় পিটার হাসের কাছে তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফেরা সম্ভব নয় জানিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেন। সংলাপ প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, শর্তহীন হলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানায়।
আওয়ামী লীগের ওই প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
আওয়ামী লীগের সূত্রমতে, দলটির নেতারা পিটার হাসকে বলেছেন, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিএনপির সঙ্গে তারা সংলাপ করেছিলেন। কিন্তু সংলাপের পর ২০১৪ সালে বিএনপি একতরফা ভোট বর্জন করে অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। পরের নির্বাচনে মনোনয়ন বিক্রি করা শুরু করে। টাকা খেয়ে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কারণে যা হওয়ার তাই হয়েছে। তারা আরও বলেছেন, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে চায়। শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফল। এ সফলতাকে ভয় করে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে রঙ-তামাশা শুরু করেছে।
প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পিটার হাসকে জানানো হয়েছে, নিঃশর্ত সংলাপ হতে পারে। তবে শর্ত জুড়ে দিয়ে কোনো সংলাপ ও আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে না। কারণ সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করার ক্ষমতা জনগণ শেখ হাসিনাকে দেয়নি। আইনের মধ্যে, সংবিধানের মধ্যে থাকা সব ধরনের সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের কাছে চাইলে যেকোনো সহযোগিতা সরকার দেবে। তারা বলেছেন, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অসহযোগিতাই করেনি, নির্বাচন ঠেকানো ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করেছে। এবারও একই ধারাবাহিকতায় হাঁটছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী সেটা জানতে চান তিনি।
জবাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বিএনপি ২০০১ ও ’০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এর ফলেই এক-এগারোর মতো অনির্বাচিত সরকার এসেছে। এখন পাকিস্তান ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এ ধরনের সরকারের অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না। তারা বলেছেন, বিএনপি যে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে সে অনির্বাচিত সরকার কতদিন থাকবে সেটার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সূত্র আরও জানায়, দলটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, আইনি ও আর্থিকভাবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। কমিশনকে বর্তমান সরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এ ছাড়া অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা পিটার হাসের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয়েছে, তাও তুলে ধরা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পিটার হাস আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের কাছ থেকেই বেশি শুনতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওইদিন ওবায়দুল কাদের বৈঠক শেষে বেরিয়ে বলেছিলেন, তারা চান আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করুক। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কূটনৈতিক সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদল নিয়েও বৈঠক করছেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের বৈঠক-সাক্ষাৎ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিএনপিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা একাধিকবার এসব বৈঠকের সমালোচনা করে ‘বিদেশিদের কাছে বিএনপি ধরনা’ দিচ্ছে বলে সমালোচনা করেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যেতে হবে। আজকে (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলে এসেছি, এ দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অবৈধ ব্যক্তির হাতে গড়া অবৈধ দল হলো বিএনপি। আর এই অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব মির্জা ফখরুল। কেন বলছি? বিএনপির একটা গঠনতন্ত্র আছে, সেখানে কোথায় আছে ফখরুল ১২ বছর ধরে মহাসচিব থাকবেন। তাহলে তার বৈধতা হারায় নাই? তিনি যে পদত্যাগ দাবি করেন তার নিজেরই তো পদত্যাগ করা উচিত।’
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে। গুমোট আবহাওয়া কাটিয়ে রোদ ঝলমলে উজ্জ্বল দুপুরে কাল অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠের এক কোণে তিনটি প্র্যাকটিস উইকেটে টানা অনেকক্ষণ নেট করলেন তামিম ইকবাল। দল পরপর দুটো ম্যাচে তিনশ’র বেশি রান করেছে। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে এসেছে একটি শতরান আর চারটি অর্ধশত রানের ইনিংস। এমন রান স্বর্গেও অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৩ এবং ২৩ এর বেশি করতে পারেননি। তাই তো কাল প্রধান কোচ ও ব্যাটিং কোচ মিলে নেটে অনেকটা সময় ব্যাট করালেন তামিমকে। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ দলের প্রধান দুই বোলার একটানা বল করেছেন তামিমকে। নিবিড় মনোযোগে তামিমের ব্যাটিং দেখেছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। মোস্তাফিজের বল খেলতে তামিম একটু আড়ষ্টই ছিলেন শুরুতে। সিডন্স বার দুয়েক ধরিয়ে দিয়েছেন কোথায় হচ্ছে ভুল। তাসকিনের জোরের ওপর করা ডেলিভারিগুলোকে অবশ্য ভালোভাবেই মাঝব্যাটে খেলছিলেন তামিম। একটা সময় চন্দিকা হাথুরুসিংহে এসেও ডগস্টিক দিয়ে বল থ্রো করেছেন তামিমকে, দিয়েছেন পরামর্শও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচের পরও কিছুদিনের জন্য চলে যাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে, কারণ এরপরই যে চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আজকের পর তামিমকে আবারও জাতীয় দলে ব্যাট হাতে দেখা যাবে ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টে। তবে মিরপুরের উইকেট তো আর সিলেটের মতো ব্যাটিং স্বর্গ নয়। এই মাঠে সবশেষ ৫ ওয়ানডেতেই তিনশ’র বেশি রান করেছে বাংলাদেশ, সবশেষ দুই ওয়ানডেতে হয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটো ওয়ানডে ইনিংস। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায় এখানকার উইকেট ‘অ্যাবসলিউট বেল্টার’। এমন উইকেটে তামিমের রান না পাওয়াটা দুশ্চিন্তারই। আগের ম্যাচে অবশ্য সাবধানী শুরুর পর অসম্ভব এক রান নিতে গিয়েই রান-আউট হয়ে যান ২৩ রান করা তামিম। চোটের কারণে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকার পর তামিম খেলায় ফিরে এখনো নিজের ছাপটা রাখতে পারেননি। ইংল্যান্ড সিরিজে তিন ইনিংসে করেছেন ২৩, ৩৫ ও ১১ রান। আইরিশদের বিপক্ষে করেছেন যথাক্রমে ৩ ও ২৩ রান। অথচ এই সময়টায় নাজমুল হোসেন শান্তর হাফসেঞ্চুরি ৩টি, সদ্যই অভিষেক হওয়া তাওহিদ হৃদয়ও দুই ম্যাচে করেছেন ৯২ এবং ৪৯ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রান খরায় ভুগতে থাকা লিটন দাসও সবশেষ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানো আরেক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংস খেলার পর সবশেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ বলে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। তামিমের আশপাশের সবাই রানের দেখা পাচ্ছেন, পাচ্ছেন না কেবল অধিনায়ক নিজেই।
তৃতীয় ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে ডোনাল্ড বললেন, ‘সামনে চেমসফোর্ডে আমরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যে রকম উইকেটে খেলব, দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেটটা অনেকটা ওরকমই ছিল। এরপর সামনে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ, পাকিস্তানে এশিয়া কাপ ও ভারতের মাঠে বিশ্বকাপ আছে। ভারত-পাকিস্তানের উইকেটগুলো এরকমই হবে, অনেক রান হবে।’ বড় আসরগুলোর আগে ব্যাটসম্যানরা ঘরের মাঠে রান করবেন, এটাই তো থাকবে টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া। সেই চাওয়া অবশ্য পূরণ হয়েছে, তবে রানটা আসেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজারের বেশি রান করা তামিমের ব্যাটে ভর করে।
অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে বুকে আঘাত পাওয়া মেহেদি হাসান মিরাজকে কাল দেখা গেছে অনুশীলনে। বেশ চনমনে ভঙ্গিতেই বল করছিলেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। তবে অনুশীলনে ছিলেন না মুশফিকুর রহিম। পুত্র মায়ানের অসুস্থতার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকায় ফিরে গেছেন মুশফিক, কাল রাতেই তার সিলেটে ফেরার কথা। বুধবার অনুশীলনে দেখা যায়নি সাকিব আল হাসানকেও। মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতেও মাঠে নামেননি সাকিব, ছিলেন না অনুশীলনেও। অবশ্য সাকিব কখন কোথায় থাকেন সেই হদিস রাখাটাও এখন কঠিন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও খুব সম্ভবত হাল ছেড়ে দিয়েছে সাকিবের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে। না হলে ম্যাচের আগে হেলিকপ্টারে মাগুরা চলে যাওয়া, সিরিজের মাঝে সমাবর্তন, বিমানের সঙ্গে চুক্তি সইসহ নানান কাজে সিলেট থেকে ঢাকা চলে আসা...সব কিছুতেই যে নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ বিতর্কের জন্ম দিয়ে এসে সাকিব যেন আরও ভালো খেলেন!
দেশের মাটিতে গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড বাদে সবার সঙ্গেই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছিনতাই হয়েছে বৃষ্টিতে। আইরিশদের সামর্থ্য বিচারে এগিয়ে বাংলাদেশই। এখন পর্যন্ত সিরিজের দুটো ওয়ানডেতেই টস জিতেছে আয়ারল্যান্ড। তামিমের আজ টসটাও জেতা দরকার, সেই সঙ্গে ম্যাচও। তবে আরও দরকার ব্যাটে রান, কারণ টি-টোয়েন্টি দলের সাকিবের অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য ভিন্নভাবেই ভাবাতে পারে নীতিনির্ধারকদের।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।