
সকাল
‘বড় ভাই, গাবতলী কোন দিকে?’ কিছুটা দৌড়ে এসে জানতে চায় এক ছেলে। হাতের ইশারায় বাম দিকের রাস্তা দেখিয়ে বলি, ‘এখান থেকেই বাসে উঠতে হবে।’ ছেলেটি ফের জানতে চায়, ‘আমার কাছে টাকা নাই। গাবতলীতে হাঁইটা যাইতে কতক্ষণ লাগবে?’ বলি, ‘সে তো অনেক টাইম লাগবে। ঘণ্টাখানেক তো লাগবেই।’
ছেলেটি সূর্যের দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। তারপর দেখানো রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। তার পায়ের দিকে আমার চোখ যায়। দুটি পা-ই খালি। ডান পায়ের তালু আবার গামছার কিছু অংশ দিয়ে বাঁধা। মনে হচ্ছে সেখানে কোনো ঘা রয়েছে বা কেটে গেছে। পরনে পুরনো একটা জিন্সের প্যান্ট; নিচের দিকটা ছেঁড়া ও কাদামাখা। গায়ে চেক ফুলশার্ট। মুখভরা ব্রণ। গোঁফ গজাচ্ছে। হাতে একটি লুঙ্গি!
আমি বলি, ‘এখানে ওয়েট করো, বিআরটিসি বাস এলে উঠে পড়বে। বলবে, টাকা নাই!’ ছেলেটি বলে, ‘আরে নাহ। টাকা না থাকলে ম্যালা কথা শুনতে হবে।’ সে গায়ে চাদর জড়ানোর মতো করে লুঙ্গিটি জড়িয়ে হাঁটতে থাকে। আমি তাকিয়ে থাকি তার দিকে। ইসিবি-চত্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে বসুমতী কিংবা রবরব পরিবহনে গাবতলীর ভাড়া ৩০ টাকা। বিআরটিসিতে ১০ টাকাতেই হবে। ছেলেটিকে কি আমি টাকাটা দেব? তাকে কি থামতে বলব? আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ছেলেটি হেঁটে চলছে তো চলছেই! আমার বাস চলে আসে।
বিকেল
রঙিন কাগজে মোড়ানো প্যাকেট হাতে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা অ্যাপ্রন পরা মেয়েটি এসে তার পাশেই দাঁড়ায়। ইসিবি-চত্বরে পৌঁছামাত্র বৃষ্টি ধরে ফেলে আমাকে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একটি দোকানের সামনে আশ্রয় নিই। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন।
কিছুক্ষণ পর কানে এলো একটি শব্দ। কীসের শব্দ? গাড়ির হর্ন, রিকশার বেল আর বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে যেটি আমাদের কানে এলোÑ গ্লাস ভাঙার শব্দ। ডান পাশে তাকাতেই দেখি ফুটপাতে একটি অর্ধেক লাল রঙের ভাঙা মগ পড়ে আছে, যেখানটায় সাদা অ্যাপ্রন পরা মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সবার চোখ সেদিকে চলে যায়। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে মেয়েটির চেহারা দেখা যায় না। ছেলেটির চেহারা দেখা যাচ্ছে।
শুনতে পেলাম মেয়েটি বলছে, ‘আর কক্ষনো গিফট দিবা না। ছেলেটি বৃষ্টিতে ভিজছে; মেয়েটি ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে। ছেলেটি একেবারে চুপ, মুখটা মলিন।
‘বুঝলা?’ এবার মেয়েটির গলা বেশ চড়া; ধমকের সুর। ততক্ষণে ছেলেটি ফুটপাতে বসে পড়েছে। বৃষ্টির পানি আর তার চোখের পানি একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই দেখছি। ছেলেটি আর মেয়েটিও আমাদের দেখছে। কোনো শব্দ নেই। মেয়েটি অকারণে দাঁড়িয়ে আছে, ছেলেটিও অকারণে বসে আছে। এ দৃশ্যের যেন সমাপ্তি নেই!
ছেলেটি মেয়েটিকে পছন্দ করে; মেয়েটি করে না। গিফট ছুড়ে দিয়েই মেয়েটির হাঁটা দেওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। কৌতূহল বাড়ছে আমাদের।
যাব যমুনা ফিউচার পার্কে। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তা পার হয়ে ইসিবি-চত্বরের ডান পাশে গিয়ে দাঁড়াই। জাবালে নূর কিংবা আকিক পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছি আর ওই মেয়ে আর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছি। মিনিট দশেক পর দেখি, মেয়েটি চলে যাচ্ছে মাটিকাটা বাজারের দিকে। কিন্তু ছেলেটি সেখানেই বসে আছে।
আমি ছেলেটির কথা ভাবছি। ভাবছি বৃষ্টির কথাও। কী দারুণ কম্বিনেশন! হয়তো কিছুক্ষণ পর ছেলেটি উঠে চলে যাবে।
জাবালে নূর চলে এসেছে। আমি উঠতে যাব, ঠিক তখনই দেখি মেয়েটি ফিরে আসছে ছেলেটির দিকে। বাসে আর ওঠা হয় না আমার। শেষ দৃশ্য দেখার জন্য বৃষ্টির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকি।
মেয়েটি বেশ দূরে চলে গিয়েছিল; কিন্তু ফিরল কেন? আমার হিসাব মেলে না। মেয়েটি ছেলেটির পায়ের কাছে পড়ে থাকা অর্ধেক ভাঙা মগটি তুলে নিল। ভাবলাম, রাগ কমেছে। ছেলেটির এভাবে বসে থাকা ওর মনে দাগ কেটেছে। কিন্তু নাহ। মেয়েটি অর্ধেক ভাঙা মগটি আবারও ছুড়ে ফেলে দিল ফুটপাতে। এবার মগটি টুকরো টুকরো হয়ে গেল। লাল রঙের মগটির টুকরো অংশগুলো দেখে মনে হলো, ছেলেটির হৃদয়টাও টুকরো হয়ে ফুটপাতে পড়ে গেল। আমি বাসে উঠে পড়ি।
সন্ধ্যা
সন্ধ্যা ৭টা। সাত-আট বছরের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইসিবি-চত্বরের একটি দোকানের সামনে। আমাকে দেখেই কী যেন বলে। আমি বুঝতে পারি না। পরের কথাটা ঠিকই বুঝতে পারি। সে আইসক্রিম খাবে। আমাকে বলে, ‘একটা আইচকিরিম কিনে দিবেন?’
আমি মানিকদি এলাকার দিকে যাব। রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। রিকশা, বাইক, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক যাচ্ছেই। কোনো বিরাম নেই। মেয়েটিকে বলি, ‘তোদের বাসা কোথায়?’ মেয়েটি উত্তর না দিয়ে কয়েক বিল্ডিং পরের একটি বাসা দেখিয়ে বলে, ‘আমার মায় ওই বাসায় কাজ করে।’
রাস্তাঘাটে প্রায়ই সাত-আট বছরের ছেলেমেয়েদের আবদারের পাল্লায় পড়তে হয়। কখনো প্রশ্রয় দিই, আবার কখনো এড়িয়ে যাই। আজকেও বিষয়টি এড়িয়ে রাস্তা পার হতে যাব এমন সময় অজান্তেই পেছন ফিরে তাকাই। দেখি, মেয়েটিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি। পারি না। তবে মনে হলো ওর চোখ কী যেন বলতে চায়। আমার পা থেমে যায়। বলি, ‘একটু দাঁড়া, আইসক্রিম কিনে দিচ্ছি।’
মেয়েটিকে দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে ঢুকলাম ভেতরে। একটি ইগলু চকবার কিনলাম। দোকানদারের কাছে ভাংতি না থাকায় তিনি দুটি চকলেটও ধরিয়ে দিলেন। আমি মেয়েটির হাতে চকবারটি ধরিয়ে দিই। মেয়েটি আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়েই দৌড়। দুটো চকলেট আর দেওয়া হয় না। মেয়েটি আইসক্রিম হাতে নিয়েই রাস্তা দ্রুত পার হয়ে মানিকদির দিকেই যাচ্ছে। আমিও ওর পেছন পেছন দ্রুত হাঁটছি।
ইসিবি-চত্বর পার হয়ে মেয়েটি মানিকদির দিকে যেতে লাগল। মেয়েটি আইসক্রিম না খেয়ে কোথায় যাচ্ছে! আমার কৌতূহল বাড়ে। ওকে ফলো করতে থাকি। মেয়েটি কিছুদূর গিয়ে থামে। আমিও থামি। কবরস্থানের দেয়ালের পাশের ফুটপাতে এক বৃদ্ধার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। আমি একটু দূরে মোবাইলে কথা বলার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। ‘ও দাদি, তোমার লাইগা আইচকিরিম আনছি।’ নিয়নলাইটের আলোয় তার চেহারাটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। তবে বয়সের ভারে সে যে ন্যুব্জ সেটা বুঝতে পারছিলাম।
রাত
স্রেফ এক সেকেন্ড। হাইড্রোলিক ব্রেক না থাকলে কী যে ঘটত! তাকিয়ে দেখি, আমার বাইকের সামনে এক নারী দাঁড়িয়ে; তার কোলে এক-দেড় বছরের এক বাচ্চা। ফুটপাত থেকে হুট করে নেমে ওই নারী আমার বাইকের সামনে; আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আছেন।
রাত ১১টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। বাইকের গতি ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার। জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার পার হয়ে শুধুই মাটিকাটা ফুটওভার ব্রিজ পার হয়েছি। ইসিবি-চত্বরে আসামাত্রই ওই নারী সামনে এসে পড়লেন।
বাইক থামিয়ে ধমক দিতে যাব। কিন্তু সড়কবাতির আলোয় চোখ যায় তার কোলে থাকা বাচ্চার দিকে। ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাইকটার ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যাই। নারী বলেন, ‘মাইয়াডা না খায়া আছে। কিছু টাকা দেবেন?’ আমার বুকটা ধুক করে ওঠে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফোন করে একজন বিচারক ও সচিবকে ‘জেল খাটানো’র হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বন্দির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বন্দি আমান উল্লাহ চৌধুরীকে পৃথক সেলে নজরদারিতে রেখেছে কারাগার
কর্র্তৃপক্ষ। এদিকে কারাগার-১ এ বন্দি আমানের স্ত্রী নুসরাত জাহান কারা কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, দুই অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে।
কাশিমপুর কারাগার সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত আমান উল্লাহ চৌধুরী ঢাকার ধানম-ি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। গুলশান থানার একটি মামলায় তিনি ২০২২ সালের ১৫ মে থেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমান উল্লাহ চৌধুরীকে ২০২১ সালে আগস্ট মাসে গুলশান থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পাঠানো। পরে কারা কর্র্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ১৩ মে তাকে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ জানান, বন্দি আমান উল্লাহ সম্প্রতি কারাগারের সরকারি ফোন থেকে একজন বিচারক ও একজন যুগ্মসচিবকে জেল খাটানোর হুমকি দেন। পরে ওই দুই কর্মকর্তা কাশিমপুর কারা কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। কারা কর্র্তৃপক্ষ কর্তৃক কারাবিধি মোতাবেক ওই বন্দিকে পৃথক সেলে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনার পর কারা কর্র্তৃপক্ষ আমান উল্লাহ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ফোনে হুমকি প্রদানের কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে আমান উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নুসরাত জাহান গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগে দাবি করেছেন, তার স্বামীকে নির্যাতন থেকে বাঁচতে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পর আরও দশ লাখ টাকা দাবি করে কারা কর্র্তৃপক্ষ। অভিযোগের কপি কারা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। তবে কারা কর্র্তৃপক্ষ ঘুষ নেওয়া ও টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে নুসরাতের দাবি করেন, গত ৭ মার্চ আমান আদালতে হাজিরা দিয়ে কাশিমপুর জেল হাজতে ফিরলে রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় রাতে চিত্রা ভবনের ৩৮ নম্বর রুম থেকে আমানকে নিচ তলার ফাঁসির সেল ‘০’ নম্বর রুমে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়।
এ বিষয়ে জেল সুপার মো. শাহজাহান বলেন, অনেক বন্দি কারা কর্র্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময় অযৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা দাবি করেন। তাদের সে সুযোগ না দিলে কারা কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা প্রকার রটনা রটায়। যার কোনো সত্যতা ও ভিত্তি নেই।
আমান উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগকারী ওই নারী যে ধরনের অভিযোগ তুলেছেন, তার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুমিনমাত্রই পবিত্র রমজান মাসের নেয়ামত লাভের প্রত্যাশী। সে রমজানকে আন্তরিকভাবে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানাতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে। এ লক্ষেত বছরজুড়ে যখনই নতুন চাঁদ ওঠে মুমিন দোয়া পড়ে- ‘আল্লাহুম্মা আহলিলহু আলাইনা বিল-ইয়ুমনি ওয়াল-ইমানি ওয়াস-সালামাতি ওয়াল-ইসলামি; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে বরকতময়, ইমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করুন। (হে নতুন চাঁদ) আল্লাহ আমার ও তোমার প্রভু।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সন্ধ্যার পশ্চিমাকাশে পবিত্র রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখে মুমিন-মুসলমানরা আনন্দচিত্তে দোয়া পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ উদ্যমে, নতুন সংকল্পে রমজানের কল্যাণ লাভে নিমগ্ন হওয়ার নিয়ত করেছে। গতকাল রাতে এশার নামাজের পর তারাবির নামাজ শেষে ভোরে সাহরি খেয়ে উপমহাদেশের মুসলমানরা প্রথম রোজা রেখেছেন। আজ শুক্রবার প্রথম রোজা। যদিও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে।
রমজানুল মোবারক। বছরের বারো মাসের সর্বাধিক মর্যাদাশীল ও মহিমান্বিত মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন, যা সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব এবং মানবজাতির হেদায়েতের দিশারী। এ মাসে তিনি রেখেছেন লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ মাসের দিবসে তিনি ফরজ করেছেন সিয়াম (রোজা), যা ইসলাম ধর্মের মূল পাঁচ ভিত্তির একটি। আর রাতে রয়েছে তারাবির বিধান, যা বান্দা ও মাবুদের মাঝে কিয়ামুল লাইল ও তেলাওয়াতে কোরআনের মাধ্যমে নিগূঢ় সম্পর্ক স্থাপনের অনন্য মাধ্যম।
রমজান মাসে সুন্নত করা হয়েছে ইতিকাফ, যাতে বান্দা তার রবের ঘরে, তার একান্ত মেহমান হয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করে। এ মাসকে ঘিরে হুকুম করা হয়েছে সদকাতুল ফিতরের, যাতে গরিবের মুখে আনন্দের হাসি ফোটে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পুরস্কার দিবসের বার্তা নিয়ে উদিত হয় ঈদের চাঁদ, যাতে বান্দা তার প্রভুর কাছ থেকে লাভ করতে পারে রহমত ও মাগফেরাতের পুরস্কার।
তবে এ মাগফিরাত পেতে হলে আমলে অগ্রগামী হতে হবে। গোনাহ বর্জনের পাশাপাশি দেহমন শুদ্ধ ও পবিত্র করতে রোজাপালনসহ সংশ্লিষ্ট ইবাদত-বন্দেগি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তবেই মিলবে কাক্সিক্ষত পুরস্কার।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমত ও করুণা বান্দার প্রতি অধিক নিবিষ্ট হয়, নেক ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া সহজ হয়। জাহান্নামের কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। গোনাহের তাড়না দমিত হয়। এ মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। তার ওয়াসওয়াসা (প্রভাব) ও কুমন্ত্রণা নিষ্ক্রিয় হয়। এ মাসে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্ত করে থাকেন জাহান্নামের আগুন থেকে। অতএব এ মাস হলো আল্লাহমুখী হওয়ার, তার প্রিয়পাত্র হওয়ার, গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে তা নৈকট্য অর্জন করার। বলা হয়, মুমিনের জন্য এ মাস নেকি লাভ ও তাকওয়া অর্জনের বসন্ত। এ মাসে সে সংগ্রহ করে তার গোটা বছরের আত্মিক পরিশুদ্ধির পাথেয়।
এমন মোবারক মাসে আমরা উপনীত হয়েছি, আমাদের সৌভাগ্য এটা। তাই এই মাস লাভ করার পরও এর কল্যাণ ও বরকত থেকে উদাসীন থাকা, আত্মিক পরিশুদ্ধি ও উৎকর্ষের ব্যাপারে বেখবর থাকা অনেক বড় অপ্রাপ্তির কথা। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৩৬৮
মুমিনের শান হচ্ছে, আল্লাহর দেওয়া রমজানের উপঢৌকনকে সে গনিমত মনে করবে এবং এ থেকে সে বেশি থেকে বেশি উপকৃত হতে সচেষ্ট ও তৎপর থাকবে। রমজানের প্রথম দিনে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাতভর বৃষ্টির পর কাল দুপুর নাগাদও সিলেটের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কা। তবে বেলা বাড়তেই সূর্যের দেখা মিলল, মেঘও কাটল। আকাশে সূর্যের হাসির পর মাঠেও দেখা মিলল জয়ের হাসির। দারুণ সে জয়। এই প্রথম পেসাররা নিল ইনিংসের সবকটি উইকেট। আর ১০২ রান তাড়ায় ম্যাচও জিতল ১০ উইকেটে, যা যে কোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম। যে পারফরম্যান্স দিয়ে ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতল টাইগাররা ২-০ ব্যবধানে।
গোটা ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের ১১তম ওভার। ১০২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের করা হাফসেঞ্চুরি হবে এটাই ছিল একমাত্র অনিশ্চয়তা। ১০ ওভার পর্যন্ত পাশাপাশিই ছিলেন দুজনে, তামিম ৩৪ আর লিটন ৩৬। হামফ্রেইসের বলে বিশাল এক ছক্কা মেরে এগিয়ে গেছেন তামিম। ১১ ওভার শেষে তামিম ৪০ আর লিটন ৩৭ রানে অপরাজিত। পরের ওভারে লিটনও চার মারলেন কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে। ১১ ওভার পর তামিমের রান ৪০ আর লিটনের ৪২। এই পর্যায়ে এসে বোধহয় তামিম রণেভঙ্গ দিলেন অনুজের সঙ্গে। নতুন ওভারের শুরুতে স্ট্রাইকে লিটন, তিনটা বলে রান না নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুটো বাউন্ডারি মেরে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করলেন লিটন। শেষ বল ডট দিয়ে পরের ওভারের শুরুতে অধিনায়ককে জয়সূচক রান করার সৌজন্য দেখিয়েছেন। আগের ম্যাচে লিটন করেছিলেন ৭০ রান, কাল করেছেন ৩৮ বলে ৫০। তামিম অপরাজিত থাকলেন ৪১ বলে ৪১ করে। ইনিংসটা সাজানো ছিল ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায়। আগ্রাসী হওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তাই স্ট্রাইক-রেট নিয়ে নেই মাথাব্যথাও। দারুণ দুটো দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভ খেলেছেন মার্ক আডাইয়ের বলে। ইনিংসের দুটো ছক্কাই মেরেছেন হামফ্রেইর বলে। সিরিজের শুরুর দুটো ম্যাচে তামিম ছন্দে ছিলেন না, শেষ ম্যাচে এসে হাফসেঞ্চুরি না পেলেও তার ব্যাটিংয়ের ধরন মন ভরিয়েছে। তামিম নিজেও ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘ব্যাট হাতে যা করতে চেয়েছি তাই হয়েছে।’
ব্যাটসম্যানদের কাজটা এত সহজ হয়েছে হাসান-এবাদত-তাসকিনদের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে। নতুন বল হাতে হাসান মাহমুদ ডোহেনি, স্টারলিং আর ট্যাকটরের উইকেট তুলে নিয়ে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এই ডানহাতি পেসার। উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন তাসকিন এবং এবাদতও। তিন পেসারকে সামলাতে রীতিমতো খাবি খেয়েছে আইরিশ ব্যাটসম্যানরা। ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানেই অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। হাসানের ৫ উইকেট, তাসকিনের ৩ শিকার আর এবাদতের জোড়া উইকেট। মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টায় (১৩৭ মিনিট) শেষ আইরিশদের ব্যাটিং। এরপর ম্যাচটা জিততে বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে মাত্র ১ ঘণ্টা। ৪০৯তম ওয়ানডেতে এসে প্রথমবার ১০ উইকেটের জয় পেল বাংলাদেশ। অল্পের জন্যই হাতছাড়া হয়েছে আরেকটি রেকর্ড। ২২১ বল হাতে রেখে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে অব্যবহৃত বলের হিসাবে, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। বলের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ২২৯ বল হাতে রেখে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অবশ্য জয়ের লক্ষ্য ছিল মাত্র ৪৫ রান। সেদিন লক্ষ্যটা ছুঁয়েছিল ১১.৫ ওভারে, গতকাল জিতেছে ১৩.১ ওভারে।
সিরিজ জয়ের পর তামিম বললেন, ‘এই সিরিজে কমতি কিছু নেই। জোর করে কমতি আনতে চাইলে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিং না করাটা আনা যেতে পারে। যা যা করতে চেয়েছি সবই হয়েছে, সামনের দিনগুলোতে এভাবেই খেলব।’
রানের অঙ্কে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়, সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এবং প্রথমবার ১০ উইকেটে জয়; তিন ম্যাচে তিন রকম প্রাপ্তি বাংলাদেশের। শেষ ম্যাচে অধিনায়কও ফিরেছেন চেনা চেহারায়। এর সঙ্গে মুশফিকের দ্রুততম সেঞ্চুরির, হাসানের ৫ উইকেট এমন অনেক ব্যক্তিগত প্রাপ্তিও আছে অর্জনের খাতায়। তবে সব ছাপিয়ে নিঃসন্দেহে বড় প্রাপ্তি ছয় নম্বরে মুশফিকের দারুণ ব্যাটিং, যা তাকে এনে দিয়েছে সিরিজ সেরারও পুরস্কার।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।