
মানহানির মামলায় দণ্ডিত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তার পার্লামেন্টের সদস্যপদও খারিজ হয়ে গেল। কংগ্রেস নেতা রাহুল লোকসভায় কেরালার ওয়েনাড আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রায় ঘোষণার দিন থেকেই রাহুল আর পার্লামেন্টের সদস্য থাকার যোগ্য নন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন রাহুল। ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে’ রাহুলের এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদি মানহানির মামলাটি করেছিলেন। চার বছর আগে করা ওই মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। সাজা হলেও রাহুল জামিনে রয়েছেন, তাকে আপিল করার সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
গতকাল রায়ের পরদিন স্বল্প সময়ের জন্য লোকসভায় গিয়েছিলেন রাহুল। তিনি সেখানে দলীয় এমপিদের এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তার মা, কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। বেশ কিছু ইস্যুতে হট্টগোলের কারণে শুরুর কয়েক সেকেন্ড পরই লোকসভার অধিবেশন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়, রাহুলও এরপর পার্লামেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান।
রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এদিন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর সাংসদরা দিল্লির বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অভিমুখে মিছিল শুরু করলেও পুলিশ বাধায় তা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।
শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেই ‘গণতন্ত্র বিপদে’ লেখা ব্যানার নিয়ে তাদের মিছিল শুরু হয়েছিল। পুলিশ নেতাদের আটক করে বাসে কাছাকাছি একটি থানায় নিয়ে যাওয়ায় মিছিলটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
পুলিশ বলছে, বিরোধী দলীয় এমপিদের মিছিলটির অনুমতি ছিল না। তা ছাড়া প্রেসিডেন্টও বৈঠকের জন্য এমপিদের কোনো সময় দেননি।
আদানি-হিনডেনবার্গ ইস্যু তদন্তে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির দাবি জানানো এই বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদি মুর্মুর সাক্ষাৎ চেয়েছে। দলগুলো বলছে, ধনী শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথিত বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ২০১৯ সালে করা একটি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দিয়ে যে শোরগোল তোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশোধমূলক রাজনীতির কারণে রাহুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে শুক্রবার একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস বিক্ষোভও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
কংগ্রেসের ভাষ্য, রাহুলকে চুপ করিয়ে দিতেই এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করতে চাইছে।
তবে বিজেপি বলছে, ‘চোর’ মন্তব্যে পিছিয়ে পড়া ‘মোদি’ সম্প্রদায়কে অপমান করায় স্বাধীন বিচার বিভাগ রাহুলকে দণ্ড দিয়েছে, এখানে তাদের হাত নেই।
নাম আছে কিন্তু নিবন্ধন নেই। বেশির ভাগেরই কার্যালয় নেই। বছরের পর বছর চলে ইচ্ছেমতো কমিটি দিয়ে। এ নিয়ে আছে কোন্দল। দলাদলিতে সংগঠন ভেঙে একই নামে হয় আরেক সংগঠন। রয়েছে শাখা সংগঠন। ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের লোগো। সংগঠনের নেতাদের অনেকে ব্যবহার করেন ভিজিটিং কার্ড। নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ।
নানা দাবিতে কালেভদ্রে এসব সংগঠনকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এমন গুরুত্বহীন ও নামসর্বস্ব অগণিত সংগঠন গড়ে উঠেছে দেশজুড়ে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলসহ (জামুকা) বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এমন অবৈধ সংগঠনের সংখ্যা শতাধিকের বেশি। এর মধ্যে কিছু সংগঠন নেতিবাচক নানা কারণে প্রায়ই আলোচনায় আসে।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে জামুকার আড়াইশোর বেশি নিবন্ধিত সংগঠনের বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এখন মুক্তিযুদ্ধের নামে নিবন্ধনহীন এসব সংগঠন চেতনা বাস্তবায়ন তো করছেই না, উল্টো মুক্তিযুদ্ধের সম্মান হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এসব সংগঠনকে আশকারা ও প্রশ্রয় দেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তবে দীর্ঘ দিন ধরে জামুকার নাম ভাঙিয়ে এসব চললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জামুকা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি নেই।
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রজন্ম লীগের নামে একাধিক সংগঠন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, মুক্তিযুদ্ধ ফ্রন্ট, শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ, ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এমন নানা নামে সংগঠনের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে এক নামের আদলে একাধিক সংগঠনও রয়েছে।
‘প্রজন্ম লীগ’ নামটি ব্যবহার করে কয়েক বছরে দলাদলি ও কোন্দলে বেশ কয়েকটি সংগঠন হয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’ লীগ নামেই রয়েছে একাধিক সংগঠন। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা প্রজন্ম লীগ’ নামে রয়েছে কয়েকটি সংগঠন। একসময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক এসব সংগঠনের পোস্টার ও তৎপরতা ছিল। এখনো আছে, তবে সমালোচনার মুখে কিছুটা সীমিত। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন আলোচনায় আসে ২০১৯ সালের শেষদিকে। যদিও বিরোধের জের ধরে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন করেছে একটি পক্ষ। তবে তাদের তৎপরতা এখন আর আগের মতো নেই। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠন জামুকা থেকে নিবন্ধন নিয়েছিল কয়েক বছর আগে। জামুকার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক নামে দুটি সংগঠন হওয়ায় সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। আর নানা নেতিবাচক কর্মকা-ে এসব সংগঠন নিয়ে তারাও বিব্রত।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংগঠন চালাতে অবশ্যই জামুকার অনুমোদন লাগবে। ওদের বিষয়ে যতটুকু জানি এদের রেকর্ড ভালো নয়। কিন্তু আমাদের তো কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের জন্য এ ধরনের সংগঠন করা হয় এবং খুব সচেতনভাবেই এদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। কেননা কিছু লোকের উদ্দেশ্যই হলো মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এ সংগঠনগুলো সে কাজটিই করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর রাজনৈতিক দলগুলোর নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কিছু করে তাহলে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখবে।’ তিনি বলেন, ‘এরা যদি অনৈতিক কাজে জড়িত হয় তাহলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জামুকা এ বিষয়ে শক্ত ভূমিকা নিতে পারে।’
জামুকা থেকে গত ১৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোর তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা অভিযোগে অন্তত ৬টি সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। এত বেশিসংখ্যক সংগঠনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলে। এ নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দেশ রূপান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ইতিমধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে জামুকা। নানা অভিযোগ ও বিতর্কের মুখে তিন বছর ধরে নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে যা জানা গেল : রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকেন্দ্রিক কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকানা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি কার্যালয় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে দেশ রূপান্তর। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় (১০ গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) একটি ভবনের দোতলায় দুদিন গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কার্যালয় থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ। ভবনসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, মাঝেমধ্যে অফিসে কিছু লোকজনকে দেখা গেলেও বেশির ভাগ দিনই এটি বন্ধ থাকে।
একই ভবনে ‘শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি। সংগঠনের সাইনবোর্ডে লেখা একটি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এর নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন হাজি মো. এমদাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে এই ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর অফিসটি তারা সংগঠনের নামে ব্যবহার করেন। জামুকার অনুমোদন না থাকলেও আবেদন করা আছে। বিভিন্ন দিবসে তারা নানা কর্মসূচি পালনসহ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করেন। তবে এখন সংগঠনের কার্যক্রম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ভাতা চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ’ নামে একটি সংগঠন প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় দেখা যায়। ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের শাখা সংগঠন এটি। সংগঠনটির সভাপতি পরিচয় দেওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা বঞ্চিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের হয়ে আমরা মানবিক কারণে কর্মসূচি পালন করি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাদের সন্তানরা ভাতা পান। কিন্তু নাতি-নাতনিরা কেন বঞ্চিত হবেন?’ গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ছয়তলায় ‘শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় সম্প্রতি একাধিকবার গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম বহু সংগঠন দেশে আছে। এদের বিষয়ে নানা অভিযোগ শুনি। এগুলোর বিষয়ে একটাই সিদ্ধান্ত এরা অবৈধ ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। এদের কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে উল্টোটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মান সম্মানকে এরা ভূলুণ্ঠিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে কেউ এমন করুক এটা মানা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটি করতে পারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কেউ অভিযোগ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে এদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।’
মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা উঠলে তার নাম আসাটাই যেন অবধারিত। কীটতত্ত্ববিদসহ এ কাজে সম্পৃক্ত প্রায় সবাই এখনো এক বাক্যে স্বীকার করেন, মশা নিয়ন্ত্রণে কেবলমাত্র তিনিই সফল হয়েছিলেন। এই অনিবার্য নামটি হলো মুহাম্মদ হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী।
মশা মারতে যে কামান দাগানো লাগে না বরং ছোট্ট এই পতঙ্গের উৎসস্থলে হানা দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে সফল হওয়া যায় তা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন ১৯৪৮ সালের পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবীবুল্লাহ। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কেবল ঢাকায় নয়, সে সময় দেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতেও মশা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছিলেন তিনি। কী ছিল তার জাদু? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে তিনি নিজেও নেমে পড়তেন ডোবা, নালা ও জলাশয়ে। যেখানে মশার ওষুধ ছিটানো দুষ্কর ছিল, সেখানে বিমানে করে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছিল।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ চলছে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্তদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রজনন উৎসগুলো ধ্বংস করতে কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ সময়ে ঢাকা নগর সংস্থায় নানা পরিবর্তন এসেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, কেউ সফল হতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৪৮ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। ওই প্রকল্পের নাম ছিল ঢাকা মশক নিয়ন্ত্রণ স্কিম। ৩২৮ জন কর্মী নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকি করা হতো।
ঢাকা মশক নিয়ন্ত্রণ স্কিম প্রকল্পের অফিস ছিল লালবাগের বকশীবাজার এলাকার ঢাকেশ^রী মন্দিরের উল্টো দিকে। সেটা পরে ‘ঢাকা মশক নিবারণী পরিদপ্তর’ নামে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। প্রকল্পের কর্মচারীদের সরকার রাজস্ব খাতে আত্মীয়করণ করে নেয়। বর্তমানে এই পরিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একযোগে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। চল্লিশের দশকের সফলতার কথা স্মরণ করে গৌরববোধ করেন তারা। ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পালন করায় মশক নিবারণী পরিদপ্তর অনেকটা গুরুত্ব হারিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি পরিদপ্তরটিকে ঢেলে সাজিয়ে দেশব্যাপী মশা বা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাইরের এলাকার জন্য পরিদপ্তরটিকে গড়ে তোলা যেতে পারে।
জাতীয় জ্ঞান কোষ বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর জন্ম ১৯০৬ সালে ফেনীর গুথুমা গ্রামে। রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখি ও ফুটবল খেলায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে চট্টগ্রামে। ১৯৩৩ সালে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। এই সময় তিনি সাহিত্য পত্রিকা বুলবুল প্রকাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় যখন দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে ওই সময় সর্বভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নোয়াখালী সফরে তার সঙ্গী ছিলেন। ১৯৪৯ ও ১৯৫০ সালে রোম, কায়রো এবং জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ^ স¦াস্থ্য সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন। জেনেভা সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি মারা যান।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ঢাকার সব জলাশয়, ডোবা, নালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেন। মশার প্রজনন উৎস ধ্বংসে লার্বিসাইডিং (লার্ভা) নিধনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মশা নিয়ন্ত্রণে তিনি ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি এবং ডিডিটি ব্যবহার করেছেন। শহরের সব এলাকা থেকে কাচের বোতল, ডাবের খোসাসহ পানি জমে থাকতে পারে এমন সবকিছু পরিষ্কার করেন। পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে গাপ্পি মাছ ছাড়েন ঢাকার ডোবা-নালা ও জলাশয়ে। সবচেয়ে বড় বিষয় তিনি নিজেও মশক কর্মীদের সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানো ও আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে ডোবা-নালায় নেমে পড়তেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিল তার। এজন্য যন্ত্রপাতি কম থাকা সত্ত্বেও তিনি সফলতা পেয়েছেন।’
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, হবীবুল্লাহ বাহার যে সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, সে সময় ঢাকায় কিউলেক্স মশা ছিল। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া হতো। অন্যদিকে অ্যানোফিলিস মশারও উৎপাত ছিল, যা ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বাহক, তিনি এই মশা নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম হয়েছিলেন। সে জন্য এত বছর পরও তার নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। তবে তখন ঢাকায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া জীবাণুর বাহক এডিস মশা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘হবীবুল্লাহ বাহারের সময়ের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পর্যালোচনা করে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তিনি মশার প্রজনন হতে পারে এমন কোনো উৎস পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধ ছিটানোর আওতার বাইরে রাখেননি। বিরতিহীনভাবে কাজ করতেন। এছাড়া সে সময়ের বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি সেসব বাস্তবায়ন করেছিলেন। তখন মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ^জুড়ে ডিডিটি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। ওই কীটনাশকে ঢাকায়ও ব্যাপক সফলতা পাওয়া যায়। পরিবেশের জন্য এই কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থাকায় পরে তা নিষিদ্ধ করা হয়।
সাইফুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার ইতিহাসে মশা নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র হবীবুল্লাহ বাহারের সফলতার গল্প শোনা যায়। এর আগে কেউ মশা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছিলেন তা জানা যায় না।’ তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তখনকার আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য হলো সে সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ হয়েছে। আর এখন এক সপ্তাহ কাজ করছে তো ১৫ দিন কাজ বন্ধ থাকছে। সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রয়োগ করে কাজ না করলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রজনন উৎসগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের কলকাতা শহর বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন মশা নিয়ন্ত্রণে ডিডিটি (ড্রাইক্লোরো ডাইফেনাইল ট্রাইক্লোরেথেন) ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। ডিডিটি আবিষ্কারের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। চল্লিশের দশকে এই কীটনাশক ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। হবীবুল্লাহ বাহারের সময় বিমানে করেও কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। ঢাকার জনঘনত্ব কম থাকায় সেটা করা সম্ভব হয়। দেশের অন্যান্য ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায়ও বিমানে করে ডিডিটি ছিটানো হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন যে কীটনাশক আছে সেটা দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লার্বিসাইডিংয়ে (লার্ভা নিধনে স্প্রে) ব্যবহৃত কীটনাশক খুবই কার্যকর। তবে প্রয়োগের ওপর এর সফলতা নির্ভর করছে। জলাশয়, নর্দমা পরিষ্কার না করে লার্বিসাইডিং করায় তেমন সফলতা মিলছে না। আর উড়ন্ত মশা মারতে ফগিং কার্যক্রমে তেমন সফলতা মেলে না। তবুও সিটি করপোরেশন সে কাজ করছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা না হলে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন তিনি।
আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এই দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বাসস
আল্লাহ তায়ালার দরবারে অসংখ্য শোকরিয়া। বৃষ্টিহীনতার কারণে শুষ্ক-রুক্ষ ও ভ্যাপসা গরমের অসহনীয় আবহাওয়া রমজানের প্রথম দিনেই কেটে গেছে। মাহে রমজানের প্রথম দিন বৃষ্টির সুশীতল পরশ জনজীবনে অপার প্রশান্তি এনে দিয়েছে। এমন স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া অবশ্যই রোজাদারবান্ধব। যদিও রোজাদাররা যেকোনো পরিবেশ ও আবহাওয়ায় রোজা পালনে প্রস্তুত। আল্লাহ তায়ালা ইমানদারদের জন্য রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ সুরা বাকারা : ১৮৩
বর্ণিত আয়াতে বলা হচ্ছে, ক. ইমানদারদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। খ. রোজা কেবল এই উম্মতের ওপরই ফরজ নয়, পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ ছিল। গ. রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য হলো মুমিনগণ যাতে তাকওয়া অর্জন করতে পারে। তো দেখা যাচ্ছে, রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছেÑ তাকওয়া হাসিল করা। প্রশ্ন হলো, তাকওয়া কী, যে তাকওয়া অর্জনের তাগিদ কোরআন মজিদের পরতে পরতে দেওয়া হয়েছে।
তাকওয়ার সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা দিয়েছেন সাহাবি হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)। একবার হজরত উমর (রা.) হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? হজরত উমর (রা.) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কীভাবে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, খুব সাবধানে, কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া। -তাফসিরে কুরতুবি
কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করার নাম তাকওয়া। মূলত তাকওয়া অন্তরের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সহজ বাংলায় বলা হয়, আল্লাহভীতি।
তাকওয়া হচ্ছে সব ভালো কাজের উৎস, পুণ্য কাজের জন্য পথের দিশারি। তাকওয়া হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে থাকা। আগের ও পরের সব উম্মতকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, অন্তর ও সব অঙ্গকে গোনাহ ও হারাম কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকার নাম তাকওয়া।
এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য মেলে ও তার নৈকট্য পাওয়া যায়। শেষ পরিণাম ভালো হয়। উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়। সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হয়। অফুরন্ত রিজিক পাওয়া যায়। জান্নাত পাওয়া যায় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রমজান মাসের রোজা এক মহিমান্বিত আমল, এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াবের প্রত্যাশা রেখে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার আগের গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
হাদিসে বর্ণিত ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাবের (প্রত্যাশা) উপলব্ধি জাগ্রত রেখে রোজা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল এবং বান্দার গোনাহ মাফের একটা মাধ্যম। এই মাধ্যমকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। এমন সংকল্প হোক রোজাদারদের।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মির্জা ফখরুলদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আলমগীরের মর্মবেদনা আমরা বুঝি! সুদূর লন্ডন থেকে যে অহি নাজিল হয়, যে সিদ্ধান্ত আসে, মুখ বন্ধ করে তা মেনে নিতে বাধ্য হন ফখরুল সাহেবরা।’
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি দেন তিনি। খবর বাসস। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দ-প্রাপ্ত পলাতক আসামির প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত হয় বিএনপি; অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে কমিটি ভাঙে-গড়ে, বহিষ্কার-পুরস্কার নির্ধারিত হয় এবং কমিটি ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য চলে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আয়নার সামনে নিজের অসহায়-নিরুপায়-পরাধীন চেহারা দেখতে দেখতে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল সাহেব জনগণের বাকস্বাধীনতাকে ওই একই ফ্রেমে বন্দি করে ফেলেছেন! তাই মির্জা ফখরুল সাহেব তোতা পাখির মতো সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত থাকেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মানুষের বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া কিছু নয়! কারণ বিএনপি কখনোই জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনমতকে ধারণ করেনি। বিএনপির জন্মই হয়েছিল বন্দুকের নলের মুখে জনগণকে জিম্মি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অবাধ সুযোগ প্রতিষ্ঠায় অবিরাম আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানুষের বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুসংহত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে মতপ্রকাশের অনিরুদ্ধ দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।’
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘অর্ধশতাধিক বেসরকারি টেলিভিশন, এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও এবং সহস্রাধিক সংবাদপত্রের নিবন্ধন দিয়ে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করেছে। সেই সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগের অপব্যবহার করে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা প্রতিনিয়ত চিরায়ত ভঙ্গিতে সরকারের বিরুদ্ধে নিলর্জ্জভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। শুধু বাকস্বাধীনতা ভোগ করাই নয়, নিজেদের ইচ্ছামতো মনগড়া অপপ্রচার চালাতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি আমলে জনগণের বাকস্বাধীনতা এবং ন্যূনতম নাগরিক অধিকারও ছিল না। বিএনপি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিএনপির শাসনামলে বিদ্যুৎ দাবি করায় নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা, সারের দাবিতে আন্দোলন করায় কৃষককে গুলি করে হত্যা, বেতন-বোনাস দাবি করায় মিছিলে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যাসহ জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালানোর মধ্য দিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত করেছিল বিএনপি।’
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।