
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার ক্ষেত্রে বান্দার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এত বড় সম্মান ও পুরস্কার এ জন্য যে, রোজা সাধারণত আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। অন্য আমলের তুলনায় রোজার ক্ষেত্রে লোক দেখানো মনোভাবে আশঙ্কা কম থাকে। সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য। আর এজন্যই আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দান করবেন।’
দ্বিতীয়ত রোজাদারের জন্য এত বড় পুরস্কার এ জন্য যে, আল্লাহ অন্যান্য সময় তার জন্য যা হালাল করেছেন রোজা অবস্থায় দিনের বেলা কেবল আল্লাহর হুকুমের কারণে সে তা থেকে বিরত থাকছে। সে পানাহার ও বৈধ জৈবিক চাহিদা দমন করছে কেবল আল্লাহর হুকুম পালনের লক্ষ্যে এবং একমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। অথচ এগুলো এমন বিষয়, একমাত্র আল্লাহর ভয়, তার প্রতি বিশ্বাস এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশা ছাড়া এ থেকে নিবৃত্ত থাকা সম্ভব নয়।
প্রচণ্ড গরম। খুব তৃষ্ণা। নামাজের জন্য অজু করছি। কুলির জন্য মুখে পানি দিলাম। এ পানি মুখ থেকে বের না করে গিলে ফেললেও দেখার এবং বলার কেউ নেই। তবুও মুখের পানি গলার ভেতর না নিয়ে বাইরে ফেলে দিচ্ছি, কারণ? আমার এ বিরত থাকা একমাত্র আল্লাহর জন্য। এজন্য আল্লাহ নিজেই এর বিনিময় দান করবেন।
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ বলেন, সব আমলের সওয়াব তো (একরকম) নির্ধারিত। অর্থাৎ প্রতিটি নেকি দশ থেকে সাতশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে রোজার বিষয়টি এর ব্যতিক্রম। কেননা রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। আর তাই এর প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দেবেন।
মুমিন-মুসলমানরা রোজা পালন করেন, প্রত্যাশা করেন আল্লাহর সন্তুষ্টির। এ জন্য সহ্য করতে হয় ক্ষুধা-তৃষ্ণার যন্ত্রণা। এরও পুরস্কার রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। হাদিসে রোজাকে ঢাল সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাল যেভাবে মানুষকে রক্ষা করে তেমনি রোজাও রোজাদারকে রক্ষা করবে- তাকওয়া হাসিলের প্রতিবন্ধকতা থেকে, গোনাহ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে, প্রবৃত্তি অবদমিত করার ক্ষেত্রে, কবরে-হাশরে এবং আখেরাতের সব ঘাঁটিতে, এমনকি জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে রোজা তাকে রক্ষা করবে। তাই রোজাদারের কর্তব্য হলো- তার রোজা যাতে ঢাল হয় সেই চেষ্টা করা এবং এ ঢালকে অক্ষুণœ রাখা; বিদীর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করা। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা বিদীর্ণ করে ফেলা হয়।’ -নাসায়ি : ২৫৫৪
জিজ্ঞাসা করা হলো, কীভাবে তা বিদীর্ণ হয়? নবীজি (সা.) বললেন, ‘মিথ্যা অথবা গিবতের (পরনিন্দা) মাধ্যমে।’ -আল মুজামুল আওসাত
রোজা নামক এ ঢালকে কীভাবে অক্ষুণœ রাখা এবং বিদীর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে এ বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমাদের রোজার দিন আসে তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার-চেঁচামেচি করবে না। কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে সে (নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে এবং) বলবে, আমি রোজাদার।’ -সহিহ বোখারি : ১৮৯৪
মনে রাখতে হবে, রোজা কেবল দুই অঙ্গের নয়। হাত-পা, চোখ, কান, মুখ এবং মন-মানসসহ শরীরের সব অঙ্গের ক্ষেত্রেও রোজার আবেদন রক্ষা করা জরুরি।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
অনুসন্ধানে কমিশন বাণিজ্য, ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে একজনের ক্ষতিপূরণ অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়ার, প্রকৃত মালিকদের মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে আটকে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানান দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ওই চক্রের সমন্বিত একটি তালিকাও করেছে সংস্থাগুলো। ওই চক্রে আছেন বর্তমান এবং সাবেক কিছু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী, চেইনম্যান, জারিকারক, উমেদার, আইনজীবী কথিত দালাল।
এর আগে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট এলএ অফিসে ক্ষতিপূরণ বাণিজ্যে জড়িত ২৩টি সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। ওইদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শহীদ শাহ আলম বীরউত্তম অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে তিনি এ কথা বলেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, কতিপয় দালাল কর্তৃক দায়ের করা দেওয়ানি মামলা, অভিযোগ, আপত্তিসমূহ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগোরা।
দুর্নীতির বেশি অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে : গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তারা হলেনÑ কানুনগো সেকান্দার আলী, মো. জাহাঙ্গীর, সার্ভেয়ার যথাক্রমে আব্দুল মমিন, মো. ইমাম হোসেন গাজী, আবু কাউসার সোহেল, মোক্তার হোসেন, শহীদুল ইসলাম মুরাদ, জোবায়ের, মো. শহীদুল হাসান, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল মাওলা, মজিবুর রহমান, নূর চৌধুরী। এরমধ্যে কোনো কোনো সার্ভেয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় কারাভোগও করেছেন।
জানা গেছে, সার্ভেয়ার মুরাদ, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল, মজিবুর, নূর চৌধুরী ছাড়া বাকি ছয় সার্ভেয়ার এবং দুই কানুনগো বর্তমানে এলএ অফিসে কর্মরত। অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন সার্ভেয়ার খাজা উদ্দিন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তদরিব করে তারা ফিরে এসেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ অফিসে।
চলতি বছরসহ সাম্প্রতিক সময়ের মামলা-অভিযোগ : চলতি বছর ৭ মার্চ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে জমির ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মিরসরাই উপজেলার মগাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন মো. সলিমুল্লাহ ওরফে দিদার নামে এক ব্যক্তি।
সলিমুল্লাহর অভিযোগ, আবুল খায়ের নামে একজনকে তার বাবা মৃত শফিউল্লাহ’র ওয়ারিশ বানিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকার চেক উত্তেলন করে নিয়েছেন অভিযুক্তরা। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মোক্তার আহমদ এবং সার্ভেয়ারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ। সম্প্রতি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার সেকান্দর আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে (সিআর-৩৭২) মামলা দায়ের করেন আরেক ভুক্তভোগী।
কর্ণফুলী টানেলের জন্য আনোয়ারা উপজেলার ছাতুরি ও বেলছুড়া মৌজায় পৃথকভাবে অধিগ্রহণ করা (এলএ কেইস নং-৩০/২০১৬-২০১৭) ১৬ শতক জমির প্রকৃত মালিক মৃত মোহাম্মদ শেখের ওয়ারিশ নাজিম উদ্দিন। তার অভিযোগ, ২০২২ সালের নভেম্বরে এলএ অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ ও কমল দাশ ক্ষতিপূরণের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেক অন্য ব্যক্তিদের দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় পটিয়া আদালতে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন। দুর্নীতির অভিযোগে সার্ভেয়ার কমল ও আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। নাজিম উদ্দিন বলেন ‘জামাল রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের দেওয়া টাকা ফেরত আনার কথা বলে আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চান সার্ভেয়ার কমল’।
ফরিদুল আলম নামে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জাল দলিল তৈরি করে কর্ণফুলী টানেলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন মুছা নামে এক ব্যক্তি। আদালতে মামলা এবং এলএ অফিসে আপত্তি দেওয়া সত্ত্বেও এলএ মামলায় (৩৫/২০১৮-২০১৯) ১০ শতক জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬১ লাখ টাকা আবু সাদেক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সার্ভেয়ার আবু কাউসার সোহেল ও মোক্তার হোসেন জড়িত।
মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ মগাদিয়া মৌজায় অধিগ্রহণ করা (এলএ মামলায় নম্বর ১৩/২০১৮-২০১৯) বিএস ১১৯৮ দাগের ৫ দশমিক ২১ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকা পেতে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে অপর মামলা (৩৪৮/২০) দায়ের করেন জমির প্রকৃত মালিক নুরুল গণি।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় লিখিত আপত্তিও দেন তিনি। নুরুল গণির অভিযোগ, মামলা ও আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এলএ অফিসের সার্ভেয়ার মমিন ও ছায়েদুল হক মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে ক্ষতিপূরণ বাবদ তার প্রাপ্য ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকার চেক দিয়ে দেন জনৈক সৌদামিনি বণিককে।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ঘুষ দাবি, জোরপূর্বক আটক, ছবি তুলে পুলিশে দেওয়া এবং দুদকের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকির অভিযোগে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা (এএলও) এহসান মুরাদসহ ছয়জন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ এ মামলা করেন মো. হেমায়তে হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।
ভুয়া দলিল যাচাই না করে মিজানুর রহমান মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে দেন সার্ভেয়ার আমানাতুল মওলা, মো. মজিবুর রহমান ও আশীষ চৌধুরী। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দুদক। ওই মামলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আলোচ্য তিন সার্ভেয়ারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা।
যেখানে ভাগ-বাটোয়ারা হয় : গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুসন্ধান বলছে, এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীরা অফিস শেষ করে রাতে সুবিধামতো সময়ে নগরের চকবাজার, মেহেদীবাগ, জিইসির মোড়, গোল পাহাড় মোড়, বাদুরতলা, সদরঘাট কালিবাড়ী মোড়, প্রবর্তক মিমি সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড, ষোলশহর নম্বর গেইট, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, এমইএস কলেজ ও মহিলা কলেজ সংলগ্ন মোড়, সানমারের সামনে, ভিআইপি টাওয়ার, কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম মোড় ও বহদ্দারহাট, শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় দালাল চক্রের আইনজীবীদের চেম্বারে টাকা ভাগাভাগি হয়। এছাড়াও এলএ অফিসের সাবেক অফিস সহকারী মো. আনোয়ার হোসেনের দেব পাহাড়ের বাসায় ও সার্ভেয়ার আ. মমিনের মেহেদীবাগের সরকারি বাসায়, মো. গাজীর পূর্বকোণ অফিস সংলগ্ন বাসায় ও শহীদুল হাসানের বাসায় দালাল চক্রের সদস্যরা সরাসরি কাজ বুঝিয়ে দেওয়াসহ কমিশন বাণিজ্যের লেনদেন করে।
কোষাগারে পড়ে আছে হাজার কোটি টাকা : একটি মামলার ফাঁদে আটকা পড়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না নগরের শত শত ভূমি মালিক। চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে করা ওই মামলার কারণে বে-টার্মিনাল এবং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে সরকারি কোষাগারে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় জমির মালিকদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। মামলাটি করেছেন ব্রিটিশ আমলের জমিদারের বংশধর দাবি করা হালিশহর এলাকার মো. রকিবুল হাসানসহ কয়েকজন। ভুক্তভোগীরা আট বছর ধরে এলএ অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলার কারণে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, শত শত ভুক্তভোগীকে মামলার ফাঁদে আটকে দিয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যে নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যারা ক্ষতিপূরণের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা হাতে দিতে রাজি হচ্ছেন, তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে রাকিব চক্র। রকিবুল হাসানের দাবি, তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলার (৬২১/২০১৪) ৬৮ জন বাদী ব্রিটিশ আমলের জমিদার শেখ আবদুল আলী মালুমের বংশধর। ১৮৮৫ সালের একটি দলিল এবং আবদুল আলী মালুমের পাঁচ শতাধিক উত্তরাধিকারীর তালিকা আছে। আর এ তালিকাকে পুঁজি করেই আদালতে মামলা করেছেন রাকিব। মামলার বিবাদীর সংখ্যা এক হাজার ৫৬৮ জন।
সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের অসদাচরণ : ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত ১৬ মার্চ বিকাল ৪টা ৫৯ মিনিটে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের মুঠোফানে কল করেন দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদক। ফোন রিসিভ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য সমেত তার (ডিসি) দপ্তরে গিয়ে কথা বলতে ওই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। কথামতো বক্তব্য নিতে গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের দপ্তরে গিয়ে এলএ অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে চলতি বছরসহ আগের বছরগুলোয় বর্তমান এবং সাবেক কয়েকজন কানুনগো, সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার (দুদকের করা) রেফারেন্স উল্লেখ করা একটি কাগজ জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। এ সময় তার দপ্তরে জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসারসহ কিছু লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। কাগজে উল্লেখ করা তথ্যগুলো পড়ে দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করেন জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কী করছি আপনি জানেন। খবর নেন। এসব অভিযোগ-মামলা পুরনো। আপনি (প্রতিবেদক) দালালি করতে এসেছেন। যান, আমি ঢাকায় দেশ রূপান্তরে কথা বলব।’
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
ভাষা আন্দোলন, তেভাগা-টঙ্ক আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধÑ ইতিহাসের এমন গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে-মোড়ে সিপিবির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশেও জাতীয় রাজনীতিতে দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কাতারেই ছিল দলটি।
৭৫ বছরের পথ পরিক্রমায় শক্তি সামর্থ্য আর রাজনীতি ও আন্দোলন সংগ্রামে দলটি কোন পর্যায়ে আছে, সেই পর্যালোচনার তাগিদ যেমন সিপিবিতে আছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলেও তাদের নিয়ে আগ্রহ আছে। সিপিবির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের খোঁজ নিতে গিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারা বলছেন, দেশের রাজনীতিতে দলটির উত্থান আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু দেখা গেছে, গত ২০ বছরে রাজনীতিতে প্রভাব তো হারিয়েছেই, মাঠের আন্দোলনেও পিছিয়ে পড়েছে। এর প্রতিফলন ঘটছে নির্বাচনের ফলাফলে। নেতৃত্বের দূরদর্শিতার ঘাটতি, রাজনৈতিক নীতি-কৌশলের সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তির কারণেই সিপিবির উত্থান ঘটেনি বলে তারা মনে করেন।
পেছনে তাকালে দেখা যাবে, সিপিবির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক বজায় থেকেছে ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত। বাকশালে যোগ দেওয়া, এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধা উল্লেখযোগ্য। বিএনপির সময় জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়াকে ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে দলের নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিপিবি চেষ্টা করছে বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে খাপ খাইয়ে চলার। মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তারা কাজ করছে। তবে তাদেরও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিছু আছে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে; সেই সমস্যাগুলো আসলে বৈশি^ক।’
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্রেণি সংগ্রাম ও জাতীয় মুক্তির লড়াইকে সমন্বয় করার যে কৌশল, সেখানে সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তি ছিল। এ কারণে সিপিবি তার রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক : স্বাধীনতার পর দেশের শক্তিশালী একটি বিরোধী দল হিসেবে জনগণের সামনে হাজির হওয়ার সুযোগ থাকলেও সিপিবি তা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। দেশ গড়ার স্বার্থের কথা বলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে চলতে থাকে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করলে সিপিবি এবং তার সব গণসংগঠন বাকশালে একীভূত হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কার্যকরী আন্দোলন গড়ে না তুলে ‘খাল কাটা কর্মসূচি’তে অংশ নিয়ে সমালোচিত হয় দলটি।
দলে ভাঙন : স্বাধীনতার পর সিপিবির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে টানাপড়েন থাকলেও সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে বিশ^ব্যাপী সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎই প্রশ্নের মুখে পড়ে। পূর্ব ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশে বামপন্থিরা ক্ষমতা হারায়। এই ধাক্কা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনেও পড়ে; বিশেষ করে সিপিবি ভাঙনের মুখে পড়ে ১৯৯২ সালে। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিংহভাগ দল ত্যাগ করেন। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিছু অংশ অন্যান্য দলে যোগ দেন।
জোট ও ভোটের রাজনীতি : স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের প্রথম থেকেই সিপিবি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। প্রথম অবস্থায় আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে ১৫-দলীয় জোট গঠিত হয়। এরশাদ নির্বাচন করার আভাস দিলে ১৯৮৫ সালে দুই জোট ১৫ দল ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলের একটি লিয়াজোঁ কমিটি গড়ে ওঠে। পরে ১৫-দলীয় জোটের বামপন্থি শরিকরা ৫ দল নামে আলাদা জোট গঠন করে। ফলে ১৫ দল ভেঙে ৮ ও ৫ দল নামে দুটি জোট হয়। পরে তিন জোটের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিন জোট মিলে একটি রূপরেখা দেয়। নব্বই সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগ করেন।
এর আগে এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপির নেতৃত্বে ৭-দলীয় জোট বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮-দলীয় জোট এবং বামপন্থিদের ৫-দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়। সিপিবি প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে ৬টি আসন পায়। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন তিন জোটই বর্জন করে।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সিপিবি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে যায়। ওই সময় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক এবং নিজস্ব তারা প্রতীকে ৪৯ জন প্রার্থী দিয়ে ৫টিতে জয়লাভ করে।
একানব্বই সাল পর্যন্ত এককভাবে রাজনীতিতে তেমন শক্ত অবস্থান তৈরি করতে না পারলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটে সিপিবি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৯৯২ সালের ভাঙনে এই অগ্রগতিতে ছেদ পড়ে। ওই সময় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে বিকল্প বাম রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করে সিপিবি। এর ধারাবাহিকায় গড়ে ওঠে বামফ্রন্ট। কিন্তু পরে বাম অবস্থান ত্যাগ করে জোট শরিকরা উদারপন্থীদের নিয়ে ১১-দলীয় জোট গঠন করে। তবে বেশিদিন টেকেনি এই জোট। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিপিবি এবং বাসদ ব্যতীত জোটের অন্যান্য দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪-দলীয় জোট গঠন করে। এ দুটি দল আলাদাভাবে বাম বিকল্প গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে সিপিবি। বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালে সিপিবির নেতৃত্বে ৮টি দল নিয়ে গঠিত হয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই জোট অংশগ্রহণ করে। গত বছর এ জোটেও ভেঙে যায়। গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বেরিয়ে যায়। জোটের রাজনীতিতে সিপিবির এই চড়াই-উতরাই ভোটেও পিছিয়ে দেয় দলটিকে। ১৯৯১ সালের পর আর কোনো সংসদ নির্বাচনে জয় পায়নি দলটি।
সিপিবির এখনকার পরিস্থিতির জন্য যথাযথ রাজনৈতিক কর্মসূচির অভাবকে দায়ী করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে সিপিবিকর্মী ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিপিবি ২০ বছর ধরে যে রাজনৈতিক লাইন নিয়ে এগোচ্ছে, আমি এটাকে সঠিক মনে করি। রাজনীতির মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে না পারার অন্যতম কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা। একটা সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ থেকে শুরু করে শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে সিপিবির প্রভাব ছিল। এখন যে শক্তি নেই, সেটা কিন্তু না।’ তিনি মনে করেন, ভোটটাকে লড়াইয়ের অন্যতম বড় জায়গা হিসেবে দেখতে হবে।
সাংগঠনিক অবস্থা : সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর সিপিবি ভেঙে গেলেও পরে দলটির সদস্যসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার আগে দলটির সদস্য ছিল ৬ হাজারের সামান্য বেশি। দলে ভাঙন হওয়ার পর বিশেষ কংগ্রেসের আয়োজন করে সিপিবি। তখন পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ হাজার। সর্বশেষ দ্বাদশ কংগ্রেসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজারে। সদস্যসংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে দলটির সাংগঠনিক শক্তি দৃশ্যমান নয়।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টিকে এককভাবে দীর্ঘ সময় লড়াই করতে হয়েছে। তার মানে কমিউনিস্ট পার্টি যে শ্রেণি পার্টি, সে যে লক্ষ্যে কাজ করবে, সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য অল্প সময় পেয়েছে। যে সময় সে পেয়েছে, তার মধ্যে রাজনীতিতে বড় একটি টানাপড়েন ঘটে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও প্রচারমাধ্যমে দ্বিদলীয় প্রাধান্যের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের জন্য কোনো উদাহরণও নেই। তাদের চোখের সামনে আগের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশ নেই। তারা ইউরোপে উগ্রজাতীয়তবাদ, সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য দেখছে। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে নেগেটিভ অভিজ্ঞতাই তাদের ঝুলিতে। এ ছাড়া বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সেটা ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি আমরা।’
প্রিন্স আরও বলেন, ‘নির্বাচন করে আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবেÑ এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার আত্মসমালোচনা করতে দ্বিধা নেই যে ভোটের রাজনীতিতে আমরা অজ্ঞ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমাদের গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিতে হচ্ছে, আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আমাদের ভোটের অধিকার হারিয়ে গেছে। আমাদের কথা বলার অধিকার হারিয়ে গেছে।’
গতকাল রবিবার সকালে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে তিনি শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের লড়াই করতে দিচ্ছে না, আমাদের ভোটের অধিকার আজ হারিয়ে গেছে, আমাদের কথা বলার অধিকার হারিয়ে গেছে, আমাদের সাংবাদিকদের সত্য কথা লেখার অধিকার হারিয়ে গেছে। আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে একটি কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আজকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। স্বাধীনতার এই মহান দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব। চাল-ডাল-তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার চেষ্টা করব। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন সেই সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শহীদ জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এখনো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নানা রূপে দেশে বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, বিএনপি তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।’
গতকাল রবিবার মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
‘আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন দাবির জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এমনটাই বলবে এটাই হওয়া সমীচীন।’ একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এখনো ‘নানা পোশাকে’ চ্যালেঞ্জ করে মন্তব্য করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ, এমন নানান পোশাকে তারা স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।