
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনঘনত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এক-তৃতীয়াংশ নগর সুবিধায় ঢাকায় চার গুণের বেশি মানুষের বসবাস। অবকাঠামো বিবেচনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ বহন করছে দেশের রাজধানী শহর।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০-১২০ জন বসবাস করে। ঢাকায় বর্তমানে একর প্রতি বসবাস করছে ৪০০-৫০০ জন।
দুই সিটিতে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
রাজউকের ড্যাপের তথ্যমতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ ভাগ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ ভাগ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ ভাগ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
ড্যাপে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার লালবাগ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫১ জন মানুষ বসবাস করে। জনঘনত্বের দিক থেকে যা বিশে^র সর্বোচ্চ। চকবাজারে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন মানুষ বসবাস করে। যা বিশে^ তৃতীয়। কোতোয়ালিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৩ জন বসবাস করে। যা জনঘনত্বের দিক থেকে বিশে^ দশম।
রাজউকের নগরপরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে মূল ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। এ জন্য ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সেখান থেকে ঢাকার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের জন্য অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে মূল ঢাকার জনঘনত্ব কমবে। আর জনঘনত্ব কমলে মূল ঢাকা অনেকাংশ বসবাস উপযোগী হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ঢাকায় জলাভূমি ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমেছে ১৩৪ বর্গকিলোমিটার। আর এ সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কংক্রিট। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটি এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ কংক্রিট আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে।
পরিকল্পনাবিদদের এ সংগঠটি বলছে, পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে সড়ক থাকা দরকার ২৫ শতাংশ, জলাশয় ১৫ শতাংশ, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান থাকা দরকার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ নাগরিক সুবিধার জন্য ৬০ ভাগ জায়গা খালি থাকা দরকার। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মার্কেট গড়ে উঠবে। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অন্যান্য বিবেচনায় সড়ক, জলাশয়, সবুজ ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে কোনো শহরের ৪০ ভাগের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
নিরাপত্তার বিবেচনায়ও ঢাকা যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সেটা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৫ শতাংশ। আর গত বছর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গ্লোবাল লাইভবিলিটি ইনডেক্স অনুসারে ঢাকা বিশে^র সপ্তম কম বসবাসযোগ্য শহর।
চলতি মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সাড়ে আট ভাগ সবুজ রয়েছে। ঢাকার উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয়কেন্দ্রিক সুবজ এলাকা ধরে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার বর্তমান সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ। আর জনসংখ্যা রয়েছে চার গুণ অর্থাৎ, ঢাকা অবকাঠামোর তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ নিয়ে চলেছে। ভালো হতো ১২ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা থাকলে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাস্তবতা বিবেচনায় চাইলেই আদর্শ জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ইচ্ছা করলেই এখন সড়কের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে এখনো কিছু উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। সেটা হলো, বিদ্যমান সড়কগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
ড. আদিল বলেন, ‘ঢাকার উন্মুক্ত জায়গা বাড়ানো তো দূরের কথা, যেগুলো আছে সেগুলোও টিকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। এ জন্য পলিসি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এখনো ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট ছোট উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের ড্যাপের কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ঢাকার জনঘনত্ব কমানো এবং গণপরিসর বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে ঢাকায় নতুন কোনো কর্মস্থান সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন শিল্প, কলকারখানা এবং অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাহলে জনসংখ্যার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা হয় বাস্তবায়ন হয় না : ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে নগরপরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে ব্রিটিশরা। এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ধারণাপত্র বলা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টিপ্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতা ধরে বিশদ পরিকল্পনার সুপারিশ করেন ওই নগরপরিকল্পনাবিদ। কিন্তু ওই সুপারিশের আর বাস্তব রূপ পায়নি। সে সময় ঢাকার চারদিকে চারটি নদীর পাশাপাশি শহরে অনেক খালও ছিল। একসময় শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ত। ফলে জলাবদ্ধতা হতো না। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ।
এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ।
বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ঢাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি ধরা হতো। রাজউকের নেতৃত্বে প্রণয়ন করা এ মাস্টারপ্ল্যানের নাম ড্যাপ। মাস্টারপ্ল্যানটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গঠনের সূচকের বিবেচনায় ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। তবে ৩০ ভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য ড্যাপ সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এবারের ড্যাপে ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
নওগাঁয় আটকের পর র্যাব হেফাজতে ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। তাকে যে তুলে নেওয়া হয়, তা র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। জেসমিনকে আটক করার ক্ষমতা র্যাবের ছিল কি না, আটকের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল কি না এবং র্যাব আটকের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী ঘটেছিল? এসব বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন সুলতানা জেসমিন। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে আটক করা হয়। এরপর অসুস্থ হয়ে গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তবে, সুলতানা জেসমিনের স্বজনদের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন তিনি। তবে, র্যাবের দাবি, তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন র্যাব বাদে পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এদিকে র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যরা কোনো মামলা বা অভিযোগ করবেন না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত সোমবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। ওইদিন হাইকোর্ট জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তাকে র্যাবের কারা আটক করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের মধ্যে জানতে চায়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে সুলতানার মৃত্যুজনিত কারণ-সংবলিত একটি মেডিকেল প্রতিবেদন আসে। যেখানে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সকালে শুনানিকালে হাইকোর্ট এ বিষয়ে আরও শুনানির জন্য বেলা ২টার পর সময় নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে রিট আবেদন করতে বলে আদালত।
শুনানিতে রিটকারী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এ ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। র্যাবের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল খুন, ডাকাতি, মাদক, জঙ্গিবাদের মতো বড় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে। কিন্তু এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার কথা বলা হচ্ছে। তাও মৃত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে।’
তিনি এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘এই আইনে তদন্ত বা গ্রেপ্তার র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যিনি মারা গেছেন তিনি একজন নারী। এটি খুব অন্যায় কাজ হয়েছে। এই যে বেআইনি কাজ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নেওয়া, মৃত্যুর মতো একটা ঘটনা সামগ্রিকভাবে এর জন্য বিচারিক তদন্ত জরুরি।’
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক সুলতানার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তাকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। কারও বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ থাকে তাহলে কি র্যাব তাকে ধরবে না? আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন।’
জেসমিন সুলতানাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘এ দাবি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হন এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।’ এ বিষয়ে হাইকোর্টকে আরও বিস্তারিত অবহিত করতে সময়ের আরজি জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
শুনানিকালে হাইকোর্ট বলে, ‘কোনো মানুষ যত জঘন্য অপরাধই করুক না কেন তাকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারে আইনি প্রক্রিয়া আছে। প্রতিটি নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার আছে। আমাদের উদ্বেগটা হলো র্যাবের একটা আলাদা পরিচিতি আছে। এখানে র্যাব উঠিয়ে নিয়ে গেছে। যাকে নেওয়া হয়েছে তিনি একজন নারী। নিয়ম অনুযায়ী তারা পুলিশে সোপর্দ করবে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি সেটা করা হয়নি। পুরো দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, তাকে (জেসমিন) উঠিয়ে নেওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কি না আসলে তখন কি ঘটেছিল।’ শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করে।
তুলে নেওয়ার বহু পরে জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলা : সুলতানা জেসমিন র্যাবের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে যখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি তখন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। গত ২৩ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করা হয়। পরদিনই মারা যান জেসমিন। এই মামলায় এনামুল হক দুজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও দু-তিনজনকে আসামি করেন। এক নম্বর আসামি করা হয় মো. আল আমিন (৩২) নামে একজনকে। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার গাজীবাড়ী কুতুবপুর এলাকায়। আর ২ নম্বর আসামি করা হয় সুলতানা জেসমিনকে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এনামুল হকের মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাটির আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করবে। র্যাবকে জানানোর আগে এনামুল হক বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেনি। আগে কোনো মামলাও করেননি। এ ছাড়া সুলতানা জেসমিনের নামে আগের কোনো মামলার রেকর্ড এখন পর্যন্ত নেই। তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেন আছে কি না এসব তদন্ত করা হবে। মামলা তদন্তে প্রয়োজনে সাইবার ইউনিটের সহায়তা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। মূল তথ্য উদঘাটনের জন্য যতগুলো ঘটনা অনুসন্ধান করা দরকার পুলিশ সেটা করছে। মামলার প্রধান আসামিকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে পেলে তদন্তের আরও অগ্রগতি হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘এখন আর এটা নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। যেহেতু এটা এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হাইকোর্ট যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা ওইভাবে কার্যক্রম চালাব। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আমরা স্বল্পতম সময়ে জমা দেব।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দিতে পারবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে খুব একটা দেরিও হবে না বলে আভাস দেন।
ডা. কফিল বলেন, হার্টের পরীক্ষার জন্য প্যাথলজি বিভাগে একটি নমুনা পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই ফরেনসিক বিভাগ কাজ করবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন। প্যাথলজি বিভাগের রিপোর্ট পেতে সাধারণত সপ্তাহখানেকের বেশি সময় লাগে না।
মামলা করতে চায় না পরিবার : সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা করার চিন্তাভাবনা করছেন না তার স্বজনরা। গতকাল মারা যাওয়া জেসমিনের ভাই সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১২-১৪ বছর ধরে তার বোন ভূমি অফিসে চাকরি করতেন। কোনো দিন তারা বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শোনেননি। তার পরও বড় বোনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন না তারা। কারণ তারা আর কোনো ঝামেলায় যেতে চাচ্ছেন না। ভাগনে (জেসমিনের ছেলে) সাহেদ হোসেন সৈকত তার কাছেই আছে বলে জানান সোহাগ। জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কেউ আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ শহরের জনকল্যাণপাড়ায় দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুলতানা জেসমিন শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তার বাসায় ভাড়া ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কখনো তারা শোনেননি।
অন্যদিকে কর্মস্থলের কয়েকজন সহকর্মী জানান, সুলতানা জেসমিনকে কখনো দেখে মনে হয়নি তিনি কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন। তার সম্পর্কে এর আগে কখনো কারও কাছ থেকে এ রকম তথ্য বা অভিযোগ তারা শোনেননি।
র্যাবের তদন্ত কমিটি : হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গত সোমবার র্যাব সদর দপ্তর এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্তে র্যাবের কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সামনেই সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, এনামুল হকের নাম-পদবি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে তিনি (এনামুল হক) জানতে পারেন। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আল আমিন নামে এক ব্যক্তি। তার সহযোগী হিসেবে জেসমিনের জড়িত থাকার তথ্য পান এমানুল হক। গত ২২ মার্চ অফিসে যাওয়ার সময় তিনি র্যাবের টহল টিমের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করলে তার সামনে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। আটকের সময় অন্য লোকজনও ঘটনাস্থলে ছিল এবং সবার সামনেই সুলতানা র্যাবের দুজন নারী সদস্য জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একপর্যায়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় এনামুল হক সঙ্গে ছিলেন। নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সুলতানার আত্মীয়স্বজন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করলে সিটি স্ক্যানের পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন, তিনি স্ট্রোক করেছেন।
পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন : র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা একটি মারাত্মক অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অভিযোগের বিষয়টি র্যাব বাদে পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলা হয়েছে।
আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ চায় ব্লাস্ট : র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, বিচার নিশ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ এবং নির্যাতন ও হেফাজতে (মৃত্যু) নিবারণ আইন, ২০১৩-এর সুষ্ঠু প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে ব্লাস্ট (বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট)। গতকাল ব্লাস্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেসমিনকে আটকের প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেআইনি আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও নওগাঁ প্রতিনিধি
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ অন্যান্য ফির ক্ষেত্রে সমতা নেই। একেক কলেজ এমবিবিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একেক রকম ভর্তি ফি নিচ্ছে। এমনকি বছরজুড়ে কলেজভেদে পরীক্ষা ফিসহ অন্যান্য ফিও একেক রকম। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার এবং পুরনো মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে নতুন মেডিকেল কলেজের ফির বৈষম্য অনেক বেশি। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে সর্বোচ্চ তিন গুণ ও গড়ে দেড় থেকে দুই গুণের বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন ভর্তি ফি ১০ হাজার ও ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৩২ হাজার টাকা। এমনকি ঢাকায় গড়ে যেখানে ভর্তি ফি ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা; সেখানে ঢাকার বাইরে এই ফি গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা।
এমনকি বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকায় যেখানে বছরে এই ফি নেওয়া হয় ৫-৬ হাজার টাকা; সেখানে ঢাকার বাইরে ১৪-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।
কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো মেডিকেল কলেজ পরিচালনায় সরকারের বরাদ্দ বাজেট নতুন মেডিকেল কলেজের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে কলেজ পরিচালনায় এসব কলেজ কর্র্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে বেশি ফি নিতে হয়। গত বছর দেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজে যাতে সমান ভর্তি ফি নেওয়া হয়, সে জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলোচনা হয়েছিল। সে সময় কলেজ কর্র্তৃপক্ষ তাদের নানা সমস্যার কথা বলেছিল। যেমন ছাত্রাবাস নেই, বাড়ি ভাড়া করে শিক্ষার্থী রাখতে হয়। এ কারণে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল সব কলেজে। কিন্তু তা কেউ মানেনি। গত বছরও ভর্তি ফি ছিল লাগামহীন। ২৫-৩৩ হাজার পর্যন্ত নিয়েছে।
কলেজভেদে ফির এমন ভিন্নতার কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কলেজগুলোকে এ বছর আগের বছরের মতোই ফি নিতে বলা হয়েছে। কলেজভেদে ফি ভিন্ন। কারণ একেক কলেজ একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিসের ফি থাকে। যে কলেজে ছাত্র সংসদ আছে, তারা এর জন্য ফি নেয়। কোনো কোনো কলেজ হোস্টেল ফি, কমনরুম চার্জ নেয়। সবকিছু মিলে ১৫-২০ হাজারের মধ্যেই ভর্তি ফি থাকে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মোটামুটি একটা নির্দেশনা দিই। তবে সেটা চূড়ান্ত কিছু নয়। আমরা ফি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিলাম। মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে অনেক ধরনের ও সংখ্যার বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আছে। এগুলো সমন্বয় করতে গেলে বৃহত্তরভাবে আলোচনা করে সমন্বয় করতে হবে।’
গত ২৭ মার্চ থেকে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি শুরু হয়েছে। চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন ১১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০ এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২ আসন রয়েছে। এ ছাড়া মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ ও উপজাতি কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। ৬ এপ্রিল ভর্তি শেষ হওয়ার পর কলেজ কর্র্তৃপক্ষ কোন কলেজে কয়টি আসন খালি আছে, সেই তালিকা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাবে। পরে সেই তালিকা অনুযায়ী কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার চার কলেজে তিন রকম ফি : ঢাকায় সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে চারটি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা করে। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ১১ হাজার ৫০০ ও মুগদা মেডিকেল কলেজে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে আসন ২০০। পরে বিদেশি আরও ২০ জনের মতো ভর্তি হয়। সব মিলে ২২০ জন ভর্তি হয়। ঢাকা মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আসন ২৩০টি করে। ফলে ওই দুই কলেজে ১০ হাজার টাকা করে ভর্তি ফি। আমাদের এখানে একটু বেশি।’
ঢাকার বাইরে তিন গুণের বেশি : সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে চারটি ঢাকায়। এই চারটি বাদে দেশের বাকি সব কলেজে ভর্তি ও অন্যান্য ফি ঢাকার তুলনায় সর্বোচ্চ তিন গুণ এবং গড়ে দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। এখানে শিক্ষার্থীদের থেকে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৩২ হাজার টাকা। আগামী ৪ ও ৫ এপ্রিল ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টি আসন ও বড় কলেজে ২৩০টির মতো।
একই কলেজের ইন্টার্নশিপের এক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার টাকা। ছয় মাস পরপর ২ হাজার ১০০ টাকা দিতেন পরীক্ষার ফির জন্য।
এরপর সর্বোচ্চ ভর্তি ফি নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে, ২৫ হাজার টাকা। মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২৩ হাজার টাকার একটু বেশি। রংপুর, নীলফামারী, বগুড়া ও পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে।
দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৮ হাজার ৯০০ টাকা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা ভর্তি ফি ও ৩ হাজার টাকা হোস্টেল উন্নয়ন ফি। নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি ১৭ হাজার টাকা। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৫ হাজার ৩০০ টাকা। গত বছর ছিল ১২ হাজার ২০০ টাকা।
ছোট কলেজ, ছাত্র কম, ফি বেশি : কলেজ অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, যেসব কলেজ নতুন হয়েছে, আসন কম, সেসব কলেজে ফি বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ এই ফির টাকা দিয়ে তাদের কলেজ পরিচালনার ব্যয় মেটাতে হয় এবং শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সুবিধা ও হোস্টেলে খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়; বিশেষ করে এর মধ্যে যেসব কলেজ নতুন, সেগুলোর জন্য সরকারি বরাদ্দ এখনো পর্যাপ্ত নয়।
এই অধ্যক্ষ আরও জানান, কলেজভেদে ফি ভিন্ন। আগের ৮টি মেডিকেল কলেজ, সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৩০ জন করে। এসব কলেজের সার্বিক বাজেটও বেশি। নতুন কলেজগুলো সরকারের থেকে অর্থ চাইতে গেলে বলা হয়, অনেক খরচ করে কলেজ বানানো হয়েছে। পরিচালনা ব্যয়ের কোনো বাজেট এখনো হয়নি। ফির টাকা থেকেই পরিচালনা ব্যয় করা হয়। এমনকি হোস্টেলের ছাত্রছাত্রীদের খাবারেও সহযোগিতা করা হয় এই টাকা থেকেই।
নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ভর্তি ফি নির্ধারণ হয় কলেজের একাডেমি কাউন্সিলের সভায়। যে কলেজগুলোতে ছাত্রসংখ্যা বেশি, সেই কলেজগুলোতে টাকার পরিমাণ কম। আর তুলনামূলকভাবে যেসব কলেজে ছাত্রসংখ্যা কম, সেখানে ফি বেশি। কারণ সারা বছরের খরচ একবারে নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এ বছর বিভিন্ন খরচ বেড়েছে। শিক্ষার্থী কম। এর মধ্যে চেষ্টা করি দরিদ্র ছাত্রছাত্রী থাকলে, তাদের বিভিন্ন ফি মওকুফ করে দিতে হয়।
দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এ এফ এম নুরুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বছর মেয়েদের হোস্টেলে রাখা নিয়ে একটু অসুবিধা হবে। কারণ এবার মেয়েরা বেশি পাস করেছে। তবে ছেলেদের সমস্যা হবে না।
বাইরে পরীক্ষা ফিও বেশি : ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রতি বছরের ফাইনাল প্রুফ পরীক্ষার ফি ঢাকা ও পুরনো মেডিকেল কলেজের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো কলেজে এই ফি দ্বিগুণ বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
কিন্তু ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের বছরে পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফি ঢাকার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। প্রতি বছর চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পরীক্ষা ও কলেজ ফি বাবদ তাদের ১৫-১৬ হাজার টাকা দিতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারটি প্রফেশনাল পরীক্ষা হয়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩-৪ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে। প্রতি বছর কলেজের খেলাধুলা, পরিচয়পত্র, কারিকুলাম, ছাত্র কল্যাণ, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, ধর্মসংক্রান্ত মসজিদ ফি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সমাবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে ফি নেওয়া হয়। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮-৯ হাজার টাকা নেয়। তবে এই ফি ঢাকায় অনেক কম। ঢাকার বাইরে বেশি।
চোর, ডাকাত বা ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড থামছে না। যে অপরাধের সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে পরে পুলিশের তদন্তে দেখা যাচ্ছে সে ওই অপরাধ করেনি। এমন বাস্তবতায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিচারও ঠিকমতো পান না। আর যেসব ক্ষেত্রে বিচার হচ্ছে তাও প্রচার পাচ্ছে না। ফলে গণপিটুনিতে মৃত্যু হলে বিচার হয় না এমন ধারণা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গণপিটুনির অন্যতম কারণ মানুষের ধৈর্যচ্যুতি। এছাড়া ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ও এর জন্য দায়ী। সমাজে অহরহ ছিনতাই-চুরিসহ অন্যান্য অপরাধ বারবার হয়। কিন্তু সঠিক কোনো বিচার হচ্ছে না। এর ফলে মানুষ আক্রোশবশত গণপিটুনি দিয়ে থাকে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই শাস্তির দৃষ্টান্ত প্রচারও করতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে মারা গেছে ২১১ জন। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে জনতার গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু নামের এক নারী। এ ঘটনায় ওইদিন বাড্ডা থানায় ৪০০-৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেণুর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্তে উঠে আসে ওই নারী নিজের সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন বিদ্যালয়টিতে। পরের বছর ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আব্দুল হক। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতিমা ইমরোজ ক্ষণিকা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
রেণু হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জনমত তৈরি হয় গণপিটুনির বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনা। সর্বশেষ গত রবিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার স্বজনদের দাবি, মামুন চুরির সঙ্গে জড়িত না, তিনি চা বিক্রেতা। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।
মানুষের এমন হিংস্র হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সামাজিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা এগুলো করে থাকে। কোনো একটি জায়গায় হয়তো একটি ঘটনা ঘটল, ওটা যখন আরও কয়েকজন দেখে তাদের মধ্যে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখা যায়। এ কাজ করে তারা একধরনের আনন্দ পায় এ কারণে তারা একসঙ্গে এ কাজগুলো করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর জন্য তার পরিবেশও দায়ী। কিছু মানুষকে এভাবেই বড় করা হয়। তাদের ব্যক্তিত্বের কাঠামোও এমন, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে আনন্দ পায়। সেই মানসিকতা পরিবার ও সমাজ থেকেই জন্ম নেয়।’
মানবাধিকার সংগঠন আসকের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে যে ২১১ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেরই ৬৯ জন যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৩ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছে ৮ জন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৩ জন ও চট্টগ্রামে ৫ জন।
আসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর সারা দেশে গণপিটুনিতে মারা গেছে ৩৬ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ১৭ জন আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন। আগের বছর একইভাবে মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই ১৩ জন আর চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন। ২০২০ সালে মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, খুলনায় ১০ ও চট্টগ্রামে ৫ জন। ২০১৯ সালে ৬৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ জন ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ২২ জন। ২০১৮ সালে গণপিটুনিতে মারা যায় ৩৯ জন।
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধিকাংশ গণপিটুনির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক ধরনের মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) তৈরি হচ্ছে। এদের অনেকে আবার ভুক্তভোগী থাকে যারা অতীতে ছিনতাইকারী বা চোরের কবলে পড়েছে। আরেক শ্রেণির লোক গণপিটুনিতে অংশ নেয় যারা ভবঘুরে, বিভিন্ন স্থানে তারা অবস্থান করে, সুযোগ পেলেই কাজে লাগায়।’
শহরাঞ্চলে গণপিটুনিতে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এর প্রধান কারণ মানুষের যান্ত্রিকতা। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে আমরা কেউ কাউকে চিনি না, একটা হেটারোজেনাস (নানাধর্মী) পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ কে কোথায় কী করছে তা ভাবার সময় নেই কারও।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে ফরিদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে মুরালীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়িতে আবুল কামাল (৪১) নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহজনক অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। তাকে আটক করে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনি দিলে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান কামাল।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ইসমাইল হোসেন (৩০) ও নুরে আলম (৩৫) নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। স্থানীয়রা জানান, সন্দেহভাজন তিন যুবককে গ্রামের কয়েকজন আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় যে হত্যা মামলাগুলো হয় সেগুলো যথারীতি তদন্ত করে আদালতে পাঠানোর পরে অতীতেও বিচার হয়েছে এখনো হচ্ছে। অনেকে শাস্তিও পেয়েছে। এসব বিচারের খবর প্রচার হয় না, ফলে কেউ জানতে পারে না। শাস্তির বিষয়টি প্রচার করতে হবে তাহলে সবাই সতর্ক থাকবে।’
আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তা নিশ্চিতের জন্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ জয় চাই। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর আইরিশদের বিপক্ষে এ জয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভিন্ন দুয়ার খুলে দেবে। আগে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে জেতা বাংলাদেশ এবার দুটো সিরিজেই জিতেছে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে। যেখানে সুবিধা নিয়ে খেলা ক্রিকেটের চেয়ে জয় হয়েছে প্রতিভা ও সামর্থ্যরে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আইরিশদের বিপক্ষে গত চার ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের চিন্তায় তাই আরও একবার সামর্থ্যরে শতভাগ প্রতিফলনের তাড়না। তবে এই ম্যাচে দলের দুজনের চিন্তা থাকতে পারে ভিন্ন। আইপিএল শুরু হতে আর দুদিন বাকি। কলকাতা নাইট রাইডার্সে ডাক পাওয়া সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশ এখনো বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে খেলার অনাপত্তিপত্র পাননি। আইরিশদের সিরিজে হারালে তাদের অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পথ বিস্তৃত হবে, উল্টো ফল হলে বিসিবিকেই ভাবতে হবে দুবার।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হলেও ফর্মের ধারাবাহিকতায় একাদশ নিয়ে বেশি ভাবতে হচ্ছে না বাংলাদেশকে। আগের ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পাওয়া রনি তালুকদারকে নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এই ওপেনারের চোট বড় কিছু না। সোমবারের বিশ্রামে রনি পুরোপুরি সুস্থ। ওপেনারকে নিয়ে ভাবনা না থাকায় একাদশে বদল আসার সুযোগ কম। একটি মাত্র জায়গাতেই সেই সুযোগটা নিতে পারে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করানো হয়েছিল বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে। এবার আগের ম্যাচে ১ ওভারে ১৮ রান দেওয়া নাসুম আহমেদের বদলে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে খেলিয়ে দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। অবশ্য অনভিজ্ঞতার বিষয়টি সামনে এলে রিশাদের স্বপ্ন অধরাই থাকবে। এর বাইরে দল নিয়ে পরীক্ষা করার মতো জায়গা নেই।
প্রতিপক্ষ ভিন্ন হলে ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ থাকত অনেক। আয়ারল্যান্ড হওয়ায় আগ্রহের জায়গাটা বদলেছে। এই ম্যাচের দিনে সাকিব-লিটনদের নিয়ে আইপিএল সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সবাই। ৩১ মার্চ বাংলাদেশ দলের শেষ টি-টোয়েন্টির দিন ১ লাখ ধারণক্ষমতার আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে আইপিএলের নতুন আসর। পরদিনই সাকিব-লিটনদের কলকাতা নাইট রাইডার্স দিনের ম্যাচে (বিকেল ৪টায়) খেলবে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে। আর রাতের ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমানের দিল্লি ক্যাপিটালস লড়বে লাখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে। তাই এনওসি পেলেও তিন ক্রিকেটারের ১ এপ্রিল নিজ নিজ দলের হয়ে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকা কঠিন।
কাল সারা দিনই গুঞ্জন ছিল, সাকিব ছাড়া বাকি দুজনকে এনওসি দেয়নি বিসিবি। কিন্তু ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘মোস্তাফিজ ছাড়া আমরা এখনই সাকিব-লিটনকে এনওসি দিইনি। কয়েকটা দিন সময় আছে। দেখা যাক।’ আলোচনা এখনো বাকি আছে সাকিব ইস্যুতেই। সাকিবকে আয়ারল্যান্ড টেস্টের পর থেকে মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগপর্যন্ত ২৪ দিনের এনওসি দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু সাকিব চাইছেন এবার পুরো আইপিএল খেলতে। কারণ তার বিশ্বাস এটাই সম্ভবত তার শেষ আইপিএল। বিসিবি পরিচালকদের এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাই বিসিবি তার ব্যাপারটি পুনরায় বিবেচনা করছে। এদিকে মোস্তাফিজ ও লিটনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটাও আটকে আছে। কারণ সাকিবকে জাতীয় দলে না খেলার সুবিধা দিলে তাদেরও দিতে হয়। কিন্তু সাকিবের মতো সিনিয়র না হওয়ায় মোস্তাফিজ-লিটনকে এতটা ছাড় হয়তো দেবে না বিসিবি। কারণ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে লিটনকে না খেলিয়ে ম্যাচ হারলে কড়া সমালোচনায় পড়তে হবে বোর্ডকে। এ কারণেই সাকিবকেও টেস্টে ছাড়তে চাইছে না বিসিবি। খালেদ মাহমুদ সুজনও বিসিবির পক্ষেই রায় দিলেন, ‘দেখেন এখানে আয়ারল্যান্ড বলেই কথা উঠছে সাকিব-লিটনকে আইপিএলে পাঠানোর। কিন্তু দলটা যদি ইংল্যান্ড হতো এমন কথা উঠতই না। এখন আয়ারল্যান্ড বলেই যে আমরা এই ঝুঁকি নিয়ে নেব এবং না হোক হেরে যাব সেটাও উচিত হবে না। সবার আগে তো দেশ। তো বিসিবি অবশ্যই এ ব্যাপারগুলো ভেবেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি দলের সঙ্গে নেই...তবে এটুকু বলতে পারি টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে হারানোর জন্য সাকিব-লিটন ছাড়াও আমাদের যথেষ্ট ভালো ক্রিকেটার আছে।’
এনওসি পেলেও বাংলাদেশের জার্সিতে ৩১ মার্চ শেষ ম্যাচের আগে ভারত যেতে পারছেন না মোস্তাফিজ। আর এ পেসার বাংলাদেশের টেস্টের চুক্তিতে বা দলে না থাকায় তাকে এনওসি দেওয়া নিয়ে বাধা নেই। তবে সাকিব ও লিটনকে এনওসি দেওয়া নিয়ে ভিন্ন সমস্যা আছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলে এ দুজন যথাক্রমে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। দুজনকেই আইপিএল খেলার ছাড়পত্র দিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-৮ এপ্রিল একমাত্র টেস্টে নেতৃত্ব সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। তখন এক ম্যাচের জন্য অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকা তামিম ইকবাল বা মুশফিকুর রহিমকে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। আবার আগের অধিনায়ক মুমিনুল হককেও দায়িত্ব দেওয়া যায় না। বিসিবি এ তিন ক্রিকেটারের কোনো একজনকে রাজি করালে ভিন্ন বিষয়, এই দিকটা অবশ্যই কঠিন। তাই সাকিব-লিটনের একজনকে দেরিতে এনওসি দিতে হচ্ছে বিসিবিকে। সেক্ষেত্রে সিনিয়র হিসেবে সাকিব এগিয়ে আছেন। গুঞ্জন সত্যি হলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে ঢাকা ফিরে আসছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। কলকাতার প্রথম ম্যাচের একাদশে নিজের সম্ভাবনা জাগাতে কাল রওনা হবেন ভারতের উদ্দেশ্যে। তখন আর ম্যাচ মিস হবে না সাকিবের (যদি একাদশে থাকেন)। এদিকে দেরিতে এনওসি পেলে লিটনকে অপেক্ষা করতে হবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ৮ এপ্রিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের শেষ দিন। তার আগে খেলা শেষ হলে লিটন ৯ তারিখ আহমেদাবাদে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কেকেআরে যোগ দিতে পারবেন। এমনকি বিদেশি কোটায় দলে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলে লিটনের আইপিএল অভিষেকও হয়ে যেতে পারে!
সাকিব-লিটনের আইপিএল যাত্রা নিয়ে একটু জটিলতা থাকলেও বিসিবি তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক। আগে পরে হলেও দুজনই আইপিএল খেলার ছাড়পত্র পাবেন তাতে সন্দেহ নেই। তার আগে আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি দাপুটে সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বড় মঞ্চে ভালো করার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিক।
ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসির কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণের ক্ষেত্রেও কিছুটা কড়াকড়ি বিধান যুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়। পরিচালনা পরিষদে একই পরিবারের তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবেন না বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএমএফের শর্ত অনুসারে ব্যাংক কোম্পানি আইনে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। ব্রিফিংয়ে খসড়া আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান তিনি।
১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশোধন প্রক্রিয়া চলাকালে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে। এ অবস্থায় ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন বাস্তবায়নের তাগাদা দিয়েছে। একই সঙ্গে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ (নন-পারফর্মিং লোন বা এনপিএল) ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে শুধু সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নয়, বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার পর বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর বাইরে আদালতের মাধ্যমে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি না করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বাংলাদেশে খেলাপিদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ছে। যার প্রভাবে দেশের আর্থিক খাত শৃঙ্খলাহীন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা। এশিয়ার বেশ কিছু দেশ রয়েছে, যারা খেলাপি ঋণের অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কিংবা এর কাছাকাছি নিয়ে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। মালয়েশিয়াতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পান না। থাইল্যান্ড সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠন করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সফলতা পেয়েছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা আরও বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠছে। প্রভিশন কাভারেজ বাড়িয়ে শ্রীলঙ্কায় ঋণ বিতরণ করা হয়, যা বর্তমানে ৬৩ শতাংশ। ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কায় খেলাপি ঋণের হার ছিল ঋণের ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৭ সাল শেষে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে।
তবে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কঠোর পদক্ষেপ নেয় চীন। দেশটিতে খেলাপিদের ওপর উড়োজাহাজ ও উচ্চগতির ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করপোরেট সংস্থার নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতে পারেন না খেলাপিরা। এমনকি খেলাপিরা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কোনো হোটেল সুবিধা নিতে পারেন না, রিয়েল এস্টেট কিনতে পারেন না। চীনের কিছু প্রদেশে খেলাপিদের সামাজিকভাবে ও সর্বজনীনভাবে লজ্জা দেওয়া হয়। যেমন গত আগস্টে দক্ষিণ-পশ্চিম সিচুয়ান প্রদেশের একটি আদালত ২০ খেলাপি গ্রাহকের ফোনে রেকর্ড করা বার্তা ছেড়ে দেয়, যাতে কেউ ফোন দিলে ‘আপনি যাকে ফোন দিয়েছেন, দেনা পরিশোধ করতে না পারায় আদালত তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে’ এমন মেসেজ বেজে ওঠে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কারা তার একটা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলে গণ্য করা হবে। একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
সচিব জানান, খসড়া আইনে বিধান রয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।
নোটিস দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণখেলাপি তার কাছে পাওনা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণখেলাপির তালিকা না পাঠায়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। তার পরও যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
মাহমুদুল হোসাইন বলেন, ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ প্রদান ও জামানত গ্রহণ, এ বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশন যেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারে সেই ধারাও সংশোধনে সংযোজন করা হয়েছে।
মাহমুদুল হোসাইন জানান, এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবেন না এমন বিধান রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইনের খসড়ায়। সচিব জানান, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ৪১ বছর বয়সী মুমুর লাশ বাসার বাথরুমের জানালার সঙ্গে রশি থেকে ঝুলছিল। বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাতে শাহরিয়ার কবিরের মহাখালীর বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করেন তারা। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে শাহরিয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।