
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার অনুমতি দিয়ে নতুন একটি আইনের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব সরকার। নতুন এই আইন পাস হলে বিদেশিরা দেশটিতে যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন। অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরমতো বাংলাদেশিরাও এই সুযোগ পাবেন। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার কৌশলের অংশ হিসেবে আবাসন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেই এমন পরিকল্পনা বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটির (আরইজিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল্লাহ আলহাম্মাদদের বরাতে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের সম্পত্তি কেনা সম্পর্কিত নতুন একটি আইন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এই আইনের আওতায় সৌদি নাগরিক নন, এমন বিদেশিরা মক্কা, মদিনাসহ সৌদি আরবের যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটির বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার বিষয়ে ২০২১ সালে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল সৌদি আরব। এই নির্দেশনায় সৌদির নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিসহ দেশটিতে থাকা বৈধ বাসিন্দাদের শর্ত সাপেক্ষে একক সম্পত্তি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, সৌদিতে রিয়েল এস্টেটের মালিকানার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের চেয়ে নতুন আইনটি আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক হবে। নতুন আইনের অধীন বিদেশিরা সৌদিতে বাণিজ্যিক, আবাসিক, কৃষিসহ যেকোনো ধরনের সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আগের আইনে সৌদির পবিত্র শহরগুলোতে বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরবের সব জায়গায় বিদেশিরা সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন।
নতুন আইনের মাধ্যমে সৌদি আরব তার আবাসন খাতে একটা রূপান্তর আনতে চাইছে। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। সৌদি কর্র্তৃপক্ষ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান আরও বাড়াতে আগ্রহী।
সৌদির রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি নতুন যে আইনটির কথা বলছে, তা কার্যকর হলে দেশটি প্রবাসী ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনঘনত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এক-তৃতীয়াংশ নগর সুবিধায় ঢাকায় চার গুণের বেশি মানুষের বসবাস। অবকাঠামো বিবেচনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ বহন করছে দেশের রাজধানী শহর।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০-১২০ জন বসবাস করে। ঢাকায় বর্তমানে একর প্রতি বসবাস করছে ৪০০-৫০০ জন।
দুই সিটিতে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
রাজউকের ড্যাপের তথ্যমতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ ভাগ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ ভাগ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ ভাগ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
ড্যাপে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার লালবাগ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫১ জন মানুষ বসবাস করে। জনঘনত্বের দিক থেকে যা বিশে^র সর্বোচ্চ। চকবাজারে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন মানুষ বসবাস করে। যা বিশে^ তৃতীয়। কোতোয়ালিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৩ জন বসবাস করে। যা জনঘনত্বের দিক থেকে বিশে^ দশম।
রাজউকের নগরপরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে মূল ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। এ জন্য ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সেখান থেকে ঢাকার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের জন্য অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে মূল ঢাকার জনঘনত্ব কমবে। আর জনঘনত্ব কমলে মূল ঢাকা অনেকাংশ বসবাস উপযোগী হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ঢাকায় জলাভূমি ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমেছে ১৩৪ বর্গকিলোমিটার। আর এ সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কংক্রিট। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটি এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ কংক্রিট আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে।
পরিকল্পনাবিদদের এ সংগঠটি বলছে, পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে সড়ক থাকা দরকার ২৫ শতাংশ, জলাশয় ১৫ শতাংশ, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান থাকা দরকার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ নাগরিক সুবিধার জন্য ৬০ ভাগ জায়গা খালি থাকা দরকার। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মার্কেট গড়ে উঠবে। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অন্যান্য বিবেচনায় সড়ক, জলাশয়, সবুজ ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে কোনো শহরের ৪০ ভাগের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
নিরাপত্তার বিবেচনায়ও ঢাকা যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সেটা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৫ শতাংশ। আর গত বছর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গ্লোবাল লাইভবিলিটি ইনডেক্স অনুসারে ঢাকা বিশে^র সপ্তম কম বসবাসযোগ্য শহর।
চলতি মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সাড়ে আট ভাগ সবুজ রয়েছে। ঢাকার উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয়কেন্দ্রিক সুবজ এলাকা ধরে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার বর্তমান সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ। আর জনসংখ্যা রয়েছে চার গুণ অর্থাৎ, ঢাকা অবকাঠামোর তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ নিয়ে চলেছে। ভালো হতো ১২ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা থাকলে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাস্তবতা বিবেচনায় চাইলেই আদর্শ জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ইচ্ছা করলেই এখন সড়কের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে এখনো কিছু উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। সেটা হলো, বিদ্যমান সড়কগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
ড. আদিল বলেন, ‘ঢাকার উন্মুক্ত জায়গা বাড়ানো তো দূরের কথা, যেগুলো আছে সেগুলোও টিকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। এ জন্য পলিসি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এখনো ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট ছোট উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের ড্যাপের কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ঢাকার জনঘনত্ব কমানো এবং গণপরিসর বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে ঢাকায় নতুন কোনো কর্মস্থান সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন শিল্প, কলকারখানা এবং অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাহলে জনসংখ্যার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা হয় বাস্তবায়ন হয় না : ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে নগরপরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে ব্রিটিশরা। এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ধারণাপত্র বলা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টিপ্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতা ধরে বিশদ পরিকল্পনার সুপারিশ করেন ওই নগরপরিকল্পনাবিদ। কিন্তু ওই সুপারিশের আর বাস্তব রূপ পায়নি। সে সময় ঢাকার চারদিকে চারটি নদীর পাশাপাশি শহরে অনেক খালও ছিল। একসময় শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ত। ফলে জলাবদ্ধতা হতো না। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ।
এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ।
বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ঢাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি ধরা হতো। রাজউকের নেতৃত্বে প্রণয়ন করা এ মাস্টারপ্ল্যানের নাম ড্যাপ। মাস্টারপ্ল্যানটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গঠনের সূচকের বিবেচনায় ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। তবে ৩০ ভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য ড্যাপ সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এবারের ড্যাপে ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
নওগাঁয় আটকের পর র্যাব হেফাজতে ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। তাকে যে তুলে নেওয়া হয়, তা র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। জেসমিনকে আটক করার ক্ষমতা র্যাবের ছিল কি না, আটকের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল কি না এবং র্যাব আটকের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী ঘটেছিল? এসব বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন সুলতানা জেসমিন। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে আটক করা হয়। এরপর অসুস্থ হয়ে গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তবে, সুলতানা জেসমিনের স্বজনদের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন তিনি। তবে, র্যাবের দাবি, তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন র্যাব বাদে পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এদিকে র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যরা কোনো মামলা বা অভিযোগ করবেন না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত সোমবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। ওইদিন হাইকোর্ট জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তাকে র্যাবের কারা আটক করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের মধ্যে জানতে চায়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে সুলতানার মৃত্যুজনিত কারণ-সংবলিত একটি মেডিকেল প্রতিবেদন আসে। যেখানে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সকালে শুনানিকালে হাইকোর্ট এ বিষয়ে আরও শুনানির জন্য বেলা ২টার পর সময় নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে রিট আবেদন করতে বলে আদালত।
শুনানিতে রিটকারী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এ ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। র্যাবের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল খুন, ডাকাতি, মাদক, জঙ্গিবাদের মতো বড় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে। কিন্তু এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার কথা বলা হচ্ছে। তাও মৃত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে।’
তিনি এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘এই আইনে তদন্ত বা গ্রেপ্তার র্যাবের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। যিনি মারা গেছেন তিনি একজন নারী। এটি খুব অন্যায় কাজ হয়েছে। এই যে বেআইনি কাজ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নেওয়া, মৃত্যুর মতো একটা ঘটনা সামগ্রিকভাবে এর জন্য বিচারিক তদন্ত জরুরি।’
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক সুলতানার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তাকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। কারও বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ থাকে তাহলে কি র্যাব তাকে ধরবে না? আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন।’
জেসমিন সুলতানাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘এ দাবি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হন এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।’ এ বিষয়ে হাইকোর্টকে আরও বিস্তারিত অবহিত করতে সময়ের আরজি জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
শুনানিকালে হাইকোর্ট বলে, ‘কোনো মানুষ যত জঘন্য অপরাধই করুক না কেন তাকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারে আইনি প্রক্রিয়া আছে। প্রতিটি নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার আছে। আমাদের উদ্বেগটা হলো র্যাবের একটা আলাদা পরিচিতি আছে। এখানে র্যাব উঠিয়ে নিয়ে গেছে। যাকে নেওয়া হয়েছে তিনি একজন নারী। নিয়ম অনুযায়ী তারা পুলিশে সোপর্দ করবে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি সেটা করা হয়নি। পুরো দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, তাকে (জেসমিন) উঠিয়ে নেওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কি না আসলে তখন কি ঘটেছিল।’ শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করে।
তুলে নেওয়ার বহু পরে জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলা : সুলতানা জেসমিন র্যাবের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে যখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি তখন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। গত ২৩ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করা হয়। পরদিনই মারা যান জেসমিন। এই মামলায় এনামুল হক দুজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও দু-তিনজনকে আসামি করেন। এক নম্বর আসামি করা হয় মো. আল আমিন (৩২) নামে একজনকে। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার গাজীবাড়ী কুতুবপুর এলাকায়। আর ২ নম্বর আসামি করা হয় সুলতানা জেসমিনকে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এনামুল হকের মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাটির আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করবে। র্যাবকে জানানোর আগে এনামুল হক বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেনি। আগে কোনো মামলাও করেননি। এ ছাড়া সুলতানা জেসমিনের নামে আগের কোনো মামলার রেকর্ড এখন পর্যন্ত নেই। তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেন আছে কি না এসব তদন্ত করা হবে। মামলা তদন্তে প্রয়োজনে সাইবার ইউনিটের সহায়তা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। মূল তথ্য উদঘাটনের জন্য যতগুলো ঘটনা অনুসন্ধান করা দরকার পুলিশ সেটা করছে। মামলার প্রধান আসামিকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে পেলে তদন্তের আরও অগ্রগতি হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘এখন আর এটা নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। যেহেতু এটা এখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হাইকোর্ট যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা ওইভাবে কার্যক্রম চালাব। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আমরা স্বল্পতম সময়ে জমা দেব।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দিতে পারবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে খুব একটা দেরিও হবে না বলে আভাস দেন।
ডা. কফিল বলেন, হার্টের পরীক্ষার জন্য প্যাথলজি বিভাগে একটি নমুনা পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই ফরেনসিক বিভাগ কাজ করবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন। প্যাথলজি বিভাগের রিপোর্ট পেতে সাধারণত সপ্তাহখানেকের বেশি সময় লাগে না।
মামলা করতে চায় না পরিবার : সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা করার চিন্তাভাবনা করছেন না তার স্বজনরা। গতকাল মারা যাওয়া জেসমিনের ভাই সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১২-১৪ বছর ধরে তার বোন ভূমি অফিসে চাকরি করতেন। কোনো দিন তারা বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শোনেননি। তার পরও বড় বোনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন না তারা। কারণ তারা আর কোনো ঝামেলায় যেতে চাচ্ছেন না। ভাগনে (জেসমিনের ছেলে) সাহেদ হোসেন সৈকত তার কাছেই আছে বলে জানান সোহাগ। জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কেউ আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান তিনি।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ শহরের জনকল্যাণপাড়ায় দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুলতানা জেসমিন শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তার বাসায় ভাড়া ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কখনো তারা শোনেননি।
অন্যদিকে কর্মস্থলের কয়েকজন সহকর্মী জানান, সুলতানা জেসমিনকে কখনো দেখে মনে হয়নি তিনি কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন। তার সম্পর্কে এর আগে কখনো কারও কাছ থেকে এ রকম তথ্য বা অভিযোগ তারা শোনেননি।
র্যাবের তদন্ত কমিটি : হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবের পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গত সোমবার র্যাব সদর দপ্তর এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্তে র্যাবের কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে তার সামনেই সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, এনামুল হকের নাম-পদবি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে তিনি (এনামুল হক) জানতে পারেন। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আল আমিন নামে এক ব্যক্তি। তার সহযোগী হিসেবে জেসমিনের জড়িত থাকার তথ্য পান এমানুল হক। গত ২২ মার্চ অফিসে যাওয়ার সময় তিনি র্যাবের টহল টিমের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করলে তার সামনে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। আটকের সময় অন্য লোকজনও ঘটনাস্থলে ছিল এবং সবার সামনেই সুলতানা র্যাবের দুজন নারী সদস্য জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একপর্যায়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় এনামুল হক সঙ্গে ছিলেন। নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সুলতানার আত্মীয়স্বজন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করলে সিটি স্ক্যানের পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন, তিনি স্ট্রোক করেছেন।
পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন : র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা একটি মারাত্মক অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অভিযোগের বিষয়টি র্যাব বাদে পুলিশের অন্য কোনো ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলা হয়েছে।
আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ চায় ব্লাস্ট : র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, বিচার নিশ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ এবং নির্যাতন ও হেফাজতে (মৃত্যু) নিবারণ আইন, ২০১৩-এর সুষ্ঠু প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে ব্লাস্ট (বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট)। গতকাল ব্লাস্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেসমিনকে আটকের প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেআইনি আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও নওগাঁ প্রতিনিধি
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ অন্যান্য ফির ক্ষেত্রে সমতা নেই। একেক কলেজ এমবিবিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একেক রকম ভর্তি ফি নিচ্ছে। এমনকি বছরজুড়ে কলেজভেদে পরীক্ষা ফিসহ অন্যান্য ফিও একেক রকম। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার এবং পুরনো মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে নতুন মেডিকেল কলেজের ফির বৈষম্য অনেক বেশি। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে সর্বোচ্চ তিন গুণ ও গড়ে দেড় থেকে দুই গুণের বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন ভর্তি ফি ১০ হাজার ও ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৩২ হাজার টাকা। এমনকি ঢাকায় গড়ে যেখানে ভর্তি ফি ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা; সেখানে ঢাকার বাইরে এই ফি গড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা।
এমনকি বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকায় যেখানে বছরে এই ফি নেওয়া হয় ৫-৬ হাজার টাকা; সেখানে ঢাকার বাইরে ১৪-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।
কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো মেডিকেল কলেজ পরিচালনায় সরকারের বরাদ্দ বাজেট নতুন মেডিকেল কলেজের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে কলেজ পরিচালনায় এসব কলেজ কর্র্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে বেশি ফি নিতে হয়। গত বছর দেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজে যাতে সমান ভর্তি ফি নেওয়া হয়, সে জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলোচনা হয়েছিল। সে সময় কলেজ কর্র্তৃপক্ষ তাদের নানা সমস্যার কথা বলেছিল। যেমন ছাত্রাবাস নেই, বাড়ি ভাড়া করে শিক্ষার্থী রাখতে হয়। এ কারণে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল সব কলেজে। কিন্তু তা কেউ মানেনি। গত বছরও ভর্তি ফি ছিল লাগামহীন। ২৫-৩৩ হাজার পর্যন্ত নিয়েছে।
কলেজভেদে ফির এমন ভিন্নতার কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কলেজগুলোকে এ বছর আগের বছরের মতোই ফি নিতে বলা হয়েছে। কলেজভেদে ফি ভিন্ন। কারণ একেক কলেজ একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিসের ফি থাকে। যে কলেজে ছাত্র সংসদ আছে, তারা এর জন্য ফি নেয়। কোনো কোনো কলেজ হোস্টেল ফি, কমনরুম চার্জ নেয়। সবকিছু মিলে ১৫-২০ হাজারের মধ্যেই ভর্তি ফি থাকে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মোটামুটি একটা নির্দেশনা দিই। তবে সেটা চূড়ান্ত কিছু নয়। আমরা ফি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিলাম। মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে অনেক ধরনের ও সংখ্যার বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আছে। এগুলো সমন্বয় করতে গেলে বৃহত্তরভাবে আলোচনা করে সমন্বয় করতে হবে।’
গত ২৭ মার্চ থেকে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি শুরু হয়েছে। চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন ১১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০ এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২ আসন রয়েছে। এ ছাড়া মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ ও উপজাতি কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। ৬ এপ্রিল ভর্তি শেষ হওয়ার পর কলেজ কর্র্তৃপক্ষ কোন কলেজে কয়টি আসন খালি আছে, সেই তালিকা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাবে। পরে সেই তালিকা অনুযায়ী কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার চার কলেজে তিন রকম ফি : ঢাকায় সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে চারটি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা করে। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ১১ হাজার ৫০০ ও মুগদা মেডিকেল কলেজে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে আসন ২০০। পরে বিদেশি আরও ২০ জনের মতো ভর্তি হয়। সব মিলে ২২০ জন ভর্তি হয়। ঢাকা মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আসন ২৩০টি করে। ফলে ওই দুই কলেজে ১০ হাজার টাকা করে ভর্তি ফি। আমাদের এখানে একটু বেশি।’
ঢাকার বাইরে তিন গুণের বেশি : সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে চারটি ঢাকায়। এই চারটি বাদে দেশের বাকি সব কলেজে ভর্তি ও অন্যান্য ফি ঢাকার তুলনায় সর্বোচ্চ তিন গুণ এবং গড়ে দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। এখানে শিক্ষার্থীদের থেকে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৩২ হাজার টাকা। আগামী ৪ ও ৫ এপ্রিল ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টি আসন ও বড় কলেজে ২৩০টির মতো।
একই কলেজের ইন্টার্নশিপের এক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার টাকা। ছয় মাস পরপর ২ হাজার ১০০ টাকা দিতেন পরীক্ষার ফির জন্য।
এরপর সর্বোচ্চ ভর্তি ফি নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে, ২৫ হাজার টাকা। মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২৩ হাজার টাকার একটু বেশি। রংপুর, নীলফামারী, বগুড়া ও পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা করে।
দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৮ হাজার ৯০০ টাকা। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা ভর্তি ফি ও ৩ হাজার টাকা হোস্টেল উন্নয়ন ফি। নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি ১৭ হাজার টাকা। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১৫ হাজার ৩০০ টাকা। গত বছর ছিল ১২ হাজার ২০০ টাকা।
ছোট কলেজ, ছাত্র কম, ফি বেশি : কলেজ অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, যেসব কলেজ নতুন হয়েছে, আসন কম, সেসব কলেজে ফি বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ এই ফির টাকা দিয়ে তাদের কলেজ পরিচালনার ব্যয় মেটাতে হয় এবং শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সুবিধা ও হোস্টেলে খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়; বিশেষ করে এর মধ্যে যেসব কলেজ নতুন, সেগুলোর জন্য সরকারি বরাদ্দ এখনো পর্যাপ্ত নয়।
এই অধ্যক্ষ আরও জানান, কলেজভেদে ফি ভিন্ন। আগের ৮টি মেডিকেল কলেজ, সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৩০ জন করে। এসব কলেজের সার্বিক বাজেটও বেশি। নতুন কলেজগুলো সরকারের থেকে অর্থ চাইতে গেলে বলা হয়, অনেক খরচ করে কলেজ বানানো হয়েছে। পরিচালনা ব্যয়ের কোনো বাজেট এখনো হয়নি। ফির টাকা থেকেই পরিচালনা ব্যয় করা হয়। এমনকি হোস্টেলের ছাত্রছাত্রীদের খাবারেও সহযোগিতা করা হয় এই টাকা থেকেই।
নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ভর্তি ফি নির্ধারণ হয় কলেজের একাডেমি কাউন্সিলের সভায়। যে কলেজগুলোতে ছাত্রসংখ্যা বেশি, সেই কলেজগুলোতে টাকার পরিমাণ কম। আর তুলনামূলকভাবে যেসব কলেজে ছাত্রসংখ্যা কম, সেখানে ফি বেশি। কারণ সারা বছরের খরচ একবারে নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এ বছর বিভিন্ন খরচ বেড়েছে। শিক্ষার্থী কম। এর মধ্যে চেষ্টা করি দরিদ্র ছাত্রছাত্রী থাকলে, তাদের বিভিন্ন ফি মওকুফ করে দিতে হয়।
দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এ এফ এম নুরুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ বছর মেয়েদের হোস্টেলে রাখা নিয়ে একটু অসুবিধা হবে। কারণ এবার মেয়েরা বেশি পাস করেছে। তবে ছেলেদের সমস্যা হবে না।
বাইরে পরীক্ষা ফিও বেশি : ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রতি বছরের ফাইনাল প্রুফ পরীক্ষার ফি ঢাকা ও পুরনো মেডিকেল কলেজের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো কলেজে এই ফি দ্বিগুণ বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
কিন্তু ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের বছরে পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফি ঢাকার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। প্রতি বছর চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পরীক্ষা ও কলেজ ফি বাবদ তাদের ১৫-১৬ হাজার টাকা দিতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারটি প্রফেশনাল পরীক্ষা হয়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩-৪ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে। প্রতি বছর কলেজের খেলাধুলা, পরিচয়পত্র, কারিকুলাম, ছাত্র কল্যাণ, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, ধর্মসংক্রান্ত মসজিদ ফি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সমাবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে ফি নেওয়া হয়। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮-৯ হাজার টাকা নেয়। তবে এই ফি ঢাকায় অনেক কম। ঢাকার বাইরে বেশি।
চোর, ডাকাত বা ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড থামছে না। যে অপরাধের সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে পরে পুলিশের তদন্তে দেখা যাচ্ছে সে ওই অপরাধ করেনি। এমন বাস্তবতায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিচারও ঠিকমতো পান না। আর যেসব ক্ষেত্রে বিচার হচ্ছে তাও প্রচার পাচ্ছে না। ফলে গণপিটুনিতে মৃত্যু হলে বিচার হয় না এমন ধারণা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গণপিটুনির অন্যতম কারণ মানুষের ধৈর্যচ্যুতি। এছাড়া ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ও এর জন্য দায়ী। সমাজে অহরহ ছিনতাই-চুরিসহ অন্যান্য অপরাধ বারবার হয়। কিন্তু সঠিক কোনো বিচার হচ্ছে না। এর ফলে মানুষ আক্রোশবশত গণপিটুনি দিয়ে থাকে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই শাস্তির দৃষ্টান্ত প্রচারও করতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে মারা গেছে ২১১ জন। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে জনতার গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু নামের এক নারী। এ ঘটনায় ওইদিন বাড্ডা থানায় ৪০০-৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেণুর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্তে উঠে আসে ওই নারী নিজের সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন বিদ্যালয়টিতে। পরের বছর ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আব্দুল হক। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতিমা ইমরোজ ক্ষণিকা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
রেণু হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জনমত তৈরি হয় গণপিটুনির বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনা। সর্বশেষ গত রবিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার স্বজনদের দাবি, মামুন চুরির সঙ্গে জড়িত না, তিনি চা বিক্রেতা। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।
মানুষের এমন হিংস্র হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সামাজিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা এগুলো করে থাকে। কোনো একটি জায়গায় হয়তো একটি ঘটনা ঘটল, ওটা যখন আরও কয়েকজন দেখে তাদের মধ্যে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখা যায়। এ কাজ করে তারা একধরনের আনন্দ পায় এ কারণে তারা একসঙ্গে এ কাজগুলো করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর জন্য তার পরিবেশও দায়ী। কিছু মানুষকে এভাবেই বড় করা হয়। তাদের ব্যক্তিত্বের কাঠামোও এমন, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে আনন্দ পায়। সেই মানসিকতা পরিবার ও সমাজ থেকেই জন্ম নেয়।’
মানবাধিকার সংগঠন আসকের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে যে ২১১ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেরই ৬৯ জন যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৩ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছে ৮ জন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৩ জন ও চট্টগ্রামে ৫ জন।
আসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর সারা দেশে গণপিটুনিতে মারা গেছে ৩৬ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ১৭ জন আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন। আগের বছর একইভাবে মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই ১৩ জন আর চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন। ২০২০ সালে মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, খুলনায় ১০ ও চট্টগ্রামে ৫ জন। ২০১৯ সালে ৬৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ জন ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ২২ জন। ২০১৮ সালে গণপিটুনিতে মারা যায় ৩৯ জন।
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মুহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধিকাংশ গণপিটুনির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক ধরনের মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) তৈরি হচ্ছে। এদের অনেকে আবার ভুক্তভোগী থাকে যারা অতীতে ছিনতাইকারী বা চোরের কবলে পড়েছে। আরেক শ্রেণির লোক গণপিটুনিতে অংশ নেয় যারা ভবঘুরে, বিভিন্ন স্থানে তারা অবস্থান করে, সুযোগ পেলেই কাজে লাগায়।’
শহরাঞ্চলে গণপিটুনিতে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এর প্রধান কারণ মানুষের যান্ত্রিকতা। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে আমরা কেউ কাউকে চিনি না, একটা হেটারোজেনাস (নানাধর্মী) পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ কে কোথায় কী করছে তা ভাবার সময় নেই কারও।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে ফরিদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে মুরালীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়িতে আবুল কামাল (৪১) নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহজনক অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। তাকে আটক করে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনি দিলে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান কামাল।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে ইসমাইল হোসেন (৩০) ও নুরে আলম (৩৫) নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। স্থানীয়রা জানান, সন্দেহভাজন তিন যুবককে গ্রামের কয়েকজন আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় যে হত্যা মামলাগুলো হয় সেগুলো যথারীতি তদন্ত করে আদালতে পাঠানোর পরে অতীতেও বিচার হয়েছে এখনো হচ্ছে। অনেকে শাস্তিও পেয়েছে। এসব বিচারের খবর প্রচার হয় না, ফলে কেউ জানতে পারে না। শাস্তির বিষয়টি প্রচার করতে হবে তাহলে সবাই সতর্ক থাকবে।’
আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তা নিশ্চিতের জন্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ জয় চাই। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর আইরিশদের বিপক্ষে এ জয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভিন্ন দুয়ার খুলে দেবে। আগে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে জেতা বাংলাদেশ এবার দুটো সিরিজেই জিতেছে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে। যেখানে সুবিধা নিয়ে খেলা ক্রিকেটের চেয়ে জয় হয়েছে প্রতিভা ও সামর্থ্যরে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আইরিশদের বিপক্ষে গত চার ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের চিন্তায় তাই আরও একবার সামর্থ্যরে শতভাগ প্রতিফলনের তাড়না। তবে এই ম্যাচে দলের দুজনের চিন্তা থাকতে পারে ভিন্ন। আইপিএল শুরু হতে আর দুদিন বাকি। কলকাতা নাইট রাইডার্সে ডাক পাওয়া সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশ এখনো বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে খেলার অনাপত্তিপত্র পাননি। আইরিশদের সিরিজে হারালে তাদের অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পথ বিস্তৃত হবে, উল্টো ফল হলে বিসিবিকেই ভাবতে হবে দুবার।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হলেও ফর্মের ধারাবাহিকতায় একাদশ নিয়ে বেশি ভাবতে হচ্ছে না বাংলাদেশকে। আগের ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পাওয়া রনি তালুকদারকে নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এই ওপেনারের চোট বড় কিছু না। সোমবারের বিশ্রামে রনি পুরোপুরি সুস্থ। ওপেনারকে নিয়ে ভাবনা না থাকায় একাদশে বদল আসার সুযোগ কম। একটি মাত্র জায়গাতেই সেই সুযোগটা নিতে পারে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করানো হয়েছিল বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে। এবার আগের ম্যাচে ১ ওভারে ১৮ রান দেওয়া নাসুম আহমেদের বদলে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে খেলিয়ে দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। অবশ্য অনভিজ্ঞতার বিষয়টি সামনে এলে রিশাদের স্বপ্ন অধরাই থাকবে। এর বাইরে দল নিয়ে পরীক্ষা করার মতো জায়গা নেই।
প্রতিপক্ষ ভিন্ন হলে ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ থাকত অনেক। আয়ারল্যান্ড হওয়ায় আগ্রহের জায়গাটা বদলেছে। এই ম্যাচের দিনে সাকিব-লিটনদের নিয়ে আইপিএল সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সবাই। ৩১ মার্চ বাংলাদেশ দলের শেষ টি-টোয়েন্টির দিন ১ লাখ ধারণক্ষমতার আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে আইপিএলের নতুন আসর। পরদিনই সাকিব-লিটনদের কলকাতা নাইট রাইডার্স দিনের ম্যাচে (বিকেল ৪টায়) খেলবে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে। আর রাতের ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমানের দিল্লি ক্যাপিটালস লড়বে লাখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে। তাই এনওসি পেলেও তিন ক্রিকেটারের ১ এপ্রিল নিজ নিজ দলের হয়ে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকা কঠিন।
কাল সারা দিনই গুঞ্জন ছিল, সাকিব ছাড়া বাকি দুজনকে এনওসি দেয়নি বিসিবি। কিন্তু ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘মোস্তাফিজ ছাড়া আমরা এখনই সাকিব-লিটনকে এনওসি দিইনি। কয়েকটা দিন সময় আছে। দেখা যাক।’ আলোচনা এখনো বাকি আছে সাকিব ইস্যুতেই। সাকিবকে আয়ারল্যান্ড টেস্টের পর থেকে মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগপর্যন্ত ২৪ দিনের এনওসি দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু সাকিব চাইছেন এবার পুরো আইপিএল খেলতে। কারণ তার বিশ্বাস এটাই সম্ভবত তার শেষ আইপিএল। বিসিবি পরিচালকদের এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাই বিসিবি তার ব্যাপারটি পুনরায় বিবেচনা করছে। এদিকে মোস্তাফিজ ও লিটনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটাও আটকে আছে। কারণ সাকিবকে জাতীয় দলে না খেলার সুবিধা দিলে তাদেরও দিতে হয়। কিন্তু সাকিবের মতো সিনিয়র না হওয়ায় মোস্তাফিজ-লিটনকে এতটা ছাড় হয়তো দেবে না বিসিবি। কারণ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে লিটনকে না খেলিয়ে ম্যাচ হারলে কড়া সমালোচনায় পড়তে হবে বোর্ডকে। এ কারণেই সাকিবকেও টেস্টে ছাড়তে চাইছে না বিসিবি। খালেদ মাহমুদ সুজনও বিসিবির পক্ষেই রায় দিলেন, ‘দেখেন এখানে আয়ারল্যান্ড বলেই কথা উঠছে সাকিব-লিটনকে আইপিএলে পাঠানোর। কিন্তু দলটা যদি ইংল্যান্ড হতো এমন কথা উঠতই না। এখন আয়ারল্যান্ড বলেই যে আমরা এই ঝুঁকি নিয়ে নেব এবং না হোক হেরে যাব সেটাও উচিত হবে না। সবার আগে তো দেশ। তো বিসিবি অবশ্যই এ ব্যাপারগুলো ভেবেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি দলের সঙ্গে নেই...তবে এটুকু বলতে পারি টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে হারানোর জন্য সাকিব-লিটন ছাড়াও আমাদের যথেষ্ট ভালো ক্রিকেটার আছে।’
এনওসি পেলেও বাংলাদেশের জার্সিতে ৩১ মার্চ শেষ ম্যাচের আগে ভারত যেতে পারছেন না মোস্তাফিজ। আর এ পেসার বাংলাদেশের টেস্টের চুক্তিতে বা দলে না থাকায় তাকে এনওসি দেওয়া নিয়ে বাধা নেই। তবে সাকিব ও লিটনকে এনওসি দেওয়া নিয়ে ভিন্ন সমস্যা আছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলে এ দুজন যথাক্রমে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। দুজনকেই আইপিএল খেলার ছাড়পত্র দিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-৮ এপ্রিল একমাত্র টেস্টে নেতৃত্ব সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। তখন এক ম্যাচের জন্য অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকা তামিম ইকবাল বা মুশফিকুর রহিমকে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। আবার আগের অধিনায়ক মুমিনুল হককেও দায়িত্ব দেওয়া যায় না। বিসিবি এ তিন ক্রিকেটারের কোনো একজনকে রাজি করালে ভিন্ন বিষয়, এই দিকটা অবশ্যই কঠিন। তাই সাকিব-লিটনের একজনকে দেরিতে এনওসি দিতে হচ্ছে বিসিবিকে। সেক্ষেত্রে সিনিয়র হিসেবে সাকিব এগিয়ে আছেন। গুঞ্জন সত্যি হলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে ঢাকা ফিরে আসছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। কলকাতার প্রথম ম্যাচের একাদশে নিজের সম্ভাবনা জাগাতে কাল রওনা হবেন ভারতের উদ্দেশ্যে। তখন আর ম্যাচ মিস হবে না সাকিবের (যদি একাদশে থাকেন)। এদিকে দেরিতে এনওসি পেলে লিটনকে অপেক্ষা করতে হবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ৮ এপ্রিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের শেষ দিন। তার আগে খেলা শেষ হলে লিটন ৯ তারিখ আহমেদাবাদে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কেকেআরে যোগ দিতে পারবেন। এমনকি বিদেশি কোটায় দলে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলে লিটনের আইপিএল অভিষেকও হয়ে যেতে পারে!
সাকিব-লিটনের আইপিএল যাত্রা নিয়ে একটু জটিলতা থাকলেও বিসিবি তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক। আগে পরে হলেও দুজনই আইপিএল খেলার ছাড়পত্র পাবেন তাতে সন্দেহ নেই। তার আগে আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি দাপুটে সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বড় মঞ্চে ভালো করার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিক।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দেশের বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর সরকারি হাসপাতালে এজন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া সব হাসপাতালে পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। সংবাদ সম্মেলনে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা-রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৫৮ ও ঢাকার বাইরে ৯ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৭৭১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন। ঢাকার পর বেশি রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ সংখ্যা ৪২৬ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৫৩২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা ঢাকায় শনাক্ত রোগীর চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যায় অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাই তাদের তথ্য দেওয়া হয় না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব রাখি।’
এ বছরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ছড়ানো এ সংখ্যাটাও উপেক্ষা করার মতো নয়। তাদের পরিষ্কার পানির উৎস সীমিত। তারা পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় খোলা পাত্রে রেখে দেয়, যা মশার জন্য একটা ভালো প্রজননক্ষেত্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না। তারা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়।’
সিটি করপোরেশনকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ : সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনগুলোকে জানিয়েছি, খুব দ্রুত যদি মশার স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা তাদের ম্যাপিং করে জানিয়ে দিই, কোথায় বেশি ছড়াচ্ছে। তাদের জায়গা থেকে আরেকটু বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। যেহেতু আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কোথায় কী হচ্ছে, তাই তাদের উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, লার্ভা ধ্বংসসহ তারা যেসব ব্যবস্থা নেয়, সেগুলোর মাধ্যমে যেন আমরা ভেক্টরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
অবশ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী, সে তথ্য জানাতে পারেনি অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে ঘনবসতি বেশি, সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।’
ডেঙ্গু বাড়ছে কয়েক কারণে : সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে জলাবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনঘনত্বের কারণের কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পর থেকে অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী দেখা দেয়। সব দেখে অনুমান করা হয়েছে, প্রাক মৌসুমেই ডেঙ্গু রোগী বেশি হবে।’
এ ব্যাপারে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ২০০০ সালে এটা বাংলাদেশে আসার পর মাঝে পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু কভিডের আগের বছর একটা বড় সংক্রমণ দেখেছি, গত বছর দেখলাম, এবারও হয়তো এমন কিছু একটা হতে পারে।’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১১ পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বাল্যবিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্ত্রী ও নিজ পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার (২৮ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটিপাছানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত কিশোরের নাম ইমরান (১৫) সে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। নুরুল ইসলামের প্রতিবেশী জিয়াউর রহমানের মেয়ে সাথী আক্তার ও ইমরান স্থানীয় পাঁচানী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ১০ দিন আগে প্রেমিকাকে নিয়ে নিজের বাড়ি পালিয়ে যায় ইমরান। পরে ইমরানের বাবা মেয়ের বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আট দিন সংসার করার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্ত্রী অভিমান করে বাবার বাড়ি চলে যায়। ইমরান তার স্ত্রীকে এনে দিতে পরিবারকে চাপ দিলে পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এই অভিমানে গতরাত ১০টার দিকে বিষ পান করে সে, ঘটনাটি টের পেয়ে তার পরিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্যু হয় ইমরানের।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিক হাসান বাবুল জানান, শনিবার আমার কাছে মেয়ের বাবা ও ছেলের বাবা এসেছিল। রবিবার দুই পক্ষকে ডাকলেও ছেলের বাবা সাড়া না দেওয়ায় সমস্যাটি সমাধান করতে পারিনি। রাতে ছেলে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় মেয়ে পক্ষের কোনো অবহেলা দেখছি না।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি আমাদের কেউ অবহিত করেনি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।