
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দাবি আদায়ে সোচ্চার শিক্ষকরা। তারা রাজপথের কর্মসূচিতে রয়েছেন। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। নির্বাচনের আগে আগে তারা আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালনের কথা ভাবছেন। তাদের মূল লক্ষ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণের দাবি আদায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট। ইতিমধ্যে তাদের আন্দোলনের এক মাস পার হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ কোনো কিছুই তাদের বিরত রাখতে পারেনি। এখন তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এর মধ্যে তারা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিলেও পরে তা থেকে সরে আসেন।
জাতীয়করণপ্রত্যাশী মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের দাবি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও টিউশন ফি বাবদ যা আয় হয় তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে ভর্তুকি ছাড়াই জাতীয়করণ সম্ভব। আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা পাই। একজন শিক্ষক মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসবভাতা পান। বিশে^র কোনো দেশে এমন বৈষম্য নেই। এ বৈষম্য দূর করতেই জাতীয়করণ দরকার।’
মহাজোটের সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজপথে অবস্থান করছি। ৯ মার্চ প্রতীকী অনশন করি। ১৫ মার্চ থেকে আমরণ অনশন করতে চাইলেও রাতে অবস্থানে প্রশাসনের বাধা আসায় তা স্থগিত করে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিই পালন করছি। ১২ থেকে ১৬ মার্চ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতিও পালন করা হয়। জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথেই অবস্থান করব।’
জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৮ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস)। সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা এখন অর্ধাহারে রয়েছেন। উৎসব-পার্বণে তাদের মলিন মুখে থাকতে হয়। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও ভরসার স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার একটি সাহসী সিদ্ধান্তেই হতে পারে শিক্ষার বৈপ্লবিক উন্নয়ন। আমাদের দাবি শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ। শিগগির আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
গত ১৩ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সম্মেলন হয়। তাতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্মেলনে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা প্রদানসহ আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
আন্দোলনে রয়েছেন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরাও। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জাতীয়করণ দাবিতে গত ৪ মার্চ থেকে মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। তারাও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ‘২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। তিন ধাপে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপের বিদ্যালয়গুলোর সমপর্যায়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। নানা আন্দোলনের পরও আমাদের বিদ্যালয়গুলোর জাতীয়করণ হয়নি। এখন আমাদের রাজপথে থাকা ছাড়া উপায় নেই। যতদিন না জাতীয়করণের ঘোষণা আসবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’
জাতীয়করণের দাবিতে রাজপথে রয়েছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৪ সালে রেজিস্ট্রার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এভাবে একই ধারায় চলতে থাকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সরকার ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলেও উপেক্ষিত থাকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো। প্রায় তিন দশক ধরে পাঠদান করেও বেতনবঞ্চিত রয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ২০ হাজার শিক্ষক।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তারাও আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন। সহকারী শিক্ষকরাও এখন দশম গ্রেডে বেতন দাবি করছেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা একই। ১৯৭৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা একই গ্রেডে বেতন পেতেন। প্রধান শিক্ষকরা একটি ইনক্রিমেন্ট বেশি পেতেন। যেহেতু সবার যোগ্যতাই এক, তাই বেতন-গ্রেডও এক হওয়া উচিত। অষ্টম শ্রেণি পাস গাড়িচালকরা যেখানে ১২তম গ্রেডে বেতন পান সেখানে সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড কতটুকু যৌক্তিক?’
আন্দোলনে রয়েছেন অনার্স-মাস্টার্স কলেজের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকলেও তাদের পদগুলো এমপিও-প্যাটার্নে নেই। দীর্ঘদিন ধরে তারা কলেজের দেওয়া নামমাত্র বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন।
সদ্য জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক ফোরাম (বাসকশিফো)। আত্তীকৃত শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, জাতীয়করণের দিন থেকে চাকরি নিয়মিতকরণ, আত্তীকৃত শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সুয়োগ প্রভৃতি দাবি তাদের।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমির মালিকানা-সংক্রান্ত সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার অবসান এবং ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্ট
কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের প্রথম তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভূমির মালিকানা সুনির্দিষ্ট করার জন্য ভূমি বণ্টনব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে এবং এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে ভাই-বোন উভয়েই একে অপরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, যার ফলে হামলা, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদি একটি সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সব মানুষের জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন আপনার (দেশবাসী) সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আমরা আপনার অধিকার সুরক্ষিত ও সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
জমি-সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার সময় জনগণকে কিছুতেই ঝামেলার সম্মুখীন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি ডিজিটাল ল্যান্ড সিস্টেম তৈরি করছি বলে সমস্যাটি আর থাকবে না।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি উদ্ভাবনী উদ্যোগেরও সূচনা করেন। এগুলো হলো লক্ষ্মীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স, রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন ইন্টারকানেকশন, স্মার্ট ল্যান্ড ম্যাপ, স্মার্ট ল্যান্ড রেকর্ডস, স্মার্ট ল্যান্ড পিডিয়া, স্মার্ট ল্যান্ড। সারা দেশে ৪০০ উপজেলায় সার্ভিস সেন্টার ও আধুনিক ভূমি অফিস। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সাতটি উদ্যোগের প্রতিটি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঝামেলামুক্ত ও দ্রুত ভূমি-সংক্রান্ত সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
ভূমি সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আখতার সাথী সহকারী কমিশনারদের পক্ষ থেকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি অফিসগুলো এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি ফোন কল পেয়েছে, যার মধ্যে ৬৮০০টি কল বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে। তিনি আরও বলেন, যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে তার জমির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে।
উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইনের ৩৩ ধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। এ ধারা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হতেন ইউএনওরা।
দুই বছরের বেশি সময় আগে এ সংক্রান্ত দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
এর রায়ে ফলে উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনওদের একচ্ছত্র ক্ষমতা আর থাকছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা।
‘বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’র পক্ষে করা একটি রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও আইন সচিবসহ ১৫ জনের উদ্দেশ্যে এ রুল দিয়েছিল হাইকোর্ট। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
রিট আবেদনের যুক্তি এবং আইনের ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী, ইউএনও হবেন পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। এই ধারার (২) উপধারা বলে পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য সব কার্যক্রম মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন। আইন বলছে, পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তাতে ইউএনও মতামত না দিলে বা তিনি বাস্তবায়ন না করলে পরিষদ কিছুই করতে পারবে না। এছাড়া আইনে ইউএনওকেও পরিষদের কাছে জবাবদিহির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদিও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন দাপ্তরিক চিঠি কিংবা আমন্ত্রণপত্রে ‘উপজেলা পরিষদ’ না লিখে ‘উপজেলা প্রশাসন’ লিখে। কিন্তু স্থানীয় সরকার আইনে ‘উপজেলা প্রশাসন’র কথা উল্লেখ নেই।
ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম রায়ের বরাত দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৩৩ ধারাটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে অনেকটাই খর্ব করেছে। সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের যে সারকথা সেখানেও ব্যত্যয় ঘটেছে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারার যে বিধান তাতে পরিষদে ইউএনওদের একধরনের একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায়শই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি কিংবা ইউএনও ও পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধের খবর পাওয়া যায়। এ রায়ের ফলে বিষয়টি স্পষ্ট হলো। এতে পরিষদের কোনো বিষয়ে চাইলে ইউএনওরা খবরদারি করতে পারবেন না।’
আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, ‘উপজেলা পরিষদ’ না লিখে ‘উপজেলা প্রশাসন’ লেখা বেআইনি এবং এখন থেকে থেকে ‘উপজেলা পরিষদ’ লিখতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাছান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের পুরনো আইনে বলা ছিল ইউএনওরা উপজেলা পরিষদের সচিব হবেন এবং পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন। ২০১১ সালে আইনটির সংশোধনে বলা হয়, ইউএনওরা পরিষদের মুখ্য কর্মকর্তা হবেন এবং সাচিবিক সহায়তা করবেন। এর মানে সাচিবিক সহায়তার ক্ষমতাটা ঠিকই ছিল। আদালত রায়ে বলেছেন যে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার যে অংশটা সেটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখন সরকার চাইলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।’
সাহাবি হজরত আবু উমামা বাহেলি রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (একবার আমি জানার জন্য বললাম) হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে একটি আমলের কথা বলুন। নবী কারিম (সা.) বললেন, তুমি রোজা রাখো। নিশ্চয়ই রোজার সমতুল্য কোনো ইবাদত নেই। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে একটি আমলের কথা বলুন। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো। রোজার সমপর্যায়ে কোনো ইবাদত নেই। আমি আবারও বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাকে একটি আমলের কথা বলুন। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো। রোজার মতো কোনো ইবাদত নেই।’ -সুনানে নাসায়ি : ১৬৫
বর্ণিত হাদিসে এটা স্পষ্ট যে, রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে পছন্দনীয় ইবাদত। আত্মার পরিশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন, মহান আল্লাহর সঙ্গে ঐকান্তিক সম্পর্ক স্থাপন, মানবিকতার বিকাশ, নৈতিক উন্নতি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চয়ে রোজার মতো তুলনাবিহীন ইবাদত আর নেই।
সব মানুষ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দয়া, রহমত ও অনুগ্রহের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। তার সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক চিরস্থায়ী। তবে বান্দার উদাসীনতা, অবহেলা, ঔদ্ধত্য এবং অজ্ঞতার কারণে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় প্রতি বছর রমজানে মুমিনরা আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পায়। এ জন্যই রমজান রহমতের মাস, আল্লাহর সান্নিধ্যে ফিরে আসার মাস। আত্মসংযমে ধৈর্যসহ রোজা রাখায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
রমজানের ফজিলত ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে প্রচুর হাদিস রয়েছে। এসব হাদিসের সারমর্ম হলো রমজানে রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। মানব সন্তানের নেক আমল দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রোজা কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। আর রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতায়ালা দেবেন।
শুরুতে উল্লিখিত হাদিসে রোজাকে তুলনাহীন ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ হাদিস প্রমাণ করে, রোজার কল্যাণধারা শুধু রমজান মাসেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এ কল্যাণধারা আল্লাহর বান্দারা বছরব্যাপী জারি রাখতে পারেন। আল্লাহর পরিতুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি রোজা বান্দার জন্য অনেক বেশি উপকারী ও প্রাপ্তির। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা পালন করে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্ব সমান পরিখা সৃষ্টি করেন।’ -জামে তিরমিজি : ১৬২৪
নবী কারিম (সা.) রোজার আমলকে বছরব্যাপী বিভিন্ন সময়ে ও পর্যায়ে পালনের উৎসাহ দিয়েছেন। শাবান মাসের রোজা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার দ্বারা পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিনের রোজা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন। নফল রোজার মধ্যে জিলহজ মাসের প্রথম দশক ও আরাফার দিনের রোজার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। এভাবে মহররম মাসে আশুরার রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখাও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত ও পছন্দনীয় আমল। উল্লিখিত নফল রোজা ছাড়াও সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সময়ও নফল রোজার কথা আলোচিত হয়েছে। মুমিনদের উচিত ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজা পালনে মনোযোগী হওয়া।
বর্ণিত হাদিসের শিক্ষা হলো- আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় আমল হলো রোজা। দয়াময় আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রোজার সমতুল্য আর কোনো ইবাদত নেই। তাই রমজান মাসের রোজা থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। নূরে আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার নুরুন্নবী সিদ্দিকীর ছেলে এবং ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা।
গতকাল বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে তার মরদেহ আনা হয়। পরে বাদ জোহর ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে ঢাকা গুলশানের আজাদ মসজিদে নেওয়া হয়। এ সময় নূরে আলম সিদ্দিকীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এই নেতাকে এক নজর দেখতে ঝিনাইদহের হাজার হাজার মানুষ ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এসে জড়ো হতে শুরু করে।
নূরে আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদহ হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাসের পর কিছুদিন ঝিনাইদহ কেসি কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর ঢাকা জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নূরে আলমের বাবা নুরুন্নবী সিদ্দিকী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী। স্কুলজীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরের ৭ জুন ৬ দফা আন্দোলনের একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে মনু মিয়া নামে একজন শ্রমিক নিহত হন। নূরে আলম সিদ্দিকী মনু মিয়ার লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করেন। ওই বছরই বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশি নির্যাতনে তার একটি হাত ভেঙে যায়।
সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭০-৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের চার খলিফার একজন হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়। মুজিব বাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি।
নূরে আলম সিদ্দিকী ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।