
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন নিয়ে কয়েক দিনের জল্পনা শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। সাবেক পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হলেন ট্রাম্প। দেশটির ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেন। যদিও ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ অস্বীকার করে একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ট্রাম্প অভিযুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, এ ঘটনায় গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ছিল, তিনি সাবেক পর্নো অভিনেত্রী এবং স্ট্রিপার স্টরমি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের জন্য তার তৎকালীন আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে ট্রাম্পের নির্দেশেই ওই নারীর সঙ্গে ট্রাম্পের কথিত সম্পর্কের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। মূলত এ অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, এ মামলার তদন্ত করছেন ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের দপ্তর। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারা ট্রাম্পের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যাতে তার আত্মসমর্পণের বিষয়টি সমন্বয় করা হয়।
সিএনএন বলছে, ফ্লোরিডায় বসবাসকারী সাবেক এ প্রেসিডেন্ট সোমবার নিউ ইয়র্কে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে এবং মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। সেদিন শুনানির সময় তাকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে। তারপরই ট্রাম্প গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হয়তো কারাবরণ করতে নাও হতে পারে। আর্থিক জরিমানা দিয়ে পার পেতে পারেন তিনি।
সিএনএন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ব্যবসায়িক জালিয়াতির সঙ্গে সম্পর্কিত মামলায় অভিযুক্ত করেছেন। সাবেক পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প অর্থ দিয়েছিলেন তা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে আদালত সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো প্রকাশ করেননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ কার হয়।
এদিকে ট্রাম্প নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, অভিযুক্ত করার ঘটনা তাকে আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতা থেকে সরিয়ে দিতে পারবে না। এ মামলার জন্য ডেমোক্রেট পার্টির নিউ ইয়র্ক কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগকে দোষারোপ করে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্রেট ব্র্যাগ আগামী নির্বাচনে আমার বিজয়ের সম্ভাবনাকে রোধের চেষ্টা করছেন। এটি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ।
তবে মাইকেল কোহেন আদালতে স্বীকার করেছেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বিষয়টি দফারফা করেছেন। আর স্টরমি ড্যানিয়েলস বলেছেন, ট্রাম্প ২০০৬ সালে লেক তাহো হোটেলে তার সঙ্গে যৌন মিলন করেছিলেন। সেটি প্রকাশ না করতেই তাকে অর্থ দেন ট্রাম্প। এদিকে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার ঘটনায় বিবিসির এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়া ও হাজতবাসের ঘটনা শোনা যায়। এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। শত শত রাষ্ট্রপ্রধান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক শাসককে তাদের রাজপ্রাসাদ বা রাষ্ট্রীয় কার্যালয় থেকে ধরে-বেঁধে সরাসরি কারাগারে পাঠানোরও নিদর্শন রয়েছে।
তবে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র এদিক দিয়ে নিজেদের ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে দাবি করে এসেছে। ওয়াশিংটনকে সারা বিশ্বের নৈতিকতা ও গণতন্ত্র চর্চার আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ ভাবমূর্তি রক্ষায় অনেক সচেষ্ট থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ভেঙে ‘সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা’ দেশের দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি শুধু ট্রাম্পের জন্যই সমস্যা নয় এটি আমেরিকান জাতির আত্মপরিচয় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর একটি বড় আঘাত বলেই ভাবছেন বিশ্লেষকরা।
রিপাবলিকান দলের অনেক ট্রাম্পবিরোধী নেতা তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ তালিকায় আছেন ফ্লোরিডা গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আছেন। মাইক পেন্স বলেন, এটি আমাদের দেশকে বিভক্ত করতে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে। তবে ডেমোক্র্যাট নেতারা বলেছেন, ট্রাম্প আইনের ঊর্ধ্বে নন।
রামকৃষ্ণ মিশন রোডে যতীন সরকারের এ বাড়ির নাম ‘বানপ্রস্থ’। নেত্রকোনার ছোট শহরের নির্জনতায় বাড়িটি পূর্ণাঙ্গ আশ্রম। এ বাড়ির সদর দরজা এবং ভেতর দরজা দুটোই খোলা থাকে। বাড়িতে কেয়ারটেকার কিংবা ব্যক্তিগত সহকারী নেই। তাই অ্যাপয়েন্টমেন্টেরও দরকার নেই। পোষ্য পুকুরের সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ অতিক্রম করে যে কেউ যেকোনো সময় তার ঘরে প্রবেশ করতে পারেন। ঘরে প্রবেশের পর দেখা মিলবে বইয়ের স্তূপ আর নামাঙ্কিত ক্রেস্ট ও পদকের ছড়ানো-ছিটানো সৌন্দর্যের ভেতরে পড়ছেন, ভাবছেন কিংবা শুয়ে আছেন তিনি। পৌঁছানোমাত্র মনে হবে গৃহকর্তা আগন্তুকের অপেক্ষাতেই ছিলেন। কোথা থেকে এসেছেন, কেন এসেছেন এটুকু জিজ্ঞাসাবাদের পরেই শুরু হবে জীবনকথন।
ধী ও মনীষার সবটুকু প্রজন্মের কাছে রেখে যাওয়ার এ আয়োজনে এতটুকু ক্লান্তি নেই। আটাশি পেরোনো দেহে আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা ও স্থবিরতা আছে কিন্তু স্মৃতি ও শ্রুতিতে তাজা তিনি। অভিজ্ঞানের দৃষ্টি ও বোধের প্রকাশে তাগড়া ও উজ্জ্বল তিনি। শরীর ভালো থাকলে এখনো মঞ্চে ওঠেন। তার ভাষায়, ‘আমার শরীর ভালো নেই কিন্তু কণ্ঠ আগের মতোই আছে। এ কণ্ঠটা এখনো আমাকে জীবিত রেখেছে। আমি আমার কথা বলতে পারি। কথা বলে আমি মূলত শিক্ষকতাই করি। শিক্ষকরা তো কথাই প্রচার করেন। আমিও কথাই প্রচার করি। মানুষ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ এবং সংকীর্ণ সামাজিকতার বিরুদ্ধে আমি আমার কথা প্রচার করি। সত্য প্রচারে আমার কোনো দ্বিধা কিংবা ভয় নেই। কথা বলাটাই শিক্ষকের দায়িত্ব। আমি সেই দায়িত্বই পালন করি।’
লিখে-বলে, একজন সমাজশিক্ষক হয়ে এ দায়িত্ব পালনে অক্লান্ত তিনি। দায়িত্ব পালনের এ শিক্ষাটাও নিয়েছেন পরিবার থেকে। পিতার লড়াকু মন আর পিতামহ রামদয়াল সরকারের ব্যাকরণিক জ্ঞান, ভাষা ও সাংস্কৃতিক মাধুর্যেই দীক্ষিত হয়েছেন আজকের যতীন সরকার। নেত্রকোনার রামপুর, দলপা, নন্দীগ্রাম, চন্দপাড়া এবং মামার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার পারুলতলাই ছিল যতীন সরকারের জানাবোঝার জগৎ। একটা গ্রাম-সংস্কৃতির ভেতরে তিনি বেড়ে উঠেছেন। পান্থজনের জ্ঞান ও ধারণাকে তিনি আয়ত্ত করেছেন। সেই জ্ঞান ও ধারণাকে সমৃদ্ধ করেছে সার্বজনীন জ্ঞান। আপন বাস্তুভূমিতে দাঁড়িয়েই কুড়িয়েছেন পৃথিবীর জ্ঞান। পৃথিবীর জ্ঞানের জন্য ভূমিজ ভাবনাকে পরিত্যাগ করেননি। ভূমির এ জ্ঞানকেই যতীন সরকার ‘দুনিয়ার জানালা’ বলেন। জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে তিনি বেড়ে উঠেছেন। সততা, আদর্শবাদ ও অযান্ত্রিক কোমলতাই যতীন সরকারের শক্তি।
১৯৪৫ সালে পিতার সঙ্গে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। সম্মেলন থেকে ফিরে পিতা তাই যতীনকে বাড়ির উঠানে একটা টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। নেতাদের মতো তিনিও বলতে লাগলেন। সেই থেকে শুরু। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ভাষা ও জাতীয়তাবাদের জাগ্রত মুহূর্তে কবি খান মোহাম্মদ আবদুল হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে রামপুরের ঘুমন্ত একটা গ্রামকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ কথার মাধ্যমেই হাওরাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে ঘুরে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন কিংবা শরণার্থী শিবিরের উদ্বাস্তু মুহূর্তেও দেশ-সমাজ-জাতীয়তার ধারণাই প্রচার করেছেন। ক্লাসরুমে সিলেবাস পড়িয়েছেন, ক্লাসরুমের বাইরে খুলেছেন ‘মুক্ত বাতায়ন’। মানুষের চিন্তা-চৈতন্য এবং অন্তরের বাতায়ন খুলে দেওয়াই তার উদ্দেশ্য। ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন। সেখানেও রাজবন্দিদের নিয়ে ইতিহাস-দর্শন-সমাজ-রাজনীতি কথামালার আয়োজন করে মানবেতিহাসকেই সমৃদ্ধ করেছেন। সেই কৈশোর থেকে এ সায়াহ্ন বেলায়ও যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, মানবেতিহাসকেই সমৃদ্ধ করাই ছিল তার সচল উদ্দেশ্য।
সমাজহিতৈষী হয়ে লেখায় ও শিক্ষকতায় একটা আদর্শবাদকেই প্রচার করেছেন। ভূমিজ সংস্কৃতির জ্ঞান ও ধারণাই তার লেখার বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমি কষ্ট লেখক।’ কেন বলেন? কারণ লেখায় তিনি অন্যের চিন্তার পুনরাবৃত্তি করেন না। নিজস্ব অনুভব ও চিন্তাকেই লেখেন। ৫০ বছর বয়সে তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয়। তারপর একে একে লিখেছেন : ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’, ‘সাঁকো বাঁধার প্রত্যয়’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘আমার যেটুকু সাধ্য’, ‘মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’, ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ এবং ‘‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’। বিষয় ও চিন্তায় প্রত্যেকটি গ্রন্থই মৌলিক; বাঙালি মনীষায়, ভাষা ও সংস্কৃতির অনন্য সংযোজন।
সময়ের কথা, ইতিহাসের কথা, দর্শনের কথা জনগণের ভাষায় সহজ করে প্রকাশ করতে পারেন বলেই সাধারণ মানুষ তাকে খুব পছন্দ করে। শ্রোতার ধারণক্ষমতা এবং বোঝার উপযোগী করে কথা বলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার থেকে অনেক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন, এ জন্য অবশ্যই তিনি গর্বিত। কিন্তু যশোর এলাকায় বক্তৃতা করতে গিয়ে এক আতরওয়ালার একশিশি আতর পুরস্কার পেয়েছিলেন। বক্তৃতা শুনে এবং উপলব্ধি করে আতরওয়ালার অন্তর নিংড়ানো ভালোবাসাকেই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ভাবেন তিনি। অর্থাৎ চিন্তা দিয়ে মানুষের অন্তরকে জাগ্রত করাই সমাজশিক্ষক কিংবা বুদ্ধিজীবীর কাজ।
তিনি প্রায়ই বলেন, ‘বাংলা সাহিত্য এত দীন না যে আমার মতো অধম লেখকের অনুপস্থিতিতে বাংলা ভাষা হাহাকার করবে। আমি শুধু মাস্টার হতে চেয়েছি। সারা জীবন মাস্টারি করেছি। ক্লাসে আমি সিলেবাস পড়িয়েছি। কর্তৃপক্ষ বিরাগ হতে পারেন, এ বিবেচনায় ক্লাসে সিলেবাসের বাইরে এক তোলা কথাও প্রকাশ করিনি। কিন্তু সময়, সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি নিয়ে আমারও বলার কিছু আছে। যে সময়ের ভেতরে বসবাস করি, সে সময়কে মানা না মানার আমার নিজস্ব দৃষ্টি ও অভিজ্ঞান আছে। সেই কথাই আমি লিখি। আমার লেখালেখিই আমার মাস্টারি।’ মাস্টারিটাকে শিল্পোত্তীর্ণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের শাসনে ও আদরে সত্যে ও জ্ঞানে দীক্ষিত করেছেন। শিক্ষার্থীরাও যতীন সরকারের কথা অন্তরে রাখেন। তার শাসনটাকে আশীর্বাদ হিসেবে মনে রাখেন। বহু বছর পরে কোনো এক ছাত্র তাই প্রণাম করতে করতে বলেন, ‘আমাকে চিনলেন না। আমি আপনার ছাত্র, স্যার। আমি চড় খাওয়া মোফাজ্জল।’
যতীন সরকারের খোলা ঘরে একেকজন একেক মতলবে প্রবেশ করে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসে। তিনি যেহেতু কাউকেই আটকান না, তাই সবাইকে বসতে বলেন। বসার পরে একেকজন একেটা আবদার প্রকাশ করে। কেউ হয়তো সেলফি তুলতে এসেছে, কেউ এসেছে বইয়ের ভূমিকা লেখাতে, কেউ এসেছেন লোকসাহিত্য নিয়ে কথা শুনতে, কেউ এসেছেন রবীন্দ্র-নজরুলের চিন্তা ও কবিতার সারাংশ শুনতে, কেউ এসেছেন মার্কস-অ্যাঙ্গেলস-লেলিন উত্তর সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী হবে এ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা নিয়ে, কেউ এসেছেন পার্টির পদের জন্য অনুরোধ রাখতে, কেউ এসেছেন অনুষ্ঠানের দাওয়াত নিয়ে, কেউ এসেছেন দাওয়াত যাতে রক্ষা না করা হয় সেই দুরভিসন্ধি নিয়ে, কেউ এসেছেন চ্যানেলের উদ্দেশ্যে দু-চার কথা বলার জন্য। যতীন সরকার সবাইকেই বসতে দেন। আমি তাজ্জব হই। মানুষটি সবাইকে আত্মীয় ভাবেন কীভাবে? কিন্তু যতীন সরকার প্রকৃত শিক্ষকের মতো সব ছাত্রকেই সমান চোখে দেখেন। নিজস্ব বোধ ও প্রাচুর্যে সবার কথার ভেতরে নিজের কথাটাই প্রচার করেন। সে কথাতেই থাকে যতীনীয় ঘর ও ঘরানা।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
শহীদ ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন রোড, নাগড়া, নেত্রকোনা
দেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ও নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই নিজেদের কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশিদের আগ্রহ ও চাপ দুটোই বেড়েছে।
বিদেশিদের তৎপরতার সর্বশেষ ফল ‘সংলাপের’ উদ্যোগ। তবে সরকার নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও ইসি বলছে, এটা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা।
বিএনপিকে আলোচনার জন্য চিঠি দেওয়ার পর দলটি মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে তারা এতে আগ্রহী নয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার আরও আটটি দলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি আলোচনার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসির এ উদ্যোগ সরকারের কৌশল। অন্যদিকে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, আলোচনার উদ্যোগ নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, বিএনপি কী করে তা দেখুক দেশের সংশ্লিষ্ট মহল ও বিদেশিরা। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইসির সংলাপ আলোর মুখ দেখলে পরবর্তী সংলাপের ফল ভালো হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে একচুলও যাবে না, এমন অটল অবস্থানে রয়েছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে অনমনীয় রয়েছে। দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিরসন করতে কাজ করছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বিদেশি শক্তিগুলো। বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তির সফর ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বসছেন। বিদেশিরা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যেমন চায় তেমনি বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না তাদের কাছে সরকারকে সেই ইঙ্গিতও দিয়ে চলেছে বিদেশিরা।
এ অবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, রাজনীতিতে শান্তির সুবাতাস দেখতে চায় দাবি করে প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের প্রতিই সমাধানে আসতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সংলাপকে গুরুত্ব দিয়ে বিদেশিরা দুই দলকে সংলাপে বসে সমস্যার সমাধানে আসতে চাপও দিয়েছে।
তবে সংলাপে সমাধান আসবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই নিজেরদের মতো করে যুক্তি তুলে ধরেছে বিদেশিদের কাছে। তবুও সংলাপে বসে সমাধানে আসতে বিদেশিরা সরকারকে একরকম বাধ্য করার কৌশল অনুসরণ করেছে। সেটা ফেলতে না পেরে ক্ষমতাসীনরাও একটু ভিন্ন কৌশল অনুসরণ করেছে সংলাপকে কেন্দ্র করে, তা হলো নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সংলাপ আহ্বান করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পরামর্শ সরকারের একেবারেই উচ্চপর্যায়ে থেকে এসেছে। ইসির এ উদ্যোগে বিএনপির অবস্থান কী দাঁড়ায় তা দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। ইসির এ উদ্যোগ বিএনপি আমলে না নিলেই সরকারের জন্য ভালো বলে মনে করা হচ্ছে। আর আমলে নিলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে ক্ষমতাসীনরা।
সূত্রমতে, সরকার বিদেশিদের চাপে পড়ে যাওয়ায় ইসিকে দিয়ে সংলাপ আয়োজন করে প্রমাণ করাতে চায় বিএনপি প্রকৃত অর্থেই সংলাপ বিশ্বাস করে না। তাহলে সংলাপ নিয়ে বিদেশিদের যে ধারণা আওয়ামী লীগ দিয়ে রেখেছে তা প্রমাণ করতে জোরালো উদাহরণ তৈরি করা যাবে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সরকারবিরোধী দলগুলো সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে বিএনপি ফল প্রত্যাখ্যান করে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সদস্যরা সংসদে যোগ দেন। এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও জাতিসংঘ দূতের মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে বিএনপি সংলাপে বসেছিল। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো দুই দলকে নিয়ে সংলাপ করেন। কিন্তু সেবার বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোসহ সরকারবিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করে।
অতীতের এসব ঘটনায় বিএনপি বলছে, সরকারের সঙ্গে সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না তাদের। সংলাপের মধ্য দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা তারা দেখছে না।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর অন্য এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ‘সংলাপের’ উদ্যোগ রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে পারে আবার দূরত্ব-অনিশ্চয়তাও বেড়ে যেতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, যাই ঘটুক, আওয়ামী লীগের কৌশলে অনেক পরিবর্তন আনবে ইসির নেওয়া এ উদ্যোগ।
তবে ইসির এ উদ্যোগ থেকে তেমন গ্রহণযোগ্য বা ফলপ্রসূ কিছু আশা করছে না রাজনৈতিক মহল। বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, সংলাপের একটি চাপ আছে। মূলত ইসির সংলাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে ইসিকে দিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়ানো হয়েছে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, গত ২২ মার্চ পিটার হাসের বাসায় নৈশভোজের আমন্ত্রণে গেলে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের কাছে সংলাপের উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চান তিনি। ওইদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সবচেয়ে ক্ষমতাধর এক নেতার বাসায় যান। এরপরই ইসির আলোচনার উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। এর বাইরে আর কিছুই ভাবছে না।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়বে না সরকার।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে নানা উদ্যোগ আসবে, যাবে। সর্বশেষ কোথায় কী গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা এখনই বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক কিছু ঘটে।’
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন ও আন্দোলনে কে কতটা ছাড় পাবে, কে পাবে না এবং আরও বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ তো একরকম চলছেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য সংলাপেরই আলামত।’ তিনি বলেন, ‘এখন দেখতে হবে ফল কী আসছে।’
জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন হবে দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে। সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
সংলাপে অংশ না নেওয়া নিবন্ধিত ৮ রাজনৈতিক দলকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) স্বাক্ষরিত এসব চিঠি ইতিমধ্যে দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। তবে কয়েকটি দলকে পাঠানো চিঠিতে দলের নাম ও নেতার নামে অসংগতি থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলগুলোর নেতারা। আলোচনায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারেও বেশির ভাগ দলেরই আগ্রহ নেই বলে সংশ্লিষ্ট দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ইসির পাঠানো চিঠির মধ্যে দুটো চিঠি দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) নাম রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলকে (বাসদ) পাঠানো চিঠিতে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চিঠি পড়ে বুঝতে অনেক সময় গেছে, এখনো বুঝতে পারছি না, তিনি আমার নামে, পরিচয়ে ও ঠিকানায় পাঠানো চিঠি কোন দলকে পাঠিয়েছেন?’
সিপিবির সঙ্গে ইসির সংলাপ বা আলোচনার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি এমন চিঠি প্রাসঙ্গিক কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, চিঠি দেখে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা বোঝা যায়। এটি অপমানজনক।’
সংলাপ বা আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও প্রিন্স বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচনের সব প্রচার প্রোপাগান্ডার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নেওয়া, “না ভোট” ও প্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিধান চালু, নির্বাচনকে টাকা-পেশিশক্তি-কারসাজি-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করা, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারসহ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন চলবে।’
বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সেটা রিসিভ করতে পারিনি। কারণ সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদকের নাম ঠিক নেই। আমরা বলেছি, এটা সংশোধন করে নিয়ে আসতে।’
ইসির আমন্ত্রণ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
এর আগে গত ২৩ মার্চ সংলাপ বর্জন করা বিএনপিকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার জন্য চিঠি দিয়েছিল ইসি। তবে পরদিন সংবাদ সম্মেলনে ইসির সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। এ সময় ইসির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিএনপির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বিএনপি তার সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েও আলোচনায় বসতে পারে বলেও ইসির ওই অনানুষ্ঠানিক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে বিএনপি আলোচনা বা চিঠির উত্তর দেওয়া দুটি বিষয়ই নাকচ করে দেয়।
৮ দলকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়, ‘গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমরা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সময়োচিত হওয়া নির্বাচনগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠান করে আসছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে সদিচ্ছা ব্যক্ত করে আসছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল, আপনার দলসহ কয়েকটি দল সেই সংলাপে অংশগ্রহণ করে নাই। তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক না হলেও, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে।’ সম্মতি সাপেক্ষে দিন-ক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আলোচনার বিষয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতি ও ইসি বরাবর আমাদের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো সায় মেলেনি। তা ছাড়া এই ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। যার প্রমাণ গাইবান্ধা ও কুমিল্লা নির্বাচনে দেখেছি। ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।’
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাকা সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছিল কল্যাণ পার্টি। এবার ইসির আমন্ত্রণে আলোচনায় যাবে কি না জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের বার আমরা যাইনি। তবে তাদের চিঠি পেয়েছি, সেটা গ্রহণও করেছি। তবে এবার এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি যাব কি যাব না। সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অবশ্যই আপনাদের জানাব।’
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের বার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো পরিবেশ ছিল না। এবারও আলোচনার সম্ভাবনা কম। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। সেসব বিষয়ের কোনো সমাধান হয়নি।’
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও আমরা দুটো নির্বাচন কমিশনকে দেখেছি সরকার দ্বারা প্রভাবিত হতে। এ জন্য আমরা বলেছি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আলোচনার বিষয়ে আগেও আমরা লিখিত মতামত দিয়েছিলাম। এবারও লিখিতভাবে জবাব দেব।’
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।