
সরকারকে হেয় করতে প্রথম আলো ও বিএনপি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম আলো আর বিএনপি একজন আরেকজনের পরিপূরক।’
ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ ধরনের সাংবাদিকতা ফৌজদারি অপরাধ।
প্রথম আলো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয়। মানুষ ভালোবেসে টানা তিন মেয়াদে এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। কিন্তু প্রথম আলো জনপ্রিয় সরকারকে হেয় করার জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে ছোট করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিশেষ দিনে বিশেষ এজেন্ডা সেটিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আলো মহান মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে এবং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারকে প্রথম আলো তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা সফল হতে দেবে না। ষড়যন্ত্র করলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবাদটি যে ভাষায় একটি দিনমজুরের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে সেটি কি সাধারণ দিনমজুরের বক্তব্য, না কি প্রথম আলোর দেওয়া বয়ানসেটি ভাববার সময় এসেছে। ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশনার দায় পত্রিকাটির সম্পাদক কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। অথচ ক্ষমা না চেয়ে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে পত্রিকাটি। তরুণ প্রজন্মকে উসকানি দেওয়ার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আমরা দেখেছি স্বাধীনতা দিবসের দিন সেদেশের গণমাধ্যম অনুপ্রেরণামূলক বাণী দিয়ে উৎসাহ করে। আর প্রথম আলো তাদের প্রভুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, তরুণ প্রজন্মকে হতাশা ও উসকানি দেওয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারের বিবৃতি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বলছে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকার এ ধরনের মামলা করেছে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে। আমি প্রথমে বলতে চাই সরকার কিন্তু এখানে মামলা করেনি। মামলা সাধারণ একজন নাগরিকও করতে পারে। সরকার মামলা করেছে এটা সর্বাগ্রে মিথ্যা। আর ভয় দেখানোর কথা যে বলা হচ্ছে কাকে ভয় দেখাব? যাকে ভয় দেখানোর কথা বলা হয়েছে তিনিই এই দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি এদেশে রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভয় দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রথম আলো আর বিএনপি সাপ্লিমেন্ট করে একে অপরকে। টার্গেট শেখ হাসিনা, টার্গেট সরকার, টার্গেট জনগণ। টার্গেট আগামী নির্বাচন ভ-ুল করা।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
২৭ মার্চ সোমবার, দুপুর ১২টা। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজের পারিবারিক আদালত। ছোট্ট আদালত কক্ষে গুমোট গরমে গিজগিজ করছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী। তিনটি বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসেছেন কয়েকজন। বেশির ভাগ দাঁড়িয়ে। ৯ বছরের এক মেয়েশিশু অস্বস্তি নিয়ে পায়চারি করছে আদালতের ভেতরে-বাইরে। মা প্রবোধ দিচ্ছেনআরেকটু ক্ষণ! মাঝেমধ্যেই নেতিয়ে পড়ছিল শিশুটি।
কথা হয় শিশুটির দাদা শাহ আলমের সঙ্গে। বয়স ৬০ বছর। মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন সাতসকালে। জামাতার বিরুদ্ধে ভরণপোষণের মামলা হয়েছে। নিয়মিত আদালতে আসতে হয়। আদালতে বসার জায়গা নেই। বসেছেন বারান্দার সামনে একটি সাইকেলের ওপর। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পার হলেও শুনানি হয়নি। নাতনিটি এই পরিবেশে অভ্যস্ত নয়। তার জন্য কষ্ট হচ্ছে।’
একই আদালতের বারান্দায় কথা হয় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। ৪০ বছর বয়সী নজরুল বলেন, ‘সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মামলা। শর্তসাপেক্ষে রায় তার পক্ষে এলেও বিপরীত পক্ষ এখনো সমন পায়নি। এসেছিলাম খোঁজ নিতে।’ সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আদালত ও বারান্দায় অপেক্ষমাণ আছেন। ঘণ্টার বেশি সময় বসেছিলেন বারান্দায়। ক্লান্ত ও হতাশ নজরুল বলেন, ‘মামলার বিড়ম্বনা তো আছেই। তার চেয়েও ভয় আর অস্বস্তি আদালতের পরিবেশ নিয়ে। বসার জায়গা নেই। একটু বিশ্রামের মতো পরিবেশ নেই।’
ঢাকার তিনটি পারিবারিক আদালতে প্রায় একই চিত্র। ঢাকা জেলা জজ আদালত ভবনের নিচে দুটি পারিবারিক আদালত। অন্যটি পার্শ^বর্তী জেলা ও দায়রা আদালত ভবনের দোতলায়।
প্রতিদিন অসংখ্য বিচারপ্রার্থী এলেও নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক শৌচাগার কিংবা বিশ্রামগার নেই। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই। রেবতি ম্যানশনের নিচতলায় নারী ও শিশুদের জন্য একটি বিশ্রামাগার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকলেও সেটি যথেষ্ট দূরে। এসব থাকা ও না থাকা সমান কথা মন্তব্য করেন আইনজীবীরা। কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেই। আদালতগুলোতে জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে।
নিয়মিত মামলা পরিচালনা করেন এমন কয়েকজন আইনজীবী বলেন, পারিবারিক আদালতের মামলার বড় অংশই শিশু ও নারী। তারা আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। অথচ আদালতের অস্বস্তিকর পরিবেশে তাদের একটু বিশ্রাম ও স্বস্তির সুযোগ থাকে না। প্রায়ই নারী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। গরমের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আদালতের পরিবেশে ভড়কে যায় শিশুরা। পরে আর আদালতমুখো হতে চায় না তারা।
১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে পারিবারিক আদালতের। বিয়েবিচ্ছেদ, দেনমোহর, সন্তানের ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, হেফাজত, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এ ধরনের পারিবারিক বিষয়ে মামলার শুনানি, আদেশ ও রায় হয় এসব আদালতে।
আইনজীবীরা বলেন, মামলাজটের অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে পারিবারিক আদালতগুলোও মুক্ত নয়। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশের পারিবারিক আদালতগুলোতে গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭৬ হাজার মামলা বিচারাধীন ছিল। ঢাকার তিনটি আদালতে প্রায় ১০ হাজারের মতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান আদালত-সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি সংস্থা ফ্লাডের (ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) হিসাবে তিনটি আদালতে প্রতি কর্মদিবসে অন্তত ৩০০ মামলার শুনানি হয়।
পারিবারিক আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত এ-সংক্রান্ত মামলায় শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পারিবারিক মামলা ও শিশুদের নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে হতাশা থাকে। শিশুরাও এর বাইরে নয়। মামলার জট বা বিড়ম্বনার চেয়েও আদালতের পরিবেশ নিয়ে বাদী ও বিবাদীরা শঙ্কিত বোধ করেন।’
সরজমিনে যা দেখা গেল : সম্প্রতি ঢাকার তিনটি পারিবারিক আদালতে সরজমিন ঘুরে বিচার-কার্যক্রম দেখেছেন দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক। দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পরিবারিক আদালতে দেখা গেছে, আনুমানিক ১০ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা একটি কক্ষে ৫টি স্টিলের আলমারি। আদালতসংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বলেন, এগুলো মামলার নথিতে ঠাসা। বাধ্য হয়ে নথি রাখতে হয় মেঝেতে। এমনকি বিচারকের এজলাসেও। ছোট দুটি পুরনো বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসেন বিচারপ্রার্থীর আইনজীবীরা।
পাশেই তৃতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ পারিবারিক আদালতের কক্ষটি একটু বড় হলেও চিত্র একই। আদালত কক্ষের সাতটি স্টিলের আলমারিতে নথি, মেঝেতে নথি, বিচারকের এজলাসের ডানে-বামে নথি। এসবের মধ্যেই বিচারকাজ পরিচালনা করেন বিচারকেরা।
পাশের জেলা ও দায়রা আদালত ভবনের দোতলায় ৫ম অতিরিক্ত সহকারী জজ পারিবারিক আদালতের এজলাস কক্ষটি একটু বড় হলেও বসার বেঞ্চগুলো ভাঙাচোড়া ও পুরনো। সেখানেও এজলাসে বিচারকের বসার জায়গার প্রায় পুরোটাজুড়ে মামলার নথির স্তূপ।
আদালতের পরিবেশের করুণ অবস্থা তুলে ধরে একটি পারিবারিক আদালতের একজন পেশকার নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমস্যার শেষ নেই। কিন্তু কারও নজর নেই। কিছুদিন আগে বিচারকের খাস কামরার একটি ফ্যান নষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানোর ১০ দিন পার হয়ে গেলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। নথি রাখার জায়গা নেই। প্রতিকূল পরিবেশেই আমাদের কাজ করতে হয়।’
ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশে শুনানি করতে হয়। শিশুরা মানসিক কষ্টে ভোগে বেশি। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরাও হতাশ হন। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলছে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ঢাকা ল রিপোর্টসের (ডিএলআর) সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের পরিবেশে কেউ মানসিক শান্তি খুঁজে পায় না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এসব সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নজরে আসা উচিত। অন্তত নারী-শিশুদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে আদালতের পরিবেশ স্বস্তিদায়ক করা দরকার।’
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে, প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এখন আবার আগাম নির্বাচন করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে চায়। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না। সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গতকাল বুধবার আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সব মহানগর ও জেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিইসি প্রয়োজনে আগাম নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি রাখতে বলেন। অর্থাৎ তারা ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। আগেভাগে নির্বাচন করে গোটা জাতিকে বোকা বানিয়ে আগের মতো ক্ষমতায় যেতে চায়। এবার জনগণ আপনাদের কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না। আপনাদের কোনো ফাঁদে জনগণ পা দেবে না, এবার তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আপনাদের সমস্ত চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেবে।’
কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখনো সতর্ক হোন, সজাগ হোন, যারা আজ ক্ষমতাকে বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রাখার জন্য সমস্ত ভিন্নমতকে দমন করছে, হত্যা করছে, গুম করছে, নির্যাতন করছে, কারাগারে নিচ্ছে, তাদের হাত থেকে আপনারাও পার পাবেন না। তাই আজ সবার দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’
তিনি বলেন, ‘সব সময় বলে এসেছি এ সরকার গণতন্ত্র মানে না। এ সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না; তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তাদের অধীনে দুটো নির্বাচন করে বন্দুকের নলের মুখে জোর করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ অতীতে কখনো অন্যায় মেনে নেয়নি। জনগণ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকার সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই প্রতিষ্ঠানটাকে সরকার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সরকার বলছে গত তিন বছরে বেকারত্বের সংখ্যা ২৬ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছে এসবই মিথ্যা কথা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজ যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন, তারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদি কেউ সমালোচনা করেন তাহলে তাদের গায়ে লাগে। কারণ তারা গণতান্ত্রিক নন।’
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
অন্যান্য জোট, দল ও সংগঠন : ১২ দলীয় জোট রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট আলাদাভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য পল্টন মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি পান্থপথে দলের কার্যালয়ের সামনে এবং বিকাল ৪টায় গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে দুই ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে। গণসংহতি আন্দোলন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ সরকারের দমনপীড়নের’ প্রতিবাদে সমাবেশ করে।
জেলা ও মহানগরে নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ : সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি মদদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন আইনানুযায়ী কাজ করতে পারছে না। মনে হয় তারা বিরোধী দল দমনে ফ্রি লাইসেন্স পেয়ে গেছে। দেশে ভীতি ও শঙ্কা বিদ্যমান রাখার একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো-সরকারের অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী শাসন নিয়ে কেউ যেন মাথা উঁচু করে কথা বলতে সাহস না পায়।’
কর্মসূচি পালনকালে রাজশাহীতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামালপুরে ১৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, খুলনা মহানগরে পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ, কিশোরগঞ্জে কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা, পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরসহ পিরোজপুর জেলা বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় পক্ষের মধ্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুপক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়া ও মারপিটের ঘটনাও ঘটে। এতে ৩ জন আহত হয়।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে সত্যায়ন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি দেশে এমন চাকরিজীবী কিংবা চাকরি প্রত্যাশী খুঁজে পাওয়া যাবে না। চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়ন করার নিয়ম চালু রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক চাকরি প্রত্যাশীরা নীলক্ষেতে গিয়ে কোনো এক গেজেটেড কর্মকর্তার নামে সিল-প্যাড তৈরি করেন। এসব সিল-প্যাড বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, মেসে ছড়িয়ে পড়ে। এসব সিল-প্যাডের ছাপ দিয়ে, স্বাক্ষর নকল করে নিজেরাই নিজেদের কাগজ সত্যায়িত করেন। ।
এ পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, খুব দ্রুত চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে 'সত্যায়ন' প্রক্রিয়া বাতিল হচ্ছে। গত বুধবার দেশ রূপান্তরের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাকরি প্রত্যাশীদের বিড়ম্বনা এড়াতে খুব দ্রুতই সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাতিল হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও অনেক খোঁজ-খবর নিয়েছি। সত্যি বলতে সত্যায়নের কোনো দরকার নেই। এমনো হয়, যে শিক্ষার্থীরা নিজেই নিজের কাগজ সত্যায়িত করছেন, আবার যার নামে সিল তৈরি হয়েছে তিনি নিজেই হয়তো তা জানেন না।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামের একটা ছেলে, যার আত্মীয়-স্বজন কেউ প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি করেন না। আবার সরকারি চাকরী করেন এমন কেউ তার পরিচিত নন। এ ক্ষেত্রে ওই চাকরি প্রত্যাশী বিড়ম্বনায় পড়েন। ফলে বাধ্য হয়ে অপরিচিত কারও কাছে তিনি কাগজপত্র সত্যায়িত করতে নিয়ে যান। যার কাছে কাগজ নিয়ে যান তিনিও হয়তো আগ্রহ দেখান না, অনেক ক্ষেত্রে বিরক্ত হন।
ঠিক কবে নাগাদ এ সিদ্ধান্তের কার্যকর হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের চলতি মেয়াদেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।