
পবিত্র রমজানের রহমতের প্রথম ভাগ শেষ। আজ শুরু হলো মাঝের অংশ। এই অংশ মাগফিরাতের, অর্থাৎ ক্ষমার। একজন মুমিনের জীবনে মাগফিরাত তথা ক্ষমার চেয়ে কাক্সিক্ষত আর কিছু হতে পারে না। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এটা এমন একটি মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমতের ঝরনাধারায় পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাফের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভের। আর যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধীন লোকদের পরিশ্রম ও মেহনত কমিয়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।’ -মিশকাত
রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই কল্যাণের। অফুরন্ত ভান্ডার থেকে কিছু আহরণের। এই মাসে রাতে ও দিনে অগণিত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই মাসে মুমিনের জন্য আল্লাহর দরবার অবারিত। যেকোনো দোয়া করলে সাধারণত তা কবুল করা হয়। আল্লাহ অপেক্ষা করে থাকেন বান্দা কখন চাইবে আর তিনি দেবেন। মাগফিরাতের এই সময়ে নিজেকে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সমর্পণ করে ক্ষমার যোগ্য করে তোলার সুবর্ণ সুযোগ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’ -মুসনাদে আহমদ
যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা ও অসৎ কাজকর্ম থেকে বিরত থেকে রোজাদার প্রথম ১০ দিন আল্লাহ তায়ালার রহমত তথা দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হন। দ্বিতীয় দশকেও এমনিভাবে রোজা রাখার ফলে মহান স্রষ্টা তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। আর রমজানের শেষ ১০ দিন নিয়ম মেনে, আদব রক্ষা করে সিয়াম সাধনা করলে রোজাদার জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তির নিশ্চয়তা লাভে ধন্য হন। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানের চাঁদের প্রথম তারিখ থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে, তারা সেদিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মা নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছেন।’ -সহিহ মুুসলিম
এ জন্য হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজানের মতো মহা সুযোগ পেয়েও যারা নিজেদের গোনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, তারা বড়ই দুর্ভাগা।
বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন উপলক্ষ খোঁজেন। রমজান সেই ধরনের একটি বড় উপলক্ষ। এই মাসে নানা বাহানায় অগণিত পাপী-তাপী বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহর ক্ষমার সেই ভা-ারটি পুরোপুরি খুলে দেন রমজানের মধ্য দশক বা মাগফিরাত পর্বে। এ জন্য রমজানের মধ্যভাগে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের তাগিদ করা হয়েছে হাদিসে। আমাদের জীবনে পাপ-পঙ্কিলতার কোনো শেষ নেই। কেউই জোর গলায় বলতে পারব না আমার কোনো বিচ্যুতি নেই। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া আমরা কেউই ক্ষমার আশা করতে পারি না। রমজান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের বিশেষ উপলক্ষ। এ মাসে কেউ আল্লাহর কাছে প্রকৃত অর্থে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন বলে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর দেওয়া মহা এই সুযোগ হেলায়-ফেলায় নষ্ট করা কারও জন্য উচিত নয়। এই রমজানে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমরা সহজেই পারি আমাদের বিগত দিনের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে।
লেখক : আলেম ও ধর্মীয় নিবন্ধকার
আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার চাপ রয়েছে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। অন্যদিকে বিদেশিরা জোর দিচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। আগের দুবারের মতো এবার যে আর নির্বাচন করা যাবে না সেই বার্তাও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ওই দুবারের ফলাফল বাদ দিয়ে আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করেছে। চালিয়েছে দুটি জরিপ। এ জরিপ ও বিশ্লেষণ ধরে ২০০ আসনে নজর দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে তাদের লক্ষ্য অন্তত ১৬০ আসন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।
নবম সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ। এরপর দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফল কোনো মানদ-েই ফেলছে না দলটি। দুটি নির্বাচনের ফল আমলে আনছে না ক্ষমতাসীনরা।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ে দুটি জরিপ হয়েছে। এ ছাড়া আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করে ভোটের চিত্র দেখা হয়েছে। দশম (২০১৪) ও একাদশ (২০১৮) নির্বাচনের যে ফলাফল তা বিবেচনায় না এনে আমলে নেওয়া হচ্ছে ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলের ওপর। কারণ ওই দুটি নির্বাচনের ফলাফল ছিল অস্বাভাবিক। তা আমলে নিলে বিচার-বিশ্লেষণ নির্মোহ হবে না বলে দাবি করেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা।
তারা বলেন, মাঠপর্যায়ে একেবারেই নতুন করে খুব অল্প সময়ে আসনভিত্তিক দুটি জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। তার ভিত্তিতে তারা ২০০ আসন টার্গেট করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একাধিক উপায়ে জরিপ চলে। এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে দেখভাল করা হয়।’
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘জরিপ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ে আপডেট থাকতে চান। কোথায় কী অবস্থা তা পরিষ্কার করে জানতে অনেক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে ১৮০ থেকে ২০০ আসনের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তাই নিশ্চিত আসন ও অল্প ঝুঁকির আসনগুলো জরিপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি টিমও জরিপ করেছে। জরিপ কাজ সরাসরি মনিটরিং করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে জরিপ চালাচ্ছে।
ওই নেতা বলেন, ‘১৯৯১ সালের পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আসন ভিত্তিক ফলাফলের ওপর জরিপ ও গবেষণা চলছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে কোথায় বড় ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, কোথায় অল্প ব্যবধান ছিল সেটাও দেখা হচ্ছে। আবার কোন কোন নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে হেরেছে আবার বড় ব্যবধানে হেরেছে তা নিয়েও কাজ চলছে। তবে ঢাকা বিভাগ, রংপুর বিভাগ, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একচেটিয়া জয়লাভ করবে, এমন আভাস পাওয়া গেছে জরিপে। অন্য তিনটি বিভাগ চট্টগ্রাম, রাজশাহী খুলনা বিভাগেও আসন পাওয়া যেতে পারে। তবে সংখ্যায় কম।
অন্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, অল্প ও বড় ব্যবধানে জেতা এবং একেবারে কম ব্যবধানে পরাজিত আসন ধরে ২০০ আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা আছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে যেসব আসনে ওই চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে সেসব আসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ওই সূত্র জানায়, ২০০ আসনে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা দেখলেও এর মধ্যে ১৬০ বা তার অধিক আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেই সামনে এগোবে সরকারি দল।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ১৬০ আসনে ভালোভাবে জেতার সম্ভাবনা আছে। বাকি আসনে কোনোরকমে জিততেও পারে অথবা হারতেও পারে। ১৬০ আসন পেতেই হবে, সে লক্ষ্যে জোরালো প্রস্তুতি ও গুরুত্বসহকারে কাজ করার পরিকল্পনা সবই নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া আসনগুলোকে লক্ষ্য করে এবার আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রেখেছি। এর মধ্যে মনোনয়নের ব্যাপারটিতে সংবেদনশীল থাকবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যদের বদনাম আছে তাদের পরিবর্তন করে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে।’
প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনেই প্রার্থী দেখলে বোঝা যায় প্রার্থী পরিবর্তন থাকেই। এবার অন্যবারের চেয়ে প্রার্থী বদলানো বাড়তে পারে। কারণ বিতর্কিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের সমালোচনা যেমন হয় ওই সমালোচনা নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধেও যায়। কিন্তু প্রার্থী বদলে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিলে বিতর্কিত প্রার্থীর সমালোচনা ভুলে নতুন প্রার্থীর আলোচনা সামনে চলে আসে। সমালোচনা ভুলে গিয়ে আলোচনায় আসাটাকে পুঁজি করতে নতুন প্রার্থীর ব্যাপারে ইতিবাচক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। ফলে গুরুতর সমালোচনা ও বদনাম থাকা প্রার্থীর মনোনয়ন অনিশ্চিত এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত।
সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মানুষ পুরনো কথা এমনিতেই ভুলে যাবে। বরং প্রার্থী চমক থাকলে তাকে নিয়েই আলোচনায় মেতে থাকবে মানুষ। জাতীয়ভাবেও সেটা আলোচনার জন্ম দেবে। বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আলোচনায় থাকে না। তাই প্রার্থী পরিবর্তন করে সুফল নিতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে এমন আলোচনার কথা তুলে ধরে সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের কর্মকা- নিয়ে গণমাধ্যম ও স্থানীয় লোকজন সমালোচনা করবে। তার প্রভাব পড়বে ভোটের মাঠে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচনগুলোতে পরীক্ষামূলক নতুন প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূলত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। তাতে ফলও ভালো এসেছে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন এরই নজির।
দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিগত সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়। সেখানে একাধিক সদস্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, যার বদনাম আছে, দলের সঙ্গে ঝামেলা আছে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আরেকজনকে যেন দেওয়া হয়।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দলীয় প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কোন্দলের বিষয়টি শেখ হাসিনার মাথায় আছে। তিনি বারবার দলীয় কোন্দল মেটাতে বলেছেন। না হয় কোন্দলে জড়িত পক্ষের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় একজনের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ বেশি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতির স্বার্থেই একটা ভালো নির্বাচন চায়। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। সেটা এখন নেই। আমরাও এখন চাই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে না চাইলেও কম্প্রোমাইজ (আপস) করতে হচ্ছে সরকারকে।’
সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, ‘আমাদের সরকার এখন একটা ভালো নির্বাচন চায়। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকতে পারার মতো আসন পেলেও চলবে, এ নীতি নিয়ে এগোনো হচ্ছে। তবে সংসদে আস্থা-অনাস্থার সম্ভাবনা যাতে না থাকে তার জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পক্ষে থাকলে নিশ্চিত থাকা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশ (জনশক্তি পাঠানোর জন্য) খুঁজে বের করতে হবে। আমরা এমন ধরনের প্রশিক্ষণের (কর্মীদের জন্য) ব্যবস্থা করব, যা একটি দেশের প্রয়োজন।’ তিনি গতকাল রবিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সেজন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।’ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা কীভাবে ভালো থাকবেন এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবেন, সে বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (প্রবাসী) যদি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, তবে তা হয়তো আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছায় এবং তারা তা ব্যয় করে। কিন্তু এতে যিনি এই অর্থ পাঠাচ্ছেন তার কোনো সঞ্চয় হয় না।’ তিনি আরও বলেন, কখনো কখনো প্রেরিত অর্থ অপব্যয় করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার পর দেখেন যে দেশে তার কোনো টাকা নেই এবং অনেককে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’ এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকিং বা আইনি মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার সরকার তাদের সেই রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা দিচ্ছে। খবর বাসসের।
সরকার কর্র্তৃক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষকে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশ দেন, যাতে করে প্রবাসীরা তাদের আবাসস্থলে থেকে সহজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি (প্রবাসী) যদি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান। তবে আপনার যতটা প্রয়োজন, ততটা খরচ করবেন এবং বাকিটা সঞ্চয় হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি দেশে ফিরে এই সঞ্চয় ব্যবহার করতে পারেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘হুন্ডি ব্যবহার করে টাকা পাঠানো হলে, তা অন্যের হাতে চলে যাবে। কিন্তু ব্যাংকে এমন কোনো আশঙ্কা নেই।’ তিনি আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরার পর তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থসহ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে, যা আগে হিসাব ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং মানুষ বেশি আয় করছে। তিনি আরও বলেন, একজন দিনমজুর আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করত, এখন কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। সর্বনি¤œ আয় ৫০০-৬০০ টাকা।
গত বছর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। গত মার্চ মাসে আবার অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও বিএনপি মৌখিকভাবে না যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের কূটনীতিকদের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি তার আগের অবস্থানেই রয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে। কারণ তারা মনে করছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে অনুকূল পরিবেশ ও সমান সুযোগ পাবে না।
বিএনপির এ অনড় অবস্থান নিয়ে দলীয় নেতারা বলছেন, তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দলের হাইকমান্ড বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন না হলে কী হবে, তা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি ২০১৪ ও ’১৮ সালের মতো আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করে উতরে যায়, সে ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো সমঝোতা না হলে এ নির্বাচন ঠেকানোর সাংগঠনিক সক্ষমতা বিএনপির কতটুকু রয়েছে সেটি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কী হবে? জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। ডেফিনেটলি, বরাবর যেভাবে নিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান এসেছিল, সেটা একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছিল। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি, তাদের মতামতটা উঠে আসুক সেই কারণে আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের দাবি না মেনে, যে কোনোভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (নির্বাচনে সমান সুযোগ)। এটি তৈরির আগে সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচন হবে। আমরা একশবার নির্বাচনে যাব। ২০১৪ সালে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমরা ওয়াক ওভার তো দিতে চাইনি। প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার নয়, দুই দফা সবার সামনে প্রমিজ করলেন, একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কী লাভ হয়েছে?’
বিএনপি তাদের দাবির পক্ষে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ আশা করছে। কূটনৈতিক মহলও সরকারকে বলছে, তারা বাংলাদেশে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। অনেক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এ নিয়ে সরকারি দল ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের তরফ থেকে সর্বশেষ সংলাপের উদ্যোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার বাসায় আওয়ামী লীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কথা বলেছেন। তার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা সরকারের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও তার পরিবেশের কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সর্বশেষ পিটার হাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের আলোচনার পরদিন ইসি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিকে চিঠি দেয়। এরপর আরও আটটি দলকে আলোচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে থাকা বিএনপি আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়ে দাবি আদায় কতটুকু করতে পারবে সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আবার আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ভেতরে ভেতরে একটি অংশ মনে করছে, যতটা সম্ভব দাবি আদায় করে নির্বাচন করে সংসদে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। এতে সংসদে ও মাঠের রাজনীতি জোরালো হবে। পরেরবার ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আরেক দল মনে করে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এ মতের পাল্লাই ভারী। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে এ অংশে থাকা নেতাকর্মীদের অবস্থান কী হবে। আবার নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগ মোটামুটি একতরফা নির্বাচনের করে ফেলতে পারে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেটা হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে বিএনপি পদক্ষেপ নেবে এ প্রশ্ন আছে।
ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি ও সদর উপজেলার ৮ নম্বর ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জসিম এবং লক্ষ্মীপুরের রামগতির পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলে ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, বিএনপি আন্দোলন আছে। সঠিক পথে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে আবার পরাজয় স্বীকার করে হামলা-মামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তাই তারা মনে করেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার নয়, দুই দফা সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছিল। কিন্তু লাভ তো হয়নি। সরকারপ্রধান তার প্রতিশ্রুতি রাখেননি উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন যাই বলেন, তাতে কী হবে? তাই দাবি আদায় না হলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ের আগে নির্বাচন হয়ে গেলে বিএনপির সামনে ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের উদাহরণ রয়েছে।
দলীয় একাধিক সূত্রমতে, মূলত দুটি কারণে বিএনপির এ অনড় অবস্থান। প্রথমত, বিএনপি মনে করছে, সরকারের কর্মকা-ে জনগণ ক্ষুব্ধ। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সমাবেশগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ সেটাই প্রমাণ করে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে, জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে, আরও বড় পরিসরে মাঠে নামতে পারবে বলে বিএনপির বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে জনগণই তাদের দাবি আদায় করে নেবে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি কূটনৈতিকদের বোঝাতে পেরেছে, মানুষ গত দুটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠায় তাদের কাজ করা উচিত। এসব অভিযোগের ন্যূনতম সত্যতা পাওয়ায় কূটনৈতিকরাও সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বিএনপি মনে করছে, গত দুই সংসদ নির্বাচনের মতো এবার সরকার কোনোভাবে যেনতেন নির্বাচন করলে তা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বহির্বিশে^ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়াও বিএনপির অনড় অবস্থানের আরেকটি কারণ হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো দল পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। ২০১৮ সালে দলটিকে অনেক হিসাবের মধ্যে এটাও মাথায় রাখতে হয়েছে। এবার সেই বাধ্যকতা নেই।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ১৪ সালের মতো যদি অবস্থা হয় তাহলে চূড়ান্ত সেই আন্দোলনের যাওয়ার আগে দলটি নির্বাচন পর্যন্ত সংঘাতে না গিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতাও চালিয়ে যাবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন প্রয়োজন তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের মতো একতরফা ও নির্বাচন ব্যবস্থার বাইরে রেখে আগের মতো একটি সাজানো নির্বাচন করতে চায়। দলটি বলছে, একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতাসীনদের প্রতিহত করা হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘১৯৯৪-৯৫ সালে আওয়ামী লীগ-জামায়াত আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উদারতা দেখিয়ে তা মেনে নিয়েছিলেন। আমরাও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সেই উদারতা আশা করি। কারণ সবকিছুর পর তিনি শেখ মুজিবের কন্যা। আর যদি খামখেয়ালি বহাল রাখেন তাহলে ইতিহাস অনেককে মুছে ফেলেছে। তিনিও ইতিহাস থেকে মুছে যাবেন। খামখেয়ালি করে লাভ হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন করছি। সেই সময়ে আমরা অবরোধ করছি, এখন মার খাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই শান্তি-সমাবেশের নামে আওয়ামী লীগ আমাদের কতটুকু মারতে পারে। মার খেতে খেতে জনগণ একসময় তার জবাব ঠিকই দেবে।’
ঋণের সুদের হারে থাকছে না ক্যাপ সুবিধা। আগামী জুন মাসে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার তুলে দিয়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার (ওয়েটেড) বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। এখন ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ৬ দশমিক ৯৯। ফলে এখনকার হিসাবে ঋণের সুদ হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তবে ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণে তদারকি, বাজারভিত্তিক ডলারের দাম নির্ধারণ, ব্যাংকারদের জন্য আলাদা হাসপাতাল তৈরি ও খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রয়োজনী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেনের নেতৃত্বে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিরা ব্যাংকার্স সভায় যোগ দেন।
ব্যাংকার্স সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ঋণের সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের অন্যতম হলো সুদহার নির্দিষ্ট করে না রেখে করিডর প্রথা চালু করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে ৩ শতাংশ যুক্ত করে যে সুদ হয়, তা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
সভায় জানানো হয়, প্রতি মাসে ট্রেজারি বিলের একাধিকবার নিলাম হয়। ফলে এর সুদের হারের ওপর ভিত্তি করে একটা গড় হার নির্ধারণ করা হবে। যদি ট্রেজারি বিলের সুদহার কমে যায়, তবে অতিরিক্ত হার বাড়িয়ে সুদের হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসে গড় সুদহার কত হবে, তা নির্ধারণ করে জানিয়ে দেবে
সভায় ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে বিভিন্ন উপকরণ উঠে যাবে। কার্যকর হবে একক দর। আইএমএফ ডলারের দরের হরেক রকম উপকরণ এবং এগুলোর বিভিন্ন ধরনের দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার শর্ত দেয়। এর সঙ্গে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে দামের ক্ষেত্রেও একক দর চালুর কথা বলে। এ শর্ত জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সভায় ডলারের একক দাম নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ডলার বেচাকেনায় হরেক রকম উপকরণ ও দাম উঠে যাবে। ডলারের একক দর কার্যকর হবে। এতে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে বলেও জানান এই এমডি। পাশাপাশি ডলারের দামে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকারদের হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় সবার কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকাদের হাসপাতালের জায়গা ক্রয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতে পারে। আর খেলাপি ঋণ উত্তোলন এবং নতুন করে ঋণ বিতরণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগে যে পণ্য আনতে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছিল, এখন সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিয়েই এসব পণ্যের ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে। আমদানি পণ্যের মূল্য পরীক্ষা করায় ডলার খরচ কমে আসছে। বেশি ডলার খরচ করে পণ্য আনা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ৩০ লাখ ডলারের বেশি ঋণপত্রের মূল্য যাচাই করে অনুমোদন দিচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ঋণপত্রের মূল্য আগের চেয়ে বেশি যাচাই-বাছাই করছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে না। ফলে ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। এখন যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে কি না, তা তদারকি শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এতে রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার কমে আসবে। ফলে প্রবাসী আয়ে যে হুন্ডি প্রথা আছে, তা-ও কমে আসবে।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, হুন্ডির চাহিদা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এতেই অতিরিক্ত ডলার খরচ কমে আসবে। পাশাপাশি সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কাজ হচ্ছে, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় উচ্চ আদালতে আগাম জামিন পেয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তার করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় সপ্তাহ জামিনের এই আদেশ দেয়। গতকাল সকালে মতিউর রহমানের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার। আদালত বেলা ৩টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে। শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক ভবনের নির্ধারিত স্থান থেকে ভার্চুয়ালি আদালতে হাজির হন মতিউর রহমান। তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, জেড আই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আইনজীবীরা বলেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যে মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হয়। এতে দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। যাতে ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’ এমন উদ্ধৃতি দেখা যায়। উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবিটি ছিল এক শিশুর। ফেসবুকে ওই পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তা প্রত্যাহার করে প্রথম আলো। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সংশোধনী দিয়ে প্রতিবেদনটি অনলাইনে প্রকাশ করে তারা।
এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে গত ২৯ মার্চ রাতে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। এতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং পত্রিকাটির সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও তার সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করেন বাদী। মামলাটির এজাহারে নাম উল্লেখ করা অপর আসামি শামস গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তাকে গত বুধবার ভোরে সিআইডি সদস্য পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার পর ৩০ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন শুনানিতে আইনজীবী ফিদা এম কামাল বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে শিশুটির যে ছবি ছাপা হয়েছে তা জাকির নয়, সবুজের। জাকির নামে একজন দিনমজুরের বক্তব্য এসেছে প্রতিবেদনে। পরে ভুলের সংশোধনীও দিয়েছে প্রথম আলো। কিন্তু ৭১ টিভির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা কি পলিটিক্যাল মোটিভেটেড নয়?’
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন এজাহার থেকে পড়তে থাকেন। বিচারক বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। তাদের সেøাগান হচ্ছে সত্যের সন্ধানে। এখন আপনারা (প্রথম আলো) যদি তথ্য প্রকাশে এ ধরনের ভুল করেন তাহলে কীভাবে হবে?’ এখানে ইনফরমেন্ট (বাদী) কীভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন সে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট।
তখন ফিদা এম কামাল বলেন, ‘আমরা জানি না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে এখন নতুন রূপ দিয়ে ব্যবহার হচ্ছে।’
একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না জামিনের আরজি জানিয়ে আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘পিটিশনার (মতিউর রহমান) একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পত্রিকাটিও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। ভাত জোটছে না বললেই কি স্বাধীনতার সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতা কি এতই হালকা!’
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাত বছরের এক শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি (মতিউর রহমান)। তারপর সংশোধনী দিয়েছেন। এভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে তাদের এ ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রথম আলোর মতো পত্রিকার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত নয়।’
আদালত তখন বলে, ‘যেহেতু একটা সংশোধনী হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার তো তাদের রয়েছে।’
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি সঠিক কি না তা কিন্তু বের করেছে আরেকজন সাংবাদিক।’
আদালত বলে, ‘এ বিষয়ে তো প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা যেত।’ শুনানি শেষে আদালত মতিউর রহমানকে জামিনের আদেশ দেয়।
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য শুনে আদালত ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মতিউর রহমানকে নিম্ন আদালতে যেতে হবে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন এবং এ সময়ের মধ্যে তাকে মহানগর দায়রা জজ আদলতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।