
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এবং নতুন দেশ (জনশক্তি পাঠানোর জন্য) খুঁজে বের করতে হবে। আমরা এমন ধরনের প্রশিক্ষণের (কর্মীদের জন্য) ব্যবস্থা করব, যা একটি দেশের প্রয়োজন।’ তিনি গতকাল রবিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে এবং সেজন্য আমরা কর্মীদের জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে।’ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকরা কীভাবে ভালো থাকবেন এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবেন, সে বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (প্রবাসী) যদি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, তবে তা হয়তো আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছায় এবং তারা তা ব্যয় করে। কিন্তু এতে যিনি এই অর্থ পাঠাচ্ছেন তার কোনো সঞ্চয় হয় না।’ তিনি আরও বলেন, কখনো কখনো প্রেরিত অর্থ অপব্যয় করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফেরার পর দেখেন যে দেশে তার কোনো টাকা নেই এবং অনেককে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’ এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকিং বা আইনি মাধ্যমে টাকা পাঠায়, তার সরকার তাদের সেই রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা দিচ্ছে। খবর বাসসের।
সরকার কর্র্তৃক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষকে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশ দেন, যাতে করে প্রবাসীরা তাদের আবাসস্থলে থেকে সহজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি (প্রবাসী) যদি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান। তবে আপনার যতটা প্রয়োজন, ততটা খরচ করবেন এবং বাকিটা সঞ্চয় হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি দেশে ফিরে এই সঞ্চয় ব্যবহার করতে পারেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘হুন্ডি ব্যবহার করে টাকা পাঠানো হলে, তা অন্যের হাতে চলে যাবে। কিন্তু ব্যাংকে এমন কোনো আশঙ্কা নেই।’ তিনি আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরার পর তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থসহ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার যে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশ তার ফল পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে, যা আগে হিসাব ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং মানুষ বেশি আয় করছে। তিনি আরও বলেন, একজন দিনমজুর আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করত, এখন কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। সর্বনি¤œ আয় ৫০০-৬০০ টাকা।
আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার চাপ রয়েছে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। অন্যদিকে বিদেশিরা জোর দিচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। আগের দুবারের মতো এবার যে আর নির্বাচন করা যাবে না সেই বার্তাও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ওই দুবারের ফলাফল বাদ দিয়ে আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করেছে। চালিয়েছে দুটি জরিপ। এ জরিপ ও বিশ্লেষণ ধরে ২০০ আসনে নজর দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে তাদের লক্ষ্য অন্তত ১৬০ আসন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।
নবম সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ। এরপর দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফল কোনো মানদ-েই ফেলছে না দলটি। দুটি নির্বাচনের ফল আমলে আনছে না ক্ষমতাসীনরা।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ে দুটি জরিপ হয়েছে। এ ছাড়া আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করে ভোটের চিত্র দেখা হয়েছে। দশম (২০১৪) ও একাদশ (২০১৮) নির্বাচনের যে ফলাফল তা বিবেচনায় না এনে আমলে নেওয়া হচ্ছে ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলের ওপর। কারণ ওই দুটি নির্বাচনের ফলাফল ছিল অস্বাভাবিক। তা আমলে নিলে বিচার-বিশ্লেষণ নির্মোহ হবে না বলে দাবি করেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা।
তারা বলেন, মাঠপর্যায়ে একেবারেই নতুন করে খুব অল্প সময়ে আসনভিত্তিক দুটি জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। তার ভিত্তিতে তারা ২০০ আসন টার্গেট করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একাধিক উপায়ে জরিপ চলে। এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে দেখভাল করা হয়।’
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘জরিপ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ে আপডেট থাকতে চান। কোথায় কী অবস্থা তা পরিষ্কার করে জানতে অনেক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে ১৮০ থেকে ২০০ আসনের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তাই নিশ্চিত আসন ও অল্প ঝুঁকির আসনগুলো জরিপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি টিমও জরিপ করেছে। জরিপ কাজ সরাসরি মনিটরিং করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে জরিপ চালাচ্ছে।
ওই নেতা বলেন, ‘১৯৯১ সালের পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আসন ভিত্তিক ফলাফলের ওপর জরিপ ও গবেষণা চলছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে কোথায় বড় ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, কোথায় অল্প ব্যবধান ছিল সেটাও দেখা হচ্ছে। আবার কোন কোন নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে হেরেছে আবার বড় ব্যবধানে হেরেছে তা নিয়েও কাজ চলছে। তবে ঢাকা বিভাগ, রংপুর বিভাগ, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একচেটিয়া জয়লাভ করবে, এমন আভাস পাওয়া গেছে জরিপে। অন্য তিনটি বিভাগ চট্টগ্রাম, রাজশাহী খুলনা বিভাগেও আসন পাওয়া যেতে পারে। তবে সংখ্যায় কম।
অন্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, অল্প ও বড় ব্যবধানে জেতা এবং একেবারে কম ব্যবধানে পরাজিত আসন ধরে ২০০ আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা আছে। ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে যেসব আসনে ওই চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে সেসব আসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ওই সূত্র জানায়, ২০০ আসনে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা দেখলেও এর মধ্যে ১৬০ বা তার অধিক আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেই সামনে এগোবে সরকারি দল।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ১৬০ আসনে ভালোভাবে জেতার সম্ভাবনা আছে। বাকি আসনে কোনোরকমে জিততেও পারে অথবা হারতেও পারে। ১৬০ আসন পেতেই হবে, সে লক্ষ্যে জোরালো প্রস্তুতি ও গুরুত্বসহকারে কাজ করার পরিকল্পনা সবই নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া আসনগুলোকে লক্ষ্য করে এবার আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রেখেছি। এর মধ্যে মনোনয়নের ব্যাপারটিতে সংবেদনশীল থাকবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যদের বদনাম আছে তাদের পরিবর্তন করে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে।’
প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনেই প্রার্থী দেখলে বোঝা যায় প্রার্থী পরিবর্তন থাকেই। এবার অন্যবারের চেয়ে প্রার্থী বদলানো বাড়তে পারে। কারণ বিতর্কিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের সমালোচনা যেমন হয় ওই সমালোচনা নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধেও যায়। কিন্তু প্রার্থী বদলে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিলে বিতর্কিত প্রার্থীর সমালোচনা ভুলে নতুন প্রার্থীর আলোচনা সামনে চলে আসে। সমালোচনা ভুলে গিয়ে আলোচনায় আসাটাকে পুঁজি করতে নতুন প্রার্থীর ব্যাপারে ইতিবাচক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। ফলে গুরুতর সমালোচনা ও বদনাম থাকা প্রার্থীর মনোনয়ন অনিশ্চিত এটাই দলীয় সিদ্ধান্ত।
সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মানুষ পুরনো কথা এমনিতেই ভুলে যাবে। বরং প্রার্থী চমক থাকলে তাকে নিয়েই আলোচনায় মেতে থাকবে মানুষ। জাতীয়ভাবেও সেটা আলোচনার জন্ম দেবে। বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আলোচনায় থাকে না। তাই প্রার্থী পরিবর্তন করে সুফল নিতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে এমন আলোচনার কথা তুলে ধরে সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তাদের কর্মকা- নিয়ে গণমাধ্যম ও স্থানীয় লোকজন সমালোচনা করবে। তার প্রভাব পড়বে ভোটের মাঠে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচনগুলোতে পরীক্ষামূলক নতুন প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূলত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। তাতে ফলও ভালো এসেছে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন এরই নজির।
দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিগত সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়। সেখানে একাধিক সদস্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, যার বদনাম আছে, দলের সঙ্গে ঝামেলা আছে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে আরেকজনকে যেন দেওয়া হয়।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দলীয় প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় কোন্দলের বিষয়টি শেখ হাসিনার মাথায় আছে। তিনি বারবার দলীয় কোন্দল মেটাতে বলেছেন। না হয় কোন্দলে জড়িত পক্ষের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় একজনের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ বেশি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতির স্বার্থেই একটা ভালো নির্বাচন চায়। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। সেটা এখন নেই। আমরাও এখন চাই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল। তাহলে অনেক ক্ষেত্রে না চাইলেও কম্প্রোমাইজ (আপস) করতে হচ্ছে সরকারকে।’
সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, ‘আমাদের সরকার এখন একটা ভালো নির্বাচন চায়। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকতে পারার মতো আসন পেলেও চলবে, এ নীতি নিয়ে এগোনো হচ্ছে। তবে সংসদে আস্থা-অনাস্থার সম্ভাবনা যাতে না থাকে তার জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পক্ষে থাকলে নিশ্চিত থাকা যায়।’
গত বছর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। গত মার্চ মাসে আবার অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও বিএনপি মৌখিকভাবে না যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের কূটনীতিকদের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি তার আগের অবস্থানেই রয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে। কারণ তারা মনে করছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে অনুকূল পরিবেশ ও সমান সুযোগ পাবে না।
বিএনপির এ অনড় অবস্থান নিয়ে দলীয় নেতারা বলছেন, তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দলের হাইকমান্ড বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন না হলে কী হবে, তা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি ২০১৪ ও ’১৮ সালের মতো আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করে উতরে যায়, সে ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো সমঝোতা না হলে এ নির্বাচন ঠেকানোর সাংগঠনিক সক্ষমতা বিএনপির কতটুকু রয়েছে সেটি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কী হবে? জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। ডেফিনেটলি, বরাবর যেভাবে নিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান এসেছিল, সেটা একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছিল। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা জনগণকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি, তাদের মতামতটা উঠে আসুক সেই কারণে আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের দাবি না মেনে, যে কোনোভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (নির্বাচনে সমান সুযোগ)। এটি তৈরির আগে সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচন হবে। আমরা একশবার নির্বাচনে যাব। ২০১৪ সালে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমরা ওয়াক ওভার তো দিতে চাইনি। প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার নয়, দুই দফা সবার সামনে প্রমিজ করলেন, একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কী লাভ হয়েছে?’
বিএনপি তাদের দাবির পক্ষে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ আশা করছে। কূটনৈতিক মহলও সরকারকে বলছে, তারা বাংলাদেশে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। অনেক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এ নিয়ে সরকারি দল ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের তরফ থেকে সর্বশেষ সংলাপের উদ্যোগ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার বাসায় আওয়ামী লীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কথা বলেছেন। তার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা সরকারের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও তার পরিবেশের কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সর্বশেষ পিটার হাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের আলোচনার পরদিন ইসি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিকে চিঠি দেয়। এরপর আরও আটটি দলকে আলোচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে থাকা বিএনপি আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়ে দাবি আদায় কতটুকু করতে পারবে সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আবার আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ভেতরে ভেতরে একটি অংশ মনে করছে, যতটা সম্ভব দাবি আদায় করে নির্বাচন করে সংসদে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। এতে সংসদে ও মাঠের রাজনীতি জোরালো হবে। পরেরবার ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আরেক দল মনে করে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এ মতের পাল্লাই ভারী। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে এ অংশে থাকা নেতাকর্মীদের অবস্থান কী হবে। আবার নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগ মোটামুটি একতরফা নির্বাচনের করে ফেলতে পারে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেটা হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে বিএনপি পদক্ষেপ নেবে এ প্রশ্ন আছে।
ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি ও সদর উপজেলার ৮ নম্বর ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জসিম এবং লক্ষ্মীপুরের রামগতির পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলে ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, বিএনপি আন্দোলন আছে। সঠিক পথে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে আবার পরাজয় স্বীকার করে হামলা-মামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তাই তারা মনে করেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার নয়, দুই দফা সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছিল। কিন্তু লাভ তো হয়নি। সরকারপ্রধান তার প্রতিশ্রুতি রাখেননি উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন যাই বলেন, তাতে কী হবে? তাই দাবি আদায় না হলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ের আগে নির্বাচন হয়ে গেলে বিএনপির সামনে ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের উদাহরণ রয়েছে।
দলীয় একাধিক সূত্রমতে, মূলত দুটি কারণে বিএনপির এ অনড় অবস্থান। প্রথমত, বিএনপি মনে করছে, সরকারের কর্মকা-ে জনগণ ক্ষুব্ধ। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সমাবেশগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ সেটাই প্রমাণ করে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে, জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে, আরও বড় পরিসরে মাঠে নামতে পারবে বলে বিএনপির বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে জনগণই তাদের দাবি আদায় করে নেবে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি কূটনৈতিকদের বোঝাতে পেরেছে, মানুষ গত দুটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠায় তাদের কাজ করা উচিত। এসব অভিযোগের ন্যূনতম সত্যতা পাওয়ায় কূটনৈতিকরাও সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বিএনপি মনে করছে, গত দুই সংসদ নির্বাচনের মতো এবার সরকার কোনোভাবে যেনতেন নির্বাচন করলে তা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বহির্বিশে^ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়াও বিএনপির অনড় অবস্থানের আরেকটি কারণ হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো দল পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। ২০১৮ সালে দলটিকে অনেক হিসাবের মধ্যে এটাও মাথায় রাখতে হয়েছে। এবার সেই বাধ্যকতা নেই।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ১৪ সালের মতো যদি অবস্থা হয় তাহলে চূড়ান্ত সেই আন্দোলনের যাওয়ার আগে দলটি নির্বাচন পর্যন্ত সংঘাতে না গিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতাও চালিয়ে যাবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন প্রয়োজন তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের মতো একতরফা ও নির্বাচন ব্যবস্থার বাইরে রেখে আগের মতো একটি সাজানো নির্বাচন করতে চায়। দলটি বলছে, একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতাসীনদের প্রতিহত করা হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘১৯৯৪-৯৫ সালে আওয়ামী লীগ-জামায়াত আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উদারতা দেখিয়ে তা মেনে নিয়েছিলেন। আমরাও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সেই উদারতা আশা করি। কারণ সবকিছুর পর তিনি শেখ মুজিবের কন্যা। আর যদি খামখেয়ালি বহাল রাখেন তাহলে ইতিহাস অনেককে মুছে ফেলেছে। তিনিও ইতিহাস থেকে মুছে যাবেন। খামখেয়ালি করে লাভ হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন করছি। সেই সময়ে আমরা অবরোধ করছি, এখন মার খাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই শান্তি-সমাবেশের নামে আওয়ামী লীগ আমাদের কতটুকু মারতে পারে। মার খেতে খেতে জনগণ একসময় তার জবাব ঠিকই দেবে।’
ঋণের সুদের হারে থাকছে না ক্যাপ সুবিধা। আগামী জুন মাসে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার তুলে দিয়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার (ওয়েটেড) বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। এখন ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ৬ দশমিক ৯৯। ফলে এখনকার হিসাবে ঋণের সুদ হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তবে ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণে তদারকি, বাজারভিত্তিক ডলারের দাম নির্ধারণ, ব্যাংকারদের জন্য আলাদা হাসপাতাল তৈরি ও খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রয়োজনী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেনের নেতৃত্বে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিরা ব্যাংকার্স সভায় যোগ দেন।
ব্যাংকার্স সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ঋণের সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের অন্যতম হলো সুদহার নির্দিষ্ট করে না রেখে করিডর প্রথা চালু করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে ৩ শতাংশ যুক্ত করে যে সুদ হয়, তা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
সভায় জানানো হয়, প্রতি মাসে ট্রেজারি বিলের একাধিকবার নিলাম হয়। ফলে এর সুদের হারের ওপর ভিত্তি করে একটা গড় হার নির্ধারণ করা হবে। যদি ট্রেজারি বিলের সুদহার কমে যায়, তবে অতিরিক্ত হার বাড়িয়ে সুদের হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসে গড় সুদহার কত হবে, তা নির্ধারণ করে জানিয়ে দেবে
সভায় ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে বিভিন্ন উপকরণ উঠে যাবে। কার্যকর হবে একক দর। আইএমএফ ডলারের দরের হরেক রকম উপকরণ এবং এগুলোর বিভিন্ন ধরনের দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার শর্ত দেয়। এর সঙ্গে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে দামের ক্ষেত্রেও একক দর চালুর কথা বলে। এ শর্ত জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সভায় ডলারের একক দাম নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ডলার বেচাকেনায় হরেক রকম উপকরণ ও দাম উঠে যাবে। ডলারের একক দর কার্যকর হবে। এতে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে বলেও জানান এই এমডি। পাশাপাশি ডলারের দামে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকারদের হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় সবার কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকাদের হাসপাতালের জায়গা ক্রয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতে পারে। আর খেলাপি ঋণ উত্তোলন এবং নতুন করে ঋণ বিতরণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগে যে পণ্য আনতে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছিল, এখন সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিয়েই এসব পণ্যের ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে। আমদানি পণ্যের মূল্য পরীক্ষা করায় ডলার খরচ কমে আসছে। বেশি ডলার খরচ করে পণ্য আনা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ৩০ লাখ ডলারের বেশি ঋণপত্রের মূল্য যাচাই করে অনুমোদন দিচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ঋণপত্রের মূল্য আগের চেয়ে বেশি যাচাই-বাছাই করছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে না। ফলে ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। এখন যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে কি না, তা তদারকি শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এতে রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার কমে আসবে। ফলে প্রবাসী আয়ে যে হুন্ডি প্রথা আছে, তা-ও কমে আসবে।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, হুন্ডির চাহিদা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এতেই অতিরিক্ত ডলার খরচ কমে আসবে। পাশাপাশি সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কাজ হচ্ছে, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় উচ্চ আদালতে আগাম জামিন পেয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তার করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় সপ্তাহ জামিনের এই আদেশ দেয়। গতকাল সকালে মতিউর রহমানের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার। আদালত বেলা ৩টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে। শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক ভবনের নির্ধারিত স্থান থেকে ভার্চুয়ালি আদালতে হাজির হন মতিউর রহমান। তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, জেড আই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আইনজীবীরা বলেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যে মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হয়। এতে দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। যাতে ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’ এমন উদ্ধৃতি দেখা যায়। উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবিটি ছিল এক শিশুর। ফেসবুকে ওই পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তা প্রত্যাহার করে প্রথম আলো। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সংশোধনী দিয়ে প্রতিবেদনটি অনলাইনে প্রকাশ করে তারা।
এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে গত ২৯ মার্চ রাতে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। এতে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং পত্রিকাটির সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও তার সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করেন বাদী। মামলাটির এজাহারে নাম উল্লেখ করা অপর আসামি শামস গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তাকে গত বুধবার ভোরে সিআইডি সদস্য পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার পর ৩০ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন শুনানিতে আইনজীবী ফিদা এম কামাল বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে শিশুটির যে ছবি ছাপা হয়েছে তা জাকির নয়, সবুজের। জাকির নামে একজন দিনমজুরের বক্তব্য এসেছে প্রতিবেদনে। পরে ভুলের সংশোধনীও দিয়েছে প্রথম আলো। কিন্তু ৭১ টিভির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা কি পলিটিক্যাল মোটিভেটেড নয়?’
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন এজাহার থেকে পড়তে থাকেন। বিচারক বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। তাদের সেøাগান হচ্ছে সত্যের সন্ধানে। এখন আপনারা (প্রথম আলো) যদি তথ্য প্রকাশে এ ধরনের ভুল করেন তাহলে কীভাবে হবে?’ এখানে ইনফরমেন্ট (বাদী) কীভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন সে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট।
তখন ফিদা এম কামাল বলেন, ‘আমরা জানি না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে এখন নতুন রূপ দিয়ে ব্যবহার হচ্ছে।’
একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না জামিনের আরজি জানিয়ে আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘পিটিশনার (মতিউর রহমান) একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পত্রিকাটিও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। ভাত জোটছে না বললেই কি স্বাধীনতার সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতা কি এতই হালকা!’
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাত বছরের এক শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি (মতিউর রহমান)। তারপর সংশোধনী দিয়েছেন। এভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে তাদের এ ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রথম আলোর মতো পত্রিকার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত নয়।’
আদালত তখন বলে, ‘যেহেতু একটা সংশোধনী হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার তো তাদের রয়েছে।’
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি সঠিক কি না তা কিন্তু বের করেছে আরেকজন সাংবাদিক।’
আদালত বলে, ‘এ বিষয়ে তো প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা যেত।’ শুনানি শেষে আদালত মতিউর রহমানকে জামিনের আদেশ দেয়।
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য শুনে আদালত ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মতিউর রহমানকে নিম্ন আদালতে যেতে হবে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন এবং এ সময়ের মধ্যে তাকে মহানগর দায়রা জজ আদলতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সংবিধান অনুযায়ী, এ বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের শুরুতে এ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন ঘিরে এক বছর ধরেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট, সংসদের বাইরের বড় দল বিএনপি ও তাদের সমমনা জোট, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সব কটি রাজনৈতিক দলই এ নিয়ে সরব। আবার এ নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহও কম নয়। পাশের দেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন জোট বা সংস্থার প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশের আসছে নির্বাচন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে কথা বলছেন।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বিদেশিদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহও লক্ষণীয়। গত কয়েকটি নির্বাচনের আগে থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের নানা পরামর্শ ও হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। এ জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশিদের কাছে নানা অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে যাওয়াই প্রধান কারণ। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে সব সময়ই সোচ্চার ভূমিকা রাখে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব মন্দা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূরাজনৈতিক কারণে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের নির্বাচন এ দেশগুলোর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের সফর এবং দেশটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এবারের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পক্ষে দেশটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে বলে আসছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে কে ক্ষমতায় এলো মানে কোন দল বা কোন জোট ক্ষমতায় আসবে, নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে বা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, এটি তাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। এ ছাড়া নির্বাচনে কারা অংশ নেবে বা নেবে না, সেটিও তাদের বিবেচনার বিষয় না। তবে তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন।
সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো ওই বার্তায় বর্তমান সরকার এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সর্বশেষ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ এবং গণভবনে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি অতিথি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাতে সরকারের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কথা জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি বলে আসছেন যে নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে।
গত ১৩ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের এসব সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ইস্যু ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২০ মার্চ বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, ওই নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিবার বিষয়গুলো উত্থাপন করে। আমরা এটা চালিয়ে যাব।’
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এর মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধুদেশগুলো নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)’ গঠন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে দেশটি বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার বার্মা অ্যাক্ট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকা সফরে আসা দেশটির কর্মকর্তারা আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। একই মাসে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে ঢাকা সফরে এসে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছেএমনটাই আমরা চাই।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বলেছিলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবেন। গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেমন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, সরকারপক্ষও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথাই বলে আসছে। বিএনপি তাদের কাছে নানা সময়ে অভিযোগ নিয়ে গেছে। এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টই বলেছে, কে ক্ষমতায় এলো এটা তাদের বিষয় নয়। তারা নিজেরা যেহেতু গণতান্ত্রিক চর্চার দেশ, তাই তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলেছে। আবার এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
এদিকে টানা তৃতীয়বারের রেকর্ড ভেঙে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে দলটি ও তাদের জোট তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব। আবার সংসদের বাইরে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এ সরকারে অধীনে নির্বাচনে যাবে না এমন অনড় অবস্থানের কথা বলে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে এক বছর ধরে মাঠে রয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও রয়েছে মাঠে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সাল থেকেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো দেশের নির্বাচন নিয়ে সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি; বরং এবার নির্বাচন ঘিরে নতুন নতুন পরাশক্তির প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে দেশের রাজনীতি ও সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতসহ যুক্ত হয়েছে পশ্চিমা রাজনীতির প্রভাব। আর গত তিন দফা থেকে শুরু হয়েছে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর আগ্রহ নির্বাচন নিয়ে যতটাই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর সমাধান যদি নিজেরাই না করতে পারি তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গত শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমরা সবাই চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।