
প্রচণ্ড গরম আর দাবদাহ সঙ্গী করে রোজাদাররা রোজা পালন করছেন। গরমের কারণে ইফতারের পর খানিক বিশ্রাম শেষে তারাবির পর বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার রুটিন প্রায় রোজাদারেরই। ফলে দিনে গমগমে অবস্থা থাকলেও মধ্যরাতে গুটিকয়েক মানুষজন, যানবাহন ছাড়া রাস্তাঘাট ও দোকান প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এরই মধ্যে গ্রামগঞ্জের মসজিদ থেকে শুরু করে শহরের মসজিদগুলো গতরাত থেকে জাগ্রত। মসজিদে মসজিদে রাতের আল্লাহপ্রেমীরা নিস্তব্ধ পরিবেশে আরামের ঘুম ত্যাগ করে নফল ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর দরবারে পাপমুক্তির জন্য চোখের পানিতে জায়নামাজ ভেজাচ্ছেন ইতিকাফকারীরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববি থেকে শুরু করে বিশ্বের সব দেশের মসজিদ ইতিকাফকারীদের উপস্থিতিতে জাগ্রত ও সরব।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ হলো দৈনন্দিন জীবনের কাজ ও ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে ইবাদত-বন্দেগির জন্য মসজিদে অবস্থান করা। ইতিকাফের মাধ্যমে ব্যক্তি রমজানের শিক্ষা ও দীক্ষায় পূর্ণতা লাভ করে এবং রমজানের কল্যাণ ও বরকতে অবগাহন করে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতিকাফ মুস্তাহাব এবং সামাজিক পর্যায়ে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। কোনো সমাজের কেউ ইতিকাফ না করলে এলাকার সবাই সুন্নত পালন না করার জন্য গোনাহগার হবেন।
ইতিকাফ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় আমলগুলোর একটি। তিনি আমৃত্যু ইতিকাফ করেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত এ নিয়মই ছিল। এরপর তার সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।’ সহিহ বোখারি : ২০২৬
তবে বর্তমান সমাজের প্রবণতা হলো সাধারণত বৃদ্ধরাই শুধু ইতিকাফে বসেন। বহু মসজিদ এমন আছে, যেখানে স্বেচ্ছায় কেউ ইতিকাফ করতে রাজি হন না, তখন সমাজের পক্ষ থেকে গরিব ও অসহায় কোনো মানুষকে অর্থের বিনিময়ে ইতিকাফে বসানো হয়। সমাজের এই চিত্র সন্দেহাতীতভাবে দুঃখজনক। প্রকৃতার্থে ইতিকাফ মুমিনের জীবনে যে শৃঙ্খলা ও সংযম নিয়ে আসে তা কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ সবার জন্য অপরিহার্য। বিশেষত মসজিদের সঙ্গে যুবকদের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে দিতে পারে ইতিকাফ। তাই ইতিকাফের ব্যাপারে সমাজের উদাসীনতা দুঃখজনক। ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘আশ্চর্য! মানুষ কীভাবে ইতিকাফ ছেড়ে দিয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কোনো আমল করতেন এবং তা ছেড়েও দিতেন। কিন্তু মদিনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কখনো ইতিকাফ ছেড়ে দেননি।’ রমজান ইয়ুবনিল কিয়ামা : ৪৪
আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করার মোক্ষম সুযোগ ইতিকাফ। আর তা সম্ভব হবে যদি ব্যক্তি পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের পর ইতিকাফ শুরু করে এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হয়। যেহেতু ইতিকাফকারী শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মসজিদ ত্যাগ করতে পারে না এবং দীর্ঘ সময় মসজিদে অবস্থান করতে হয়, তাই ইতিকাফকারী আগে থেকেই এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। প্রস্তুতির অন্যতম হলো প্রয়োজনীয় আসবাব নিয়ে মসজিদে যাওয়া এবং নিয়তের বিশুদ্ধতা। ইতিকাফের পারিপার্শ্বিক কোনো কারণ যদি থেকেও থাকে, তবে তা মন থেকে মুছে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
পুরুষের জন্য যেকোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ। যেন ব্যক্তির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার জামাত ছুটে যাওয়ার ভয় না থাকে। তবে মসজিদ নির্বাচনের সময় মসজিদে অবস্থানের সুবিধা-অসুবিধা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, খাবার সরবরাহ ও সংগ্রহের সুযোগ, অজু-গোসলের ব্যবস্থাগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। যেন আনুষঙ্গিক কারণগুলো ইবাদতে মগ্ন থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করে।
মসজিদে অবস্থানের সময়টুকু ফলপ্রসূ করতে ইতিকাফকারী প্রতিদিনের আমলের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করে নেবেন। তবেই ইতিকাফ হবে সার্থক ও সুন্দর।
লেখক : দেশ রূপান্তরের সহ-সম্পাদক
করোনার পর রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তিন বছর ধরে দেশের মানুষের বেঁচে থাকাটাই বড় প্রাপ্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ। এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশে অস্বাভাবিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমেছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিষ্ঠানটির হিসেবে গত সাত বছরে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া অতিদরিদ্রের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ওই বছর অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে সাত বছরের ব্যবধানে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময়ে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী কমেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। এ হিসাবে দরিদ্রের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার। এর আগে সর্বশেষ এমন জরিপ হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর এ সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এইচআইইএস-২০২২-এর ফলাফল প্রকাশ করে বিবিএস।
২০১৬-১৭ সালের পর দারিদ্র্যের কোনো জরিপভিত্তিক তথ্য না থাকায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়ে দারিদ্র্য বৃদ্ধির স্থিতিস্থাপকতার ওপর ভিত্তি করে কিছু দারিদ্র্যের প্রাক্কলন করা হয়েছে।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সাত বছরে মানুষের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। সাত বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে একটি পরিবারের মাসিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। ২০১০ সালে একটি পরিবারের গড় আয় ছিল ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা। জরিপে আয়ের পাশাপাশি খরচও দ্বিগুণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে একটি পরিবারের মাসে গড় খরচ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। ২০১০ সালে একটি পরিবারের গড় খরচ ছিল ১১ হাজার ২০০ টাকা।
বিবিএস দাবি করছে, এ সময়ের মধ্যে মানুষের খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এ সময় মানুষ তার আয়ের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যয় করে শুধু পরিবারের খাবারের পেছনে। বাকি ৫৪ দশমিক ২ শতাংশই ব্যয় হয় খাদ্যবহির্ভূত পণ্য কেনার জন্য।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু বিবিএসই খানা আয়-ব্যয় জরিপের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, তাদের এ তথ্য মেনে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। তবে দারিদ্র্য হ্রাসের যে হার ছিল তা বিবিএসের জরিপে গতি অবশ্য শ্লথ হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বর্তমান মূল্যস্ফীতি, তারও আগে করোনার প্রভাবে অর্থনীতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেগুলোর ফলে গত ১০ বছরে যেভাবে দারিদ্র্যের হার কমছিল সে হার যে শ্লথ হয়েছে সেটি বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বিবিএসের হিসেবে আয়ের যে বৈষম্য সেটিও উঠে এসেছে। সেটি ২০১০-এ ছিল দশমিক ৪৬, ২০১৬-তে ছিল দশমিক ৪৮ সেটিও বেড়েছে, এখন তা দশমিক ৪৯-এর ওপরে। এর ফলে দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তার ইতিবাচক ফলাফল সেটা ঠিকভাবে সবাই পাচ্ছে না। সম্পদ বৈষম্য যদি বের করা যেত তখন দেখা যেত আয় বৈষম্য থেকেও সম্পদ বৈষম্য অনেক বেশি হবে। এটা তো সুষম বণ্টন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সে ধারণা বিপরীত এটি। উন্নয়ন হচ্ছে, দারিদ্র্য নিরসন হচ্ছে কিন্তু তা শ্লথ হয়ে গেছে। এটাকে আরও দ্রুততর করতে হবে।
ড. মোস্তাফিজ আরও বলেন, আমাদের সামাজিক সুরক্ষাকে শক্তিশালী করে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এবং আয়ের ন্যায্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটাকে অ্যাড্রেস করতে হবে।
জরিপের প্রশ্নপত্রে নতুন করে ভোগকৃত খাদ্যদ্রব্য এবং খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য ও সেবার তালিকা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ২০১৬ সালে খাদ্যদ্রব্যের সংখ্যা ছিল ১৪৯টি, ২০২২ সালে বাড়িয়ে ২৬৩টি করা হয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য ও সেবার সংখ্যা ছিল ২১৬টি, যা ২০২২ সালে বাড়িয়ে ৪৪১টি করা হয়েছে। এসডিজির আলোকে প্রশ্নপত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়েছ। যেমন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন, মাতৃত্ব ও শিশুমৃত্যুসংক্রান্ত প্রশ্ন, ব্যাংক হিসাবের গ্রাহক, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্যসংবলিত প্রশ্ন ও পিতা-মাতার শিক্ষাগ্রহণের সংযোগ নির্ণয়ের জন্য নতুন প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি কভিড-১৯ ও এর টিকাসংক্রান্ত প্রশ্ন সংযোজন করা হয়েছে। পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত অভিজ্ঞতার প্রশ্ন সংবলিত নতুন সেকশন যোগ করা হয়েছে।
বিবিএসের আয়-ব্যয়ের এ জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে শহরের দরিদ্রের হার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ আর গ্রামে দরিদ্রের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২২ সালে দেশের অতিদরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ নেমেছে। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২২ সালে খানা বা পরিবারপ্রতি মাসিক আয় ছিল ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। মাসিক খরচ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ খানাপ্রতি মাসে এক হাজার টাকা সঞ্চয় হচ্ছে। ২০১৬ সালের জরিপে খানাপ্রতি মাসিক আয় ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। সেই হিসেবে ছয় বছরের ব্যবধানে আয় দ্বিগুণ হয়েছে।
জরিপে খানার আয়ে দেখা যায়, গ্রামে একটি থানার গড় আয় ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা। আর শহরে গড় আয় ৪৫ হাজার ৭৫৭ টাকা। যেখানে ২০১৬ সালে গ্রামের একটি পরিবারের গড় আয় ছিল ১৩ হাজার ৯৯৮ এবং শহরের একটি পরিবারের গড় আয় ছিল ২২ হাজার ৬০০ টাকা।
খানার ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, ২০২২ সালে গ্রামে একটি খানার মাসিক গড় ব্যয় ২৬ হাজার ৮৪২ এবং শহরের একটি খানার মাসিক গড় ব্যয় ৪১ হাজার ৪২৪ টাকা। যেখানে ২০১৬ সালে গ্রামে একটি পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ১৫৫ এবং শহরের একটি পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় ছিল ১৯ হাজার ৬৯৭ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা আমাদের পরিকল্পনা হালাল করি এ স্ট্যাডি দিয়ে। এটার সঙ্গে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার তুলনা করি। এ জরিপ প্রমাণ করে সরকার অগ্রহণযোগ্য অবস্থানে নেই। তবে কভিড ও রাশিয়া যুদ্ধ এ দুটি ঘটনার পর ভারতসহ এ অঞ্চলের অনেক রাষ্ট্রই বিপদে পড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য কমার একটি কারণ হলো কভিডের সময় আমরা কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আমরা যোগাযোগব্যবস্থা সচল রেখেছিলাম, কলকারখানা বন্ধ করিনি। ওই সময় প্রণোদনা দিয়েছি ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কভিডের সময়ও আমরা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা উৎপাদন এবং চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করিনি। আর মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় মানুষেকে সুলভ মূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রমজানেও এক কোটি পরিবার সহায়তা পেয়েছে। নয়তো মূল্যস্ফীতি ১২-১৩ হয়ে যেত।
জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে খানাভিত্তিক ভোগ্যপণ্য বাবদ একটি খানার গড় ব্যয় ৩০ হাজার ৬০৩ টাকা। যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫ হাজার ৪২০ টাকা। ২০২২ সালে গ্রামের একটি থানার মাসিক ভোগ্যপণ্য ব্যয় ২৬ হাজার ২০৭ টাকা এবং শহরের একটি খানার গড় ব্যয় ৩৯ হাজার ৯৭১ টাকা।
জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে আগের তুলনায় আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। বর্তমানে গড় আয় বৈষম্য ছিল দশমিক ৪৯৯। যা ২০১৬ সালের জরিপে ছিল দশমিক ৪৮২ এবং আগের জরিপের তুলনায় ভোগের বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৬ সালে ভোগ বৈষম্য ছিল দশমিক ৩২৪। ২০২২ সালে ভোগ বৈষম্য দশমিক ৩৩৪।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারের ব্যয় বেড়েছে কারণ মানুষ এখন না খেয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যায়। আর ক্যালরি গ্রহণে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা দিয়ে লাভ নেই। তারা প্রতি বেলায় শ্যাম্পেইন খায়, আমরা খাই না।’
জরিপে দেখা যায়, দেশের সাত বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং শহর এলাকায় সাক্ষরতার হার ৮২ শতাংশ। ২০১৬ সালে দেশের সাক্ষরতার হারছিল ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসের এ চিত্র অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে। দারিদ্র্যের হার বের করা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দারিদ্র্য পরিমাপ ও বিশ্লেষণে প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়েছে সংস্থাটি।
সারা দেশের ৭২০টি নমুনা এলাকায় এ জরিপ পরিচালিত হয়। প্রতিটি নমুনা এলাকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০টি করে মোট ১৪ হাজার ৪০০ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপের প্রশ্নপত্রে মোট ১০টি সেকশন রয়েছে। এই ১০টি সেকশনের তথ্য সংগ্রহের জন্য একজন তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিটি পরিবারে ১০ বার পরিদর্শন করেন।
এটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি পরিবীক্ষণের পাশাপাশি এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণে জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
অনেক সমালোচনার পর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সময়ে অর্থাৎ এক বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সরকারের হিসাবের সঙ্গে গবেষণা সংস্থাগুলোর দারিদ্র্যের হার কমার তফাত বেশি। সরকার বলছে দারিদ্র্য কমে গেছে। তবে সানেম (বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) বলছে বেড়েছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে তা দারিদ্র্য ঘনীভূত করে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। এতে দারিদ্র্য বেড়ে যায়।
২০৩১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের নেতাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি যেকোনো ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। অনেকেই এমন গতিতে একটি দেশের অগ্রগতি চায় না, তাই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’ আওয়ামী লীগের সারা দেশের জেলা শাখার নেতাকর্মীরা গতকাল গণভবনে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর পরিশ্রমের কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অতি-দরিদ্রের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, তার সরকার দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্যের হার আরও ২ বা ৩ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো অতি-দরিদ্রতা থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, তার সরকার বিনা খরচে বাড়ি প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং দেশবাসীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ সবকিছুই করছে।
জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে জনগণের কল্যাণে আরও সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আওয়ামী লীগের সংগঠন আরও শক্তিশালী হোক।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। কারণ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছিল।
গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে।
পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পেলেও বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘তারা কোনো উন্নয়ন দেখছে না। তারা প্রতিদিনই এমন কি রমজানের দিনেও উচ্চকণ্ঠে মিথ্যা কথা বলছে। কেন তারা এমন করছে, আমি তা বুঝতে পারছি না।’
তৃণমূলের নেতাদের চার নির্দেশনা : আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দলের প্রধান চারটি নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলো হলো যেকোনো মূল্যে কী পেলাম, কী পেলাম না এটি ভুলে সর্বোচ্চ ঐক্য থাকতে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে ও বসে না থেকে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, এখন থেকেই মানুষের দুয়ারে যেতে হবে। তাদের কাছে ভোট চাইতে হবে। কেন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন সেটা তুলে ধরতে হবে। সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে না ধরলে তারা তা ভুলে যাবে। মনে রাখতে হবে প্রচারেই প্রসার। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে আরও বলেন, আমরা সত্যটুকু জনগণের দরজায় গিয়ে তুলে ধরতে পারলে জনগণ আমাদের ফেরাবে না।
বৈঠকে দলীয় সভাপতি আরও বলেন, অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে। কারণ একটা দেশ এত দ্রুত এত উন্নতি করুক অনেকে তো এটা চায় না। কাজেই তারা তাদের দিক থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।’
গণভবনে খুলনা, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, রাঙ্গামাটি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় কোন্দলপূর্ণ জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গে শুরু হওয়া এই বৈঠক ধারাবাহিকভাবে করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মূলত দলীয় ঐক্য, দলের শক্তি বৃদ্ধি, সদস্য সংগ্রহ অভিযান গুরুত্বসহকারে শুরু করা ও বসে না থেকে জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মানুষের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে নির্দেশনা দিতে শুরু করেছেন শেখ হাসিনা।
সরকার সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে থাকে, সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সব সময় কাজ করে। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা গতকাল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতৃবৃন্দকে বলেন, ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। তিনি বলেন, তার সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্তের নেতৃত্বে বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে চাকরি, নিয়োগ, পদোন্নতির মতো সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয়েছে। তারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় রীতি পালন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আগুনে পুড়ে ভস্ম হওয়ার আট দিন পর গতকাল বুধবার দুপুরে সেখানে চৌকি বসানোর সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদের মধ্যেই সেখানে বসেন তারা। চৌকিতে কারও কারও মালামাল থাকলেও অধিকাংশের চৌকিই খালি দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মালামাল সব পুড়ে গেছে। তাদের কাছে কোনো নগদ টাকা নেই যা দিয়ে নতুন করে মালামাল তুলবেন দোকানে। সরকারের কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন ওইসব নিঃস্ব ব্যবসায়ী। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পোড়া ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজ শুরু হয়। বর্জ্য অপসারণের পর সেখানে ইট ও বালু দিয়ে চৌকি বসানোর উপযোগী করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে গতকাল পর্যন্ত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার পোড়া বর্জ্যরে সম্পূর্ণ খালি করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
গতকাল বেলা সোয়া ১টার দিকে চৌকি বসিয়ে অস্থায়ীভাবে বেচাবিক্রির উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর পরই দোকানিরা যার যার মতন চৌকি কিনে নিয়ে এসে জায়গা দখল করেন। একই সময়ে দেখা গেছে আদর্শ কমপ্লেক্স ইউনিটের একটি পাঁচতলা ভবন ভাঙার কাজ এখনো চলমান আছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের মার্কেট ধরতেই তারা তড়িঘড়ি করে চৌকি বসিয়ে সেখানে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন।
খোলা আকাশের নিচে রোদ উপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই তাদের এই দোকান বসানো।
চৌকি নিয়ে বসা বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের মালিক মো. খোরশেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ছিল অস্থায়ীভাবে বসার। আজ সেই দাবি পূরণ হয়েছে। আমরা ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছি। ঈদ সামনে রেখে আমরা কিছুটা ব্যবসার আশা দেখছি। ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে।
খালি চৌকিতে বসে থাকতে দেখা যায় ইফতে ফ্যাশনের মালিক মো রাফিকে। তিনি জানান, বঙ্গ কমপ্লেক্সে দুটি দোকান ছিল তার। এখন একটি চৌকি বসানোর সুযোগ পেয়েছেন। ৫০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যাদের অল্প ক্ষতি হয়েছে তারা বিভিন্ন লোকের সহায়তার টাকা পেয়েছে। কিন্তু আমি কোনো সহায়তা পাইনি। এখন মালামাল কীভাবে তুলব।’
ডিএসসিসির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪৫ জন। তবে গতকাল প্রায় ৭০০ ব্যবসায়ী চৌকি বসিয়ে বঙ্গবাজারে বসেছেন। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অনুযায়ী সবাই অস্থায়ীভাবে চৌকি বসিয়ে এখানে ব্যবসা করতে পারবেন।
গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারা। পরে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই আগুন কেড়ে নেয় সব। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের মার্কেটগুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুনে আশপাশের ৬টি মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের ২ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা : বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে নিজস্ব তহবিল থেকে দুই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চৌকি বিছিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘এই পুনর্বাসনে সহযোগিতা ছাড়াও আমরা আর্থিকভাবে মানবিক সহায়তা দেব। আমরা করপোরেশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে গঠিত তহবিলে করপোরেশন নিজস্ব অর্থ থেকে দুই কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেব।’
তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আজ থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন। আমার (গত) রবিবারে ব্যবসায়ী, দোকান মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সব নেতাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ঈদের আগে আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে করে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তাদের পুনর্বাসন যেন করা যায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গরূপে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মার্কেটগুলোর দোকান মালিক সমিতি, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ঈদের পর বৈঠক করা হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
বৈশি্বক মন্দা ও ডলার সংকটের প্রভাবে পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরে চাহিদা বাড়ে এমন প্রায় সব জিনিসের দামই বেড়েছে। এতে গত বছরের মতো একই ধরনের পণ্য কেনাকাটায় ক্রেতাকে গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ দাম বেশি দিতে হবে। সাধারণ আয়ের একটি পরিবারে গতবারের মতো একই ধরনের ঈদ আয়োজনে অতিরিক্ত ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা গুনতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে খরচ আরও বেশি হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনেকে আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না পেরে উৎসবের কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সারা বছর ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের এসব বড় মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, পহেলা বৈশাখে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং ঈদুল ফিতরে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে দুই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।
দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরাও। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বৈশি^ক মন্দা ও ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অন্য বছরের তুলনায় এবারে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে বেশি দামে মাল কিনতে হয়েছে। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলেও এবারে দাম কিছুটা বেশি। তবে এটাও ঠিক দাম যতটা বাড়ার কথা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে সৎ ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতাদের ভোগান্তি বাড়ছে। দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী এ নেতা।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ছয়/সাত মাস থেকে দেশের বেশিরভাগ মানুষের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বেতন বাড়ার খবর খুব একটা শোনা যায় না। আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার প্রায় সব খাতেই খরচ বেড়েছে। দৈনিক খরচ চালিয়ে নিতেই অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পহেলা বৈশাখ ও ঈদে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে যেমন পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, সাজসজ্জা, খাবারসহ প্রায় প্রতিটা পণ্যের দাম বেড়েছে। এবারে আগের বছরের মতো একই ধরনের কেনাকাটায় খরচ বাড়বে। একদিকে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আয় বাড়ছে না। আর্থিক সংকটে থাকা মানুষগুলো উৎসবে খরচ করবেন কোথা থেকে? রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মল, মেট্রো শপিং মল, পিংক সিটি, ফার্মগেট এলাকার বিভিন্ন বিপণি বিতান, মিরপুর শপিং মল, আড়ংসহ দেশি ফ্যাশনের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো রুম, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ২ নম্বর যেতে ফুটপাত, বিভিন্ন বুটিক হাউজ, শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যে পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা প্রায় শেষ। ঈদ ঘিরে কেনাকাটা চলছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ আয়ের বেশির ভাগ ক্রেতার বাজেট গতবারের তুলনায় কম। অনেকে একই বাজেট রাখলেও উৎসব উদযাপনের জন্য কেনাকাটার তালিকা কাটছাঁট করেছেন।
৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ বাড়াতে হবে : রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকেন চাকরিজীবী জামিল রহমান। তিনি হিসাব কষে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এপ্রিল মাসে বোনাস বেতন মিলিয়ে পেয়েছি ৪৫ হাজার টাকা। গতবারে ঈদুল ফিতরের সব খরচ সেরেছিলাম ২২ হাজার টাকার মধ্যে। স্ত্রীকে শাড়ি ১৮শ টাকায়, নিজের জন্য পাঞ্জাবি ১৬শ ৪০ টাকায়, দুই সন্তানের জুতা ও পোশাক ৬ হাজার ২০০ টাকায় কিনেছিলাম। আপনজনদের উপহার এবং ঈদের ঘোরাঘুরিতে ৬/৭ হাজার খরচ হয়েছিল। ঈদের রান্নার জন্য প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬শ টাকা করে তিন কেজি কিনেছিলাম। প্রতি কেজি চিনি ৬৫ টাকা করে দুই কেজি, প্রতি কেজি পোলাওয়ের চাল ৭০ টাকা করে দুই কেজি, প্রতি লিটার ১০৫ টাকা করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, সেমাই, সুুজি, মসলা, শসা, কাঁচামরিচ, লেবুসহ অন্যান্য বাজার ১৩শ টাকায় কিনেছিলাম।
জামিল রহমান বলেন, আর এবার! গতবারের মতো প্রায় একই ধরনের শাড়ি ২৫শ টাকার কম না, পাঞ্জাবি দুই হাজার টাকার ওপরে। সন্তানদের জন্য গতবারের মতো একই জুতা কিনতে হয়েছে ২শ থেকে ৪শ টাকা বেশি দিয়ে, ওদের পোশাকের দামও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ওদের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। গরুর মাংসের কেজি গতবারের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি, চিনির দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি, তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ, পোলাওয়ের চাল এবারে ১০০ টাকার ওপরে। সেমাই, লেবু, শসাসহ সব কিছ্রু দাম বেশি। ঈদের ঘোরাঘুরি আর আপনজনদের উপহার বাদেই ঈদ বাজেট প্রায় শেষ। বেতন ও বোনাস এক টাকাও বাড়েনি। কীভাবে ঈদ-পহেলা বৈশাখে আগের মতো খরচ করব? গতবারের মতো একই ধরনের খরচ করতে হলে ঈদ বাজেট ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বাড়াতে হবে। উৎসবে বাড়তি খরচ করে সারা মাস চলব কীভাবে?
বাণিজ্যের আকার : করোনার কারণে ২০২০-২১ সালে স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতি। পরের বছর করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও আর্থিক লেনদেনে স্বাভাবিক সময়ের মতো গতি আসে না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, মুদি দোকান থেকে শোরুম ও ফ্যাশন হাউজগুলোসহ ঈদে সারা দেশের ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ দোকানে কেনাকাটা চলে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো পণ্য বিক্রি হলেও ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা শুরু হলে দৈনিক গড়ে ৮/৯ হাজার কোটি টাকা বিক্রি হয়। এ হিসাবে রোজার এক মাসে বিক্রি হয় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার মতো।
পোশাকের দোকানেই ঈদের কেনাকাটা হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এফবিসিসিআইয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঈদে পোশাকসহ পরিধেয় খাতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি, জুতা-কসমেটিকস তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ড পাঁচ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিক্স চার হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যে সাত হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এছাড়া জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ কেনা খাতে এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি, আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় আরও এক হাজার কোটি টাকা।
পোশাক : ঈদের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় নতুন পোশাক। ফুটপাত থেকে পাড়া মহল্লার ছোট-বড় দোকান, শপিং মল, বিপণি বিতান, ফ্যাশন হাউজ সবখানেই পোশাক পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে রাজধানীর পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, রাজশাহী ও বরিশালের মতো বড় শহরেও দেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া নন-ব্র্যান্ডের ও আমদানি করা পোশাকও অনেকে কিনে। এবারে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়, বোতাম, সুতা, রংসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে পোশাক বানানো খরচ গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ বা এর বেশি বেড়েছে।
ক্রেতাদের চাহিদার বিবেচনায় রেখে দেশীয় বুটিক হাউজগুলো আরামদায়ক কাপড়ের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি। দেশি ফ্যাশন হাউজগুলোর সংগঠন ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং অঞ্জন’স-এর স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন আহমেদ দেশ রূপাস্তরকে বলেন, কাপড়ের দাম, শ্রমিকের মজুরি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। দাম যতটা কম বাড়ানো যায় আমরা সে চেষ্টা করছি। তারপরও এবারে গড়ে প্রতিটি পোশাকের দাম ১০০ টাকায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়বে। কিছু দামি পোশাকের দাম আরও বেশি।
দেশের বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বার্ষিক পোশাক, বস্ত্র ও হোম টেক্সটাইলের বাজারের আকার ৮০০ কোটি ডলার বা ৮৪ হাজার কোটি টাকার সমান। এসব বেশি বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরের সময়ে। গত কয়েক মাসে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও রাসায়নিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের ডাইং-ফিনিশিংয়ে খরচ বেড়েছে ৩৫-৪০ শতাংশ। অন্যান্য খরচও বাড়তি। এতে পোশাকের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা ঈদ পোশাকের দাম গড়ে ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
দেশি ফ্যাশন হাউজে শিশু, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ছোটদের পাঞ্জাবি ৫শ/৭শ টাকা থেকে ৯শ/এক হাজার টাকায়, ফতুয়া ৫শ ৫০/৭শ টাকা থেকে ৮শ/এক হাজার টাকায়, কুর্তা ৬শ/৭শ ৫০ থেকে ২ হাজার/৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বড়দের পাঞ্জাবি ৬শ/৭শ থেকে ৯ হাজার/১০ হাজার টাকায়, মেয়েদের সেলোয়ার-কামিজ ১৬শ/১৭শ থেকে ৪ হাজার ৫শ/ ৫ হাজার টাকায়। শাড়ির দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার ৫শ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। সুতির, জর্জেট, পাকিস্তানি লনের সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় নায়রা এবং পাকিস্তানি অর্গানজা রয়েছে অনেকের পছন্দের তালিকায়। গারারা, সারারা, ঝিলিক এবং পানচুরের চাহিদাও রয়েছে। এসব পোশাকের দাম বেড়েছে গড়ে তিনশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
নারীদের পছন্দের তালিকায় এবারেও ঈদে শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ। শাড়ির মধ্যে সুতি, টাঙ্গাইলের প্রিন্টের শাড়ির চাহিদা রয়েছে। এসব শাড়ির দাম ৯শ থেকে এক হাজার টাকা বা তার বেশি। এসব মাঝারি মানের শাড়ির দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২শ থেকে ৩শ টাকা। এছাড়া দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কাতান, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, তাঁত, জামদানি, বেনারসি, শিফন এবং পার্টি শাড়ি। এসব শাড়ির দাম বেড়েছে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
জুতা-স্যান্ডেল : পোশাকের পরই ঈদে জুতা-স্যান্ডেলের বাজার। ঈদ ঘিরে দেশি ব্র্যান্ডের জুতা নিয়ে এসেছে অ্যাপেক্স, অরিয়ন, ক্রিসেন্ট, বে, ফরচুনের মতো দেশি প্রতিষ্ঠান। দেশি কারখানায় (নন-ব্র্যান্ড) ও আমদানি করা জুতাও বিক্রি হচ্ছে। সারা বছরে প্রায় ২০ কোটি জোড়া জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হয়। তবে ঈদের সময় ৩০ শতাংশ বা ৬ কোটি জুতা স্যান্ডেল বিক্রি হয়ে থাকে।
দেশের অন্যতম জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর বলেন, জুতা তৈরির কাঁচামালের দাম বেশি। তাই দেশে বানানো জুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করলে দাম গতবারের তুলনায় বেশি। আমদানিকৃত জুতাও বেশি দাম দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে।
এলিফ্যান্ট রোডে জুতা কিনতে আসা নাইরা বলেন, গত বছর যে ধরনের জুতা ১২শ টাকায় কিনেছি। এবারে তা ১৮শ টাকা চাচ্ছে।
আমরা পড়তাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তিনি আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। ডাকতাম, বড় ভাই। তখন ছাত্র রাজনীতি করা যেত না। কিন্তু একটা সংগঠন ছিল, নাম অগ্রগামী। এ সংগঠন থেকেই জাফর ভাই ১৯৬৩-৬৪ মেয়াদে ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার পরের বছর, ১৯৬৪-৬৫ মেয়াদে আমি হই সাধারণ সম্পাদক। দেখেছি, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন ভীষণ প্রতিবাদী। সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতেন। তখন মেডিকেল কলেজে যে ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল, তার বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম গড়ে তোলেন। আমরাও সেই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। এর মধ্য দিয়েই তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি শিথিল করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই সময় যারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করতেন, তাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যেতেন। জাফর ভাইও এ সুযোগ নিলেন।
১৯৬৭ সালে জাফর ভাই, বিলেতের রয়্যাল কলেজ থেকে এফআরসিএস ফার্স্ট পার্ট পরীক্ষা দিলেন। তখন আমি পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ) পূর্বাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক। জাফর ভাই বিদেশে বসেই বাঙালি চিকিৎসকদের সংগঠিত করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যুক্তরাজ্য শাখা তৈরি করলেন। এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু হেনা সাঈদুর রহমান। আর জাফর ভাই হলেন সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, যখন গণহত্যা শুরু হয়, তখন তিনি সরাসরি ভারতের আগরতলা চলে আসেন। এর আগে তিনি বিদেশেই, বাঙালি চিকিৎসকদের সংগঠিত করে রেখেছিলেন। ভাবলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল তৈরির কথা। এরপর ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মূল সূচনা হয়, আগরতলার বিশ্রামগঞ্জে। জাফর ভাইয়ের এ উদ্যোগের পেছনে আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল। কীভাবে ডাক্তারদের সংগঠিত করা যায়, কীভাবে আরও অস্ত্র জোগাড় করা যায়। এসব বিষয়ে জাফর ভাই ভীষণ তৎপর ছিলেন। জাফর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় মেলাঘরে। তিনি জানালেন, আর্মি মেডিকেল কোর তৈরির পরিকল্পনার কথা। বিস্তারিত জানান, মেজর খালেদ মোশাররফকে। তিনি সম্মত হন। তখন জাফর ভাই, আমি, ডা. টি হোসেন, ডা. শামসুল হক বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম। বিশেষ করে জাফর ভাই এবং টি হোসেন ভীষণ উদ্যোগী হলেন। এরপরই জোরেশোরে কাজ শুরু হয়। মূলত এ ফিল্ড হাসপাতালের তিনটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, আহতদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা, বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কীভাবে আরও সংগঠিত হওয়া যায় এবং কীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করা যায়। এরপর তো অনেক দিন গেল। আমরা স্বাধীন হলাম। বিজয়ীর বেশে ফিরে এলাম নিজের দেশে। পরবর্তী সময়ে সাভারে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করলেন। নাম দেওয়া হলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। নামটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ে জাফর ভাইয়ের ছিল গভীর ভাবনা। কীভাবে গণমানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সারাক্ষণ সেই কথাই ভাবতেন। এরপর গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকেই বিস্তৃত করেছেন। স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে জাফর ভাইয়ের ছিল নিজস্ব ধারণা। সেটিকে কার্যকর করার কেন্দ্রবিন্দুতেই পরিণত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে। এরপর করলেন নগর হাসপাতাল। ১৯৮২ সালে তৈরি করলেন জাতীয় ওষুধ নীতি। এ কারণেই স্থানীয় পর্যায়ে ওষুধ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী হয়েছে।
এরশাদ আমলের শেষদিকে, তিনি যে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি করেছিলেন, তা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। যখন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন, প্রথমেই জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি বাতিল করলেন।
সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব সে বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজস্ব বিশ্বাস, ধারণা ও নীতি ছিল। বলা যায়, সেটি গণমানুষের কল্যাণেই। এ বিষয়ে আমৃত্যু প্রচ- পরিশ্রম করে গেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দেশ, জাতি ও রাজনীতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। নিজস্ব মতামতের প্রতি সবসময়ই দৃঢ়চিত্ত, বিশ্বস্ত ছিলেন। এ কথা সবাই বলবেন তিনি সৎ, সহজ এবং সরল জীবনযাপন করেছেন। আমরা একজন দেশপ্রেমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম এ বেদনা বড় কষ্টের। তার মৃত্যুতে গভীর শোকাহত, তাকে শ্রদ্ধা জানাই।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।