
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে একগুচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কিংবা ভোট গণনার সময় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। করা যাবে না ফেসবুক লাইভ। নির্বাচন কমিশনের জারি করা এমন নীতিমালা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় অধিকতর সংশোধন, সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়গুলো দেখে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য একটা নীতিমালা জারি করেছি। এটা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমরা মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছি।
বিষয়টা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে নীতিমালাটা জারি করেছি সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আরও আলোচনা করব। এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে যেসব মতামত বা সমালোচনা আসবে বা এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব।
এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় এমন নীতিমালা করা হয়েছিল সাংবাদিকেদের জন্য। তখনো মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে পরে সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছাড় দেওয়া হয়।
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ইসি যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তা প্রত্যাখ্যান করছে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, আরএফইডির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এ ধরনের সাংবাদিকতা বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করছে। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলে নিষেধাজ্ঞা মানে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করার শামিল। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট যে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছিল, তার কোনোটি গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। এতে এ বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। যদি নিজেদের মতো করে নীতিমালা করবেই কমিশন তাহলে কেন সাংবাদিকদের ডেকে মতামত নেওয়া হলো? আমরা মনে করি আলোচনা করে নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রহসন করেছে। অবিলম্বে প্রণীত নীতিমালা বাতিল করে সাংবাদিক সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নতুবা সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।
এদিকে ইসির নীতিমালা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, ‘নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করা নিয়ে কমিশনের বিধিনিষেধের তালিকা যত দীর্ঘ হচ্ছে, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ততটাই দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের “চোখ ও কান” বলে অভিহিত করলেও সম্প্রতি জারি করা পরিপত্রের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু নিজেদের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করতে এ জাতীয় “মুখরোচক” মন্তব্য করেছে এবং কার্যক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কার্যক্রম শেকলবদ্ধ করে তুলছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংবাদকর্মীদের ভোট কাভারেজের অনুমতি দিয়ে কার্ড দেওয়ার পর ভোটকক্ষে ঢুকতে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বাড়তি অনুমতির প্রয়োজনীয়তা কী, তা বোধগম্য নয়। তা ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি কোনো ভোটকক্ষে অনিয়ম সংঘটিত হয়, সে ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কী অনুমতি দেবেন? আর অনুমতি না দিলে নির্বাচনী অনিয়মের ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ কী ধরনের বাধার সৃষ্টি হবে, তা নীতিমালা তৈরিতে কমিশনের বিচার্য ছিল বলে বোধগম্য হচ্ছে না। মুখে নির্বাচনী স্বচ্ছতার কথা বলে আবার কোনো বিবেচনায় ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হলো, কিংবা এর মাধ্যমে কী বৈশ্বিক চর্চা কমিশন অনুকরণের চেষ্টা করছে, সেটি সত্যিই কৌতূহলোদ্দীপক।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইসি যে নীতিমালা তৈরি করেছে তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা ছিল। আমি মনে করি, এটা পরিবর্তন-পরিমার্জন করা দরকার ছিল। এখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস করছি। এখন প্রত্যেকের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু সময় আছে কমিশন চাইলে এগুলো সংশোধন করতে পারে।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান বলেন, ‘সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা তথ্য সংগ্রহ করা। তারা নির্বাচন বানচাল করতে ভোটকেন্দ্রে যায় না। এখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ডায়ালগ হওয়ার দরকার ছিল। সেটা হলে এই বিতর্ক তৈরি হতো না। গণমাধ্যমকর্মীদের যদি এমন মনে হয় যে ভোটের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সে বাধার প্রাপ্ত হবে তাহলে কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তখন বিনা করণেই বিতর্ক তৈরি হবে।’ তিনি মনে করেন, দুই পক্ষের আরও আলোচনা হওয়া উচিত, তাহলে এই বিতর্ক কেটে যাবে।
প্রশাসনে বাংলা তারিখের ঠাঁই সামান্যই। সেই সামান্যতেও কাঁচি চালানো হচ্ছে। বাংলা সনের কার্যকর ব্যবহারের শেষ জায়গাটি থেকেও সরে আসছে সরকার।
বর্তমানে জমির খাজনা আদায় করা হয় বাংলা তারিখ অনুযায়ী। কিন্তু ভূমি উন্নয়ন কর আইন সংশোধন করে বাংলার বদলে ইংরেজি অর্থবছরে কর আদায় করা হবে। গত ২৮ মার্চ আইনটি নীতিগত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। যা সংসদে পাস হলে বদলে যাবে ৫৬৮ বছরের প্রচলিত রীতি।
সরকার কেন সুদীর্ঘকালের রীতি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান বলেছেন হিসাবসংক্রান্ত সুবিধার কথা। অর্থবছরের সঙ্গে বাংলা সনের মিল নেই। মাঠপর্যায়ে এ খাত থেকে বাংলা সন অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে সমস্যা হয়। সেই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত প্রায় এক দশক ধরে ভূমি উন্নয়ন কর আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। শুরু থেকেই কর্মকর্তারা বাংলা বর্ষপঞ্জিমতে ভূমি কর আদায়ের ধারাটি বদলে ফেলার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে নানা মত ছিল কর্মকর্তাদের মধ্যে। খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরও ভিন্নমত রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার মতে, এ ধারাটি বহাল রাখা যেত ঐতিহ্যের স্বার্থে। বাংলার বদলে ইংরেজি সাল অনুযায়ী কর আদায় করলে সরকারের কর যা আছে তাই থাকবে। এ রেওয়াজটা বদলে ফেলা হলে দেশ থেকেই কার্যকরভাবে বাংলা তারিখের ব্যবহার উঠে যাবে। বর্তমান ধারায় এমন কোনো আর্থিক বিশৃঙ্খলা হয় না। শুধু হিসাবটা ইংরেজির সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই হয়। বাংলার স্বার্থে এ মিলিয়ে নেওয়ার জটিলতাটুকু মেনে নেওয়া উচিত।
এসব কর্মকর্তার মতে, ২০১৯-২০ সালে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির জানুয়ারি-ডিসেম্বর অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার আলোচনা উঠেছিল। তাদের যুক্তি ছিল অর্থবছরের (জুলাই-জুন) প্রথম কয়েক মাস বর্ষা থাকায় সময়ভিত্তিক উন্নয়নকাজ শুরু করা যায় না। বাজেট ঘোষণা ইংরেজি বর্ষপঞ্জির শুরুর মাসে হলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। কিন্তু তাদের এ প্রস্তাব আমলে নেয়নি সরকারের নীতিনির্ধারক মহল।
গত ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনানুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বর্ষ অর্থবছর (জুন-জুলাই) অনুযায়ী হবে। বর্তমানে তা বাংলা সন (বৈশাখ-চৈত্র) অনুযায়ী হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগের একজন জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরাই ভূমি কর আদায় করি। যত জটিলতার কথা বলা হচ্ছে, বিষয়টি আসলে তত জটিল নয়। রেওয়াজ ভেঙে এটা ইংরেজি বর্ষে আনলে কোনো লাভ বা ক্ষতি নেই। তাহলে কেন দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভাঙতে হবে। আমর মনে হয় প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না। তিনি জানলে বিষয়টি মানবেন না বলে আমার বিশ্বাস।’
ভূমি উন্নয়ন কর ছাড়াও আরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলা সনের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এসবের ব্যবহার ভূমি উন্নয়ন করের মতো সর্বব্যাপী নয়, খুবই নির্বাচিত কিছু মানুষ তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সরকারের প্রকাশনা গেজেটে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা তারিখ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়। ২০ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণার যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তার ডানদিকে তারিখ রয়েছে। ওপরের তারিখটি বাংলায় এবং নিচের তারিখ ইংরেজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য গেজেটেও একই প্রক্রিয়ায় বাংলা এবং ইংরেজি উভয় তারিখ উল্লেখ করা হয়। মৎস্যজীবীদের মধ্যে জলমহাল ইজারা দেওয়া হয় বাংলা তারিখ অনুযায়ী। বালুমহালও ইজারা দেওয়া হয় একইভাবে। হাট-বাজারের ইজারাও দেওয়া হয় বাংলা তারিখ অনুযায়ী।
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বর্ষপঞ্জি বদলাতে পারলে ভবিষ্যতে তারা বালুমহাল, হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার বর্ষপঞ্জিও বদলানোর চেষ্টা করবেন বলে আশঙ্কা করছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা।
ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর হিজরি বর্ষ অনুসারে খাজনা আদায় করা হতো। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে কোনো মিল ছিল না। ফলে অসময়ে কৃষকদের খাজনা দিতে বাধ্য করা হতো। খাজনা আদায়ে সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন।
ইতিহাস অনুসারে বাংলা সনের প্রবর্তনের সময় ধরা হয় ১৫৫৬ সালকে। ওই সালেই আকবর দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে আদিল শাহ শুরের সেনাপতি হিমুকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে বসেছিলেন।
বাদশাহ আকবর তার সভাসদ জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজির সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ থেকে ‘তারিখ-এ-এলাহি’ নামে নতুন এক বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন। সে সময় কৃষকদের কাছে এটি ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত হয়, যা পরে ‘বাংলা সন’ বা ‘বঙ্গাব্দ’ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
নতুন এ সাল আকবরের রাজত্বের ২৯তম বর্ষে চালু হলেও তা গণনা আরম্ভ হয় ১৫৫৬ খিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকেই, কারণ ওইদিনই দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে তিনি হিমুকে পরাজিত করেছিলেন।
ইতিহাসের এ ঘটনা টেনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন, কী দরকার ৫৬৮ বছরের ইতিহাস বদলের। যেকোনো জাতীয় দিবসে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা তারিখ ব্যবহার করতে হাইকোর্টের রুল রয়েছে। ২০২০ সালে এ রুল দেওয়ার পর প্রশাসনে বাংলা তারিখের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্ণিলভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করলেও বাংলা সন কিংবা বাংলা তারিখ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে উপেক্ষিত। অনেকে জানেই না বর্তমানে কোন বাংলা সন চলছে কিংবা কোন বছর শুরু হতে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বাংলা উপেক্ষিত থাকার কারণেই মূলত এটি ঘটছে। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলা সন কিংবা তারিখের যেন কোনো মূল্য নেই। স্কুল-কলেজের বাৎসরিক সূচি শুরু হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে। কর্মজীবীরা তাদের বেতন পান ইংরেজি মাসের প্রথম সপ্তাহে। বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বাসা বেঁধেছে। আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করছি না। একটু চেষ্টা করলেই আমরা আমাদের জীবনে বাংলা সন এবং তারিখের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করতে পারতাম। কিন্তু আমরা শুধু অন্যদের নকল করে গেছি। নিজেরা কিছু সৃষ্টি করিনি। তাই আজ এ অবস্থা। চাইলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মজীবীদের বেতন বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে দেওয়া যায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি বাংলা সনের প্রথম মাস থেকে শুরু করতে কোনো সমস্যা নেই। এ দুটো কাজ করা গেলে বাংলা সন এবং তারিখ মনে রাখতে আমরা বাধ্য হব।
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জির নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩০। গতকাল বৃহস্পতিবার চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে বিদায় নেয় ১৪২৯। পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সংকীর্ণতা, কূপমন্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সর্বজনীন লোক-উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ।
অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।
আজ ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। থাকছে রাজধানী এবং দেশজুড়ে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নতুন বছরের সূচনা এনে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্র্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। খবর বাসস।
একসময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রাম-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।
মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম কর, উৎসে কর, ভ্যাট, শুল্কে ছাড় দেওয়া না হলে টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য নগদ সহায়তা বাড়ানো, শিল্পের সব খাতে রাজস্বমুক্ত সুবিধায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহসহ এ গুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, কর অবকাশ খাতের আওতা বাড়ানো, বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী অর্থবছরেও বহাল রাখা এবং ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা সুযোগ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাজেটে ব্যবসায়ীদের খুশি রাখার চেষ্টা করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৪৩তম পরামর্শক কমিটির সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এমন একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এ সভার আয়োজন করে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতা এবং এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনারা ঠকবেন না। আপনারা যেসব লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন সেসব নিয়ে আমি এবং এনবিআর চেয়ারম্যান এরই মধ্যে বৈঠক করেছি। আরও বৈঠক করব। আশা করি আপনাদের সুবিধামতো একটা বাজেট দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীতে এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করব যাতে কোনো ধরনের ঋণ নেওয়া না লাগে।’
বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের স্বপ্নের সিঁড়িতে আছি। আসন্ন বাজেট হবে জনবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব। এ বাজেটটি হবে জনগণের সুবিধার্থে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। এর মধ্যেও এ দেশের বেসরকারি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে
বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ থেকে ৩৫তম স্থানে এসেছে। এর অংশীদার সবাই। উন্নয়নশীল দেশ ভারত, মালয়েশিয়ার কাতারে আজ আমরাও। সবাইকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আজ প্রশংসা করছে।’
চলমান বৈশি^ক মন্দার প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে এগিয়ে নিতে শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনতে আগামী বাজেটে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগসহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খরচ কমাতে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।’
দেশের আবাসন খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দাবি করেন ব্যবসায়ী এ নেতা। তিনি বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা খাতে শুল্ক কর যৌক্তিক করা, ভ্যাট অব্যাহতি, বন্ড সুবিধা বহাল রাখা, করনীতি, করপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর জাল সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আয়করের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ এবং মহিলা ও সিনিয়র নাগরিকদের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা এখন সময়ের দাবি। সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভুক্ত ভোগ্য পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদন হয় না এমন কাঁচামালের শুল্ক হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা, পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ, জ¦ালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব গাড়ির শুল্ক হার হ্রাস করারও আহ্বান জানাই।
এ ছাড়া তিনি উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিস স্থাপন, ভ্যাট জালের আওতা বাড়ানো, আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ আগাম কর ধাপে ধাপে রহিত করা, নিম্ন আয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্পের কাঁচামাল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রি-সাইক্লিং, টেন্ডারবহির্ভূত সরাসরি পণ্য মেরামত বা সেবা খাতে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া, ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সব কার্যক্রমে অটোমেশন নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আগামীতে অনেক খাতে অব্যাহতি তুলে দেওয়া হবে। আদায় বাড়াতে ভ্যাট জালের আওতা বাড়ানো হবে। কর আরোপে নতুন ভার আসতে পারে। এসব মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের ও শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রস্তুত হতে হবে।’
‘এনবিআরকে রাজস্ব আদায় বাড়াত হবে। আবার ব্যবসা ও শিল্প এগিয়ে নিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হবে’ এমন পরিস্থিতিতে এনবিআর কীভাবে কাজ করবে? এমন প্রশ্ন তুলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘উপায় একটাই; তা হলো ব্যবসা ও শিল্পে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’ এনবিআরের সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অডিট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে অটোমেশন করা হবে। বন্দরে স্ক্যানার বসিয়ে শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করা হবে।’
সভায় অনেক ব্যবসায়ী নেতা অভিযোগ করে বলেন, এনবিআরের অনেক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজস্ব আদায় করতে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন। কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে যান। হয়রানি করে হিসাবের চেয়ে বেশি রাজস্ব দাবি করেন। কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন।
অন্যান্য ব্যবসায়ীর মধ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, ‘বৈশি^ক মন্দার কারণে আমরা ব্যবসা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে উৎসে কর ও অগ্রিম করে এত ভার চাপানো হলে আমরা কীভাবে ব্যবসা চালিয়ে নেব?’ তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়েছে। আমাদের টিকিয়ে রাখতে সুবিধা দেওয়া না হলে দেশের রপ্তানি আয়ে ধস নামবে। তাই আমাদের সব সুবিধা বহাল রাখা, নগদ প্রণোদনা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ ও কারখানা নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হবে।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী খোকন বলেন, ‘আমরা সুতা ও কাপড় বানাই। তৈরি পোশাক খাতের মতো আমাদেরও সুবিধা দিতে হবে।’ বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানওয়ার হোসেন কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব সুবিধা চেয়েছেন।
এসএমই খাতের সংগঠন নাসিবের সভাপতি মির্জা নূরুল গণি শোভন এফবিসিসিআই এবং এসএমই খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘সব কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার সঠিকভাবে নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক আমদানিতেও সব সুবিধা দিতে হবে।’ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সব ব্যবসায়ীর কাছে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি খন্দকার মনির আহমেদ বলেন, ‘পোলট্রি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান করা এখন সময়ের দাবি।’ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শমী কায়সার অফিস ভাড়া ও ডেলিভারি চার্জের ওপর রাজস্ব প্রত্যাহারে দাবি জানিয়েছেন।
২২ বছর ধরে বাংলা বর্ষবরণের দিনটি আসে একই সঙ্গে আনন্দ আর অতৃপ্তি নিয়ে। কারণ রমনা বটমূলে জঙ্গিদের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার দুই দশকের বেশি সময় পার হলেও অপরাধীদের চূড়ান্ত বিচার এখনো অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। ওই ঘটনায় ১০ জনকে হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের রায় হয় সাড়ে আট বছর আগে। কিন্তু হাইকোর্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার রায়সহ যাবতীয় নথি) প্রস্তুত হলেও দণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানি নিয়ে বিচারকাজ শেষ হয়নি আজও।
এ মামলায় উচ্চ আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আলোচিত এ মামলাটি হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে কার্যতালিকায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষ শুধু সময় নিয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, কার্যতালিকায় এলেও বিচারক ও বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় শুনানি বিলম্বিত হচ্ছে। তবে, শিগগির শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।
নৃশংস ওই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে বিচারাধীন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্কের শুনানি নিয়ে এ মামলাটিও দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে যাবে বলে প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল সকাল। রমনা বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানে তখন শত শত মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত। সেই উৎসবে পড়ে জঙ্গিদের থাবা। বটমূলের মঞ্চের সামনে আগে থেকে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির (হরকাতুল জিহাদ) শীর্ষ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছরের বেশি সময় পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এক রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান মুনশিসহ (পরে অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) আটজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়। রায়ে ছয়জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলো মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন ও আরিফ হোসেন ওরফে সুমন। তাদের মধ্যে আবদুল হাই, জাহাঙ্গীর আলম বদর, সেলিম হাওলাদার, তাজউদ্দিন এই চারজন এখনো পলাতক। অপর দণ্ডপ্রাপ্তরা কারাগারে। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক শফিকুর রহমানকে গত বছরের ১৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবুল হাসান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
ওই বছরের ২৬ জুন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ২০১৫ সালের অক্টোবরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়। পাশাপাশি কারাগারে থাকা আসামিরা আপিল করে।
রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হলেও একপর্যায়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে শুনানি থেমে যায়। এরপর হাইকোর্টের আরও একাধিক বেঞ্চে শুনানি শুরুর তারিখ ধার্য হলেও একই কারণে সেটি আর হয়নি।
এ মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আকবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পেপারবুক প্রস্তুতের পর থেকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ অসংখ্যবার সময় নিয়েছে। কিন্তু শুনানি শুরুর উদ্যোগ নেয়নি। আসামি দোষী না নির্দোষ এটি প্রমাণ করতে তো শুনানি করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা তারা দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেবেন।’
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের বিধান হলো, হাইকোর্টের যে বেঞ্চে শুনানি শুরু হয় সেই বেঞ্চেই শুনানি শেষ করতে হয়। কিন্তু এর আগে বেঞ্চ পুনর্গঠন, বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তনসহ নানা কারণে শুনানি শুরু হলেও বিচার শেষ করা যায়নি। মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ (২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অবকাশ) শেষে শুনানি শুরুর উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করব।’
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো অন্যায় কিংবা ধ্বংসাত্মক অপরাধের বিচার দ্রুত হলে অন্যরা এ ধরনের কাজ করতে সাহসটা কম পায়। সেদিক থেকে মামলাগুলোর বিচার ত্বরান্বিত হওয়া উচিত। কেননা এটি শুধু ছায়ানটের অনুষ্ঠান নয়, এটা রাষ্ট্রের। সেদিক থেকে আমরা আশা করতে পারি যে বিচার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে।’
বিস্ফোরক মামলা এখনো অনিষ্পন্ন : রমনা বটমূলে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে পৃথক আরেকটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলায় আসামি করা হয় একই ঘটনায় করা হত্যা মামলার ১৪ আসামিকে। অভিযোগ গঠনের পর বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচারকাজ চলছিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ। গত বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওই বছরের ৩ এপ্রিল কারাগারে থাকা আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জবাব শুরু হয়। এরপর মামলাটি বদলি করা হয় ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে। আগামী ১৭ মে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যের শুনানির দিন ধার্য আছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুরনো এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির বিবেচনায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ছিল। কিন্তু দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় সেটি এখন সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে বদলি করা হয়েছে। এখন আসামি পক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শেষে যুক্তিতর্কের শুনানি হবে। এরপর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে। তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য ও জেরা যেহেতু শেষ হয়েছে তাই এখন খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। আমরা যুক্তিতর্কের শুনানি দ্রুত শেষ করে বিচার নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।’
জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসভবন ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। এতদিন সন্তান এরিক এরশাদের দেখভালের নামে বাসভবন দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন সেই অভিযোগ ছাপিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও অবৈধ কর্মকা-ের গন্ধ পাচ্ছে এরশাদ ট্রাস্ট। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ফুটেজ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জমা পড়া এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পার্ক ঘিরে নানা অভিযোগ উঠেছে।
এ চিঠি ও ভিডিও ফুটেজের তথ্য অনুযায়ী, গুলশানের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে বিএনপিপন্থি কিছু সাবেক নেতাদের নিয়ে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন বিদিশা। সেখানে অবৈধ কর্মকা- হচ্ছে। এমনকি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে আর্থিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার আদান-প্রদান হচ্ছে।
এসব অভিযোগ করে বিদিশার একসময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী হারুন-উর-রশিদ নামে একজন গত ১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি এসব কর্মকাণ্ড তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন বলেও এরশাদ ট্রাস্ট ও রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টির এক নেতা জানিয়েছেন।
এ চিঠির একটি কপি ও ভিডিও ফুটেজ দেশ রূপান্তরের কাছেও এসেছে। তবে সেই চিঠির লেখক হারুন-উর-রশিদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে যে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা শোনা যাচ্ছে, আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি দেখিনি। তবে ভিডিও ক্লিপটা পেয়েছি। তখন আমরা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। বারিধারা সোসাইটিকে আমরা অবহিত করেছি যে, সেখানে (প্রেসিডেন্ট পার্ক) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়, সেটা যেন না হয়। এটা এরশাদ সাহেবের বাসস্থান, পবিত্র জায়গা, ট্রাস্টের অধীন একটা স্থান।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট পার্কে যাই না। ট্রাস্টের মিটিং থাকলে যাই, তাও দিনের বেলায়। রাতে কী হয় জানি না। তবে যে ভিডিও ক্লিপ, সেখানে যা দেখেছি, সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার।
প্রেসিডেন্ট পার্ক ট্রাস্টের সম্পত্তি উল্লেখ করে ট্রাস্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে তো বিদিশার থাকারই সুযোগ নেই। ট্রাস্টের যে অ্যাগ্রিমেন্ট, আইন, নিয়ম, সেখানে বলা আছে বিদিশা থাকতে পারবেন না। তবে এরিককে দেখতে মাঝেমধ্যে আসতে পারবেন। কিন্তু থাকার লিখিত পারমিশন নেই। তারপরও আমরা তাকে বাধা দিইনি। কিন্তু এখানে যদি কোনো অপকর্ম হয়, সেটার দায়দায়িত্ব ট্রাস্ট নেবে না ও এড়াতে পারে না। সে জন্য আমাদের সজাগ দৃষ্টি আছে। আমরা আশা করছি, নিশ্চয়ই এটা বন্ধ হবে।’
প্রেসিডেন্ট পার্কের বিষয়টি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা জানেন বলেও মন্তব্য করেন ট্রাস্ট চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সবাই জানেন। সবকিছু অবহিত করা আছে। আমরা সবাই এরিকের মঙ্গল এবং এরশাদ সাহেবের আদর্শ ও মর্যাদার অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ।’
বিদিশা ট্রাস্ট মানেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরিকের সঙ্গে উনি (বিদিশা) কাউকে দেখা করতে দেন না। এরিকের মোবাইল নিজের কাছে রাখেন।’
চিঠির ব্যাপারে বিদিশার ব্যক্তিগত সচিব গোলাম মোস্তফা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যিনি অভিযোগ করেছেন, তার ঠিকানা সংগ্রহ করে খোঁজ নিয়েছি। তার ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’ ভিডিও ফুটেজের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে ভিডিও ফুটেজের ঘটনা ঘটেছে। তখন আমি উপস্থিত ছিলাম না। সেখানে কাজী রুবায়েত হাসান সায়েম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সায়েম এরিককে দেখাশোনা করতেন। আমার ম্যাডাম যখন দেশের বাইরে ছিলেন, তখন এরকম কোনো পার্টি হতে পারে। বিষয়টি আমরা জানার পর ট্রাস্ট থেকে সায়েম ও চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে ছয় মাস আগে অব্যাহতি দিই। গত ২৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ খবর পায় যে সায়েম বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করার ভিডিও এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়াচ্ছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। সেই ঘটনা অন্যদিকে নেওয়ার জন্য এখন এসব অভিযোগ সাজানো হচ্ছে।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদ মারা যান। এরিককে খাবার দেওয়ার কথা বলে সে বছরের ১৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পার্কে ওঠেন বিদিশা। সেই থেকে তিনি ওই বাসাতেই রয়েছেন। ওঠার পর একে একে পুরনো কর্মচারীদের বিদায় করে দেন।
কী আছে চিঠিতে : চিঠির লেখক হারুন-উর-রশিদ ১৯৮৫ সাল থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের একজন সমর্থক ও কর্মী হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসছেন। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, এরশাদের মৃত্যুর পর তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা নিজেকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে আসছেন, যার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। এখন প্রেসিডেন্ট পার্কে নিয়মিত সরকার ও রাজনীতিবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড করছেন।
সরকার উৎখাত, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ করা হয়েছে এ চিঠিতে। এর প্রমাণ হিসেবে চিঠির সঙ্গে বিদিশার অপরাধমূলক কার্যক্রমের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে হত্যা, প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে গালমন্দের ভয়েস রেকর্ডিংয়ের সিডি ও বিভিন্ন মিটিং ও আসামাজিক কার্যক্রমের ভিডিও ক্লিপের সিডি দেন।
ভিডিও ক্লিপে অশ্রাব্য গালাগাল : চিঠিতে উল্লিখিত একটি ভিডিও ক্লিপ এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়েছে। জাপার রওশনপন্থি নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ভিডিও প্রেসিডেন্ট পার্কে এক জলসায় ধারণ করা এবং সেটি ধারণ ও প্রকাশ করেছেন বিদিশা নিজেই। ভিডিওটি ধারণের উদ্দেশ্য ছিল, তার অপকর্মে জড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলো যেন কখনো তার বিপক্ষে অবস্থান না নেন। সম্প্রতি তেমন এক দীর্ঘ ভিডিওর খন্ডিত অংশ প্রকাশ করে তা দিয়ে তারই এক সময়কার বিশ্বস্ত এরশাদ ট্রাস্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রুবায়েত হাসান সায়েমকে ডিবি পুলিশে ধরিয়ে দেন বিদিশা। যে ভিডিওতে দেখা যায়, অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় কয়েকজন মিলে একজন আরেকজনকে গালমন্দ করছেন। তারা নিজেরা পরস্পরকে বিএনপিপন্থি লোক দাবি করছেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নোংরা ভাষায় কটুকথা বলছেন।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।