
দেশের মানুষের গড় আয়ু আগের তুলনায় কমেছে। বর্তমানে দেশে একজন মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর; যা আগে ছিল ৭২ দশমিক ৮। করোনার কারণে গড় আয়ু কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বেড়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ও মৃত্যুহার। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যুর হার ও কম বয়সী শিশুমৃত্যুহারও বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২১’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বেতে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
সারা দেশে ২ হাজার ১২ জনের ওপর চালানো হয় এই জরিপ। বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা মহামারীর কারণে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কিছুটা কমেছে বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এটাকে কমা বলা যাবে না।
জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন জানান, করোনার সময় মৃত্যু বেড়েছে আড়াই গুণ। ফলে গড় আয়ু কিছুটা কমেছে। ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি। আর গড় আয়ু বেশি কমেছে পুরুষদের। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পুরুষ বাঁচে গড়ে ৭০ দশমিক ৬, আর নারী ৭৪ দশমিক ১ বছর। ২০২০ সালে পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৭১ দশমিক ২, আর নারীর ছিল ৭৪ দশমিক ৫ বছর; অর্থাৎ পুরুষের গড় আয়ু কমেছে শূন্য দশমিক ৬ আর নারীর শূন্য দশমিক ৪ বছর।
গড় আয়ু কমার পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহার। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৫ দশমিক ৭। ২০২০ সালে যা ছিল ৫ দশমিক ১। এই মৃত্যুহার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। ২০২১ সালে গ্রামে হাজারে ৬, শহরে ৪ দশমিক ৮। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় সরকারি হিসাবে মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জন। এই মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে ২০২০ ও ২০২১ সালে। অতিমারির প্রভাবেই দেশের মৃত্যুহার বেড়েছে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
বেড়েছে এক বছরের নিচের বয়সী শিশুমৃত্যুর হার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি হাজারে মোট মৃত্যু ২২, যা ২০২০ ছিল ২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রতি হাজারে ২৩ ও নারী ২১ জন। তবে কী কারণে এই বয়সী শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
মৃত্যুহারের পাশাপাশি দেশে জন্মহার বেড়েছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রতি হাজারে জন্মহার ১৮ দশমিক ৮, যা ২০২০ সালে ছিল ১৮ দশমিক ১। জন্মহার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামে ১৯ দশমিক ৫ আর শহরে এই হার ১৬ দশমিক ৪।
তবে এ সময়ে মাতৃমৃত্যুর হারও বেড়েছে। প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যুর হার এখন ১৬৮, ২০২০ সালেও তা ছিল ১৬৩। এই মাতৃমৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামে এই অনুপাত ১৭৬, শহরে ১৪০।
জরিপকালে শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর বেড়েছে। স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর হয়েছে হাজারে ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। আর শহরের মধ্যে স্থানান্তর ৯৫ দশমিক ১, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ জন। বহির্গমন হার প্রতি হাজারে ৫৫ দশমিক ৯, যা ২০২০ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে। ২০২১ সালের জরিপে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ৬৫ দশমিক ৬, ২০২০ সালের জরিপে ছিল ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই বেড়েছে। গ্রামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৭, যা আগের বছর ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। শহরে ব্যবহার করে ৬৫, যা আগের জরিপে ছিল ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে ১ শতাংশ দম্পতি।
বিবিএস বলছে, দেশের ৯৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ মানুষের নিজ মালিকানাধীন ঘর আছে। বাকি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ মানুষ অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকে। ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ মানুষ সাবলেট চুক্তিতে বসবাস করে।
দেশে ১৫ বছরের বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর অনুপাত ৭১ দশমিক ৩৪। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের এ প্রবণতা বেশি। গ্রামে এই অনুপাত ৭১ দশমিক ৩৪, শহরে ৮০ দশমিক ৯৯।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। তাই এটি আগামীতে প্রকল্পের আওতায় না করে বিবিএসের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিতভাবে পরিচালিত করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এই জরিপের মাধ্যমে এসডিজির ২৬টি ইন্ডিকেটরের তথ্য পাওয়া যাবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এখানে দেখা গেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। যেটি উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, শহর থেকে মানুষ গ্রামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এখন গ্রামে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কৃষির বহুমুখীকরণ হয়েছে। কৃষিজ কাজ বেড়েছে। তাই শহরের চেয়ে গ্রামে কাজ বেশি। ফলে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, চলতি বছরের জুনে ২০২২ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করে হবে। তখন ব্যবধান নির্ণয় করা সহজ হবে।
রাষ্ট্রীয় গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের সংযোজনের মাধ্যমে গাড়িগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করবে। কিন্তু তা না করে প্রগতি দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে দরপত্র ছাড়া ইচ্ছামতো দামে গাড়ি কিনে সরবরাহ করেছে। এতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনা ৩৯৮টি গাড়ি ক্রয়সহ আরও কিছু খাতে প্রায় ২৫৩ কোটি টাকার অনিয়মের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ থেকে ২০২১ অর্থবছরের কেনাকাটায় এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান, নিজস্ব লোকবল থাকা সত্ত্বেও কনসালট্যান্ট নিয়োগ, অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার দেখিয়ে ভুয়া বিল তুলে নেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বাণিজ্যিক অডিট বিভাগের মূল্যায়নে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অডিট বিভাগ ওই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তৌহিদুজ্জামানসহ জড়িতদের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতির টাকা আদায় এবং শাস্তির সুপারিশ করেছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
সরকারের বাণিজ্যিক অডিট বিভাগের মূল্যায়নে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় প্রগতির ওই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তৌহিদুজ্জামানসহ জড়িতদের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতির টাকা আদায় এবং শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রগতির তৎকালীন এমডিকে বদলি করা হলেও আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। এমডির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
সরকারের ক্রয়নীতি না মেনে বেশি দামে কেনা এ গাড়িগুলো খুবই নিম্নমানের। যেসব সরকারি দপ্তরের জন্য এসব গাড়ি কেনা হয়েছে, মানসম্মত না হওয়ায় তারা সেসব গাড়ি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ যুক্ত হয়ে সরকারি দপ্তরগুলোকে বুঝিয়ে গাড়িগুলো বিতরণের চেষ্টা করছেন। প্রায় চার বছর আগে কেনা গাড়ির এখনো ১০টি বিতরণ করতে পারেনি প্রগতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ অর্থবছরের নিরীক্ষায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ লঙ্ঘন করে এল-২০০ ডাবল ডেকার পিকআপ ক্রয়ে ২২ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। মিৎসুবিশি মোটর করপোরেশন এবং ট্রেডিং কোম্পানি কোকুসাই লিঙ্কের মাধ্যমে এ গাড়িগুলো কেনা হয়। কোনো দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই সমঝোতার মাধ্যমে এসব গাড়ি কেনা হয়। দাম নির্ধারণের কাজটিও নিজেদের মতো করে করা হয়েছে। এখানে প্রগতির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এখানে বাজার দরের চেয়ে ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি পরিশোধের ঘটনা ঘটেছে।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সংযোজন ও উৎপাদিত পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও দেশীয় প্রতিষ্ঠান নাভানা মটরসের কাছ থেকে ২২৬ কোটি ৭৭ লাখ ২২ হাজার ৫৮৭ টাকায় গাড়ি ক্রয় করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি গাড়ি উৎপাদনকারী বা একমাত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও প্রগতি সেখান থেকে ক্রয় করেছে। এ ক্ষেত্রে দরপত্র প্রক্রিয়া করা হয়নি। পত্রের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে গাড়ি ক্রয় করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ দুর্নীতি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৪টি গাড়ি ক্রয়বাবদ নাভানাকে পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ১৪ লাখ ১২ হাজার ৬০০, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২০টি গাড়ি ক্রয়বাবদ ৭৭ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪৪টি গাড়ি ক্রয়বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৫ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯২৩ টাকা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রগতি টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল বা ডিপিপি সংস্থান না থাকা সত্ত্বেও পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) নিয়োগ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের ২৫টি আইটেমের বিপরীতে অর্থ খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পরামর্শক নিয়োগসংক্রান্ত কোনো আইটেম বা সংস্থান নেই। নিজস্ব জনবলের সেটআপে যথেষ্ট প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও ড্রয়িং, ডিজাইন ও ইস্টিমেট প্রস্তুতের জন্য একাধিক প্রকৌশলী নিয়োগ করে কনসালট্যান্সি ফি বাবদ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ অর্থবছরের ব্যয়ের খাতে এসব খরচ দেখানো হয়েছে। ঠিকাদারের দাবিকৃত বিলে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থপতি, প্রকৌশলী, তড়িৎ প্রকৌশলীদের বেতন বাবদ অর্থ এবং ড্রয়িং, ডিজাইন দরপত্র ডকুমেন্টস তৈরির জন্য উল্লিখিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের জনবল কাঠামোতে চারজন পুর প্রকৌশলী ও দুজন তড়িৎ প্রকৌশলী স্থায়ীভাবে নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের দিয়ে এ কাজটি করানো হলে বাইরে থেকে প্রকৌশলী নিয়োগ করে কনসালট্যান্সি করার প্রয়োজন হতো না।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায়, পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন না নিয়ে নিজেদের মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভেরিয়েশন চুক্তি করে অতিরিক্ত ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। জাপানের মালামাল বলে তাইওয়ানের গ্রহণ করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯১০ টাকা। আর ২০১৮ থেকে ২০২১ অর্থবছরের খরচের নিরীক্ষার তথ্যমতে, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রাপ্যের অতিরিক্ত জ্বালানি তৈল ব্যবহার দেখিয়ে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার বেশি বিল উত্তোলন করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গাড়িপ্রতি মাসিক ২০০ লিটার জ্বালানি তেল ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। সেটা অনুসরণ না করে বেশি তেল খরচ করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাণিজ্যিক অডিট বিভাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্তৃপক্ষ যেভাবে চাইবেন, সেভাবে কাজ করতে পারবেন। আর সরকারি কোম্পানিতে সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ করে কেনাকাটা করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
জানতে চাইলে প্রগতির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক জসিম উদ্দিন রাজীব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রগতির সাবেক এমডি প্রকৌশলী মো. তৌহিদুজ্জামান পরিচালনা পর্ষদকে না জানিয়ে নিয়মনীতি ভেঙে প্রায় ২৫০ থেকে ২৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন। বাজার দরের চেয়ে বেশি দাম মানহীন গাড়ি ও মালামাল ক্রয় করেছেন। চুক্তিতে জাপানি পণ্য আনার কথা থাকলেও তাইওয়ানের পণ্য গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কিছু খাতে অযৌক্তিক ব্যয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ লোপাট করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক অডিট বিভাগের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা বিষয়গুলো অবহিত হতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিএসইসি, শিল্প মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।’
প্রগতির ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মো. ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজে কেনাকাটায় যারা অনিয়মে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রগতির এমডি প্রকৌশলী মো. তৌহিদুজ্জামানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তার অভিযোগগুলো সরকারি অডিট বিভাগের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়েছে। এখন এসব ঘটনায় আরও কে কে দায়ী সেসব চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) পদায়নকৃত প্রকৌশলী মো. তৌহিদুজ্জামানের কাছে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
পাঁচ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ৪১ জন নেতাকর্মী দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বাধিক ১৭ জন আগ্রহী ছিলেন। এ সিটিতে সেখানকার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দিয়ে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হন কি না, তা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা-কল্পনা। আর গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর জাহাঙ্গীর আলম নিজেও বলেছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও জনগণ যদি চায় তাহলে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন। এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই পুরনো ‘জাহাঙ্গীর খেলা’ শুরুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও গাজীপুরের স্থানীয় কিছু নেতা মিলে এই ‘খেলা’র মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চান।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও জাহাঙ্গীরের শত্রু-মিত্ররা সবাই একাট্টা হয়ে ‘জাহাঙ্গীর খেলা’ শুরুর ছক সাজাচ্ছেন। আর এ খেলার সুফল-কুফল নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। এরই মধ্যে ঢাকায় আওয়ামী লীগ তিন প্রভাবশালী নেতার বাসায় জাহাঙ্গীর একাধিকবার ঢু মেরে আলোচনা সেরে গেছেন। গতকাল সোমবার পুরো দিনই তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতার সঙ্গে দেখা করে নিশ্চিত হতে চেয়েছেন যে নির্বাচনে প্রার্থী হলে হামলা-মামলা বা অন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি তাকে হতে হবে কি না? আর প্রার্থী হলে দল ও সরকার থেকে ঝামেলার মুখে পড়তে হবে না এমন নিশ্চয়তা পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করবেন। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী প্রার্থিতা ঘোষণার জন্য হাতে সময় থাকায় আরও কয়েক দিন এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভেবেচিন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে এই প্রতিবেদক তার পরিচয় উল্লেখ করে কল করার কারণ জানিয়ে বার্তা পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি তার।
জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনি (জাহাঙ্গীর) দলীয় পদের চেয়ে মেয়র পদের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে রাজি আছেন। তার আত্মবিশ্বাস, প্রচারণায় বের না হয়েও মেয়র নির্বাচিত হবেন। হামলা-মামলার শিকার না হয়ে শুধু দল থেকে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নিলেও ভোটের মাঠে থাকবেন জাহাঙ্গীর।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় এক নেতার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীরকে নিজের শক্তির ওপর ভর করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করে তুলেছেন বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীরের শক্তির উৎস যে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন তারা তাকে বলেছেন, শক্তির জায়গায় আত্মবিশ্বাসী থাকলে নির্বাচনে নেমে পড়তে। কারণ বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। ফলে জাহাঙ্গীরের বিজয়ী হয়ে আসার সুযোগ আছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল। এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে। ভোটগ্রহণ হবে ২৫ মে। তাই প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জাহাঙ্গীর আলম আরেকটু সময় নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, শীর্ষ পর্যায়ের এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ছয়জন প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে দলের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে জোর চেষ্টা চালান। কিন্তু আজমতের রাজনৈতিক ত্যাগের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিটিতে মেয়র প্রার্থী বদলেছেন। এতে নাখোশ হয়ে জাহাঙ্গীরকে দিয়ে ‘জাহাঙ্গীর খেলা’ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন প্রভাবশালী ওই ছয় নেতা। এতে করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ভোটের মাঠে সংকটে ফেলা যাবে। এই সিটি নির্বাচনে পরাজিত হলে আজমত গাজীপুরের রাজনীতিতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। এ ছাড়া গাজীপুর আওয়ামী লীগের যে অংশটি ‘জাহাঙ্গীর খেলা’র সঙ্গে জুটেছেন, তাদের লক্ষ্য জাহাঙ্গীরকেও শেষ করা যাবে এর মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও গাজীপুরের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানান।
তারা বলেন, ‘জাহাঙ্গীর খেলা’ বলতে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচন ঘিরে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আজমত উল্লা খানকে হারানো হয়েছিল তা। তখন মনোনয়নপ্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড নৌকা প্রতীক তুলে দেয় আজমতকে। তাতেই বেঁকে বসেন জাহাঙ্গীর অনুসারী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ এবং তাদের অনুসারী ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতারা। যারা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সুফলভোগী। এ অনুসারীদের চাপে পড়ে জাহাঙ্গীর ‘খেলা’ শুরু সেই নির্বাচনে। তিনি কাগজে-কলমে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মুখে ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রার্থী হিসেবে না থাকার। এবারও একই খেলা, একই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ‘জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট’।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের একটি অংশ চায় ‘জাহাঙ্গীর খেলা’র মধ্য দিয়ে আজমত পরাজিত হলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ হবে এবং ওই দোষে দুষ্ট হয়ে জাহাঙ্গীর আলমেরও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মৃত্যু হবে। এই হিসাব থেকেও গাজীপুরের প্রভাবশালী নেতারা তার সঙ্গে জোট বেঁধেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অমান্য করলে যত বড় নেতাই হোক না কেন, এবার আর ক্ষমা করা হবে না। সে যে-ই হোক। অনেকেই অমুক প্রার্থীর সঙ্গে তমুক প্রার্থীর সঙ্গে উসকানি দেন এমন ঘটনা বলাই যায়। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকলে সবাইকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
২০১৩ সালের ‘জাহাঙ্গীর খেলা’ : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে টঙ্গী পৌরসভার তিনবারের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান বিএনপির আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। সেবার মনোনয়ন চেয়েও না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর। তবে ভোটের আগে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার কথা কেন্দ্র থেকে বলা হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু গণমাধ্যমে নানা আবেগী বক্তব্য দিয়ে যান ওই সময়ে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর আত্মগোপন থেকে ছাত্রলীগের সাবেক কিছু প্রভাবশালী নেতা তাকে বের করে এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থিত করান। এতে করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে আসতে চেষ্টা করেন। ওই সময়ে সংসদ ভবনে কাজে থাকা শেখ হাসিনার সামনে জাহাঙ্গীর উপস্থিত হলে প্রধানমন্ত্রী তাকে আজমতের পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জাহাঙ্গীরকে ভবিষ্যতে দেখার আশ্বাসও আদায় করে নেন।
দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পরদিন জাহাঙ্গীর ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে গাজীপুরবাসীকে আবেগপূর্ণ করে তোলেন। সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ভোটের অল্প কয়েক দিন আগে গাজীপুরের মানুষকে দোলায় ফেলে দেন। অভিযোগ ওঠে, সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি তার ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে বিএনপির তৎকালীন মেয়র প্রার্থী এমএ মান্নানের জন্য ভোট চান। ‘জাহাঙ্গীর খেলা’র উদ্দেশ্য ছিল আর যা-ই হোক, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক রাখতে হলে আজমতকে হারাতেই হবে। তাই জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট ওই নির্বাচনে শেষদিন পর্যন্ত রহস্যবৃত ছিল। ফলে ফলাফল যা হওয়ার কথা ছিল তা-ই হয়। মান্নানের কাছে পরাজিত হতে হয় আজমত উল্লা খানকে। অন্যদিকে নির্বাচন থেকে মুখে মুখে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও কাগজে-কলমে প্রার্থী থেকে যাওয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের ভোটের বাক্সেও ৩০ হাজারের মতো ভোট পড়ে।
আজমত হেরে যাওয়ায় পরেরবার ২০১৮ সালে নৌকা পেতে আর কোনো ঝক্কি-ঝামেলায় পড়তে হয়নি জাহাঙ্গীর আলমকে। মনোনয়ন পেয়ে অনায়াসেই মেয়র হয়ে যান। তবে সেবার তিনি মনোনয়ন পেলেও প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কোনোভাবেই আজমত উল্লা খানের অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠেনি। কেন্দ্রের কয়েকজন নেতার আজমতবিরোধী অবস্থানের নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর বিভিন্ন নেতাকে আর্থিকসহ নানা সুবিধা দিয়ে তার ভক্ত করে রেখেছেন। অন্যদিকে আজমতের যোগ্য-দক্ষ ও ত্যাগের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন থাকায় অনেকেই তাকে ঈর্ষার চোখে দেখেন।
মেয়র হয়েই বেপরোয়া জাহাঙ্গীর : মেয়র হওয়ার পর পুরো নগরীতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরের রাজনীতি, সিটি করপোরেশন কার্যালয়সহ সবই তার ইশারায় চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাসহ প্রভাবশালী অন্তত চারজন নেতা তাকে আশকারা দিতে থাকেন। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীরকে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিছুটা চাপে পড়ে নিশ্চুপ হয়ে যান তিনি। সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্তে বহিষ্কার হওয়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলে এর আওতায় তারও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর মেয়র পদ ফিরে পেতে আদালতের শরণাপন্নও হন জাহাঙ্গীর। একই সঙ্গে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ মাস পর ওই প্রকল্পের অধীনে চার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। তাদের ওই নিয়োগ প্রকল্পভিত্তিক হলেও পরে অবৈধ প্রক্রিয়ায় রাজস্ব খাতে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে একজন কোম্পানি সচিব, উপমহাব্যবস্থাপক একজন এবং দুজন ব্যবস্থাপক রয়েছেন, যারা প্রায় ২৩ বছর ধরে দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন।
আরপিজিসিএলের কৈলাশটিলা এলপিজি প্রকল্পে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য ১৯৯৭ সালের ২১ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে মাত্র ৭ দিনের মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীর আবেদনপত্র ডাকযোগে পৌঁছানোর কথা বলা হয়। আবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ থেকে প্রায় ১ বছর ৪ মাস পর ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের আওতায় ওই চার কর্মকর্তা নিয়োগ পান। অথচ এর আগে ওই বছরের ১৪ এপ্রিল এলপিজি প্রকল্পের কমিশনিং শেষে এর মেয়াদ সমাপ্ত হয়। এক দিন পরই শুরু হয় প্ল্যান্টের উৎপাদন ও রাজস্ব আয়।
মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রকল্পের আওতায় এ নিয়োগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন রাজস্ব আয় শুরু হয়ে গেছে। বেতন-ভাতার অর্থ নিয়ে সমস্যা না থাকায় তাদের নিয়োগেও ঝামেলা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কোম্পানি সচিব ফরিদ আহম্মদ ওই চার কর্মকর্তার একজন। তিনি প্রকল্পের আওতায় ক্রয়/ভা-ার কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই পদে নিয়োগ পান মোহাম্মদ বুরহানুদ্দিন, যিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআর)। অপর দুজন কাজী সালমা খাতুন ও নাহিদ সুলতানা চৌধুরী জুনিয়র অফিসার (কম্পিউটার) হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক নিয়োগ পান একই সময়ে। বর্তমানে তারা যথাক্রমে সংস্থাপন ও ভান্ডার শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের নিয়োগপত্রের শর্তে বলা আছে, ‘আপনার এই নিয়োগ সম্পূর্ণ প্রকল্পভিত্তিক হিসেবে গণ্য হইবে।’ কিন্তু পরে তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তাদের কর্তৃপক্ষ যে নিয়োগপত্র দেয়, সেখানে ওই বছরের ১ অক্টোবরের মধ্যে যোগদানের কথা বলা হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে যেদিন নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, সেদিনই কর্মস্থলে যোগদান করেন কাজী সালমা খাতুন। তিনি তার যোগদানপত্রে মেডিকেল চেকআপ শেষে প্রয়োজনীয় সনদ ও অন্যান্য দলিল পরে জমা দেওয়ার আবেদন করেন। একই দিনে নিয়োগপত্র গ্রহণ ও যোগদানপত্র জমা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে কাজী সালমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অন্যরাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ৯ এপ্রিল রাজধানীর নিকুঞ্জে আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাবেদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। কোম্পানি সচিব ফরিদ আহম্মদের কাছে গেলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আলমগীর সরকারের কক্ষে গিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি। পরে তাকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও আইন) রাবিয়া হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু রাবিয়াকে অফিসে পাওয়া না যাওয়ায় পরে তাকে ফোন করে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রিকার বিজ্ঞাপনের বিষয় নিয়ে কথা না হলে এগুলো কী সব বলছেন? বলেই ফোন রেখে দেন তিনি। পরে ফোন করা হলে তিনি তা কেটে দেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তার দপ্তরে না পেয়ে পরদিন ফোন করা হয় তার মুঠোফোন নম্বরে। তিনি ফোন না ধরে তার দপ্তরের উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদকে দিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে ফোন করে জানতে চান কেন তাকে ফোন দেওয়া হয়েছে। এ সময় নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানা দরকার তা জানানো হলে মঞ্জুর বলেন, ‘স্যার মিটিংয়ে। বিষয়টি তাকে জানানো হবে।’
পরে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও যাবেদ চৌধুরী আর ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার দপ্তরের টেলিফোনে অন্তত তিন দফা ফোন করা হলে জানানো হয়, ‘বিষয়টি স্যারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত। কখনো বলা হয়, তিনি অফিসের বাইরে আছেন।’
নানাভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে যান এবং সময়ক্ষেপণ করলেও শেষ পর্যন্ত তার মতামত পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত রবিবার তার মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়বস্তু লিখে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত তার কোনো সাড়া মেলেনি।
আরপিজিসিএলের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে আরপিজিসিএল প্রকল্প ও রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে পদোন্নতি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা দ্রুত নিরসনের চেষ্টা চলছে। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। আবারও কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়োজনে বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
১৯৯৮ সালে কোম্পানির ১১৪তম বোর্ড সভায় মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রকল্পের পদ ও সরঞ্জামাদি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু জনবলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া না হলেও ২০০০ সালের ২২ মে আরপিজিসিএল একটি সাকুুলার জারি করে প্রকল্পের জনবলও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে। কোনো ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রকল্প থেকে সরকারি ওই কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রায় দুই বছর ওই কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়ার আগে তারা কীভাবে চাকরি করেছেন, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন সময়ের পৃথক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘১৯৯৭ সালের পহেলা জুলাই হতে চালু প্রকল্পের (২য়/৩য় পর্যায়সহ) ক্ষেত্রে প্রকল্প সমাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট জনবলের বেতন-ভাতা প্রদানের আর কোনো অবকাশ নেই। নিয়োগ চুক্তি শর্ত অনুযায়ী তাদের নিয়োগপত্রই অব্যাহতিপত্র হিসেবে এবং প্রকল্প সমাপ্তির পরদিন থেকে প্রকল্পের জনবল কর্মরত নাই বলে গণ্য হবে। প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পের লোকবলকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা যাবে না। উন্নয়ন প্রকল্পের নিয়োগপত্র প্রকল্প সমাপ্তিতে চাকরি হতে অব্যাহতিপত্র হিসেবে গণ্য হবে।’
১৯৯১ সালের ৫ নভেম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অপর এক পরিপত্রে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের পদ এবং রাজস্ব খাতভুক্ত পদ ও নিয়োগবিধি সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় উভয়ের পারস্পরিক নিয়োগ/পোস্টিং/বদলি/পদোন্নতি বিধিবহির্ভূত। উন্নয়ন প্রকল্পের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে কিছু শর্তে তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলোÑ রাজস্ব খাতভুক্ত পদের নিয়োগবিধির শর্ত পূরণ করে অন্যান্য প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাকে নির্বাচন লাভ করতে হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োগের জন্য জনবলের নিয়োগপত্র প্রকল্প পরিচালকের দেওয়ার কথা থাকলেও আরপিজিসিএলের ওই চার কর্মকর্তার নিয়োগপত্রে সই করেন তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গাজী সোবেদুর রহমান।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবেকদর। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারা দেশে শবেকদর পালিত হবে। দেশের মসজিদে মসজিদে তারাবিতে পবিত্র কোরআন খতম উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। গোনাহ মাফ, মনোবাসনা পূরণ ও বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে মোনাজাতের পাশাপাশি অনেকেই কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন। লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপার সুযোগ নিয়ে বরকতময় পবিত্র শবেকদর আমাদের মধ্যে সমাগত। মহিমান্বিত এই রজনীতে আমি মহান আল্লাহর দরবারে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য মাগফিরাত ও কল্যাণ কামনা করছি।’
লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘সব প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সব স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’
রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।
পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত ও কল্যাণময় রাত লাইলাতুল কদর। প্রতি বছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ রাতে শবেকদর পালন করা হয়। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাত কাটান। ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবেকদরের এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে ‘আলকদর’ নামে একটি সুরাও নাজিল করা হয়।
লাইলাতুল কদরে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মানবজাতির মানসম্মান বৃদ্ধি এবং ভাগ্য পুনর্নির্ধারণের জন্য মহান আল্লাহ অধীর আগ্রহে চতুর্থ আসমানে নেমে আহ্বান জানান কে আছো মহিমান্বিত আলোকবর্তিকায় এ রাতে ভাগ্য পরিবর্তন ও পুনর্নির্ধারণ করতে চাও? গোনাহ থেকে মুক্তি চাও?
সৃষ্টিকর্তা ও দয়াময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও নিজেদের গোনাহ মাফ, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। বৃষ্টিহীনতার কারণে মানুষের কষ্ট লাঘব থেকে শুরু করে কায়মনোবাক্যে দোয়া করবেন, যাবতীয় বিপদ, মুক্তি, সম্পদের সুরক্ষা এবং হঠাৎ আসা বিপদ থেকে বাঁচার।
পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহতায়ালা এ রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও অধিক উত্তম। প্রতি বছর রমজানে এই মহিমান্বিত রাত মানবজাতির জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। এ বিশ্বাসে রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, দোয়া-দরুদ ও জিকির-আসকার ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে তার সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকেন।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) লাইলাতুল কদরে যে দোয়াটি নিজে আমল করেছেন এবং সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, তা হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন; তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন।’
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এ রাত পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশ দিন আজীবন ইতিকাফ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘শবেকদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও, তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত করো।’ মিশকাত
সুনানে আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়ায় আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য রাসুল (সা.) শেষ দশ দিনের পুরো সময়টায় ইতিকাফরত থাকতেন। সহিহ মুসলিম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শবেকদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা শুধু একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম (নামাজ) করেই যেন ক্ষান্ত না হয় এবং সেই রাতের ফজিলতের ওপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত রমজানের শেষ দশ দিনের কোনো রাতকেই কম গুরুত্ব না দেওয়া এবং পুরোটাই ইবাদতের মাধ্যমে শবেকদর অন্বেষণ করা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।