
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অনিয়ম থামছেই না। টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। বেবিচকের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও দুর্নীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে নেই।
দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অনিয়ম থামাতে একের পর এক নজরদারি করলেও কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখা বেশি দুর্নীতিতে জড়িত। ছদ্মনামে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই শাখার শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা পর্যন্ত টেন্ডারে ভাগ বসাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার লোকজনও প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চোখ পড়েছে তাদের ওপর। আপাতত ৮২ কর্মকর্তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নোটিস দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। সময়মতো তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক মাস আগে বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৭টি প্রকল্প কাজের যাবতীয় নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে সাত ধরনের প্রকল্প কাজসহ ৯ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। এলটিএমের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার ওপরে সম্পাদিত কাজের ছক প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ ও পরিশোধিত অর্থের বিল-ভাউচার, টার্মিনাল ভবনের ছাদে ওয়াটারপ্রুফ কাজের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার; বেবিচকের কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার, বেবিচকের এমটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের ফটোকপি ও ডিভিশন-৩-এর ভবনের সিকিউরিটি গেট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারসহ ওই প্রকল্পের নথির ফটোকপি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমপোর্ট কার্গো ভবনের পার্কিং শেড নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও পরিশোধিত বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বেবিচকের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে শাহজালাল, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫ প্রকল্পের ফাইল তলব করা হয়েছিল। তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক জাহিদ কামাল নথিপত্র তলব করেছিলেন। ওই সময় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা। আবারও বিষয়টি সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স নীতি। যারা অপরাধ করবে তারা শাস্তি পাবেই। দুদককে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বেবিচকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রকৌশল শাখাসহ সব বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুদক বেবিচক ও বিমানের কর্মকা- নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কোন কোন খাতে বেশি দুর্নীতি হয় সেই তথ্য উদঘাটন করে সংস্থাটি। বেবিচকের ৩৬টি খাত নিয়ে বেশি অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেবাকে বাণিজ্য বানিয়ে কেউ কেউ অর্থ কামাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দুদক একটি তালিকা করেছে। তালিকায় বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার কন্ডিশনার ডাক্ট স্থাপন, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আপগ্রেডেশন, বিমানবন্দরে কাউন্টার এবং কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন, তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ, নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, পুরাতন বোর্ডিং ব্রিজের যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও স্থাপন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনের জন্য এলইডি লাইট কেনা ও ফিটিংস, বাগানে আলোকসজ্জা, এইচটি ও এলটি সুইচগিয়ার স্থাপন কাজের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তাছাড়া বিমানবন্দরের ফ্লোর মাউন্টেড এবং ওয়াল মাউন্টেড প্যানেল স্থাপন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সাইজের পাওয়ার ক্যাবল সরবরাহ, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, রানওয়ে, টেক্সিওয়ে, এপ্রোন লাইট ও লাইট ফিটিংস সরবরাহ, আবাসিক ভবনে ইন্টারনাল ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ, সিএএবির নতুন সদর দপ্তরের ভবনে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট সরবরাহসহ ইএম সংক্রান্ত কাজ, টার্মিনাল বিল্ডিংসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য ভবনের ডেকোরেশন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইএম কাজ, বিভিন্ন স্থানে এপ্রোন মাস্ট লাইট স্থাপন, সিসিআর বিল্ডিং-সংশ্লিষ্ট সব ইএম কাজ, রানওয়ে লাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন সাইজের কেব্ল সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের পেছনে ছিলেন বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।
পাশাপাশি বিমানের কাছে বছরের পর বছর আটকে থাকা বকেয়ার তিন হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা আদায় এবং এর পেছনের কারণ জানতে মাঠে নেমেছে দুদক। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর বিমানের কাছে চিঠি দিলেও কোনো জবাব পায়নি তারা। পরে আবারও চিঠি দেয় দুদক। বাধ্য হয়ে বিমান সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আগামী মাসে বলাকা ও বেবিচক কার্যালয়ে যাবেন দুদক কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টাওয়ার বোর্ডিং ব্রিজসহ বড় বড় কেনাকাটা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের দোকান ও বিলবোর্ড ভাড়া, পরামর্শক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণসহ নানা খাতে দুর্নীতি হয়েছে। বেবিচকের অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশে একাধিক বাড়ি রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক রেখে কাজের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে যেনতেন কাজের মাধ্যমে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। ছদ্মনামে তারা টেন্ডার ভাগান। আবার নানা পেশার মানুষ প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের তালিকাও আমরা করছি। ইতিমধ্যে বিমান ও বেবিচকের ৮২ কর্মকর্তার প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রামস বিভাগের সিনিয়র ড্রাফটম্যান আবদুস সোবহান ও তার স্ত্রী মিসেস সালমাকে দুদক চিঠি দিয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেবিচকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক।’
বেবিচকের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা পেশার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের কাছে আমরা অসহায়। তাদের কথা না শুনলে পত্রপত্রিকায় আজেবাজে সংবাদ ছাপিয়ে দেওয়া হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করছে। কারা কারা এসব অপকর্ম করছে তাদের নামও দুদককে আমরা জানিয়েছি। আর এসবের পেছনে আমাদের শীর্ষ কর্তারা জড়িত। বিষয়টি আমরা দুদককে অবহিত করেছি। দুদকও বলেছে, তারা বিষয়টির নজরদারি করছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের নোটিসে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা তদবিরও করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
গত তিন মাসে দেশের শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানির অর্ধশতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফ, অপসোনিন, ইনসেপ্টা, এরিস্টোফার্মা, সানোফি, রেডিয়েন্ট, রেনেটো ও একমি। এসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত এসব ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা উপশম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল, ঠান্ডা, কাশি, হাঁপানি, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, আমাশয়, জ্বর ও ডায়াবেটিসের ওষুধ। এ ছাড়া জন্মনিরোধক সামগ্রী কনডম, ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন ও স্ট্রিপ, নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিনের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগ ও মগবাজারের ওষুধের বাজার ঘুরে ও ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, ডলারের দাম বাড়ায় টাকার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও বিদ্যুৎ সবকিছুতেই দাম বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে ওষুধের মূল্য সমন্বয় হয়নি। সে জন্য তারা এটাকে মূল্যবৃদ্ধি না বলে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে দামের সমন্বয় বলছেন।
এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে গত জুনে ৫৩টি ওষুধের দাম সমন্বয় করেছে সরকার। এ রকম ১১৭টি জেনেরিকের বিভিন্ন ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ওষুধগুলোর মূল্যবৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলো আবেদন করে। আমরা সেটা যৌক্তিক হলে অনুমোদন দিয়ে দিই। কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই মূল্যবৃদ্ধি করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের জুনের দিকে প্রথম যখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়াল, এরপর থেকে ‘টপ টেন’ (শীর্ষ ১০) কোম্পানির অন্যান্য ওষুধের দামও বাড়ছে। যাদের প্রাত্যহিক ওষুধ লাগে, দাম বাড়লেও তাদের ওষুধ কিনতে হবেই। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীরা মাঝারি মানের যেসব কোম্পানি আছে, তাদের ওষুধ কম দামে কিনবেন। মানহীন ওষুধের দিকে ঝুঁকবেন। স্কয়ারের, সর্বোচ্চ ৮২% : শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে স্কয়ার কোম্পানির ওষুধ। ১৮ ধরনের ওষুধের সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শিশুদের নাকের ড্রপ এন্টাজল (০০.৫%) ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাকের ড্রপ এন্টাজলের (০.১%)। প্রথমটি ১১ থেকে ১৮ টাকা ও দ্বিতীয়টি ১১ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এই ওষুধের দাম যথাক্রমে ৬৪ ও ৮২ শতাংশ বেড়েছে।
আমাশয় রোগীদের পেটের সমস্যায় ব্যবহৃত প্রতি পিস প্রোবায়ো ক্যাপসুল ১৬ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৯ টাকা বা ৫৬ শতাংশ। ডায়াবেটিসের প্রতিটি কমপ্রিট (৪০ এমজি) ট্যাবলেট ৭ থেকে ৮, কাশির তুসকা প্লাস (১০০ মিলি) সিরাপ ৮০ থেকে ৮৫ ও ক্যালসিয়ামের এক কৌটা নিউরো-বি ট্যাবলেটের দাম ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অ্যান্টাসিড প্লাস ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ (২০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ ও সেফ-৩ (৪০০ মিগ্রা) ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট বিসকোর (২.৫ মিগ্রা) ৬ থেকে ৭ ও অ্যালার্জির প্রতিটি ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেফোটিল প্লাস (৫০০ এমজি) এক পাতা (১২টা) ৫০ থেকে ৬০ ও মোক্সাসিল (১০০ মিলি) সিরাপ ৪৭ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট জিম্যাক্স (৫০০ মিগ্রা) প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ ব্রংকাইটিস এবং নিউমোনিয়াসহ নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত ক্যালবো-ডি ট্যাবলেটের একটি কৌটা (৩০টি) ২১০ থেকে ২৪০ টাকা হয়েছে। ঠান্ডা, সর্দি, চুলকানি ও অ্যালার্জির ট্যাবলেট ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। কাশির সিরাপ ওকফ ১০০ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫% বেক্সিমকোর : এই কোম্পানির চার ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিশুদের জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা ড্রপ ও নাপা সিরাপ (৬০ মিলি)। প্রথমটি ১৫ থেকে ২০ টাকা ও দ্বিতীয়টি ২০ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে। এই দুই ড্রপের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ। অ্যাটোভা (১০ মিগ্রা) ট্যাবলেটের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা ও অ্যাটোভা (২০ মিগ্রা) ১৮ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এ ওষুধ দুটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হয় ও প্রচুর বিক্রি হয়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দাম দুই কোম্পানির : মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় নম্বরে আছে এসকেএফ ও অপসোনিন। এই দুই কোম্পানির প্রচুর বিক্রি হয় এমন চারটি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসকেএফের তৈরি শিশুদের জিংক সিরাপ (১০০ মিলি) ৩৫ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস বিসলল-ম্যাক্স (২.৫ এমজি) ট্যাবলেট ৬ থেকে ৮ ও ১৪টির এক পাতা বিসলল (৫ এমজি) ট্যাবলেট ৮৪ থেকে ১১২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের প্রতিটি ফিনিক্স (২০ এমজি) ট্যাবলেট ৫ থেকে ৭ টাকা হয়েছে।
সর্বোচ্চ ২৫-৩৩% তিন কোম্পানির : তিন কোম্পানির ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে। এই ওষুধগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে ইনসেপ্টার তৈরি উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস ওসারটিল (৫০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ১০ ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ওমিডন (১০ এমজি) ৩ থেকে ৪ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
এরিস্ট্রোফার্মার মাল্টিভিটামিন ১৫টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ১০৫ থেকে ১৩৫ ও ৩০টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ২১০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স লিনাগ্লিপ (৫ মিগ্রা) ৬০০ থেকে ৬৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স রুভাসটিন (৫ মিগ্রা) ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা হয়েছে।
সানোফি কোম্পানির ডায়াবেটিক রোগীদের লেনটাস ফ্লেক্সপেন ইনসুলিন ১২২০ থেকে ১৫০০ টাকা ও লেনটাস পেনফিল রিফিল ৭৮৪ থেকে ৯৮২ টাকা হয়েছে।
প্রায় সব ওষুধের দাম বেড়েছে রেডিয়েন্টের : ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রেডিয়েন্ট ফার্মার প্রায় সব ওষুধের দামই বেড়েছে। এসব ওষুধের বিক্রিও বেশি। এমন কিছু ওষুধ আছে, যার বিক্রি দেশের তিন শীর্ষ ওষুধ কোম্পানির বিক্রির চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঘুমের ওষুধ রিভোট্রিল (০.৫ মিগ্রা) ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০, রিভোট্রিল (১ মিগ্রা) ৯০ থেকে ১১০ ও রিভোট্রিল (২ মিগ্রা) ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
এই কোম্পানির আরেকটি ঘুমের ওষুধ লেক্সোটানিল (৩ মিগ্রা) এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি জাতীয় ট্যাবলেট কোরালক্যাল-ডি’র এক পাতা ১১০ থেকে ১২০ ও কোরালক্যাল-ডিএক্স ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে। মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ঠা-ার ওষুধ জাইফ্লো (১০ মিগ্রা) এক পাতা ট্যাবলেট (১০টা) ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়েছে। পেইনকিলার ন্যাপ্রোসিন (৫০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট এক পাতা (১০টা) আগে ছিল ১৫০, এখন ১৬০ টাকা।
দাম বেড়েছে স্যালাইন ও কনডমের : এসএমসি কোম্পানির মুখে খাওয়ার স্যালাইন ওরস্যালাইন-এন প্রতি প্যাকেটের দাম ১ থেকে ৬ টাকা হয়েছে। একই কোম্পানির জন্মনিরোধক সামগ্রী সেনসেশন কনডম প্রতি প্যাকেট ২৫ থেকে ৪০, প্যানথার কনডম ১৫ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের কনডমের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৬০ ও ৬৬ শতাংশ।
একমি ও রেনেটারও দাম বাড়িয়েছে : একমি কোম্পানির মন্টিকুলাস্ট গ্রুপের অ্যালার্জি ও ঠা-ার ওষুধ মোনাস (১০ মিগ্রা) প্রতি ট্যাবলেটের দাম ১৬ থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। রেনেটার তৈরি অ্যালার্জির প্রতি পিস ফেনাডিন (১২০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ।
বেড়েছে অন্যান্য সামগ্রীর দাম : ওষুধ বিক্রেতারা জানান, জার্মানের নামকরা কোম্পানি অ্যাকু-চেক উৎপাদিত ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন অ্যাকু-চেকের দাম আগে ছিল ২৬৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৩২০০ টাকা। একই কোম্পানির সুগার মাপার স্ট্রিপ অ্যাকু-কে স্ট্রিপ ১১২০ থেকে ১৩০০ টাকা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও আমদানি করা নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিন প্রতিটির দাম কমবেশি ৫০০-৭০০ টাকা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বেশি পরিমাণে বিশাল আকারের জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকারের বাস্তবসম্মত নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির এক আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে।
টোকিওতে ওয়েস্টিন হোটেলের গ্যালাক্সি বলরুমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের উদ্বোধনকালে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বাস্তবসম্মত নীতি এবং দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে রপ্তানির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) বিনিময় করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ও অ-আর্থিক নীতি ও প্রণোদনা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, বিচক্ষণ শাসন ও নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অটুট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীসহ বিশ্বের সব বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগগুলো দেখার জন্য স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘তবে প্রকৃত বিনিয়োগ এখনো কম। আমরা জাপানের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ যেটি নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তার একটি বৃহৎ বাজারের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ প্রদান করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের মনে করিয়ে দেন যে, যেহেতু তারা সচেতন যে কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং এখনো অস্থির বিশ্ব আর্থিক পরিস্থিতি এবং সরবরাহের দিকের সীমাবদ্ধতার চাপকে ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করছি।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি, ইলেকট্রনিকস, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ অনেক বেড়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সরকার ব্যবসা করার উপায়গুলো সাবলীল, সহজতর এবং কার্যকর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তার সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ আপনাদের জন্য প্রস্তুত এবং সেখানে গেলে আপনাদের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আপনারা ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা এবং কাঠামো সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপের (পিপিইডি) মতো উচ্চপর্যায়ের যৌথ প্ল্যাটফরম রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ১১ এপ্রিল ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম পিপিইডি বৈঠকের ফলাফলকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে স্নাতক হতে চলেছে, আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্ভব করার জন্য জাপানের সঙ্গে কাজ করছি।’
বাংলাদেশি ও জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যেসব কোম্পানি আজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আমি তাদের সফল অংশীদারত্ব কামনা করছি। আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিশেষ করে আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ আশা করি।’
জাপানে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তাদের রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
গত বছর বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বিস্ময়করভাবে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া জাপানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।
আলোচনার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্রুতই জাপান আমাদের নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফর করেন এবং দুদেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেইটিআরও) চেয়ারম্যান ইশিগুরো নোরিহিকো, জেসিসিআইর কেন কোবায়াশিসহ জাপান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-টোকিও বিনিয়োগ সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে নেওয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছর এবং তারপরও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন, আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
গতকাল সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ (গতকাল) আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি হয়েছি। এটি আমাদের বন্ধুপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে দুদেশের মধ্যকার ‘দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব’ এবং ‘ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউজে গতকাল চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই মহৎ অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যেখানে আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করছি না, বরং জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার স্বার্থে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সেসব মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত মহৎ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেসব জাপানি নাগরিক ছিলেন তারাও আজ (গতকাল) আমাদের সঙ্গে আছেন। এটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের জনগণ তখন বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তালিকায় আটজন সম্মানিত ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সঞ্চালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তারা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহীতাদের পক্ষে অধ্যাপক গ্যালপ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ঢাকা-টোকিওর গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও একমত হয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি আশ্রয়দাতা কমিউনিটির ওপর চাপ বাড়াবে এবং এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি ‘টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা এই বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য এই বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান করে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ এই বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জন্য জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাদের প্রতি জাপানের ক্রমাগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ভাসানচরসহ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আনুমানিক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইয়েনের ওপরে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ববর্তী সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাবাসনের পর তাদের স্বনির্ভর জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের গুরুত্বের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের ভিত্তিতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি তাদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুতর সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক সংস্কারসহ জাতিসংঘকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা জাপানের স্থায়ী সদস্য হওয়াসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারে ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে বিশ্বমানের শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে জাপান : বিশ্বখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো কর্র্তৃক প্রতিষ্ঠিত তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ঢাকায় একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে। টোকিওতে আকাসাকা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাদাওয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ কথা জানায়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (বিএনএম) এবং তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন বিএনএম মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং তাদাও আন্দো। জাপানের অনুদানে বাংলাদেশে একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য এ এমওইউ সই হয়।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং বীরদের গৌরব সংরক্ষণের জন্য সারা দেশে জাদুঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে সংরক্ষণ করতে সরকার তার বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করেছে।
তাদাও আন্দো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, কারণ তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং জনগণের কোনো উন্নয়ন চায় না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না। বিএনপি কোন মুখ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং নির্বাচনের ন্যায্যতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তারা ২০টি দল, কিন্তু তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং পরে তারা উপনির্বাচনে আরও একটি আসন পেয়েছিল।’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয়ের ভয়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল ওয়েস্টিন টোকিওতে আয়োজিত জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যারা দেশে গণতন্ত্র দেখে না এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ হত্যার পর লাশ গুম করে তাদের পক্ষ নিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, তাদের কোনো মানবাধিকার ছিল না কারণ তারা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তার মা ও ভাইদের হত্যার পরেও মামলা করতে পারেনি কারণ খুনিরা ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা শাস্তির বদলে উপহার পেয়েছে। বাসস
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানোর পর এবার নিয়মিতভাবে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বার্থিং আদেশ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে, মাতারবাড়ী চ্যানেলে কয়লাবাহী একটি জেটিতে ২৩০ মিটার দীর্ঘ ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং অন্য জেটিতে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ (তেলবাহী) ভেড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য একটি অস্থায়ী জেটিতে (লাইটার জাহাজ ভেড়ানোর জন্য) ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে বলা হয়েছে। আর এ আদেশ বিশে^র বিভিন্ন বন্দর থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক আদেশ বলেই বিবেচিত। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরেরও যাত্রা হয়ে গেল। এই নীল চ্যানেল দিয়েই আগামীর অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ।
গভীর সমুদ্রবন্দরটি হওয়ার কথা ছিল সোনাদিয়ায়। ২০১৬ সালে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করে জাপান। আর সেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আরও যুগোপযোগী করতে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে জেটি নির্মাণে। ফলে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের অংশীদার এখন জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে জাপান সফর করছেন। আর এ সময়ে যাত্রা হলো গভীর সমুদ্রবন্দরের।
গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূরাজনীতির কথা উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ভূরাজনীতির কারণেই সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হয়নি। জাপানের বিগ বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ)-এর আওতায় মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং আর তা ব্যবহার করে এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের যুগে দেশ।’
গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে মাতারবাড়ীর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাতারবাড়ী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেভিগেশন হাব। এখান থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডে পণ্য পাঠানো যাবে। আর সেই পথেই এগোচ্ছে মাতারবাড়ী।’
মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেল যেমন তৈরি করা হয়েছে, তেমনি দক্ষিণ আমেরিকায় পাহাড়ি পথ কেটে নির্মাণ করা হয়েছে পানামা খাল। প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী খাল। এই খাল দিয়ে ৩৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। এসব জাহাজকে বলা হয়ে থাকে ‘পানাম্যাক্স’ জাহাজ। বিশ্ব সমুদ্র বাণিজ্যে বেশি পণ্য নিয়ে চলাচলকারী পানাম্যাক্স আকারের এসব জাহাজ এখন ভিড়তে পারবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে। এসব জাহাজে কনটেইনার যেমন বেশি থাকে তেমনি বাল্কেও (খোলা পণ্য আনতে ব্যবহৃত জাহাজ) বেশি পণ্য আনা যায়। সমুদ্রগামী এসব জাহাজ গভীর সমুদ্র ছাড়া অন্যান্য বন্দরে ভিড়তে পারে না। এখন সিঙ্গাপুর থেকে আসা বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ী বা কুতুবদিয়ায় ছোট জাহাজের (লাইটার জাহাজ) পণ্য খালাস করে চলে যায়। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে।
এদিকে মাতারবাড়ীতে কয়লাবাহী পণ্যের জেটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার। বর্তমানে এ জেটিতে দুটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের আওতায় আরও ৪০০ মিটার ও ৩৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি জেটি তৈরি করছে। যা আগামী জুন থেকে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। বর্তমানে কয়লাবাহী পণ্যের জেটিতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের শর্ত পূরণকারী জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ জারি করা হলো।
ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বীকৃতি পেয়ে গেছি। গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার ও ১২ দশমিক ৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে আমরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের চ্যানেলে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজও ভেড়াতে পারবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত আদেশ জারি করা হলো।’
কিন্তু চ্যানেলের গভীরতা থাকার পরও ১০ মিটারের জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ করা হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই জেটিতে তেলবাহী জাহাজ ভিড়বে। তাই আমরা ড্রাফট কমিয়ে দিয়েছি। কারণ তেলবাহী জাহাজের ড্রাফট এর বেশি হয় না।’
মাতারবাড়ী অলরেডি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য টাগবোট ও পাইলট বোটসহ যা থাকা প্রয়োজন সেগুলোর সমন্বয়ে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। আগামী মাসে আরও জাহাজ ভিড়বে।’
তবে এসব জাহাজের সবই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে ভিড়বে উল্লেখ করে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখন থেকে নিয়মিতভাবে এমন বড় জাহাজ দিয়ে কয়লা আনা হবে। এসব কয়লা দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে।’
২০১৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৪ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। তবে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ড্রাফট বাড়িয়ে ১৮ মিটারে এবং চওড়া আরও ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত এ প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশে দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ১০ মিটার। তাই বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে মাতারবাড়ীর বিকল্প নেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। কারণ বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ীতে পণ্য নিয়ে আসবে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা ভোগ করবে দেশ।
গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন ঝরছে তরতাজা প্রাণ। রাজধানী ঢাকা এবং জাতীয় সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। নানা সময়ে নানা হাঁকডাক হলেও এসবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এত ব্যর্থতার মধ্যেও হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস দেশে শৃঙ্খলিত বাস চলাচলে অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। প্রকল্প এলাকায় একটি কোম্পানির আওতায় স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস চালুর পর সাত বছরেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবরে হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্প প্রক্রিয়ার শুরু থেকে হাতিরঝিলের ভেতরে ও বাইরে বাস ঢুকতে না দেওয়ার পরামর্শ ছিল। দেশের খ্যাতিমান পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীরা প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় চক্রাকার বাসসেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। চারটি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে চলাচল করছে ১৪টি বাস। বিকল্প হিসেবে আরও ৬টি প্রস্তুত রাখা হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাসগুলো চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ৫ থেকে ৭ মিনিট অন্তর বাসগুলো স্টপেজ ছেড়ে যায়। সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা। আর পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে আসতে খরচ হয় ৪০ টাকা। এই বাসরুটের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। শুরু থেকে এইচআর ট্রান্সপোর্ট হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে। প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, দুই ধরনের বাস রয়েছে হাতিরঝিলে। ৩২ সিটের ৮টি বাস এবং ২২ সিটের ৬টি বাস। সিটগুলো রাউন্ট সিস্টেম। গোলাকার হয়ে বাসের ভেতরে বসেন যাত্রীরা। এতে খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যায়। চক্রাকার বাস সার্ভিসের স্টপেজ রয়েছে, বউবাজার, কুনিপাড়া, শুটিং ক্লাব, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট ও মধুবাগ।
১৯ এপ্রিল ২০২৩। সরেজমিন ঘুরে দেখা হয় হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। দুপুর ২টায় টিকিট নিয়ে স্টপেজের সামনে লাইনে থাকা যাত্রীরা শৃঙ্খলিতভাবে বাসে উঠলেন। সরকারি ছুটির কারণে বাসে যাত্রীর চাপ কম ছিল। আমাকে বহন করা বাসে যাত্রী ছিল ১৪ জন। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামে, যাত্রীরা নেমে যাচ্ছেন। যাত্রীদের মধ্যে কোনো হুড়োহুড়ি লক্ষ করা যায়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চড়ছেন হাতিরঝিল চক্রাকার বাসে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় বাসগুলো। এজন্য যাত্রীরা চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাসে কথা হয় মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা ডা. হাসিবুল হাসান শান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বাসে চলাচল করি। খুব দ্রুত চলাচল করা যায়। যানজটের কবলে পড়তে হয় না। শৃঙ্খলিতভাবে চলাচল করে। চলাচল আরামদায়ক। অবশ্য শহরের অন্যান্য বাসের তুলনায় এখানে ভাড়া একটু বেশি।
ওই বাসে কথা হয় বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও কারওয়ান বাজার মাছ বাজারের শ্রমিক মো. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। লুঙ্গি পরে বাসে বসা এই শ্রমিক আগ্রহী হয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসের কারণে আমরা খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি। যানজটের ধকল সামলাতে হয় না। অন্য এলাকা দিয়ে চলাচল করতে অনেক সময় লাগে।
সরকার সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে না পারায় দেশে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে কাজ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২০২২ সালে মারা গেছেন ৬ হাজার ৫৮৪ জন।
সড়কে কোন পরিবহন কত চলবে সেটা নির্ধারণ করতে পারছে না সরকার। এ জন্য বেড়ে যাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭টি। এরই মধ্যে ঢাকার যানবাহনের সংখ্যা ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ১১৪টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যমতে, পদ্মা করিডর চালু হওয়ার পর গত বছরের ২৫ জুন থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৭৯ দিনে ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ২৬৪ জন। এ হিসাব বলছে, পদ্মা করিডরে দিনে প্রায় একজন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল গণপরিবহনব্যবস্থা বিরাজমান। এ জন্য বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ^ব্যাপী কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন পরিচালনা করা হয়, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকে না। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার কারণ থাকে না। বিশ^ব্যাপী এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও এ দেশে এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বসেছে। ঢাকায় দুই মেয়র বাসরুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন। এ পদ্ধতির সফলতা দেখাতে না পারলে মানুষ এতে বিশ্বাস রাখবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শৃঙ্খলিত গণপরিবহনের একমাত্র উদাহরণ হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। প্রকল্পের শুরু থেকে বুয়েট যুক্ত ছিল। সেখানে আমরা রাজউককে পরামর্শ দিয়েছিলাম এককভাবে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে। রাজউক সেটার সফল বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যার সুফল নগরবাসী ভোগ করছেন। চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় সাত বছর সময়ে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কোনো আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করেন এইচআর ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির সুপারভাইজার শওকত হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। রাজউক আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, আমরা সেভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাত্রীরাও আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট। তবে ভাড়া একটু বেশি হওয়ায় অনেক সময় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্ধারিত এলাকায় উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করতে এর চেয়ে কম ভাড়ায় বাস চালাতে অসম্ভব হবে।
জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল ঢাকার ভেতরে হলেও এটা একটা পর্যটন এলাকা। এ জন্য শুরুতে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিসের পরামর্শ আসে। সে সময় বুয়েট এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। সবাই বাংলাদেশি, তাদের পরামর্শক্রমে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। যাত্রীরাও খুশি। পর্যটন এলাকা এবং যাত্রীসেবার মান ঠিক রাখতে সাধারণ বাসের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান তাকে স্বাগত জানান।
শিখা অনির্বাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সৈনিকদের স্মৃতিকে জাতির জীবনে চির উজ্জ্বল রাখতে এ স্মৃতিস্তম্ভে সার্বক্ষণিক শিখা প্রজ¦ালন করে রাখা হয়। খবর বাসসের।
বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা গতকাল মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৪ এপ্রিল অফিসে শপথ নেওয়ার পরে মো. সাহাবুদ্দিন অফিসে উপস্থিত হওয়ার পরও বিশ্বনেতাদের অভিবাদন অব্যাহত রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ও সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট পৃথক বার্তায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ পাঁচ বিশ্বনেতার শুভেচ্ছাসংবলিত পৃথক বার্তা গতকাল পৌঁছেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব আমাদের সবার জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করেছে। একসঙ্গে আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সম্প্রসারিত করেছি। একসঙ্গে আমরা দুর্নীতি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এভাবে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব তৈরি করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, মানবাধিকারের অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক নীতি রক্ষাসহ আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
রিপাবলিক অব ফিনল্যান্ডের প্রেসিডন্ট সাউলি নিনিস্তো তার অভিনন্দনবার্তায় বলেন, ‘আমি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অঙ্গনে আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।’
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ আশা করেন, তার (সাহাবুদ্দিন) দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় ও আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে এবং দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের পাশাপাশি যে অংশীদারত্বও রয়েছে, তা আরও সুদৃঢ় হবে।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, বেলারুশ শিল্প সহযোগিতা, যান্ত্রিক প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক পরিবহন, কৃষি, ফার্মেসি, বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
অভিনন্দনবার্তায় সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি উন্নয়ন ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় অবিচল অংশীদার ছিল ও তা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিজিবির ওপর হামলা চালিয়ে টাকাসহ আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা হয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিজিবি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ।
সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীকে আটকের জেরে রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিজিবির উপর হামলা চালিয়ে টাকাসহ দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় ৯ বিজিবি সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রবিবার সকাল ১০টার দিকে পানছড়ি ব্যাটালিয়ন (৩ বিজিবি) অধীনস্থ লোগাং বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা একটি বস্তা ও দুই যাত্রীসহ রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটি মোটরসাইকেল আটক করে। পরে তল্লাশি করে সাড়ে ১২ লাখ পাওয়া যায়। কিন্তু মোটরসাইকেল আরোহী রিংটু চাকমা ও ধনরঞ্জন চাকমা টাকার উৎস ও মালিকানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে লোগাং বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মোফাজ্জল হোসেন স্থানীয় তিন জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে টাকাসহ আসামীদের পানছড়ি থানায় সোপর্দ করার জন্য আসার পথে পুজগাং বাজার এলাকায় ৫/৬ শতাধিক গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে বিজিবির দুটি গাড়ীর গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীরা হামলায় চালিয়ে টাকা ও আসামীদের ছিনিয়ে নেয়। সেইসঙ্গে বিজিবির গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পানছড়ি ব্যাটালিয়ন (৩ বিজিবির) অধিনায়ক লে.কর্নেল একে এম আরিফুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রীয় ও জানমাল রক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা অন্তত ১৩ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে সুমন চাকমা নামে এক হামলাকারীকে আটক করে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রিংটু চাকমা ও ধনরঞ্জন চাকমা পানছড়ি সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য।
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।