
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানোর পর এবার নিয়মিতভাবে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বার্থিং আদেশ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে, মাতারবাড়ী চ্যানেলে কয়লাবাহী একটি জেটিতে ২৩০ মিটার দীর্ঘ ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং অন্য জেটিতে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ (তেলবাহী) ভেড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য একটি অস্থায়ী জেটিতে (লাইটার জাহাজ ভেড়ানোর জন্য) ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে বলা হয়েছে। আর এ আদেশ বিশে^র বিভিন্ন বন্দর থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক আদেশ বলেই বিবেচিত। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরেরও যাত্রা হয়ে গেল। এই নীল চ্যানেল দিয়েই আগামীর অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ।
গভীর সমুদ্রবন্দরটি হওয়ার কথা ছিল সোনাদিয়ায়। ২০১৬ সালে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করে জাপান। আর সেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আরও যুগোপযোগী করতে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে জেটি নির্মাণে। ফলে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের অংশীদার এখন জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে জাপান সফর করছেন। আর এ সময়ে যাত্রা হলো গভীর সমুদ্রবন্দরের।
গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূরাজনীতির কথা উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ভূরাজনীতির কারণেই সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হয়নি। জাপানের বিগ বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ)-এর আওতায় মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং আর তা ব্যবহার করে এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের যুগে দেশ।’
গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে মাতারবাড়ীর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাতারবাড়ী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেভিগেশন হাব। এখান থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডে পণ্য পাঠানো যাবে। আর সেই পথেই এগোচ্ছে মাতারবাড়ী।’
মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেল যেমন তৈরি করা হয়েছে, তেমনি দক্ষিণ আমেরিকায় পাহাড়ি পথ কেটে নির্মাণ করা হয়েছে পানামা খাল। প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী খাল। এই খাল দিয়ে ৩৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। এসব জাহাজকে বলা হয়ে থাকে ‘পানাম্যাক্স’ জাহাজ। বিশ্ব সমুদ্র বাণিজ্যে বেশি পণ্য নিয়ে চলাচলকারী পানাম্যাক্স আকারের এসব জাহাজ এখন ভিড়তে পারবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে। এসব জাহাজে কনটেইনার যেমন বেশি থাকে তেমনি বাল্কেও (খোলা পণ্য আনতে ব্যবহৃত জাহাজ) বেশি পণ্য আনা যায়। সমুদ্রগামী এসব জাহাজ গভীর সমুদ্র ছাড়া অন্যান্য বন্দরে ভিড়তে পারে না। এখন সিঙ্গাপুর থেকে আসা বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ী বা কুতুবদিয়ায় ছোট জাহাজের (লাইটার জাহাজ) পণ্য খালাস করে চলে যায়। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে।
এদিকে মাতারবাড়ীতে কয়লাবাহী পণ্যের জেটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার। বর্তমানে এ জেটিতে দুটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের আওতায় আরও ৪০০ মিটার ও ৩৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি জেটি তৈরি করছে। যা আগামী জুন থেকে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। বর্তমানে কয়লাবাহী পণ্যের জেটিতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের শর্ত পূরণকারী জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ জারি করা হলো।
ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বীকৃতি পেয়ে গেছি। গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার ও ১২ দশমিক ৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে আমরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের চ্যানেলে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজও ভেড়াতে পারবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত আদেশ জারি করা হলো।’
কিন্তু চ্যানেলের গভীরতা থাকার পরও ১০ মিটারের জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ করা হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই জেটিতে তেলবাহী জাহাজ ভিড়বে। তাই আমরা ড্রাফট কমিয়ে দিয়েছি। কারণ তেলবাহী জাহাজের ড্রাফট এর বেশি হয় না।’
মাতারবাড়ী অলরেডি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য টাগবোট ও পাইলট বোটসহ যা থাকা প্রয়োজন সেগুলোর সমন্বয়ে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। আগামী মাসে আরও জাহাজ ভিড়বে।’
তবে এসব জাহাজের সবই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে ভিড়বে উল্লেখ করে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখন থেকে নিয়মিতভাবে এমন বড় জাহাজ দিয়ে কয়লা আনা হবে। এসব কয়লা দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে।’
২০১৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৪ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। তবে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ড্রাফট বাড়িয়ে ১৮ মিটারে এবং চওড়া আরও ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত এ প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশে দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ১০ মিটার। তাই বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে মাতারবাড়ীর বিকল্প নেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। কারণ বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ীতে পণ্য নিয়ে আসবে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা ভোগ করবে দেশ।
গত তিন মাসে দেশের শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানির অর্ধশতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফ, অপসোনিন, ইনসেপ্টা, এরিস্টোফার্মা, সানোফি, রেডিয়েন্ট, রেনেটো ও একমি। এসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত এসব ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা উপশম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল, ঠান্ডা, কাশি, হাঁপানি, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, আমাশয়, জ্বর ও ডায়াবেটিসের ওষুধ। এ ছাড়া জন্মনিরোধক সামগ্রী কনডম, ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন ও স্ট্রিপ, নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিনের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগ ও মগবাজারের ওষুধের বাজার ঘুরে ও ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, ডলারের দাম বাড়ায় টাকার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও বিদ্যুৎ সবকিছুতেই দাম বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে ওষুধের মূল্য সমন্বয় হয়নি। সে জন্য তারা এটাকে মূল্যবৃদ্ধি না বলে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে দামের সমন্বয় বলছেন।
এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে গত জুনে ৫৩টি ওষুধের দাম সমন্বয় করেছে সরকার। এ রকম ১১৭টি জেনেরিকের বিভিন্ন ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ওষুধগুলোর মূল্যবৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলো আবেদন করে। আমরা সেটা যৌক্তিক হলে অনুমোদন দিয়ে দিই। কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই মূল্যবৃদ্ধি করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের জুনের দিকে প্রথম যখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়াল, এরপর থেকে ‘টপ টেন’ (শীর্ষ ১০) কোম্পানির অন্যান্য ওষুধের দামও বাড়ছে। যাদের প্রাত্যহিক ওষুধ লাগে, দাম বাড়লেও তাদের ওষুধ কিনতে হবেই। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীরা মাঝারি মানের যেসব কোম্পানি আছে, তাদের ওষুধ কম দামে কিনবেন। মানহীন ওষুধের দিকে ঝুঁকবেন। স্কয়ারের, সর্বোচ্চ ৮২% : শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে স্কয়ার কোম্পানির ওষুধ। ১৮ ধরনের ওষুধের সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শিশুদের নাকের ড্রপ এন্টাজল (০০.৫%) ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাকের ড্রপ এন্টাজলের (০.১%)। প্রথমটি ১১ থেকে ১৮ টাকা ও দ্বিতীয়টি ১১ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এই ওষুধের দাম যথাক্রমে ৬৪ ও ৮২ শতাংশ বেড়েছে।
আমাশয় রোগীদের পেটের সমস্যায় ব্যবহৃত প্রতি পিস প্রোবায়ো ক্যাপসুল ১৬ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৯ টাকা বা ৫৬ শতাংশ। ডায়াবেটিসের প্রতিটি কমপ্রিট (৪০ এমজি) ট্যাবলেট ৭ থেকে ৮, কাশির তুসকা প্লাস (১০০ মিলি) সিরাপ ৮০ থেকে ৮৫ ও ক্যালসিয়ামের এক কৌটা নিউরো-বি ট্যাবলেটের দাম ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অ্যান্টাসিড প্লাস ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ (২০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ ও সেফ-৩ (৪০০ মিগ্রা) ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট বিসকোর (২.৫ মিগ্রা) ৬ থেকে ৭ ও অ্যালার্জির প্রতিটি ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেফোটিল প্লাস (৫০০ এমজি) এক পাতা (১২টা) ৫০ থেকে ৬০ ও মোক্সাসিল (১০০ মিলি) সিরাপ ৪৭ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট জিম্যাক্স (৫০০ মিগ্রা) প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ ব্রংকাইটিস এবং নিউমোনিয়াসহ নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত ক্যালবো-ডি ট্যাবলেটের একটি কৌটা (৩০টি) ২১০ থেকে ২৪০ টাকা হয়েছে। ঠান্ডা, সর্দি, চুলকানি ও অ্যালার্জির ট্যাবলেট ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। কাশির সিরাপ ওকফ ১০০ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫% বেক্সিমকোর : এই কোম্পানির চার ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিশুদের জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা ড্রপ ও নাপা সিরাপ (৬০ মিলি)। প্রথমটি ১৫ থেকে ২০ টাকা ও দ্বিতীয়টি ২০ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে। এই দুই ড্রপের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ। অ্যাটোভা (১০ মিগ্রা) ট্যাবলেটের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা ও অ্যাটোভা (২০ মিগ্রা) ১৮ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এ ওষুধ দুটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হয় ও প্রচুর বিক্রি হয়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দাম দুই কোম্পানির : মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় নম্বরে আছে এসকেএফ ও অপসোনিন। এই দুই কোম্পানির প্রচুর বিক্রি হয় এমন চারটি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসকেএফের তৈরি শিশুদের জিংক সিরাপ (১০০ মিলি) ৩৫ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস বিসলল-ম্যাক্স (২.৫ এমজি) ট্যাবলেট ৬ থেকে ৮ ও ১৪টির এক পাতা বিসলল (৫ এমজি) ট্যাবলেট ৮৪ থেকে ১১২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের প্রতিটি ফিনিক্স (২০ এমজি) ট্যাবলেট ৫ থেকে ৭ টাকা হয়েছে।
সর্বোচ্চ ২৫-৩৩% তিন কোম্পানির : তিন কোম্পানির ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে। এই ওষুধগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে ইনসেপ্টার তৈরি উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস ওসারটিল (৫০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ১০ ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ওমিডন (১০ এমজি) ৩ থেকে ৪ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
এরিস্ট্রোফার্মার মাল্টিভিটামিন ১৫টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ১০৫ থেকে ১৩৫ ও ৩০টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ২১০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স লিনাগ্লিপ (৫ মিগ্রা) ৬০০ থেকে ৬৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স রুভাসটিন (৫ মিগ্রা) ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা হয়েছে।
সানোফি কোম্পানির ডায়াবেটিক রোগীদের লেনটাস ফ্লেক্সপেন ইনসুলিন ১২২০ থেকে ১৫০০ টাকা ও লেনটাস পেনফিল রিফিল ৭৮৪ থেকে ৯৮২ টাকা হয়েছে।
প্রায় সব ওষুধের দাম বেড়েছে রেডিয়েন্টের : ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রেডিয়েন্ট ফার্মার প্রায় সব ওষুধের দামই বেড়েছে। এসব ওষুধের বিক্রিও বেশি। এমন কিছু ওষুধ আছে, যার বিক্রি দেশের তিন শীর্ষ ওষুধ কোম্পানির বিক্রির চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঘুমের ওষুধ রিভোট্রিল (০.৫ মিগ্রা) ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০, রিভোট্রিল (১ মিগ্রা) ৯০ থেকে ১১০ ও রিভোট্রিল (২ মিগ্রা) ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
এই কোম্পানির আরেকটি ঘুমের ওষুধ লেক্সোটানিল (৩ মিগ্রা) এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি জাতীয় ট্যাবলেট কোরালক্যাল-ডি’র এক পাতা ১১০ থেকে ১২০ ও কোরালক্যাল-ডিএক্স ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে। মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ঠা-ার ওষুধ জাইফ্লো (১০ মিগ্রা) এক পাতা ট্যাবলেট (১০টা) ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়েছে। পেইনকিলার ন্যাপ্রোসিন (৫০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট এক পাতা (১০টা) আগে ছিল ১৫০, এখন ১৬০ টাকা।
দাম বেড়েছে স্যালাইন ও কনডমের : এসএমসি কোম্পানির মুখে খাওয়ার স্যালাইন ওরস্যালাইন-এন প্রতি প্যাকেটের দাম ১ থেকে ৬ টাকা হয়েছে। একই কোম্পানির জন্মনিরোধক সামগ্রী সেনসেশন কনডম প্রতি প্যাকেট ২৫ থেকে ৪০, প্যানথার কনডম ১৫ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের কনডমের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৬০ ও ৬৬ শতাংশ।
একমি ও রেনেটারও দাম বাড়িয়েছে : একমি কোম্পানির মন্টিকুলাস্ট গ্রুপের অ্যালার্জি ও ঠা-ার ওষুধ মোনাস (১০ মিগ্রা) প্রতি ট্যাবলেটের দাম ১৬ থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। রেনেটার তৈরি অ্যালার্জির প্রতি পিস ফেনাডিন (১২০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ।
বেড়েছে অন্যান্য সামগ্রীর দাম : ওষুধ বিক্রেতারা জানান, জার্মানের নামকরা কোম্পানি অ্যাকু-চেক উৎপাদিত ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন অ্যাকু-চেকের দাম আগে ছিল ২৬৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৩২০০ টাকা। একই কোম্পানির সুগার মাপার স্ট্রিপ অ্যাকু-কে স্ট্রিপ ১১২০ থেকে ১৩০০ টাকা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও আমদানি করা নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিন প্রতিটির দাম কমবেশি ৫০০-৭০০ টাকা বেড়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অনিয়ম থামছেই না। টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। বেবিচকের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও দুর্নীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে নেই।
দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অনিয়ম থামাতে একের পর এক নজরদারি করলেও কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখা বেশি দুর্নীতিতে জড়িত। ছদ্মনামে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই শাখার শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা পর্যন্ত টেন্ডারে ভাগ বসাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার লোকজনও প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চোখ পড়েছে তাদের ওপর। আপাতত ৮২ কর্মকর্তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নোটিস দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। সময়মতো তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক মাস আগে বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৭টি প্রকল্প কাজের যাবতীয় নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে সাত ধরনের প্রকল্প কাজসহ ৯ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। এলটিএমের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার ওপরে সম্পাদিত কাজের ছক প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ ও পরিশোধিত অর্থের বিল-ভাউচার, টার্মিনাল ভবনের ছাদে ওয়াটারপ্রুফ কাজের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার; বেবিচকের কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার, বেবিচকের এমটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের ফটোকপি ও ডিভিশন-৩-এর ভবনের সিকিউরিটি গেট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারসহ ওই প্রকল্পের নথির ফটোকপি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমপোর্ট কার্গো ভবনের পার্কিং শেড নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও পরিশোধিত বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বেবিচকের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে শাহজালাল, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫ প্রকল্পের ফাইল তলব করা হয়েছিল। তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক জাহিদ কামাল নথিপত্র তলব করেছিলেন। ওই সময় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা। আবারও বিষয়টি সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স নীতি। যারা অপরাধ করবে তারা শাস্তি পাবেই। দুদককে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বেবিচকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রকৌশল শাখাসহ সব বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুদক বেবিচক ও বিমানের কর্মকা- নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কোন কোন খাতে বেশি দুর্নীতি হয় সেই তথ্য উদঘাটন করে সংস্থাটি। বেবিচকের ৩৬টি খাত নিয়ে বেশি অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেবাকে বাণিজ্য বানিয়ে কেউ কেউ অর্থ কামাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দুদক একটি তালিকা করেছে। তালিকায় বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার কন্ডিশনার ডাক্ট স্থাপন, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আপগ্রেডেশন, বিমানবন্দরে কাউন্টার এবং কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন, তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ, নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, পুরাতন বোর্ডিং ব্রিজের যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও স্থাপন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনের জন্য এলইডি লাইট কেনা ও ফিটিংস, বাগানে আলোকসজ্জা, এইচটি ও এলটি সুইচগিয়ার স্থাপন কাজের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তাছাড়া বিমানবন্দরের ফ্লোর মাউন্টেড এবং ওয়াল মাউন্টেড প্যানেল স্থাপন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সাইজের পাওয়ার ক্যাবল সরবরাহ, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, রানওয়ে, টেক্সিওয়ে, এপ্রোন লাইট ও লাইট ফিটিংস সরবরাহ, আবাসিক ভবনে ইন্টারনাল ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ, সিএএবির নতুন সদর দপ্তরের ভবনে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট সরবরাহসহ ইএম সংক্রান্ত কাজ, টার্মিনাল বিল্ডিংসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য ভবনের ডেকোরেশন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইএম কাজ, বিভিন্ন স্থানে এপ্রোন মাস্ট লাইট স্থাপন, সিসিআর বিল্ডিং-সংশ্লিষ্ট সব ইএম কাজ, রানওয়ে লাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন সাইজের কেব্ল সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের পেছনে ছিলেন বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।
পাশাপাশি বিমানের কাছে বছরের পর বছর আটকে থাকা বকেয়ার তিন হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা আদায় এবং এর পেছনের কারণ জানতে মাঠে নেমেছে দুদক। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর বিমানের কাছে চিঠি দিলেও কোনো জবাব পায়নি তারা। পরে আবারও চিঠি দেয় দুদক। বাধ্য হয়ে বিমান সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আগামী মাসে বলাকা ও বেবিচক কার্যালয়ে যাবেন দুদক কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টাওয়ার বোর্ডিং ব্রিজসহ বড় বড় কেনাকাটা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের দোকান ও বিলবোর্ড ভাড়া, পরামর্শক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণসহ নানা খাতে দুর্নীতি হয়েছে। বেবিচকের অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশে একাধিক বাড়ি রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক রেখে কাজের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে যেনতেন কাজের মাধ্যমে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। ছদ্মনামে তারা টেন্ডার ভাগান। আবার নানা পেশার মানুষ প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের তালিকাও আমরা করছি। ইতিমধ্যে বিমান ও বেবিচকের ৮২ কর্মকর্তার প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রামস বিভাগের সিনিয়র ড্রাফটম্যান আবদুস সোবহান ও তার স্ত্রী মিসেস সালমাকে দুদক চিঠি দিয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেবিচকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক।’
বেবিচকের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা পেশার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের কাছে আমরা অসহায়। তাদের কথা না শুনলে পত্রপত্রিকায় আজেবাজে সংবাদ ছাপিয়ে দেওয়া হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করছে। কারা কারা এসব অপকর্ম করছে তাদের নামও দুদককে আমরা জানিয়েছি। আর এসবের পেছনে আমাদের শীর্ষ কর্তারা জড়িত। বিষয়টি আমরা দুদককে অবহিত করেছি। দুদকও বলেছে, তারা বিষয়টির নজরদারি করছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের নোটিসে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা তদবিরও করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বেশি পরিমাণে বিশাল আকারের জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকারের বাস্তবসম্মত নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির এক আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে।
টোকিওতে ওয়েস্টিন হোটেলের গ্যালাক্সি বলরুমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের উদ্বোধনকালে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বাস্তবসম্মত নীতি এবং দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে রপ্তানির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) বিনিময় করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ও অ-আর্থিক নীতি ও প্রণোদনা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, বিচক্ষণ শাসন ও নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অটুট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীসহ বিশ্বের সব বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগগুলো দেখার জন্য স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘তবে প্রকৃত বিনিয়োগ এখনো কম। আমরা জাপানের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ যেটি নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তার একটি বৃহৎ বাজারের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ প্রদান করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের মনে করিয়ে দেন যে, যেহেতু তারা সচেতন যে কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং এখনো অস্থির বিশ্ব আর্থিক পরিস্থিতি এবং সরবরাহের দিকের সীমাবদ্ধতার চাপকে ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করছি।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি, ইলেকট্রনিকস, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ অনেক বেড়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সরকার ব্যবসা করার উপায়গুলো সাবলীল, সহজতর এবং কার্যকর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তার সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ আপনাদের জন্য প্রস্তুত এবং সেখানে গেলে আপনাদের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আপনারা ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা এবং কাঠামো সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপের (পিপিইডি) মতো উচ্চপর্যায়ের যৌথ প্ল্যাটফরম রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ১১ এপ্রিল ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম পিপিইডি বৈঠকের ফলাফলকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে স্নাতক হতে চলেছে, আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্ভব করার জন্য জাপানের সঙ্গে কাজ করছি।’
বাংলাদেশি ও জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যেসব কোম্পানি আজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আমি তাদের সফল অংশীদারত্ব কামনা করছি। আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিশেষ করে আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ আশা করি।’
জাপানে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তাদের রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
গত বছর বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বিস্ময়করভাবে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া জাপানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।
আলোচনার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্রুতই জাপান আমাদের নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফর করেন এবং দুদেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেইটিআরও) চেয়ারম্যান ইশিগুরো নোরিহিকো, জেসিসিআইর কেন কোবায়াশিসহ জাপান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-টোকিও বিনিয়োগ সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে নেওয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছর এবং তারপরও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন, আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
গতকাল সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ (গতকাল) আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি হয়েছি। এটি আমাদের বন্ধুপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে দুদেশের মধ্যকার ‘দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব’ এবং ‘ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউজে গতকাল চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই মহৎ অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যেখানে আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করছি না, বরং জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার স্বার্থে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সেসব মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত মহৎ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেসব জাপানি নাগরিক ছিলেন তারাও আজ (গতকাল) আমাদের সঙ্গে আছেন। এটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের জনগণ তখন বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তালিকায় আটজন সম্মানিত ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সঞ্চালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তারা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহীতাদের পক্ষে অধ্যাপক গ্যালপ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ঢাকা-টোকিওর গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও একমত হয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি আশ্রয়দাতা কমিউনিটির ওপর চাপ বাড়াবে এবং এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি ‘টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা এই বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য এই বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান করে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ এই বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জন্য জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাদের প্রতি জাপানের ক্রমাগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ভাসানচরসহ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আনুমানিক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইয়েনের ওপরে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ববর্তী সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাবাসনের পর তাদের স্বনির্ভর জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের গুরুত্বের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের ভিত্তিতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি তাদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুতর সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক সংস্কারসহ জাতিসংঘকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা জাপানের স্থায়ী সদস্য হওয়াসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারে ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে বিশ্বমানের শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে জাপান : বিশ্বখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো কর্র্তৃক প্রতিষ্ঠিত তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ঢাকায় একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে। টোকিওতে আকাসাকা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাদাওয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ কথা জানায়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (বিএনএম) এবং তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন বিএনএম মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং তাদাও আন্দো। জাপানের অনুদানে বাংলাদেশে একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য এ এমওইউ সই হয়।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং বীরদের গৌরব সংরক্ষণের জন্য সারা দেশে জাদুঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে সংরক্ষণ করতে সরকার তার বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করেছে।
তাদাও আন্দো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, কারণ তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং জনগণের কোনো উন্নয়ন চায় না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না। বিএনপি কোন মুখ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং নির্বাচনের ন্যায্যতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তারা ২০টি দল, কিন্তু তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং পরে তারা উপনির্বাচনে আরও একটি আসন পেয়েছিল।’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয়ের ভয়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল ওয়েস্টিন টোকিওতে আয়োজিত জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যারা দেশে গণতন্ত্র দেখে না এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ হত্যার পর লাশ গুম করে তাদের পক্ষ নিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, তাদের কোনো মানবাধিকার ছিল না কারণ তারা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তার মা ও ভাইদের হত্যার পরেও মামলা করতে পারেনি কারণ খুনিরা ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা শাস্তির বদলে উপহার পেয়েছে। বাসস
গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন ঝরছে তরতাজা প্রাণ। রাজধানী ঢাকা এবং জাতীয় সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। নানা সময়ে নানা হাঁকডাক হলেও এসবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এত ব্যর্থতার মধ্যেও হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস দেশে শৃঙ্খলিত বাস চলাচলে অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। প্রকল্প এলাকায় একটি কোম্পানির আওতায় স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস চালুর পর সাত বছরেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবরে হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্প প্রক্রিয়ার শুরু থেকে হাতিরঝিলের ভেতরে ও বাইরে বাস ঢুকতে না দেওয়ার পরামর্শ ছিল। দেশের খ্যাতিমান পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীরা প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় চক্রাকার বাসসেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। চারটি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে চলাচল করছে ১৪টি বাস। বিকল্প হিসেবে আরও ৬টি প্রস্তুত রাখা হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাসগুলো চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ৫ থেকে ৭ মিনিট অন্তর বাসগুলো স্টপেজ ছেড়ে যায়। সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা। আর পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে আসতে খরচ হয় ৪০ টাকা। এই বাসরুটের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। শুরু থেকে এইচআর ট্রান্সপোর্ট হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে। প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, দুই ধরনের বাস রয়েছে হাতিরঝিলে। ৩২ সিটের ৮টি বাস এবং ২২ সিটের ৬টি বাস। সিটগুলো রাউন্ট সিস্টেম। গোলাকার হয়ে বাসের ভেতরে বসেন যাত্রীরা। এতে খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যায়। চক্রাকার বাস সার্ভিসের স্টপেজ রয়েছে, বউবাজার, কুনিপাড়া, শুটিং ক্লাব, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট ও মধুবাগ।
১৯ এপ্রিল ২০২৩। সরেজমিন ঘুরে দেখা হয় হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। দুপুর ২টায় টিকিট নিয়ে স্টপেজের সামনে লাইনে থাকা যাত্রীরা শৃঙ্খলিতভাবে বাসে উঠলেন। সরকারি ছুটির কারণে বাসে যাত্রীর চাপ কম ছিল। আমাকে বহন করা বাসে যাত্রী ছিল ১৪ জন। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামে, যাত্রীরা নেমে যাচ্ছেন। যাত্রীদের মধ্যে কোনো হুড়োহুড়ি লক্ষ করা যায়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চড়ছেন হাতিরঝিল চক্রাকার বাসে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় বাসগুলো। এজন্য যাত্রীরা চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাসে কথা হয় মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা ডা. হাসিবুল হাসান শান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বাসে চলাচল করি। খুব দ্রুত চলাচল করা যায়। যানজটের কবলে পড়তে হয় না। শৃঙ্খলিতভাবে চলাচল করে। চলাচল আরামদায়ক। অবশ্য শহরের অন্যান্য বাসের তুলনায় এখানে ভাড়া একটু বেশি।
ওই বাসে কথা হয় বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও কারওয়ান বাজার মাছ বাজারের শ্রমিক মো. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। লুঙ্গি পরে বাসে বসা এই শ্রমিক আগ্রহী হয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসের কারণে আমরা খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি। যানজটের ধকল সামলাতে হয় না। অন্য এলাকা দিয়ে চলাচল করতে অনেক সময় লাগে।
সরকার সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে না পারায় দেশে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে কাজ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২০২২ সালে মারা গেছেন ৬ হাজার ৫৮৪ জন।
সড়কে কোন পরিবহন কত চলবে সেটা নির্ধারণ করতে পারছে না সরকার। এ জন্য বেড়ে যাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭টি। এরই মধ্যে ঢাকার যানবাহনের সংখ্যা ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ১১৪টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যমতে, পদ্মা করিডর চালু হওয়ার পর গত বছরের ২৫ জুন থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৭৯ দিনে ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ২৬৪ জন। এ হিসাব বলছে, পদ্মা করিডরে দিনে প্রায় একজন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল গণপরিবহনব্যবস্থা বিরাজমান। এ জন্য বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ^ব্যাপী কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন পরিচালনা করা হয়, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকে না। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার কারণ থাকে না। বিশ^ব্যাপী এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও এ দেশে এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বসেছে। ঢাকায় দুই মেয়র বাসরুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন। এ পদ্ধতির সফলতা দেখাতে না পারলে মানুষ এতে বিশ্বাস রাখবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শৃঙ্খলিত গণপরিবহনের একমাত্র উদাহরণ হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। প্রকল্পের শুরু থেকে বুয়েট যুক্ত ছিল। সেখানে আমরা রাজউককে পরামর্শ দিয়েছিলাম এককভাবে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে। রাজউক সেটার সফল বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যার সুফল নগরবাসী ভোগ করছেন। চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় সাত বছর সময়ে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কোনো আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করেন এইচআর ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির সুপারভাইজার শওকত হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। রাজউক আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, আমরা সেভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাত্রীরাও আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট। তবে ভাড়া একটু বেশি হওয়ায় অনেক সময় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্ধারিত এলাকায় উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করতে এর চেয়ে কম ভাড়ায় বাস চালাতে অসম্ভব হবে।
জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল ঢাকার ভেতরে হলেও এটা একটা পর্যটন এলাকা। এ জন্য শুরুতে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিসের পরামর্শ আসে। সে সময় বুয়েট এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। সবাই বাংলাদেশি, তাদের পরামর্শক্রমে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। যাত্রীরাও খুশি। পর্যটন এলাকা এবং যাত্রীসেবার মান ঠিক রাখতে সাধারণ বাসের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান তাকে স্বাগত জানান।
শিখা অনির্বাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সৈনিকদের স্মৃতিকে জাতির জীবনে চির উজ্জ্বল রাখতে এ স্মৃতিস্তম্ভে সার্বক্ষণিক শিখা প্রজ¦ালন করে রাখা হয়। খবর বাসসের।
বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা গতকাল মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৪ এপ্রিল অফিসে শপথ নেওয়ার পরে মো. সাহাবুদ্দিন অফিসে উপস্থিত হওয়ার পরও বিশ্বনেতাদের অভিবাদন অব্যাহত রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ও সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট পৃথক বার্তায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ পাঁচ বিশ্বনেতার শুভেচ্ছাসংবলিত পৃথক বার্তা গতকাল পৌঁছেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব আমাদের সবার জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করেছে। একসঙ্গে আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সম্প্রসারিত করেছি। একসঙ্গে আমরা দুর্নীতি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এভাবে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব তৈরি করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, মানবাধিকারের অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক নীতি রক্ষাসহ আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
রিপাবলিক অব ফিনল্যান্ডের প্রেসিডন্ট সাউলি নিনিস্তো তার অভিনন্দনবার্তায় বলেন, ‘আমি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অঙ্গনে আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।’
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ আশা করেন, তার (সাহাবুদ্দিন) দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় ও আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে এবং দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের পাশাপাশি যে অংশীদারত্বও রয়েছে, তা আরও সুদৃঢ় হবে।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, বেলারুশ শিল্প সহযোগিতা, যান্ত্রিক প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক পরিবহন, কৃষি, ফার্মেসি, বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
অভিনন্দনবার্তায় সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি উন্নয়ন ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় অবিচল অংশীদার ছিল ও তা অব্যাহত থাকবে।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।