
সরকার বাজেট নীতিমালা থেকে শুরু করে, কর নীতিমালা গ্রহণে কোনো অংশীজনের সঙ্গে কথা না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ফলে অদক্ষ প্রশাসন লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে সক্ষম হয় না। অবস্থা এখন এমন যে, আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার নিজেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্যাক্সিং দ্য ডিজিটাল ইকোনমি : ট্রেডি-অবস অ্যান্ড অপরচুনিটি শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এনবিআরের অদক্ষতার কারণেই আমরা এখন আইএমএফের প্রোগ্রামের আওতায় চলে গেছি। আইএমএফের যতগুলা শর্ত আছে এর মধ্যে তিনটি শর্ত সম্পূর্ণ একে অপরের পরিপূরক। এক, কর-জিডিপির অনুপাত। প্রতি বছর হাফ পার্সেন্ট করে বাড়াতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা কীভাবে বাড়াব। তিনি বলেন, দ্বিতীয় হলো ব্যয়ের বিষয়। এটা তারা বের করবে। তৃতীয় হলো আপনার প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটা বিদ্যুতের দাম না, সারের দাম না যে অর্ডার দিলাম আর বেড়ে গেল।
ড. দেবপ্রিয় সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমরা যারা অর্থনীতিবিদ আছি, অ্যানালিস্ট, পেশাজীবীরা আছি, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা আছি- তারা চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু কারও কথাই কানে নেওয়া হচ্ছে না, তাহলে আইএমএফের প্রোগ্রাম দিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। শুধু অর্থ পাওয়ার জন্য আমাদের নীতি- সার্বভৌমত্বকে আমরা ক্ষুন্ন করেছি। এখন সংকটটাই পরামর্শ পাওয়ার একমাত্র রাস্তা।
এখন দেশের অর্থনীতিতে প্যারাডক্সিক্যাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আপনারাই বলেন, সরকার আইএমএফের ঋণ নেওয়ার আগে কারও সঙ্গে কি আলোচনা করেছে? কোনো অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেছে? এমনকি মন্ত্রীসভায়ও আলোচনা হয়েছে? পার্লামেন্টারি সাব-কমিটিও কি জানত? আমার কথা হলো রাজনৈতিক স্যাটলম্যান্ট ছাড়া বা অংশীজনদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব না।
এ অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশে একটি বড় ফ্যাক্টর হলো মানব সম্পদ। আমাদের যে তরুণরা বের হচ্ছে, তারা যদি যথেষ্ট দক্ষতা নিয়ে না আসে, এ গোল্ডেন ফাইভের কোনো দাম নেই।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এখন পাঁচটি জায়গায় আমাদের নীতি নির্ধারণ করতে হবে। স্বচ্ছতা, সরকারের এত এত নিয়মনীতি স্বচ্ছভাবে সামনে আনতে হবে। নিরপেক্ষতা আনতে হবে, তৃতীয়ত, সাম্যতা আনতে হবে। ছোটদের কাছ থেকে বেশি ট্যাক্স নিলেন বড়দের থেকে কম নিলেন তা হবে না। চতুর্থ, দক্ষতা বাড়ানো দরকার। শেষটি হলো- সবকিছু সহজ হতে হবে। যেমন ঠাকুরগাঁওয়ের ফ্রিল্যান্সাররা জানেই না যে তারা কত বড় মেধাস্বত্ব রক্ষা করছে।
এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে, যাদের অর্থনীতিতে উপস্থিতি থাকলেও করের দৃষ্টিকোণ থেকে অংশগ্রহণ নেই।
সেমিনারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ডিজিটাল ইকোনমি আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও কর অনুপাত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে, যাদের উপস্থিতি আছে কিন্তু রাজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে নেই। সে বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে যৌক্তিকভাবে ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে তাদেরকে করের আওতায় আনা যায় সেটা দেখতে হবে। সেটার জন্য প্রতিষ্ঠান ও আইনগত প্রস্তুতি দরকার, সেটাও নিতে হবে। তাদেরকে কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে ডব্লিউটিয়ের পক্ষ থেকেও প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। আমাদের ইকোনমির বড় অংশ ডিজিটাল ইকোনমি হবে। এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ সম্পদের মাধ্যমে কীভাবে রাজস্ব বাড়াতে পারি, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় সামনে চলে এসেছে। আমি বলব অনেক আগেই এসেছে।
সেমিনারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, আগে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত কেন কম হচ্ছে, কোথায় কোথায় লিকেজ আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু রাজস্ব আদায় কেন বাড়ছে না, সেটা জাতীয় সংসদেও আলোচনা হওয়া দরকার। লিকেজগুলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আলোচনা হওয়া দরকার। সিপিডিও এ বিষয়ে গবেষণা করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করলাম কিন্তু টোল আদায়ের দায়িত্ব দিলাম বিদেশিদের। কেন? আমি খরচ অনেক বৃদ্ধি করেছি, কিন্তু আয়ের উৎস কেন বাড়ছে না, সেই হিসাব মেলাতে হবে। ফেসবুক ও গুগলসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিষয়ে নীতিমালা দরকার।
এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ডিজিটাল ইকোনমির সঙ্গে মনস্তাত্বিকভাবে সমস্যা তৈরি করছে। এর ফলে অনেক কথা বলা যাচ্ছে না। এমনকি লেখালেখির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনেকটা বিশেষ ক্ষমতা আইন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সংস্কার করা প্রয়োজন, ডিজিটাল কথাটা গুরুত্বপূর্ণ, এটার জন্য সাইবার সিকিউরিটি আইন হতে পারে।
ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলে বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব নেই। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশের মধ্যে। এখান থেকে অর্থ আসার পরিমাণও জানা নেই। এসব ক্ষেত্রে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পেপ্যালের মতো গেটওয়ের সুবিধা প্রয়োজন। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে, করারোপ বা প্রণোদনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে গতানুগতিক অঙ্গীকার থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ মতো আসছে বাজেটে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ ছাড়া উৎসে করে ছাড় না দেওয়া এবং সুপার শপে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টানার কোনো আভাস নেই।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনি এবং সব ধরনের ফল সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর বহাল থাকছে। বিদ্যমান উৎসে করে ছাড় দেওয়া হলে পণ্যের দাম কমাতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা।
চেইন শপে পণ্য কিনতে প্রতি পণ্যে ভোক্তাকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। পাশাপাশি চেইন শপ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার কারণে ক্রেতাকে নিয়মিত দামের বাইরে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, যা আগামী অর্থবছরেও বহাল থাকছে।
এ ছাড়া আইএমএফের ঋণ পেতে সংস্থার শর্ত অনুসারে আসছে বাজেটে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে এনবিআর। বর্তমানে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য এবং উৎপাদন খাতে পোশাকশিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২-এর প্রথম তফসিল অনুযায়ী প্রায় ৪৮৯ এইচএস কোডভুক্ত প্রাথমিক পণ্য, জীবন ধারণের জন্য মৌলিক পণ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। আসছে বাজেটে আইএমএফের সুপারিশে এই পণ্যের অনেকগুলো ভ্যাটের আওতায় আসবে। অর্থাৎ পণ্য কিনতে হলে ক্রেতাকে এসব পণ্য বেশি দামে কিনতে হবে।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে অতীতের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অঙ্গীকার করা হলেও থাকছে না কার্যকর কঠোর নির্দেশ।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেট। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে লাগাম টানার চেষ্টা করা উচিত। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কারণে কষ্টে আছেন। আন্তর্জাতিক বাজার সরকারের হাতে না থাকলেও দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে পদক্ষেপ নিতে পারে।
মাস-ছয়েক ধরে দেশের বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। দাম বাড়ায় বিপাকে আছেন সাধারণ মানুষ। আগামী অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ে অতীতে যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা আদায় করতে গিয়ে এনবিআর ছাড় দিতে রাজি না।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা-৫২-এর বিধি ১৬ ১(বি) অনুসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যসামগ্রী যেমনÑ চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনি এবং সব ধরনের ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে ২ শতাংশ হারে কর আরোপ আছে। এসব পণ্য আমদানির পাশাপাশি প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করা হয়। আমদানি করা পণ্যের এলসি সুবিধা থাকলেও চাষিদের নগদে পরিশোধ করতে হয়। এতে ব্যবসায়ীদের পুঁজি বিনিয়োগ বেশি করতে হয়।
উৎসে কর পণ্য বিক্রির আগেই ব্যবসায়ীদের পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রি করার আগেই কী দামে বিক্রি এবং এখান থেকে কতটা লাভ হতে পারে তার সম্ভাব্য পরিমাণ হিসাব কষে সরকারকে উৎসে কর হিসেবে রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়। অনেক সময় হিসাবের চেয়ে কম লাভ হয় এবং উৎসে কর বেশি জমা দেওয়া হয়ে যায়।
বিদ্যমান আয়কর আইন অনুসারে বিক্রির পর সরকারের পাওনা উৎসে কর কত তার সঙ্গে জমা দেওয়া উৎসে কর যোগ-বিয়োগ করে সমন্বয় করা হয়। অধিকাংশ সময়ে অতিরিক্ত জমা দেওয়া উৎসে কর ব্যবসায়ীকে ফেরত না দিয়ে পরের বারের উৎসে করের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
ব্যবসায়ীরা এনবিআর-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আমদানি ও সম্ভাব্য বিক্রির হিসাব দেখিয়ে সন্তোষ্ট করতে হয়। অনেক সময় ব্যবসায়ী ও এনবিআর-সংশ্লিষ্টদের হিসাবে পার্থক্য দেখা যায়, যা অনেক সময় মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তাই ব্যবসায়ীরা উৎসে করের হিসাবে জটিলতায় না গিয়ে আপসের পথে যান।
ব্যবসায়ীরা উৎসে করের অর্থ পণ্যবিক্রির আগে নিজের পকেট থেকে দিলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কয়েক গুণ বেশি ধরে পণ্যের দামের সঙ্গে যোগ করে ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করে নেন, যা ক্রেতা না জেনেই দামের সঙ্গে পরিশোধ করতে বাধ্য হন।
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমবি) পক্ষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখতে আবেদন করেছে। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমাতে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠন এমসিসিআই, ডিসিসিআই থেকেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
খোদ ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেছেন উৎসে করের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তাপর্যায়ে বাড়ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর আরোপ করা উচিত না। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ পড়ে। অনেকে উৎসে করের চাপ নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করেন। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের মধ্যেও পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে উৎসে করের এ বোঝা রাখা ঠিক না।
একসময় চেইন শপ থেকে ধনী পরিবারের সদস্যরা বাজার করতেন। এখন সাধারণ পরিবারের অনেকেই চেইন শপে বাজার করতে যান। চেইন শপে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই প্যাকেটজাত। বেশিরভাগ প্যাকেটজাত পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য রয়েছে। এর বাইরে শুধু চেইন শপ বা সুপার স্টোর থেকে পণ্য কিনতে হলে আরও অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে এই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাটকে ‘বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এনবিআর আগামী অর্থবছরে এ হার কমানোর পরিবর্তে আবারও বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে হিসাব কষছে। এতে চেইন শপের কেনাকাটায় আরও খরচ বাড়বে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছেই। এর বাইরে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট ভোক্তার ওপর চাপ। এ হার কমিয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা উচিত। এতে যেমন ক্রেতা বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের খুচরা বাজারের বাণিজ্যের আকার ১৬ বিলিয়ন ডলার হলেও সুপার মার্কেটের অংশ ১ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২৫৬ মিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার খুচরা বাজারের ৪৩ শতাংশ সুপার মার্কেটের। ভারতে এর পরিমাণ ৮-৯ শতাংশ। ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চেইন শপের ওপর সাতবার ভ্যাটের হার পরিবর্তন করে ১ দশমিক ৫ থেকে বর্তমানে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সালে ভ্যাট বাড়ার কারণে রাজস্ব আদায় কমে ১৫ দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে নেমে যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ ধার্য করার কারণেও রাজস্ব বাড়ার হার আরও কমে যায়।
মাত্র এক বছর আগেও ঈদযাত্রা কিংবা ফিরতি যাত্রা ছিল ভোগান্তির। সড়কে যানজট, ট্রেনের টিকিটের জন্য হাহাকার, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড় ছিল সাধারণ ঘটনা। এ ছাড়া আশঙ্কা থাকত দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানির। কিন্তু এবার তেমনটি দেখা যায়নি। সড়কে ছিল না উল্লেখ করার মতো যানজট। ট্রেনের টিকিট পেতে ছিল না হা-হুতাশ। লঞ্চে ছিল না ভিড়ের ঝক্কিঝামেলা।
এমন স্বস্তির কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, যোগাযোগের সব মাধ্যমে একধরনের সমন্বিত উদ্যোগ ছিল এবার। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট ছিল না। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ছিল না কোনো বাধাবিপত্তি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের ঝুট-ঝামেলায় এবার আর ভোগান্তির দৃশ্য ছিল না। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও রাস্তাগুলো ছিল চলাচল উপযোগী। যার কারণে কোনো যানবাহনকেই ধীরগতিতে চলাচল করতে হয়নি। পুলিশও ছিল তৎপর।
ঢাকা-আরিচা সড়কেও যানবাহনের চাপ ছিল না। পাটুরিয়ায় ছিল না ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ফেরির জন্য অপেক্ষা ফুরিয়েছে তারও আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (স্বয়ংক্রিয় নয়) সেতুর টোল আদায়ের ফলে এবার ঈদে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের শঙ্কা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোল বুথ ও লেন করে দেওয়ার কারণে যাতায়াতা ছিল স্বাভাবিক।
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবার ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় ৭টি লেনে যানবাহনের টোল আদায় করা হয়েছে। আগে ৪টি বুথে টোল আদায় করা হতো। তা ছাড়া সেতুর জাজিরা প্রান্তে ছিল ৮টি লেন। একই সঙ্গে টোল আদায়ে ছিল অতিরিক্ত লোকবল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ইউটার্ন, বাজারঘাটের বাধা এবার উতরে গেছে কঠোর পদক্ষেপের কারণে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেটা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের নিñিদ্র নজরদারি ছিল যানজটপ্রবণ এই এলাকায়। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজনও সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন; বিশেষ করে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজায় টোল আদায় কর্তৃপক্ষ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে টোল আদায়ের বিষয়ে। মাইকিং করে সুশৃঙ্খলভাবে টোল দিতে বারবার চালকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দাউদকান্দির গৌরিপুরে বাজার এবং যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট হতো। এবার পুলিশের পাশাপাশি বাঁশি হাতে ছিল স্বেচ্ছাসেবক। তারা যানবাহনগুলোকে দাঁড়াতে দেয়নি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো এবং অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ডের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হতো, যা হয়নি।
সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পেরেছেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পদ্মা সেতু।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির কারণে কাউন্টারে ছিল না দম বন্ধ করা অপেক্ষার পালা। ট্রেন যাত্রার সূচি বিপর্যয়ের তেমন ঘটনাও ঘটেনি। আর পদ্মা সেতু হওয়ায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার সড়কগুলোতে তেমন যানজট হয়নি, যাত্রী কমে যাওয়ায়। একই কারণে লঞ্চে আসা-যাওয়াও ছিল স্বস্তির।
যাত্রী এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সুফল মিলেছে। একইভাবে স্বস্তির যাত্রা ছিল দক্ষিণের জনপদে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে অথবা মাওয়া ফেরি পার হয়ে যেসব মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেত, তাদের বড় অংশ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে। এতে যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে, সময় কম লাগছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তির। দেশে গত কয়েক বছরে যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছে মানুষ। তবে এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, সেগুলো দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, গত ১৪ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। আর এবারের ঈদের ছুটি ঈদের আগে এক দিন বাড়ানোর কারণে মানুষ আগে থেকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এর আগে আরও এক দিন ছুটি ছিল শবে কদরের। অন্যান্য বার মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকলেও এবার পদ্মা সেতু ও দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে সুযোগ ছিল। যার জন্য অনেকে মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পেরেছে।
সমিতির পর্যবেক্ষণ হলো, অস্বস্তিকর গরম, অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি ও এসএসসি পরীক্ষা সামনে ছিল বলে মানুষ এবার বাড়িমুখী হয়েছে কম। সব মিলিয়ে আগের বারের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত কমেছে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ কারণে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের হারও ২৫-৩০ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগে তুলনায় অনেক ভালো ছিল। মহাসড়কে অবাধে দূরপাল্লার পরিবহন চলতে পেরেছে। আর যানজট নিরসনের জন্য সরকারি সংস্থারগুলোর কঠোর মনিটারিং ছিল। তবে কিছু সমস্যাও ছিল। আশা করছি, সামনে সেই সমস্যাগুলোও থাকবে না।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশব্যাপী একযোগে ১০০টি সেতু উদ্বোধনের জন্য এবার সড়কগুলোতে যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু হওয়ায় আগের মতো ফেরির ঝামেলা ছিল না। আর সরকারি সংস্থাগুলো অন্যান্য বারের তুলনায় কঠোর মনিটরিং করেছে সড়কে। হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি ছিল উল্লেখ করার মতো। রেলের টিকিটং পদ্ধতি অনলাইনে থাকায় আগের মতো ভোগান্তি হয়নি। যার জন্য এবারের ঈদযাত্রা ও ফিরতি যাত্রা স্বস্তির ছিল।
তিনি বলেন, ‘এমন স্বস্তি নিশ্চিত করতে হলে সেতুগুলোর টোল আদায় ডিজিটাল করতে হবে। সেই সঙ্গে রেলের যাত্রী ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।’
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন গাজীপুর, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ), মুন্সীগঞ্জ ও লৌহজং প্রতিনিধি
সোনা, রুপা, ইউরেনিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, লোহা, তামাসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশ সুদান। সেই সম্পদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখল নিয়ে স্থানীয় গ্রুপগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মারামারি সেখানকার পুরনো সংকট। স্বাধীনতা লাভের পরও দেশটি দফায় দফায় বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক মেরুকরণ আর বিদেশিদের প্রভাবে সেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং আদিবাসী ও উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিবাদ পৌঁছেছে চরমে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ক্ষমতাকালের শেষ কয়েক বছরে দেশটিতে যে বিভক্তি বাড়ছিল, চার বছর আগে তার পতনের পর অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ পরিণতি হিসেবে ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সশস্ত্র সংঘাত।
স্বার্থের এই সংঘাতে দেশটির ৭০ লাখ মানুষকে কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন শহর এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। ইতিমধ্যে ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার। দুর্বল হয়ে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারে স্থবির হয়ে পড়ার অবস্থায় চলে গেছে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বাইরে থেকে খাদ্যপণ্য শহরে ঢোকা উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে পড়ছে। গভীর সংকটে পড়েছে সেখানে অবস্থান করা বিদেশিরাও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদানের নতুন এই সংকটের শুরুটা চার বছর আগের। ওমর আল বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর অন্তর্বর্তীকালীন সার্বভৌম পর্ষদ শাসনক্ষমতা নেয়। ওই পর্ষদের প্রধান হন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। আর পর্ষদের উপপ্রধান করা হয় মিলিশিয়াদের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো বা হেমেদতিকে। দুই বছর পরে অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দেয় সেনাবাহিনী। সব ক্ষমতা নিজের হাতে নেন বুরহান। তাতে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া হামদান দাগালো আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যশ দ্য গার্ডিয়ানের নিয়মিত কলাম লেখক নাসরিন মালিক মনে করেন, কার্যত ভাইস প্রেসিডেন্ট করায় হেমেদতির উচ্চাকাক্সক্ষাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পরিণতিতেই মিলিশিয়া বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএ) সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইটা বাধিয়েছে; যা পুরো জাতিকে পতনের ঝুঁকিতে ফেলেছে এবং এর পরিণতি দেশটির সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লড়াইয়ে দুই পক্ষেরই হাজার হাজার যোদ্ধা, বিদেশি সমর্থক, খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ থাকায় কাউকেই থামানো যাচ্ছে না। গতি-প্রকৃতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ, যার ফলে আরব ও আফ্রিকান দেশটিকে প্রতিদ্বন্দ্বী অংশ অনুযায়ী বিভক্ত হওয়াও সম্ভব।
টাফ্টস ইউনিভার্সিটির একজন সুদান বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়ালের ভাষ্য, এ সংঘাতকে ‘গৃহযুদ্ধের প্রথম রাউন্ড’ হিসেবে দেখা উচিত। যদি এটি দ্রুত না শেষ করা হয়, তবে আঞ্চলিক এবং কিছু আন্তর্জাতিক ক্রীড়নকের স্বার্থ অনুযায়ী নিজেরা অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সম্ভবত তাদের নিজস্ব সৈন্য বা প্রক্সি ব্যবহার করার মাধ্যমে সংঘাতটি একটি বহুমুখী খেলায় পরিণত হবে। যার প্রভাব ভোগ করতে হবে প্রতিবেশীদেরও।
আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সুদান এলাকা অনুসারে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। মিসর, ইথিওপিয়া, লিবিয়া, শাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া ও দক্ষিণ সুদান এর প্রতিবেশী। সীমান্তবর্তী দেশগুলোর প্রায় সবই তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত এবং বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীও দেশগুলোতে সক্রিয়। তাই সুদানের অস্থিরতার প্রভাব সেসব দেশেও পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যালান বসওয়েল বলেছেন, ‘সুদানে যা ঘটবে তা শুধু সুদানে থাকবে না। শাদ ও দক্ষিণ সুদানে সম্ভাব্য স্পিলওভারের ঝুঁকি সবচেয়ে দ্রুত পড়ার আশঙ্কা। কিন্তু যত বেশি সময় ধরে (যুদ্ধ) প্রলম্বিত হবে, আমরা তত বড় ধরনের বাহ্যিক হস্তক্ষেপ দেখতে পাব।’
শুধু প্রতিবেশী দেশই নয়, চলমান এই সংঘাতের অভিঘাত ছড়াবে উপসাগরীয় দেশগুলোতেও। ইরান সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সরাসরি পক্ষ না নিলেও আরএসএফকে পছন্দ করে না দেশটি। কারণ ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবকে সাহায্য করার জন্য হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল আরএসএফ।
এদিকে রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউরোপে জ¦ালানি পাঠানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লোহিত সাগরের বাণিজ্য রুট পোর্ট সুদানে ৩০০ সৈন্য এবং চারটি জাহাজ হোস্ট করতে সক্ষম একটি নৌঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করেছে। ওয়াগনার গ্রুপ ২০১৭ সাল থেকে সুদানে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুদানে অবস্থিত দুটি ওয়াগনার-সংযুক্ত সোনার খনির সংস্থার ওপর চোরাচালানের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও ২০২০ সালে খার্তুমের সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।
অবশ্য নতুন সংঘাত শুরুর পর সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ সুদান ছাড়া সেখানে এখনো কারও সক্রিয়া ভূমিকা দেখা যায়নি। তাদের চেষ্টায় দুই দফায় তিন দিন করে যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ। কিন্তু যুদ্ধবিরতির সময় বাড়লেও রাজধানী খার্তুমে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল শনিবারও খার্তুমের কিছু অংশে বিমান, ট্যাংক ও কামান হামলা অব্যাহত ছিল। ফলে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে যেকোনো ধরনের বিস্তৃত আলোচনার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো বলেছেন, লড়াই বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে চান না। তিনি বলেন, তিন দিনের যুদ্ধবিরতি যে কয়দিন বাড়ানো হয়েছে তার পুরো সময়ে তাদের যোদ্ধাদের ওপর ‘বিরতিহীনভাবে’ বোমাবর্ষণ চলেছে। সুদানের চলমান সহিংসতার জন্য তিনি ফাত্তাহ আল-বুরহানকে দোষারোপ করে বলেন, ‘আমরা সুদানকে ধ্বংস করে ফেলতে চাই না।’ টেলিফোনে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় জেনারেল দাগালো বলেন, তিনি আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। কিন্তু শর্ত হলো যুদ্ধবিরতি বহাল থাকতে হবে। জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই বলেও মন্তব্য করেন আরএসএফপ্রধান। বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক বলে বর্ণনা করে বলেন, তিনি সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের অনুগতদের সরকারে আনছেন।
এদিকে দক্ষিণ সুদানের দেওয়া শান্তি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাবে রাজি আছেন সেনাপ্রধান বুরহানও। আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়েছে সুদানের সেনাবাহিনী।
তবে ডি ওয়াল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মিসর, উপসাগরীয় দেশগুলো মধ্যস্থতাকারী হয়ে শান্তি প্রচেষ্টাকে আরও বেশি জটিল করে তুলতে পারে। তার ভাষ্য, বহিরাগত মধ্যস্থতাকারীরা কোনো পুলিশ ছাড়াই ট্রাফিক জ্যাম তৈরির ঝুঁকি রাখে।
অবশ্য কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, চলমান সংঘর্ষ হচ্ছে তা বন্ধে বেইজিং হয়তো সহযোগিতা করতে পারে। চীনের ঝেজিয়াং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মা শিয়াওলিন মনে করেন, ‘গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় চিরবৈরী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়েছে। এর মানে এই নয় যে সুদানের সংঘাত বন্ধেও চীন সফল হবে।’ তবে এই সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীন সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কারণ সুদানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো। দেশটির বিবদমান দুই পক্ষেরই চীনের ওপর আস্থা আছে।
লন্ডনের কিং কলেজের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের প্রভাষক জেনো লিওনি বলেন, চীনের জন্য সুদান গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিংয়ের যে পররাষ্ট্রনীতি তাতে আফ্রিকার এই অঞ্চলে সুদান চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হতে পারে। এ ছাড়া সুদান দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সমর্থক। চীন তার পররাষ্ট্রনীতির কারণে আফ্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব রাখে। তার মতে, সুদানে চীনের স্বার্থ হচ্ছে সংকটের সমাধান করে সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে সেখানকার তেল রপ্তানি নিশ্চিত করা।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, অর্থনৈতিকভাবেও চীন আফ্রিকার এই সংঘাতপীড়িত দেশটিতে অবদান রাখতে পারে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হানা রাইডার বলেন, সুদান সংকট সমাধানে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইন্টার গভর্নমেন্ট অথরিটি অন ডেডেলপমেন্ট মধ্যস্থতার কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে চীনও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। আফ্রিকান ইউনিয়নের ভূমিকাকে চীন সমর্থন দিতে পারে। সুদানের সমস্যা সমাধানে চীন নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সুদানের সমস্যা অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক নয়। তাই সবার আগে প্রয়োজন দেশটির বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা। এখন এই সমঝোতার পথে চীন বা অন্য দেশ-সংস্থা কতটা ভূমিকা রাখে, এখন তাই দেখার বিষয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং সাড়ে ৬টায় হাসপাতালে পেঁৗঁছান। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখানে তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে কথা বলতে পারব। চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।’
হাসপাতালে নেওয়ার আগে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে দেখা করে সালাম জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খান।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে মাঝেমধ্যে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল।
তাকে হাসপাতালে ভর্তির পর অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সপ্তমবারের মতো এ হাসপাতালে এসেছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে ওনার পরীক্ষা করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে ম্যাডামকে ভর্তি করানো হয়েছে। ওনার অনেক কিছু পরীক্ষা, যেগুলো বাসায় করা সম্ভব না, সেগুলো মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সেই সব পরীক্ষা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে। পরীক্ষার পরে মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট পরীক্ষা করে পর্যালোচনা করে ওনার চিকিৎসা দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) জানেন। কিছুদিন ধরে ওনার লিভারের জটিলতা ছিল। সেটা আছে। ওনার হার্টের জটিলতা ছিল। সর্বোপরি বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এখানকার মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু কেন নিতে পারেননি, সেটা আপনারাও জানেন, দেশবাসীও জানে। যেহেতু ওনার সঠিক চিকিৎসা করা যাচ্ছে না, তাই ওনাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। ওনার সর্বশেষ আর কী সুযোগ আছে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে, সে বিষয় নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে এখানে। যাতে ওনার অবস্থার খারাপের দিকে না যায়। সে জন্য পরীক্ষার পরে একটি ধারণা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের আলোচনা করে পরে কী করণীয়। চিকিৎসা বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। ইতিমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্য ওনাকে পরীক্ষা করেছেন। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আপনারা দোয়া করবেন। আপনাদের মাধ্যমে আমার দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। এত প্রতিকূলতার মাঝেও যেটুকু চিকিৎসা পাওয়া যায় তাতে যেন উনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।’
‘বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে যেতে পারবেন নাÑ আগের এই দুই শর্তে খালেদা জিয়ার দ-াদেশ আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয় ১৯ মার্চ। ২৫ মার্চ থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়।
দুই মামলায় দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দ- স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট।
সুদানে চলমান সংঘাতের কারণে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাগী ৩ বা ৪ মের মধ্যে নিবন্ধিত সাত শতাধিক বাংলাদেশি সৌদি আরব পৌঁছে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নৌপথে তাংেদর সৌদি আরবে নেওয়ার পর জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দেশে আনা হবে।
গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেছেন। সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটকে পড়া এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এখানে তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে কথা বলতে পারব। চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।’
হাসপাতালে নেওয়ার আগে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে দেখা করে সালাম জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খান।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে মাঝেমধ্যে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল।
তাকে হাসপাতালে ভর্তির পর অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) জানেন। কিছুদিন ধরে ওনার লিভারের জটিলতা ছিল। সেটা আছে। ওনার হার্টের জটিলতা ছিল। সর্বোপরি বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এখানকার মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু কেন নিতে পারেননি, সেটা আপনারাও জানেন, দেশবাসীও জানে। যেহেতু ওনার সঠিক চিকিৎসা করা যাচ্ছে না, তাই ওনাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। ওনার সর্বশেষ আর কী সুযোগ আছে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে, সে বিষয় নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে এখানে। যাতে ওনার অবস্থার খারাপের দিকে না যায়। সে জন্য পরীক্ষার পরে একটি ধারণা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের আলোচনা করে পরে কী করণীয়। চিকিৎসা বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। ইতিমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্য ওনাকে পরীক্ষা করেছেন। চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’
‘বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে যেতে পারবেন নাÑ আগের এই দুই শর্তে খালেদা জিয়ার দন্ডাদেশ আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয় ১৯ মার্চ। ২৫ মার্চ থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়।
দুই মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দ- স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।