
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল রবিবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম ঋণখেলাপির কারণে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে তার বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান ও অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম মো. মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসব মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ঋণখেলাপি নই। একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে গিয়ে ঋণের জামিনদার হয়েছিলাম। পরে ওই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যে ব্যাংক টাকা পাবে তারা বলছে টাকা বুঝে পেয়েছে। আপনারা নিজেরাই ব্যাংকে ডেকে এনেছেন। ব্যাংক নিজেরাই লিখিত সাক্ষী দিয়েছে যে তারা টাকা বুঝে পেয়েছে। আপনারা সে জিনিসটা আমলে নিচ্ছেন না। এটা মনে হয় আইনের বরখেলাপ করা হয়েছে। ন্যায়বিচার থেকে আপনাদের কাছ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আপনারা যে সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন তাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ হয় না। যেখানে আপিল বিভাগের রায় আছে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে তারা টাকা পেয়েছে তারপরও আপনারা যে কাজটি করলেন এতে আপনারা পক্ষপাতিত্ব করলেন।
জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যের জবাবে রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আপনারা আপিল করার সুযোগ পাবেন। যদি অন্যায় হয়ে থাকে সেগুলোর প্রতিকার চেয়ে আপিলের সুযোগ রয়েছে।
পরে জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরে কোরিয়ান মালিকানাধীঢন একটি ফ্যাক্টরি ও হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান রক্ষা করার জন্য আমার নিজের সম্পদ কোম্পানিকে দিয়েছি। তারা জমি ব্যাংকে মর্টগেজ দিয়েছে। আমি ওই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারও নই, কোনো লভ্যাংশও নিই না। শুধু মানবিক কারণে শ্রমিকদের রক্ষা করতে ওই কোম্পানিকে সহযোগিতা করেছি। নিজের ১২ বিঘা জমি দিয়ে শ্রমিকদের স্বার্থে কারখানাটিকে দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি। করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই কারখানাটি ব্যাংকে তাদের পেমেন্ট দিতে পারেনি। নির্বাচনে আমি প্রার্থী হওয়ার কারণে অগ্রণী ব্যাংক যে পাওনাটা ছিল তা গত ১১ ও ১৮ এপ্রিল ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে দিয়েছে। সে সব কাগজপত্র আইনজীবীর মাধ্যমে ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টের নাম দিয়ে আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা থেকে সরে গেছে। তারা কোন অদৃশ্য চাপে সরে গেছে তা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমি আপিল করব। প্রয়োজনে আমি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাব। আমি সর্বশেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব। আমি ন্যায়বিচার চাই।
এদিকে ছেলের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও হলফনামা সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অলিউর রহমান ও আবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
মেয়র পদে বৈধ অপর প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্দুল্লাহ আল মামুন ম-ল, সরকার শাহনুর ইসলাম ও হারুন অর রশীদ।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর শুকরিয়া প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের সমস্ত জনগণ দলমত নির্বিশেষে এই শহরকে পরিচ্ছন্ন দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যাশী। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে এ কামনা করে আসছে। তাদের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি, সর্বাত্মক সহযোগিতা সমর্থনে আগামী ২৫ তারিখে নির্বাচনে তাদের মূল্যবান ভোট কামনা করছি। যাতে আমরা সবাই মিলে এই শহরটাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী, দুর্নীতিমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
আজমতউল্লা খান বলেন, বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী এখানে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছে। লড়াই বিএনপি-আওয়ামী লীগ হচ্ছে এটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি সাধারণ জনগণ লড়াইটা করছে। মানুষ লড়াইটা করছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টা আমাদের কোনো বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশনের যে আইন রয়েছে বিধি রয়েছে সেই বিধির আলোকেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইন অনুযায়ী যদি সে ফিরে আসে তাহলে তাকে মোস্ট ওয়েলকাম।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আশা করি আসন্ন গাজীপুর সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমি প্রত্যাশা করি নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন। মানুষ নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে তাদের নিজেদের ভোট দিতে পারবেন।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, গাজীপুর সিটির জনগণ একজন সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক গুণের মানুষকে নির্বাচিত করতে চায়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তাদের আশ্বাস দিচ্ছি, আমি যদি জয়ী হতে পারি, তাহলে নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশনের সেবা নিশ্চিত, সিটি করপোরেশনের আমানতের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে গাজীপুরকে আধুনিক বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলব।
রবিবার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র প্রার্থীরা, নগরীর ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। তফসিল আনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৮ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে। ইভিএমের মাধ্যমে ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল এই দিনে। দীর্ঘ বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ৩ মে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। মারা যান বেশ কয়েকজন শ্রমিক। শ্রমিকের বুকের রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়ে কর্মদিবস আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হবে। এবার মে দিবসের প্রতিপাদ্য : ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুতি, ক্ষতিপূরণ, ন্যায্য পাওনা আদায়সহ শ্রমিকসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে ভরসার জায়গা হচ্ছে শ্রম আদালত। তবে এখানেও শ্রমিকদের ভোগান্তির শেষ নেই। কর্মক্ষেত্রে যেমন ন্যায্যতা আর ন্যায্য প্রাপ্তির জন্য ঘাম ঝরাতে হয়, তেমনি আদালতেও তাদের ঘুরতে হয় বছরের পর বছর।
আইনজীবীরা এবং শ্রমিক নেতারা মনে করেন, যথেষ্ট বিলম্বে তারিখ ধার্য করা, প্রযুক্তিগত পশ্চাৎপদতা, একতরফা নিষ্পত্তির মামলা পুনরুজ্জীবিতকরণ, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, আইনের অস্পষ্টতা, মালিক বা কর্তৃপক্ষের স্বার্থরক্ষায় আদালতের কর্মচারীদের দুর্নীতি বিচারকাজে তথা শ্রমিকের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার পথে অন্তরায়।
সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে ১০টি শ্রম আদালতে ও ঢাকার একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে উল্লিখিত বিষয়ে মামলার কার্যক্রম চলে। ঢাকায় দৈনিক বাংলা মোড়ে শ্রম ভবনে তিনটি আদালত রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে দুটি, খুলনায় একটি, রাজশাহীতে একটি, রংপুরে একটি, সিলেটে একটি ও বরিশালে একটি শ্রম আদালত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লায় শ্রম আদালতে বিচারকার্যক্রম চলার বিষয়টি এখানো প্রক্রিয়াধীন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালটির অবস্থান ঢাকার কাকরাইলে।
ছয় মাসের বেশি বিচারাধীন সাড়ে ১৯ হাজার মামলা : আদালত-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ১০টি শ্রম আদালতে ২৪ হাজার ৭টি মামলা বিচারাধীন। অন্যদিকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এ সময় পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৪। ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে অনিষ্পন্ন মামলা রয়েছে ৮ হাজার ২৪৮টি। দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন ৭ হাজার ১৩৮টি মামলা। তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলা ৪ হাজার ২৩৯টি। আর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ৭৬৭টি মামলা অনিষ্পন্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে ১০টি শ্রম আদালত ও একটি আপিল ট্রাইব্যুনালে ছয় মাস বা তার আগে থেকে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৯ হাজার ৬০৯। ঢাকার তিনটি শ্রম আদালত ও আপিল ট্রাইব্যুনালে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন ১৮ হাজার ৩৩১টি মামলা। ১০ বছর বা তার বেশি পুরনো অনেক মামলাও অনিষ্পন্নের তালিকায় রয়েছে।
সাড়ে ৬ হাজার টাকা পেতে সাড়ে ৫ বছরের অপেক্ষা : কুড়িগ্রামের চিলমারীর সবুজপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট শ্যামলীর ‘লাইক বিডি ওয়ার্ল্ড লিমিটেড’ নামের তৈরি পোশাক কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে যোগ দেন। পরের মাসের ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে অর্ধেক বেতনের চেক দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় ৬ হাজার ৫০০ টাকা পেতে ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে মামলা করেন জাহাঙ্গীর (৩৮)। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৩০ দিনের মধ্যে তাকে পাওনাসহ চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেয় আদালত।
আদালতের আদেশ অমান্য করায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেন জাহাঙ্গীর। সমন ও পরোয়ানা জারির পরও তিনি পাওনা এখনো বুঝে পাননি। এখন তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি দর্জি দোকানে কাজ করেন।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমার নাকি স্থায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র কিছুই ছিল না। সামান্য কটা টাকার জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। আমি গরিব মানুষ। যদি পাই। নিরাশার চেয়ে আশার মধ্যে থাকা ভালো।’
কুষ্টিয়ার মিরপুরের পোড়াদহের মো. সফিউদ্দিন মেকানিক ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন আরিচার ‘ফাইন ক্রাফট লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানে। ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। বকেয়া মজুরি ও অন্যান্য ভাতাসহ ১ লাখ ২০ হাজার ৯২৩ টাকা পেতে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে করা মামলার রায় তার পক্ষে যায়।
২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি করা মামলায় ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রায় হয়। আজ পর্যন্ত তিনি পাওনা বুঝে পাননি। রায় অমান্য করায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৭ মার্চ ফৌজদারি মামলা করেন তিনি। পরে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও এখন তিনি বেকার। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমার অনেক কষ্টের উপার্জন। পাওয়ার আশা তো করতেই পারি। এ দুনিয়ায় না পেলে আখেরাতে নিশ্চয়ই পাব।’
উল্লিখিত দুই ভুক্তভোগীসহ হাজারের বেশি শ্রমিককে আইনগত সহযোগিতা জোগাচ্ছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্রম আদালতগুলোর অবস্থা খুব করুণ। রায় হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা মানে না। শ্রমিকরা প্রথমে ভুক্তভোগী হন কর্মস্থলে। প্রতিকার পেতে আদালতে এসেও একই অবস্থা হয় তাদের। আইনের সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনি আদালতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
আইনের অস্পষ্টতায় অনানুষ্ঠানিক আপিল ট্রাইব্যুনাল : শ্রম আইনের ২১৭ ধারা অনুযায়ী, শ্রম আদালতের রায়, সিদ্ধান্ত, রোয়েদাদ বা দ-ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষের আপিলে আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত গণ্য হবে। ২১৮ ধারা অনুযায়ী, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে হাইকোর্টের মতো আদালত গণ্য করতে হবে। সব শ্রম আদালতের ওপর ট্রাইব্যুনালের নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব থাকবে।
আইনজীবীরা এবং ও শ্রমিক নেতারা বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ অনেকেই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট করেন। আইনে একদিকে ট্রাইব্যুনালকে বলা হচ্ছে চূড়ান্ত, অন্যদিকে সাংবিধানিক পন্থা হিসেবে যে কেউ উচ্চ আদালতে যেতে পারে।
আইনটি অস্পষ্ট উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলেন, যদি হাইকোর্টে প্রতিকার পেতে হয় তাহলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ ও রায়ের কার্যকারিতা কতটুকু? আদালতসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বিচারাধীন ২৪২টি মামলা রয়েছে যেগুলো হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। এগুলোর কবে নিষ্পত্তি হবে তা অনিশ্চিত।
অন্যদিকে শ্রম আইনের ২১৬ ও ২১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী, মামলা গ্রহণের ৬০ দিনের মধ্যে সম্ভব না হলে আরও ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ মোট ১৫০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতের রায় বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনজীবীরা বলেন, এ সময়ে মামলার নিষ্পত্তি হয় না বললেই চলে। এই সময়ে নিষ্পত্তি না হলে কী হবে তাও আইনে স্পষ্ট নয়। শুধু নিষ্পত্তি না হওয়ার উপযুক্ত কারণ দেখাতে হয়।
বিলম্বিত শুনানিতে বিচারে দীর্ঘসূত্রতা : শ্রমিক নেতারা ও ভুক্তভোগীরা বলেন, শ্রম আদালতের মামলার দীর্ঘসূত্রতার বড় কারণ বিলম্বে শুনানির তারিখ। এর সুবিধা পায় মালিক বা কর্তৃপক্ষ। আদালতের কর্মচারীদের অনৈতিক কার্যকলাপের দিকেও অভিযোগ তাদের। শ্রম আদালতে নিয়মিত মামলা পরিচালনা করেন এমন একজন আইনজীবীর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার শ্রম ভবনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘বিবাদীপক্ষ যদি শুনানির তারিখ বিলম্বে চায় তাহলে আমরা শুধু পেশকার ও পিয়নদের ওপর ভরসা করতে পারি। সংশ্লিষ্ট সব কাজ তারাই করেন।’ গত বৃহস্পতিবার একটি মামলায় বিবাদীপক্ষ চার মাস সময়ের পর তারিখ নির্ধারণ করিয়েছেন বলে জানান তিনি।
শ্রম আদালতে নিয়মিত মামলায় শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নেসার আহমেদ আলীম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা এখন পুঁজিবাদ ও মালিকদের অনুকূলে। আদালতে তাদের প্রভাব থাকাই স্বাভাবিক। শ্রমিকদের ন্যায্যতার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না হলে তারা নিগৃহীত হতেই থাকবে।’
মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা ব্লাস্টের (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্মস্থলে যেমন মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষার জন্য ঘাম ঝরান শ্রমিকরা তেমনি প্রতিকার পেতে গিয়েও মানসিক যাতনার স্বীকার হন তারা। টাকা না দিলে তাদের পক্ষে কেউ কথা বলে না। কিছু বিচারক এজলাসে বসেন তাদের মর্জিমতো। অনেক আইনজীবীও শ্রমিকের পক্ষে থাকেন না।’
তিনি বলেন, ‘আদালতগুলো হওয়ার কথা ছিল নিপীড়িত শ্রমিকদের। কিন্তু কিছু অসৎ লোকের কারণে এগুলো এখন শ্রমিকবিরোধী হয়ে পড়ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুুফিয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই কিন্তু আমরা আদালত বাড়িয়েছি। তারা যাতে দ্রুত বিচার ও প্রতিকার পায় সেজন্য আদালতগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত আইনটি সংশোধনের বিষয়ে কাজ চলছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষসহ সব অংশীজনের মত নিয়ে সংশোধন করা হবে।’
আজ মহান মে দিবস : আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল এই দিনে। দীর্ঘ বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ৩ মে তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন শ্রমিক মারা যান। শ্রমিকের বুকের রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়ে কর্মদিবস আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। এবার মে দিবসের প্রতিপাদ্য : ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
মে দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশসহ বিশে^র সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘শিল্প ও শ্রমবান্ধব বর্তমান সরকার শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণ সাধনে ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।’
মে দিবস উপলক্ষে আজ সরকার ঘোষিত ছুটির দিন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। এই দিনে জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার (যুক্তরাষ্ট্রের রবিবার) বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সম্পর্কের এ সুবর্ণজয়ন্তীর বছরপূর্তির সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
শনিবার ওয়াশিংটনের হোটেল রিজ কার্টলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকের পর এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সূত্র : বাসস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার প্রশংসা করেছেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও অভূতপূর্ব প্রশংসা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা কিছুটা স্বস্তির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা আপনাদের যে লোনটা নিয়েছি আইএমএফের, একটা ‘ব্রিদিং স্পেস’ হিসেবে। আইএমএফ সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
ড. মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন আইএমএফের এমডি যা কভিড-১৯ মহামারীর পর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করে তুলেছে।
তিনি আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল (সামগ্রিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে) কারণ, দেশটি এমনকি করোনা মহামারীর পরও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে।’
আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ও দক্ষ যোগাযোগ এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’ এ ছাড়া ক্রিস্টালিনা কভিড-১৯ মহামারীকালে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখারও প্রশংসা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের নানা উদ্যোগ সম্পর্কে আইএমএফ প্রধানকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন একদিনে হয়নি বরং এটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফল।’
শেখ হাসিনা বলেন, পটপরিবর্তনের পর কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি যেভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন চেয়েছেন সেভাবে তার পরিকল্পনা করেন এবং ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে আইএমএফ প্রধানকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় আইএমএফের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে আশা করেন।
ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ বলেন, গত ১৪ বছরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইএমএফ সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে এবং দেশটি কখনোই এর থেকে বিচ্যুত হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করছে যা বাংলাদেশ মাত্র দুই সপ্তাহের আলোচনার মাধ্যমে পেয়েছে, যদিও অনেক দেশ বছরে পর বছর ধরে আলোচনা চালিয়েও পায় না। আইএমএফ প্রধানকে উদ্ধৃত করে রউফ বলেন, ‘আইএমএফ ভবিষ্যতে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’ ব্রিফিংকালে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান উপস্থিত ছিলেন।
কারখানায় উৎপাদন বাড়ে, মুনাফাও বাড়ে। মালিক চড়েন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িতে। কিন্তু শ্রমিকের মজুরি যে তিমিরে ছিল, সেখানেই আছে। এ মজুরি বাড়ানো যাদের দায়িত্ব, তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। তাদের নির্লিপ্ততার কারণেই ৩৬ বছর ধরে মজুরি পুনর্নির্ধারণ হয় না পেট্রলপাম্প শ্রমিকদের। ফাউন্ড্রি (ঢালাই কারখানা) শ্রমিকের এ ইতিহাস আরও পুরনো। তাদের মজুরি আটকে আছে ৪০ বছর আগের দরে।
অথচ নিয়ম হচ্ছে প্রতি পাঁচ বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণ হবে। ৪৪টি খাতে এ নিয়ম মানার জন্যই সরকারের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। কিন্তু বোর্ড এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের এক টেবিলে বসাতে ব্যর্থ হওয়ায় ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিভিন্ন খাতে টানাপড়েন। যেখানে নতুন নতুন শ্রম খাতের মজুরি বোর্ডের আওতায় আসার কথা, সেখানে ৪৪টিতেই আটকে আছে বোর্ড।
বোর্ড এবং শ্রম মন্ত্রণালয় তেলের মাথায়ই তেল ঢালে। গার্মেন্টস খাতে কিছুটা নিয়মিতভাবে মজুরি নির্ধারণ করা হলেও অন্য সব খাতের শ্রমিকদের বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসায় তারা এ খাতেই নিয়মিত মজুরি বাড়ান। এ পর্যন্ত ছয়বার এ খাতের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক কাজ করলেও এটাই দেশের সবচেয়ে বড় শ্রম খাত নয়। যে খাতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন, সেই কৃষি খাতের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো মজুরি নেই। বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এখানে মজুরি নির্ধারিত হয়। যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক প্রায় এক কোটি শ্রমিকের।
গত বছর চা শ্রমিকদের আন্দোলনের পর তাদের কম মজুরি পাওয়ার বিষয়টি সবার নজরে আসে। সরকারের হস্তক্ষেপে তাদের মজুরি বেড়েছে। চা শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ১৩ বছর পর। এর আগে ২০১০ সালে তাদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
আয়ুর্বেদিক কারখানায় মজুরি নির্ধারণ করা হয় ২০০৯ সালে। এ খাতের শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ৪ হাজার ৩৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ২ হজার ৫০০, বাড়িভাড়া ১ হাজার ২৫০, চিকিৎসা ভাতা ৫০০, যাতায়াত ভাতা ১০০ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সবশেষ মজুরি নির্ধারণ করা হয় ২০১০ সালে। এ খাতে ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ২৪০ টাকা। ওয়েল মিলস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রোডাক্টস ২০১০ সালে, সল্ট ক্রাশিং ২০১১ সালে, কোল্ডস্টোরেজ ২০১২ সালে, সিনেমা হল এবং ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৩ সালে এবং জুট প্রেস অ্যান্ড বেলিং শ্রমিকের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয় ২০১৪ সালে। হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, হোসিয়ারি, সোপ অ্যান্ড কসমেটিকস, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্যাকেজিং এবং জাহাজভাঙা শ্রমিকদের ২০১৭ সালে মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ট্যানারি, দর্জি কারখানা, টেক্সটাইল কারখানা, বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড অ্যানামেল শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ করা হয় ২০১৮ সালে। গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট ২০১৯ সালে, প্লাস্টিক, রি-রোলিং মিলস, ব্যক্তিমালিকানাধীন সড়ক পরিবহন, রাইস মিল, চামড়াজাত পণ্য ২০২০ সালে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ সালে নির্মাণ ও কাঠ খাতের মজুরি নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালে সিকিউরিটি সার্ভিস, স’ মিলস, প্রিন্টিং প্রেস, চিংড়ি, মাছ ধরার ট্রলার, ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এ বছর রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, হোমিওপ্যাথ কারখানা, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে সিমেন্ট কারখানা এবং সিরামিকস কারখানার শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করার কাজ চলছে।
কোনো কোনো খাতের মজুরি গত কয়েক বছরে পুনর্নির্ধারণ করা হলেও অনেক খাতের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আবার সরকার নির্ধারিত মজুরির কম দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে অনেক খাতে। পেট্রলপাম্পের শ্রমিকদের মজুরি ৩৬ বছর আগে নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে আর সমন্বয় করা হয়নি। তবে এ খাতে এখন শ্রমিকরা ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসে আয় করেন বলে জানা গেছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেট্রলপাম্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এ খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণের জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু পেট্রলপাম্প মালিকপক্ষের অসহযোগিতার জন্য এখানে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। পেট্রলপাম্পের মতো কিছু সেক্টরে মালিক, কিছু সেক্টরে শ্রমিকরা বাধার সৃষ্টি করে। এখানে সরকারেরও অদক্ষতা রয়েছে। ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের কারণে এ খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ছয় কোটি শ্রমিক রয়েছে। এর প্রায় অর্ধেক অদক্ষ শ্রমিক। তারা অনেক সময় নিজেদের অধিকার, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির বিষয় সম্পর্কে জানে না। ফলে তারা মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি বা অধিকার আদায় করে নিতে পারে না। অনেক সময় বিভিন্ন খাতের শ্রমিকরা যেমন মজুরি বোর্ড অনুযায়ী বেতন পান, আবার বাজারের চাহিদাও তেমন মজুরি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা, ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে অনেক সময় মজুরি কমবেশি হয়। একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রি মজুরি বোর্ডের নির্ধারিত মজুরির চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন। আবার অনেকে নির্ধারিত মজুরি কাঠামোর কমও নিতে বাধ্য হন। সাধারণত নতুন মজুরি নির্ধারিত হয় সরকার, মালিকপক্ষ আর ট্রেড ইউনিয়নের আলোচনার মাধ্যমে। অনেক সময় সরকার বা মালিক নিজে থেকে এটা করতে পারে, আবার শ্রমিকদের চাপেও হতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, যেসব খাতের ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠন জোরালো নয়, তাদের মজুরির বিষয়টি ঠিকভাবে মনোযোগ পায় না।
শ্রম অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরে কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমসাধ্য কাজগুলোতে নারী শ্রমিকদের কদর খুব বেড়েছে। তারা শোনাচ্ছে নারীরা নাকি সুশৃঙ্খল, দক্ষ, কাজ কামাই দেয় কম, উৎপাদন দেয় বেশি। কিছুদিন আগেও শুনতে হয়েছে ঠিক উল্টোটাই। নারী কম উৎপাদন করে এ অজুহাতে হাজার হাজার নারী-শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। আজ তাদের কদর বেড়েছে, কারণ সস্তায় তাদের দক্ষ শ্রম কেনা যাচ্ছে।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের মতো দেশে মজুরি নির্ধারণের জন্য আরও কমিটি আছে। এগুলো হচ্ছে জাতীয় পে-কমিশন, মজুরি কমিশন এবং ওয়েজ বোর্ড। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে পে-কমিশন। মজুরি কমিশন সরকারি খাতে পরিচালিত কল-কারখানাগুলোর শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে। এটাকে ন্যাশনাল ওয়েজ অ্যান্ড প্রোডাকটিভিটি কমিশনও বলে। আর ওয়েজ বোর্ডের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জন্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।
জ্বালানি ও ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের চড়া দাম, মূল্যস্ফীতির চাপে এ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলেছে। এ অবস্থায় ন্যূনতম মজুরি নির্দিষ্ট করা না থাকলে একজন শ্রমিক কীভাবে জীবিকা চালান জানতে চাইলে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ বলেন, ‘বোর্ড সুপারিশ করে শুধু। ন্যূনতম মজুরির বাস্তবায়ন দেখে অন্যান্য সংস্থা। কাজেই এ কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি উপযুক্ত ব্যক্তি নই।’
রাইসা আফরোজ উপযুক্ত ব্যক্তি না হলেও যারা উপযুক্ত তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা দেখিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সচিব এহছানে এলাহী এমনকি শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এসব বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।