
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে। তাই সতর্ক থাকুন, যাতে বিএনপি-জামায়াত চক্র আবার ক্ষমতায় না আসে।’ গতকাল রবিবার (স্থানীয় সময়) লন্ডনের ম্যারিয়ট হোটেলে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রয়োজনে সব সময় জনগণের পাশে থাকায় আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হবে এমন প্রত্যাশা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, জনগণ আমাদের তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। সকলকে (নেতাকর্মী) আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে হবে, কারণ নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হব।’
দেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতের ওপর আস্থা রাখবে বলে মনে করেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে এবং এভাবে দেশকে ধ্বংস করেছে। তাহলে জনগণ কীভাবে তাদের প্রতি আস্থা রাখবে?’
তিনি আরও বলেন, জনগণ ইতিমধ্যে জেনে গেছে যে তারা চোর, দুর্নীতিবাজ, খুনি, গ্রেনেড হামলাকারী ও লুটেরা এবং তারা খুনিদের পৃষ্ঠপোষক। বিএনপি-জামায়াত জোট অর্থ আত্মসাৎ করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানকে তার দুর্নীতির দায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর পাচারকৃত প্রায় ৪০ কোটি টাকা সরকার দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি “স্মার্ট বাংলাদেশ”। আমরা “ডেল্টা ২১০০” পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশে আর কোনো গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষ থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী আবারও বিএনপি ও এর নেতাদের ভোট চোর আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তারেক রহমান একজন ভোট চোর এবং তার মাও ভোট চোর। বিএনপি-জামায়াতের মতো আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় আসেনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতা দখল বা চুরি করে ক্ষমতায় আসেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে কয়টি দল অংশ নিয়েছিল এবং কতটি ভোট পড়েছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কারও কিছু বলার নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই নির্বাচনের ফলাফল কী ছিল? বিএনপির ২০-দলীয় জোট কতটি আসন পেয়েছিল? ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে ২৯টি আসন এবং পরে উপনির্বাচনে একটিসহ মোট ৩০টি আসনে জিতেছিল। আর বাকি আসন ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের। আমরা বাকি সব আসন পেয়েছিলাম। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান কোথায় যে তারা এত লাফালাফি করে?’ গত ১৪ বছরে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি সংক্ষেপে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ দিন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে গতকাল দেশের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন।
স্থানীয় সময় ১৮টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি বিমান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। বিমানটির আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা। বাসস
পাঁচটি উঁচু ভবনসহ সাতটিতে প্রায় দেড়শ আদালতের এজলাস। স্বল্পায়তন কিন্তু জনবহুল এলাকার চারপাশে একটির সঙ্গে আরেকটি ঘেঁষে অন্তত ৫০টি ছোট-বড় ভবন। মূল সড়কঘেঁষে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তর। সড়কের ওপাশে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিনেমা হল। অদূরে বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সদরঘাট।
পাশেই শাঁখারীবাজার, রাজারদেউড়ি, তাঁতীবাজার, পাটুয়াটুলী, রায়সাহেব বাজার, ইংলিশ রোড, লক্ষ্মীবাজারের মতো অতি ব্যস্ত এলাকা। অসহনীয় যানজট, অগ্নিকাণ্ড, আসামি ছিনতাইসহ নানা দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা নিত্য ঘটে। প্রচণ্ড ভিড়ে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, আসামি বা পুলিশকে হাঁটতে হয় গায়ে গা-ঘেঁষে। পুরান ঢাকার জনসন রোডে আদালতপাড়ার নিত্যচিত্র এ রকমই।
আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ভাষ্য, সার্বিক চিত্র আদালতের পরিবেশের সঙ্গে বেমানান। এই এলাকায় আদালতের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের।
ব্রিটিশ আমলে এ এলাকায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় প্রায় ১৩৫ বছর আগে। তখন জনসংখ্যা ও মামলা অনুপাতে ছোট পরিসরে বিচারকাজ হলেও এখন সবকিছুর পরিধি বেড়েছে। ১৩৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বারে আড়াই দশক আগেও তালিকাভুক্ত আইনজীবী ছিলেন চার হাজার। এখন আইনজীবী প্রায় ২৮ হাজার। মামলাও বেড়েছে। ভবন ও এজলাস বেড়েছে। বিচারপ্রার্থীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট মানুষও বেড়েছে। কিন্তু আদালতের পরিসর আরও ছোট হয়েছে। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তীব্র গরমে ভয়াবহ অবস্থা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত কয়েক দিনে অন্তত ২৫ জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বিচারপ্রত্যাশী, সাক্ষী ও এলাকাবাসীর সঙ্গেও। তাদের বেশিরভাগ বলেছেন, এখানে আদালতের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। আদালত স্থানান্তর কিংবা আদালতের বিকেন্দ্রীকরণও যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও কঠিন কাজ। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ঢাকা বারের সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে এখান থেকে আদালত স্থানান্তরের একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা সফল হয়নি। কাছেই সুপ্রিম কোর্ট। পেশাগত সুবিধা বিবেচনায় আপত্তি রয়েছে আইনজীবী অনেকের।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগ, ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ছয়তলা ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত, ৯-তলা ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালত (নতুন) ভবন, ছয়তলা ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালত (পুরনো), ১০-তলা সিজেএম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) আদালত, ১০-তলা সিএমএম (চিফ মেট্রোপলিটান) আদালত, তিনতলা রেবতী ম্যানশনসহ ছয়টি এবং আরও কিছু ভবনে বিচারকাজের এজলাস রয়েছে ১৪৪টি।
এসবের ৯১টিতে ফৌজদারি মামলার বিচার পরিচালিত হয়। বাকিগুলো দেওয়ানি ও অন্যান্য আদালতের এজলাস। সব এজলাসের পাশে রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক অফিস বা সেরেস্তা। বেশিরভাগ এজলাস ছোট পরিসরের। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে। আইনজীবীরা বলেন, এখানে বিচারপ্রার্থীদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মানসিক প্রশান্তি নেই। আদালত এলাকাটি হয়ে উঠেছে বাজারের মতো। ঝগড়া, বাগ্বিতণ্ডা, মারামারি, চুরি ও ছিনতাই নিত্য ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাঁখারীবাজারে ঢোকার গলির মুখ থেকে কোর্ট হাউজ স্ট্রিট পর্যন্ত সরু সড়কে অন্তত ৩২টি ছোট-বড় ভবন। প্রায় সবগুলোই আইনজীবীদের চেম্বার। এর মধ্যেই ঢাকা বারের ১০-তলা ভবন রয়েছে। এই সড়কসহ পুরো আদালত এলাকার দুপাশে কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী দোকান।
কর্মদিবসে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের আনাগোনা
মামলা ও আইনজীবীর সংখ্যার বিচারে এটি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বার হিসেবে পরিচিত। কেউ এটিকে বিশে^র সবচেয়ে বড় বারও মনে করেন। ঢাকার আদালতগুলোতে কত মামলা বিচারাধীন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও সংখ্যাটি পাঁচ লাখের কাছাকাছি।
এখানে নিয়মিত মামলায় শুনানি করেন ১২ থেকে ১৩ হাজার আইনজীবী। বিচারক প্রায় দেড়শ। প্রতিদিন থানা ও কারাগার থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ আসামিকে আনা-নেওয়া করা হয়। একই সঙ্গে বিচারাধীন মামলার আসামি থাকেন কয়েক হাজার। রয়েছেন আদালত-সংশ্লিষ্ট নথি বিক্রেতা এবং খাবার, শাকসবজি ও কয়েকশ স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা বারের আইনজীবী নেতারা বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের বাইরে প্রতি কর্মদিবসে আদালত এলাকায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। মানুষের ভিড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় প্রায়ই।
প্রতিটি কর্মদিবসই ঝুঁকিপূর্ণ
জনবহুল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার আদালত এলাকা থেকে গত দুই বছরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনসহ পাঁচ আসামি পালিয়েছে পুলিশের হেফাজত থেকে। গত বছরের ২০ নভেম্বর সিজেএম আদালত ভবনের নিচ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে পালিয়ে যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সিজেএম আদালত ভবনের মালখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ ঢাকা জেলা জজ আদালতের (পুরনো ভবন) একটি লিফট নিচে পড়ে আইনজীবী, আদালতের কর্মচারীসহ ১২ জন গুরুতর আহত হয় এবং একজন মারা যান।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৯০টির বেশি ফৌজদারি আদালতে আসামি হাজির করতে ৪০০ জনের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে তাদের বেকায়দা দশা হয়। স্বল্পায়তন ও জনবহুল এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তা বিধান বা অন্য দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।
ডিএমপির উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. আনিসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিআরবির বিধান অনুযায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে আসামি আনা-নেওয়া করতে হবে জনসমাগমের বাইরে দিয়ে। কিন্তু তা কি করা যায়?’
অন্যদিকে নিরাপত্তা বা নিয়মিত সমস্যার বাইরে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালত-সংশ্লিষ্টদের বড় দুশ্চিন্তা অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের ঝুঁকি। সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালতের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। ভবনগুলোতে নেই বিকল্প সিঁড়ি। আইনজীবীদের অভিযোগ, ভবনগুলোর বেশিরভাগ গড়ে তোলা হয়েছে তাড়াহুড়ো করে ও অপরিকল্পিতভাবে। আগুন লাগলে বা ভূমিকম্প হলে রক্ষা নেই।
ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে যানজট ও জনবাহুল্য বড় সমস্যা। এখানে কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্পে কী অবস্থা হবে ভাবা যায় না।’
২৪ বছর আগের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি
একাধিক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ১৯৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে পুরান ঢাকার এই এলাকা থেকে আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার একটি উদ্যোগ নেয়। তখন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু (প্রয়াত)। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা বার, কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তখন আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে তৎপর হন। এজন্য কেরানীগঞ্জ, রাজধানীর বেগুনবাড়ী ও হাতিরঝিলের আশপাশের কিছু এলাকা এবং আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর এলাকা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সরকারের পরিবর্তন ও পরবর্তী সময়ে উদ্যোগের ঘাটতি এবং আইনজীবীদের একাংশের আপত্তিতে উদ্যোগটি থমকে যায়। এর আগে-পরেও আদালত স্থানান্তর বা বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি।
২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আইনমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তার সময়েও আদালত এ এলাকার অন্যান্য সরকারি স্থাপনা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রবীণ এই আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনজীবীদের অসুবিধা ও আপত্তির কারণে তখন তা সম্ভব হয়নি। এলাকাটি এখন আদালতের জন্য উপযুক্ত নয়। বাস্তবতা হলো, এখান থেকে স্থানান্তর করাটাও কিন্তু কঠিন কাজ। আমার মনে হয় এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে বিচারপ্রার্থী, বিচারক ও আইনজীবীরা কিছুটা স্বস্তি পান।’
২৪ বছর আগের উদ্যোগের সময় ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু (এখন ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি)। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, তখন উদ্যোগটি সফল হলে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হতো। শত বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বিচারকাজ চলছে। দিনে দিনে জায়গাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়েছে। আইনজীবীও বেড়েছে। বিচারপ্রার্থী বেড়েছে। ভবন ও এজলাস বেড়েছে। এখন চাইলেও আদালত স্থানান্তর কঠিন তবে অসম্ভব নয়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ঢাকা ল রিপোর্টস-এর (ডিএলআর) সম্পাদক অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপযুক্ত জায়গায় নেই আদালতগুলো। স্থানান্তর করলে ভালো হয়। তবে করবে কি না তা সরকারের পলিসির বিষয়।’
ঘুষগ্রহণকারী বেশিরভাগ কর্মকর্তাই নিজের নাম রেখেঢেকে চলেন। সবার সঙ্গে ঘুষের ব্যাপারে আলোচনা করেন না। সাধারণত কর্মচারী বা ‘বিশ^স্ত’ লোকের মাধ্যমে ঘুষ নেন তারা। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই উদার কক্সবাজারের রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ।
তিনি ঘুষের আলাপ ও দর-কষাকষি নিজে করতে পছন্দ করেন। তার কোনো রাখঢাক নেই। নিজের অফিস কক্ষে বসেই ঘুষ নেন। তবে দরজাটা বন্ধ করে নেন। ঘুষদাতাদের তিনি সন্ধ্যার পর আসতে উৎসাহিত করেন।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রামু উপজেলার শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো কাজই ঘুষ ছাড়া হয় না। ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন নুর মোহাম্মদ। কাজ বুঝে তিনি ঘুষের রেট ঠিক করেন। শিক্ষকপ্রতি এমপিওতে নতুন স্কুলের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার আর পুরনো স্কুলের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা। কর্মচারীপ্রতি এমপিওতে ঘুষ নেন ৩০ হাজার টাকা। উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষ নেন ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। নামের ভুলসহ অন্যান্য ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে ঘুষ নেন ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর নতুন এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোর সব শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওতে প্যাকেজ হিসেবে ঘুষ নেন ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি রামু উপজেলার ধেছুয়া পালং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ওসমান গনির কাছ থেকে ৩১ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। সেই ঘুষগ্রহণের ভিডিও দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ প্রধান শিক্ষক ওসমান গনির কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন। বেশ দর-কষাকষিও করেন। ভিডিও কথোপকথনে বলতে শোনা যায় :
নুর মোহাম্মদ : তাড়াতাড়ি কথা শেষ করেন। আমি আপনাদের কাজগুলোই করছি।
ওসমান গনি : ও তো আমাকে গত পরশু ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেটাও আরেকজনের কাছ থেকে ধার করে নিয়েছে। সেটা আমি আপনাকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নেননি। আমি আজ সকালে আরও ৫ হাজার টাকা চাপ দিয়ে নিয়েছি। কিন্তু সে আমাকে বলেছে, যদি আপনি আরও ৫ হাজার টাকা দিতে পারেন তাহলে হয়তো স্যার আমার ফাইলটা প্রসেস করত।
নুর মোহাম্মদ : ও তো এসেছিল। আমি তাকে বলেছি, আপনার হেডমাস্টারকে নিয়ে আসেন। এখনই আপনি আমাকে ২০ হাজার দেবেন।
ওসমান গনি : স্যার, এখন ১৫ হাজার এনেছি। আর ৫ হাজার কাল আপনার বিকাশ বা নগদে পাঠিয়ে দেব।
নুর মোহাম্মদ : ঠিক আছে, এমপিও হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু বাকি ২০ হাজার দেবেন। এটা নিয়ে কিন্তু নয়-ছয় করবেন না। ওই ৫ হাজার কালই দিয়ে যাবেন। আর বাকি ২০ হাজার যেদিন বেতন হবে সেদিন দেবেন। আমি এই টাকা আর চাইব না। আপনি এর জিম্মাদার হলেন।
ওসমান গনি : ঠিক আছে, স্যার। (তিনি একটি খামের ভেতরে ১৫ হাজার টাকা নুর মোহাম্মাদের হাতে দেন, তিনি তা তার ড্রয়ারে রাখেন।)
নুর মোহাম্মদ : এই এমপিওতে আপনারও একটা বিষয় ছিল।
ওসমান গনি : (এক হাজার টাকার তিনটি নোট নুর মোহাম্মাদের হাতে দেন। তিনি টাকাটা গুনে দেখে আবার ড্রয়ারে রাখেন।) এটা স্যার সামান্য, আপনাকে সম্মান করলাম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ওসমান গনি যে শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ দেন তিনি ধেছুয়া পালং উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক কাম সহকারী শিক্ষক আলী আহমেদ। তার এমপিওভুক্তির জন্য ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। যার ২০ হাজার ওসমান গনির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। একই দিন ওই স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক কামরুন নেছার উচ্চতর স্কেলের জন্য ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন নুর মোহাম্মদ। আর প্রধান শিক্ষক ওসমান গনির উচ্চতর স্কেলের জন্য ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ওসমান গনির কাছ থেকে ৩১ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
রামুর ধেছুয়া পালং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওসমান গনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। কোনো কাজ তিনি ঘুষ ছাড়া করেন না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের পক্ষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
আরও জানা গেছে, পশ্চিম গোয়ালিয়া পালং এসইএসডিপি উচ্চবিদ্যালয়টি সম্প্রতি এমপিওভুক্ত হয়েছে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও ৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ৫ জন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। ওই স্কুলের জন্য প্যাকেজ হিসেবে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ। এ ছাড়া নতুন এমপিওভুক্ত ছ্যালাতলী একে আজাদ উচ্চবিদ্যালয়েরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার ও কর্মচারীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ।
নাম প্রকাশ না করে রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, ‘আমাদের স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির দুজন কর্মচারী উচ্চতর স্কেলের জন্য আবেদন করলে তাদের কাছ থেকেও ঘুষ নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ। উচ্চতর স্কেলে তাদের মাসে মাত্র ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেতন বাড়বে। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে।’
গত ২৬ এপ্রিল ধেছুয়া পালং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওসমান গনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের ঘুষগ্রহণ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নুর মোহাম্মদ রামু উপজেলায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই ঘুষগ্রহণ শুরু করেন। শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও, বিএড স্কেল, উচ্চতর স্কেল, নাম সংশোধনসহ বিভিন্ন ফাইলে ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। টাকা না দিলে ফাইল ছাড় করা হয় না। বাধ্য হয়েই গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তার অফিসে আমার কাছ থেকে ৩১ হাজার টাকা ঘুষগ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ করি।’
রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের চাওয়া-পাওয়া থাকে। সেগুলো পূরণ করতে না পারলে তারা প্রোপাগান্ডা ছড়ান।’ ভিডিওতে আপনাকে সরাসরি ঘুষ নিতে দেখা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকাল কাটিং-কুটিং করে অনেক কিছুই করা যায়। ভিডিওটা সঠিক নয়।’
গত ২৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়েছে, রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আসছে। বিশেষ করে এমপিও ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জোরপূর্বক বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, অডিও-ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছে। তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি বেপরোয়া। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রামু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আর তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
নিজের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি আর সময়কে গল্পের মোড়কে কালজয়ী করেছেন তিনি। সুনিপুণ লেখনীতে ব্যর্থ বিপ্লবের আক্ষেপ উসকে দিয়েছেন লাখ-কোটি তরুণের মনে। সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধ চেতনার বারুদ ঠেসে দিয়েছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তার লেখায় এক প্রজন্মের অপ্রাপ্তির আক্ষেপ আরেক প্রজন্মকে করেছে বিস্ফোরণোন্মুখ। তার উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের চরিত্র আর ঘটনাপ্রবাহে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে অনেক তরুণ। তাদের করেছে স্বপ্নচারী। সাতকাহনের দীপাবলির মতো তরুণী থেকে নারী হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা পেয়েছে তরুণীরা। হতে চেয়েছে কিশোর গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুনের মতো দুঃসাহসী। ১৯৭৫ সালের দৌড় গল্প দিয়ে শুরু করে প্রায় পাঁচ দশক ধরেই গল্প-উপন্যাস দিয়ে একটা প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার।
গতকাল সোমবার ডুয়ার্সের চা-বাগান, নকশালবাড়ি আন্দোলনের ব্যর্থতার স্মৃতি আর লাখো-কোটি পাঠককে ফেলে অনন্তলোকের কালপুরুষ হয়ে গেলেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৮১ বছরের সমরেশ মজুমদারের।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিককে। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। গতকাল সব সমস্যা কাটিয়ে চিরবিদায় নিলেন ১৯৪৪ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম নেওয়া কালজয়ী লেখক সমরেশ।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে।
উত্তরবঙ্গের শৈশব আর কৈশোরের স্মৃতি বারবার এসেছে সমরেশের সৃষ্ট গল্প আর চরিত্রের মধ্যে। সমরেশের প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক স্তরে। এরপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দেশ পত্রিকায় দৌড় প্রকাশিত হওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপর একের পর এক স্মরণীয় ছোটগল্প, গল্প, উপন্যাসের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সাতকাহন, তেরো পার্বণ, উনিশ-বিশ, টাকা পয়সা, গর্ভধারিণী, অর্জুন মেজরের অ্যাডভেঞ্চার, এই আমি রেণু, অবশ, স্মরণাগত, দিন যায় রাত যায়, ফেরারি, তীর্থযাত্রী, বন্দি নিবাস, বুনো হাঁস, নিকট কথা, শ্রদ্ধাঞ্জলি, অনুপ্রবেশ, ওরা এবং ওদের মায়েরা, দাউ দাউ আগুন, হারামির হাতবাক্স, বিলে পালায়নি প্রমুখ। তবে বাংলা সাহিত্যের পাঠক তাকে সবচেয়ে বেশি মনে রাখবে উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষের ট্রিলজির জন্য।
তার সাহিত্যিক জীবনের একেবারে গোড়ার দিকে লেখা এ তিন উপন্যাস তাকে রাতারাতি পশ্চিমবঙ্গের একজন তারকা লেখকে পরিণত করে। পরবর্তী সময়ে এর চতুর্থ পর্ব ‘মৌষলকাল’ লেখেন সমরেশ। তবে নকশাল আমলের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘কালবেলা’র চরিত্র অনিমেষ ও মাধবীলতা সমরেশ মজুমদারের অনন্য এক সৃষ্টি বলেই গণ্য করা হয়, যা অসংখ্য পাঠকের ভালোবাসা ও সমাদর পেয়েছে। ‘কালবেলা’কে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আধুনিক ‘ক্ল্যাসিক’ বলেও মনে করেন অনেকে। স্লোগান, বিপ্লব, রক্ত, বোমা ও প্রেমের এক তোলপাড় ফেলা এ কাহিনির জন্য ১৯৮৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ (বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড) পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপ্লব, সংগ্রাম ও জীবনকে অন্যভাবে যাপনের কাহিনি কখনো সমরেশ ছেড়ে যাননি। তার ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাস কার্যত বৈপ্লবিক। সমাজতন্ত্র, সমাজ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে হিমালয়ের কোলে, সান্দাকফু পেরিয়ে এক বরফঢাকা গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন উপন্যাসের তরুণ চরিত্রদের।
গোয়েন্দা-গল্পেও সমরেশ সিদ্ধহস্ত ছিলেন উল্লেখ করে দ্য ওয়াল লিখেছে, বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কম নেই। ফেলুদা, কাকাবাবু, ব্যোমকেশ সবাই স্বকীয়ভাবে বিরাজ করছে, কিন্তু সবাই কলকাতায় থাকেন। রহস্য ধরতে হিল্লি-দিল্লি যান। সেখানে সমরেশের গল্পের গোয়েন্দা, তথা, সত্যসন্ধানী অর্জুন জলপাইগুড়ির ছেলে। কলকাতাতেও রহস্য সমাধান করতে হয়েছে। কিন্তু তার আসল জায়গা জলপাইগুড়ি।
অনেকে তাকে ‘আরবান’ লেখক বলে বর্ণনা করলেও সেই জলপাইগুড়ির শৈশব-কৈশোরের চা-বাগানের জীবন, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতা থেকে ছোট ছোট চরিত্র ঘুরেফিরে এসেছে শুধু তার প্রধান উপন্যাসগুলোতেই নয়, ছোটগল্পেও। তিস্তার প্রবাহের মতো সেসব আখ্যান একটি প্রজন্মকে ভাসিয়েছে আবেগ, ভালোবাসা আর আক্ষেপে।
২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় মাগুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মেধাবী ছাত্র বিশ্বজিৎ বিশ্বাস মারা যান। এ ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছিল। থানায় মামলা হলে চালক সোলাইমান শেখকে আটক করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এখনো মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি এ ঘটনার। একই সময় গাইবান্ধায় প্রান্ত নামে পাঁচ বছরের একটি শিশু বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। থানায় মামলা হলেও চার্জশিট হয়নি। এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত আট বছরে ১০ হাজার ৯৯০টি মামলার তদন্ত শেষ করতে পারছে না পুলিশ। এসব মামলা নিয়ে অদৃশ্য চাপে থাকছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলা যাতে গতিতে না চলে সে জন্য পরিবহন নেতারা পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করছেন।
গত ৩০ বছরে সারা দেশে ৯৮ হাজার ৬৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে অনেক। আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে দিনযাপন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, সম্প্রতি পুলিশের একটি গবেষণায় ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া চলাচলকে। সড়ক-মহাসড়কে অপরিকল্পিত গতিরোধকগুলোও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের পাশে হাটবাজার, নসিমনসহ অবৈধ যান চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ আছে, অনেক পরিবহন মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিচ্ছেন না। আবার অনেক চালকের লাইসেন্সও থাকে জাল। গত এক বছর ধরে পুলিশ সদর দপ্তর অনুসন্ধান চালিয়ে আরও নিশ্চিত হয়, টমটম-নসিমনসহ অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কেও বেপরোয়াভাবে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হচ্ছে।
মাসখানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা ও মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বিভিন্ন রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি। এসব বৈঠকে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত। গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন এবং চালকের লাইসেন্স না থাকলে কোনো ছাড় না দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া অবৈধ টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও নসিমনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশের যেসব সদস্য বা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা ‘অর্থ কামাচ্ছেন’ তাদের তালিকা ধরে ধরতে বলা হয়েছে। কোনো বাধাই যাতে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয় বৈঠকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সড়ক প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে যেসব অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক বা মহাসড়কে পুলিশের কিছু সদস্য বা রাজনৈতিক নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করছে, তার তালিকা আছে আমাদের কাছে। গত আট বছর চার মাসের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখনো ১০ হাজারের বেশি মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এসব মামলা দ্রুত শেষ করে চার্জশিট দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলো হওয়ার পর পরিবহন নেতারা পুলিশকে চাপ দিচ্ছেন বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। যানবাহন চালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে তদবির করে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। যারা এসব তদবির করেন তাদেরও তালিকা করতে জেলা পুলিশকে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাস, ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ নসিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলের শিকার হচ্ছে বলে তদন্তে এসেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসছি। একটি নিয়মের মধ্যে থেকে যানবাহন যাতে চলাচল করে সেদিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর থানায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো দ্রুত তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। কোনো চাপের কাছে পুলিশ মাথানত করে না, করবেও না ভবিষ্যতে।
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এ আইনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কে কমছে না মৃত্যুর ঘটনা। আইনে প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দ-বিধির ৩০৪-বি ধারায়, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে। একই সঙ্গে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আইনে পেশাদার-অপেশাদার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ- দেওয়ারও বিধান রাখা হয়েছে। তাছাড়া আরও বেশ কিছু জরিমানার নতুন বিধানও যুক্ত হয়েছে। মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানো, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালক ছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী ওঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদ- বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব আইন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে। সড়কে এনফোর্সমেন্ট তো আমরাও করি, পুলিশও করে। দুর্ঘটনা আগের চেয়ে কমে এসেছে। কোনো ঘটনা ঘটলে থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা চাচ্ছি যেকোনো মামলা সুষ্ঠুভাবে যেন তদন্ত শেষ হয়। প্রচার প্রচারণা ও চালক মালিকদের সচেতনতা করার কাজও করতে হচ্ছে। মানুষকে সতর্ক হতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা এবং পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১১ দফা সুপারিশ নিয়ে কাজ করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে গঠিত এ কমিটিকে ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাস্কফোর্সের কোনো সুপারিশই আমলে নিচ্ছে না কেউ। এসব নিয়ে কমিটির কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, সব দুর্ঘটনায় মামলা হয় না। সাধারণত যেসব দুর্ঘটনায় সংঘর্ষ বা অন্য কোনো যানবাহন ও পথচারীকে ধাক্কা ও চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটে, সেগুলোয় মামলা হয়ে থাকে। বাকিগুলোয় জিডি করা হয়। আবার মামলা হলেও তদন্তের জন্য দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে ৩ হাজার ১৩টি। ১৯৯৫ সালে ৩ হাজার ৩৪৬টি, ১৯৯৬ সালে ৩ হাজার ৩৯০টি, ১৯৯৭ সালে ৫ হাজার ৪৪৮টি, ১৯৯৮ সালে ৪ হাজার ৭৬৯টি, ১৯৯৯ সালে ৪ হাজার ৯১৬টি, ২০০০ সালে ৪ হাজার ৩৫৭টি, ২০০১ সালে ৪ হাজার ৯১টি, ২০০২ সালে ৪ হাজার ৯১৮টি, ২০০৩ সালে ৪ হাজার ৭৪৯টি, ২০০৪ সালে ৩ হাজার ৯১৭টি, ২০০৫ সালে ৩ হাজার ৯৫৫টি, ২০০৬ সালে ৩ হাজার ৭৯৪টি, ২০০৭ সালে ৪ হাজার ৮৬৯টি, ২০০৮ সালে ৪ হাজার ৫২৮টি, ২০০৯ সালে ৩ হাজার ৩৮১টি, ২০১০ সালে ২ হাজার ৮২৭টি, ২০১১ সালে ২ হাজার ৬৬৭টি, ২০১২ সালে ২ হাজার ৬৩৬টি, ২০১৩ সালে ২ হাজার ২৯টি, ২০১৪ সালে ২ হাজার ২৭টি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৩৯৪টি, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫৬৬টি, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৫৬২টি, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৬০৯টি, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৮৫৬টি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৭৮৯টি, ২০২১ সালে ২ হাজার ৯৯২টি, ২০২২ সালে ৩ হাজার ১২টি ও ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২৮৯টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে দিনের বেলায়।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর থানায় মামলা হলে পরিবহন নেতাদের চাপ আসে তা সত্য। কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুর্ঘটনার মামলার চার্জশিট দিতে একটি নির্দেশনা এসেছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে কোনো অদৃশ্য চাপ দিলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
যুদ্ধকবলিত সুদান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশিদের প্রথম দল। গতকাল সোমবার সকালে প্রথম পর্বে ১৩৬ জন বাংলাদেশি ঢাকার হজরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গল বা বুধবার সুদান থেকে বাংলাদেশিদের পরবর্তী ব্যাচ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
ঢাকায় পৌঁছানো প্রত্যেক বাংলাদেশিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে নগদ ৩ হাজার টাকা ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) পক্ষ থেকে ২ হাজার টাকা প্রদানের পাশাপাশি খাবার সরবরাহ করা হয়। বিমানবন্দরেই সুদান ফেরত বাংলাদেশিরা তাদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে হতাশা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান আহমদ তাদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘চিন্তা করবেন না। দেশকে আপনারা অনেক কিছু দিয়েছেন। আপনারা সুদানে সবকিছু হারিয়েছেন। আপনারা প্রত্যেকে খালি হাতে এসেছেন। আপনাদের পাশে থাকার জন্য এবং আপনাদের সাহায্য করতে আমরা এখানে এসেছি। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে সবাইকে যথাসাধ্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আইওএম আপনাদের সহায়তা করবে। যাতে আপনারা চলতে পারেন। আপনাদের কিছু অসুবিধা আমরা লাঘবের চেষ্টা করব।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী আরও বলেন, সুদান থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুদান ফেরত সব বাংলাদেশিকে পুনর্বাসনের জন্য ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে।
সুদানের থাকা আরও বাংলাদেশিদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা আশ্বস্ত হতে পারেন, অতিসত্ত্বর বাকিদেরও নিয়ে আসা হবে। তবে ফেরত আসা সবাইকে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। যাতে আমরা পরবর্তী সময়ে আপনাদের কল্যাণে কাজ করতে পারি। সুদানের পরিস্থিতির উন্নতি হলে এসব কর্মীদের আবার ফেরত পাঠানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়াম, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. শোয়াইব আহমাদ খান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঞা, আইওএম বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ নুসরাত ফাতেমা গাজ্জালি এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।