
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লার অভাবে দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটে বিল বকেয়ার কারণে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার মজুদও প্রায় শেষের দিকে। দেশের বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়ে এমন টানাপড়েনের কারণে তীব্র লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ডলার সংকটে আমদানিকৃত কয়লার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চালানো যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এরমধ্যে কয়লা আনা না গেলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দেশে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র কম চালানো হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। অন্যদিকে গ্যাসের সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে সচল রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে পায়রা ও রামপাল এ দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। কয়লা আমদানির জটিলতায় চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। দুদিনের মধ্যে রামপাল চালু হবে। পায়রার কয়লা আমদানি নিয়ে সংকট কাটাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।’
কয়লা আমদানিতে ডলার সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বরাবর সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এতে সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, মজুদকৃত কয়লা দিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। কয়লা সরবরাহ বিঘœ হলে ওই সময়ের পরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, এখন পর্যন্ত যে কয়লার মজুদ আছে তা দিয়ে ২০-২২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। কয়লা আমদানির জন্য পেমেন্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। সময়মতো পেমেন্ট করা না গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। তবে আশা করছি বিদ্যুৎ বিভাগ দ্রুত এর সমাধান করবে।’
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে সিএমসি। চীনের এই প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্ধেক মালিক। তারা ডেফার্ড পেমেন্টের (আমদানির ৬ মাস পর মূল্য পরিশোধ) শর্তে শুরু থেকেই ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কয়লা আমদানির ঋণপত্র স্থাপন করে আসছে। কিন্তু, ডলার সংকটে কয়লা আমদানির কোনো বিল পরিশোধ না করায় গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিস্থিতিতে চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নতুন করে কয়লা আমদানিতে সিএমসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে বকেয়া পরিশোধ না করলে কেন্দ্রটির জন্য আর কয়লা আমদানি করতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১৩ এপ্রিল বিসিপিসিএলকে চিঠি দিয়ে সিএমসি জানায়, এপ্রিলে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে মে মাসের জন্য এলসি খোলা যাবে। আবার মে মাসে ৭০ মিলিয়ন ডলার এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার হারে পরিশোধ করা হলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঋণপত্র খোলায় কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু এপ্রিল মাসের কিস্তি শোধ করতে না পারায় চলতি মাসে কিস্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২০ মিলিয়ন ডলার।
চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, ইতিপূর্বে বকেয়া পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালি ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা কামনা করা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। দ্রুত এই বকেয়া পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২০ সালে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল এই কেন্দ্রটি। গড়ে দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুতের জোগান আসে কেন্দ্রটি থেকে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক মাস আগে জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রমজান মাস জুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণেও এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল পিডিবি। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরোমাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে। এখন যদি কয়লার অভাবে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় সংকট তৈরি হবে। এতে সাধারণ মানুষের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে একটি সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে আদৌ পাওনা পরিশোধ করা যাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ সরকার ভয়াবহ ডলার সংকটে রয়েছে। তাছাড়া বকেয়ার কিস্তি কোনোভাবে পরিশোধ করা হলেও কয়লা আমদানি ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় এক মাস সময় লাগবে। সে হিসাবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করলেও কয়লা সংকটে তা বন্ধ রয়েছে। সাধারণত কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯০ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখা বাধ্যতামূলক হলেও রামপালের প্রথম ইউনিট চালুর ২৩ দিনের মাথায় কয়লার অভাবে গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ এপ্রিল আবার কেন্দ্রটি চারদিন বন্ধ থাকে। উৎপাদন শুরুর কিছুদিনের মাথায় ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় গত ২৩ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রটির জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে গতকাল ৫৫ হাজার টন কয়লা চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে এই কয়লা আনা হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। সব মিলে আরও অন্তত তিন/চার দিন সময় লাগবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে।
সূত্রমতে, রামপালে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। সে হিসেবে এই পরিমাণ কয়লা দিয়ে ১১ দিনের মতো চলবে। দু’সপ্তাহ পর আবার কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আকরাম উল্লাহ এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিবার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খানিকটা বেকায়দায় আছে। প্রবাসী আয়, রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুখবর নেই। অর্থ জোগাড়ে ঋণদানকারী সংস্থার বিভিন্ন শর্ত মেনে সরকার ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব শর্ত আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তির অঙ্গীকার রয়েছে। রাজস্ব সংস্কারসহ শর্তের অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষ আরও চাপে পড়বে। অথচ জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হওয়ায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে জনগণকে খুশি করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শেষ বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন বলে জানা গিয়েছে। এবারই প্রথম বাজেট বক্তৃতা অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে সরাসরি লাইভ স্ট্রিমিং করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগামী বাজেট নিয়ে গাউডলাইন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ গাইডলাইন সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকেও মতামত নিয়েছে। ঋণদানকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে এমন অঙ্গীকার করেই ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা না হলে ঋণের পরের কিস্তি ছাড় করা হবে না বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে। আর তাই এবারের বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নে আইএমএফের দেওয়া শর্তের কতটা অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হয়েছে।
এসব বৈঠকে পাওয়া সব মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শ যোগ-বিয়োগ করে হিসাব কষে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চলতি সপ্তাহেই উপস্থাপন করা হবে। এই রূপরেখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বাজেট প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় বসবেন। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে কিছু যোগ বা বাদ দেওয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত রূপরেখা বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বাজেটের আকার : অর্থ মন্ত্রণালয়ের রূপরেখায় আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা নির্র্ধারণ করা হয়েছে। এখানে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা, ঘাটতি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধে ব্যয় ১ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার ধরে নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ থাকবে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করা। আইএমএফের শর্ত মেনে রাজস্ব আদায় বাড়ানোও সরকারের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ। কারণ রাজস্ব আদায় করতে হলে জনগণের ওপর চাপ বাড়বে। এতে নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় জনতুষ্টির পরিবর্তে সমলোচনার মুখে পড়তে পারে। তাই আসছে বাজেট সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের।
রূপরেখায়, আগামী অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ভাতা এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। ২৪ লাখ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর কথাও আছে।
রাজস্ব আদায় : অর্থবছর শেষ হতে এখনো এক মাস বাকি। এরই মধ্যে এনবিআরের ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এমন প্রেক্ষাপটেও আইএমএফের চাপে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। যা চলতিবারের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআর স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে, আইএমএফ আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) তার অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করার শর্ত দিয়েছে। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। গত ৫০ বছরে দুইশোর বেশি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে এর বেশির ভাগই বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে নিত্যপণ্যসহ অনেক জিনিসের দাম বাড়বে। এছাড়া কর অবকাশ সুবিধা কমানো, রাজস্ব আদায়ে কঠোর আইনি প্রয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন ২০ লাখ কর দাতা চিহ্নিত এবং নতুন ১৫টি কর অঞ্চল করারও শর্ত মানার চেষ্টা করা হয়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বড় অঙ্কের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বড় হবে। তবে বৈশ্বিক মন্দায় তা কতটা বাস্তব তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
ভ্যাটের আওতা : কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। অর্থাৎ জিডিপির ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ অবদান রাখে, এমন খাতগুলোর ওপর ভ্যাট আরোপ হয় না। জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ। সেখানেও প্রায় অর্ধেক খাতের ওপর ভ্যাট নেই। যেমন রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, মোটরগাড়ি, মোবাইল ফোন, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আছে। এ ছাড়া এনবিআরের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ৫০ ধরনের সেবায়ও ভ্যাট নেই। আসছে বারে আইএমএফের চাপে এসব খাতের বেশির ভাগের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে এসব খাতের পণ্যের দাম বাড়বে।
করমুক্ত আয়সীমা : বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী মাসে প্রকৃত আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই একজন ব্যক্তিকে বছর শেষে কর দিতে হয়। না হলে জেল-জরিমানা। গত মাস ছয়েক ধরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮/৯ শতাংশের ঘরে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছ থেকে করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর ব্যাপক চাপ এসেছে। করদাতা হারানোর ভয়ে এনবিআর এ হার বাড়াতে আপত্তি জানিয়েছে। করদাতা কমাতে চায় না আইএমএফও। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে খুশি রাখতে এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব রূপরেখায় রেখেছেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্টির চেষ্টা : অর্থ মন্ত্রণালয়ের রূপরেখায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আগামী বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া যেতে পারে বলে বলা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের হিসাব করা হলেও মহার্ঘ্য ভাতা খাতে কোনো বরাদ্দ এখনো রাখা হয়নি। মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এ হিসাব আরও বাড়বে।
করপোরেট করহার : করপোরেট কর থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব আদায় করে এনবিআর। এবারে বাংলাদেশ সফরে আসা আইএমএফ প্রতিনিধিদল এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সব খাতে করপোরেট কর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এনবিআরও তাতে রাজি। তবে ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক মন্দায় করপোরেট করহার বাড়াতে একেবারেই রাজি নয়। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ২২ শতাংশ, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তামাকজাতীয় কোম্পানি, মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির করপোরেট কর সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ।
ভর্তুকি : বছর বছর ভর্তুকি বাড়ানোর ধারা থেকে সরে আসার চাপ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির সন্তুষ্টিতে এরই মধ্যে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। জুনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানোর চাপ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির চাপ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় এবং বৈশ্বিক মন্দার কারণে আগামী অর্থবছরে ভর্তর্ুুকি না কমিয়ে বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরে খাদ্য, কৃষি ও বিদ্যুতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিমাণ এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। যা চলতিবারের তুলনায় প্রায় ২২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ২৫ হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং খাদ্যে ৮ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা, রপ্তানি প্রণোদনা, রেমিট্যান্স, পাটজাত দ্রব্যাদিসহ অন্যান্য খাতে ৪৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে।
এমপিওভুক্তি : নির্বাচনী আগের শেষ বাজেট হওয়ায় আগামীতে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি ছিল নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ও সংসদ সদস্যদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে এবারও ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কালো টাকা সাদা : প্রতি বছরের মতো এবারেও অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার স্থায়ী ধারা বহাল রেখে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বিশেষ সুবিধা অর্থ মন্ত্রণালয়ে রূপরেখায় রাখা হয়নি। এনবিআর তাতে সম্মতি জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ। নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় এ বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আইএমএফ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার ঘোর আপত্তি জানিয়েছে।
ই-টিআইএন : আগামী বাজেটে করদাতার ই-টিআইএন না থাকলে অনেক সুবিধা না পাওয়ায় বিষয়ে কঠোরতা আনা হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত কাগজপত্র সংগ্রহ, বাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি কিনতে, গাড়ি এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্র নবায়ন করতে, যে কোনো ব্যবসায়ে লাইসেন্স পাওয়া বা নবায়নে, বাড়ির গ্যাস-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি সংযোগে, জাতীয় সংসদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ রাষ্ট্র পরিচালিত যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে, হোটেল-রেস্তোরাঁ নির্মাণে, নতুন শিল্প স্থাপন, ঠিকাদারি ব্যবসা করতে অর্থবিলে ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক থাকছে। অধিক মূল্যের সোনা, মুক্তা বা মূল্যবান গহনাসহ যে কোনো কেনাকাটা করতে, উচ্চ বেতনের চাকরিতে যোগদান করতে, ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী পড়ানোসহ প্রায় শতাধিক কাজে ই-টিআইএন ব্যবহারের বিধান থাকবে।
সারচার্জ : বেশি সম্পদ থাকলে নিয়মিত করের বাইরে সারচার্জ দিতে হয়। আগামী বাজেটে এনবিআর সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যক্তির তিন কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ থাকলে, কিংবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি থাকলে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের হাউজ প্রোপার্টি থাকলে তাকে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। ধাপে ধাপে বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদের জন্য ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। নতুন প্রস্তাবনায় সব স্ল্যাবেই ৫ থেকে ১০ শতাংশ হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে এনবিআর। আইএমএফ থেকেও একই সুপারিশ করেছে। তবে এ হার না বাড়ানোর ব্যাপক চাপ আছে দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনে নতুনভাবে মাত্র ৬৯৩ কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) জমা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্যের সময়ে ২০২১ সালের জুন মাসে ১০ হাজার ৪৫১ কোটি টাকার ডিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ইউজিসি সেই ডিপিপি পর্যালোচনা করে প্রথম পর্যায়ে অ্যাকাডেমিক প্ল্যান অনুযায়ী জরুরি ভৌত কাঠামো, আসবাবপত্র এবং জরুরি কিছু ইকুইপমেন্ট নিয়ে নতুন করে ডিপিপি প্রণয়নের অনুরোধ করেন। কিন্তু তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিপিপি সামান্য পরিবর্তন করে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা কমিয়ে ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করেন। আর সেই ডিপিপি গত বছরের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে ইউজিসিকে অনেকটা বাধ্য করা হয়েছিল।
তবে গত বছর ২৫ মে দেশ রূপান্তরের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘১০ হাজার কোটির বিশ্ববিদ্যালয়!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর এ প্রতিবেদনটি সারা দেশেই আলোচিত হয়। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সেই ডিপিপি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তবে গত বছরের শেষদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন ভিসি হিসেবে যোগদান করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। তিনি একটি বাস্তবসম্মত ডিপিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। অবশেষে সেই ডিপিপি প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষের পথে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনে এবার মাত্র ৬৯৩ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স বলতে গেলে ছয় বছরের ওপরে। এখনো ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তাই আমরা জরুরি ভিত্তিতে আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে চাই। এ ছাড়া সরকারের আর্থিক অবস্থার ব্যাপারটিও আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। সব মিলিয়ে ৬৯৩ কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ মাসেই তা জমা দেওয়া হবে। এ টাকা পেলে ভালোভাবেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। পরবর্তী সময়ে হয়তো আরও অবকাঠামোসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে। সেগুলো নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের সুযোগ তো রয়েছেই।’
সূত্র জানায়, ৬৯৩ কোটি টাকার ডিপিপিতে মোট জমির পরিমাণ রাখা হয়েছে ৬০ একর। এর মধ্যে ৫০ একর সরকারি জায়গা। আর বাকি ১০ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা। এ ছাড়া এই জমির পুরোটা বাউন্ডারির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ২২ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানেই মূলত অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। অন্যান্য জরুরি ভৌত কাঠামো, আসবাবপত্র এবং কিছু ইকুইপমেন্ট কেনার জন্যও ডিপিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা ৫০ একর সরকারি জমি পেতে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা হয়তো প্রথম তিন-চারতলা প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ রাখব। আর তারপরের তলাগুলোতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে খুব সহজেই আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব।’
আগের ভিসির সময়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সব অবাস্তব ব্যয় ধরা হয়েছিল। সেখানে বাউন্ডারি ওয়াল ২০০ কোটি, দুটি বক্তৃতা মঞ্চ ১০৬ কোটি, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ২০০ কোটি, ১১ তলাবিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন ১৭১ কোটি, আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর টিচিং লার্নিং ২১২৫ কোটি, গবেষণা যন্ত্রপাতি ৭৪৩ কোটি, সার্ভিস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ৮৪৬ কোটি, আরবিকালচার, গার্ডেনিং ও সৌন্দর্যবর্ধন ৭৬ কোটি, ফুটবল-ক্রিকেট গ্রাউন্ড ৭৯ কোটি, স্পোর্টস কমপ্লেক্স ৬৬ কোটি, আট লেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টস ৮০ কোটি, মসজিদ ৭৯ কোটি, স্কলার প্লাজা ৭১ কোটি, লাইব্রেরি ৪০ কোটি, সুইমিং পুল ২৩ কোটি, উপাচার্য বাংলো সাড়ে ৫ কোটি, পাঁচটি ব্রিজ ৫৫০ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন কাজে অবাস্তব ব্যয় ধরা হয়েছিল। এমনকি অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা ও অবাস্তব সব নির্মাণকাজের জন্যও হাজার হাজার কোটি ব্যয় ধরা হয়েছিল আগের ডিপিপিতে।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। ২০১৮ সালের ১২ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছর ১১ জুন অধ্যাপক নূরের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে গত বছর ১৬ নভেম্বর নিয়োগ পান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধানকে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এদিন পৃথক দুটি মামলার শুনানির জন্য লাহোর থেকে ইসলামাবাদের আদালতে গিয়েছিলেন ইমরান। সে সময় হুট করেই তাকে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরে শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন নগরীতে নিরাপত্তা বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
গতকাল ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের খবরটি অফিশিয়ালভাবে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সাইফুল্লাহ। তার বরাতেই সংবাদমাধ্যমগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করে। পরে ইসলামাবাদ পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপির বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা নামে পরিচিত সে মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর পিটিআই নেতারা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার ডাক দেন। পিটিআইয়ের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়, ‘পাকিস্তানের জনগণ এখন আপনাদের সময়। ইমরান খান সবসময় আপনাদের পাশে ছিলেন। এখন সময় তার পাশে দাঁড়ানোর।’ সেই আহ্বানে ইমরানের সমর্থকরা ইসলামাবাদ, লাহোর, পেশোয়ার, পাঞ্জাবসহ কয়েকটি শহরে ১৪৪ ধারা ভেঙেই রাস্তায় নামেন। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শহরে শহরে।
ইসলামাবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের পাঁচ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগে সেখানে ৪৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। করাচিতে পিটিআই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর জানিয়ে ডন বলেছে, সেখান বিক্ষোভ দমনে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। বিক্ষোভকারীরা একটি বাস ভাঙচুর করেছে। পরে তারা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। করাচি ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ বোর্ডের একাধিক গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক মুর্তজা ওহাব। পিটিআই দাবি করেছে, তাদের দলের সিন্ধু অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট আলি হায়দার জাইদিকে করাচিতে অপহরণ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেশোয়ারে আগামী ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি কমিশনার শাহ ফাহাদ। হায়দরাবাদে পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেয়।
লাহোরে সেনেটর ইজাজ চৌধুরীর নেতৃত্বে পিটিআইয়ের সমর্থকরা লিবার্টি চকে জড়ো হয়েছেন। নগরীর আকবর চক, পেকো রোড, মেইন কানাল রোড ও ফয়সাল টাউনও বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডনের এক প্রতিনিধি। সেখানে পিটিআইয়ের সমর্থকদের টায়ার পোড়াতে এবং জোট সরকারের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে দেখা যাচ্ছে, বলেছেন তিনি। ইমরানের জামান পার্কের বাসভবনের বাইরেও সমর্থকদের সরকারি ব্যানার ছিঁড়তে দেখা গেছে।
দক্ষিণের নগরী কোয়েটায় পুলিশের সঙ্গে ইমরান সমর্থকদের সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারী নিহত এবং ছয় পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন আহত হয়েছে বলে প্রাদেশিক গৃহমন্ত্রী জিয়াউল্লাহ লনগোভির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পিটিআইয়ের প্রাদেশিক প্রধান ডা. মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে লাক্কি মারওয়াত জেলার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন এবং সিন্ধু মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
পিটিআই সমর্থকরা লাহোর সেনানিবাসের আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলে টুইটারে এক বার্তা পোস্ট করে জানিয়েছেন সাংবাদিক মুর্তজা আলি শাহ। তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যায়, একদল মানুষ লাঠি হাতে সেনানিবাসের একটি গেট দিয়ে প্রবেশ করছে। তাদের কারও কারও মুখ আংশিক ঢাকা। পরে তাদের কাউকে কাউকে লাঠি দিয়ে দেয়ালে বাড়ি দিতে দেখা যায়। সেখানে ইউনিফর্ম পরা কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের সামনে বিক্ষোভ করেছেন পিটিআই সমর্থকরা।
শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিক্ষোভ করেছেন পিটিআই সমর্থকরা। লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে এবং আশপাশের সড়কে পিটিআই সমর্থকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বলে জানায় ডন।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এক টুইট বার্তায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বেসরকারি ও সরকারি সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ এবং ক্ষতিসাধনকারীদের ‘কঠোর হাতে’ দমন করা হবে। তিনি বলেন, “দুর্বৃত্ত ও গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবে তাদের দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।”
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মঙ্গলবার পাকিস্তান জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির টেলিযোগাযোগ কর্র্তৃপক্ষ। টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় নেটব্লকস।
দেশটিতে আজ বুধবারের কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল, পিয়ারসন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং আইইএলটিএসের সব পরীক্ষা বাতিল করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারক আমির ফারুক। তিনি ইসলামাবাদ পুলিশের প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি সংযম দেখাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এক প্রকার হুঁশিয়ারি বার্তায় বলেছেন, ইসলামাবাদ পুলিশের প্রধান আদালতে হাজির না হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তলব করবেন। ফারুক আরও বলেন, ‘আদালতে আসুন এবং বলুন কেন ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কোন মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হলেন।’
গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় ইমরান খানকে। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে তার ওপর হামলারও ঘটনা ঘটে। হয় অসংখ্য মামলাও। সেসব মামলায় বিভিন্ন সময় ইমরানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও হয়েছে। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থদের প্রতিরোধের মুখে আগের সব কবারই গ্রেপ্তারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে এবার জামিন নিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে আদালত চত্বর থেকেই গ্রেপ্তার করা হলো তাকে।
ডন জানিয়েছে, ইমরানকে আটক এবং আইনজীবীদের মারধরের অভিযোগ করে প্রথম টুইট করেন পিটিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি লেখেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইমরানের গাড়িবহরকে ঘিরে ধরেছিল। পিটিআইয়ের আরেক নেতা আজহার মাসওয়ানি অভিযোগ করেছেন, ইমরানকে আদালতের ভেতর থেকেই তুলে নেওয়া হয়। পিটিআই নেতা মোশাররাত চিমা টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘তারা এখন ইমরান খানকে নির্যাতন করছে। তারা ইমরান সাহেবকে মারধর করছে। তারা খান সাহেবকে কিছু একটা করেছে।’ পিটিআইয়ের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ইমরানের আইনজীবীর ভিডিও প্রকাশ করে লিখেছে, আদালতের সামনে তিনি বাজেভাবে জখম হয়েছেন।
যদিও নির্যাতনের খবর অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, বর্তমানে ইমরান এনএবির হেফাজতে আছেন। বুধবার তাকে একটি দুর্নীতি দমন আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
এদিকে পিটিআই নেতাদের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জরুরি বৈঠকে বসেন। ইমরানের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছয় সদস্যের একটি কমিটি আগামীতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা ঠিক করবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি বা পদায়নে শৃঙ্খলা আনতে নীতিমালা প্রণয়ন করছে মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে গ্রেড-৫ বা নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা কার্যকর হলে মাঠপর্যায়ের কাজের সমন্বয়, বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, গণপূর্তের বদলি বা পদায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম রয়েছে এটা সত্য। এজন্য মন্ত্রণালয় নীতিমালা প্রণয়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তা করা হলে সরকারের বিশেষায়িত এ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। এখন যারা নানা ভালো জায়গায় বদলি বা পদায়নের সুযোগ পাচ্ছেন না তারাও সে সুযোগ পাবেন। তবে ওই নীতিমালা করে নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া কোনো বিবেচনায় সঠিক হবে না। মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকলে সেখান থেকে সরে এসে আগের অবস্থায় রাখতে হবে।
জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ থেকে জারিকৃত অফিস আদেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর সব বদলি বা পদায়নের ক্ষমতা স্থগিত করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা হয়রানিমূলক বদলিসংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়গুলো বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সমন্বয়হীনভাবে বদলি করায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। সেই থেকে বদলি বা পদায়ন বন্ধ ঝুলে রয়েছে। তবে এ সময়ে জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গুটিকয়েক বদলি বা পদায়ন করেছে অধিদপ্তর।
আরও জানা যায়, সরকারি চাকরি আইনের ১১ নম্বর ধারা এবং রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬-এর রুলস ৪(৯)(এ) এর ক্ষমতাবলে সরকার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের সুষ্ঠুভাবে পদায়নের লক্ষ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এ নীতিমালার ‘গণপূর্ত অধিপ্তরের কর্মচারীদের বদলি বা পদায়ন নীতিমালা-২০২৩’ নামে অভিহিত হবে। এ নীতিমালায় ৬টি ধারা এবং ২০টি উপধারা রাখা হয়েছে। এ নীতিমালার ৪-এর ১ উপধারা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের গ্রেড-৫ ও তদূর্ধ্ব পদে বদলি বা পদায়ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত থাকবে। অন্য গ্রেডেরগুলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের বদলি ও পদায়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বরে প্রধান প্রকৌশলীর বদলি ও পদায়নের ক্ষমতা স্থগিত করে। এর উদ্দেশ্য ছিল একটি নীতিমালা করে দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে বিশৃঙ্খলা না হয়।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় গণপূর্তের বদলি বা পদায়নবিষয়ক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেখানে গ্রেড-৫ পর্যন্ত ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে রাখা হয়েছে। ইতিপূর্বে গ্রেড-৫ পর্যন্ত বদলির যে চর্চা গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী করেছেন; তার স্বপক্ষে তারা লিখিত কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি। সার্বিক চিন্তা করেই নীতিমালা চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য ওই সংস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানো।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রকৌশলী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কবির আহমেদ ভূইঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৯৮৬ সালে ‘মার্শাল ল’ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। সেই থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর বদলি বা পদায়নের এখতিয়ার নির্ধারণ করা হয়। যদিও এর আগে থেকেও এমন চর্চা ছিল অধিদপ্তরের। তিনি বলেন, গ্রেড-৫ বা নির্বাহী প্রকৌশলী পদটি মাঠপর্যায়ের কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের বদলি বা পদায়নের ক্ষমতা প্রধান প্রকৌশলীর হাতে না থাকলে তিনি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এতে কাজের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এ ধরনের বিষয় রেখে নীতিমালা চূড়ান্ত হলে গণপূর্ত অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণপূর্তে গ্রেড-৫ বা নির্বাহী প্রকৌশলীরা মাঠপর্যায়ের কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ওই সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ভালো জানেন, কাকে কোথায় রাখলে কাজ ভালো হবে। এজন্য এ ক্ষমতা প্রধান প্রকৌশলীর হাতে থাকা যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় নীতিমালা করে প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর ক্ষমতা কেড়ে নিলে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করতে খুব অসুবিধা হবে। মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।
নীতিমালায় আরও যা থাকছে : নীতিমালার প্রথম ধারা শিরোনাম ও প্রয়োগ। এখানে ক-তে বলা হয়েছে, এ নীতিমালা গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীগণের বদলি/পদায়ন নীতিমালা ২০২৩ নামে অভিহিত হবে। এ ধারার খ-তে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১০ গ্রেড এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মচারীদের বদলি/পদায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। গ-তে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ধারা-২-এ নীতিমালার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ধারা-৩-এ বলা হয়েছে, বিসিএস (গণপূর্ত) ক্যাডার এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১০ গ্রেডের নন-ক্যাডার কর্মচারীদের বদলি বা পদায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ৩-এর ১-এ বলা হয়েছে, কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা, কর্মদক্ষতা, সততা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিগত বছরের চাকরির বৃত্তান্ত বিবেচনায় পদায়ন করা হবে। ৩-এর ২-এ বলা হয়েছে, মাঠপর্যায়ের পদায়নের ক্ষেত্রে একই জেলায় একই পদে স্বল্পবিরতিতে দুই মেয়াদে পদায়ন করা যাবে না। তবে বিশেষায়িত পদসমূহে অর্থাৎ প্রকল্প প্রণয়ন, কাঠামোগত, ইলেকট্রিক্যাল, প্লাম্বিং নকশা প্রণয়ন, পিঅ্যান্ডডিসহ বিভিন্ন নকশা প্রণয়নে কর্মরতদের ক্ষেত্রে পদায়নের মেয়াদ শিথিলযোগ্য। ৩-এর ৩-এ বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহর ছাড়া কোনো কর্মচারীকে নিজ জেলায় পদায়ন করা যাবে না। ৩-এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কাউকে একাধিক প্রকল্পের পরিচালক করা যাবে না। ৩-এর ৫-এ বলা হয়েছে, পার্বত্য বা দুর্গম এলাকায় কর্মচারীর চাকরিকালীন সময় হবে সর্বোচ্চ দুই বছর। তবে চাকরির জীবনে এটা চার বছরের বেশি হবে না। ৩-এর ৬-এ বলা হয়েছে, একই কর্মস্থলে দুই বছর হলে ওই কর্মচারী বদলিযোগ্য হবেন। আর একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় রাখা যাবে না। ৩-এর ৭-এ বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারীর স্ত্রী বা স্বামী উভয়ে চাকরিজীবী হলে একই কর্মস্থলে বা যথাসম্ভব নিকটবর্তী কর্মস্থলে পদায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
৫-এর ক-তে বলা হয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের জোন, সার্কেল, বিভাগ ও উপবিভাগসমূহকে কাজের পরিধি, প্রকৃতি, গুরুত্ব, রাজধানী, বিভাগ, জেলা শহর থেকে দূরত্ব বিবেচনায় তিনটি শ্রেণিতে অর্থাৎ-ক, খ ও গ শ্রেণিতে বিন্যাস্ত করা হবে।
সবশেষ ধারা-৬-এর ১-এ বলা হয়েছে, এ নীতিমালার কোনো অনুচ্ছেদের বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের সফর শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ সকাল ১০টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে, সোমবার (লন্ডন সময়) সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাসস
প্রধানমন্ত্রী তার তিন দেশ সফরের প্রথম ধাপে ২৫ এপ্রিল জাপানে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি১৪০৩) বিকোল ৪টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে সরকারপ্রধানকে স্বাগত জানাতে জাপান লালগালিচা সংবর্ধনা এবং বিমানবন্দরে তাকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান করে।
টোকিওতে অবস্থানকালে তিনি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী আটটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে কৃষি, মেট্রো-রেল, শিল্পের উন্নয়ন, জাহাজ-রিসাইক্লিং, মেধা সম্পদ, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা ও কাস্টমস খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর একই দিনে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৭ এপ্রিল একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন এবং একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সঙ্গে জাইকা, জেট্রো, জেইবিআইসি, জেবিপিএফএল এবং জেবিসিসিইসি-এর নেতাদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেন। তিনি জাপানের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্ত্রী আকি আবে এবং জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে টোকিওতে চার দিনের সরকারি সফর শেষ করে তার তিন দেশ সফরের দ্বিতীয় ধাপে ২৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং কিছু পার্শ্ব ইভেন্ট যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পাশাপাশি একটি নাগরিক সংবর্ধনাতেও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরের তৃতীয় ধাপে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) রাজা ও রানী হিসেবে তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াাশিংটন ডিসি থেকে ৪ মে লন্ডনে পৌঁছেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ৬ মে ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানীর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
লন্ডনে শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার স্ত্রী সুসানা স্পার্কসও লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিনে ক্লারিজ হোটেলের ফয়ের প্রাইভেট ডাইনিং রুমে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার কর্র্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। যুক্তরাজ্য সফরকালে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং রানী জেটসুন পেমার সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে মিসর ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, গাম্বিয়া, নামিবিয়া ও উগান্ডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডও ৭ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে লন্ডনের ম্যারিয়ট হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা নাগরিক সংবর্ধনা দেয় এবং শেখ হাসিনা বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।