
গুলশানের আলোচিত মাদক কারবারি শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানকে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাস তিনেক ছিলেন কারাগারে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন, তারপর কিছুদিন ঢাকায় থেকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন দুবাই।
গাজীপুরে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে একটি ব্যাংকের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জামিন নেন মঞ্জুরুল আলম রতন নামে এক আসামি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে পুরো পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান আরব আমিরাত।
এই দুই আসামির মতো গত ১০ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশের অন্তত ৪২ হাজার আসামির হদিস মিলছে না। তাদের মধ্যে জঙ্গি, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধের আসামি রয়েছে। ওইসব আসামির আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা গরহাজির বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, যেসব আসামির হদিস নেই তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিট ও রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের। এলাকাভিত্তিক তালিকা করতে থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপাররা। ইতিমধ্যে তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিদিনই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসছেন বিভিন্ন মামলার আসামিরা। জামিন মিললেও তাদের ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধী থেকে শুরু জঙ্গি কিংবা বড় অঙ্কের প্রতারণার মামলার আসামিরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
মাসখানেক লাপাত্তা হওয়া আসামিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য তালিকা করতে বলা হয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও দপ্তরকে। এমনকি যারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন তাদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, জামিন নিয়ে অনেক অপরাধী নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না, তা সত্য। যে কোনো আসামি জামিন নেওয়ার সময় শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে জামিনের পর অনেকেই শর্ত মানেন না। যারা জামিনের শর্ত মানছেন না তাদের আইনজীবীদের শোকজের আওতায় আনা প্রয়োজন। এই জন্য আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ওইসব আসামি আদালতে গরহাজির থাকলে তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কাজ করছে। জামিন নিয়ে অনেকে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। কয়েকজনের জন্য ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি এই কৌঁসুলি বলেন,‘জামিন নিয়ে লাপাত্তা অপরাধীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশের প্রতিটি আদালতকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরাও বেশ সতর্ক আছি। ইতিমধ্যে লাপাত্তা হওয়া অপরাধীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে ৪২ হাজার আসামির হদিস মিলছে না। তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। আত্মগোপনে থেকে তারা নানা অপকর্ম করছে। বৈঠকে তাদের প্রোফাইল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব অপরাধী জামিন নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না তাদের তালিকা আছে পুলিশের কাছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিদেশে পালিয়ে গিয়েও তারা রেহাই পাবেন না। ধরা পড়তেই হবে তাদের।’
তবে পুলিশ সূত্র জানায়, গত দশ বছরের ব্যবধানে লাপাত্তা ৪২ হাজার আসামি কোথায় আছেন তা চিহ্নিত করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে পুলিশের সবকটি ইউনিট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গুলশানের আলোচিত মাদক কারবারি মিশু হাসান কয়েক মাস ধরে লাপাত্তা। বর্তমানে তিনি দুবাই অবস্থান করছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তার সঙ্গে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সুসম্পর্ক আছে। তার আরেক সহযোগী ও বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ সময় তিনি দুবাই অবস্থান করেন। প্রায় একযুগ আগে রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় হোটেল সানরাইজে ডিবির দুই কর্মকর্তা খুনের মামলায় সন্ত্রাসী জিসান ও ইখতিয়ার জামিন নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। মগবাজারের মোল্লা মাসুদও একইভাবে চলে গেছেন দেশের বাইরে।
এছাড়া রংপুরের ফারুক আহম্মেদ, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, গাইবান্দার ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত, নাহিদ, হামিদ শফিক, মিলন, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, ঢাকার মাজিদ, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, সিরাজগঞ্জের আবদুল আজিজ, নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, খুলনার মোহাম্মদ আবু তাহের, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাসেম, ফেনীর গিয়াস উদ্দিন, আবদুল আজিজ, জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাখাওয়াত হোসেন, কামরুল ইসলাম, নুরুল আলম, কুমিল্লার দিদারুল আলম, ময়মনসিংহের আবুল কাশেম, কুমিল্লার ইউসুফ, হবিগঞ্জের নুরুল হক, মাওলানা আবু তাহের, মহিবুর রহমান, মৌলভীবাজারের আবদুল হক, বাগেরহাটের মমতাজ উদ্দিন, নাঈম, গোপালগঞ্জের খালেদ, দিনাজপুরের রাশিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের আবু জিহাদসহ অন্যরা জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে আছেন। জঙ্গি নেতা ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা কমিটির সদস্য নওগাঁর আবদুল কাইয়ুম, কুমিল্লার আব্দুল হাই, কিশোরগঞ্জের মুফতি শফিকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন সালেহীন, কুষ্টিয়ার আবু সাঈদ শেখ, শরীয়তপুরের মালেক হোসেন, ঢাকার ধামরাইয়ের আব্দুল্লাহ আল সোহাইল, টাঈাইলের হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম দেশ ছেড়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে তথ্য আছে- রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এলাকায় সক্রিয় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ), কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ কেন্দ্রিক নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (শৈলেন গ্র“প), ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এলাকায় গড়ে ওঠা শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (গাজী-কামরুল), বাংলাদেশ নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (মৃণাল), গণমুক্তি ফৌজ, পাবনা ও কুষ্টিয়া এলাকায় সক্রিয় গণবাহিনী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-রশিদ), সর্বহারা পার্টির বরিশাল, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী গ্রুপ নামে সক্রিয় থাকা তিন অংশের অন্তত ৩ হাজার আসামি জামিন পেলেও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা জামিন নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না তাদের তালিকা ধরে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। তারমধ্যে কারা কারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন তাদেরও একটি তালিকা আছে তাদের কাছে। ওই তালিকাটি তারা ইন্টারপোলের কাছে পাঠাবেন। এটা নিয়ে তারা কাজ করছেন।
মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান মডার্না তিনটি রোগের টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। রোগ তিনটি হলো ক্যানসার, হৃদরোগ ও অটোইমিউন। মডার্নার এমন ঘোষণায় বাংলাদেশে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি রোগভেদে এই টিকা আবিষ্কার নিয়ে কিছু নিরাশাও দেখা দিয়েছে।
দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যানসারের দুটি টিকা ইতিমধ্যেই আবিষ্কার হয়েছে এবং বাংলাদেশে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েক ধরনের ক্যানসারের টিকা হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হৃদরোগ ও অটোইমিউন রোগের কোনো টিকা বিশ্বে আবিষ্কার হয়নি। এর মধ্যে শুধু কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে এক ধরনের হৃদরোগের টিকা হতে পারে। তবে হার্টের ব্লকের বিরুদ্ধে কোনো টিকা আবিষ্কার সম্ভব নয়। একইভাবে অসম্ভব শতাধিক অটোইমিউন রোগের একই টিকা আবিষ্কার। এমনকি পৃথক অটোইমিউন রোগের পৃথক টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও ভীষণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসকরা এসব রোগের চিকিৎসায় বরং টিকার চেয়ে এগিয়ে থাকা স্টেম সেল ও জিন সেল থেরাপি চিকিৎসার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। তারা বলেছেন, টিকা আবিষ্কার হলে ভালো। তবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি নিয়ে গবেষণা অনেক বেশি এগিয়েছে। এখন সেদিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।
দেশের জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা এই অভিমত জানিয়েছেন।
গত ৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মডার্নার এই টিকার তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে মডার্নার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ড. পল বার্টন জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার, অটোইমিউন রোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে টিকা প্রস্তুত হতে পারে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানটি ‘সব ধরনের রোগের’ চিকিৎসার জন্য এ ধরনের সমাধান দিতে পারবে।
সব অটোইমিউনের এক টিকা কঠিন : সব অটোইমিউন রোগের এক টিকা আবিষ্কার কখনোই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজ পর্যন্ত বিশ্বে কোনো অটোইমিউন রোগের টিকা আবিষ্কার হয়নি। শতাধিক অটোইমিউন রোগ রয়েছে। পৃথকভাবে কোনো একটি রোগের টিকা আবিষ্কার হতে পারে। কিন্তু সব অটোইমিউন রোগের জন্য সাধারণ একটা টিকা আবিষ্কার সম্ভব না। কারণ অটোইমিউন রোগের জন্য একটা সাধারণ জিন দায়ী নয়। লাখ লাখ কোটি কোটি জিন আছে। কয়টা জিনের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করবে?
বরং চিকিৎসকরা এই রোগের চিকিৎসায় এগিয়ে থাকা জিন থেরাপি গবেষণায় বেশি আশাবাদী। এ ব্যাপারে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, অটোইমিউন রোগ জেনেটিক ব্যাপার। এই রোগের থেরাপি চিকিৎসা তৈরির চেষ্টা চলছে। কোনো পরিবারে যদি কোনো রোগী থাকে, তার মাধ্যমে সেটি পরিবারের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হলো কি না তা জিন থেরাপির মাধ্যমে জেনেটিক অ্যানালাইসিস করে আমরা বের করতে পারব।
অটোইমিউনের চিকিৎসা ব্যয়বহুল : ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার জন্য এক ধরনের ইমিউনো সেল আছে। এই সেল যখন আর অপ্রয়োজনীয় সেল ধ্বংস করতে পারে না, তখন নানা ধরনের অটোইমিউন রোগ দেখা দেয়। একশর বেশি অটোইমিউন রোগ আছে। এর মধ্যে কিছু রোগ বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। যেমন গিঁটে বাত, থাইরয়েড, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, সোরিয়াসিস (চুলকানি-জাতীয় রোগ), অসারতা, দুর্বলতা, হাঁটতে না পারা ইত্যাদি।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, এসব রোগ সম্পূর্ণ সারে না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একজন রোগীকে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয়। বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল থেরাপির প্রতি মাসে ব্যয় হয় এক লাখ টাকা। আর একই ধরনের বায়ো সিমিলার থেরাপি বের হয়েছে। এটার দাম ২০-৩০ হাজার টাকা।
কার্ডিওমায়োপ্যাথির টিকা হতে পারে : হৃদরোগের ক্ষেত্রে শুধু কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগের টিকা হতে পারে বলে জানান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মহসীন আহমেদ। তিনি বলেন, হার্ট কোনো কারণে বড় হয়ে যায়। এটাকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলে। এটার জন্য কিছু ভাইরাস ও অটোইমিউন ডিজিজ দায়ী। বাংলাদেশে ভাইরাস সিকোয়েন্সব্যবস্থা খুব কম থাকায় আমরা বলতেও পারছি না কোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা সে আক্রান্ত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যদি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করা যায় তাহলে প্রচুর রোগী বাঁচানো সম্ভব।
জেনেটিক হৃদরোগে এগিয়ে থেরাপি : হৃদরোগে টিকার চেয়ে বরং স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা অনেক বেশি আশাবাদী হয়ে উঠছে বলে জানান ডা. মহসীন আহমেদ। তিনি বলেন, কিছু জেনেটিক বা পারিবারিক রোগ আছে। যেমন অনেক পরিবারে সব ভাই-বোনের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। অল্পবয়সী লোকজন মারা যাচ্ছে। তাদের জেনেটিক সিকোয়েন্স করে জিন থেরাপি ও স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা সম্ভব। এই রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য কিছু কিছু জিন দায়ী। সেই জিনগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এসব জিনের বিরুদ্ধে জিন থেরাপির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটা খুব তাড়াতাড়ি বাজারে এলে জেনেটিক হৃদরোগ বন্ধ করা যাবে। কিন্তু ভ্যাকসিন থেরাপির খুব বেশি আপডেট পাইনি।
ক্যানসারের টিকায় আশা, আছে চ্যালেঞ্জও : এখন পর্যন্ত বিশ্বে দুই ধরনের ক্যানসারের টিকা আছে বলে জানান জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ টি এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, লিভার ক্যানসারের জন্য হেপাটাইসিস-বি ও জরায়ু মুখের ক্যানসারের জন্য এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা আছে। এ ছাড়া ক্যানসারের আর কোনো টিকা নেই। পরোক্ষভাবে কিছু টিকা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেগুলোর কার্যকারিতার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
একসময় অন্যান্য ক্যানসারের টিকাও আবিষ্কার হতে পারে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, যেমন পাকস্থলীর ক্যানসার হয় এইচ পাইলোরি (হেলিওব্যাক্টার পাইলোরি) নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য। ৪০-৫০ শতাংশ ক্যানসার রোগীর এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে ক্যানসার হয়। এটার জন্য আমরা কিছু ওষুধ দিই। এটার টিকা হলে তা কার্যকর হতে পারে। ক্যানসারের মূল উৎস যদি উদঘাটন করতে পারি, তাহলে সেটার প্রতিরোধে আমরা টিকাও আবিষ্কার করতে পারি। তবে ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারে চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ একেক ক্যানসারের জীবাণু একেক রকম এবং তাদের সংক্রমণের ধরনও আলাদা। ফলে সব ক্যানসারের জন্য এক টিকা সম্ভব নয়। একেক ক্যানসারের জন্য পৃথক পৃথক টিকা দরকার।
ধীর গতিতে এগোচ্ছে ক্যানসারের চিকিৎসা : বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা এগোচ্ছে, কিন্তু কিছুটা ধীর গতির বলে জানান ডা. এ টি এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা বাড়ছে, ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু রেডিওথেরাপি মেশিন কম। আরও কিছু সরকারি হাসপাতাল দরকার, যেগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে মানুষ চিকিৎসা পেতে পারে। চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। আট বিভাগের আটটি ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে। যকৃৎ বা লিভার ও জরায়ু মুখে ক্যানসারের টিকার সাফল্য ৯০-৯৫ শতাংশ। এই দুই টিকা সরকার বিনামূল্যে দিচ্ছে। এই দুই টিকা বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। ক্যানসার নিরাময়ে আগে একসময় কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নিয়ে কথা বলতাম। এখন ইমিনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি এসেছে। এসব চিকিৎসার সফলতাও অনেক ভালো।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে যারা বোতলজাত পানি পান করেন তাদের জন্য ভালো খবর নেই। এনবিআরের প্রস্তাবে বোতলজাত পানির ওপর রাজস্ব বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এছাড়া প্রসাধনী ও জুয়েলারি পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। এদিকে আগামী অর্থবছরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে বিশেষ সুবিধা আর থাকছে না। ১ জুলাই থেকে প্রচলিত নিয়মে বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত রাজস্ব ও জরিমানা দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে আনতে হবে।
অন্যদিকে রাজস্ব আইনের মারপ্যাঁচে দামি গাড়ির মালিকদের খরচ বেশি বাড়বে। ঘন ঘন যারা বিদেশে যান তাদের ওপরও রাজস্বের থাবা বসানো হতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এখানেই শেষ নয়, বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ নামে এক ধরনের মাশুল দিতে হয়। এই সারচার্জও বাড়ানো হতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব থাকতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ছক কষতে গিয়ে এনবিআর সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়িয়েছে। ধনী হওয়া অপরাধ নয়। তাই শুধু ধনী হওয়ার কারণে অতিরিক্ত রাজস্বের ভার চাপানো হলে দেশ থেকে অর্থ পাচার করে অন্য দেশে তা ব্যবহারে আগ্রহী হবে অনেকে। তবে রাজস্বের জালের আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব সময়োপযোগী।
এনবিআর সূত্র জানায়, রাজধানী থেকেই ৪০ লাখ নতুন করদাতা খুঁজে বের করার হিসাব কষেছে সরকার। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে থেকে আরও ৬০ লাখ করদাতা পাওয়া যাবে বলে আশা করেছে। আগামী ১ জুলাই পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘরের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে করদাতা সন্ধানের কথা জানাবেন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে শুধু করদাতা খুঁজে বের করেই থামছেন না। এসব এজেন্টদের দিয়ে করদাতারা রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না তাও যাচাই করা হবে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, কর এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার ধারণাটি ভালো। তবে উদ্যোগটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শুরুতে হয়তো কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কাজ করার সময় তা সংশোধন করে নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে আয়করের আওতা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য করদাতা সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ধাপে ধাপে করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে পরোক্ষ করের নির্ভরতা কমিয়ে আয়কর আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর রাজস্ব পরিশোধের চাপ কমবে।
সম্পদশালীরা কর দিতে বাধ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। দেশে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষ আয়কর দেওয়ার উপযুক্ত হলেও কর দিচ্ছেন না। তাদের যদি আমরা আস্তে আস্তে কর নেটের আওতায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের রাজস্ব আহরণ অনেক বাড়বে।
অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে বিদ্যমান ভ্রমণ কর ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে যারা সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন তাদের প্রত্যেককে পরিবহনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ৫০০-১২০০ টাকা দিতে হয়। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া এবং তাইওয়ানে ভ্রমণকারীদের জন্য কর ৪ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর গড়ে ৩ হাজার টাকা। এখানেই শেষ না, বছরে নিট আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর কর দিতে হয় ২৫ শতাংশ হারে। এই হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর বাড়ানো হতে পারে। এতে আগামী অর্থবছর থেকে ধনীদের করহার বাড়াবে। একই সঙ্গে সব সø্যাবেই সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। সারচার্জ হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিল মূল্যের ওপর আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত মোট গাড়ির সংখ্যা ৫২ লাখ ৯২ হাজার ৪৪০টি। এর মধ্যে দামি গাড়ি ২৫ হাজারের বেশি। প্রাইভেট কার ৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৯১টি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একাধিক গাড়ি থাকলে নিয়মিত করের বাইরে যে গাড়ির সিসি ক্ষমতা বেশি হবে সেটির ওপর কার্বন কর ধার্য করা হতে পারে। এ কর গাড়ির নিবন্ধন এবং নবায়নের সময় ২৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটি আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো ধার্য করা হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। আগামী বাজেটে দ্বিতীয় গাড়ির অগ্রিম কর বাড়ানোরও প্রস্তাব আসতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আগামীবারে এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ হার কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কেমন বাজেট প্রয়োজন, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেশ রূপান্তরের কাছে শমী কায়সার বলেন, অনলাইন শপ বা ই-কমার্স পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট, ভেন্ডর, সরবরাহকারী, জোগানদার, প্রস্তুতকারী বা আমদানিকারককে তার পাওনা পরিশোধের ওপর উৎসে আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এ কারণ দেখিয়ে ৩ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত দাম দাবি করে। অথচ সাধারণ বা ভৌত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা প্রচলিত দোকান বা শপিং মলের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা না থাকায় পণ্যের দাম কম থাকে। এর ফলে সাধারণ ক্রেতারা একই পণ্য অনলাইন শপ বা ই-কমার্স থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়। তাই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২(২) এবং বিধি ১৬ থেকে ই-কমার্স খাতকে বাদ দিয়ে উৎস কর কাটা থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি। এ বিধান অন্তত ১০ বছরের জন্য কার্যকর করতে হবে।
শমী কায়সার বলেন, নারীদের পক্ষে আলাদা দোকান নিয়ে ই-কমার্সের ব্যবসা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাদের নিজ বাসার ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স করার সুবিধা দিতে হবে। তারা যেন ডিবিআইডির মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে পারে। এসব বিষয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে আনতে হবে।
ব্যবসায়ী এ নেত্রী আরও বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই নারীদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া তাদের ট্রেড লাইসেন্স ফিও কমানো প্রয়োজন। কারণ ডিজিটাল মাধ্যমে যে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করছে তা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার তৈরিতে যুগপৎ ভূমিকা রাখছে। আমরা শুধু বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। অচিরেই দেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলন দেখতে পাব। তিনি বলেন, যেসব লজিস্টিক বা পণ্য ডেলিভারির সেবা অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য ডেলিভারি করে, যা তারা একটি চার্জের বিনিময়ে ব্যবসায়িক সেবা হিসেবে প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ আছে। এ হার পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। দামের বাইরেও ক্রেতাকে এ হার পাওনা হিসেবে শোধ করতে হয়। এতে ক্রেতার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
শমী কায়সার বলেন, ই-ক্যাব, ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে কাজ করছে। করোনাকালে দেশের মানুষের পাশে থেকে সব ধরনের ওষুধ, কোরবানি পশু, আম, সাশ্রয়ীমূল্যে টিসিবির পেঁয়াজ ও নিত্যপণ্য সেবা দিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রেখেছে। এ খাতে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তা। করোনাকালে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান এবং বর্তমানে প্রতিদিন দুই লাখ পরিবারকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ খাত। যার পরিপ্রেক্ষিতে ই-ক্যাব অর্জন করেছে জাতীয় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২০’ ও ’২১। তাই এ খাতে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে আগামীতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, প্রথম যে বিষয়টি একেবারেই বেসিক সেটা হচ্ছে ই-কমার্সের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি বিধিতে ই-কমার্সের সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে সরলীকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি সাধারণ ই-কমার্স শপ এবং মার্কেট প্লেস উভয়ের ব্যবসা পদ্ধতি এবং রেভিনিউ মডেল কিন্তু এক নয়। আমরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ দুটোকে আলাদা করার প্রস্তাব করছি। এতে করে পলিসি প্রণয়নের সুবিধা হবে। কারণ এখানে বেশিরভাগ উদ্যোক্তা কিন্তু ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র। তাই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী এ নেত্রী বলেন, প্রচলিত ব্যবসা বা দোকানের সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় ভিন্ন নীতির কারণে শুরুতেই একটা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের। এ বিষয়ে আসছে বাজেটে নজর দিতে হবে।
শমী কায়সার বলেন, আমাদের অনেক দাবির মধ্য থেকে কয়েকটা মাত্র আমরা চেয়ে আসছি গত কয়েক বছর ধরে। গত ২০-২১ অর্থবছরে একমাত্র দাবি পূরণ হয়েছে, সেটা হলো ই-লার্নিং ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার। গত তিন বছরে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। দ্রুতই বাড়ছে এ সংখ্যা। এ খাতের সমস্যা সমাধানে সরকার নজর দিলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কাতার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বেলা ৩টায় তিনি কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কাল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাতারের দোহায় ‘থার্ড কাতার ইকোনমিক ফোরাম : এ নিউ গ্লোবাল গ্রোথ স্টোরি’ শীর্ষক ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ খলিফা আল থানির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।
ব্লুমবার্গের সহায়তায় আয়োজিত এ ফোরামে অংশ নেবেন বিশে^র বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদসহ প্রযুক্তি, অর্থ ও ব্যবসা খাতের বিশ্লেষকরা। বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকট এবং তা থেকে উদ্ভূত বিরূপ অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মার্চে এলডিসি-৫ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা কাতার গিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফোরামে শেখ হাসিনা ছাড়াও অতিথি হিসেবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ এস আল-সুদানি, জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশভিলি, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ ও অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল জাদান উপস্থিত থাকনেন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস। গতকাল রবিবার মার্কিন দূতাবাসের ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’ শিরোনামে প্রচারিত হালনাগাদ করা ভ্রমণ সতর্কবার্তায় এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিকদের জন্য জারি করা ওই সতর্কতা ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর জন্যও প্রযোজ্য হবে।
মার্কিন নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির আগে বা ওই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মধ্যে এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে পারে। তাই সম্ভাব্য এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের আগাম সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওই বার্তায় আরও বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভগুলো যেকোনো সময় সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে, এগুলো মুহূর্তের মধ্যে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে এটা মার্কিন নাগরিকদের মনে রাখা উচিত। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোনো বড় সমাবেশের আশপাশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে হবে। স্থানীয় ঘটনাসহ আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়ে সচেতন থেকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে নজর রাখতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।