
আগামী অর্থবছরের বাজেটে যারা বোতলজাত পানি পান করেন তাদের জন্য ভালো খবর নেই। এনবিআরের প্রস্তাবে বোতলজাত পানির ওপর রাজস্ব বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এছাড়া প্রসাধনী ও জুয়েলারি পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। এদিকে আগামী অর্থবছরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে বিশেষ সুবিধা আর থাকছে না। ১ জুলাই থেকে প্রচলিত নিয়মে বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত রাজস্ব ও জরিমানা দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে আনতে হবে।
অন্যদিকে রাজস্ব আইনের মারপ্যাঁচে দামি গাড়ির মালিকদের খরচ বেশি বাড়বে। ঘন ঘন যারা বিদেশে যান তাদের ওপরও রাজস্বের থাবা বসানো হতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এখানেই শেষ নয়, বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ নামে এক ধরনের মাশুল দিতে হয়। এই সারচার্জও বাড়ানো হতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব থাকতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ছক কষতে গিয়ে এনবিআর সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়িয়েছে। ধনী হওয়া অপরাধ নয়। তাই শুধু ধনী হওয়ার কারণে অতিরিক্ত রাজস্বের ভার চাপানো হলে দেশ থেকে অর্থ পাচার করে অন্য দেশে তা ব্যবহারে আগ্রহী হবে অনেকে। তবে রাজস্বের জালের আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব সময়োপযোগী।
এনবিআর সূত্র জানায়, রাজধানী থেকেই ৪০ লাখ নতুন করদাতা খুঁজে বের করার হিসাব কষেছে সরকার। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে থেকে আরও ৬০ লাখ করদাতা পাওয়া যাবে বলে আশা করেছে। আগামী ১ জুলাই পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘরের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে করদাতা সন্ধানের কথা জানাবেন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে শুধু করদাতা খুঁজে বের করেই থামছেন না। এসব এজেন্টদের দিয়ে করদাতারা রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না তাও যাচাই করা হবে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, কর এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার ধারণাটি ভালো। তবে উদ্যোগটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শুরুতে হয়তো কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কাজ করার সময় তা সংশোধন করে নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে আয়করের আওতা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য করদাতা সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ধাপে ধাপে করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে পরোক্ষ করের নির্ভরতা কমিয়ে আয়কর আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর রাজস্ব পরিশোধের চাপ কমবে।
সম্পদশালীরা কর দিতে বাধ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। দেশে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষ আয়কর দেওয়ার উপযুক্ত হলেও কর দিচ্ছেন না। তাদের যদি আমরা আস্তে আস্তে কর নেটের আওতায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের রাজস্ব আহরণ অনেক বাড়বে।
অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে বিদ্যমান ভ্রমণ কর ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে যারা সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন তাদের প্রত্যেককে পরিবহনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ৫০০-১২০০ টাকা দিতে হয়। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া এবং তাইওয়ানে ভ্রমণকারীদের জন্য কর ৪ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর গড়ে ৩ হাজার টাকা। এখানেই শেষ না, বছরে নিট আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর কর দিতে হয় ২৫ শতাংশ হারে। এই হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর বাড়ানো হতে পারে। এতে আগামী অর্থবছর থেকে ধনীদের করহার বাড়াবে। একই সঙ্গে সব সø্যাবেই সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। সারচার্জ হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিল মূল্যের ওপর আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত মোট গাড়ির সংখ্যা ৫২ লাখ ৯২ হাজার ৪৪০টি। এর মধ্যে দামি গাড়ি ২৫ হাজারের বেশি। প্রাইভেট কার ৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৯১টি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একাধিক গাড়ি থাকলে নিয়মিত করের বাইরে যে গাড়ির সিসি ক্ষমতা বেশি হবে সেটির ওপর কার্বন কর ধার্য করা হতে পারে। এ কর গাড়ির নিবন্ধন এবং নবায়নের সময় ২৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটি আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো ধার্য করা হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। আগামী বাজেটে দ্বিতীয় গাড়ির অগ্রিম কর বাড়ানোরও প্রস্তাব আসতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আগামীবারে এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
গুলশানের আলোচিত মাদক কারবারি শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানকে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাস তিনেক ছিলেন কারাগারে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন, তারপর কিছুদিন ঢাকায় থেকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন দুবাই।
গাজীপুরে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে একটি ব্যাংকের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জামিন নেন মঞ্জুরুল আলম রতন নামে এক আসামি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে পুরো পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান আরব আমিরাত।
এই দুই আসামির মতো গত ১০ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশের অন্তত ৪২ হাজার আসামির হদিস মিলছে না। তাদের মধ্যে জঙ্গি, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধের আসামি রয়েছে। ওইসব আসামির আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা গরহাজির বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, যেসব আসামির হদিস নেই তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিট ও রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের। এলাকাভিত্তিক তালিকা করতে থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপাররা। ইতিমধ্যে তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিদিনই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসছেন বিভিন্ন মামলার আসামিরা। জামিন মিললেও তাদের ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধী থেকে শুরু জঙ্গি কিংবা বড় অঙ্কের প্রতারণার মামলার আসামিরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
মাসখানেক লাপাত্তা হওয়া আসামিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য তালিকা করতে বলা হয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও দপ্তরকে। এমনকি যারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন তাদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, জামিন নিয়ে অনেক অপরাধী নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না, তা সত্য। যে কোনো আসামি জামিন নেওয়ার সময় শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে জামিনের পর অনেকেই শর্ত মানেন না। যারা জামিনের শর্ত মানছেন না তাদের আইনজীবীদের শোকজের আওতায় আনা প্রয়োজন। এই জন্য আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ওইসব আসামি আদালতে গরহাজির থাকলে তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কাজ করছে। জামিন নিয়ে অনেকে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। কয়েকজনের জন্য ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি এই কৌঁসুলি বলেন,‘জামিন নিয়ে লাপাত্তা অপরাধীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশের প্রতিটি আদালতকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরাও বেশ সতর্ক আছি। ইতিমধ্যে লাপাত্তা হওয়া অপরাধীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে ৪২ হাজার আসামির হদিস মিলছে না। তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। আত্মগোপনে থেকে তারা নানা অপকর্ম করছে। বৈঠকে তাদের প্রোফাইল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব অপরাধী জামিন নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না তাদের তালিকা আছে পুলিশের কাছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিদেশে পালিয়ে গিয়েও তারা রেহাই পাবেন না। ধরা পড়তেই হবে তাদের।’
তবে পুলিশ সূত্র জানায়, গত দশ বছরের ব্যবধানে লাপাত্তা ৪২ হাজার আসামি কোথায় আছেন তা চিহ্নিত করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে পুলিশের সবকটি ইউনিট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গুলশানের আলোচিত মাদক কারবারি মিশু হাসান কয়েক মাস ধরে লাপাত্তা। বর্তমানে তিনি দুবাই অবস্থান করছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তার সঙ্গে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সুসম্পর্ক আছে। তার আরেক সহযোগী ও বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ সময় তিনি দুবাই অবস্থান করেন। প্রায় একযুগ আগে রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় হোটেল সানরাইজে ডিবির দুই কর্মকর্তা খুনের মামলায় সন্ত্রাসী জিসান ও ইখতিয়ার জামিন নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। মগবাজারের মোল্লা মাসুদও একইভাবে চলে গেছেন দেশের বাইরে।
এছাড়া রংপুরের ফারুক আহম্মেদ, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, গাইবান্দার ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত, নাহিদ, হামিদ শফিক, মিলন, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, ঢাকার মাজিদ, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, সিরাজগঞ্জের আবদুল আজিজ, নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, খুলনার মোহাম্মদ আবু তাহের, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাসেম, ফেনীর গিয়াস উদ্দিন, আবদুল আজিজ, জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাখাওয়াত হোসেন, কামরুল ইসলাম, নুরুল আলম, কুমিল্লার দিদারুল আলম, ময়মনসিংহের আবুল কাশেম, কুমিল্লার ইউসুফ, হবিগঞ্জের নুরুল হক, মাওলানা আবু তাহের, মহিবুর রহমান, মৌলভীবাজারের আবদুল হক, বাগেরহাটের মমতাজ উদ্দিন, নাঈম, গোপালগঞ্জের খালেদ, দিনাজপুরের রাশিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের আবু জিহাদসহ অন্যরা জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে আছেন। জঙ্গি নেতা ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা কমিটির সদস্য নওগাঁর আবদুল কাইয়ুম, কুমিল্লার আব্দুল হাই, কিশোরগঞ্জের মুফতি শফিকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন সালেহীন, কুষ্টিয়ার আবু সাঈদ শেখ, শরীয়তপুরের মালেক হোসেন, ঢাকার ধামরাইয়ের আব্দুল্লাহ আল সোহাইল, টাঈাইলের হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম দেশ ছেড়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে তথ্য আছে- রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এলাকায় সক্রিয় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ), কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ কেন্দ্রিক নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (শৈলেন গ্র“প), ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এলাকায় গড়ে ওঠা শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (গাজী-কামরুল), বাংলাদেশ নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (মৃণাল), গণমুক্তি ফৌজ, পাবনা ও কুষ্টিয়া এলাকায় সক্রিয় গণবাহিনী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-রশিদ), সর্বহারা পার্টির বরিশাল, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী গ্রুপ নামে সক্রিয় থাকা তিন অংশের অন্তত ৩ হাজার আসামি জামিন পেলেও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা জামিন নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না তাদের তালিকা ধরে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। তারমধ্যে কারা কারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন তাদেরও একটি তালিকা আছে তাদের কাছে। ওই তালিকাটি তারা ইন্টারপোলের কাছে পাঠাবেন। এটা নিয়ে তারা কাজ করছেন।
মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান মডার্না তিনটি রোগের টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। রোগ তিনটি হলো ক্যানসার, হৃদরোগ ও অটোইমিউন। মডার্নার এমন ঘোষণায় বাংলাদেশে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি রোগভেদে এই টিকা আবিষ্কার নিয়ে কিছু নিরাশাও দেখা দিয়েছে।
দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যানসারের দুটি টিকা ইতিমধ্যেই আবিষ্কার হয়েছে এবং বাংলাদেশে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েক ধরনের ক্যানসারের টিকা হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হৃদরোগ ও অটোইমিউন রোগের কোনো টিকা বিশ্বে আবিষ্কার হয়নি। এর মধ্যে শুধু কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে এক ধরনের হৃদরোগের টিকা হতে পারে। তবে হার্টের ব্লকের বিরুদ্ধে কোনো টিকা আবিষ্কার সম্ভব নয়। একইভাবে অসম্ভব শতাধিক অটোইমিউন রোগের একই টিকা আবিষ্কার। এমনকি পৃথক অটোইমিউন রোগের পৃথক টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও ভীষণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসকরা এসব রোগের চিকিৎসায় বরং টিকার চেয়ে এগিয়ে থাকা স্টেম সেল ও জিন সেল থেরাপি চিকিৎসার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। তারা বলেছেন, টিকা আবিষ্কার হলে ভালো। তবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি নিয়ে গবেষণা অনেক বেশি এগিয়েছে। এখন সেদিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।
দেশের জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা এই অভিমত জানিয়েছেন।
গত ৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মডার্নার এই টিকার তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে মডার্নার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ড. পল বার্টন জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার, অটোইমিউন রোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে টিকা প্রস্তুত হতে পারে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানটি ‘সব ধরনের রোগের’ চিকিৎসার জন্য এ ধরনের সমাধান দিতে পারবে।
সব অটোইমিউনের এক টিকা কঠিন : সব অটোইমিউন রোগের এক টিকা আবিষ্কার কখনোই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজ পর্যন্ত বিশ্বে কোনো অটোইমিউন রোগের টিকা আবিষ্কার হয়নি। শতাধিক অটোইমিউন রোগ রয়েছে। পৃথকভাবে কোনো একটি রোগের টিকা আবিষ্কার হতে পারে। কিন্তু সব অটোইমিউন রোগের জন্য সাধারণ একটা টিকা আবিষ্কার সম্ভব না। কারণ অটোইমিউন রোগের জন্য একটা সাধারণ জিন দায়ী নয়। লাখ লাখ কোটি কোটি জিন আছে। কয়টা জিনের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করবে?
বরং চিকিৎসকরা এই রোগের চিকিৎসায় এগিয়ে থাকা জিন থেরাপি গবেষণায় বেশি আশাবাদী। এ ব্যাপারে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, অটোইমিউন রোগ জেনেটিক ব্যাপার। এই রোগের থেরাপি চিকিৎসা তৈরির চেষ্টা চলছে। কোনো পরিবারে যদি কোনো রোগী থাকে, তার মাধ্যমে সেটি পরিবারের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হলো কি না তা জিন থেরাপির মাধ্যমে জেনেটিক অ্যানালাইসিস করে আমরা বের করতে পারব।
অটোইমিউনের চিকিৎসা ব্যয়বহুল : ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার জন্য এক ধরনের ইমিউনো সেল আছে। এই সেল যখন আর অপ্রয়োজনীয় সেল ধ্বংস করতে পারে না, তখন নানা ধরনের অটোইমিউন রোগ দেখা দেয়। একশর বেশি অটোইমিউন রোগ আছে। এর মধ্যে কিছু রোগ বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। যেমন গিঁটে বাত, থাইরয়েড, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, সোরিয়াসিস (চুলকানি-জাতীয় রোগ), অসারতা, দুর্বলতা, হাঁটতে না পারা ইত্যাদি।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, এসব রোগ সম্পূর্ণ সারে না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একজন রোগীকে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয়। বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল থেরাপির প্রতি মাসে ব্যয় হয় এক লাখ টাকা। আর একই ধরনের বায়ো সিমিলার থেরাপি বের হয়েছে। এটার দাম ২০-৩০ হাজার টাকা।
কার্ডিওমায়োপ্যাথির টিকা হতে পারে : হৃদরোগের ক্ষেত্রে শুধু কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগের টিকা হতে পারে বলে জানান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মহসীন আহমেদ। তিনি বলেন, হার্ট কোনো কারণে বড় হয়ে যায়। এটাকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলে। এটার জন্য কিছু ভাইরাস ও অটোইমিউন ডিজিজ দায়ী। বাংলাদেশে ভাইরাস সিকোয়েন্সব্যবস্থা খুব কম থাকায় আমরা বলতেও পারছি না কোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা সে আক্রান্ত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যদি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করা যায় তাহলে প্রচুর রোগী বাঁচানো সম্ভব।
জেনেটিক হৃদরোগে এগিয়ে থেরাপি : হৃদরোগে টিকার চেয়ে বরং স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা অনেক বেশি আশাবাদী হয়ে উঠছে বলে জানান ডা. মহসীন আহমেদ। তিনি বলেন, কিছু জেনেটিক বা পারিবারিক রোগ আছে। যেমন অনেক পরিবারে সব ভাই-বোনের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। অল্পবয়সী লোকজন মারা যাচ্ছে। তাদের জেনেটিক সিকোয়েন্স করে জিন থেরাপি ও স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা সম্ভব। এই রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য কিছু কিছু জিন দায়ী। সেই জিনগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এসব জিনের বিরুদ্ধে জিন থেরাপির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটা খুব তাড়াতাড়ি বাজারে এলে জেনেটিক হৃদরোগ বন্ধ করা যাবে। কিন্তু ভ্যাকসিন থেরাপির খুব বেশি আপডেট পাইনি।
ক্যানসারের টিকায় আশা, আছে চ্যালেঞ্জও : এখন পর্যন্ত বিশ্বে দুই ধরনের ক্যানসারের টিকা আছে বলে জানান জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ টি এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, লিভার ক্যানসারের জন্য হেপাটাইসিস-বি ও জরায়ু মুখের ক্যানসারের জন্য এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা আছে। এ ছাড়া ক্যানসারের আর কোনো টিকা নেই। পরোক্ষভাবে কিছু টিকা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেগুলোর কার্যকারিতার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
একসময় অন্যান্য ক্যানসারের টিকাও আবিষ্কার হতে পারে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, যেমন পাকস্থলীর ক্যানসার হয় এইচ পাইলোরি (হেলিওব্যাক্টার পাইলোরি) নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য। ৪০-৫০ শতাংশ ক্যানসার রোগীর এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে ক্যানসার হয়। এটার জন্য আমরা কিছু ওষুধ দিই। এটার টিকা হলে তা কার্যকর হতে পারে। ক্যানসারের মূল উৎস যদি উদঘাটন করতে পারি, তাহলে সেটার প্রতিরোধে আমরা টিকাও আবিষ্কার করতে পারি। তবে ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারে চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ একেক ক্যানসারের জীবাণু একেক রকম এবং তাদের সংক্রমণের ধরনও আলাদা। ফলে সব ক্যানসারের জন্য এক টিকা সম্ভব নয়। একেক ক্যানসারের জন্য পৃথক পৃথক টিকা দরকার।
ধীর গতিতে এগোচ্ছে ক্যানসারের চিকিৎসা : বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা এগোচ্ছে, কিন্তু কিছুটা ধীর গতির বলে জানান ডা. এ টি এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা বাড়ছে, ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু রেডিওথেরাপি মেশিন কম। আরও কিছু সরকারি হাসপাতাল দরকার, যেগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে মানুষ চিকিৎসা পেতে পারে। চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। আট বিভাগের আটটি ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে। যকৃৎ বা লিভার ও জরায়ু মুখে ক্যানসারের টিকার সাফল্য ৯০-৯৫ শতাংশ। এই দুই টিকা সরকার বিনামূল্যে দিচ্ছে। এই দুই টিকা বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। ক্যানসার নিরাময়ে আগে একসময় কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নিয়ে কথা বলতাম। এখন ইমিনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি এসেছে। এসব চিকিৎসার সফলতাও অনেক ভালো।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ হার কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কেমন বাজেট প্রয়োজন, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেশ রূপান্তরের কাছে শমী কায়সার বলেন, অনলাইন শপ বা ই-কমার্স পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট, ভেন্ডর, সরবরাহকারী, জোগানদার, প্রস্তুতকারী বা আমদানিকারককে তার পাওনা পরিশোধের ওপর উৎসে আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এ কারণ দেখিয়ে ৩ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত দাম দাবি করে। অথচ সাধারণ বা ভৌত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা প্রচলিত দোকান বা শপিং মলের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা না থাকায় পণ্যের দাম কম থাকে। এর ফলে সাধারণ ক্রেতারা একই পণ্য অনলাইন শপ বা ই-কমার্স থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়। তাই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২(২) এবং বিধি ১৬ থেকে ই-কমার্স খাতকে বাদ দিয়ে উৎস কর কাটা থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি। এ বিধান অন্তত ১০ বছরের জন্য কার্যকর করতে হবে।
শমী কায়সার বলেন, নারীদের পক্ষে আলাদা দোকান নিয়ে ই-কমার্সের ব্যবসা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাদের নিজ বাসার ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স করার সুবিধা দিতে হবে। তারা যেন ডিবিআইডির মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে পারে। এসব বিষয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে আনতে হবে।
ব্যবসায়ী এ নেত্রী আরও বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই নারীদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া তাদের ট্রেড লাইসেন্স ফিও কমানো প্রয়োজন। কারণ ডিজিটাল মাধ্যমে যে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করছে তা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার তৈরিতে যুগপৎ ভূমিকা রাখছে। আমরা শুধু বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। অচিরেই দেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলন দেখতে পাব। তিনি বলেন, যেসব লজিস্টিক বা পণ্য ডেলিভারির সেবা অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য ডেলিভারি করে, যা তারা একটি চার্জের বিনিময়ে ব্যবসায়িক সেবা হিসেবে প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ আছে। এ হার পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। দামের বাইরেও ক্রেতাকে এ হার পাওনা হিসেবে শোধ করতে হয়। এতে ক্রেতার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
শমী কায়সার বলেন, ই-ক্যাব, ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে কাজ করছে। করোনাকালে দেশের মানুষের পাশে থেকে সব ধরনের ওষুধ, কোরবানি পশু, আম, সাশ্রয়ীমূল্যে টিসিবির পেঁয়াজ ও নিত্যপণ্য সেবা দিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রেখেছে। এ খাতে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তা। করোনাকালে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান এবং বর্তমানে প্রতিদিন দুই লাখ পরিবারকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ খাত। যার পরিপ্রেক্ষিতে ই-ক্যাব অর্জন করেছে জাতীয় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২০’ ও ’২১। তাই এ খাতে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে আগামীতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, প্রথম যে বিষয়টি একেবারেই বেসিক সেটা হচ্ছে ই-কমার্সের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি বিধিতে ই-কমার্সের সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে সরলীকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি সাধারণ ই-কমার্স শপ এবং মার্কেট প্লেস উভয়ের ব্যবসা পদ্ধতি এবং রেভিনিউ মডেল কিন্তু এক নয়। আমরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ দুটোকে আলাদা করার প্রস্তাব করছি। এতে করে পলিসি প্রণয়নের সুবিধা হবে। কারণ এখানে বেশিরভাগ উদ্যোক্তা কিন্তু ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র। তাই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী এ নেত্রী বলেন, প্রচলিত ব্যবসা বা দোকানের সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় ভিন্ন নীতির কারণে শুরুতেই একটা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের। এ বিষয়ে আসছে বাজেটে নজর দিতে হবে।
শমী কায়সার বলেন, আমাদের অনেক দাবির মধ্য থেকে কয়েকটা মাত্র আমরা চেয়ে আসছি গত কয়েক বছর ধরে। গত ২০-২১ অর্থবছরে একমাত্র দাবি পূরণ হয়েছে, সেটা হলো ই-লার্নিং ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার। গত তিন বছরে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। দ্রুতই বাড়ছে এ সংখ্যা। এ খাতের সমস্যা সমাধানে সরকার নজর দিলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কাতার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বেলা ৩টায় তিনি কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কাল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাতারের দোহায় ‘থার্ড কাতার ইকোনমিক ফোরাম : এ নিউ গ্লোবাল গ্রোথ স্টোরি’ শীর্ষক ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ খলিফা আল থানির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।
ব্লুমবার্গের সহায়তায় আয়োজিত এ ফোরামে অংশ নেবেন বিশে^র বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদসহ প্রযুক্তি, অর্থ ও ব্যবসা খাতের বিশ্লেষকরা। বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকট এবং তা থেকে উদ্ভূত বিরূপ অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মার্চে এলডিসি-৫ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা কাতার গিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফোরামে শেখ হাসিনা ছাড়াও অতিথি হিসেবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ এস আল-সুদানি, জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশভিলি, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ ও অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল জাদান উপস্থিত থাকনেন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস। গতকাল রবিবার মার্কিন দূতাবাসের ‘ডেমোনস্ট্রেশন অ্যালার্ট’ শিরোনামে প্রচারিত হালনাগাদ করা ভ্রমণ সতর্কবার্তায় এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিকদের জন্য জারি করা ওই সতর্কতা ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর জন্যও প্রযোজ্য হবে।
মার্কিন নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির আগে বা ওই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মধ্যে এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে পারে। তাই সম্ভাব্য এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের আগাম সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওই বার্তায় আরও বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভগুলো যেকোনো সময় সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে, এগুলো মুহূর্তের মধ্যে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে এটা মার্কিন নাগরিকদের মনে রাখা উচিত। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নাগরিকদের বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোনো বড় সমাবেশের আশপাশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে হবে। স্থানীয় ঘটনাসহ আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়ে সচেতন থেকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে নজর রাখতে হবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।