
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের তালিকা চূড়ান্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ইতিমধ্যে দেশি পর্যবেক্ষকদের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে, তবে বিদেশিরা এখনো আগ্রহ দেখায়নি। দেশি পর্যবেক্ষকদের খসড়া তালিকা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে। যাচাই শেষে যেকোনো সময় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিদেশি পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা সেরেছে। তবে ইইউ পর্র্যবেক্ষক পাঠাবে কি না তা নির্ভর করছে অগ্রগতি দলের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর। জুলাই মাসে ওই দল ঢাকায় আসতে পারে।
কমনওয়েলথ থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরবর্তী ইসি বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সুযোগ রয়েছে।’
ইসির গণসংযোগ অধিশাখার সহকারী পরিচালক মো. আসাদুল হক জানান, ‘এ বিষয়ে কাজ চলছে। কমিশন এখনো গণবিজ্ঞপ্তির সিদ্ধান্ত দেয়নি। দিলেই তা প্রকাশ করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর যোগাযোগ করে। পর্যবেক্ষক হতে আগ্রহীরা ইসির গাইডলাইন মেনে আবেদন করে। ইসি তা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রক্রিয়া শেষে পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসে। এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া বিদেশি কোনো সংস্থা আবেদন করেনি।’
ইসি-সূত্র বলছে, ‘বর্তমানে ১১৮টি সংস্থা নিবন্ধিত রয়েছে। এদের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১১ জুলাই। নতুন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯৯টি দেশি সংস্থা আবেদন করেছে। আর নির্ধারিত সময়ের পর ১১টি সংস্থা আবেদন করেছে। সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। নতুন করে যারা আবেদন করেছে তাদের মধ্যে ৪০টি সংস্থার নিবন্ধন রয়েছে। বাকি ১৫৯টি সংস্থা সম্পূর্ণ নতুন। অধিকাংশই স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থা। বর্তমানে যেসব সংস্থা নিবন্ধিত তাদের অধিকাংশই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে ৬১টি সংস্থা। নিবন্ধন নিয়েও যারা পর্যবেক্ষণ করে না, তাদের নিবন্ধন না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।’
ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি গত ৯ মার্চ বৈঠক করেছে। ৫টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কারণে ওই বৈঠকের পর কাজ এগিয়েছে ঢিলেতালে। ঈদুল ফিতরের পর যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়। তা এখন নথিভুক্ত হয়ে আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে প্রাথমিক বাছাইয়ে যাদের আবেদন টিকবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আপত্তি আছে কি না জানতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে তাদের কথা শুনবে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), ফেমা, আদর্শ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (আপউস), মুভ ফাউন্ডেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, হিউম্যান রাইটস ডিজ-অ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি), জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার, উত্তরণ, ডেমোক্রেসিওয়াচ ও প্রিপ ট্রাস্ট।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। প্রথমে এক বছর মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয় এটিএম শামসুল হুদা কমিশন। ২০১১ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে। এগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়। নবম সংসদ নির্বাচনে দেশি ৭৫ প্রতিষ্ঠান ভোট পর্যবেক্ষণ করে। দশম সংসদে দেশি পর্যবেক্ষক কমে ৩৫ হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আবেদন করে ১৯৯টি প্রতিষ্ঠান; কমিশন ১১৯টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দিয়েছিল।
দেশি সংস্থার পাশাপাশি বিদেশি সংস্থাকেও অনুমতি দিয়ে থাকে ইসি। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া আর কোনো বিদেশি সংস্থা এখনো আবেদন করেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতিমধ্যে সিইসির সঙ্গে তিন দফা সাক্ষাৎ করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। গত ১৮ জানুয়ারি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ইতিবাচক।
জানা গেছে, পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগে জুলাই মাসে মাঠপর্যায়ে নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি দেখতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে ইইউ। তারা সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে। ফিরে গিয়ে ইইউর হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেফ বোরেলের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না। গত ৭ মে লন্ডনে ক্লারিজ’স হোটেলে কমনওয়েলথের মহাসচিব ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে পর্যবেক্ষক পাঠাতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ওয়াশিংটনকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
ইসি-সূত্র বলেছে, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ৫৯৩ জন বিদেশি এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক ছিল। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি এবং স্থানীয় ৩৫টি সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এ ছাড়া ৩৮ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
পাহাড় কাটার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদন্ড। দেশের পরিবেশ আইনে এ কথা বলা আছে। বাস্তবে শাস্তি সর্বনিম্ন জরিমানাতে সীমাবদ্ধ। পাহাড় কেটে আবাসন বা বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির জন্য কিছু সাধারণ মানুষ জরিমানা গুনেছে।
পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। বিষয়টা শুধু নথিতেই আছে। বাস্তবে সরকারিই উদ্যোগী হয়েছে পাহাড় কাটতে। পাহাড় কেটে আবাসিক প্লট তৈরির প্রকল্প নিয়েছে সরকার। সরকার নিজেই যখন আইন ভাঙছে, তখন কার কী বলার আছে!
দীর্ঘদিন পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়নি। সম্প্রতি ‘বিশেষ ইশারায়’ কৌশলী ছাড়পত্র দিয়েছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, পাহাড় কেটে এমন প্রকল্প হলে ইকোসিস্টেম ধ্বংস হবে। তবে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়েছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় এ আবাসন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প’ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০২০ সালের মার্চে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় প্রকল্পটির কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। এ অবস্থাতেই একবার ব্যয় না বাড়িয়ে সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল চলতি বছর জুন পর্যন্ত, সে মেয়াদও শেষ হতে চলেছে। কোনো কাজ হয়নি। নতুন করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিতে চায়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ছাড়পত্র’ পাওয়ার পর কোনো ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।
প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের পর এটির মূল্যায়ন করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আইএমইডি বলেছে, প্রকল্প বাস্তবে রূপ দিতে হলে পাহাড় কাটতে হবে। মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় না বাড়িয়ে সময় বাড়ানো ঠিক হবে না বলে মনে করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে আইএমইডি বলেছে, প্রকল্প এলাকার অনেক ছোট পাহাড় ও প্রাকৃতিক জলাধার পরিবর্তনে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রকল্প এলাকার প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গায় ছোট পাহাড় এবং ৩০ শতাংশ জায়গায় প্রাকৃতিক জলাধার রয়েছে। জলাধারের পাশেই কৃষিজমি। ছোট ছোট পাহাড়ে প্রচুর কলাগাছ রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টিলা পুরো কাটা হবে না, লেভেল মেইনটেইন করে যেসব টিলা নরমাল সেগুলোকে নিয়ে ১৬ একর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকার মধ্য দিয়ে ১৩২ কিলোভোল্টের ন্যাশনাল গ্রিড লাইন যাওয়ায় ভবনসহ স্থাপনাদি যথেষ্ট ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে পাহাড় কাটতেই হবে। সে কথা চিন্তা করেই ছাড়পত্র দিতে দেরি করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে ‘বিশেষ ব্যক্তির’ প্রভাবে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্লটের ভাগ-ভাটোয়ারা সেরে ফেলেছে। প্রভাবশালী এক সরকারি নেতার কথায় “ছাড়পত্র” দিতে বাধ্য হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।’
পরিবেশবাদীরা বলছে, পাহাড় কাটা হলে ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনোভাবে ইকোসিস্টেম ঠিক রাখা যায় কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। প্রাকৃতিকভাবে যেখানে মরুভূমি থাকে সেখানে মরুভূমিই থাকা উচিত, যেখানে পাহাড় আছে সেখানে পাহাড়ই থাকতে হবে। প্রত্যেকটিরই আলাদা বিশেষত্ব আছে।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে পাহাড় থাকে সেখানে গাছ থাকবে, জলাধার থাকবে। পশুপাখি সেখানকার খাবারের ওপর নির্ভরশীল। গাছ কাটা হলে তারা তাদের বাসস্থান হারাবে। আমাদের প্রকল্পগুলোতে সিস্টেমেটিক গলদ আছে। যার ফলে এ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রতিবেদনে দাখিলকৃত লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সবুজায়ন, রিটেনশন পন্ড প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামোর উন্নয়ন চলাকালে প্রয়োজনীয় নিরাপদ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। প্রকল্পের চারদিক অস্থায়ী প্রাচীর তৈরি করতে হবে।
স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পিত উপায়ে অল্প জমির ওপর সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত অত্যাধুনিক প্লট তৈরি করার কথা তাদের।
প্রকল্প এলাকায় যে পাহাড় আছে সেটি প্রমাণিত হয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের অনাপত্তি পত্রে। কৌশলে অনাপত্তি জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, পিজিসিবির সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার যে পাহাড়ে অবস্থিত সে পাহাড় থেকে মাটি কাটা যাবে না। পিজিসিবির টাওয়ারের পাদদেশে অতিরিক্ত মাটি ফেলা যাবে না। টাওয়ার ও লাইন পরিদর্শনের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘পিজিসিবির টাওয়ার থেকে নিরাপদ দূরত্বেই আবাসন প্রকল্পটি করা হবে।’
কেন পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাহাড় কাটা হবে না, এ বিবেচনায় তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ যদি পাহাড় কাটত তখন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটার প্রয়োজন হবে কি না সেটি ভালো বলতে পারবে প্রকৌশলীরা। তবে পাহাড় না কেটেও হাউজিং করতে পারবে তারা। তারা পরিকল্পনা দেবে, যদি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় তাহলে সরকার অনুমোদন দেবে। সেটাই নীতিমালায় বলা আছে।’
পরিবেশ-বিধ্বংসী এমন প্রকল্প কেন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে থাকলে তারা কেন দিয়েছে তারাই ভালো জানে। আবাসন প্রকল্পে মিনিমাম ক্রাইটেরিয়া মেনে চলা হয়। পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না।’
প্রকল্পে সময় বাড়ানোর যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় শর্ত সাপেক্ষে ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। জেলা প্রশাসকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ দশমিক ১৯ একরের পরিবর্তে ১৪ দশমিক ১৯ একর জমির সংশোধিত আয়তন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও পিজিসিবির ছাড়পত্র এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র দিয়েছে। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র দিয়েছে।
আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাহাড়ের মাটি কাটতে হবে, এজন্য এতদিন পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়নি। এতদিনে ১ শতাংশ কাজও হয়নি। এর আগে ব্যয় না বাড়িয়ে একবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আরডিপিপি মোতাবেক ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত আছে। প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্পের কোনো ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি নেই। জমিই এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হয়নি। মৌজার দর অনেক বেড়েছে। কাজেই পুরনো রেট শিডিউল দিয়ে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। ঠিকাদার আগ্রহী হবে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমতউল্লা খান কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন তার জন্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এদিকে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। গত রবিবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটিতে ভোটের মাঠে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সরকারদলীয় সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থক একাধিক প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৭টি ওয়ার্ডে বিএনপির ২৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সম্প্রতি তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও নির্বাচনী মাঠে তারা থেকে যাচ্ছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির এক নেতা কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন। তবে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
আজমত উল্লা খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় দলের জনপ্রিয়তা, ব্যক্তি আজমত উল্লার জনপ্রিয়তা ও সরকারি দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি বেশি থাকায় তিনি প্রচার-প্রচারণায় অনেক এগিয়ে আছেন। ভোটের মাঠে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাজে লাগিয়ে ভোটের ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় আছেন। গত রবিবার তিনি ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে গাজীপুরকে স্মার্ট ও দুর্নীতিমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটের মাঠে ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছেন। তিনি মূলত তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থনে নির্বাচনী মাঠে আজমত উল্লা খানের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ৯ মে থেকে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে আজমত উল্লা খান প্রচরণায় অনেকটা পেছনে ছিলেন। ক্রমেই তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তিনি নেতা হিসেবে অনেক বড় নেতা হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কম। তাছাড়া মিডিয়ার সঙ্গে ছিল তার দূরত্ব সবসময়।
জায়েদা খাতুনের যত অভিযোগ : টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় বের হলে টঙ্গীতে চারবার তার ওপর হামলা করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, কয়েকটি নির্বাচনে তার এজেন্টদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের কর্মী-সমর্থকদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় রাখলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তার প্রচারণায় একাধিকবার গাড়ি থামিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। কর্মীদের মারধর, নির্যাতন ও প্রতিনিয়িত হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের কর্মীদের প্রচারণায় বাধা ও ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।
গাজী আতাউর রহমানের পক্ষে অভিযোগ : নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এমএ হানিফ সরকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে গতকাল দুপুরে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
টঙ্গীর ভোটে ভাগ বসাবেন রনি : গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে টঙ্গীতে ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ এবং সাবেক গাজীপুর পৌরসভাসহ সাবেক ছয়টি ইউনিয়ন বাসন, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, কাউলতিয়া, পুবাইল ও গাছায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। আঞ্চলিকতার কারণে বিশাল এ ভোটের ব্যবধানের প্রভাব বিগত সংসদ নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনেও পড়তে দেখা গেছে। এ ছাড়া টঙ্গী থেকে বিএনপি নেতা কারাবন্দি নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি হাতি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি টঙ্গী এলাকার বিশাল একটি অংশ তার বাক্সে ভরবেন বলে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের ধারণা।
২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। নির্বাচনে ৪৮০ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩ হাজার ৪৯৭ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৬ হাজার ৯৯৪ পোলিং কর্মকর্তাসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন।
প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও এজেন্টদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনিয়া হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধানকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও চারজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন আনসার, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন আনসার, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ ১৬ জন মোতায়েন থাকবে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
দেশে বর্তমানে ১৫ কোটি কেজি বস্ত্র বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এসব বস্ত্র বর্জ্য রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহার উপযোগী করার ক্ষেত্রে শুল্ককর দিতে হয়। বাজেটে এই শুল্ককর প্রত্যাহার করা হলে তুলা আমদানি ১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
আগামী অর্থবছরে বৈশি্বক মন্দার মধ্যে টিকে থাকতে কেমন বাজেট প্রয়োজন এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসা খাতের এই নেতা এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, রিসাইকেল ফাইবার, ম্যান মেইড ফাইবারসহ সব ধরনের আমদানি পর্যায়ে যাবতীয় শুল্ক, মূসক ব্যতীত আমদানির সুযোগ, সব ধরনের পাওয়ার লুমে উৎপাদিত কৃত্রিম আঁশের সুতার তৈরি ফেব্রিকসের ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, বর্তমানে সুতা তৈরির জন্য ক্রেতা বা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের তৈরি পোশাকসামগ্রী কী ধরনের ফাইবারের দ্বারা প্রস্তুত করতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। স্পিনিং মিলগুলো সুতা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাইবার আমদানি করে থাকে। এসব ফাইবারের ওপর উচ্চহারে রাজস্ব ধার্য আছে। বৈশি^ক মন্দার কারণে আগে যে দামে কেনা যেত, এখন তার চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে সুতা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে আগামী বাজেটেই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সভাপতি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের শিল্প খাতের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে এনে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি বলে মনে করছি।’ উৎপাদন এবং আয় বাড়াতে সব রপ্তানি এবং শিল্প খাতে করমুক্ত রেয়াতি হারে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। জমি কেনা, ভবন নির্মাণ এবং শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ সব উৎপাদনশীল খাতে প্রদেয় যাবতীয় প্রশাসনিক সেবা পরোক্ষ করমুক্ত রাখার দাবি করেছেন ব্যবসা খাতের এই শীর্ষ নেতা।
উৎসে করে ছাড়ের জোরালো দাবি জানিয়ে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আগামী বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে হবে। একই সঙ্গে কারখানা নির্মাণ, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের যন্ত্রপাতিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ যথাযথ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। জানুয়ারি মাসে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম তিনবার বেড়েছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এসব কারণে আমাদের ব্যবসায়ের খরচ বেড়েছে। এ সমস্যা আগামী বাজেটেই সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী কাস্টমস, মূসক ও আয়করসংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান ও পদ্ধতি আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকবে না, সেগুলো চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি ও পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব প্রশাসনে ব্যবসাবান্ধব ও করদাতা সহায়ক প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদারকরণ এবং আমদানি শুল্ক, আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধানের ব্যবসা এবং শুল্ককরবান্ধব সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের ওপর রাজস্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তা বাড়ানো যাবে না; বরং ব্যবসা করার সুযোগ দিতে রাজস্বের হার কমাতে হবে। এতে শেষ পর্যন্ত সরকার লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩-২৫ মে অনুষ্ঠেয় কাতার ইকোনমিক ফোরাম (কিউইএফ) ২০২৩-এ যোগ দিতে তিন দিনের সরকারি সফরে গতকাল সোমবার কাতারের রাজধানী দোহা পৌঁছেছেন। শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট গতকাল স্থানীয় সময় ৫টা ৩২ মিনিটে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট গতকাল বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সেনা, বিমান ও ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং কূটনৈতিক কোরের ডিন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল সানির আমন্ত্রণে ‘তৃতীয় কাতার অর্থনৈতিক ফোরাম : নতুন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গল্প’ শীর্ষক ফোরামে যোগ দেবেন।
কিউইএফ হলো মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠস্বর, যা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য নিবেদিত। এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকট এবং এর ফলে উদ্ভূত বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা।
শেখ হাসিনা ২৩ মে তৃতীয় কিউইএফের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন এবং কাতারের জ¦ালানিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সা’দ বিন শেরিদা আল কাবি এবং সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৪ মে কিউইএফ-এ যোগ দেবেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির (আমিরি দিওয়ানে) সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আওসাজ একাডেমি (একটি বিশেষায়িত স্কুল) পরিদর্শন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ মে সকালে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাসস
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিজিবির ওপর হামলা চালিয়ে টাকাসহ আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা হয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিজিবি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ।
সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীকে আটকের জেরে রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিজিবির উপর হামলা চালিয়ে টাকাসহ দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় ৯ বিজিবি সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রবিবার সকাল ১০টার দিকে পানছড়ি ব্যাটালিয়ন (৩ বিজিবি) অধীনস্থ লোগাং বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা একটি বস্তা ও দুই যাত্রীসহ রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটি মোটরসাইকেল আটক করে। পরে তল্লাশি করে সাড়ে ১২ লাখ পাওয়া যায়। কিন্তু মোটরসাইকেল আরোহী রিংটু চাকমা ও ধনরঞ্জন চাকমা টাকার উৎস ও মালিকানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে লোগাং বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার মোফাজ্জল হোসেন স্থানীয় তিন জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে টাকাসহ আসামীদের পানছড়ি থানায় সোপর্দ করার জন্য আসার পথে পুজগাং বাজার এলাকায় ৫/৬ শতাধিক গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে বিজিবির দুটি গাড়ীর গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীরা হামলায় চালিয়ে টাকা ও আসামীদের ছিনিয়ে নেয়। সেইসঙ্গে বিজিবির গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পানছড়ি ব্যাটালিয়ন (৩ বিজিবির) অধিনায়ক লে.কর্নেল একে এম আরিফুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রীয় ও জানমাল রক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা অন্তত ১৩ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে সুমন চাকমা নামে এক হামলাকারীকে আটক করে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রিংটু চাকমা ও ধনরঞ্জন চাকমা পানছড়ি সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য।
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।